প্রেম নেশা পর্ব ১+২
শান্তনা আক্তার
বাসরঘরে বলিরপাঠা হয়ে এক হাত ঘোমটা দিয়ে বসে আছে শান্তনা। তার মাথায় হাজারো প্রশ্ন? কেন তার হাসি খুশি জীবনটা এভাবে দমকা-ঝড়ের মতো বিলুপ্ত হয়ে গেল।হঠাৎ কি এমন ঘটল যার জন্য আজ তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।এসব ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটল দরজা লাগানোর শব্দে।শান্তনার বুঝতে বাকি রইল না যে কে এসেছে।
আমি জানি তুমি এই বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলে না। আমি এটাও জানি তুমি ছোট একটা মেয়ে। কিন্তু এটা ছাড়া আমার আর কোনো পথ ছিলো না।
।
মেঘের কথায় ঘোমটা তুলে মাথা উচু করে তাকালো শান্তনা। চোখ বেয়ে পানি ঝরছে অনবরত। চোখের পানি আর মেকআপ মিলেমিশে বিদঘুটে আকৃতির হয়ে গেছে।নিজেকে সামলে মেঘের কাছে প্রশ্ন ছুড়েই দিল সে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আপনি তো রথি আপুকে ভালবাসেন তাহলে আমাকে বিয়ে করার মানে কি? আর আপনার ভাইয়ের সাথেই বা আপুর বিয়ে কেন হল?আর আপনি যে আব্বুর স্যারের ছেলে সেটাও কেন গোপন রেখেছিলেন?কেন বলেছিলেন আপনি একজন সাধারণ staff?মিথ্যা বলে দিনের পরদিন আপুর সাথে রিলেশন চালিয়ে গিয়েছিলেন।কিন্ত কেন?সত্যিটা কেন বলেননি?আপনি তো বলেছিলেন আপনার বাবা মুদি দোকানে কাজ করে কিন্ত আপনার বাবাই যে আমার আব্বুর স্যার এটা কেন লুকালেন? যাকে ভালবেসেন তাকে অবদি মিথ্যা বলেছেন আপনি।আপনি তো খুব গরিব সাধারণ মানুষ।এটাই তো বলেছিলেন।দুদিন আগে অব্দি ও আমি আর আপু এটাই মনে প্রানে বিশ্বাস করতাম।কিন্তু আপনি তো সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছেন।মানলাম মিথ্যা বলেছিলেন,,,কিন্তু আমাকে কেন বিয়ে করলেন?কি দোষ ছিল আমার?যার জন্য সবে এসএসসি দেওয়া এক কিশোরীকে বলিরপাঠা হতে হল?এইসব গুলো প্রশ্নের উত্তর দিন মিস্টার মেঘ আহমেদ? সরি আজমল চৌধুরির ছোট ছেলে মেঘ চৌধুরি,,,,,,,,,,,
শান্তনার এই প্রশ্নের মুখে মেঘকে যে পড়তে হবে সেটা তার খুব ভালো ভাবেই জানা ছিল।
।
আমি তোমার কোনো প্রশ্নেরই জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নই। রাত হয়েছে ঘুম পাচ্ছে। আমি জামা বদলে আসছি। তুমিও চেঞ্জ করে শুয়ে পরো।
।
কিন্ত মেঘ ভাইয়া আম,,,,, আর এক সেকেন্ড ও না দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
।
এদিকে শান্তনার নাক মুখ খিচে রাগ উঠে গেছে।
ব্যাটা হুদমো কাউয়া। ঠ্যাং ভাংগা ইঁদুর। একে আমার জীবন নিয়ে খেলা তার উপর আমার প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া। তোর থেকে উত্তর আমি নিয়েই ছাড়বো এই বলে দিলাম। তুমিও বাপু কার পাল্লায় পড়েছো জানো না। খাল কেটে কুমির এনেছো। তার কথার মাঝেই মেঘ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। মেঘকে দেখে শান্তনা দোঁড়ে মেঘের সামনে চলে যায়।
দাঁড়িয়ে না থেকে লেহেংগাটা বদলে আসো গিয়ে।
।
আগে আমার প্রশ্নের উত্তর চাই(চোখ রাঙিয়)
।
মেঘ চুপচাপ পাশ কেটে বিছানার উপর গিয়ে শুয়ে পেড়।
এখানে শান্তনা বলদের মতো দাঁড়িয়ে আছে প্রচুর রাগ নিয়ে।কি হলো যেন সে বুঝলই না।
