ফেরারি প্রেম পর্ব ৩৯

ফেরারি প্রেম পর্ব ৩৯
নিশাত জাহান নিশি

ট্রে তে করে নীহারিকা গ্লাস ভর্তি দুধ নিয়ে এসেছিল নিহাল এবং পিয়াসার জন্য! দরজায় দাড়িয়ে সে এতক্ষণ সব শুনছিল। পিয়াসার কথায় ভীষণ কষ্ট পেল নীহারিকা। দরজার সামনে ট্রে টি রেখে নীহারিকা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে তার রুমে চলে গেল!

চ’ড় খেয়ে পিয়াসা হতভম্ব হয়ে নিহালের দিকে তাকিয়ে রইল! চোখের পলক ফেলতেও যেন ভুলে গেল। শ্বাস প্রশ্বাসও তার থমকে এলো! আদোতেই সে বিশ্বাস করতে পারছেনা নিহাল তার গাঁয়ে হাত উঠিয়েছে। শুধু তাই নয় তাকে সরাসরি ডিভোর্সের কথাও জানিয়ে দিয়েছে! রাতারাতি জীবনের এতবড়ো অলক্ষুণে সিদ্ধান্তটি নেওয়া কীভাবে সম্ভব? এদিকে তুখোর রাগের বশবর্তী হয়ে নিহাল পিয়াসার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। পিছু ফিরে পুনরায় বিছানায় ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। দাঁত কিড়মিড়িয়ে বিড়বিড় করে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“প্রশ্রয় দিচ্ছি বলে দিন দিন সাহস বেড়ে যাচ্ছে তার। আমার বোনকে নিয়ে কটুক্তি করা। মাথায় তোলার পর কীভাবে আ’ছা’ড় দিয়ে মাথা থেকে নামাতে হয় তা আমার বেশ ভালোভাবেই জানা আছে!”
উগ্র মেজাজ নিয়ে নিহাল বিছানায় কাত হয়ে শুলো। অমনি পিয়াসা হাত-পা ছুঁড়ে বাজখাঁই গলায় মৃদু চিৎকার করে বলল,
“কী বললেন আপনি? সত্যি বলার অপরাধে আপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন?”

শোয়া থেকে তড়তড়িয়ে ওঠে বসল নিহাল। পিয়াসাকে এই মুহূর্তে খু’ন করে ফেলতে ইচ্ছে করছিল তার! একদমই সহ্য হচ্ছিলনা তাকে। ঝাঁজাল গলায় সে পিয়াসাকে শাসিয়ে বলল,
“এই কীসের সত্যি হ্যাঁ? কীসের সত্যি? আমার বোনকে ছোটো করে কথা বলা তোর কোন সত্যির আওয়াত পড়ে? বুঝা আমাকে?”

“কী বললেন? আপনি আমাকে তুই তুকারিও করছেন?”
“যেখানে আমাদের সম্পর্কটা ডিভোর্সের দিকে চলে যাচ্ছে, সেখানে তুই শব্দটা কী খুব বেশি বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে তোর কাছে? ভাগ্য ভালো আমি তোকে এখনও তালাক দিইনি!”
মরা কান্না জুড়ে দিলো পিয়াসা! মাথায় হাত দিয়ে সে ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ল। হায় হুতাশ করে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলল,

“এ কার কাছে আমাকে বিয়ে দিলো আমার মা-বাবা? বোনের পক্ষ নিয়ে যে কী-না তার স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করছে? তার গাঁয়ে হাত তুলছে, তাকে তুই-তুকারি ও করছে, এমনকি তাকে তালাক দিতেও একবার ভাবছেনা! আমি এক্ষুণি আমার বাপের বাড়িতে চলে যাব! থাকবনা আর এই বাড়িতে।”

“যা! এক্ষুণি বের হবি তুই আমার বাড়ি থেকে! অনেক সহ্য করেছি তোকে আর নয়। বিয়ের দিন যা কেলেঙ্কারি করেছিলি তুই। নেহাত আমি ভালো বংশের ছেলে বলে তোকে আজও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি! কিন্তু তোর কপালে তো সুখ সইছেনা। আট পাঁচটা নির্লজ্জ, বেহায়া মেয়েদের মত স্বামীর মন থেকে ওঠে শ্বশুড় বাড়ির লেটা চুকিয়ে বাপের বাড়িতে আজীবনের জন্য বোঝা হয়ে পরে থাকবি এটাই তোর জন্য ভালো!”

