কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২২

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২২
লাবণ্য ইয়াসমিন

ধোয়া উঠা গরম কফিতে চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে স্বাদ নিতে ব্যস্ত কহিনুর। মেঘ মুক্ত আকাশ সূর্যের রশ্মিতে চারদিক ঝলমল করছে। সারারাত জ্বরাক্রান্ত থাকার পর ভোরবেলা স্বস্তি মিলেছে। আপাতত জ্বর নেই সুস্থ অনুভব হচ্ছে। সাঈদ রেলিং ধরে হাটাহাটি করছে। বিষয়টাকে ও খেলা হিসেবে নিয়েছে যেহেতু পড়ে যাওয়ার ভয় নেই। কহিনুর কয়েকবার নিষেধ করেছে কিন্তু ছেলেটার থামার লক্ষণ নেই। কফি শেষ হতেই কহিনুর সেটা পাশের টেবিলে রেখে সাঈদকে ডাক দিলো।

সাঈদ একটা কাজ করতে পারবে?
সাঈদ এবার হন্তদন্ত হয়ে কহিনুরের দিকে এগিয়ে আসলো।কাজের সময় সিরিয়াস থাকতে পছন্দ ওর।
হুম বলো কি করতে হবে।
একজনকে দুদিন অজ্ঞান রাখতে হবে। তুমি হাকিম সাহেবের থেকে ওষুধ এনে ওই ব্যক্তির খাবারের মধ্যে মিশিয়ে দিবে। এইটুকু করতে পারলেই চলবে। তুমি জানো সাঈদ এখানে নতুন রেস্তোরাঁয় খুব সুস্বাদু বার্গার বিক্রি হচ্ছে? আর কাবাবের গন্ধটা জাষ্ট অসাধারন। তুমি কি ট্রাই করতে চাও?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কহিনুরের ওষ্ঠে রহস্যময় হাসি। সাঈদ খাবারের কথা ভেবেই চোখ বন্ধ করে কল্পনা করে নিলো। দুনিয়ার অন্য কিছুতে ওর দুর্বলতা নেই যতটা সুস্বাদু খাবারের প্রতি আছে। খেতে ওর ভীষণ পছন্দ। তাই কিছু না ভেবেই বলল,
কি করতে হবে নূর? তুমি যা ইচ্ছা বলো কিন্তু ওখানকার খাবার আমার চাই। তুমি নিয়ে যাবেতো আমাকে?
সেতো নিতেই পারি। তোমার কাজের উপরে নির্ভর করছে রেস্তোরাঁয় যাওয়া যাবে কিনা। যাইহোক কাজের কথায় আসি। ইমরোজ খান পাথর নামের ভদ্রলোকের খাবারে তুমি চেতনানাশক ওষুধ মিক্স করে আসবে। মোটামুটি দুদিন উনি ঘুমিয়ে থাকলেই কাজ শেষ। পারবে না?

কহিনুরের কথা শুনে সাঈদের চোখ উল্টে গেলো। পাথর এমনিতেই ওকে পছন্দ করেনা আবার যদি ওষুধ দিতে গিয়ে কোনো অঘটন ঘটে যায় যখন আর কিছুতেই ওকে ছাড়বে না। সাঈদ উত্তেজিত হয়ে ভয়ে ভয়ে ফিসফিস করে বলল,
নূর তুমি কি পাগল হলে? ওই লোকটাকে তুমি জানো না আমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করে? আমি পারবোনা ওকে কিছু করতে। জানলে আমাকে মে/রেই ফেলবে। ওরা অর্ধমানব আমি ওর চোখে ধুলা দিতে পারবোনা। লুকিয়ে কিছু করতে গেলে বাতাসে আমার শরীরের গন্ধ ওর ঘ্রাণেন্দ্রিয়কে সজাগ করে তুলবে। অন্য কিছু ভাবো।

কহিনুর বিরক্ত হলো সাঈদের উপরে। সামান্য একটা কাজ তবুও পারবেনা। কি করবে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ জুবায়ের পেছনের দরজা থেকে বলে উঠলো,
আমি একটা বুদ্ধি দিতে পারি যদি অনুমতি দাও।
জুবায়েরের কথা শুনে কহিনুর পেছন ফিরে মিষ্টি করে হাসলো। মাথা নাড়িয়ে বলল,

অনুমতির কি আছে আমি জানি আমার ড্যাড চমৎকার কোনো আইডিয়া দিবে তাই সংকোচ রেখোনা বলে ফেলো।
জুবায়ের মেয়ের মাথায় হাত রেখে মুগ্ধ হয়ে দেখলো। বাবা হওয়ার আনন্দ এই মেয়েটাকে দিয়েই পূর্ণতা পেয়েছিলো। চমৎকার এই মেয়েটার বাবা হতে পেরে জুবায়েরের মাঝেমাঝে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়।
সাঈদকে বলো ওখানে যাওয়ার আগে তীব্র কোনো পারফিউম ব্যবহার করতে। তাছাড়া তুমি বরং পাথরকে এখানে ডেকে নাও। আমি সাহায্য করবো খাবার ওষুধ মেশাতে।

কহিনুর কিছু একটা ভেবে বলল,
এখানে ডাকাতে অসুবিধা নেই তবে উনি বেশ চালাক। কাজটা ব্যার্থ হলে কিন্তু চলবে না। তোমার উপরে ভরসা করেই ওকে ডাকছি। আমি দুদিনের জন্য কোথাও একটা যেতে চাইছি। তুমি প্লিজ এদিকটা সামলে নাও।
কহিনুরের যাওয়ার কথা শুনে জুবায়ের চমকে উঠলো। আবারও মেয়েকে বিপদের মধ্যে পাঠাতে ওর মন সাড়া দিচ্ছে না তাই বলল,

