ফেরারি প্রেম পর্ব ১৬

ফেরারি প্রেম পর্ব ১৬
নিশাত জাহান নিশি

লোকটির মাথায় আলাদা করে একটি কালো ক্যাপ রয়েছে। ক্যাপটি দেখে নীহারিকা কেমন যেন ভাবনায় ডুবে গেল! ক্যাপটি তার পরিচিত মনে হলো। ঘণ্টা খানিক আগেও সে ক্যাপটি কোথাও দেখেছে। তবে মনে পরছেনা কোথায় দেখেছে! হয়ত সুহাসিনীর দাফনের সময় লোকটি কোথাও ছিল তাই মানুষের চেয়ে ক্যাপটিকে তার বেশি পরিচিত মনে হলো!

সিঁড়ি বেয়ে হেঁটে দুজনই ক্রমশ নীহারিকার দিকে এগিয়ে এলো। কথার মারপ্যাচে ব্যস্ত ছিল বিধায় নীহারিকার উপস্থিতি তারা টের পেলনা। নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার জন্য নীহারিকা হুট করে দুজনের মুখোমুখি এসে দাড়ালো! চলতি পথে ব্যাঘাত পড়ায় অমনি দুজন হাঁটা থামিয়ে সোজা দাড়িয়ে পড়ল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

চোখ টেনে মেলতে পারছেনা রূপল। অতিরিক্ত ক্লান্তি, অনিদ্রা, বিষণ্নতা এবং কান্নার দরুন তার শরীরটা প্রায় নিষ্প্রাণ হয়ে আছে। দেহের কোথাও প্রাণ আছে বলে মনে হচ্ছেনা। রূপলের এই দুর্বস্থা দেখে নীহারিকার ভেতরটাও কেমন যেন হাহাকার করে উঠল! বুকের ভেতরটায় নিদারুন এক ক্ষত অনুভব হলো। ব্যথাভরা চোখে সে নিষ্পলকভাবে বিধ্বস্ত রূপলের দিকে তাকিয়ে রইল। পাশে থাকা লোকটি এতে বিব্রতবোধ করল! বিরক্তিকর গলায় সে নীহারিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“এই কে আপনি?”
প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে নীহারিকা দৃষ্টি ঘুরিয়ে এক পলক লোকটির দিকে তাকালো। ভ্রু যুগল নাচিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল,
“আগে বলুন আপনি কে? এর আগে আপনাকে কোথাও দেখছি বলে তো মনে হচ্ছেনা!”
“হাউ স্ট্রেঞ্জ! আমার বাড়িতে দাড়িয়ে আমার রুমের সামনে দাড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন আমি কে?”
অমনি ভড়কে উঠল নীহারিকা! হাত চলে গেল তার মুখে। অবিশ্বাস্য গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“হোয়াট? এটা আপনার বাড়ি?”
লোকটি হাত উঁচিয়ে রাগতা দিয়ে বলল,
“নয়ত কী? আপনি আমার বাড়িতে কী করছেন হুম?”
পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ার আগেই রূপল ঢুলুঢুলু শরীর নিয়ে লোকটির কাঁধে হাত রাখল। সন্তপর্ণে লোকটিকে থামিয়ে সে ধীর গলায় বলল,

“ভাইয়া। ইনি আমাদের পিয়াসার ননদ। প্লিজ আর কথা বাড়িও না।”
কৌতূহল যেন আরও দ্বিগুন বেড়ে গেল নীহারিকার। রীতিমতো চমকিত গলায় সে রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“ইনি আপনার ভাই? আপনারা না এক ভাই এক বোন? এই ভাই আবার কোথা থেকে আসল?”
এমনিতেই রূপল বেশ ক্লান্ত এবং নিস্তেজ। তার উপর নীহারিকার বাড়তি প্রশ্ন তাকে আরও বেশী অতিষ্ট করে তুলছিল। অবিন্যস্ত দৃষ্টি ফেলে সে নীহারিকার দিকে তাকালো। রাগ থাকা সত্ত্বেও কণ্ঠে সাবলীলতা এনে বলল,