নিহালের সহাভূতি পেতে গিয়ে নিজের অবস্থানটা আরও নড়বড়ে করে ফেলল পিয়াসা! খামোশ খেয়ে গেল সে। আতঙ্কিত দু-চোখে রাগে ক্ষিপ্র নিহালের দিকে তাকিয়ে রইল। বিয়ের পর এই প্রথম নিহালকে এত রাগতে দেখল সে! এখনও যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা নিহাল রেগে গেলে এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। যার মধ্যে বিন্দুমাত্র দয়া মায়া কাজ করেনা! সম্পর্কের প্রতি টানও থাকেনা। পিয়াসার ভীতু অবস্থা এবং নীরবতা দেখে নিহাল শেষবারের মত পিয়াসার দিকে আঙুল তুলে বলল,

“এখনও সময় আছে ভালো হয়ে যা তুই। স্বামী এবং তার পরিবারকে মূল্যায়ন করতে শিখ। তাদের আপন করতে শিখ। তুই আমার বোনের পেছনে যতটা লেগে থাকিস তার এক অংশও যদি আমার বোন তোর পেছনে লাগত তাহলে না হয় তার বিরুদ্ধে করা তোর অভিযোগগুলো মানা যেত। যেখানে আমার বোন তোর প্রতি এতটা সদয় সেখানে তুই তার প্রতি কেন এতটা নির্দয়? আবারও সতর্ক করছি তোকে ভালো হয়ে যা তুই। আজকের জন্য তেকে ছাড় দিলেও পরেরবার কিন্তু আমি তোকে ছাড় দিবনা। মাইন্ড ইট।”

উল্টো পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল নিহাল। চোখ বুজে ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করল। মনে অশান্তি নিয়ে কীভাবে শান্তিতে ঘুমুতে হয় তা জানা নেই তার। নিহালের প্রতি ভয় বাড়তে লাগল পিয়াসার! কান্না থামিয়ে সে বসা থেকে ওঠে দাড়ালো। একপ্রকার তব্দা লেগে গেল সে! রুমের সমস্ত আলো বন্ধ করে সে চুপিসারে সোফায় চুপটি করে শুয়ে পড়ল! বিরক্তি নিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

“শুধু বাপের বাড়ির মানুষগুলো ঠিক নেই বলে আজ আমি তার সব অ’প’মান সহ্য করে নিলাম! আমার বাপ আর ভাই যদি ঠিক থাকত তাহলে এতক্ষণে তার মুখের উপর থু থু ছিটিয়ে কখন এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতাম! এই সংসারে আর ভালো লাগছেনা আমার! বাকিটা জীবনও হয়ত এভাবেই আমাকে মারধর খেয়ে কাটিয়ে দিতে হবে।”

নাকে কান্না জুড়ে দিলো পিয়াসা। চোখ খুলে নিহাল রুমের সব আলো বন্ধ দেখে শঙ্কিত হয়ে উঠল। বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল তার। ঝট করে সে শোয়া থেকে ওঠে বিচলিত হয়ে অন্ধকারে পিয়াসাকে খুঁজতে লাগল। ভাবল সত্যি সত্যি বুঝি পিয়াসা বাপের বাড়ি চলে গেল! সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিহাল সোফার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই দেখল সোফার উপর পিয়াসা নড়াচড়া করছে। স্বস্তির শ্বাস ফেলল নিহাল। ঝট করে আবারও বিছানায় শুয়ে পড়ল। চোখ জোড়া বুজে বিক্ষিপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,
“আর কিছুতেই তাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবেনা। টাইটে রাখতে হবে। বুঝাতে হবে সে যা করছে ভুল করছে। আর আমিও তার প্রতি এতটা দুর্বল নই যে তাকে সবসময় মাথায় তুলে রাখব। আদরের সময় যেমন আদর করব তেমনি শাসনের সময় শাসন।”

