প্রেমের রঙ পর্ব ১০

প্রেমের রঙ পর্ব ১০
মোহনা হক

‘সকাল ৫টায় ইজহান আর পদ্ম রেডি। তারা একটু পর বের হবে বাসা থেকে। তারপর হসপিটালের সব ডক্টররা একটা বাসে করে সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। যারা যারা বিবাহিত তারা তাদের সঙ্গী কে নিতে পারবে। হসপিটালের সিআই আর ম্যানিজিং ডিরেক্টর এই কথা বলেছে। বাসায় অগোছালো জিনিস গুলো পদ্ম গুছিয়ে রাখছে।

ইজহান দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে পদ্মের কাজ। মেয়েটা যেনো তাড়াতাড়িই বড় হয়ে গেলো এমন লাগছে ইজহানের কাছে। বিয়ের দিন ভেবেছিলো সে মেয়েটাকে মেনে নিতে পারবে না বা এই মেয়ে তাকে মেনে নিবে না, তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক বোধহয় নামের হবে। এখন সেই পিচ্চি মেয়ে তার সংসার করছে। ভাবা যায়! আর দিন দিন মেয়েটাকে এতো আদুরে লাগে ইজহানের। একদম কিউট কিউট বাচ্চাদের মতো।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ইজহান দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পদ্মকে বলছে-‘
“হয়েছে ম্যাডাম?”
‘পদ্ম যে জিনিস যেখানে থাকে সেটা সেই জায়গায় রেখে দিতে দিতে বললো-‘
“এইতো এখনই হয়ে যাবে।’

‘পদ্মের সব কাজ শেষ করা হলে তারা দু’জন বাসা থেকে বের হলো। ইজহান পদ্মকে বললো সেখানে অনেক ডক্টর থাকবেন আবার ডক্টরদের ওয়াইফ থাকবেন সবার সাথে যেন পদ্ম কথা বলে। যদিও তখন পদ্ম মাথা নেড়েছিলো তবে পথটা যখন একটু একটু করে শেষ হচ্ছে তখন তার ভয় ও লাগা শুরু করলো। তাদের সাথে কিভাবে মিশবে, কিভাবে কথা বলবে সেগুলো নিয়ে চিন্তিত পদ্ম। তারা আবার পদ্মকে আসলে ঠিক কেমন ভাববে, পদ্মের মাথাটা একেবারে ধরে গেলো এসব চিন্তা করে। আর পাশেই ইজহান আছে সে তো নিজের মতো ফোন টিপছে তার কোনো হেলদোল নেই। এমন মনে হচ্ছে যেনো ফোনের ভিতরে ঢুকে যাবে।’

‘তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছে। গাড়ি থেকে ইজহান তাদের ট্রলি নামালো। পদ্ম ভয়ে নামছে না গাড়ি থেকে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। ইজহান গাড়ির জানালায় হাত দিয়ে ঝুঁকে পদ্মের দিকে তাকালো।’
” কি ম্যাডাম গাড়ি থেকে নামবে না?”
‘পদ্ম আমতা আমতা করে বললো-‘
“ভয় লাগছে আমার।”

‘ইজহান হাতটা দিয়ে তার কপালটা ঘষে নিলো। তারপর কিছু না বলে পদ্মকে জোরে টান দিলো। ব্যাস পদ্ম হুমড়ি খেয়ে ইজহানের উপর পড়েছে।’
‘এভাবে টান দেওয়াতে পদ্ম ব্যাথা পেয়েছে।’
“উফ টান দিলেন কেনো ব্যাথা পাইনা আমি?”
‘ইজহান বিরক্ত হলো একে তো নামতে চাইছিলো না আবার টান দেওয়াতে ব্যাথা লেগেছে।’
“এখানে কি বাঘ, সিংহ ছিলো যে নামতে চাইছিলে না?”

