ফেরারি প্রেম গল্পের লিংক || নিশাত জাহান নিশি

ফেরারি প্রেম পর্ব ১
নিশাত জাহান নিশি

“বিয়ের প্রথম রাতেই জানতে পারি আমি সন্তান সম্ভবা! নিঃসন্দেহে অমি ভাইয়ার সন্তান আমার গর্ভে বেড়ে উঠছে! অথচ ঘণ্টা পাঁচেক পূর্বেই আমি তিন কবুল পড়ে আমার পরিবারের ঠিক করা পাত্রকে বিয়ে করি! এই খবরটা এখন জানাজানি হয়ে গেলে-ই দুনিয়াটা আমার ন’র’ক হয়ে উঠবে! বাপের বাড়ি, শ্বশুড় বাড়ি সর্বস্ব হারাতে হবে।”

বাসর ঘরে বসে চক্ষু ভরা আ’ত’ঙ্ক নিয়ে পিয়াসা অর্নগল কথাগুলো বলেই কয়েকদফা রুদ্ধশ্বাস ফেলল! ঘামের উষ্ণ নোনা জল টপটপ করে তার শিরদাড়া বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। চোখের জলও যেন বাঁধ ভাঙতে লাগল।
নিশ্চুপ হয়ে হাঁটা থামিয়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল ‘নীহারিকা!’ ঘরের অর্ধ খোলা দরজা খুলে সে তার নতুন ভাবির ঘরে প্রবেশ করতে গিয়েও থেমে গেল। স্বয়ং নিজ কানে এ কী শুনল সে? তার ভাবি সত্যিই অন্তঃসত্ত্বা? অন্য কারো নাজায়েজ সন্তান তার ভাবির গর্ভে বেড়ে উঠছে? মাথাটা যেন ভোঁ ভোঁ করে ঘুরে উঠল নীহারিকার।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এই মুহূর্তে সে ঠিক কী করবে না করবে উপায় বুদ্ধি খুঁজে পাচ্ছিল না। এই মহা কেলেঙ্কারির খবরটা কীভাবে সে তার পরিবারকে জানাবে তাই ভেবেই মরিয়া হয়ে উঠল। অমনি হঠাৎ তার অস্থির দৃষ্টি পড়ল তার ভাবির বড়ো ভাই দ্যা ইয়াং, হ্যান্ডসাম ‘রূপলের’ দিকে! বাড়িভর্তি গেস্টেদের ভীড় মাড়িয়ে সে তাদের বাড়ি থেকে আনা চিড়া, মুড়ি, ফলমূল, নানা রকম পিঠাপুলি নিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করছে। রূপলের উপর যদিও নীহারিকা বহু আগে থেকেই ফিদা তবে এই মুহূর্তে রূপলের উপর তার বেশ ক্ষোভ জমেছে! রাগে এক প্রকার ফেটে পড়ে সে দ্রুত পায়ে হেঁটে গেল রূপলের দিকে। অধিক পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়া নিস্তেজ রূপলের মুখোমুখি দাঁড়ালো সে। অমনি রূপলের ব্যস্ত দৃষ্টি পড়ল নীহারিকার দিকে। কিছুটা অবাক হয়ে রূপল ভ্রু যুগল কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“হোয়াট হ্যাপেন্ড? কিছু বলবেন?
চিৎকার করে তার বোনের কুকীর্তির কথা প্রকাশ করতে গিয়েও থেমে গেল নীহারিকা! বাড়িভর্তি গেস্টদের সামনে সে কোনো সিনক্রিয়েট করতে চায়না। এতে বরং তাদেরই বদনাম হবে। সমাজে তাদের পরিবারেরই দুর্নাম হবে। রাগটাকে কিঞ্চিৎ দমিয়ে এনে সে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলল,
“সাইডে আসুন কথা আছে।”

বিষয়টাকে বেশ মজার ছলে দেখল রূপল! সিনেমার হিরোদের মত ভাবসাব নিয়ে সে ঘামে ভেজা পাঞ্জাবির কলারটা পেছনের দিকে এলিয়ে দিলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে বেশ হেয়ালি গলায় বলল,
“কী বলবেন এখানেই বলুন। মেয়েদের সাথে সাইডে যাওয়ার অভ্যেস নেই আমার! ইভেন আমার দিক থেকে আমি এখনও হান্ড্রেড পার্সেন্ট পিওর এন্ড ভার্জিন পুরুষ। বেয়াইন বলেই যে সাইডে ডাকলেই যেতে হবে বিষয়টা কিন্তু এমন নয় ওকে?”
“আমি আপনার সাথে কোনো ইয়ার্কি করছিনা স্টু’পি’ট। এখানে কিছু বললে আপনাদেরই মান সম্মান হানি হবে। আপনার বোনেরই কে’লে’ঙ্কারি হবে!”

