প্রেমের পরশ পর্ব ২৮

প্রেমের পরশ পর্ব ২৮
লেখিকাঃ দিশা মনি

আমান ছোয়াকে জিজ্ঞেস করে,
‘এটা তুই কি বললি? ছান রাক খু’ন মানে কি?’
ছোয়া ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায়৷ তখন অনেক দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকায় আমানকে দেখার পর অনেকটা নিশ্চিত হয় সে। প্রাণে যেন আত্মা ফিরে পায়। ছোয়ার মাথায় তখন থাই ঐ দুজন কাপলের কথাই ভেসে উঠেছিল। তাই সে বলে ফেলেছিল ছান রাক খু’ন। কিন্তু এখন এটার বাংলা মানেটা কিভাবে বলবে সেই নিয়ে লজ্জায় পড়ে গেল ছোয়া। লাজুক মুখ করে বলল,
‘তেমন জরুরি কিছু না। আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম তো তাই ভুল করে বলে ফেলেছি।’

আমান ছোয়ার এই অজুহাতটি বিশ্বাস করল না। কারণ সে স্পষ্ট দেখেছে আশেপাশের অনেক মানুষ হাততালি দিয়েছে এই কথাটা শুনে। তাই আমান আর দেরি করল না। নিজের ফোনটা বের করল। তখন রেস্টুরেন্টেও এই ফোনের সাহায্যে ডিশগুলোর নাম দেখেছিল সে। তাই এবার এই অজানা শব্দের মানেও তাকে জানতে হবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে ছান রাক খু’ন এর আবিধানিক অর্থ জেনে নেয় আমান। যা তাকে মুহুর্তেই খুশি করে দেয়। আমরা যখন অনেক অপেক্ষার পর বহু কাঙ্ক্ষিত কোন কিছু পেয়ে যাই, সেই সময় আমাদের খুশির কোন সীমানা থাকে না। আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই আমরা৷ একই রকম অবস্থা এখন আমানের। যেই ছোয়াকে সে এতদিন ধরে নীরবে ভালোবেসে গেছে, যার প্রতি এতগুলো দিন ধরে অনুভূতি জমিয়ে রেখেছে৷ এত চেষ্টা করেছে যাকে পাওয়ার জন্য আজ সে নিজেই আমানকে ভালোবাসার কথা বলল। এই অনুভূতির কোন তুলনা হয়না। আমান সবার সামনেই ছোয়াকে শক্ত করে আলিঙ্গন করল৷ অতঃপর তাকে কোলে তুলে নিল। আনন্দভুক মুখে বলে উঠল,

‘আমি যে কি খুশি হয়েছি তা বলে বোঝাতে পারব না। আজ তুই আমাকে ভালোবাসি বলেছিস। জানিস আমি কত অপেক্ষায় ছিলাম এই দিনটার জন্য।’
ছোয়া এতগুলো মানুষের সামনে ভীষণ লজ্জায় পড়ে যায়। আমানের যেন সেসব কোন খেয়াল নেই। সে ব্যস্ত নিজের মনের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে। তাই ছোয়াকে কোলে নিয়েই একবার ঘুরিয়ে নিলো। অতঃপর তাকে নামিয়ে তার হাতটা শক্ত করে ধরে চলতে লাগল তাদের হোটেলের দিকে। আজ হয়তো রচনা হতে চলেছে ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায়।

হোটেলে এসে রুমে প্রবেশ করেই ছোয়াকে বিছানায় শুইয়ে দিল আমান। অতঃপর তার কাছে আসতে লাগল। ছোয়ার অধরে নিজের অধর ডুবিয়ে দিল। ভালোবাসার উষ্ণ ছোয়ায় ডুবে গেল দুজনে। আমানের এত দিনের জমানো অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটছে এভাবেই। নিজের প্রেমের পরশে ছোয়াকে রাঙিয়ে দিচ্ছে আমান। ধীরে ধীরে আরো গভীর হতে থাকে প্রতিটি প্রেমের পরশ। দুজন কপোত কপোতি যেন একে অপরের ভালোবাসায় সম্পূর্ণ রূপে হারিয়ে যেতে থাকে।
ছোয়ার খুব ভালো লাগতে থাকে আমানের প্রেমের পরশ। ভালোবাসার গভীরতায় একসময় গড়ায় তাদের মিলনের দিকে। এই রাত প্রথম বারের মতো তাদের মিলনের সাক্ষী হতে থাকে।
রেডিওতে বাজ থাকে এই গানটা,

Do dil mil rahe hain
Magar chupke chupke
Do dil mil rahe hain
Magar chupke chupke
Sabko ho rahi hai
Haan sabko ho rahi hai
Khabar chupke chupke
Do dil mile rahe hain
Magar chupke chupke
Saanson mein badi bekarari
Aankhon mein kayi rat jage
Kabhi kahin lag jaaye dil toh
Kahin phir dil na lage
Apna dil main zara thaam loon
Jaadu ka main isse naam doon
Jaadu kar raha hai
Jaadu kar raha hai
Asar chupke chupke
Aaise bhole bankar hai baithe
Jaise koi baat nahin
Sab kuch nazar aa raha hai
Din hai yeh raat nahin
Kya hai kuch bhi nahin hai agar
Honthon pe hai khamoshi magar
Baatein kar rahi hai
Baatein kar rahi hai
Nazar chupke chupke
Do dil mile rahe hain
Magar chupke chupke
Sabko ho rahi hai
Haan sabko ho rahi hai
Khabar chupke chupke
Do dil mile rahe hain
Magar chupke chupke

সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছোয়া দেখে আমান তাকে নিজের অনেক কাছে জড়িয়ে রেখেছে। ছোয়ার মাথা আমানের বুকের মাঝে। ছোয়া একটু দূরে সরে আসার চেষ্টা করলে আমান তাকে আরো শক্তভাবে জাপটে ধরে। ছোয়ার কানের কাছে এসে আলতো ভাবে চুমু দিয়ে বলে,
‘কোথায় যেতে চাচ্ছিস তুই?’
ছোয়া নরম গলায় বলে,

‘তোমার থেকে দূরে যাওয়ার সাধ্য কি আমার আছে?’
আমান বেশ অবাক হয়ে যায় ছোয়ার কথা শুনে। অবাক জড়ানো কন্ঠে বলে ওঠে,
‘কি বললি তুই? আমাকে তুমি বললি? আজ কি সূর্য পশ্চিম দিকে উঠলো নাকি?’
ছোয়া মৃদু হেসে বললো,
‘সূর্য পূর্ব দিকেই উদিত হয়েছে। আমরা যেহেতু স্বামী স্ত্রী তাই আমাদের একে অপরকে তুমি করে বলাই তো উচিৎ তাই নয় কি?’

আমান মুখ চোখ কুচকে বলে ওঠে,
‘সে তুই যাই বলিস না কেন আমি তোকে তুমি করে বলতে পারব না।’
ছোয়া ক্রুর হেসে বলে,
‘তাহলে আমিও তোমাকে আমান ভাইয়া বলে ডাকব।’
আমানের ফর্সা মুখশ্রী লাল বর্ণ ধারণ করল। আমান কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
‘হুম, খুব ভালো। তারপর আরো ভালো হবে যদি আমাদের সন্তান আমাকে মামা বলে ডাকে।’
ছোয়া এবার বেশ শব্দ করেই হাসে। আমান দাত কটমট করে বলে,

‘একদম হাসবে না তুমি।’
ছোয়া প্রচণ্ড অবাক হয়ে বলে,
‘তুমি আমাকে তুমি করে বললে!’
আমান একটা সুন্দর হাসি দিয়ে বলে,
‘এছাড়া আর কি করব? নিজের হবু বাচ্চার মুখে মামা ডাক শোনার কোন ইচ্ছা অন্তত আমার নেই।’
ছোয়া আবারো হেসে দিল।

পাতায়া থেকে পুনরায় ব্যাংককে ফিরে এলো আমান ও ছোয়া। আজকে আবার থাইল্যান্ডের কোম্পানির সাথে আমানের একটা মিটিং রয়েছে। সেই জন্য একটু তাড়াহুড়ো করে ফিরতে হলো।
ব্যাংককে ছোয়াকে হোটেলে নিয়ে এসে আমান তৈরি হয়ে নিল। অতঃপর বের হয়ে যাওয়ার আগে ছোয়ার কাছে এসে বলল,

‘যাওয়ার আগে আমি একটা গিফট চাই ‘
ছোয়া জিজ্ঞাংসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে ফেলে,
‘কি গিফট?’

আমান তখন ছোয়ার কাছে আসতে থাকে৷ ছোয়া বুঝতে পারে আমানের উদ্দ্যেশ্য তাই সে ধীরে ধীরে একটু করে পিছাতে থাকে। কিন্তু কোন লাভ হয় না ছোয়ার। কারণ আমান ঠিকই তাকে ধরে ফেলে। অতঃপর ছোয়ার অধরে নিজের প্রেমের পরশ দিয়ে নিজের তৃষ্ণা মিটিয়ে নেয়। যাওয়ার আগে ছোয়ার কপালেও প্রেমের পরশ একে দিয়ে তার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘এটা আমার সকালের ব্রেকফাস্ট ছিল। তাই অল্পতেই পেট ভড়িয়ে নিলাম। এরপর রাতে ফিরে কিন্তু এত অল্পতে পেট ভড়াতে পারব না। ডিনারে কিন্তু চাই আরো বেশি ‘

প্রেমের পরশ পর্ব ২৭

ছোয়া প্রচণ্ড লজ্জায় নিজেকে গুটিয়ে নেয়। আমান সুন্দর একটা হাসি উপহার দিয়ে চলে যায়। আমানের প্রস্থানের পর ছোয়া তাকে নিয়েই ভাবতে থাকে৷ আমানের অবস্থাও অনেকটা একই রকম। গাড়িতে যাওয়ার সময় সে ছোয়ার কথা ভাবতে থাকে।

প্রেমের পরশ পর্ব ২৯