ফেরারি প্রেম পর্ব ৪১

ফেরারি প্রেম পর্ব ৪১
নিশাত জাহান নিশি

“তো এখানে এত হাইপার হওয়ার কী আছে মা? এটা তো নরমাল বিষয়। হাসবেন্ডই তো গাঁয়ে হাত তুলেছে অন্য কেউ তো তুলেনি!”
রূপলের গাঁ ছাড়া কথায় অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেলেন নাজনীন বেগম। পূর্বের তুলনায় অধিক রুষ্ট হয়ে তিনি কঠোর গলায় রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন,

“তোর কাছে কী বিষয়টা নরমাল মনে হলো?”
সোফা থেকে মাথা তুলল রূপল। তার মায়ের দিকে ঈষৎ রূঢ় দৃষ্টিতে তাকালো। গাম্ভীর্যপূর্ণ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“অভেয়সলি! অন্যায় দেখলে হাসবেন্ড তার ওয়াইফের গাঁয়ে হাত তুলতেই পারে। এখানে আমি ওভার রিয়েক্ট করার মত কিছু দেখলাম না মা।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঘামে সিক্ত শরীর নিয়ে রূপল বসা থেকে ওঠে গেল। অস্থির হয়ে সে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে তার রুমের দিকে গতিপথ নির্ধারণ করল। গরমে অধৈর্য হয়ে বলল,
“ইশশ কী গরম পরল রে। গাঁয়ের চামড়া ঝলসে গেল। এখনি শাওয়ার নিতে হবে।”
ঐদিকে রাগে ফোঁসতে লাগলেন নাজনীন বেগম! হৃদিকে কোল থেকে নামিয়ে তিনি হনহনিয়ে রূপলের পিছু নিলেন। রূপলকে উদ্দেশ্য করে তটস্থ গলায় বললেন,

“সুহাসিনীর শোকে শোকে কী তুই পাথর হয়ে গেলি রে? এত আদরের বোন তোর। যে বোনের গাঁয়ে তুই কখনও আঁচড় লাগতে দিসনি সেই বোনের এই দুর্দিনে তুই তাকে অবহেলা করছিস?”
নাজনীন বেগমের আলুথালু কথায় অবাক হলো রূপল। পিছু ঘুরে সে নির্বোধ দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকালো। ভ্রু যুগল কুঁচকে হঠকারি গলায় বলল,

“তুমি কী বললে মা? আমি পাথর হয়ে গেছি? ভাই হয়ে বোনকে অবহেলা করছি? নাও ইউ টেল মি, তোমার মেয়ের কী এমন দুর্দিন নেমে এলো যে তার পাশে আমাকে থাকতে হবে?”
“একটা পরের ঘরের ছেলে তোর বোনের গাঁয়ে হাত তুলেছে রূপল! তোর বোনের জীবনে এরচেয়ে বড়ো আর কী দুর্দিন আসতে পারে?”

“মা প্লিজ। তোমার মত একজন সংসারী মহিলার মুখে এসব বিবেকহীন কথা মানায় না। অন্যায় না দেখলে কেউ কারো গাঁয়ে হাত তুলেনা। মনে মনে কিন্তু তুমিও জানো মা, তোমার মেয়ে খুব বেশী একটা সুবিধার না! মনে আছে বিয়ের দিনের কথা? কী কেলেঙ্কারিটা করেছিল সে? এইতো সেদিনও তোমার মেয়ে অবান্তর বাহানা ধরল শ্বশুর বাড়িতে যাবেনা সে! পরে আমি মারধর করে একপ্রকার জোর করে তাকে ঐ বাড়িতে রেখে আসলাম! এমন ছেলেমানুষী করলে তার সংসার টিকবে কী করে মা? আর তুমি কী-না তাকে সংসার জীবনের এই বাস্তবিক দিকগুলো না বুঝিয়ে উল্টো তাকে ইন্ধন দিচ্ছ? তাহলে তোমার থেকে তোমার মেয়ে কী শিক্ষা পাবে মা? সংসার ভাঙার শিক্ষা?”