রাতের আঁধার পেরিয়ে চারিদিকে ভোরের আলো ফুটতেই মারজিনা বেগম ঘুম থেকে জাগলেন। ফজরের নামাজ কায়েম করে তিনি রান্নাঘরের দিকে পা বাড়তেই লক্ষ্য করলেন নিহালের রুমের দরোজার সামনে দুধের গ্লাস সমেত ট্রে টি এখনও পরে আছে! বিষয়টিতে বেশ অবাক হলেন তিনি। নিহালের রুমের দিকে অগ্রসর হয়ে তিনি গভীর চিন্তিত গলায় বললেন,
“কী ব্যাপার? দুধসহ ট্রে টি এখানে কী করছে? কাল রাতে তো আমি নীহারিকাকে ট্রে টি দিয়ে বলেছিলাম পিয়াসা আর নিহালকে দুধটা দিয়ে আসতে। তার মানে কী নীহারিকা দুধটা তাদের না দিয়ে দরোজার সামনেই রেখে চলে গেছে? সামান্য এই কাজটাও মেয়েটাকে দিয়ে হলোনা?”

নীহারিকার উপর রেগে গেলেন মারজিনা বেগম। ট্রে টি হাতে নিয়ে তিনি ছুটে গেলেন নীহারিকার রুমে। অর্ধখোলা দরোজাটি খুলে তিনি রুমের ভেতর প্রবেশ করে রুমের আলো জ্বালিয়ে দিলেন। অমনি অবাক হয়ে তিনি চোখ ঘুরিয়ে সম্পূর্ণ রুমটিকে দেখতে লাগলেন। এই কী অবস্থা রুমের? জিনিসপত্র সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে! আলমারির কাপড়চোপড় সব বিছানার উপর অগোছালো হয়ে পরে আছে। ফুলের টব দুটি ভাঙা! মনে হচ্ছে ভাঙচূড় হয়েছে রুমে। বিছানার এক পাশে নীহারিকা গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। শুয়ে আছে বললে ভুল হবে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।
দুধের ট্রে টি টেবিলের উপর রেখে মারজিনা বেগম রেগেমেগে তেড়ে গেলেন নীহারিকার কাছে। ঘুমন্ত নীহারিকাকে দু-হাত দ্বারা ঠেলে তিনি ধমকের স্বরে বললেন,

“এই নীহারিকা ওঠ। ঘরের কী অবস্থা করে রেখেছিস তুই?”
এভাবে দুই-তিনবার নীহারিকাকে ঠেলতেই ঘুম ভাঙল নীহারিকার। চোখ বুজেই সে বিরক্তি প্রকাশ করল। সারারাত অঝরে কান্নার দরুন চোখ টেনে মেলতে পারছিলনা সে। চোখ দুটি ফুলে ফেঁপে একাকার। মাথাটাও চরম ব্যথা করছে। কপাল ঘঁষতে ঘঁষতে সে বিব্রতকর গলায় তার মাকে বলল,

“উফস মা কী হচ্ছে? ঘুমাতে দাও।”
“কেন? সারারাত কী করেছিস তুই? চোর পাহারা দিয়েছিস যে সকাল হওয়ার পরেও বলছিস ঘুমুতে দাও। রুমের এ কী দশা করে রেখেছিস তুই?”
বিরক্তি নিয়ে নীহারিকা কাঁথা টেনে আরও আরাম করে শুলো! তার মায়ের রাগ এবং কথাকে অগ্রাহ্য করে সে কাঁথার নিচে মুখ লুকিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,

“তুমি এখন যাও তো মা। আমি যেমন আমার রুম অপরিষ্কার করেছি। সময় হলে আমিই আমার রুম গুছিয়ে নিব। তাছাড়া আজ আমার কলেজ আছে। একটু পরে এমনিতেও ওঠে যেতে হবে। যে দু-এক ঘণ্টা আছে একটু ঘুমুতে দাও।”
নীহারিকার কথায় আরও চটে গেলেন মারজিনা বেগম। তবে এই মুহূর্তে তা নীহারিকার সামনে প্রকাশ করলেন না। এবং নীহারিকাকে বিরক্তও করলেন না। খিটখিটে মেজাজ নিয়ে তিনি নীহারিকার রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। যেতে যেতে রগচটা গলায় বললেন,