বিষয়টাকে এবার সিরিয়াসলি নিতে বাধ্য হলো রূপল। তৎপর দৃষ্টিতে সে নীহারিকার দিকে তাকালো। হাত থেকে চিড়া মুড়ির পাত্রগুলো নিচে রেখে সে নীহারিকার পিছু পিছু বেলকনির দিকে হেঁটে গেল। দুজনই নিরিবিলি জায়গায় পাশাপাশি দাঁড়ালো। কোনোরূপ ভনিতা ছাড়াই নীহারিকা খরখরে গলায় রূপলকে বলল,
“বিয়ের আগে আপনারা যেন কী বলেছিলেন? আপনার বোনের কোথাও কোনো এফেয়ার ছিলনা তাইতো?”
চোখেমুখে চমকে ওঠা ভাব নিয়ে রূপল প্রত্যত্তুরে বলল,

“হ্যাঁ ছিলনা। হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
পূর্বের তুলনায় অতি রুষ্ট হয়ে নীহারিকা বলল,
“তাহলে আপনার বোন প্রেগনেন্ট কীভাবে হলো হ্যাঁ?”
মুহূর্তেই যেন রূপলের সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল! চেহারার রঙ পাল্টে গেল। অতি আশ্চর্যিত হয়ে সে নিস্তেজ গলায় বলল,
“হোয়াট? এসব আপনি কী বলছেন?”

“যা সত্যি তাই বলছি। বিশ্বাস না হলে আপনার বোনকে গিয়ে সত্যিটা জিজ্ঞেস করুন। তাহলেই উত্তর পেয়ে যাবেন।”
“আপনি আমার চেয়ে আমার বোনকে বেশী চিনেন হ্যাঁ? দীর্ঘ বাইশ বছর ধরে আমি আমার বোনকে চিনি। দুই দিনের পরিচয়ে তার সম্পর্কে আপনি যা নয় তা মন্তব্য করে যাবেন আর আমি সব বিশ্বাস করে নিব? এতই সহজ সব?”
“হেই লিসেন? গলা নামিয়ে কথা বলুন। আমি দুই দিনের পরিচয়ে আপনার বোনকে যতটা চিনেছি আপনি তা গত বাইশ বছরের পরিচয়েও চিনেন নি! বিশ্বাস না হয় তো আপনার বোনকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন কী করেছে সে। কোন পাপের বোঝা সে আমার ভাইয়ার কাঁধে তুলে দিতে চেয়েছিল গিয়ে জিজ্ঞেস করুন!”

আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না রূপল। ঝড়ের বেগে ছুটে গেল সে পিয়াসার বাসর ঘরে। রুমে ঢুকতেই দেখল পিয়াসা তার গাঁয়ের সমস্ত স্বর্ণ গহনা খুলে ফ্লোরে বসে কপাল চাপরে কাঁদছে! হীনমন্যতায় ভুলেই গেছে প্রায় এটা তার শ্বশুড় বাড়ি। এখানে তার কুকর্ম ফাঁস করতে নেই! গোপনীয়তা রক্ষা করে চলতে হবে। পিয়াসার এই করুন অবস্থা দেখে রূপলের ভয় বাড়তে লাগল। বোনের প্রতি তার বিশ্বাস হারাতে লাগল। ধীর পায়ে হেঁটে সে হাঁটু মুড়ে পিয়াসার পাশে বসল। শুকনো গলায় বলল,

“কী হয়েছে তোর হ্যাঁ? কাঁদছিস কেন তুই?
ভরসার জায়গা খুঁজে পেয়ে পিয়াসা অমনি রূপলকে জড়িয়ে ধরল। হাউমাউ করে কেঁদে বলল,
“বিশাল বড়ো ভুল হয়ে গেছে আমার ভাই! প্লিজ আমাকে মাফ করে দে। আমি তোর পায়ে পড়ি ভাই। প্লিজ আমাকে মাফ করো দে।”
“কী হয়েছে আগে তো বল?”
“আমি হয়ত মা হতে চলেছি ভাই!”

