বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৫৯

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৫৯
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

আদ্রিয়ান এই মুহুর্তে বেশ বিরক্ত। কারণ ওকে নাকি সবাই মিলে গোসল করাবে তেল-হলুদ দিয়ে। আবার মিডিয়ার লোকেরাও বসে আছে সেই দৃশ্য শুট করবে বলে। আদ্রিয়ানতো কিছুতেই যাবেনা নিচে। সবাই মিলে এতো করে বলছে, বেলাও হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আদ্রিয়ান যেতে নারাজ, রুমে চুপচাপ বসে আছে খাটের ওপর। তাও আসাম করে। আদ্রিয়ান মুখ ফুলিয়ে বলল,

” কাম অন ইয়ার! এভাবে সবার সামনে আমি স্নান করব? তাও আবার মিডিয়ার লোকজন দেখবে, আবার বড় নিউসও করবে? আমি পারবোনা।”
আদিব ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে বলল,
” বাচ্চাদের মত করছিস কেন? তোর বস্ত্রহরণ করবে না কেউ। জাস্ট হলুদ লাগিয়ে গায়ে একটু পানি ঢালবে। গোসলটা তুই ভেতরে এসেই সেড়ে নিস।”
আদ্রিয়ান রাগী কন্ঠে ঝাড়ি মেরে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” কোন দরকার নেই।”
” দরকার আছে! একদম বাদরামো করবেনা আদ্রি। একটা দিনে তোমার আহামরি কোন সমস্যা হবেনা। এতো ধুমধাম করে বিয়েটা যখন করছো তখন এটুকুও করতে হবে।”
কথাটা বলতে বলতে মিসেস আবরার ভেতরে ঢুকলেন। আদ্রিয়ান মুখ ফুলিয়ে বলল,
” কিন্তু মা..”
মিসেস রিমা বেশ অনেকটা রাগ দেখিয়ে বললেন,
” কোন কিন্তু না। চুপচাপ নিচে চলো। তোমার আন্টিরা সব অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি কাজ সাড়তে হবে।”

বলে উনি চলে গেলেন। আদ্রিয়ান চোখ মুখ কুঁচকে বসে রইল। আজব সব নিয়ম। এগুলো কে বানিয়েছে? এখন ওর মত একটা ছেলেকে কি-না এতোগুলো বুড়ো মহিলা মিলে গোসল করাবে। ভাবা যায়? নাহিদ বলল,
” আরে এতো হাইপার হচ্ছিস কেন? পাঁচ মিনিটে হয়ে যাবে। চল আয়।”
” হ্যাঁ সেটাই। আমরা নিচে আছি তুই আয়।”

আদিব, আশিস আর নাহিদ চলে গেলো নিচে। শুধু রিক রয়ে গেল। গোসলের করাবে তাই আদ্রিয়ানকে এখন লুঙ্গি পরতে হবে। বেচারার মোটেই অভ্যেস নেই তাই বিরক্তি নিয়ে এদিক ওদিক মোচড়াচ্ছে খালি। রিক এগিয়ে গিয়ে লুঙ্গি গিট দিতে দিতে বলল,
” অভ্যাস নেই একদমই?”

” না। কীকরে থাকবে? সেই ছোটবেলাতে টানা এক সপ্তাহ পরেছিলাম, তাও বাধ্য হয়ে।”
রিক হালকা আওয়াজ করেই হেসে ফেলল। লুঙ্গি গিট দেওয়া শেষ করে বলল,
” মামার কোন খবর জানিস?”
” উমহুম! আপাতত সামনে আসবে বলে মনে হচ্ছেনা।”
রিক অনেকটা চিন্তিত হয়ে বলল,
” আড়ালে থাকা শত্রুগুলোই খুব ভয়ংকর হয়। আঘাতটা কোন দিক থেকে ঠিক কীভাবে আসবে বলা যায়না। সাবধান থাকতে হবে আমাদের।”
আদ্রিয়ান একটা সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি নিয়ে পরতে পরতে বলল,