‘পদ্ম রেগে কিছু বলেনি ইজহান ওর হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গিয়েছে দেখে মনেহচ্ছে হসপিটাল। পদ্ম হিল পড়েছে কারণ গেট টুগেদারে যাওয়ার আগে ইজহান কিনে দিয়েছিলো। কিন্তু প্রথম প্রথম তার পড়তে অসুবিধা হয়েছে। ইজহান অনেক জোর করে পড়িয়ে তাকে দিয়ে প্রতিদিন হিল পড়িয়ে তাকে ট্রায়াল দিত। যাক একটু লম্বা লম্বা লাগছে ইজহানের পাশে।

একবার ইজহানের দিকে তাকালো আবার নিজের তাকালো দিকে না ভালোই মানিয়েছে তাদের। পদ্ম মুচকি মুচকি হাসছে।’
‘ইজহান পদ্মকে নিয়ে হসপিটালের ভিতরে গেলো। অনেক মহিলা,পুরুষ দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ সবার নজর তাদের দিকে গেলো। ইজহান পদ্মের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে হসপিটালের সিআই এর সাথে দেখা করলো। আবার দেখা করা শেষে পদ্মের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পদ্মের দিকে। যার কারণে পদ্ম অস্বস্থিতে পড়লো। ইজহান পদ্মের কাধ জড়িয়ে ধরলো।’

‘ইজহান পদ্মের দিকে তাকিয়ে বললো-‘
“অনেকের হয়তো মনে প্রশ্ন জাগছে ও কে? ও হচ্ছে মিসেস ইজহান শেখ।”
‘সবাই যেনো আসমান থেকে টপকে পড়েছে ইজহানের কথা শুনে। গোল গোল চোখ করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ইজহান বিয়ে করেছে আর এটা হসপিটালের কেউ জানে না বিষয়টা কেমন জানি হয়ে গেলো। সবাই ইজহান আর পদ্মকে শুভকামনা জানালো। শানায়া পিছনের দাঁড়িয়ে আছে। আর ইজহানের সেই মহা মূল্যবান কথাটি শুনে সে নিস্তেজ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে সেই কখন থেকে। পর পর ঢোক গিলছে। কথাটি যেনো মিথ্যে তার কাছে মনে হলো। শানায়ার কে রায়হান আহমেদ ডাক দিলেন।’

“আরে শানায়া ম্যাম যে আসুন আপনি ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?”
‘রায়হান আহমেদের কথায় সবার চোখ শানায়ার দিকে গেলো। বিশেষ করে ইজহানের। এই দিনটির জন্যই সে অপেক্ষা করেছিলো। ইজহান দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে শানায়ার দিকে। শানায়ার যেনো চোখ দিয়ে পানি পড়ে যাবে এমন অবস্থা।’

‘অবশেষে শানায়াও ইজহানকে অভিনন্দন জানালো। বিষয়টা হজম করতে পারলো না সে নিজেই। শানায়া পদ্মের দিকে তাকিয়ে আছে। এই সেই মেয়ে যার জন্য ইজহান তাকে পাত্তা দেয়নি। পদ্মকে দেখে হাসি দিলো যেনো এটা হিংসার হাসি। শানায়াকে কেমন জানি মনে হচ্ছিল পদ্মের শানায়া যখন হেসেছিল তখন নির্বোধের মতো তাকিয়ে ছিলো সে। আর দিকে ইজহান পদ্মকে এক হাত দিয়ে কাধ জড়িয়ে ধরে আছে দেখে শানায়ার গা জ্ব’লে উঠলো।’

‘অতঃপর সবাই বাসে উঠলো। হসপিটাল থেকে মোট তিনটে বাস চললো সাজেকের উদ্দেশ্যে। পদ্ম জানালার পাশ দিয়ে বসেছে। আর পদ্মের পাশে ইজহান। পদ্ম খুব আগ্রহ নিয়ে চারপাশ দেখছে। তার যে কি ভালো লাগছে সে বোঝাতেই পারবে না। পদ্ম হাত বাড়ালো বাহিরে। ইজহান তৎক্ষনাত পদ্মের হাত ভিতরে ঢুকালো।’
‘পদ্মকে ধমক দিলো।’
“বাহিরে হাত দিবে না বুঝছো।”

‘পদ্ম মাথা নাড়লো। আবার সেই চারপাশ দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। প্রকৃতি কতো সুন্দর কেউ যদি সেটা অনুভব করতে না পারে তাহলে তাদের জীবনটা বৃথা।এক সময় পদ্ম ঘুমিয়ে গেলো। যেহেতু পদ্ম জানালাটা পাশেই মাথা রেখেছিলো তাই ইজহান পদ্মের মাথাটা তার কাধে রাখলো। আর এক হাত দিয়ে পদ্মকে জড়িয়ে ধরলো। ইজহানের পাশের সিটে যে ডক্টর বসেছে, সে ডক্টর কে তার