রূপলের উচিৎ কথাগুলো মোটেও পছন্দ হলোনা নাজনীন বেগমের! অকপট দৃষ্টিতে তিনি রূপলের দিকে তাকালেন। খরতর গলায় বললেন,
“তুই ভাই হয়ে যখন বোনের দিকটা ভেবে দেখছিস না তখন বাইরের ছেলে আর কী ভাববে? জানিনা সুহাসিনী তোকে কী যাদু করে গেছে! কোন জগতে আছিস তুই।”
হাইপার হয়ে গেল রূপল! না চাইতেও সে রূঢ় ব্যবহার করতে বাধ্য হলো তার মায়ের সাথে। ধমকের স্বরে তার মাকে বলল,

“মা প্লিজ। মৃত ব্যক্তিকে আমাদের মাঝখানে টেনে এনো না। আর তাছাড়া আমি যা বলছি সব বাস্তবিক চিন্তাধারা থেকে বলছি। বরং তুমি যা বলছ সব নিছক আবেগী চিন্তাধারা থেকে বলছ! মানছি মা হিসেবে মেয়ের প্রতি সহানুভূতি তোমার বেশীই কাজ করবে, কিন্তু নিজের আবেগকে এতটাও প্রশ্রয় দিওনা যে এতে করে তোমার মেয়ের সর্বনাশ হয়! তাছাড়া জিজু খুবই ভালো মনের মানুষ। শুধু জিজু কেন বলছি? পিয়াসার শ্বশুর বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ ভীষণ আন্তরিক। এত সরল মনের মানুষদের সাথে যদি তোমার মেয়ে মানিয়ে চলতে না পারে সরি টু সে আমি বলব, তোমার মেয়ে পৃথিবীর কোথাও কারো সাথে সংসার করতে পারবেনা! আর কাইন্ডলি এই বিষয় গুলো তুমি তোমার মেয়েকে বুঝিয়ে দিও। আমি বুুঝাতে গেলে হয়ত গাঁয়ে হাত ওঠে যাবে!”

“আমার মেয়ে যদি কোনো অন্যায় করে থাকে তাহলে নিহাল প্রয়োজনে তাকে ঠাণ্ডা মাথায় বুঝিয়ে দিত এতে কাজ না হলে আমাদের কাছে নালিশ করতে পারত। কিন্তু তা না করে সে কোনো সাহসে আমার মেয়ের গাঁয়ে হাত তুলে?”
“একই কথা বার বার রিপিট করতে আমার ভালো লাগেনা মা! তোমার মেয়ে কী এতই সোজা যে তাকে ভালোভাবে বুঝালে সে বুঝবে?

নিশ্চয়ই ঘাড়ত্যাড়ামো করেছে কিংবা বাড়াবাড়ি কিছু করেছে তাই হয়ত জিজু গাঁয়ে হাত তুলতে বাধ্য হয়েছে। তাছাড়া জিজু তার গাঁয়ে হাত না তুলে যদি তাদের ফ্যামিলির অন্য কেউ তুলত তাহলে না হয় বিষয়টা আমাদের গাঁয়ে লাগালে মানাত! কিন্তু এখানে স্বামী হাত তুলেছে স্ত্রীর গাঁয়ে। এখানে আমাদের আর কী বলার থাকতে পারে মা? একটা কথা সবসসয় মাথায় রাখবে মা। বিয়ের পর মেয়েরা পর হয়ে যায়!

তখন তাদের জগতটাও আলাদা হয়ে যায়। স্বামী, সংসার, শ্বশুর বাড়ি হয়। আর তখন মেয়ের সংসারে নাক গলানোটা তোমার বাড়াবাড়ি হয়ে যায়! বিবেকহীনতার কাজ মনে হয়! আর একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, তোমার মেয়ের বুদ্ধি খুবই কম! যদি তার মাথায় মিনিমাম বুদ্ধি বলে কিছু থাকত। তাহলে চড় খাওয়ার বিষয়টা লজ্জায় কাউকে জানাত না! এই বিষয়টা নিয়ে তুমি আর প্লিজ আমার কানের কাছে আর ঘ্যান ঘ্যান করো না। এমনিতেই গরমে অসহ্য লাগছে তার উপর তোমার এই ভাঙা রেকর্ড।”

হৃদিকে কোলে নিয়ে রূপল জায়গা ত্যাগ করল! নাজনীন বেগম হতবাক দৃষ্টিতে তার ছেলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলেন। উদাসীন হয়ে মিনমিনে গলায় বললেন,
“আমার ছেলে আমাকে এসব কী বলে গেল? মা বোন কাউকেই ছাড় দিলোনা? তবে কী এই দিন দেখার জন্য ছেলেকে মানুষ করেছিলাম আমি? গুরুজনদের মুখে শুনি বিয়ের পর না-কী ছেলেরা পাল্টে যায়! এখন তো দেখছি বিয়ের আগেই আমার ছেলে পাল্টে গেছে!”

