বিপরীতে তুমি আমি পর্ব ৬

বিপরীতে তুমি আমি পর্ব ৬
সুমাইয়া ইসলাম

সারাদিনের কাজ শেষে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরেছে অর্ণব। আদেশ অনুসারে যথারীতি অফিসে যেতে হয়েছে তাকে। ব্যক্তিগত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজের চাপে সারাদিন কেঁটে গেলো। মাগরিবের আযান মাত্র শেষ হয়েছে। ডানে হাতে খাম নিয়ে দ্রুত পায়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। দরজা পেরতেই দেখতে পেলো বসার রুমের ছোট খাটো জটলা। জটলার কেন্দ্রবিন্দু কিরণ। তাকে ঘিরেই বসে আছে মেহরাব, মিতু, ও মিহু।

এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো আরে একদলকে। বড় ও ছোট ফুপির ছেলেমেয়ে রোহান-ঋতু, জিহাদ-জান্নাতও হাজির। বিয়েতে এরা উপস্থিত ছিল বটেই তবুও আজ মেহরাবের জন্য আবার এসেছে। এদের হৈ-হুল্লোড়ের মাঝে অর্ণবের খেয়াল হলো কিরণের অসহায় মুখটা। হয়তো খুবই বিরক্তবোধ করছে। হওয়াটাই খুবই স্বাভাবিক। অপরিচিত একদল বাচালের মাঝে মিতভাষী এক নারী বিরক্ত অনুভব করবে তা স্বাভাবিক।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বরং না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। চারপাশ থেকে সকলের কথার উত্তরের পাল্লায় পরে কিরণ শুধু হাসি ছাড়া আর কোনোরূপ জবার করতে পারছে না। বলা যেতে পারে এরূপ পরিস্থিতিতে সে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। অর্ণব হাতের লেটারটা পাশের টেবিলে রাখলো । দু হাত দু পকেটে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

এই আড্ডা, এই আনন্দ মহলটা এক সময়ে তার প্রিয়র তালিকায় ছিল। সময় হলেই হুট করেই সকল ভাই বোনেরা মিলে এরকম ছোট খাটো জটলা পাকিয়ে দিত সময় অসময়। কত খুনসুটি! কত মারামারি! সে সব এখন সবই স্মৃতি। হুট করেই বদলে গেল সবকিছু। বদলে গেল অর্ণবের চেনা জানা পৃথিবী। নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ানো অর্ণবের কাঁধে অর্পিত হলো বিশাল ভারি কাজ। পরিবর্তন আসলো আচরণে। হুট করেই যেন বড় হয়ে গেলো বেশ। গাম্ভীর্যতায় ছেয়ে গেলো নিজের পুরোটায়।
এইতো অর্ণব চলে এসেছে!

রোহানের চিৎকারে কিরণ চমকে ওঠলো। চোখ তুলে সামনে তাকাতেই বরাবর আবিষ্কার করলো অর্ণবকে। কখন এলো মানুষটা তা বলতেই পারবে না। কিরণের মনে আবারো জমা হলো বিন্দু পরিমাণ অভিমান। এসেছে কিন্তু দূরে সরে আছে। অর্ণব জানে কিরণ এতো বেশি অপরিচিত মানুষদের মধ্যে থাকতে স্বস্তি বোধ করে না। চট করেই মানুষদের সাথে মিশে যাওয়ার গুণটা কিরণের নেই। এসব জেনেও লোকটা দূরে দাঁড়িয়ে মজা দেখছে। বদ লোক! কিরণ এবার ওঠে দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললো,

আপনারা তবে এখন গল্প করতে থাকেন। আমি কিছু নাস্তা বানিয়ে আনছি।
কথাটা বলেই কিরণ দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো রান্নাঘরের দিকে। অর্ণবের পাশ দিয়ে চলে গেলো কিন্তু একটাবারের জন্যও চোখ তুলে তাকালো না। সে যেন পালালে বাঁচে। রান্না ঘরে ঢুকে স্বস্তির নিঃশ্বাসে যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেলো। ফ্রিজটা খুলে ঠান্ডা পানির বোতলের তালাশ করতে লাগলো।