অমনি পিয়াসাকে ছেড়ে এক ফুট দূরে ছিটকে গেল রূপল! হতবাক দৃষ্টিতে সে পিয়াসার দিকে তাকালো। মাথা কাজ করা তার বন্ধ করে দিলো। দিশাহারা হয়ে গেল সে। অবিশ্বাস্য গলায় বলল,
“এসব তুই কী বলছিস পিয়াসা? তুই মা হতে চলেছিস মানে? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?”
হাত জোর করে ডুকরে কেঁদে পিয়াসা বলল,
“আমাকে মাফ করে দিস ভাই! প্লিজ আমাকে মাফ করে দিস। আমি তোদের ঠকিয়েছি!”

বাকরুদ্ধ হয়ে গেল রূপল! বিশৃঙ্খলভাবে শ্বাস ফেলতে লাগল। ঘামে জবজবে হয়ে উঠল তার সমস্ত দেহ। সম্পূর্ণ নির্বাক হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল সে। এই মুহূর্তে চরম হতাশায় জর্জরিত সে। এরমধ্যেই রুমের দরজা ঠেলে নীহারিকা প্রবেশ করল রুমে। সাথে রয়েছে তার মা, বাবা এবং ভাই! মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা তাদের। আগুনের ফুলকি যেন বের হয়ে আসছে তাদের চোখ থেকে। বুঝতে বেশী বেগ পেতে হলোনা যা কেচ্ছা রটানোর নীহারিকা তা রটিয়ে দিয়েছে! অবশ্য এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেউ হাতে ধরে নিজের পরিবারের ক্ষতি করতে চাইবেনা।

উপস্থিত সবার এহেন ভয়ঙ্কর রূপ দেখে ভয়ে কেঁপে উঠল পিয়াসা এবং রূপল। তাড়াহুড়ো করে রূপল বসা থেকে ওঠে পিয়াসাকেও টেনে বসা থেকে উঠালো। ঢাল হয়ে রূপল পিয়াসার পাশে দাঁড়ালো! অপরাধী ভঙ্গিতে দুজনই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। পিয়াসাও বুঝে গেল তার শ্বশুড় বাড়ির সবাই তার কুকীর্তি জেনে গেছে। অমনি পিয়াসার বর নিহাল এসে পিয়াসার চোখের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“নীহারিকা যা বলেছে সব সত্যি? তুমি সত্যিই প্রেগনেন্ট?”

হেঁচকি তুলে কেঁদে পিয়াসা মাথা দুলিয়ে সায় জানালো! সত্যিটা সে আর অস্বীকার করতে চাইলনা। এমনিতেই অনেকটা দেরী গেছে। পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যাওয়ার আগে বরং সত্যিটা স্বীকার করে নেওয়াই ভালো! যে পাপ করেছে সে, সেই পাপের শাস্তি তাকে পেতেই হবে। অমনি রূপলের সামনে নিহালের গরম হাতের চ’ড় পড়ল পিয়াসার নরম গালে! ঘৃণায় বুদ হয়ে নিহাল বলল,

“ছিঃ। ন’ষ্টা মেয়ে! আমি কী-না সৌন্দর্যের মোহে পড়ে এই ন’ষ্টা মেয়েটাকে বিয়ে করেছি?”
মুহূর্তেই পরিবেশ পুরো থমথমে হয়ে উঠল৷ চোখের সামনে বোনকে মা’রধ’র খেতে দেখে কটু কথা শুনতে দেখে রক্ত গরম হয়ে গেল রূপলের! অন্যায় থাকা সত্ত্বেও সে নিমিষেই বোনের পক্ষ নিয়ে রাগী রূপ ধারণ করল। পিয়াসাকে সামনে থেকে সরিয়ে নিহালের মুখোমুখি দাঁড়ালো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“কোন সাহসে আপনি আমার বোনের গাঁয়ে হাত তুললেন হ্যাঁ? আমার বোন যে অন্যায় করেছে তার শাস্তি আমরা তাকে দিব। আপনি বা আপনারা নন।”

অমনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল নিহাল এবং তার মা-বাবা। তেড়ে এসে নিহালের মা-বাবা রূপলকে কিছু বলার পূর্বেই নিহাল মেজাজ হারিয়ে রূপলকে বলল,
“চোরের মায়ের বড়ো গলা না? চুরির উপরে শিনাজুরি? তোর বোন কী শুধু অন্যায় করেছে রে? তোর বোন তো পাপ করেছে পাপ। ন’ষ্টা মেয়ে একটা! বিয়ের আগেই অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছে! বাচ্চাও পেটে এসে গেছে! তোর কী মনে হয় হ্যাঁ? এই ক’লঙ্কি’ত মেয়ে নিয়ে আমি সংসার করব? ভাগ্যিস আমার বোনটা সব শুনে নিয়েছিল! নয়ত এই নাজায়েজ বাচ্চাটাকে আমার বলেই চালিয়ে দিত!”