হৃদিকে ফ্রেশ করিয়ে রূপল তার ফোনটা দিয়ে হৃদিকে বিছানায় বসিয়ে রাখল। সেই ফাঁকে রূপল ও তার শাওয়ারটা সেরে নিলো। ভেজা শরীর নিয়ে রূপল টাওয়াল দিয়ে মাথাটা মুছতে মুছতে হৃদির হাত থেকে ফোনটা নিলো। হৃদি এতে রেগে গেল! কারণ তার গেইম খেলায় ব্যাঘাত ঘটল। বিষয়টা বুঝতে পেরে রূপল কোমল গলায় হৃদিকে বুঝিয়ে বলল,
“ফোনে একটু কাজ আছে মা। জাস্ট ফাইভ মিনিটস এর জন্য ফোনটা নিলাম ওকে?”

নাক ফুলিয়ে হৃদি বুকের উপর দু’হাত গুজে বলল,
“ওকে। তবে কিন্তু শুধু ফাইভ মিনিটসই। এর বেশী নয়।”
“ওকে বাবা। তুমি কাউন্ট করো।”
হৃদির সাথে মৃদু হেসে রূপল ফোনটা নিয়ে বারান্দায় গেল। খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভেবেচিন্তে সে নিহালের নাম্বারে কল করল! প্রথম কলটি বেজে উঠতেই নিহাল ব্যস্ততা কাটিয়ে কলটি তুলল। সৌজন্যতার হাসি দিয়ে বলল,

“হ্যা রূপল বলো? কেমন আছো?”
বিনিময়ে রূপলও ভদ্র গলায় জবাবে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি জিজু। আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তো কী করো? হঠাৎ কী মনে করে জিজুকে কল করা?”
“না মানে এমনি জিজু। ভাবলাম আপনার একটু খবর নিই।”
“আমি হয়ত বুঝতে পেরেছি রূপল তুমি হঠাৎ কেন আমায় কল করলে!”

“বুদ্ধিমানদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট জিজু! আমি জানি আপনিই পারবেন আমার ঘ্যাড়ত্যাড়া বোনটাকে সোজা করতে! এবার তাকে মেরে ধরে যেভাবে পারেন সেভাবেই সোজা করেন। সেক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই!”
“তুমি আমার ধারণাই বদলে দিলে রূপল! আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে শাসানোর জন্য কল করেছ। এখন দেখছি হলো এর উল্টোটা। তুমি সত্যিই অন্য ধাতের মানুষ রূপল। তোমাকে শালা হিসেবে পেয়ে আমি প্রাউড ফিল করছি।”

“উঁহু। বরং আমি আপনাকে জিজু হিসেবে পেয়ে প্রাউড ফিল করছি। আমি সবসময়ই ফিল করি আমার বোন আপনার কাছেই সেইফ! আমি এবং আমার পরিবার সঠিক ছেলের হাতেই আমার বোনকে তুলে দিয়েছি। আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়ত এতদিনে আমার বোনের সংসারটা ভেঙে যেত! আপনি আমার বোনকে সহ্য করছেন বলেই সংসারটা আজও টিকে আছে। আশা করি, গোটা জীবনটাও এভাবে কেটে যাবে।

আপনি যত পারেন তাকে শাসন করুন জিজু। এই বিষয়ে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেই! আর এই কথাটা আপনাকে বলার জন্যই কলটা করা।”
“তোমার কথায় স্বস্তি পেলাম রূপল। সকাল থেকেই বেশ চিন্তিত ছিলাম তোমার পরিবারের রিয়েকশন কী হবে ভেবে! ভয়ে ভয়ে ছিলাম মারধরের বিষয়টা শোনার পর তোমার যদি পিয়াসাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নাও! কিন্তু এখন মনে হলো, না আমাকে সঠিক বিষয়টাতে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তোমরা আমার পাশে আছো!”

