বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৪০

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৪০
লেখিকা: তানজিল মীম

ভেজালো শরীর নিয়ে হসপিটালের করিডোর দিয়ে আদ্রিয়ানকে নিয়ে যাচ্ছে আহিসহ আরো কিছু হসপিটালের লোকেরা। আহির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে খুব। হুট করে কি থেকে কি হয়ে গেল ভাবতেই তাঁর কষ্ট হচ্ছে? নিলয়কে ফোন করে সব বলেছে সে। হয়তো আর কিছুক্ষনের মধ্যেই নিলয় এসে পৌঁছাবে এখানে। এমন সময় সেখান থেকে যাচ্ছিল শুভ। কারন আহি আদ্রিয়ানকে নিয়ে শুভর হসপিটালেই এসেছে।’

পেসেন্টের জায়গায় নিজের ভাইকে অচেতন অবস্থায় দেখে ভিশনভাবে অবাক হয় শুভ। সাথে বুকটাও কেঁপে উঠে তাঁর। শুভ আদ্রিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে ওর হাত ধরে হতভম্ব গলায় বলে উঠল,
‘ ভাইয়া তুমি,
বলেই আদ্রিয়ানের মাথার নিচ থেকে রক্ত বের হতে দেখে চমকে উঠে বললো সে,
‘ এসব কি করে হলো?’ ওনাকে কে নিয়ে এসেছে?’ (সামনের লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে)
শুভর কথা শুনে আহিকে দেখিয়ে বললো লোকগুলো,
‘ উনি..
উওরে শুভ পিছনে এক পলক তাকাতেই আহিকে দেখে আরো যেন অবাক। অবাক চোখেই বললো সে,
‘ তুমি। এসব কি করে হলো, ভাইয়ার কি এক্সিডেন্ট হয়ে ছিল?’
শুভর কথা শুনে আহি অবাক চোখে বলে উঠল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ ভাই, উনি তোমার ভাই হয়?’
‘ হুম আমার বড় ভাই, এসব কি করে হলো?’
‘ সব পড়ে বলবো আগে আদ্রিয়ানকে দেখো,ওনাকে বাঁচাও প্লিজ আমার জন্যই আজ ওনার এমন অবস্থা হয়েছে প্লিজ ওনাকে বাঁচিয়ে তোলো।’
‘ বাঁচাতে তো আমাকে হবেই?’
বলেই আর দেরি না করে আদ্রিয়ানকে নিয়ে ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে চলে যায় শুভ। আদ্রিয়ানের ক্যান্ডিশন খুবই ক্রিটিকাল। মাথা দিয়ে অনেকখানি ব্লাড বের হয়ে গেছে। যার কারণে অবস্থা সত্যি খারাপ।’
এমন সময় আহির সামনে একজন নার্স এসে বললো,
‘ ম্যাম, আপনাকে আমার সাথে যেতে হবে পেসেন্টের ভর্তির কিছু নিয়ম আছে যেগুলো আপনাকে পূরণ করতে হবে?’

উওরে আহিও বেশি কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি চলে গেল নার্সটির সাথে।’
কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আনুমানিক নাম, বয়স সবকিছুই বললো আহি সামনের একজন মেয়েকে। হঠাৎই মেয়েটি বলে উঠল,
‘ আপনি পেসেন্টের কি হন?’
মেয়েটির কথা শুনে আহি কি বলবে বুঝতে পারছে না। আহিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল মেয়েটি,
‘ কি হলো কথা বলছেন না পেসেন্টর কি হন আপনি?’
‘ জ্বী আমি ওনার বন্ধু,
এরই মধ্যে সেখানে একপ্রকার দৌড়ে এসে হাজির হলো নিলয়। আহিকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দৌড়ে এসে হতভম্ব হয়ে বললো সে,
‘ আদ্রিয়ান কোথায় আহি?’
‘ ওনাকে ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে শুভ দেখছে ওনাকে।’
উওরে নিলয় আর কিছু না বলেই চললো সামনে। আর আহিও ফরমটা নিয়ে চলে যায় নিলয়ের পিছু পিছু।’