“আজকের জন্য ছাড় দিন প্লিজ। কাল সকালে সব বুঝিয়ে বলছি।”
দুজনকেই পাশ কাটিয়ে রূপল সামনের দিকে হাঁটা ধরল। এলোমেলো পায়ে হেঁটে সে তার রুমে ঢুকে পড়ল। রুমের ভেতরে ঢুকতেই তার সমস্ত শিউরে উঠল! বেদনারা আবারও জাগ্রত হয়ে উঠল। দেহে প্রাণ ধরা দিলেও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে ইচ্ছে করছেনা তার। বেঁচে থাকার সমস্ত আশা যেন সে হারিয়ে ফেলছে!

আত্নহত্যা মহাপাপ না হলে, হয়ত সে এতক্ষণে তার জীবনটাও ঝরিয়ে দিত! সুহাসিনীর কবরের পাশে তারও সমাধি হত। এসব ভাবতে ভাবতেই রূপল দু-দুটো সিগারেট ধরালো। একই সাথে সিগারেট দুটি ফুঁকতে লাগল! বেদনারা যেন সিগারেটের ধূসর ধোঁয়ার সঙ্গে মিলিত হয়ে তার ভেতর বের হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে দূর থেকে দূরে! তবে বেশিক্ষণ এই সুখ স্থায়ী হবেনা। সিগারেটের নেশা শেষ হলে বেদনারাও তখন হারিয়ে যেতে ভুলে যাবে! আবারও হুমড়ি খেয়ে তার ভেতরে প্রবেশ করে নিজেদের বাসস্থান তৈরী করে তুলবে!

লোকটি এখনও নীহারিকার সামনেই দাড়িয়ে রইল! নীহারিকার আগা গোঁড়া তলিয়ে দেখতে লাগল। দেখাদেখির পর্ব শেষে লোকটি কৌতূহলে আচ্ছাদিত হয়ে থাকা নীহারিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল। বলল,
“হেই। হোয়াট ইজ ইউর নেইম?”
ভাবনায় ছেদ পড়ল নীহারিকার। অপ্রস্তুত দৃষ্টি পড়ল লোকটির উপর। প্রত্যত্তুরে নম্র গলায় বলল,

“নীহারিকা।”
“বাহ্। বেশ সুন্দর নাম তো!”
কিঞ্চিৎ দম নিয়ে লোকটি পুনরায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“আমার নাম জিজ্ঞেস করবেন না?”
লোকটির প্রশ্নের দিকে কোনো ধ্যান নেই নীহারিকার। সে এখন নিজের খেয়ালেই ব্যস্ত। আগ্রহী গলায় সে লোকটির দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল,

“আচ্ছা আপনি ভাবির কেমন ভাই হোন? চাচাতো, ফুফাতো বা মামাতো ভাই?”
“জি না।”
“তাহলে কেমন ভাই?”
“সৎ ভাই!”
“মানে?”
“আমি আমার বাবার প্রথম সংসারের বড়ো ছেলে! আমার মা মারা যাওয়ার পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এবার সব ক্লিয়ার?”
নীহারিকা বোকার মত মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো! তাজ্জব দৃষ্টিতে লোকটির দিকে তাকিয়ে রইল। চালনা আগ্রহ থেকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“তাহলে আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন?”
“দেশের বাহিরে ছিলাম। আজই দেশে ফিরলাম।”
ভ্রু উঁচিয়ে লোকটি আবার প্রশ্ন ছুড়ল,
“আপনার আর কোনো প্রশ্ন আছে?”
“আপনার নামটা যেন কী?”
“রাতুল।”