“অল দ্যা বেস্ট জিজু! আপনি এগিয়ে যান। আমরা আপনার পেছনে আছি।”
অমনি হৃদি ফোন নেওয়ার জন্য কান্নাকাটি জুড়ে দিলো! সম্পূর্ণ কথা শেষ না করেই রূপল বাধ্য হলো তার ফোনটা হৃদিকে দিতে। গরমের তাড়নায় গাঁয়ে শার্ট জাতীয় কিছু পরেনি রূপল! খালি গাঁয়ে সে সোজা রান্নাঘরে চলে গেল। হঠাৎ লেবুর শরবত খেতে খুব ইচ্ছে হলো তার। সাথে বরফের টুকরো। এই কাঠ ফাটা গরমের জন্য এটাই বেস্ট। যদিও রান্নাঘরে তেমন আসা হয়না তার। কিছু বানানোর জন্য তো একদমই না। তবে এই মুহূর্তে সে তার মাকেও ডাকতে পারছিলনা! কারণ, সে জানে তার মা এখন তার উপর ভীষণ রেগে আছে। এখন শরবত বানিয়ে দেওয়ার কথা বললে তো ঘাড় থেকে তার গর্দান আলাদা করতেও সময় লাগবে না!

লেবু চিপে শরবত বানাতে ব্যস্ত হয়ে গেল রূপল। ঐদিকে হৃদি ফোন টিপতে টিপতে হঠাৎ নীহারিকার হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল দিয়ে ফেলল! প্রথমে ভুলবশত হলেও পরে ইচ্ছেবশত নীহারিকার হোয়াটসঅ্যাপে কল দিতে লাগল। নীহারিকা ঘুম থেকে ওঠে সবেমাত্র ফ্রেশ হতে যাচ্ছিল। এরমধ্যেই রূপলের নাম্বার থেকে ভিডিও কল এসেছে দেখে নীহারিকা তাজ্জব হয়ে গেল! ঘুমের তাড়নায় ভুল দেখছে ভেবে সে কয়েকবার চোখ দুটো কচলালো। তবুও একের পর এক ভিডিও কল আসতে দেখে নীহারিকা চিন্তায় পরে গেল। ভালো করে চোখ মেলে দেখল সত্যিই রূপলের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ভিডিও কল আসছে। ঝট করে মুখে হাত দিয়ে নীহারিকা কলটির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,

“হুতুম পেঁচাটা আমাকে হঠাৎ কল দিচ্ছে কেন? তাও আবার ভিডিও কল? কী দেখাতে চাইছে আমাকে?”
সারা ঘরময় নীহারিকা পায়চারি করতে করতে ভাবছিল কলটি তুলবে না-কী তুলবেনা। এর আগে তো রূপল কখনও তাকে ভিডিও কল দেয়নি। তাহলে আজ হঠাৎ কেন ভিডিও কল দিলো? কোনো কুমতলব নেই তো তার? এতটুকু ভেবেই নীহারিকা নিজেকে নিজে বকতে শুরু করল! নিজের মাথায় চাপর মেরে বলল,

“ধ্যাত। কী ভাবছি এসব আমি? হয়ত ভাবির সাথে কথা বলার জন্য কল করেছে। তাছাড়া তিনি কুমতলব নিয়ে আমাকে কেন কল করবে? আমি তো তার নজরে আসার ধারে কাছেও না!”
বহু ভেবেচিন্তে নীহারিকা কলটি তুলল! অমনি হৃদির হাসোজ্জল চেহারাটি তার চোখে ভেসে উঠল! হৃদিকে দেখে অবাক হলো নীহারিকা। বিস্মিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“হৃদি তুমি? কেমন আছো?”
“আরে রাখো তোমার ভালো থাকাথাকি। আগে তুমি দেখো আমার রূপল বাবা মেয়েদের মত কী করছে!”
হৃদির কথা শুনে মুখে হাত চলে গেল নীহারিকার। চোখ দুটো প্রসারিত করে সে কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী করছে তোমার রূপল বাবা?”

