তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব ১৭

তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব ১৭
নুশা আহমেদ

চার্জার টর্চ লাইটের আবছা আবছা আলোতে প্রায় অনেকক্ষণ ধরে বসে আসে নুশা। সায়ানের বা মামির কোনো সাড়াশব্দই পাচ্ছে না সে ,, এতোক্ষণ লাগে নিচে যেতে লাইট জ্বালাতে আর উপরে আসতে । দরজাটাও হালকা দিয়ে গেছে তাই নিচ থেকে কোনো কথাই কানে আসছে না । ফ্রেবুয়ারি মাস হালকা শীত তো আছেই পায়ের ছোট আঙ্গুলে কাঠের দরজার কোনো লাগায় প্রচন্ড ব্যথাও অনুভব হচ্ছে ।

ইচ্ছে করলে কষ্ট করে উঠে দাঁড়াতে পারবে কিন্তু সায়ান তো স্টেট বলে গেছে একদম চুপচাপ বসে থাকতে। কতক্ষণ এভাবে একা একা বসে থাকা যায় , বিরক্ত লাগছে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে । হাতটা একটু বাড়য়ে টেবিল থেকে লাইটটা নিতে যাবে উদ্দেশ্য আর বসে থাকবে না নিচে যাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে সায়ান কিছু বললে সেও বলে দিবে এতোক্ষণ চুপচাপ একা একা বসে থাকার মেয়ে না সে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তাই হাতটা বাড়িয়ে যেই লাইটা নেবে সাথে সাথে দরজা খোলার শব্দ এলো সাথে হাতটা আবার সরিয়ে নিয়ে যেই পিছনে ঘুরলো সাথে সাথে কেউ একজন তার নাকে মুখে একটা সুগন্ধি কাপড় দিয়ে চেপে ধরলো । গন্ধটা নুশার কাছে অসাধারণ লাগলেও তার চোখ মেলে তাকিয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না চোখ যেনো না চাইতেও আপনা আপনি বন্ধ হয়ে আসছে ।

চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসছে তবে জ্ঞান হাড়িয়ে যাওয়ার আগে যতটুকু পারছে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখার ও বুঝার চেষ্টা করছে, রুমটা হালকা আলোকিত হওয়ায় আবার চোখ ঘোলাটে হয়ে আসায় ভালো করে লোকটাকে দেখতে পারেনি নুশা, তবে যতটুকু বুঝেছে লোকটা মাক্স আর টুপি পরা আর লোকটা নুশাকে কোলে নিয়ে কোথাও একটা যাচ্ছে । আস্তে আস্তে সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসছে নুশার চোখে আর কিছু অনুভব করে নি কিছু দেখেনি ঢলে পরে লোকটার বুকের মাঝে।

অন্যদিকে সায়ান মাকে নিয়ে রুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে দিলো আর বিরবির করে কিছু বলতে লাগলো,
“কারেন্ট যাওয়ার আর সময় পেলো না । গেলো তো গেলো আর আসার খবর নাই এদিকে উপরে নুশাকে একা রেখে এসেছে আবার বাবাও বাড়িতে নাই মায়ের এই অবস্থা ভালো করে আলো নাই সব কিছু যেনো সায়ানকে পাগল করার জন্য যথেষ্ট । সায়ান বুঝতে পারছে কি রেখে কি করবে তাই তাড়াতাড়ি মোবাইলের লক খুলে ডায়ালে গিয়ে ‘ BABA ‘ নামে সেভ করা নাম্বারে কল বসালো দুই বার রিং হতেই ঐপাশের ব্যক্তিটি ফোন রিসিভ করে বলে উঠলো ,

-হ্যাঁলো সায়ান ।
-হ্যাঁ বাবা তুমি কোথায় তাড়াতাড়ি একটু বাড়িতে আসোতো।
– আরে আমি তো চলেি আইছি কেনো কি হইছে এবাবে কথা বলছিস কেনো সব ঠিক আছে।
– তুমি তাড়াতাড়ি আসো।

ফোনটা রেখে মোবাইলটা এমন ভাবে রাখলো যেনো ঘরটা একটু আলোকিত হয় । মায়ের পাশে বসে কপালের কাছে রক্ত লেগে থাকা যায়গায় রক্ত পরিষ্কার করে কাটা জায়গাতে লিকুইড এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দিলো। তেমন বেশি একটা ক্ষত হয়নি । সায়ানের ধারণা মতে তার মা হয়তো অন্ধকারে হাঁটার সময় কোনো কিছু লেগে ব্যাথা পেয়েছে আর এমনিতেই তার মা অন্ধকার ছোট বাচ্চা দের মতো অনেক ভয় পাই।