পানি পেয়ে কিরণের বোধ হলো সে বুঝি হারানো আত্মা খুঁজে পেয়েছে। পেছনে রাখা একটা টুল টান দিয়ে বসে নিলো। বোতলের মুখ খুলে ঠোঁটের কাছে নিতেই আটকে গেল বোতল। বাঁধা পেয়ে কিরণ বেশ হচকচিয়েই উঠলো। আড়চোখে পাশ ফিরে দেখে নিলো অর্ণবকে। এ লোক এখানে আবার করেটা কি? অর্ণবের চোখে চোখ রাখতেই কিরণ বুঝতে পেলো সেই চোখের ক্ষোভের ভাষা। কি সাংঘাতিক এ ভাষা! কিরণের বুক ধক করে ওঠলো। মনে হলো এর থেকে তো ভালো বকে দিক তবুও এভাবে যেন না তাকায়। কিছু বলার পূর্বেই অর্ণব বোতলটা কেড়ে নিল। মাঝারি ধরণের ধমকে কাপিয়ে দিল কিরণকে,

সমস্যা কি তোমার? সরাসরি এতো ঠান্ডা পানি কেউ খায়? তারপর তোমার টনসিল বাড়লে তার চিকিৎসা কে করাবে তোমাকে? আমি তো অন্তত করাবো না। আর যদি ভেবে থাকো বাবার বাড়ি গিয়ে করবে তাহলে সেই চিন্তাও বাদ দাও। আমার বউয়ের জন্য বউয়ের বাবার বাড়ির সাহায্য নিবো না।

কিরণ জমে গিয়েছে। এর আগেও সে অর্ণবের রাগ দেখেছে। এবং যতবারই দেখেছে ততবারই জমে গিয়েছে। নিজের প্রতিবাদী সত্তা এবারেই ভুলে বসে। পুতুলের মতো জড় বস্তুতে পরিণত হয়। অর্ণব কিরণকে দেখে এবার নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। মেয়েটা যে রাগ মারাত্মক ভয় পায় তা তো অজানা নয়। তবুও কেন যেনো ভুল করে ফেলে। কিরণকে স্বাভাবিক করতে পাশ থেকে একটা গ্লাস এনে তাতে ঠান্ডা পানি ও স্বাভাবিক পানি মিশিয়ে কিরণের সামনে ধরে।

সামনে পানি পেয়েই কিরণও ঢক ঢক করে খেয়ে নিল। কিরণের মনে হলো চৈত্রের খরায় বৃষ্টির পানি পেয়েছে। এক দমে পানি টুকু খেয়ে ভারি নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। গ্লাসটা হাতে রেখেই ওঠে দাঁড়ালো। অর্ণব এখনো দাঁড়িয়ে আছে ওভাবেই। কিরণ অর্ণবকে এক পলক দেখে নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। কিন্তু যেতে পারলো না। অর্ণব কিরণের ডান হাত টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো।

এক পা দু পা করে এগিয়ে গিয়ে কিরণকে ঠেকিয়ে দিলো রান্না ঘরের দরজার দিকে। পর পর এতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কিরণ হজম করতে পারছে না। অর্ণবের বাম হাতটা কিরণের শাড়ির আড়ালের উন্মুক্ত পেট চেপে আছে। শীতল অনুভূতিতে কিরণ ক্রমশ জমে যাচ্ছে। স্পর্শ কাতর স্থানে অর্ণবের প্রথম ছোঁয়ায় নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। মাথা নিচু করে অর্ণবের কাঁধে হাত রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। চোখ তুলে তাকানোর বিন্দুমাত্র সাহস কিরণের মাঝে অবশিষ্ট নেই। কিরণে ভেতরে যখন বিরূপ অনূভুতি শতরঞ্জি খেলায় ব্যস্ত তখনই অর্ণব বলে ওঠে,