নিহালের বাবা আশরাফ শিকদার নিহালকে থামিয়ে রগচটা গলায় রূপলকে বলল,
“নিয়ে যাও তোমার বোনকে এই বাড়ি থেকে। কয়েকদিনের মধ্যেই ডিভোর্স পেপার তোমাদের বাড়িতে পৌঁছে যাবে! তোমার এই দুশ্চরিত্রা বোনের জন্য আমার নির্দোষ ছেলেটার জীবনেও একটা দাগ পড়ে গেলো! নেহাত ভদ্র বাড়ির লোক বলে আমরা তোমাদের এমনি এমনি ছেড়ে দিচ্ছি ওকে? নয়ত হাতাহাতি হয়ে যেত এখানে! পুলিশ কেইস হয়ে যেত। তবে আমরাও বসে থাকার পাত্র নই। মান হানির মামলা করব তোমাদের নামে!”

সব অপমান নীরবে সহ্য করে নিলো রূপল! যেখানে শতভাগ দোষ তার বোনের সেখানে তার কিছুই বলার থাকেনা! বরং মুখ বুজে সব সহ্য করা নিয়েই শ্রেয়। দুঃখী, অসহায়ের মত রূপল তার বোনকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল! আত্নীয় স্বজনরা সব অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তাদের দিকে। পিয়াসার কান্নাকাটি দেখে সবার মনে সন্দেহের সৃষ্টি হলো। সবাই তাদের অগোচরে কানাঘুষা করতে লাগল। এই রাতের আঁধারে নতুন বউকে নিয়ে তার ভাই কোথায় যাচ্ছে এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে লাগল। গেস্টদের কোনোভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো নীহারিকা এবং তার মা-বাবা। এদিকে তারাও শোকে কাতর হয়ে গেল! বিয়ে বাড়ি যেন মরা বাড়িতে পরিণত হলো।

রাস্তায় রূপল একটা কথাও বলল না পিয়াসার সাথে! ভঙ্গুর মনে মাথা নুইয়ে বসে রইল। কেমন যেন মূর্তির রূপ ধারণ করেছে সে। মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছেনা তার। রাস্তায় পিয়াসা অনেক চেষ্টা করেছিল রূপলের সাথে কথা বলতে। তবে প্রতিবারই রূপল তাকে থামিয়ে দিলো। বলল যা কথা বলার বাড়ি পৌঁছে বলবে।
বাড়ির সদর দরজা খুলে রূপল এবং পিয়াসাকে দেখা মাত্রই চমকে উঠলেন রূপলের মা নাজনিন বেগম। কান্নারত পিয়াসার দিকে তাকিয়ে তিনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,

“কী ব্যাপার? তুই এখানে?”
অমনি পিয়াসা ডুকরে কেঁদে তার মাকে জড়িয়ে ধরল। হীন গলায় বলল,
“আমাকে প্লিজ মাফ করে দিও মা। আমি তোমাদের পরিবারের মান সম্মান রাখতে পারিনি। আমি তোমাদের কুলাঙ্গার সন্তান!”
হতবিহ্বল দৃষ্টিতে নাজনিন বেগম রূপলের দিকে তাকালেন। কম্পিত গলায় বললেন,
“কী হয়েছে বাপ? পিয়াসা এসব কী বলছে?”

অমনি রূপল তার হিংস্র রূপে ফিরে এলো। পিয়াসাকে তার মায়ের বুক থেকে টেনে নিয়ে সোজা বাড়ির ড্রইংরুমে ঢুকে গেল। জন্মের পর থেকে যে বোনের গাঁয়ে সে হাত তুলেনি সেই বোনের গাঁয়েই আজ হাত তুলতে বাধ্য হলো সে! ড্রইংরুমে থাকা তার মা, বাবা, চাচা, চাচী, খালা, খালু, এমনকি কাজিনদের সামনে সে পিয়াসার গালে ঠাস ঠাস করে চার থেকে পাঁচটি চ’ড় বসিয়ে দিলো! রাগে, ঘৃণায়, অপমানে অতিষ্ট হয়ে চিৎকার করে বলল,
“কেন এমনটা করলি তুই হ্যাঁ? আমাদের শিক্ষা দিক্ষায় কী ভুল ছিল যে তুই অমানুষ হলি? আমাদের মান সম্মান এভাবে ধূলোয় মিশিয়ে দিলি? কেন আমাদের এত বড়ো ক্ষতি করলি তুই?”