ওয়াইফ ইজহান আর পদ্মকে দেখিয়ে বললো’দেখো ইজহান সাহেব কি রোমান্টিক। তার বউ জানালার পাশে ঘুমিয়েছে বলে বউয়ের মাথা তার কাধে রেখেছে, আর তুমি হলে আমি যদি ইচ্ছে করেও মাথাটা রাখতাম তোমার কাধে তাহলে তুমি সরিয়ে দিতে। ওনার থেকে কিছু শিখা উচিৎ তোমার। সে ডক্টর শুধু হজম করলো কথাটা। ইজহান শেখ যে এমন হবে বিয়ের পর সে জানতোই না।’

‘প্রায় ৭ ঘন্টা জার্নির পর তারা সবাই সাজেক এসে পৌঁছেছে। এর মাঝে আবার এক রেস্তোরাঁয় সবাই নাস্তাটা করে নিলো। সব কাপলদের জন্য একটা রুম আর যারা সিঙ্গেল তাদের তিন জনের জন্য আরেকটা রুম। ইজহান এতো দূর জার্নি করে টায়ার্ড। সে বেডে শুয়ে আছে আর মুনিরা শেখের সাথে কথা বলছে। পদ্ম ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। তার এই পরিবেশটা খুব ভালো লাগছে। মুগ্ধ নয়নে চারপাশ দেখছে পদ্ম। জায়গাটা যে এতো বেশি সুন্দর সে জানতোই না। ইজহান পদ্মকে ডাক দিলো কারণ মুনিরা শেখ পদ্মের সাথে কথা বলতে চায়। পদ্ম বসে বসে মুনিরা শেখের সাথে কথা বলছে আর ইজহান এই ফাঁকে ফ্রেশ হয়ে এসেছে।তারপর সবাই একসাথে যে হোটেলে উঠেছিলো ওই হোটেলেই খেয়ে নিলো।’

‘ইজহান আর পদ্ম রুমে এসেছে মাত্র খাবার খেয়ে। সবাই সন্ধ্যায় ঘুরতে বের হবে কারণ সবাই টায়ার্ড প্লাস দেরী ও হয়ে গিয়েছে লাঞ্চ করতে করতে। ইজহান রুমে এসেই শুয়ে পড়লো।’
“পদ্ম ঘুমাবে না?”
“না ঘুম আসছে না।”

‘ইজহান পদ্মকে ধমক দিলো কারণ এখন ঘুমাতেই হবে তাকে। কিন্তু পদ্ম রাজি হলো না। তাই পদ্মকে ইশারা করলো তার কাছে যাওয়ার জন্য। পদ্ম গেলো না। ইজহানের মেজাজ গরম হয়ে গিয়েছে। সে উঠে পদ্মের কাছে গেলো।’
“এতোক্ষণ ডেকেছি গায়ে লাগেনি?মানুষ মনে হয় না আমাকে?”
‘ইজহান পদ্মের হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো তাও পদ্ম যাবেনা যাবেনা বলছে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়েই রইলো।’

“বেশি অভদ্র হয়ে যাচ্ছো দিন দিন।”
‘তাও পদ্ম নড়লো এক পা। ইজহান আরও বেশি চটে গিয়েছে। পদ্মকে কোলে করে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো। পদ্ম আবারও উঠতে নিলে ইজহান পদ্মকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। ব্যাস পদ্ম আর ছুটতে পারলো না। বাধ্য হয়ে সেও ঘুমিয়ে গেলো।’

‘সন্ধ্যা ৬-৫০’
ইজহানের ঘুম ভাঙলো কলের আওয়াজে। ইজহান কলটা সাইলেন্ট করে দিলো কারণ তার পাশের মহা রানী আরামসে ঘুমাচ্ছে। প্রথম প্রথম ঘুমাবে না বলছিলো এখন সেই নিজেই বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এই পদ্মকে ঘুমালে কি আদুরে বাচ্চা লাগে। আবার ইজহানের টি-শার্ট আঁকড়ে ধরে শুয়েছে। এটা দেখে ইজহানের খুব শান্তি লাগলো। টুপ করে পদ্মের একটা চুমু বসিয়ে দিলো। তারপর পাশ থেকে চশমাটা পড়ে ফ্রেশ হলো।

পদ্মকেও উঠালো পদ্ম উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে রেডি হতে বসলো। তার সেই জাতীয় সাজ দিলো। নিজেকে নিজেই আয়নায় দেখে লজ্জা পেলো।’
‘ইজহান এতোক্ষণ ধরে পদ্মের কাহিনী দেখছিলো। তবে লাস্টের সিনটা দেখে না হেসে পারলো না। নিজে নিজে সেজে এখন আবার নিজে নিজেই হাসছে। আয়নায় ইজহানকে দেখা যাচ্ছে। পদ্ম ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ইজহানের দিকে। এই লোক এমন করে হাসছে কেনো?’

