বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ১৭

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ১৭
লেখিকা: তানজিল মীম

কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান সামনের মেয়েটির দিকে। মেয়েটি তাকে কি বললো ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না আদ্রিয়ান। আসলে সে আহিকে নিয়ে এতটাই ভাবনায় মগ্ন ছিল যে সামনের মেয়েটির কথা কথা ঠিক মতো শুনতে পায় নি। আদ্রিয়ানকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল মেয়েটি,
‘ আপনি হয়তো আমার কথাটা ঠিকভাবে বুঝতে পারেন নি?’
মেয়েটির এবারের কথা শুনে কিছুটা বিষন্নতা নিয়ে মাথা নাড়ালো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে মাথা নাড়াতে দেখে কিছুটা নিরাশ হয়ে বললো মেয়েটি,

‘ আসলে আমার না উইন্ডো সিট ছাড়া বসতে প্রচুর প্রবলেম হয় কিন্তু আজ সবগুলো উইন্ডো সিট ফুল হয়ে গেছে তাই বলছিলাম আপনি কিছু মনে না করলে আপনার সিটে আমি বসতে পারি,আপনার পাশের সিটটাই আমার।’
এরই মধ্যে মাইকে এনাউন্সমেন্ট করা হলো আর কিছুক্ষনের মধ্যেই প্লেন ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবে আকাশ পথে। এনাউন্সমেন্ট শুনতেই আরো ঘাবড়ে গেল প্রীতি বেশ অনুরোধের স্বরে বললো সে,
‘ প্লিজ আমায় একটু হেল্প করুন না, আপনি আমার সিটে বসুন আর আমি আপনার সিটে,প্লিজ প্লিজ বসুন না।’
সামনের মেয়েটিকে এত উত্তেজিত হতে দেখে আদ্রিয়ান বুঝতে পেরেছে তাঁর মতো হয়তো এই মেয়েটারও বিশেষ কোনো প্রবলেম আছে। আদ্রিয়ান বেশ নীরবতার কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ কুল ডাউন মিস। এত উত্তেজিত হওয়ার মতো কিছু হয় নি বসুন আমার সিটে।’
এতটুকু বলে আদ্রিয়ান তাঁর সিট থেকে উঠে বসে পড়লো পাশের সিটে। আদ্রিয়ান বসতেই মেয়েটি খুশি হয়ে বললো,
‘ থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বলেই তাড়াতাড়ি বসে পড়লো সে। তারপর সিট বেল লাগিয়ে হাতে একটা লেবু নিয়ে বসে রইলো আর কিছুক্ষন পর পর বোতল দেখে পানি খেতে লাগলো সে। মেয়েটির এমন কাজ দেখে আদ্রিয়ানের বেশ মজা লাগছিল। আনমনে হেঁসে ফেললো সে। আদ্রিয়ানকে হাসতে দেখে বলে উঠল প্রীতি,
‘ একদম হাসবেন না আমার একটু প্রবলেম আছে তাই আর কি?’
বলেই উল্টোদিক ঘুরে তাকিয়ে রইলো মেয়েটি। মেয়েটির কাজে আদ্রিয়ান আর বেশি কিছু না ভেবে উল্টোদিক ফিরে রইলো সে।’
এরই মধ্যে প্লেন আকাশ পথে চলতে শুরু করলো। প্লেন উপরে উঠতেই ‘প্রীতি’ ঘাবড়ে গিয়ে আদ্রিয়ানের হাত ধরে বসলো। আচমকা কারো হাতের স্পর্শ লাগতেই কিছুটা চমকে উঠলো আদ্রিয়ান। পাশে তাকাতেই সামনের মেয়েটার চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাক আদ্রিয়ান। তবে কিছু বললো না সে, কেন যেন কাল রাতের কথা বার বার মনে পড়ছে তাঁর। সাথে৷ বার বার তাঁর মাথায় বারি মারছে আহির লেখা সেই কথা__
‘ শুনুন বেশি ভয় পাবেন না আপনার মতো রাগী মানুষের সাথে ভয়টা ঠিক মেচ করে না। তবে আপনি মানুষটা রাগী হলেও মন থেকে কিন্তু খুব ভালো।’
আনমনেই হেঁসে উঠল আদ্রিয়ান তারপর তাঁর পাশে থাকা মেয়েটির হাতে দু’বার টাচ করে বললো,