উপস্থিত সবাই হতবাক দৃষ্টিতে রূপল এবং পিয়াসার দিকে তাকিয়ে রইল। ঘটনা কিছুই বুঝতে পারছিল না তারা। সবার ছুড়ে দেওয়া হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে রূপল বৃত্তান্ত খুলে বলল সবাইকে। অমনি যেন বাড়ি শুদ্দ সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। মেয়ের কুকীর্তি শুনে সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞান হারালেন নাজনিন বেগম! নাজনিন বেগমের এই অসহনশীল অবস্থা দেখে পিয়াসা নিজেও জ্ঞান হারিয়ে বসল! মা-মেয়েকে নিয়ে টানাটানি লেগে গেল।

পরিস্থিতি ঠিক হতে ঘণ্টা খানিক সময় লেগে গেল। পরণের পাঞ্জাবি পড়েই রূপল লাঠি, ছু’রি, চা’পা’তি নিয়ে সোজা অমির এলাকায় চলে গেল! যদিও রূপলের পরিবার রূপলকে অনেক বাঁধা দিয়েছিল প্রকাশ্যে কোথাও না যেতে। এভাবে বোনের কে’লেঙ্কারির খবর এলাকায় না রটাতে। পরিবারের মান সম্মান নষ্ট না করতে। তবে কে শুনে কার কথা? এই মুহূর্তে সমাজের চিন্তা রূপলের মাথায় কোনোভাবেই আসছেনা। অমিকে জা’নে মা’র’তে না পারলে তার শান্তি হবেনা।

রূপলের সঙ্গে তার কাজিন মহলের তিনজন কাজিনও ছিল। আকাশ, রাফিন এবং সজল। সবাই মিলে অমির ব্যাচালর ফ্ল্যাটে ঘেরা দিতেই পুরো এলাকায় ডাক পড়ে গেল! নিজের এলাকা ছাড়াও আশেপাশের এলাকায় রূপলের পাওয়ার সম্পর্কে সবার ধারণা আছে। এক নামেই মহল্লার সবাই তাকে চিনে! সে জায়গায় অমি কীভাবে তার বোনের সাথে এই কুকীর্তি করার দুঃসাহস দেখালো তা ভেবেই হয়রান হয়ে গেল রূপল এবং তার কাজিনরা!

অমিও তখন তার ফ্ল্যাট ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল! তবে এর আগেই সে ধরা পড়ে গেল। অমিকে তার ফ্ল্যাট থেকে টেনে নিয়ে এলো রূপল। রাস্তায় থাকা ল্যাম্পপোস্টের সাথে বাঁধল তাকে। রুমের জানালা দিয়ে সব দেখছিল নীহারিকা! বুঝতে বেশী বেগ পেতে হলোনা এই অমিই সেই অমি। যে অমির সন্তান পিয়াসার গর্ভে বেড়ে উঠছে। এই কাল সাপ কী-না তাদের এলাকাতেই লুকিয়ে ছিল?

আর এক মুহূর্ত দেরি না করে নীহারিকা তার মা-বাবা এবং ভাইকে নিয়ে রাস্তায় চলে এলো। আশেপাশে এলাকার লোকজনও জড় হয়ে গেল। প্রাণ বাঁচানোর ভয়ে অমি আত্নচিৎকার করছিল! তবে এই মুহূর্তে তার চিৎকার শোনার অবস্থায় কেউ নেই। সবার একটাই উদ্দেশ্য এখন অমিকে জানে মে’রে ফেলা!
অমনি রূপল অত্যধিক ভয়ে সিঁটিয়ে থাকা অমিকে এলোপাতাড়ি লা’ঠি’কা’ঘা’ত করে উচ্চ শব্দে চিৎকার করে বলল,
“কু’ত্তা’র বাচ্চা। আমি আজ তোকে খু’ন করে ফেলব! তুই আমার বিরুদ্ধে ডাবল প্ল্যানিং করেছিস তাইনা?”

[প্রথম পর্ব পড়েই কেউ খারাপ মন্তব্য করবেন না। কেননা প্রথম এক পর্ব পড়েই কিন্তু কিছু বুঝা যাবেনা। আস্তেধীরে গল্প যখন আগাবে তখন সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আশা করি সবাই গল্পটার শেষ পর্যন্ত পাশে থাকবেন।]

ফেরারি প্রেম পর্ব ২