প্রেমানন্দোল পর্ব ১৩

প্রেমানন্দোল পর্ব ১৩
তাসনিম তামান্না

স্বাধীন দ্বিধা বাসায় আসতেই হইচই পড়ে গেলো। দ্বিধার মা তো কি করবে কি না করবে দিশেহারা হয়ে গেলো নতুন জামাই আজ প্রথম বাসায় এসেছে বলে কথা। দ্বিধা বাবা খবরটা পাওয়া মাত্র কাজ ফেলে বাজারে ছুটেছে। ন্দ্বদ্ব বাসায় নেই স্কুলে। সবাইকে এতো ব্যস্ত হতে দেখে দ্বিধা অবাকে শীর্ষে চলে গেছে। তার দিকে কারোর খেয়াল নেই সব যত্ন নতুন জামাই এর আর এতোদিন পর যে সে বাসায় আসলো। তার কোনো দাম নেই সবাই তাকে ভুলে গেলো? ভেবেই আকাশ ছোঁয়া অভিমান হলো। মুখ আঁধার করে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো। রুমে এসে শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে দেখলো স্বাধীন দ্বিধার খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে। দ্বিধা স্বাধীনকে পাত্তা না দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে ভেজা চুলগুলো মুছতে লাগলো। স্বাধীন বলল

” কি হয়েছে মুখটা এমন করে আছেন কেনো? ”
” আমার মুখ আমার ইচ্ছে ”
” বাবাহ! রেগে আছেন মনে হচ্ছে ”
” নাহ”
” তাহলে কি হয়েছে? ”
” কিছু হয় নি বললাম না। কি হবে আমার আবার? ”
স্বাধীন আর দ্বিধাকে ঘটালো না। উঠে ফ্রেশ হতে গেলো। দ্বিধা চুল মুছে। স্বপ্নার খবর নিতে গেলো।
” স্বপ্না। আসবো? ”
স্বপ্নাও তখন তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছছিলো। বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আরে কি বলো ভাবি? তোমাদের বাড়ি আর তুমি কি না আমার কাছ থেকে পারমিশন নিচ্ছো? ”
” পারমিশন নেওয়া কি অপরাধ না-কি? ”
” অবশ্যই ”
” মোটেও নয়। রুমটায় তুমি আছো মানে রুমটা তোমার এখন। আর তোমার একটা প্রাইভেসি আছে। আমি আমার বাড়ি বলে হুটহাট ডুকে পরলে তোমার রাগ হবে। অস্বস্তিতে পড়বে। তাই যে-কারও রুমে ঢোকার আগে পারমিশন নিয়ে ঢোকাটা একটা কমনসেন্সের মধ্যে পড়ে ”
স্বপ্ন হেসে বলল

” আসলেই ভাবি তুমি ঠিক বলেছ। আমি এতো গভীর ভাবে ভাবি নাই ”
” আচ্ছা তোমার কোনো প্রবলেম হচ্ছে না তো? ”
স্বপ্না দ্বিধার গাল টিপে বলল
” সুইট ভাবি না গো কোনো প্রবলেম হচ্ছে না ”
দ্বিধা স্বপ্নার বাচ্চামো দেখে বলল

” তুমি বাচ্চা। কোনো প্রবলেম হলে বলো ”
” ওকে ”
” আচ্ছা তুমি রেস্ট নিয়ে নাও আমি তোমাকে লান্সের সময় ডাক দিবো ”
” ওকে ”
দ্বিধা রান্নাঘরে এসে মাকে পিছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরে রাখলো। দ্বিধার মা আদুরে কন্ঠে বলল
” আমার বাবুইপাখি কি হয়েছে? ”
” কষ্ট হয়েছে খুব কষ্ট ”
” কষ্ট হয়েছে আস্তে আস্তে সয়ে যাবে আমারও আগে কষ্ট হতো মা’কে ছাড়া থাকতে ”
দ্বিধা ওভাবে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে পড়ে রইলো। বাবার গলার আওয়াজ পেতে গ্লাসে করে ঠান্ডা পানি নিয়ে গেলো। দ্বিধাকে দেখতে পেয়ে দ্বিধার বাবা আবেগে আপ্লুত হয়ে বলল

” মা তুই এসেছিস? ”
গ্লাসটা দিয়ে বলল
” হ্যাঁ তোমরা তো আমাকে ভুলেই গেছো ”
দ্বিধার বাবা এক চুমুকে পানিটা খেয়ে আয়েশ করে বসে শব্দ করে হাসলেন। দ্বিধা বুক ভরা অভিমান নিয়ে বাবার হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখলো। বাবা- মেয়েতে মিলে গল্প জুড়ে দিলো। একথা সেকথা থেকে দ্বিধার বাবা বলল

” ও বাড়ির সবাই কেমন? ”
” অনেক ভালো। শুধু আমি খারাপ ”
” কেনো? কে বলেছে একথা? আমি মেয়ে বেষ্ট! ”
” তাহলে এতো তারাতাড়ি বিয়ে দিলে কেনো? আমি কি বোঝা হয়ে গেছিলাম তোমাদের কাছে? ”
দ্বিধার বাবা দ্বিধার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
” সবসময় মনে রাখবি বাবা-মা যা করে সব সন্তানের ভালোর জন্য-ই। আর আমি জানি স্বাধীন ছেলেটা ভালো। সব জেনে শুনে আমি তোকে ওখানে বিয়ে দিয়েছি ”