“ঘুম থেকে ওঠ একবার। তোর তেল আমি বের করব। মায়ের সাথে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করা তো দূরে থাক সাথে কোনো কাজ দিলে তাও করবিনা আবার সব উল্টেপাল্টেও রাখবি। দায়িত্ব বলতে কিছু নেই। ছেলের বউটাও হয়েছে এক। সকাল হয়ে গেছে এখনও পরে পরে ঘুমুচ্ছে। জানে তার স্বামী সকাল আটটা বাজেই অফিসে রওনা হবে। এরপরেও এই ব্যাপারে তার দায়িত্বহীনতা। জ্বালা শুধু আমার। কারণ আমিতো মা। পেটে ধরেছি তাকে। তাই আমাকেই সবদিক খেয়াল রাখতে হবে।”

কিছুক্ষণ পকপক করে মারজিনা বেগম রান্নাঘরে চলে গেলেন। সকালের নাশতা তৈরি করতে। ঘড়ির এলার্ম অনুযায়ী নিহাল কারেক্ট সাতটা পনেরোতে ঘুম থেকে উঠল। চোখ কচলে সোফার দিকে তাকাতেই দেখল পিয়াসা একটুখানি সোফার উপর দলা মোচড়া হয়ে এখনও বেঘোরে ঘুমুচ্ছে! হামি তুলে নিহাল বিছানা ছেড়ে ওঠে দাড়ালো। রাগী ভাব নিয়ে সোফার কাছে এগিয়ে গিয়ে পিয়াসার নাম ধরে ডাকল। বলল,

“এই পিয়াসা উঠো। আমার অফিসের সময় হয়ে গেল অথচ এখনও তুমি নাক টেনে ঘুমুচ্ছ? দায়িত্ব বলতে কিছু নেই? যাও রান্নাঘরে যাও। মা কে হাতে হাতে সাহায্য করো।”
নিহালের কথা অগ্রাহ্য করে পিয়াসা তবুও নাক টেনে ঘুমুচ্ছিল! দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে সজাগ! চোখ দুটি পিটপিট করছে। ঘুমোনোর বাহানা ধরে নিহালের সমস্ত কথা শুনছে। পিয়াসার চালাকী বুঝতে পেরে নিহাল টেনে ধরে পিয়াসাকে শোয়া থেকে দাঁড় করিয়ে দিলো! গরম দৃষ্টিতে পিয়াসার দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“সব শুনেও তুমি নাটক করছ আমার সাথে তাইনা? যাও ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে যাও। মাকে হেল্প করো। আর কাল থেকে তুমি ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠবে। নামাজ পড়বে দেন রান্নাঘরে যাবে সকালের নাশতা বানাবে। বুঝতে পেরেছ আমি কী বলেছি?”
ভেতরে ভেতরে রাগে ফোঁসছিল পিয়াসা! তবে চ’ড় থা’প্প’র খাওয়ার ভয়ে সে সিটিয়ে গেল! বাধ্য হয়ে নিহালের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে বলল,

“হুম। বুঝতে পেরেছি।”
নিহালের সব রাগারাগি হজম করে পিয়াসা ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে চলে গেল তার শ্বাশুড়ি মাকে সাহায্য করতে। পিয়াসাকে হঠাৎ এই সময়ে রান্নাঘরে দেখে বেশ অবাক হলেন মারজিনা বেগম। পিয়াসার গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি চিন্তিত গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,

“কী বউমা? আজ হঠাৎ এত সকালে তুমি রান্নাঘরে? শরীর টরীর খারাপ হলো না-কী তোমার?”
তেজ দেখিয়ে পিয়াসা চায়ের পাতিল চুলোয় বসালো। তটস্থ গলায় প্রত্যত্তুরে বলল,
“কেন? অসুস্থতা ছাড়া কী আমি এত সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারিনা? শুধু কী আপনি একাই এত সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারেন মা? আর বাকীরা পারেনা?”