” আমার মনে হয়না এখনই ওদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হবে। খালু জেলে। মামার পক্ষে এখন কিছু করা সম্ভবও না। কারণ ওনাদের সব বিজনেসে তালা পরে গেছে। আর টাকা ছাড়া কোন পাওয়ারই কাজ করেনা। ওনাদের একেকজনকে এমনভাবে ভেঙ্গেছি যে ঘুরে দাঁড়াতে কম করে হলেও দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে।”
রিক গম্ভীর স্বরে বলল,
” কিন্তু যেদিন দাঁড়াবে সেদিন কিন্তু এমনিতে ছেড়ে দেবেনা। আর ওনাদের প্রধান লক্ষ্য থাকবে আমাদের সবার দুর্বল জায়গায় আঘাত করা। আমাদের সবার দুর্বল জায়গা মানে বুঝতে পারছিস তো!”
আদ্রিয়ান একটু অন্যমনস্ক হয়ে বলল,

” ভাবতে খুব অবাক লাগে তাইনা? যেই মামার কোলে-পিঠে চড়ে আমরা দুজন শৈশবের এতোটা সময় কাটিয়েছি, বড় হয়েছি। সে আমাদের মেরে ফেলতেও দুবার ভাববে না।”
রিক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
” যেখানে নিজের জন্মদাতা বাবাই.. যাই হোক, এসব নিয়ে যথেষ্ট মন খারাপ করা হয়েছে এতোদিন। আজকের দিনে এসব কথা ভাবার দরকার নেই। চল নিচে চল।”
” হুম চল!”

আদ্রিয়ানকে তেল হলুদ-মাখাচ্ছে সবাই আর আদ্রিয়ান বিরক্ত হলেও মেকি হাসি মুখে ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদিব, রাইমা, নাহিদ, তনয়া, আশিস সব মিটমিটিয়ে হাসছে ওর অবস্থা দেখে। স্নিগ্ধা বড় একটা ঝুড়িতে একগাদা ফুল নিয়ে হেঁটে হেঁটে আসছে। রিকও দুটো চেয়ার হাতে নিয়ে আসছিল। কিন্তু দুজনেই তাড়াহুড়োর মধ্যে থাকায় রিকের সাথে ধাক্কা লেগে ঝুড়ি উল্টে নিচে পরে যায়। স্নিগ্ধা রেগে গিয়ে বলে,

” আজব তো! দেখে হাঁটতে পারোনা?”
রিক চেয়ার দুটো রেখে বলল,
” চোখতো তোরও আছে। তুই কী করছিলি?”
স্নিগ্ধা কিছু না বলে বসে পরল ফুল তোলার জন্যে। রিকও ওকে হেল্প করার জন্যে বসে পরল। ফুল তুলতে তুলতে স্নিগ্ধা রিকের দিকে তাকালো,

” সময়ের সাথে সাথে তীব্রভাবে ভালোবেসে ফেলছে ছেলেটাকে। নিজের মনকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। কিন্তু রিক? সে কী ভাবে? রিক কী ভালোবাসতে পারবে ওকে কখনো?”
রিক স্নিগ্ধার মুখের সামনে গিয়ে তুড়ি বাজাতেই ওর হুশ ফিরলো। রিক ভ্রু নাচিয়ে বলল,
” এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? হয়ে গেছে ওঠানো।”
স্নিগ্ধা কিছু না বলে ঝুড়ি নিয়ে উঠে চলে গেল। রিক ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকাল স্নিগ্ধার দিকে। মেয়েটাকে হলুদ শাড়ি আর খোলা চুলে বেশ লাগেতো! কই আগেতো এতো সুন্দর লাগে নি কখনও?