উঠুন বলছি,,, উঠুন। আমার উত্তর আমি চাই। মেঘ চুপচাপ ড্রয়ার থেকে তুলা বের করে দু কানে গুজে পুনরায় শুয়ে পড়ে।
রাগে দুঃখে নিজের চুল একটা একটা করে ছিঁড়তে ইচ্ছা করছে শান্তনার। কিছুক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকার পর পাশে থাকা ড্রয়ারে লাথি মেরে কিঞ্চিৎ চিৎকার দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যায় চেঞ্জ করার উদ্দেশ্যে।
এদিকে মেঘ তো হেসে কুটিকুটি। পরক্ষণে রথির কথা মনে করতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আপনা আপনি বলে উঠে,,,
কেন করলে এমন রথি? তোমার জন্য আজ আমার আর তোমার বোন শান্তনার জীবনও নষ্ট হয়ে গেল। আমি না পারবো ওকে স্বামীর অধিকার দিতে আর না পারবো ভালবাসতে।কিন্তু ওর জীবনটা সাজিয়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করব। যাতে কিছুটা হলেও ওর প্রতি করা অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারি। এরই মাঝে শান্তনা বেরিয়ে আসে। তবে তার মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ। বেচারি না পারছে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে আর না পারছে মেঘকে চিবিয়ে খেতে। কিন্তু শান্তনার মাথায় অন্য কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা হচ্ছে ও ঘুমাবে কই?
ধুর ব্যাটা চামচিকার চাচা তো খাটে শুয়ে পড়েছে এখন আমি কোথায় ঘুমাবো। মাটিতে শুলে আমার আবার ঘাড় ব্যাথা করে। সোফায় শুলে আমি যদি পরে যাই? না না আমার নানহি জান এতো বড় ধকল নিতে পারবে না। তার চেয়ে বরং আমি মেঘ ভাইয়ার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ি। যেই ভাবা সেই কাজ। শান্তনা গিয়ে মেঘের বিপরীতে শুয়ে পড়ে উল্টো দিক ফিরে।মাঝে একটা পাশবালিশ ও রেখেছে। কিন্তু ঘুম যে তার চোখ ছোঁয় না। তার মাথায় তো প্রশ্নের ফুলঝুরি।
।
কেন আল্লাহ কেন? কদিন আগেও কত ভালো ছিলাম বাবা-মা, ভাই-বোন, ফ্রেন্ডসদের নিয়ে।আমার সাথেই এমন কেন হল? চোখ বুজতেই পিছনের মুহুর্তগুলো ভেসে উঠল,,,
।
কিরে শান্ত ঘুম থেকে উঠ পরিক্ষার সময় হয়ে এলো যে।
মিলি বেগমের ডাকে লাফ দিয়ে উঠে পড়ে শান্তনা। ঘড়ির দিকে তাকাতেই মাথা চড়কগাছ তার।
।
উফ আম্মুই এখন সবে 4 টা বেজে 45 মিনিট হয়েছে।এখন নিশ্চয়ই আমি এক্সাম দিতে যাব না।
।
আরে বাবা নামাজ পড়তে হবে তো।
।
আমি 5 টার পর উঠে পড়ে নিব আম্মুইই।
।
তা বললে কিভাবে হয়? পড়া রিভিশন করতে হবে তো নাকি।তোর বাবা তো রাত জেগে পড়তেও দেননি কখনো তোকে আর রথিকে।
অহ নো( মাথায় হাত দিয়ে)। ঠিক কাজ করেছো ডেকে। উম্মম্মম্মায়ায়াহহ আম্মুইই। সোজা বাথরুমে চলে গেল।
।
পাগলী মেয়ে আমার।(বিছানা গোছাতে গোছাতে)
।
আল্লাহ আজ আমার শান্তনা মামনির এসএসসি এক্সাম শুরু হতে যাবে। তুমি আমার মেয়েকে ধৈর্যধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দাও। ও যেন সুস্থ দেহে ঠান্ডা মাথায় সব গুলো পরীক্ষা দিতে পারে আমিন। নামাজ পড়ে মেয়ের জন্য দোয়া করলেন জিল্লুর রহমান।
।
মিলি,,, এই মিলি,,,মিলি
আরে বাবা আসছি তো আচলে হাত মুছতে মুছতে বলল মিলি বেগম।
।
আহা রাগছো কেন। খুব জরুরি কাজ সম্পাদন করতে ছিলে বুঝি?