সূর্যরাণী! একবার বলবে ভালোবাসি? দেখো সব দেয়াল এক নিমিষেই ভেঙে যাবে। গলে যাবে সব অভিমানের স্তুপ।
কিরণ এবার চোখ তুলে তাকালো। কিছু পূর্বের অনুভূতিগুলো যেমন রঙ্গিন প্রজাপতি হতে চেয়েছিল সেগুলো এবার আবার বর্ণহীন হলো। সোজাসাপ্টা সহজ জবাব এলো কিরণের থেকে,

ভুল জায়গায় ভুল আবদার করে ফেলেছেন। পরেরবার থেকে খেয়াল রাখবেন। ভালোবাসার ঠিকানা আমি নই।
কিরণ অর্ণবের হাত ছাড়িয়ে বেড়িয়ে এলো রান্নাঘর থেকে। অর্ণব শুধু তাকিয়ে রইলো অপলক। এভাবেই কি হাত ছেড়ে বেড়িয়ে যাবে তার ভালোবাসা, এতো দিনের অপেক্ষা ও ত্যাগস্বীকারের উপহার?

বিপরীতে তুমি আমি পর্ব ৫

পর্বটা একটু বেশি ছোট হয়েছে। আজকের মধ্যে আরেকটা পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ!
নোটঃ বেশ কয়েকজন দেখা যাচ্ছে অর্ণবের পদবি নিয়ে বেশ আপত্তি জানাচ্ছেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী আমি বিমানবাহিনীর পদবি সম্পর্কে না জেনেই গল্প লেখা শুরু করেছি। তাদের উদ্দেশ্যে বলা অজ্ঞতা নিয়ে লেখালিখি করা যায় না। আপনাদের যুক্তি শতভাগ সঠিক যে এতো বড় পদবি অল্প বয়সে কখনোই পাওয়া যায় না। আমি গ্রুপ ক্যাপ্টেন দিয়েছি কারণ তাকে বিশেষভাবে দেখাতে চেয়েছি। স্কোয়াড্রন লীডার পর্যন্ত জুনিয়র অফিসারের আওতায় পরে। আমি চাই না আমার গল্পের প্রধান চরিত্রকে জুনিয়র অবস্থানে রাখতে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন এখানে আমি অর্ণবের বয়সটা এখন উল্লেখ করি নি। অবশ্যই ওর বয়সটা আমি ২৬/২৭ দেবো না এবং এটাও সত্যি বাস্তব অনুযায়ী ৩৮/৪০ ও হবে না। আমি গল্প লিখছি। কল্পনা এবং বাস্তব এক না এইটা আমরা জানি। অনেক গল্প পড়েছি যেখানে পুরুষ মূল চরিত্র পঁচিশ বয়সেই বিশাল বড় ব্যবসায়ী, অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক হয়ে যায় যা বাস্তবে সম্ভব নয়। আমরা নায়কদের অসাধারণ রাখতে চাই বিধায় অসাধারণ চরিত্রে উপস্থাপন করি। তাই সকল কিছু বাস্তবের সাথে তুলনা করে যেকেনো লেখিকাকে কিছু বলার আগে অনুগ্রহ করে বলার পদ্ধতিটা ঠিক করে নেবেন। আপনাদের জন্যই গল্প লেখা সেখানে আপনারা ছোট করে কথা বললে খারাপ লাগবে স্বাভাবিক। আপনারা ভুল ধরেছেন তাতে আমি মোটেও অখুশি নই। খারাপ লাগে কথা বলার ধরণে। যেহেতু আপনাদের কয়েকজনের এতো আপত্তি সেই স্বার্থে আমি পদবি পরিবর্তন করতে পারি।
সর্বোপরি এরপরও যাদের ভালো লাগছে না কিংবা ঘোর আপত্তি তারা নির্দ্বিধায় গল্প স্কিপ করতে পারেন।
ধন্যবাদ শুভাকাঙ্ক্ষী ও সহযোগিপূর্ণ পাঠক পাঠিকাদের আমাকে এতোটা সাপোর্ট করা জন্য। ভালোবাসা রইলো।

বিপরীতে তুমি আমি পর্ব ৬ শেষ অংশ