প্রায় এক ঘন্টার লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এলো অনিমা। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে এখন। কাল প্রায় রাত তিনটা অবধি জেগে ছিল। তার ওপর সকাল সকাল উঠে পরতে হয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই তেল-হলুদ মাখার ঝামেলায় পরতে হয়েছে। উফ, কী ঝামেলা। ক্লান্ত শরীরটাকেই বিছানায় এলিয়ে দিলো একটু ঘুমানোর আশায়। কিন্তু সেটা আর হলোনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই অরুমিতা আর স্নেহা চলে এলো খাবার নিয়ে। কারণ একটু পরেই ওরা ওকে সাজাতে বসাবে আর সাজার পর নাকি কিছু খাওয়া যাবেনা। অনিমা অসহায় ভাবে উঠে বসে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল অরুমিতা আর স্নেহার দিকে। অরুমিতা হেসে দিয়ে বলল,

” আহালে আমার বাবুটা। বিয়ে করবে এইটুকু কষ্ট করবেনা সেটা কী হয়?”
স্নেহা চোখ মেরে বলল,
” সেটাই! আজ সারাদিনের ধকল। রাতে দুলাভাইও রেস্ট করতে দেবেনা। নো টেনশান।”
অনিমা কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলল,
” আমার ঘুম পাচ্ছে।”

অরুমিতা আর স্নেহা আবারও শব্দ করে হেসে ফেলল। অনিমা বিরক্ত হল। এতো হাসার কী আছে এতে? অনিমাকে খাইয়ে দিয়ে একটু গল্প করার পর ওরা আবার অনিমাকে সাজাতে বসল। লাল বেনারসি, গহনাগুলোও বেশ সুন্দর ছিলো। গেস্টদের মধ্যে অনেকে এসেও মাঝেমাঝে দেখে যাচ্ছে কথা বলে যাচ্ছে। হাসান কোতয়াল এমনিতে আজ ব্যস্ত। তবুও কয়েকবার দেখে গেছেন মেয়েকে। কিছুক্ষণ পরেই বাইরে থেকে হালকা আওয়াজে শোনা গেল ‘বর এসে গেছে’। কথাটা শুনতেই অনিমার মধ্যে কেমন একটা করে উঠল। ভেতরে ভেতরে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে যা ব্যাখ্যা করা যায়না। তীব্র এসে দরজায় উঁকি দিয়ে বলল,

” দুলাভাই এসে গেছে। তাড়াতাড়ি চল।”
অরুমিতা আর স্নেহা চলে গেল। আর অনিমা চুপচাপ বসে রইল ওখানে। একটু পরেই ওর বিয়ে হয়ে যাবে। যদিও বিয়েতো ওর হয়েই গেছে। কিন্তু তবুও অকারণেই খুব অস্থির লাগছে ওর।
গেট আটকানো থেকে শুরু করে জুতো চুরি কোন কিছুই বাদ রাখেনি অরুমিতা, তীব্র আর স্নেহা মিলে। সবচেয়ে মজা তো হয়েছে যখন আদ্রিয়ানের জুতোজোড়া অনিমার কাছেই লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।

আর বুদ্ধিটাও স্বয়ং অনিমারই ছিলো। অনেক মজা আর রসিকতার পর বিয়ে কাজ শুরু হল। হাসান কোতয়াল মেয়ের একদম পাশে বসে দুই হাত মুঠোয় ধরলেন। কাজী যখন ‘কবুল’ বলতে বলল তখনই অনিমা হালকা অস্বাভাবিক হয়ে উঠল। কেমন অদ্ভুত অনুভূতিগুলো ঘিরে ধরল ওকে। বিয়ে পরানোর সময়টায় হাসান কোতয়ালের ছলছলে চোখ দেখে অনিমাও কেঁদে ফেলেছে। দীর্ঘ পাঁচবছর পর আব্বুকে ফিরে পেয়েও কয়েক মাসের মাথায় আবার ছেড়ে যেতে হবে।

রোজ সকালে চা করে ওর আব্বুর ঘুম ভাঙানো হবেনা, রোজ রাতে আব্বুর হাতে খাওয়া হবেনা। মাঝরাতে ঘুম না আসলে দু কাপ চা করে আব্বুর রুমে বলা হবেনা, ঘুম আসছেনা আব্বু। চলোনা গল্প করি’। আদ্রিয়ানের মত স্বামী আর ওরকম শশুর শাশুড়ি পাওয়ায় বিয়ের পরও ওর শখ-আল্লাদ, স্বাধীনতা, বায়না কোন কিছুরই পরিবর্তন আসবে না ও জানে। ওনারা আসতে দেবেনা। কিন্তু তবুও বাবা তো বাবাই হয়। হুটহাট দেখতেও পাবেনা।