সকাল সকাল পিয়াসার সাথে তর্কে জড়াতে চাইলেন না মারজিনা বেগম! চুপ করে সব সহ্য করে গেলেন। আর ভেতরে ভেতরে তীব্র আফসোস নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে লাগলেন।

ক্লাসে বসে ঘুমে ঝিমাচ্ছিল নীহারিকা! রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার দরুন তার অবস্থা এখন ঘুম কাতুরে। কোনোমতে আর একটি ক্লাস শেষ করতে পারলেই সে বাড়ি পৌঁছে লম্বা একটি ঘুম দিবে সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বেঞ্চে মাথা রাখা অবস্থায় নীহারিকার বান্ধবী হঠাৎ নীহারিকাকে ঠেলে তার কানে বিড়বিড় করে বলল,
“তোর বেয়াই দেখছি ক্যাম্পাসে একটি মেয়ের সাথে দাড়িয়ে কথা বলছে! মেয়েটি কে রে নীহারিকা? তোর বেয়াইয়ের গার্লফ্রেন্ড নাকী?”

অমনি নীহারিকার চোখ থেকে ঘুম শুড়শুড় করে বিদায় নিলো! বেঞ্চ থেকে মাথা উঠিয়ে সে তার বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“কই তিনি? কোথায় দেখছিস তাকে?”
বটতলার দিকে আঙুল তুলে নীহারিকার বান্ধবী রূপলকে দেখিয়ে দিলো। সেদিকে নীহারিকা তাকিয়ে দেখল সত্যিই রূপল একটি মেয়ের সাথে দাড়িয়ে বেশ হেসে হেসেই কথা বলছে! বিষয়টায় বেশ রাগ হলো নীহারিকার। সঙ্গে সঙ্গেই সে ম্যামের অনুমতি নিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল! ছুটে গেল রূপলের কাছে। দুজনের মাঝখানে দাড়িয়ে সে কঠিন গলায় রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“এই? আপনি এখানে কী করছেন? মেয়েটি কে?”
নীহারিকার উপস্থিতিতে রূপল বিব্রতবোধ করল! সাথে মেয়েটিও! বিরক্ত হয়ে মেয়েটি রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“ইনি কে ভাইয়া? কথার মাঝখানে এসে আমাদের বিরক্ত করছে! আপনার দিকে প্রশ্নও তুলছে।”
নীহারিকার উপর যদিও রূপল ক্ষিপ্ত তবুও সে স্বাভাবিক গলায় মেয়েটিকে বুঝিয়ে বলল,
“বেয়াইন হয়। আচ্ছা তুমি এখন যাও তৃষা। আমি ঐ ব্যাপারে পরে তোমার সাথে কথা বলব।”
নীহারিকার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো মেয়েটি। জবাবে রূপলকে বলল,

“ওকে ভাইয়া। বায়।”
রূপলের থেকে বিদায় নিয়ে মেয়েটি চলে গেল। ভ্রু উঁচিয়ে রূপল এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালো। প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী দরকার ছিল ক্লাস মিস করে এখানে ছুটে আসার? ক্লাস শেষ হলেও তো আসা যেত তাইনা?”
“আপনি জানতেন আমি ক্লাস করছিলাম?”

ফেরারি প্রেম পর্ব ৩৮

“এখান থেকে দাড়িয়ে আপনাদের ক্লাসটা সরাসরি দেখা যায়। ঐ হিসেবে আপনাদের ক্লাসের দিকে দু-একবার চোখ পরেছিল। তখনই খেয়াল করেছি আপনি ক্লাস করছেন।”
“ঠিক আছে। কিন্তু আমিতো তৃতীয় সারির একদম লাস্ট বেঞ্চে বসেছিলাম। এত সহজে তো আমাকে দেখার কথা নয়।”
“আপনাকে দেখাটা আমার কাছে কঠিন কিছু নয়! যাই হোক, ক্লাসে বসে বসে ঘুমুচ্ছিলেন কেন? রাতে কী চোর পাহারা দিয়েছিলেন?”

ফেরারি প্রেম পর্ব ৪০