‘ ডোন্ট ওয়ারি কিছু হবে না।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে যেন প্রীতির হাল্কা ভয়টা কমে আসলো। আস্তে আস্তে নিজেকে শান্ত করতে লাগলো সে। প্লেনে উঠতে ভীষণ ভয় প্রীতির সে চাইনি আজ এই প্লেনে যেতে কিন্তু তার ভাইয়ের জোরাজোরিতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই এসেছিল সে।’
বলতে বা বলতেই প্লেন আকাশ পথে ভাসতে শুরু করলো। প্লেন আকাশ পথে ভাসতেই ধীরে ধীরে প্রীতি নিজেকে সামলে নিল তক্ষৎনাত সে যে আদ্রিয়ানের হাত ধরে আছে বিষয়টা মাথায় আসতেই ছিটকে দূরে সরে গেল সে। তারপর মাথা নিচু করে বললো,
‘ সরি এন্ড থ্যাংক ইউ।’
মেয়েটির কথা আর কাজ দেখে হাল্কা হেঁসে বললো আদ্রিয়ান,
‘ ম্যানশন নট।’
বলেই নিজেকে ঠিক করে বসলো সে। প্রীতি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তারপর আর বেশি কিছু না ভেবে মুচকি হেঁসে তাকালো সে বাহিরের দিকে। সাদা মেঘেদের মাঝে যেন ভাসছে উরন্ত ভেলা। আনমনেই হাসলো প্রীতি।’
হঠাৎই আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো সে,
‘ হ্যালো,আমি প্রীতি।’

বাসে জানালার পাশে বসে আছে আহি। মাথার ভিতর আদ্রিয়ানের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বার মনে পড়ছে তাঁর। এতদিন মনে মনে কতই না গালাগালি করতো সে আদ্রিয়ানকে কিন্তু কাল বুঝলো সে যতটা খারাপ ভেবেছিল তার একটুও খারাপ সে নয় হয়তো একটু রাগী কিন্তু মানুষটা খুব ভালো। আনমনেই হেঁসে উঠল আহি। হঠাৎই পাশে অথৈ হাল্কা নড়ে উঠতেই নিজের ভাবনা থেকে বের হলো আহি। অথৈর মাথাটা আর একটু নিজের কাঁধের ওপর রেখে চুপচাপ তাকিয়ে রইলো সে বাহিরের দিকে।’
কয়েক ঘন্টা পর আহিদের বাস এসে থামলো ঢাকা বাসস্ট্যার্টের সামনে। বাস থামতেই একে একে নামতে লাগলো সবাই। সেই মুহূর্তেই আহি ডাকলো অথৈকে পুরো রাস্তাটা সে আহির কাঁধে ঘুমিয়েই কাটালো। হঠাৎই আহির কন্ঠ কানে আসতেই আস্তে আস্তে চোখ তুলে তাকালো অথৈ। তারপর নীরব কন্ঠে বললো সে,
‘ আমরা কি চলে এসেছি?’
‘ হুম।’
অতঃপর সোহান আর রিনি তাদের গাড়ি করে অথৈকে পৌঁছে দিল তাদের বাড়িতে। আর সুজন,মীরা,শরীফ একসাথে গেল। আর আহি নীরব একসাথে। যদিও পুরো রাস্তা জুড়ে নীরব তার নীরবতা নিয়েই কাটিয়ে ছিল। কেন যেন অথৈর জন্য প্রচন্ড খারাপ লাগছে তাঁর।’

এয়ারপোর্টের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান, প্রীতিসহ আরো অনেক লোকজন। কিছুক্ষন আগেই তাদের প্লেন এসে থামলো এয়ারপোর্টের সামনে। পুরো প্লেনের সময়টা জুড়ে প্রীতির বকবক শুনেই কেটে গেল আদ্রিয়ানের। প্রচন্ড বিরক্ত লাগলেও সে কিছু বলতে পারলো না। কেন যেন এই মেয়েটার কাছে নিজেকে রাগী প্রমানিত করতে চাই নি আদ্রিয়ান। এরই মাঝে প্রীতির ফোনটা বেজে উঠল গাড়ি চলে এসেছে তাঁর। প্রীতি তার ফোনটা কেটে আদ্রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ থ্যাংক ইউ সো মাচ আদ্রিয়ান এন্ড নাইস টু মিট ইউ আমাকে যেতে হবে আমার গাড়ি চলে এসেছে।’
উওরে হাল্কা হেঁসে বললো আদ্রিয়ান,
‘ সেইম টু ইউ এন্ড বাই।’
উওরে প্রীতি আর কিছু না বলে মুচকি হেঁসে চলে যায় সে। প্রীতি যেতেই আদ্রিয়ানের ফোনটাও বেজে উঠল সেও কানে ফোনটা তুলে বললো,
‘ হ্যালো।’