জিল্লুর রহমানের কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন মিলি বেগম।
।
আ মলো যা,,,শুনি নাস্তা না বানালে কি খাবেন আপনারা বাপ বেটি হুম?এটা কোনো জরুরি কাজের থেকে কম কি?
।
তা যা বলেছো। কিন্ত আমি কথাটা সেভাবে বলিনি গো। যাই হোক আমার শান্তনা মামনি উঠেছে তো?
।
তুলে আসলাম মাত্র। আমার জীবনটা তো তোমাদের খেদমত করতেই পার হয়ে গেল।তাও তোমরা কেউ বুঝলে না।(অভিমানি সুরে)
তুমি না থাকলে তো আমরা বানের জলে ভেসেই যেতাম। তুমি তো সংসার টাকে এক আঁচলে বেঁধে রেখেছো।
জিল্লুর রহমানের কথায় মিলি বেগম গলে ক্ষির।
।
হয়েছে হয়েছে এবার আসল কথা বলো কেন ডেকেছো তাই বলো মেলা কাজ পড়ে আছে।
।
তুমি এবার যেতে পার আমি শান্তনা মামনির জন্যই ডেকেছিলাম।
।
সামান্য কথাটার জন্য আমায় ডাকলে তুমি?
।
কি যেন পোড়ার গন্ধ নাকে ভেসে আসছে। কি হতে পারে মিলি?
হায় হায়,,আমার সবজি বলে তরিঘরি করে চলে গেলেন মিলি বেগম।
।
বাঁচা গেল আল্লাহ।
।
এই রথি তোর ভার্সিটি যাওয়ার সময় হয়ে গেছে চালু আয়। রথি হচ্ছে জিল্লুর রহমান আর মিলি বেগমের বড় মেয়ে।পর্যায়ক্রমে শান্তনা মেঝো মেয়ে । তামিম হচ্ছে ছোট ভাই।এবার ক্লাস 4 এ উঠেছে।সবাই একসাথে বসে নাস্তা করছে।
।
আম্মুই আর খেতে পারবো না শান্তনার সাথে রথি আর তামিম ও বলে উঠে।
তা বললে কিভাবে হয়?
।
আম্মু তুমি সময় দেখেছো? শান্তনা এক্সাম হলে যাবে কখন আর সিট খুজবেই না কখন।
রথির কথায় সবাই ঘড়ির দিকে তাকায়।
।
আম্মুই আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে এবার যেতে হবে।
।
একাই যাবি?
।
হুম আম্মু। আপুর তো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তাই আমি একাই যাচ্ছি।
।
না আমার মামনি একা কেন যাবে তার আব্বু থাকতে।
সত্যি তুমি যাবে আমার সাথে?
।
কেন নয়। আমি স্যারের থেকে ছুটি নিয়ে আসছি আজ তোর জন্য।
।
thank you আব্বু (আব্বুকে জড়িয়ে)
হয়েছে এবার তোমরা যাবে নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে আব্বু?
।
যাচ্ছি তো রথি মা। তবে কাল থেকে তোকেই যেতে হবে ওর সাথে।
।
সমস্যা নেই আমি কাল থেকে যেতে পারবো।আর শান্তনা তোকে যা যা বলেছি সব মনে রাখবি। প্রশ্ন গুলো পেয়েই লিখা শুরু করবি না।পুরোটা পড়ে তারপর যেটা ভালো পারবি ওটা আগে লিখবি।
।
ঠিক আছে আপু আমি মনে রাখবো।
।
এবার চল মা।
দাঁড়াও আব্বু,,,শান্তনা মিলি বেগম ও রথিকে সালাম করল। সবাই all the best জানালো। সাথে তামিম ও।
।
ভালো করে পরীক্ষা দিস আপু।
।
দোয়া করিস ভাই।বলে রওয়ানা হলো শান্তনা আর জিল্লুর রহমান। সময়মতো পৌঁছে গেল তারা। শান্তনা জিল্লুর রহমানের থেকে দোয়া নিয়ে হলে প্রবেশ করলো,,,,,,
এক্সাম শেষে বেরিয়ে এসে আব্বুকে খুজতে শুরু করল শান্তনা। কিছুক্ষণ পর পেয়েও গেল সে।
।
কেমন হয়েছে পরীক্ষা মামনি?