“হাসছেন কেনো আপনি?”
‘ইজহান উঠে তার টি-শার্ট টা টেনে নিলো। তারপর পদ্মের পিছনের দাঁড়িয়ে বললো-‘
“এই যে সেজে আবার লজ্জা পাচ্ছো তাই হাসি আসছে।”
‘পদ্মের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।’
“আমাকে কি ভালো লাগছে না?”

‘ইজহান পদ্মের সামনে দাঁড়ালো। পদ্মের কোমড় খুব হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো-‘
“পদ্মফুল সাজলেও সুন্দর আবার না সাজলেও সুন্দর। তবে আজ অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে।”
‘পদ্ম হাসলো। পদ্ম ইজহানের বুকে আঁকিবুঁকি করছে।’
“ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব।”

‘ইজহান পদ্মকে ছেড়ে দিলো। অনেক লেইট হয়ে গিয়েছে। রায়হান আহমেদ বারবার কল দিচ্ছেন। ইজহান তড়িঘড়ি করে পদ্মকে নিয়ে রুম থেকে বের হলো। সবাই একদম রেডি হয়ে আছে। শুধু তাদেরই দেরী। তাদের নিচে নামতে দেখতে রায়হান আহমেদ আসলেন।’
“আপনাদের এতো দেরী হচ্ছিলো কেনো?”
“ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গিয়েছিল চলুন আমরা এবার যাই।”

“আরে বুঝেন না রায়হান আহমেদ নতুন নতুন বিয়ে করেছেন তাই দেরী হয়েছে। আশাকরি আর বোঝাতে হবে না।”
‘কথাটা শুনে সবাই একসাথে হেসে দিলো। আর এর মধ্যে পদ্ম লজ্জায় শেষ। কতো বড় বড় মানুষ জন আছেন তাদের সামনে এসব কথা শোভা পায়না। যদিও সবাই ফ্রি একদম। তবে পদ্ম যে নতুন নতুন তাই হয়তো তার লজ্জা লাগছে। আর এইদিকে শানায়া রীতিমত রাগে ফুসছে। এতো আদিখ্যেতা দেখানোর কি আছে।

আজ ওই মেয়ের জায়গায় সে থাকতো সেও হয়তো এসব কথায় লজ্জা পেতো কিন্তু এখন ইজহানের পাশে অন্য মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উফ রাগ লাগছে ভিষণ।’
‘ইজহান পদ্মের হাত ধরে হাটছে। ইজহান এই সময়টা কে খুব এনজয়। আর পদ্ম সে তো সাজেক দেখায় ব্যস্ত। চারপাশে কি সুন্দর লাল নীল লাইট জ্বলছে।

ইশশ কি যে ভালো লাগছে। সবাই সবার মতো হাটছে। হঠাৎ এক পাগল পদ্মের সামনে পড়লো। পদ্ম পাগল কে দেখেই চিল্লিয়ে উঠলো। ইজহান যদিও পদ্মকে তার পিছনে রেখেছে কারণ পাগলটা বারবার পদ্মকেই ধরতে চাচ্ছিলো। শেষে ইজহান একটা ধমক দিলো পাগলটা কে। পাগলটা চলে গেলো।’

‘ইজহান পদ্মকে তার সামনে দাঁড়া করালো। পদ্মের বাহুতে হাত রেখে বললো-‘
“এভাবে চিৎকার করা লাগে?”
‘পদ্ম ভয়ে ভয়ে বলছে-‘
“আমার ভিষণ ভয় লেগেছিলো।”
‘ইজহানের রাগ হলো।’
“তুমি কোন জিনিসে ভয় পাওনা বলো?”