তাই সব সময় আলোর ব্যবস্তা করে রাখা হয় কিন্তু তিন দিন আগে আই পি এস এর সমস্যা হওয়ায় এখন আর লাইট জ্বালাতে পারিনি আর কে জানতো আজ হঠাৎ করে এমন ভাবে কারেন্ট চলে যাবে । সায়ান মায়ের পাশে বসে মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে আর বাবা আসার অপেক্ষা করছে ।
এইদিকে সায়ানের আব্বু তাড়াতাড়ি বাসার দিকে ফিরছেন৷ তখনই পাশ দিয়ে একটা একটা গাড়ি ধ্রুত গতিতে যাচ্ছে আর ভিতর থেকে শুধু একটা কথাই কানে আসলো কেউ একজন বলছে,,

“মামা এখন কি সোজা কাজী অফিসের দিকে যাবো নাকি গ্যারেজে ”
কথাটা কেউ জোরে বলায় হাটার মাঝেও শুনতে পেয়েছে সায়ানের আব্বু কিন্তু তেমন একটা পাত্তা না দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে ছোটে আসলেন । বাড়ির কাছে আসতেই উনি থমকে গেলেন কারন পুরোটা বাড়ি অন্ধকারে আচ্ছন্ন কেমন একটা ভুতুড়ে বাড়ির মতো কই তার বাড়িতে তো গেটের মধ্যেই লাইট থাকে কিন্তু কই লাইট তো দেখা যাচ্ছে না । কারেন্ট অতো আছে আশে পাশের বাড়িতে তাহলে তার বাড়ির এই অবস্থা কেনো। আর মেন দরজাটাও খোলা দারোয়ান কই মাথায় আসতেই আশে পাশে তাকিয়ে দেখে গেটের কাছে চেয়ার উল্টে অচেতন অবস্থায় পরে আছে । তাড়াতাড়ি তার কাছে দিয়ে ডাকতে লাগলো ,,,

-এই রফু ,, রফু।
একাধারে ডেকেই যাচ্ছে কিন্তু রফু কোনো সাড়াশব্দ দিচ্ছে না তাই বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে তা চেক করার জন্য নাকের কাছে হাতটা নিতেই বুঝে গেলো বেঁচে আছে কিন্তু জ্ঞান নাই । তাই তাড়াতাড়ি চেয়ার ঠিক করে রফুর হাত নিজের কাদে দিয়ে রফুকে নিয়ে বাড়ির ভিতর আসতে লাগলো তখনই আবার ফোন বাজতে লাগলো । তাই তাড়াতাড়ি শার্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে সায়ানের নাম্বারে ফোন তাই রিসিভ করলো। রিসিভ করতে দেরি মোবাইলের অপর পাশে সায়ান কিছুটা রাগী সূরে বাবাকে বলে উঠলো,,

-বাবা আর কতক্ষণ লাগবে। এখান থেকে আসতে এতোক্ষণ লাগে তাড়াতাড়ি আসো ।
সায়ানের কথা শুনে সায়ানের বাবা বলে চিন্তিত হয়ে বলে উঠলো ,
-সায়ান আমি আসছি তুই কই বাড়িতে লাইট নাই কেনো বাহিরে তো কারেন্ট কাছে তাহলে আমাদের বাড়ি অন্ধকার কেনো৷। আর রফু “রফু গেটের কাছে অচেতন৷ অবস্থা পরে আছে কেনো কি হচ্ছে এসব ।

বাবার কথা শুনে সায়ান আশ্চর্য হয়ে গেলো আর মনে মনে সিওর হয়ে গেলো যে কারেন্ট শুধু তার বাড়িরই গেছে মানে হলো কারো কার সাজি কিন্তু কে করবে এসব কোনো চুর এই সন্ধ্যা সময় চুর । হঠাৎ করেই তার মাথায় নুশার কথা মনে পরে, নুশা তো একা উপরে আছে আর বাড়ির ভিতর নিশ্চয় কেউ ঢুকেছে। কি করবে বুঝতে পারছে মাকে এভাবে ফেলে রেখেও যেতে পারছে না আবার অন্য দিকে নুশা একা আছে এই চিন্তাও দূর হচ্ছে না। ওপাশ থেকে সায়ানের বাবা বলেই যাচ্ছে হ্যালোঁ সায়ান কথা বলছিস না কেনো সব কিছু ঠিক আছে তো নাকি আর তুই কই৷ এখন ড্রইং রুমে তো কেউ নাই । তখনই সায়ান বলে উঠলো,