তাছাড়াও সেদিনতো আদ্রিয়ানের ধমকে আর আচমকা শকের মধ্যে কবুল বলে দিয়েছিল। কিন্তু আজতো নিজের সম্পূর্ণ অনুভূতি নিয়ে আদ্রিয়ানের নামে ‘কবুল’ বলবে। নিজের অস্তিত্বকে আদ্রিয়ানের সাথে জুড়ে দেবে। আদ্রিয়ানের হয়ে যাবে ও। দুটো অনুভূতি মিশে কান্না হয়ে বেড়িয়ে আসছে। ফুপিয়ে কেঁদে উঠছে। হাসান কোতয়াল, অনিমার মামী, অরুমিতা সবাই অনেকে অনেকটা সময় বোঝানোর পর অনিমার মুখ দিয়ে ‘কবুল’ বেড় হল। ওদিকে কাজী বলার এক সেকেন্ডের মধ্যেই আদ্রিয়ান ‘কবুল’ বলে দিয়ছে।

বিদায়ের সময় অনিমাকে দিয়ে নিচে নামার সময় নিরবে কাঁদছিল অনিমা। কিন্তু দরজার বাইরে সিঁড়িতে আসতেই অনিমা কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়ির ওপর বসে পরল। আদ্রিয়ান একটু আগে হাটছিল। অনিমার কান্নার আওয়াজে থেমে গিয়ে পেছন ঘুরে তাকাল। অনিমাকে ওভাবে কাঁদতে দেখে মন বিষাদে ভরে উঠল ওর। হাসান কোতয়াল দ্রুত এগিয়ে এসে মেয়ের পাশে বসতেই অনিমা ওনাকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করল। সবাই বোঝাচ্ছে কিন্তু অনিমাকে সামলাতে পারছে না।

অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও অনিমা উঠছেনা। এদিকে সন্ধ্যাও হয়ে আসছে। এদিকে আদ্রিয়ানের অনিমার কান্নাও সহ্য হচ্ছেনা। আর এখানে যতক্ষণ থাকবে ও কাঁদবেই। তাই আদ্রিয়ান এবার এগিয়ে এসে অনিমাকে কোলে তুলে নিল। অনিমা কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে হাটা শুরু করল। সবাই বেশ অবাঈ হয়েছে, অনেকে ঠোঁট চেপে হাসছেও।গাড়ির কাছে এসে অনিমাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আদ্রিয়ান পেছন ঘুরে হাসান কোতয়ালের দু হাত ধরে বলল,

” চিন্তা করোনা, ওকে নিজের সবটা দিয়ে আগলে রাখব।”
হাসান কোতয়াল তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলল,
” এইজন্যই আমি এতোটা নিশ্চিন্ত।”
অরুমিতা তীব্র আর স্নেহা ওদের সাথেই গেল। আদ্রিয়ানই অনেকটা জোর করে নিয়ে যাচ্ছে ওদের। গাড়ি স্টার্ট করার পর অনিমা আবার ফুপিয়ে কেঁদে দিলো। আদ্রিয়ান ওকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
” কেঁদোনা জানপাখি। আমার কষ্ট হয়তো!”
কিন্তু অনিমার এখনও মৃদু আওয়াজে কেঁদেই চলেছে। আদ্রিয়ান সযত্নে অনিমার চোখ মুছে দিতে দিতে বলল,

” কেঁদোনা প্লিজ। আমরা কদিন পরপর এসেই সিনিয়রের সাথে দেখা করে যাবো। সিনিয়রও তো আসবে আমাদের বাড়িতে তাইনা? আর যদি তবুও তোমার কষ্ট হয় তো তোমার বাবাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে চলে আসবো। প্রমিস!”