” স্বাধীন স্বচ্ছ বড় ভাই এটাও জানো আমরা এক বাড়িতেই থাকি। আমার ভয় হয় ”
” দূর পাগলি। শোন কথা তুই যত ওর থেকে পালাতে চাইবি ও ততো তোকে খোঁজে বের করতে চাইবে ওর চেয়ে তুই ওর সামনে আছিস আর তুই ওর বড়ভাইয়ের বউ তোর ক্ষতি করার কথা ওর মাথাতে আনলে স্বাধীন কি ছেড়ে দিবে না-কি? ”
” তারমানে তুমি আমার সেফটির জন্য আমার বিয়ে দিয়েছ? ”
” বলতে পারিস ”
” কিন্তু তোমাদের যদি ক্ষতি করে দেয়? ”

” ওর তো শুধু এই বাড়ির ওপরে নজর এই বাড়ির মানুষ গুলোর ওপরে না। তুই ছিলি তোকে গুটি বানিয়েছিলো কিন্তু তুই এখন সেফ আছিস এটাই অনেক ”
” তাই বলে তুমি… ”
” আর কিছু হবে না দেখিস তোর বিয়ের পর থেকে স্বচ্ছ একদিন ও এ বাড়িতে আছি নি। আর স্বাধীন ও সবটা জানে এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই ”
কথা শেষ হতেই স্বাধীন ওপর থেকে নিচে নেমে আসলো। দ্বিধার বাবার সামনের সোফাটায় বসলো। দ্বিধা বাজারের ব্যাগটা নিয়ে রান্নাঘরে গেলো।

অন্ধকার রুমটায় গুমোট ভাব গরমে দম বন্ধ কর অবস্থা রুমেটায় শুধু নিঃশ্বাস আর উম উম করে ছাড়া পাওয়ার আকুতি। মৃধার শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। অন্ধকারে আবছা আলোয় দেখা গেলো মৃধা ছাড়াও আরো অনেক মেয়ে হাত-পা-মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে। মৃধার চোখ দিয়ে অনলগল পানি পড়ছে। মৃধার বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা ট্রাপে পড়েছেন। মৃধা দড়ি গুলোর সাথে অনেকক্ষণ ধস্তাধস্তি করলো কিন্তু কোনো লাভ হলো না উলটো হাত পায়ে দড়ির ঘষনে ছিলে গেলো। ক্লান্ত হয়ে থেমে গিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো। চারিদিকের মেয়েগুলোর অঝোর ধারায় কাঁদছে। মৃধা দৃষ্টি শূন্যে মিলিয়ে মনে মনে চাইলো

” কেউ আসুক আমাকে সহ সব মেয়েকে রক্ষা করুন ”
মৃধার চোখের সামনে মা, ভাই, বোনের মুখ ভেসে উঠলো। আজ-ই বোধ হয় জীবনের শেষ দিন। স্প্রে করার শব্দ আসলো। কিছু সুবাস নাকে আসতেই। চোখ ঘোলাটে হয়ে আসলো। লাইট জ্বলে উঠলো। মৃধা ঝাপসা চোখে পরিচিত হয়েও অপরিচিত মুখটার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখতে পেলো। মৃধা অবাক হওয়ার সুযোগ পেলো না। তার আগেই জ্ঞান হারালো।

ন্দ্বদ্ব বাড়িতে এসে হই চই বাধিয়ে দিলো। দ্বিধা ন্দ্বদ্বের ঝগড়া লেগে গেলো। ঝগড়া থামাতে ওদের মা খুন্তি নিয়ে মারতে আসলেই ওরা ছুটে এদিক ওদিক চলে গেলো। ওদের বাচ্চামো দেখে দ্বিধার বাবা, স্বাধীন, স্বপ্না হাসলো। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে ন্দ্বদ্ব, স্বাধীন, স্বপ্না লুডু খেলতে বসলো দ্বিধা বসে রইলো ও খেলবে না বলে দিয়েছে।দ্বিধার বাবা রুমে চলে গেলেন। দ্বিধা মাও কাজ গুছিয়ে চলে গেলে।

” আপু জানে হেরে যাবে তাই আগে থেকে না খেলে হেরে বসে আছে ”
” ন্দ্বদ্ব তুই কিন্তু আমার কাছে মার খাবি ”
” তাহলে খেলছো না কেনো? আমরা চারজন আছি জোড়ায় জোড়ায় খেলি ”
” আচ্ছা যা খেলবো ”
ওরা খেলা শুরু করলো। গার্লস ভার্সেস বয়েস টিম। সবার প্রথমে দ্বিধার ছক্কা পড়লো। ন্দ্বদ্ব বলল
” যার আগে ছয় পড়ে সে হেরে যায় ”
দ্বিধা ভাব নিয়ে বলল

প্রেমানন্দোল পর্ব ১২

” দেখা যাবে ”
খেলা জমে উঠলো। কাটা- কুটি এদল ওদলকে কাটছে। কে জিতবে বোঝা যাচ্ছে না হাড্ডা হাড্ডি লড়াই। বয়েস এককে একে গুটি ঘরে তুলে ফেলছে।
গার্লসরা ৩ গুটিতে হেরে গেলো।
দ্বিধা ন্দ্বদ্বের আবারও ঝগড়া লাগলো। ঝগড়ার মুল টপিক। ওরা কেইল করে জিতেছে। দ্বিধা ন্দ্বদ্বের ঝগড়াঝাটি মধ্যেই বোঝা যায় ওদের নামটা সাথ্যক হয়েছে।

প্রেমানন্দোল পর্ব ১৪