চিন্তিত মাখা মুখ নিয়ে বসে আছে আহি। আর তাঁর সামনেই পায়চারি করছে নিলয়। টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তাঁদের। বেশ অনেকক্ষণই হয়ে গেছে শুভ আদ্রিয়ানকে নিয়ে ইমারজেন্সির ওয়ার্ডের ভিতরে আছে। কি হবে না হবে ঠিক বুঝতে পারছে না আহি। বার বার নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে নিজেকে। আজ আদ্রিয়ানের কিছু হয়ে গেলে আহি কখনোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। এমন সময় আহির ফোনটা বেজে উঠল উপরে রিনির নাম্বার দেখে ফোনটা তুলেই কান্না ভেঁজা কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ রিনি?’
সাধারণত রিনি এই সময় ফোন করেছিল তাঁর আর শুভর ভালোবাসার কথাটা বলার জন্য কিন্তু আহির এমন কান্নার স্বর শুনে চিন্তিত মাখা মুখ নিয়ে বললো সে,
‘ কি হয়েছে তুই কাঁদছিস কেন?’
উওরে আহি কাঁদতে কাঁদতেই আদ্রিয়ান আর তাঁর সাথে হয়ে যাওয়া ঘটনা খুলে বললো রিনিকে। রিনি তো চরম অবাক আহির কথা শুনে। অবাক হয়েই বললো রিনি,
‘ তুই কাঁদিস না আমি এক্ষুনি আসছি?’
উওরে আহি আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। এরই মাঝে ইমারজেন্সি ওয়ার্ড থেকে বের হয় শুভ। চোখে মুখে চিন্তার ছাপ, আহি শুভকে দেখেই দৌড়ে চলে যায় তাঁর কাছে তারপর বলে,
‘ কেমন আছে উনি?’
উওরে শুভ মাথা নিচু করে বলে,

‘ মাথা থেকে প্রচুর রক্ত বের হয়েছে যার কারনে রক্ত শূন্যতা দেখা দিয়েছে। ইমারজেন্সি রক্ত লাগবে?’
শুভর কথা শুনে নিলয় বলে উঠল,
‘ তাহলে রক্ত দিচ্ছো না কেন?’
‘ ভাইয়ার জন্য (A+) পজিটিভ রক্ত লাগবে যেটা বর্তমানে আমাদের কাছে নেই। আরো কিছু জায়গায় খোজ করা হয়েছে রক্তের কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না বর্তমানে। আর ২ ঘন্টার মধ্যে রক্ত না পেলে ভাইয়াকে বাঁচানো খুবই টাফ।’
শুভর কথা শুনে আহির বুকটা যেন দক করে উঠলো এখন কি করবে সে। তাঁর নিজের ব্লাড গ্রুপও এ+ পজিটিভ নয়। ভীষণভাবে কান্না পাচ্ছে তাঁর। অন্যদিকে নিলয় সেও ব্যর্থ তাঁর ব্লাড গ্রুপও এ+ পজিটিভ নয়। নিলয় নিরাশ হয়ে বললো,
‘ আমি দেখছি খুঁজে তুইও দেখ?’
বলেই ফোনটা বের করে কল করলো নিলয়। আর শুভ সেও উল্টোদিকে হেঁটে চললো রক্তের খোঁজে। শুভর চোখ ছলছল করছে ভাইয়াটার কিছু হয়ে গেলে সে কি নিয়ে বাঁচবে সে তো একেবারেই অনাথ হয়ে যাবে। ভাবলেই কেমন একটা লাগছে শুভর। বেশি না ভেবে দ্রুত রক্তের খোঁজে এগিয়ে গেল সে।’
আর অন্যদিকে আহি বাকরুদ্ধ হয়ে বসে পড়লো সামনের চেয়ারে। কি করবে না করবে কিছুতেই মাথায় আসছে না তাঁর। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো রিনি আহিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে দৌড়ে গিয়ে বললো সে,

‘ আহি, কেমন আছে আদ্রিয়ান ভাইয়া?’
উওরে ছলছল চোখে রিনির দিকে তাকিয়ে বললো আহি,
‘ ভালো না, শুভ বলেছে ইমারজেন্সি (এ+) পজিটিভ রক্ত লাগবে। কিন্তু কোথাও এই রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। আর ২ ঘন্টার মধ্যে রক্ত না দিলে আদ্রিয়ানকে নাকি বাঁচানো যাবে না। ওনার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না রিনি। আমার নিজের ব্লাড গ্রুপও (এ+) পজিটিভ নয়। তোর কি গ্রুপ?’
‘ (Ab+)
হতাশ আহি। আহির চেহারা দেখে বলে উঠল রিনি,
‘ চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।’
উওরে আহি কিছু বললো না। হঠাৎই রিনি বলে উঠল,
‘ এ নীরব ভাইয়ার রক্তের গ্রুপও তো (এ+),
রিনির কথা শুনে আহিও বলে উঠল,
‘ হুম তাই তো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।তাড়াতাড়ি ফোন কর।’
‘ কিন্তু ভাইয়া কি আসছে ঢাকায়?’
‘ সিওর জানি না সকালেই মার সাথে আন্টিকে বলতে শুনেছিলাম আজকে নাকি আসবে।’
‘ দাঁড়া ফোন করে দেখছি?’
বলেই ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে নীরবের নাম্বারে কল করলো সে।’

ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় রাত বারোটা ছাড়িয়ে গেছে। পুরো শহরটাই অন্ধকারে ঘেরা। যদিও বাহিরে ল্যামপোস্ট থাকায় অনেকটাই আলোকিত বাহিরটা। বৃষ্টির শেষ হয়েছে অনেকক্ষণ আগেই, কিন্তু আকাশটা এখনো মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। চারপাশ বেয়ে হাল্কা বাতাস বইছে। এসবের মাঝেই মন খারাপ করে পড়ার টেবিলের সামনে চুপচাপ বসে আছে নীরব। মনটা আজ বড্ড বেশিই খারাপ তাঁর। অথৈর কাছ থেকে ফিরে আসার পর থেকেই কিছু ভালো লাগছে না নীরবের। কেমন যেন সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সাথে বুকের ভিতরও শূন্যতা কাজ করছে। এমন সময় নীরবের ভাবনাগুলোর মাঝেই তাঁর ফোনটা বেজে উঠল। উপরেই রিনির নাম্বার দেখে অবাক হয় সে। এত রাতে রিনি ফোন করেছে ভেবেই চটজলদি ফোনটা তুললো সে। পরক্ষণেই রিনির সব কথা শুনে সেও আর বেশি না ভেবে বলে উঠল,
‘ আসছি আমি কোন হসপিটালে?’

পাশাপাশি কিছুটা দুরত্ব রেখে দুই বেডে শুয়ে আছে নীরব আর আদ্রিয়ান। এই মুহূর্তে নীরবের শরীর থেকে সরাসরি আদ্রিয়ানের শরীরে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। কয়েক মুহূর্তে আগেই নীরব এসেছে এখানে। নীরবকে পেয়ে প্রায় সবাই একটু চিন্তিত মুক্ত। নীরবকে আজ ঠিক টাইমে না পেলে যে কি হতো কে জানে?’
কয়েক ঘন্টা পর,,
ইমারজেন্সি ওয়ার্ড থেকে বের হলো নীরব। নীরবকে দেখেই এগিয়ে গেল আহি রিনিসহ সবাই। আহি কৃতজ্ঞতার স্বরে বললো,
‘ তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। তুমি সময় মতো না আসলে না জানি কি হতো?’
‘ হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না।’
এরই মাঝে শুভ নীরবের হাত ধরে বললো,
‘ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনি ঠিক টাইমে না আসলে হয়তো আমার ভাইয়াকে,, বলতে গিয়েও বলতে পারলো না শুভ। শুভর কথা শুনে নীরব নিজেও শুভর হাত ধরে বলে,
‘ ইট’স ওকে আর তাছাড়া আমি তেমন কিছুই করিনি যা করার সব তুমিই করেছো আমি জাস্ট একটুখানি রক্ত দিয়েছি।’
‘ এটাই তো অনেক আমি সারাজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।’
এরই মাঝে একজন নার্স এসে বললো শুভকে,
‘ স্যার পেসেন্টকে কি ঘুমের ঔষধ পুস করে দিবো।’
উওরে শুভ কিছু না বলে চলে যায় ভিতরে তারপর আদ্রিয়ানকে দেখে সে নিজেই ইনজেকশন পুস করে দেয়। আপাতত আদ্রিয়ান বিপদ মুক্ত ভেবেই সস্থির নিশ্বাস ফেললো সে।’

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৩৯

করিডোরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আহি। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যতদিন না আদ্রিয়ান সুস্থ হবে ততদিন সে নিজেই আদ্রিয়ানের সেবাযত্ন করবে। এতে যদি তার নিজেকে অপরাধী মনে করার ভাবটা একটু কমে। আহি ভেবে নিয়েছে কিছুদিনের ছুটি নিবে সে হসপিটাল থেকে। কিন্তু ফেমেলিকে কি বলবে সে?’
এমন সময় তাঁর কাঁধে হাত রাখলো রিনি। হঠাৎই কিছু একটা ভেবে বলে উঠল আহি,
‘ তোর একটু হেল্প লাগবে রিনি?’
হুট করে আহির মুখে এমন কথা শুনে বেশ অবাক হয়েই বললো রিনি,
‘ মানে?’

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৪১