।
আলহামদুলিল্লাহ ভালোই।টুকটাক কথা বলতে বলতে তারা বাসায় চলে আসে।
তারপর বাসায় এসে দুপুরে খেয়ে দেয়ে ধুমসে ঘুম দেয় শান্তনা। দিন রাত তার আপন গতিতে যেতে থাকে।
।
আজ লাস্ট এক্সাম শান্তনার। বাকি ওক্সাম গুলোতে রথির সাথেই গিয়েছিল এক্সাম হলে আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।এক্সাম শেষ করে বাইরে বের হতেই রথিকে দেখতে পায় শান্তনা।
।
আপু?? (হাত দিয়ে ইশারা করে)
রথি ও ওর কাছে যায়।
।
কিরে কেমন হয়েছে তোর এক্সাম?
।
ভালোই। আজ থেকে আমি মুক্ত (বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে)
।
জ্বি না। জাস্ট 3 মাসের জন্য। তারপর থেকে আবার পড়াশোনা শুরু।
।
যাই হোক এই তিনমাস তো রিলেক্স থাকতে পারব। এরই মাঝে আপুর ফোনে রিং বেজে উঠে।
।
হ্যালো,,,
,,,,,,,,,,
।
এইতো ছোট বোনের এক্সাম মাত্র শেষ হল।
।
,,,,,,,,,,,
।
কিহ!! ওকে আমি আসছি ওয়েট করো।
।
কেরে আপু?
।
মেঘ।
মেঘ? আব্বু যেই অফিসে কাজ করে সেখানকার হিসাবরক্ষক।যার সাথে সেদিন পরিচয় হয়েছিল। তাইনা?
।
একদম ঠিক।
।
উনি তোকে কেন ফোন দিলেন?
।
তোকে সব পরে বলবো এখন চল বাইরে মেঘ ওয়েট করছে।
।
কিন্ত,,,,
।
চল তো(প্রায় টেনেই নিয়ে গেল শান্তনাকে।এর মাঝে শান্তনা অনেক প্রশ্ন করেছে কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি)
।
হায় রথি,,
মেঘের ডাকে শান্তনা আর রথি পিছনে ফিরেই তাকে দেখতে পাই। ব্লাক টি-শার্ট তার উপর ব্লু ব্লেজার পড়েছে মেঘ । চোখে ব্লাক সানগ্লাসের সাথে পুরোই ড্যাশিং বয় লাগছে তাকে।গালে চাপ দাঁড়ির সাথে টোল পড়া হাসি এক ঝলকেই হাজারো মেয়েকে ঘায়েল করতে কাফি।তবে শান্তনার তাতে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। ও এটা ভেবেই কুল পাচ্ছে না যে রথির সাথে মেঘের কি রিলেশন।
।
হ্যালো,,,তা কি মনে এখানে এলে?
।
কেন আবার,,আমার পিচ্চি শালিকার এক্সাম আজ শেষ হলো তাই হবু বউ আর পিচ্চি শালিকাকে ট্রিট দিতে এলাম।
মেঘের মুখে হবু বউ কথাটা শুনে খানিক চমকে উঠে শান্তনা।তবে তার কাছে ব্যাপারটা পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যায় এবং সে তার এতক্ষণের কেনোর উত্তরটাও পেয়ে যায়।তবে তাকে পিচ্চি বলায় কিছুটা ক্ষেপে উঠে।
কাকে পিচ্চি বলছেন হুম?আমাকে দেখে কি পিচ্চি মনে হয়(কপাল ঘুচিয়ে রাগ নিয়ে)
শান্তনার এক্সপ্রেশন দেখে মেঘ ও রথি উভয়ই হো হো করে হেসে দেয়। তা দেখে শান্তনার রাগ প্রায় সাত আসমান ছুই ছুই।
।
আপুউউউউউ জোড়ে চিৎকার দিয়ে কেঁদেই দিল শান্তনা। আমি পিচ্চি না অ্যাাাা য়াাাা এ্যাাায়য়।
।
দেখেছো রথি তোমার বোনের কান্ড-কারখানা। সামান্য পিচ্চি বলায় বাচ্চাদের মতো কেঁদেই দিল হা হা হা।
।
আপু আমি বাড়ি যা এ্যায়া।
আপু আমি বাড়ি যাব এ্যাা( মেঘ শান্তনার কথার পুনরাবৃত্তি করল তবে ভেঙিয়ে)
।
ইইইইইইইইই( রেগে দাঁত কিলবিল করে শব্দ করছে শান্তনা)
।
আহ মেঘ আমার বোনটাকে আর রাগিও নাতো।
।
তোমার বোনকে রাগাতে যে আমার খুব ভালো লাগছে। এখন থেকে যখনি দেখা করবে তোমার রাগিনি পিচ্চি বোনকে নিয়ে আসবে।
।
কেন?