‘ইজহানের কথায় পদ্মের চোখ দিয়ে পানি পড়ে গেলো। এমনিতেও সে ভয় পেয়েছে। তারউপর ইজহান এমন ভাবে রেগে কথা বলছে। পদ্ম তার দু বাহু থেকে ইজহানের হাত সরিয়ে দিলো। পচা লোক একদম।’
“আবার অভিমান ও হয়েছে দেখি। আচ্ছা থাক আর বকা দিবো না আমার এই পিচ্চি বউকে।”
‘পদ্ম মুখ ফিরিয়ে নিলো।’

“হুহ কথা বলবো না আপনার সাথে।”
‘ইজহান হাসলো। দিনে কতো বার যে এই মেয়ে রাগ করে বলার বাহিরে।’
“আচ্ছা বলতে হবে না। চলো এখন।”

‘আবারও তারা হাটতে শুরু করলো। ইজহান আর পদ্ম এখন একটা চায়ের দোকানে এসেছে। তারা দু’জন চা খাচ্ছে। এই সময়ে চা আর বাহিরের হালকা প্রকৃতির বাতাস ইশশ কি যে ভালো লাগছে। ইজহান পদ্মকে নিয়ে আবার হোটেলের এইদিকে এসেছে। সবাই চেয়ারে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ইজহান পদ্মকে নিয়ে ওখানেই গেলো। মেইবি সবাই গানের কলি খেলছে। ইজহান একটা চেয়ারে বসার পর যখন পদ্ম ইজহানের পাশের চেয়ারে বসতে যাবে তখন শানায়া বসে গেলো।

ইজহানের মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেলো সে উঠে পদ্মকে নিয়ে অন্য কোথাও বসলো। সবাই গান গেয়েছে একটা একটা করে। যেহেতু ইজহান গান পারে না তাই পদ্মকে গান গাইতেই হবে। পদ্ম দ্বিধায় পড়ে গেলো৷ পদ্ম ইজহানের দিকে তাকাতেই ইজহান চোখ দিয়ে ইশারা করলো গাওয়ার জন্য।’
‘অতঃপর পদ্ম গান শুরু করলো। এই গানটা তার বান্ধুবীর ফোনে শুনেছিলো। তখন থেকেই শিখে গিয়েছে।’
❝আমার আপনহারা প্রান আমার বাঁধন ছেড়া প্রান❞

❝তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান❞
❝ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান❞
❝তোমার অশোকে কিংশুকে❞
❝অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে,❞
❝তোমার ঝাউয়ের দোল..❞
❝মর্মরিয়া উঠে আমার দুঃখরাতের গান।❞
❝তোমার হাওয়ার হাওয়ার করেছি যে দান❞

❝ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান।❞
‘পদ্ম গান গাইছে ইজহান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পদ্মের দিকে এই মেয়ে যে এতো ভালো গান জানে ইজহানকে তো কখনো শুনাইনি। কি সুন্দর কন্ঠ। পদ্মের গান শেষে সবাই হাতে তালি দেওয়া শুরু করলো। ইজহান ও হাতে তালি দিলো। সবাই পদ্মকে বলছে গানটা খুব সুন্দর হয়েছে আর পদ্ম হেসে হেসে ধন্যবাদ জানাচ্ছে সবাইকে।’
‘রাতের খাবার খেয়ে ইজহান পদ্মকে নিয়ে রুমে এসেছে।’

‘পদ্ম ব্যালকনিতে যাবে তখনই ইজহান পদ্মের হাত টেনে ধরলো।’
“এতো সুন্দর গান গাইতে পারো আমাকে তো কখনো শুনাওনি?”
“সুন্দর হয়েছে বুঝি?”
“খুব।”

“আপনি তো কখনো শুনতে চাননি? বা বলেন ও নি।”
“তাই বলে কি তুমি গাইবে না কখনো? আমি কি জানতাম আমার বউ গান গাইতে পারে?”
‘পদ্ম ইজহানের হাত ছেড়ে দিলো।’
“এখন এটা কার দোষ?”
“তোমার দোষ।”
“চলুন ব্যালকনিতে যাই।’

‘পদ্ম ইজহানের হাত ধরে ব্যালকনিতে নিয়ে গেলো। রাতের সাজেকও সুন্দর। পদ্ম ইচ্ছে মতো পকপক করছে আর ইজহান শুনছে। ব্যালকনিতে চেয়ার আর টেবিলের ব্যবস্থা আছে। ইজহান চেয়ারে বসে আছে। আর পদ্ম দাঁড়িয়ে পকপক করছে। এক পর্যায়ে ইজহান বেশ বোরিং হয়েই ফোন টা হাতে নিয়েছে। ফেসবুক স্ক্রল করছে আপাতত। পদ্ম ভাবছে ইজহান হয়তো তার কথা শুনছে তাই সে তার মতো কথা বলতেই থাকলো।