“আরে দেখোই না কী করছে। দাঁড়াও আমি ফোনটা বাবার কাছে নিয়ে যাচ্ছি।”
এই বলে হৃদি দৌড়াতে দৌড়াতে রান্নাঘরে সোজা রূপলের কাছে চলে গেল। ব্যাক ক্যামেরায় ফোনটি রূপলের দিকে তাক করে সে চুপটি করে রূপলের থেকে সামান্য দূরত্বে দাঁড়ালো। আর মুখ টিপে মিটিমিটি হাসতে লাগল। তখন লেবু কেটে লেবুর রস চিপছিল রূপল। ভারি ব্যস্ত কাজে। হৃদির উপস্থিতি টের পেয়েও রূপল হৃদির দিকে তাকালো না! ব্যস্ত গলায় হৃদিকে বলল,

“এই গরমে তুমি রান্নাঘরে কী করছ হৃদি? রুমে যাও। এসির নিচে বসো।”
জবাবে হৃদি কিছু বললনা। শুধু মুখ টিপে হাসল। ভিডিও কলে থেকে নীহারিকাও চুপ হয়ে রূপলের কাজকর্ম দেখছিল। রূপলের দিকে তাকাতে তার লজ্জায় চোখ ভেঙে আসছিল! কারণ রূপল খালি গাঁয়ে ছিল! গ্লাসে লেবু এবং চিনি মেশানোর পর রূপল কিছুটা শব্দ করেই বলল,

“একটু লবণ দিলে হয়ত টেস্টটা আরও বাড়বে। লবণের কৌটোটা যেন কোথায়।”
অমনি নীহারিকা মুখ খুলল! রূপলকে উদ্দেশ্য করে ফোনের ঐ পাড় থেকে বলল,
“ঐ তো লবণের কৌটোটা আপনার হাতের কাছে।”
নীহারিকার গলার আওয়াজ পাওয়ামাত্রই রূপল এবার চোখ তুলে সেই আওয়াজের সন্ধান করে হৃদির দিকে তাকাতেই হৃদি হু হা করে হেসে দিলো! বলল,

“নীহারিকা আন্টিকে দেখাচ্ছি তুমি কীভাবে মেয়েদের মত কাজ করছ!”
অমনি রূপল রাগী চোখ নিয়ে হৃদির দিকে তাকালো! চোয়াল উঁচিয়ে সে হৃদির থেকে ফোনটি কেড়ে নিলো! রূপলের কঠিন রূপ দেখে হৃদি ভয়ে কেঁদে দিলো। রান্নাঘর থেকে সে দৌড়ে বের হয়ে গেল। ফোনটি হাতে নিয়ে রূপল ভিডিও কলে থাকা নীহারিকার দিকেও এবার গরম দৃষ্টিতে তাকালো। ঝাঁজালো গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“সিক্স প্যাক ওয়ালা বডি দেখতে খুব ভালো লাগছে? মজা নিচ্ছেন? আরও দেখবেন? প্যান্ট খুলে দিব?”
রূপলের ডানপিটে কথা শুনে রাগে গাঁ রি রি করে উঠল নীহারিকার। ঝগড়া করার প্রস্তুতি নিলো সে! চোখমুখ লাল করে সে খরতর গলায় রূপলকে বলল,

“হেই মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ। কাকে কী বলছেন আপনি? আপনার দিকে ফিরে তাকানোরও বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার! শুধু আপনি কেন? পৃথিবীর কোনো ছেলের দিকেই ওরকম নির্লজ্জ ভাবে তাকানোর ইচ্ছে নেই আমার। প্রথমে আপনার দিক থেকেই কলটা এসেছিল। আমি শুধু কলটা রিসিভ করেছিলাম। কে জানত আপনি আগে থেকেই এভাবে উদোম শরীরে দাড়িয়ে থাকবেন?”

“হ্যাঁ ঠিক আছে কলটা আমার দিক থেকে এসেছিল। কিন্তু পরে যখন দেখলেন কলটা আমি নই বরং হৃদি করেছিল অথবা যখন আমাকে উদোম শরীরে দেখলেন তখন কী কলটা কেটে দিতে পারেননি? এতক্ষণ ধরে কলে কেন ছিলেন আপনি? ফ্রিতে খুব এঞ্জয় করছিলেন এম আই রাইট?”

ফেরারি প্রেম পর্ব ৪০

রূপলের সাথে তর্কে জড়ানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে হলোনা নীহারিকার! ফট করে সে কলটি কেটে দিলো। শুধু তাই নয় হোয়াটসঅ্যাপ থেকেও রূপলকে ব্লক করে দিলো!

ফেরারি প্রেম পর্ব ৪২