।
রাগাবো তাই। আমার খুব ভালো লাগছে ওকে রাগিয়ে।
আপু তুই যাবি নাকি আমি একাই যাব ফ্রেন্ডদের সাথে।
।
তা বললে কিভাবে হয় পিচ্চি রাগিনি শালিকা আমার।
।
এই গেলাম আমি।
।
আরে আরে কই যাচ্ছিস? ভালো বোন আমার আচ্ছা ঠিক আছে আমি মেঘকে বোকে দিচ্ছি কেমন?মেঘ তুমি সরি বলো ওকে।
।
সরি পিচ্ছি,,,
।
আপু,,, আবার পিচ্চি বলছে আমাকে।
মেঘ (চোখ রাঙিয়ে মেঘের দিকে তাক করল রথি)
।
আচ্ছা,, আচ্ছা,,,সরি শান্তনা।
।
এভাবে না কান ধরে ওঠবস করে বলতে হবে।
।
আচ্ছা কান ধরে ওঠবস করেই বল্লাম নেও সরি।এবার হ্যাপি?
।
হুম(মাথা ঝাকিয়)
।
তাহলে যাওয়া যাক?
কিন্তু মেঘ কোথায় যাব আমরা?
।
পাশেই একটা পার্কে।
।
কিন্তু আপু,, আম্মু আব্বু তো টেনশন করবে।
।
সেটা তোকে ভাবতে হবে না আমি ফোন করে জানিয়ে দিব। তারপর মেঘ ভাইয়া বাইকে চড়তে বললেন। রথি মাঝে বসতে নিবে তখন,,,
।
রথি তুমি পিছনে বসো পিচ্চি শালিকা,,, সরি শান্তনা কে মাঝে বসতে দাও।
।
কেন আমি বড় হয়ে গিয়েছি।পিছনে বসতে পারবো। understand?
না না। মেঘ ঠিকই বলেছে।তুই মাঝে বোস।
।
না আমি পিছনেই বসবো।
।
রথি তুমি যে সেদিন ছিটকে বাইক থেকে পড়ে গিয়েছিলে মনে আছে তো(রথি কে চোখ মেরে)
।
কবে? ও হ্যা৷ মাগো এখনো মাজার ব্যাথা যায়নি আমার।(মাজায় হাত দিয়ে)
।
বাপরে আমি উঠবোই না এনার বাইকে(ভয় পেয়ে)
আরে এখন আমার অভ্যাস হয়ে গেছে পিছনে বসতে বসতে। এখন পড়বো না কিন্তু তুইই।
শান্তনা আর কথা না বাড়িয়ে মাঝেই বসে পড়ে।মেঘ আর রথি কোনোমতে নিজেদের হাসি আটকে রাখে। তারপর মেঘ বাইক start দেয়।
এদিকে শান্তনার প্রাণ যায় যায়।
।
আপু এনাকে আস্তে চালাতে বল প্লিজ।আব্বুর বাইকে চড়েছি কই এভাবে তো আব্বু চালায় না।
।
আরে তুই মেঘকে ধরে বোস। আর তুই ওকে ভাইয়া বল। এনাকে বলো,,, এটা কি ধরনের কথা হুম?
।
সরি আপু। কিন্ত ভাইয়া আপনি এতো spread এ কেন চালাচ্ছেন?