“আচ্ছা, আপনি মাথায় ক্যাপ পড়ে আছেন কেন? আপনার এই ক্যাপটা মনে হচ্ছে এর আগেও আমি কোথাও দেখেছি!”
রাতুল হেয়ালি হেসে বলল,
“হুম দেখতেই পারেন। কারণ, এমন অসংখ্য ক্যাপ আজকাল ছেলেরা ইউজ করে। এতে বিশেষ কী আছে?”
“না কিছুনা। আচ্ছা আমি ঘুমাব। বায়।”
মাথায় অসংখ্য মারপ্যাচ নিয়ে নীহারিকা পিছু ঘুরল। অমনি রাতুল নীহারিকাকে পেছন থেকে ডেকে বলল,
“এইযে বেয়াইন সাহেবা। আপনার চুলগুলো আমার বেশ ভালো লেগেছে! একটু যত্ন করবেন চুলগুলোর! অযথা বাড়তি চিন্তা করে চুলগুলো ঝরাবেন না!”

হটকারিতায় আচ্ছন্ন হয়ে নীহারিকা পিছু ঘুরে তাকাতেই রাতুল মৃদু হেসে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। সোজা রূপলের রুমে ঢুকে পড়ল! রাতুলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে নীহারিকা গভীর চিন্তায় ডুবে গেল। সন্দেহ বাদি হয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“লোকটি কী আমার চুলের প্রশংসা করল নাকী আবার অন্যদিকে ইঙ্গিত দিলো? সত্যিই তো এখন আমার চিন্তার কারণ হচ্ছে তার মাথার ক্যাপটি! কেন সাধারণ বিষয়টা আমার মাথায় ঢুকছেনা? এমন অসংখ্য ক্যাপ তো ছেলেরা প্রতিদিনই ইউজ করছে। তাহলে এই সিম্পল বিষয়টা নিয়ে আমার এত চিন্তার কারণ কী?”

গোটা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিলো নীহারিকা। চোখ বন্ধ করলেই কেমন যেন আজগুবি চিন্তাভাবনারা তার মাথার মধ্যে গিজগিজ করছে। কিছুতেই যেন স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছেনা সে। এদিকে আবার রূপলের জন্যও টেনশন হচ্ছে। সুহাসিনীকে হারানোর শোকে না সে আবার উল্টোপাল্টা কিছু করে বসে। যদিও তাকে সামলানোর জন্য তার বড়ো ভাই রয়েছে। তবুও মনের ভেতরে তো একটা খচখচানি থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে নীহারিকার চিন্তার মূল কারণ হলো রাতুল! পিয়াসার পরিবার রাতুলের বিষয়টা পুরোপুরি গোপন করে গেছে তাদের থেকে! পিয়াসার যে একজন সৎ ভাই আছে তা নীহারিকার পরিবার আগে জানত না। আপাত দৃষ্টিতে যদিও এই মুহূর্তে এটা কোনো বড়ো ব্যাপার নয় তবে এই মুহূর্তে নীহারিকার কাছে সবকিছুই কেমন যেন ঘোলাের মত লাগছে!