-বাবা আমি তোমাদের রুমে আছে তুমি একটু তাড়াতাড়ি তোমার রুমে আসো উপরে নুশা একা আছে অন্ধকারে সে একা আসতে পারবে না আর আমি,,,
আর কিছু বলার আগেই সায়ানের আব্বু তাড়াতাড়ি রুমের ভিতর প্রবেশ করলেন । রফুকে অচেতন অবস্থায় ড্রইং রুমে সোফায় শুয়ে দিয়ে এসেছেন। বিছানায় সায়ানের আম্মু কে দেখে তাড়াতাড়ি বিছানার কাছে গিয়ে সায়ান কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ,

-সায়ান এসব কি তোমার মার এই অবস্থা কেনো মাথায় আঘাত পেয়েছে কিভাবে আর এসব কি হচ্ছে এই সন্ধ্যা সময়।
-বাবা আমি কিছু জানি না তোমার সাথে পরে কথা বলছি আগে আমাকে নুশার কাছে যেতে হবে নুশা উপরে একা আছে ।
-হ্যাঁ হ্যাঁ তাড়াতাড়ি যাও মেয়ে টা হয়তো এতোক্ষণে ভয় পেয়ে কান্না করে দিছে।
সায়ান আর দেরি করলো না দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে তাড়াতাড়ি সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে নিজের রুমের দরজা খুলে দেখে রুমের ভেতর টর্চ লাইটের আবছা আবছা আলো কিন্তু নুশাকে সে যেখানে বসিয়ে রেখে গিয়েছিলো সেখানে নুশা নাই তাই জোরে জোরে এবার নুশার নাম ধরে ডাকতে লাগলো,

-নুশা ,, নুশা,,, কোথায় তুমি দেখো আমি তোমার সায়ান ভাই চলে এসেছি আর ভয় পেতে হবে না।
কিন্তু সায়ানের গলা ফাঠানো চিৎকারেও নুশা কেনো, কোনো কিছুরই সাড়াশব্দ পায়নি । সায়ানের মাথায় এবার অন্য চিন্তা ঢুকে গেলো । তাই তাড়াতাড়ি আবার দৌড়ে নিচে নেমে মেইন সুইচের কাছে চলে আসলো । এখানে এসে আরো বেশি করে সিওর হলো কেউ ইচ্ছে করে মেইন সুইচ অফ করে রেখেছে তার মানে লোকটা এই বাড়ির সব খবরা খবর জানে এই বাড়িতে এসেছে কোথায় কি আছে সব কিছু জানে । কিন্তু তার মাথায় আসছে না কে করতে পারে এসব।

ভাবনা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি সুইচ অন করে দিলো সাথে সাথে সারা বাড়ি বৈদ্যুতিক আলোয় আলোকিত হয়ে গেলো অন্ধকারটা এখন আর নাই সব কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । আর দেরি না করে আবার রুমে চলে আসলো সায়ান আর এবারও ডাকতে লাগলো নুশাকে কিন্তু এবারও সায়ানের সব গুলো ডাক বিফলে গেলো বারান্দায় ওয়াশরুমে নুশার রুম সব জায়গায় নুশাকে খুঁজে কোথায় পেলো না। মনে মনে বিরবির করতে লাগলো,

তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব ১৬

-নুশা তুমি কোথায় কেনো আসি তোমাকে রুমে একা চুপচাপ বসিয়ে রেখে নিচে চলে আসলাম তার জন্যই তো তারা তোমাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যেতে পারছে৷ । সব দোষ আমার কেনো তোমাকে একা ছাড়লাম। এসব বলতে বলতেই হঠাৎ করে সায়ানের মাথায় আসলো ,,
“নুশাকে কেউ কিডনাপ করেছে কিন্তু কে করেছে ? কি জন্য করছে, এতে তার কি লাভ নুশাকে কিডনাপ করে ,,?

তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব ১৮