সে তো আর জানেনা ইজহান ফোন টিপছে। পদ্ম একসময়ে কথা বলতে বলতে টায়ার্ড হয়ে গেলো। পিছনে ফিরে দেখলো ইজহান ফোন টিপছে তার মানে এতোক্ষণ ইজহান তার কথা শুনছিলো না? পদ্ম রেগে গিয়েছে। রাগে ইজহানের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নিলো। ইজহান অবাক হয়ে তাকিয়ে।’

” আমি এতোক্ষণ কথা বলছিলাম আর আপনি মোবাইল দেখছিলেন?”
‘ইজহান বিব্রতবোধ করলো।’
“সরি পদ্ম।”
” এতো মোবাইলে কি দেখেন? কোন সুন্দরীর ছবি দেখেন আপনি?”
‘ইজহান আরও বেশি অবাক হলো। এই পদ্ম কি বলছে এসব পাগল হয়ে গেলো নাকি?’
” আমি কারও ছবি দেখছিলাম না।”

‘পদ্ম রেগে গিয়েছে। ইজহান পদ্মের রাগ ভাঙানোর জন্য তার কোলে পদ্মকে বসিয়ে দিলো।’
” বেশি রাগ করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আর আমি কেনো আমার বউয়ের ক্ষতি হোক সেটা চাইবো বলো?”
“আমি যে এতো কথা বলছিলাম সেগুলো?”
‘পদ্ম গালটা ফোটকা মাছের মতো করে রাখলো। ইজহান পদ্মকে আরও ডিপলি জড়িয়ে ধরলো। আবেশে চোখ বন্ধ করে আছে পদ্ম।’

“পদ্ম আজ আমাদের বিয়ের ১মাস পূর্ণ হলো।”
‘পদ্মের চোখ চকচক করছে। যেনো এই লোকের সাথে তার কতো বছরের সম্পর্ক। মনেই হচ্ছে না তাদের বিয়ের একমাস হয়েছে।’
“আমার মনেই ছিলো না।”

‘ইজহান বাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো-‘
“এগুলো মনে থাকবে কি করে?”
‘পদ্ম টুপ করে ইজহানের কপালে তার ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো।’
“আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসা ডাক্তার সাহেব। ভালোবাসি আপনাকে।”

[আসসালামু আলাইকুম। সবাই কেমন আছেন? কালকের পর্বে আমার কোনো মতামত ছিলো না প্লাস পর্বটাও ছোট ছিলো এটা কেউ খেয়াল করেছেন? আচ্ছা আমি আজ একটা কথা বলতে এসেছি একটা মহিলা প্রথম থেকে ক্রমাগত আমার গল্প নিয়ে বাজে মন্তব্য করছেন। আমি তো বলেছি এটা আমার লেখা নতুন গল্প হয়তো কিছু উল্টো পাল্টা হচ্ছে,তাই বলে ওনি প্রতিদিন গল্প নিয়ে এসব বলবেন?

প্রেমের রঙ পর্ব ৯

আমি চেইক করেছি ওনি আরও কয়েকজন লেখিকার গল্পতে এমন করেন নায়িকারা নাকি সব ন্যাকা হয়। আশ্চর্য কেউ তো ওনাকে বলে না গল্প পড়তে নিজেই আগ বাড়িয়ে গল্প পড়ে আবার নিজেই আগ বাড়িয়ে বাজে মন্তব্য করে। একজন লেখিকা কতো কাজের ফাঁকে কতো কষ্টের পর গল্প লিখেন সেটা আমরা লেখিকারাই একমাত্র জানি।প্রতিদিন এক এক পর্ব লিখা কতোটা কষ্টকর তাও তো পাঠক/পাঠিকাদের ভালোবাসেন বলেই তো গল্প গুলো লিখেন। এমন কমেন্ট দেখলে গল্প লিখার সাহস থাকে না আসলে। আর যারা ভালো ভালো কমেন্ট করেন তাদের জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা💙। সর্বশেষ কথা ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। শব্দসংখা ২১৫৭]

প্রেমের রঙ পর্ব ১১