কান্নার মধ্যেও অনিমা হালকা হেসে ফেলল। আবরার মেনশনে পৌঁছতেই অনিমার কাছে মিসেস রিমা আর লিমা একপ্রকার দৌঁড়ে চলে এলো। যেনো নতুন বউকে ঘরে তোলার জন্যে এতক্ষণ অধির আগ্রহে বসে ছিল। প্রচলিত সব নিয়ম রীতি মানার পর বসার ঘরে তরুণরা সবাই মিলে বসল। বাকিরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। এরমধ্যেই রিককে বাইরে চলে যেতে দেখে আদিব বলে উঠল,

” কী ব্যাপার আমরা সবাই এখানে আড্ডা দিচ্ছি তুই কোথায় যাচ্ছিস। আসল মজাটাই তো রাতে হবে গুরু!”
রিক মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
” আমার আসলে একটু কাজ আছে। ফার্মহাউজে যাবো একটু। সমস্যা নেই কাল সকাল সকাল চলে আসবো। তোরা এনজয় কর।”
তীব্র বলল,
” কিন্তু ভাইয়া আজকেই যেতে হবে? আজ না গেলে হয়না।”
” সরি ইয়ার, থাকতে পারছিনা। রাতে তো একদমই না। যাওয়া সত্যিই আর্জেন্ট। গাইস সরি হ্যাঁ! যেতে হলো।”

বলে রিক চলে গেল। আদ্রিয়ান কিছুই বলল না আর রিককে থেকে যেতেও বলল না। শুধু ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলল।
নাহিদ আপেল চিবুতে চিবুতে বলল,
” যাক! অবশেষে তোদের বিয়েটা কম্প্লিট। এতোদিন যা চলছিল।”
আদিব বলল,

” হ্যাঁ সেটাই। ব্যালকনি টপকে দেখা করা, লুকিয়ে দেখা করা, ফোনে ফোনে প্রেম। মানে বিবাহিত দম্পতিদের টিনেজার স্টাইলের প্রেমটাও দেখে নিলাম।”
ওদের কথা শুনে একদফা হাসির রোল পরে গেলো। আশিস বলল,
” তবে যাই বলো মামা, আজ রাতে তোমার শান্তি নেই। সবসময় সবার হাড় জ্বালানোর ফন্দি আটতে থাকো তাইনা? এবার তোমার পালা!”
আদ্রিয়ান বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে বলল,
” অল দ্যা বেস্ট।”

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৫৮

আদ্রিয়ানের এরকম চিল মুড দেখে নাহিদ কপাল কুচকে বলল,
” চিল করো আর যাই করো আমরা কিন্তু ছাড়ছি না।”
” সামনে কিন্তু তোর আর তনয়ার বিয়েও আসছে!”
” ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা সিদ্ধান্তে অটল!”

ওরা সবাই হাসিমজা করলেও অনিমা চুপচাপ বসে আছে একদম। একে নতুন বউ তারওপর ওদের এসব কথায় ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে।কিছুক্ষণ এরকম হাসি মজা করার পর মিসেস রিমার কথায় অনিমাকে জাবিনের রুমে নিয়ে গেল একটু রেস্ট করার জন্যে। অনিমা সব গহনা খুলে, চুল খুলে একটু হালকা হয়ে বসল। যেই বিছানায় একটু গা এলাতে যাবে। তখনই আদ্রিয়ান এসে হাজির হল। অনিমা উঠে বসে শাড়ি ঠিক করে নিল। আদ্রিয়ান পকেটে হাত গুজে এগোতে এগোতে বলল,

” টায়ার্ড খুব?”
অনিমা নিচু কন্ঠে বলল,
” হুম।”
আদ্রিয়ান ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
” এখন সাড়ে সাতটা বাজে। সাড়ে ন’টার আগে কেউ তোমাকে ডিসটার্ব করতে আসবে না। তাই আপাতত একটু ঘুমিয়ে নাও। ভালো লাগবে।”

এটুকু বলে চলে যেতে নিয়েও এগিয়ে এসে অনিমার দিকে একটু ঝুঁকে বলল,
” রেস্ট করার জন্যে কিন্তু এই সময়টুকুই পাবে। রাতে কিন্তু টায়ার্ড বললেও আমি শুনছিনা।”
বলে অনিমার চোখে চোখ রেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে চোখ মেরে চলে গেলো। আর অনিমা বোকার মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা শুকনো ঢোক গিলল।

বর্ষণের সেই রাতে সিজন ২ পর্ব ৬০