চারিদিকে ভোরের মিটমিটে আলো ফুটতেই নীহারিকা রেডি হয়ে তার রুম থেকে বের হয়ে গেল! উদ্দেশ্য ভোরের স্নিগ্ধ আলোয়, মৃদু হাওয়ায় গাঁ ভাসিয়ে সে পায়ে হেঁটেই বাড়ির দিকে রওনা হবে। এত সকাল বাড়ির কাউকে ঘুম থেকে ডেকে সে বিরক্ত করতে চায়না। তাই যেই ভাবা সেই কাজ। রুম থেকে বের হয়ে নীহারিকা নিচ তলায় নেমে যেইনা সদর দরজার দিকে আগাতে যাবে অমনি তার আকস্মিক দৃষ্টি পড়ল রান্নাঘরে। এই ভোর সকালে রান্নাঘরে নাজনীন বেগমকে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টায় বেশ অবাক হয়ে নীহারিকা রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো। পেছন থেকে কারোর পায়ে হাঁটার শব্দ পেয়ে নাজনীন বেগম পিছু ঘুরে তাকালেন। কান্নারত অবস্থায় নাজনীন বেগমকে দেখামাত্রই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল নীহারিকা। চিন্তিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“আপনি কাঁদছেন কেন আন্টি?”
শাড়ির আঁচল দ্বারা চোখের জলগুলো মুছে নাজনীন বেগম নিবিড় দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালেন। পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন,
“এত ভোরে তুমি ওঠে এলে যে?”
“পরে বলছি আন্টি। আগে বলুন আপনি কাঁদছেন কেন?”
“কাঁদছি কী আর সাধে? ছেলেটা কাল সকাল থেকে অভুক্ত। দানা পানি কিছুই মুখে তুলছেনা। রাতে কত রিকুয়েষ্ট করলাম খেতে, খেলো না। মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা তার। মা হয়ে কীভাবে সহ্য করি বলো?”
সব শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল নীহারিকা। মাথাটা নুইয়ে ভরাট গলায় বলল,

“আমি এখানে আর কী বলব আন্টি? তবে আমার মনে হচ্ছে আপনার ছেলেকে কয়েকটা দিন সময় দেওয়া উচিৎ। দেখুন না, শোক কাটিয়ে উঠতে পারে কী-না।”
“শোক এমনি এমনি কাটবে না তার। আমার মনে হচ্ছে তাকে যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দিয়ে দেওয়া উচিৎ!”
“মানে? এসব আপনি কী বলছেন আন্টি?”
“যা বলছি একদম ঠিক বলছি। নতুন কাউকে পেলে সে ঠিকই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।”

“এসব আপনাকে কে বলল আন্টি? এতে বরং দুই দুটো জীবন নষ্ট হয়ে যাবে! আমি অন্তত জানি আপনার ছেলে কখনও সুহাসিনীর জায়গায় অন্য কাউকে মানতে পারবেনা। এতে নতুন করে যে তার জীবনে আসবে তার জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাবে!”
নীহারিকার কথাগুলো মোটেও পছন্দ হলোনা নাজনীন বেগমের! মুখটা বাঁকিয়ে তিনি কাজে মনোযোগ দিলেন। গম্ভীর গলায় নীহারিকাকে বললেন,

“আজ বিকেলে আমাদের তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা।”
“বাহ্। বেশ ভালো খবর তো।”
“হুম। পিয়াসার বিয়েতে তো আমার বড়ো ছেলেটা থাকতে পারলনা, যেহেতু কাল সে দেশে এসেছে তাই রিসেপশনটা অন্তত দেখুক।”

“ভাবি পুরোপুরি সুস্থ হলেই তবে রিসেপশন হবে আন্টি।”
“হ্যাঁ তা তো জানি। তবে আজ বিকেলে আমরা সবাই একবার তোমাদের বাড়িতে যাব। মেয়েটাকে দেখে আসব।”
“ওকে আন্টি। তাহলে আমি এখন বাসায় যাচ্ছি। বিকেলে দেখা হচ্ছে।”

“আরে আরে কী বলো? নাশতা করে তারপর যাবে। এই সাত সকালে কেউ কারো বাড়ি থেকে খালি মুখে যায়না।”
নীহারিকাকে জোর করে ধরে বেঁধে রেখে দিলেন নাজনীন বেগম! নাশতা তৈরী করতে কিছুটা সময় লাগছিল বিধায় নীহারিকা উপরে তার রুমে চলে গেল। তবে তার মন পড়ে রইল রূপলের কাছে! রূপল এখন কী অবস্থায় আছে তা জানার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠল। ধীর পায়ে হেঁটে সে রূপলের রুমের সামনে গেল। সাবধানে দরজায় হাত লাগাতেই বুঝতে পারল দরজাটা ভেতর থেকে খোলা! সুযোগ পেয়ে নীহারিকা দরজা খুলে রুমের ভেতর ঢুকে পড়ল।

