প্রেমের বর্ষন পর্ব ৩

প্রেমের বর্ষন পর্ব ৩
লেখনীতে – আয়ানা আরা (ছদ্মনাম)

কারণ আমি জানালা দিয়ে একটা ছায়া নামতে দেখি। আমি ছায়াকে অনুসরণ করে জানালার কাছে এসে দেখি কেউ নেই। আমি একরাশ হতাশা নিয়ে বিছানায় আবার শুয়ে পরি। এই নিয়ে পাঁচবার এমন হয়েছে আমার সাথে। প্রথম প্রথম মনের ভুল ভেবে অত পাত্তা দেই নি এই বিষয়ে আমি কিন্তু দিন যত যাচ্ছে এই বিষয়ে তত ভাবাচ্ছে আমাকে খালামনিকেও বলতে পারছি না উলটা আমাকেই যদি খারাপ না বুঝে সেই ভয়ে। এইসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি টেরও পায় নি

সকালের মিষ্টি রোদ পর্দা ভেদ করে আমার মুখে পড়তেই আস্তে করে চোখ খুলে উঠে বসি। প্রতিদিন দিনের শুরু এই মিষ্টি রোদ দিয়েই হয় আমার। ব্যালকনিতে যেয়ে আমার পালিতো দুইটা টিয়া পাখিকে বললাম,’শুভ সকাল তোদেরকে।’
ওদের কাছে কিছুক্ষন কথা বলে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলাম।
নিচে যেয়ে দেখি খালামনি নাস্তা দিচ্ছে আর ফারিশ ভাইয়া নাস্তা খাচ্ছে। উনি ঠিক কি কাজ করেন আজ পর্যন্ত আমি বুঝতেই পারলাম না কিন্তু খালামনির থেকে শুনেছি উনি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। আর আমি সবে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছি।
নাস্তা করতে করতে খালামনিকে বললাম,’খালামনি আমি আজ কলেজে যাবো অনেকদিন ধরেই যাওয়া হয় না।’
‘আচ্ছা ঠিকাছে।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এই বলে ফারিশ ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বলেন,’ফারিশ অনিকে তুই ওর কলেজে পৌছে দিস।’
ফারিশ ভাইয়া বিরক্তি নিয়ে বলেন,’উফ ও কি সেলিম চাচার সাথে যেতে পারবে না।’
উনার কথা শুনে আমি খালামনিকে বললাম,’খালামনি থাক না আমি একাই যেতে পারবো।’
ফারিশ ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলেন,’এতো ঢং করা লাগবে না আমিই দিয়ে আসবো। কোনো রকম লেট করবি না ওনলি টেন মিনিটস রেডি হয়ে নিচে আয় আমি ওয়েট করছি।’
আমিও নাস্তা শেষ করে রেডি হয়ে নিচে আসলাম।ঠোঁটে হালকা লাল রঙের লিপস্টিক দিয়েছে। চুড়িদারী পড়েছি আর সাথে মিলিয়ে চুড়ি।

আমি বাহিরে এসে দেখলাম ফারিশ ভাইয়া গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে। আমি তার সামনে যেয়ে দাড়ালাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্তি গলায় বললেন,’টেন মিনিটস টাইম দিয়েছিলাম আর তুই টেন মিনিটিস ফাইভ সেকেন্ড লেট করে আসলি।’
ফারিশ ভাইয়ার কথা শুনে আমার মুখ হা হয়ে যায়। লোকটা এইসবও হিসাব করে ফেলেছে। আমাকে হা করে থাকতে দেখে ফারিশ ভাইয়া গাড়ির ভিতর ঢুকতে ঢুকতে বললেন,’হা করে থাকিস না আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডসাম।’

উনার কথা শুনে আমি সাথে সাথে মুখ বন্ধ করে পিছনের সিটে বসতে নেই ওমনি ফারিশ ভাইয়া আমাকে ধমক দিয়ে বলেন,’আমি কি তোর ড্রাইভার নাকি যে পিছনের সিটে বসছিস?সামনে আয়।’
উনার বকা খেয়ে আমি ভদ্র মেয়ের মতো ফ্রন্ট সিটে বসে পড়লাম। উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন। কিছুক্ষন পর জ্যামে আটকে পড়তেই ফারিশ ভাইয়া একটা টিস্যু নিয়ে আমার হাত ধরে টান দিয়ে সামনে নিয়ে এসে লিপস্টিক মুছে দিয়ে বললেন,’ছেলেদের দেখাতে এইসব লাগিয়েছিস তাই না?ভেবেছিস কি আমি কিছুই বুঝি না?আর যাতে তোকে কখনো লিপস্টিক লাগাতে না দেখি আমি। গট ইট?’

আমি চুপচাপ নিজের জায়গায় এসে বসলাম। কিছুক্ষন পর জ্যাম ছাড়তেই ভাইয়া আবার গাড়ি চালানো শুরু করেন।
কলেজে দিয়ে ভাইয়া চলে যান। যাওয়ার আগে বলে যান,’আমি যাতে তোর ফ্রেন্ড ছাড়া কোনো ছেলের সাথে ঢলাঢলি করতে না দেখি।’

আমিও মাথা নাড়ালাম। উনি সবসময় আমার উপর অধিকার খাটান যা আমার মোটেও ভালো লাগে না।
এইসব ভাবতেই ভাবতেই কলেজে প্রবেশ করি। সবাই অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে যার জন্য অনেক অস্তত্বির মধ্যে পরে যাই আমি। কিছু কিছু মানুষ তো নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলো আমার সাথে থাকা ছেলেটা কে ছিলো আরো কত কিছু। আমি নিজের ক্লাসে পৌছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সিন্থিয়ার পাশে বসি। সিন্থিয়া আমাকে বলে,’কিরে দোস্ত কেমন আছিস?’