কলিং বেল বাজতেই আহির মা এসে দরজা খুলে দিল। আহিও ঝাপটে তাঁর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ কেমন আছো মা?’
‘ হুম ভালো তুই?’
‘ হুম ভালো, আমি আমার রুমে গেলাম। আমায় এক ঘন্টার আগে ডাকবে না আমি ঘুমাবো?’
‘ কেন কাল সারারাত ঘুমাস নি নাকি?’
মায়ের কথা শুনে আহির মনে পড়ে গেল কাল রাতের কথা তবে আপাতত সেটা নিয়ে বেশি না ভেবে মায়ের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চলে যায় সে তাঁর রুমে। তারপর ব্যাগটাকে কোনোরকম টেবিলের উপর রেখে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো আহি। এতক্ষণ সবাই তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে এখন সে কোলবালিশকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে। ভেবেই ঘুমিয়ে পড়লো আহি। রৌদ্রময়ী দুপুরে কড়া রোদ্দুরে চিক চিক করছে চারপাশ। সাথে চারদিক দিয়ে বয়ে আসছে অল্প স্বল্প বাতাস। মাথার উপর গোল হয়ে ঘুরছে সিলিং ফ্যান। সাদা জানালার সাদা পর্দাগুলোও উড়ছে বারংবার। আজ আবার যেন জীবন্ত হলো সবকিছু। আহির দুদিনের শুন্যতায় এঁরা যেন নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল একদম।’
এসব এর মাঝে আহির রুমের ঘুর ঘুর করছে আহির আনা সেই ছোট্ট খরগোশ ছানা। হয়তো নতুন পরিবেশে নিজেকে সাজাচ্ছে সে।’

‘ why she?’
অফিসে নিজের রুমে বসে আনমনেই কথাটা বলে উঠল আদ্রিয়ান। কতক্ষণ আগেই সে এসেছে অফিসে সে আসতেই নিলয় হাতে ল্যাপটপ নিয়ে তার রুমে এসে কিছু বলছিল তাঁকে। কিন্তু আদ্রিয়ান সে তো এখন মগ্ন আহির সাথে কাটানো কাল রাতটাকে নিয়ে।’
হঠাৎই নিজের কথার মাঝখানে আদ্রিয়ানের কথা শুনে বেশ খানিকটা অবাক হয়ে বললো নিলয়,
‘ কী?’
নিলয়ের কথা শুনে চমকে উঠলো আদ্রিয়ান। কিছুটা আমতা আমতা করে বললো সে,
‘ হুম হ্যাঁ কিছু না তুই কি বলছিলি?’
‘ এটাই প্রজেক্ট প্রায় কমপ্লিট আদ্রিয়ান এখন তুই সবটা দেখে নিলেই ভালো হয়।’
‘ ওহ, আমার দেখার কি আছে তুই যখন দেখেছিস সবটা।’
‘ কিন্তু আদ্রিয়ান?’
‘ কোনো কিন্তু নয় শোন আজকের কাজগুলো সব তুই দেখে নে মাত্র জার্নি করে আসলাম ভালো লাগছে না ঠিক। আমি কাল সব দেখে নিবো…!
বলেই পাল্টা নিলয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল সে। আর নিলয় আদ্রিয়ানের কাজে বেশ খানিকটা অবাক হয়ে বললো,
‘ হঠাৎ কি হলো ওর?’ strange.!’
মাঝখানে কাটলো ২ দিন….
এই দু’দিনের একদিনও ঘুম হয় নি আদ্রিয়ানের। এক প্রশ্নই তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাঁকে ‘ তার সাথে আহির কি কানেকশন থাকতে পারে?’

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ১৬

হসপিটালে মিসেস লিনার চেম্বারে বসে আছে আদ্রিয়ান। আর তার সামনেই মিসেস লিনা বসে বসে আদ্রিয়ানের বলা কথা শুনে বেশ অবাক হলো। কারন আদ্রিয়ান তার আর আহির কথা সব বললো মিসেস লিনাকে। হঠাৎই আদ্রিয়ান বলে উঠল,
‘ ওই মেয়েটার সাথে আমার কি কানেকশন থাকতে পারে আন্টি?’ ওকে জড়িয়ে ধরতেই কেন আমার অস্থিরতা চলে যাবে। সেদিন রাতে ওকে জড়িয়ে ধরতেই ‘I was feeling something’ যেন এর আগেও আমি ওকে জড়িয়ে ধরেছি চেনা স্মেল, চেনা স্পর্শ তুমি বুঝতে পারছো তো আমি কি বলতে চাইছি, এটার কি কানেকশন থাকতে পারে বলো না আমায়? আমি কিছু বুঝতে পারছি না..
আদ্রিয়ানের কথা শুনে মিসেস লিনা হেঁসে বললো,
‘ Because you’re in love, Adrian?’
মিসেস লিনার কথা শুনে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বললো,
‘ What?’
হেঁসে ফেললেন মিসেস লিনা।’

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ১৮