।
আমি এভাবেই চালাই।তোমার আপু যেটা বলেছে তাই করো।আমাকে ধরে বসো।
শান্তনা কিছুটা ইতস্ততবোধ করলেও পরবর্তীতে ধিরে ধিরে বাইকের গতি আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় তার এক হাত দিয়ে মেঘের কোমড় জড়িয়েই ধরে। সারা বিকেল ঘুরেফিরে খাওয়া দাওয়া করে বিকাল 5টায় তারা বাসায় ফিরে।যেহেতু রথি আগে থেকেই বাসায় ফোন করে তাদের ঘুরতে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেয় সেহেতু কোনো প্রকার প্রশ্নের সম্মুখীন তাদের হতে হয়নি। এরপর থেকে যখনই মেঘ আর সান্তনার দেখা হয় মেঘ শান্তনাকে রাগায়।শান্তনাও রেগে ফায়ার হয়ে যায়।কিন্ত প্রথম প্রথম শান্তনার বিরক্ত লাগলেও পরবর্তীতে মেঘের সাথে ফ্রেন্ডলি হয়ে যায়। রাগারাগি একে অপরকে ক্ষেপানো প্রায় habit এ পরিনত হয়।
এসব পুরনো কথার পুনরাবৃত্তি করতে করতেই শান্তনার চোখ লেগে আসে।
রথি একবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার দরজার দিকে।ভারি লেহেংগা তার উপর ভারি গহনা টানা 5 ঘন্টা যাবৎ পড়ে আছে রথি।
উফ অসহ্যকর 11টা বাজতে চলল এখনো ওনার আসার নামই নেই। বলি বাসরঘরে নতুন বউকে রেখে উনি কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে গিয়েছে কে জানে। ধুর,,,,
।
আমার বউটা বুঝি খুব রেগে আছে।
।
সামিরের কন্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকায় রথি।
।
আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?(রক্তচক্ষু নিয়ে তাকাল রথি)
সরি বউ,,,,,তোমার সব রাগ গায়েব করে দিব ওয়েট।
দরজা বন্ধ করে খাটে গিয়ে বসল সামির।
।
বলুন জলদি?
।
চোখ বন্ধ করো আগে?
।
হুম করলাম।
।
এবার চোখ খুলো।
।
রথি চোখ খুলতেই চরম অবাক হল। সামির তার জন্য হিরের নেকলেস এনেছে।রথি চট করে নেকলেস টা নিজের হাতে নিয়ে নিল।
।
ওয়াও,, Diamond neckless…
এটার জন্যই লেট হয়ে গেল। তোমার পছন্দ হয়েছে তো রথি?
।
খুব পছন্দ হয়েছে। লাভ ইউ সামির।
।
লাভ ইউ টু রথি সোনা।
।
তবে আরেকটু মোটা হলে ভালো লাগতো পুরা কুইনদের মতো লাগতো আমাকে।
।
এটার দামই 18 লাখ পড়েছে।তবে আমার রথি যখন বলেছে তাহলে তার স্বামী তাকে এর থেকেও বড় নেকলেস দিবে।
।
সত্যি?
হুম 3 সত্যি। তারপর সামির নিজ হাতে নেকলেস টা রথি কে পড়িয়ে দেয়।
।
রথি পাখি,,,
।
হুম?
।
আমাকে কিছু দিবে না?
।
কি দিব আমার কাছে তো কিছু নেই।
।
আছে। আচমকাই সামির রথির ঠোট জোড়া আঁকড়ে ধরে। লাইট অফ করে হারিয়ে যায় দুজন দুজনাতে।
সকালে কারো গোঙানোর শব্দে শান্তনার ঘুম ভেঙে যায়। মুখ ঘুরাতেই দেখে মেঘ ঘুমের ঘোরে কি যেন বলছে। সেটা শোনার জন্য শান্তনা একটু কাছে যায়।এবার সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে
রথি আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। তুমি আমার রথি।তুমি আমার।
কথা গুলো শুনে শান্তনার বুকটা মুচড়ে উঠে।ভাল হয়তো সে বাসে না তবে লিগালি মেঘ তো তার স্বামী। তাই কিছুটা খারাপ লাগা কাজ করছে তার। কিন্তু তার খারাপ লাগাটা ভয়ে পরিনত হয় যখন মেঘের হাত শান্তনার হাত ছোয়।
।
এত গরম কেন ওনার হাত। দেখিতো। বলেই মেঘের কপালে শান্তনার হাত ছোয়ালো।
এমা ওনার গা তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।