আমি মলিন মুখে বলি,’যেমন দেখতে পাচ্ছিস।’
সিন্থিয়া ভ্রকুচকে বলে,’তোর খালাতো ভাই কিছু করেছে?’
‘না।’
‘তাহলে এতো মন খারাপ কেনো?’
আমি থমথমে মুখে সিন্থিয়া কে বলি,’সত্যিই কিছু জানিস না তুই?’
‘না তো কেনো?’
‘সিন্থু নীলাদ্রের খুন হয়েছে গতকাল।’
সিন্থিয়া অবাক হওয়ার ভান করে বলে,’আল্লাহ কি বলিস। জানি না তো আমি।’
‘টিভিতে দেখিয়েছিলো।’

‘ওহ আচ্ছা। এইসব বাদদে জানিস নতুন স্যার আসবে আজ।’
আমি প্রতুত্তরে শুধু ‘ওহ’ বললাম। এর মাঝেই একটা পুরুষালি কন্ঠ শোনা গেলো।
‘হেই গাইস। আমি তোমাদের নিউ স্যার আরুশ চৌধুরী।’
আমি তাকাতেই দেখলাম একটা সুর্দশন পুরুষ দাঁড়ানো। এটাই হয়তো স্যার। অবাক করার বিষয় হচ্ছে উনি সম্ভব সুন্দর দেখতে। ফর্সা মুখে নীলাভো চোখ ফুটে উঠেছে। ক্লাসের মেয়েরা উনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। যে কেউ দেখলে প্রেমে পরবে এটাই স্বাভাবিক। উনি মুচকি হেসে বলেন,’আজ আমার প্রথম ক্লাস তোমাদের সাথে তাই আমি আজ ক্লাস নিবো না শুধু পরিচিত হবো।’

‘অনামিকা ইসলাম।’
আমাকে ডাকতেই আমি থমথমে মুখে স্যারের সামনে গেলাম। স্যার আমাকে দেখে বলেন,’হাউ আর ইউ?’
‘আই এম ফাইন।’
‘ওকে। তোমার ফ্যামিলিতে কে কে আছে?’
‘খালামনি আর খালাতো ভাই।’
‘তোমার আব্বু-আম্মু নেই?’
‘না।’
‘ও সরি জানতাম না আমি।’
আমি হেসে বললাম,’ইটস ওকে স্যার।’
‘তোমার সিটে যাও।’
আমি উনার সিটে চলে গেলাম। আর উনি আমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে একটা রহস্য ময় হাসি দিলেন। যা কেউই খেয়াল করেনি।

ক্লাস শেষে আমি বাসায় আসার জন্য রিকশা খুজতে থাকি তখনই একটা গাড়ি এসে আমার সামনে থামে। গাড়ির ভিতরে আর কেউ না আরুশ স্যার ছিলেন। তিনি আমাকে বলেন,’ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড,আমি তোমাকে তোমার বাসায় পৌছে দেই’

আমার তখন সাথে সাথে ফারিশ ভাইয়ার সেই কথা মনে পরে যায় আর আমি ব্যস্ত গলায় বলি,’না না দরকার নেই।’
‘আমি অনেকক্ষন ধরে দেখছি তুমি রিকশার জন্য অপেক্ষা করছো তাই বললাম। চাইলে আসতে পারো আমি জোর করবো না আর এই রাস্তাটাতেও একটু পর কিছু বখাটে ছেলে আসবে তাই তোমার ভালোর জন্য বললাম।’
উনার কথা শুনে আমার কাশি এসে যায়। এখন আমার উনার সাথে না যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি যখনই গাড়ির দরজা খুলতে যাব তার আগেই কেউ আমার হাত ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে একটা থাপ্পড় দেয়।
আমি গালে হাত দিয়ে দেখি ফারিশ ভাইয়া দাঁড়ানো। ফর্সা মুখ রাগে লাল হয়ে গিয়েছে। আরুশ স্যার জলদি গাড়ি থেকে বেরিয়ে বলে,’এই ছেলে তোমার সমস্যা কি তুমি অনামিকাকে মেরেছো কেনো।’

প্রেমের বর্ষন পর্ব ২

ফারিশ ভাইয়া আরুশ স্যারের কলার চেপে বলে,’সাহস কি করে হয় তোর?তুই ওকে বাড়ি পৌছে দিবি। আমি যদি তোকে কখনো অনামিকার আসে পাশে না দেখি ভালো করে কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নে।’
ফারিশ ভাইয়া এই কথাটা বলে আমার টানতে টানতে নিয়ে যায়। আমি মাথা নিচু করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছি।
ফারিশ ভাইয়া আমাকে গাড়িতে বসতে বলে নিজেও বসে পরলেন। তিনি আমাকে কর্কশ গলায় বললেন,’আরুশের সাথে কি তোর?বলেছিলাম না ছেলেদের সাথে এতো ঢলাঢলি করতে না?বাংলা কথা বুঝিস নি আমার?আরেকবার যদি তোকে আরুশের সাথে দেখি তাহলে আমার থেকে খারাপ এই পৃথিবীতে কেউ হবে না।’

উনার বকা খেয়ে যতটা না কষ্ট পাই তার চেয়েও বেশি আমি ফারিশ ভাইয়ার কথা শুনে অবাক হই উনি কিভাবে জানলে স্যারের নাম আরুশ। আমার মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো উনার কথা শুনে।
কিছুক্ষন পর বাসায় এসে আমি নিজের রুমে চলে যাই।

প্রেমের বর্ষন পর্ব ৪