গাঁয়ে আতর মেখে, সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পড়ে রূপল ভেজা চুলগুলো তোয়ালে দ্বারা মুছে নিচ্ছে! চোখ দুটো অসম্ভব রকম ফুলে আছে তার! বুঝাই যাচ্ছে এসব সারা রাতের কান্নার ফল। দেহ থেকে মন মাতানো সুবাস ভেসে আসছে রূপলের। সেই সুবাসে বুদ হয়ে নীহারিকা স্তব্ধ হয়ে একই জায়গায় দাড়িয়ে রইল। চোখেমুখে তার মুগ্ধতার ছড়াছড়ি। চুলটা কোনোভাবে সেট করে রূপল পিছু ফিরে তাকাতেই ঘোলা ঘোলা চোখে নীহারিকাকে দেখল। ভ্রু কুঁচকে সে বিস্মিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“আপনি এখানে?”
সম্বিত ফিরে পেল নীহারিকা। মাথাটা ঝাকিয়ে সে শুকনো ঢোক গিলল। ভাবমূর্তি পাল্টে সে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলল,
“আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
“সুহাসিনীকে দেখতে!”
“কোথায়?”
“কবরস্থানে।”
“এই ভোরে?”
“হ্যাঁ। তো?”
“আমাকে নিয়ে যাবেন?”
“আপনি যেয়ে কী করবেন?”
“আমিও তাকে দেখব!”
“উঁহু। আপনি গেলে আমি বিরক্ত হব!”
“প্রমিস। আমি আপনাদের মাঝখানে আসব না!”
“তবুও আমি আপনাকে আমার সাথে নিবনা!”

বলেই রূপল নীহারিকাকে পাশ কাটিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। অমনি ওয়াশরুম থেকে ভেজা শরীরে রাতুল বের হয়ে এলো! চুল মুছতে মুছতে সে নীহারিকার মুখোমুখি পড়ে গেল। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল নীহারিকা। দ্রুত সে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়াতেই রাতুল পিছু ডেকে নীহারিকাকে থামিয়ে দিলো। দেঁতো হেসে দুষ্টুমিভরা গলায় বলল,
“আপনি জানতেন তাইনা? আমি এখন শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হব?”
তাজ্জব বনে গেল নীহারিকা। উল্টো পাশ ফিরেই সে প্রশ্ন ছুড়ল,

“মানে?”
নির্লজ্জের মত রাতুল ঠোঁট কামড়ে বলল,
“মানে এই তো। উন্মুক্ত শরীরে আপনি আমাকে দেখে ফেললেন! যা সব মেয়েরাই দেখতে চায়!”
“আরে কী আশ্চর্য! আমিতো এসেছিলাম মিস্টার রূপলকে দেখতে। আপনিও এই মুহূর্তে শাওয়ার নিয়ে বের হবেন কে জানত?”
“আরে হয়েছে হয়েছে। সত্যিটা স্বীকার করুন। তাহলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল!”
“রাবিশ!”

ফেরারি প্রেম পর্ব ১৫

প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে নীহারিকা জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। বিপরীতে রাতুল দম ফাটা হাসিতে মত্ত হয়ে পড়ল। অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেয়ে নীহারিকা একপ্রকার দৌড়োতে লাগল রূপলের পেছনে। বাড়ির ড্রয়িং রুম অবধি যেতেই রূপল হঠাৎ থেমে গেল। ফোনে কারো সাথে কথা বলছিল সে। কথা বলা বন্ধ করে সে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। ছুটে গিয়ে নীহারিকা রূপলের মুখোমুখি দাড়াল। পেরেশানি গলায় রূপল নীহারিকাকে বলল,
“সাফোয়ানের খু/ন হয়েছে!”

ফেরারি প্রেম পর্ব ১৭