কোথায় যেতে চাইছো? বিপদে একা যাওয়া ঠিক হবেনা। পাথর যেতে চাইছে নিতে যাও। ছেলেটা তোমাকে সাহায্য করবে নূর। পাগলামী করোনা। তোমার মা চিন্তা করবে। একটুতো বুঝো।
কহিনুর হেসে উত্তর দিলো,
কিছু হবেনা। আমি জাষ্ট যাবো আর আসবো। সেখানে আমার একা যেতে হবে। তাছাড়া সাঈদ সঙ্গে যাবে সমস্যা হবেনা। তুমি বলো পারবেনা ওকে অচেতন করতে?
জুবায়ের কহিনুরের কপালে চুমু দিয়ে বলল,

মায়ের জন্য এইটুকু করতে সুলতান জুবায়ের ফারুকী অবশ্যই পারবে। সবার আগে আমার মা বুঝলে?
জুবায়েরের আল্লাদি কথার কহিনুর খুশী হলো। বাবাকে ঝাপটে ধরে বলল,
একদম। অষ্ট্রেলিয়ায় আমার বন্ধু সুইটি আছে তুমি কি ওকে এখানে আনার ব্যবস্থা করতে পারবে? খুব জরুরী ওকে এখানে আনতে হবে। সাঈদ খবর এনেছে বেচারি ভীষণ ভয়ে আছে। মম ড্যাড আর আমি ছাড়া ওর নিজের বলতে কেউ নেই। আমি চাইছি ঝামেলা যতদিন ঠিক না হচ্ছে ও এখানে থাকুক।

চিন্তা করোনা আমি আজকেই লোক পাঠাবো। ওখানে আমাদের অফিসের একটা শাখা আছে। তুমি নিজের কাজে মন দাও। গালিব সাহেব আর উনার স্ত্রীর খোঁজ করো।
খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। আচ্ছা ড্যাড তোমার মনে আছে যখন মাকে নিয়ে তুমি সুলতান ভিলার সুড়ঙ্গে প্রবেশ করেছিলে ওখানে অদ্ভুত কিছু মেয়েদের উপস্থিতি অনুভব করেছিলে? জানিনা দেখেছিলে কিনা। যাদের হাত পা এবং শরীরের ভিবিন্ন অং/শ ছিন্ন/ভিন্ন অবস্থায় পড়ে ছিলো।

জুবায়েরর কপালে ভাজ পড়লো। বাংলাদেশ থাকতে অধরার সঙ্গে সুলতান ভিলার নিচে অবস্থিত বন্ধ কুঠরিতে গিয়েছিলো দুজনে। তবে সেখানে যারা ছিল তারা কেউ মানুষ ছিলোনা। ওরা জ্বীন টাইপ কিছু ছিল। জুবায়ের বিষয়টা একেবারেই ভুলে গিয়েছিলো। তাছাড়া সেই বাড়িতে এখন আর কেউ থাকেনা। বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। একজন কাজের লোক আছে সে সবটা দেখাশোনা করে। জুবায়ের চিন্তিত হয়ে জিঞ্জাসা করলো,

ওরা কি ফিরে এসেছে নূর? তাছাড়া ওরাতো কেউ মানুষ ছিল না। তুমি ওদের খবর এখন নিচ্ছো কেনো?
কহিনুর উদাসীন ভাবে আকাশের দিকে চেয়ে উত্তর দিলো,

ওরা প্রতিশোধ নিতে চাইছে ড্যাড। তোমার পূর্বপুরুষেরা ওদের দিয়ে কালোজাদু করে নিজেরা শক্তি আর ক্ষমতা পেয়েছে। ওরা বিনা দোষে আটকে আছে পৃথিবীতে। সাজা পাচ্ছে বলতে পারো। সেটা থেকেই রাগ জন্মেছে। ওদেরকে ব্যবহার করছে অদৃশ্য একজন। আমি যদি নাও ফিরে আসতাম তবুও ওরা আসতো প্রতিশোধ নিতে।
জুবায়ের চমকে উঠলো। মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করে জেতা যায় কিন্তু অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে কিভাবে লড়বে? জুবায়েরের ভয় হচ্ছে নিজের পরিবারের জন্য। কহিনুর বুঝতে পেরে পাশ ফিরে বলল,

আমি সামলাতে পারবো তুমি চিন্তা করোনা। আমি থাকতে কিছু হবেনা। তুমি কিছুদিন অফিসের কাজকর্ম বাড়িতে বসে করো। আমি ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেছি।
জুবায়ের দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পূর্বপুরুষের কথা মনে হতেই কিছুটা চনচল হয়ে উঠলো। জেলখানা থেকে সুলতান আরমান ফারুকী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলো তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। উনার বিষয়টা কেমন রহস্যজনক ছিল। এদিকে সাঈদ মুখ ভার করে দুজনের কথোপকথন শুনছে। নূর ওকে কাজের যোগ্য ভাবছেনা সেটা নিয়ে ওর মন খারাপ।

দাদুর সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে পাথর। যথাযথ চেষ্টা করছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে। কিছুতেই নিজের স্মৃতি ফিরে আসার কথাটা প্রকাশ করতে চাইছে না। ওয়াশিম খান ওকে তীক্ষ্ণ নজরে দেখছেন। এই ছেলেটাকে উনার খুব একটা পছন্দ হয়না। ছেলেটার মধ্যে দুনিয়ার মায়া কিন্তু অর্ধমানবদের মধ্যে দয়ামায়া থাকতে নেই। আঁধারের কাজকর্মে উনি বারবার মুগ্ধ হয়ে উঠেন। এই দু’ভাইয়ের ব্যবহার দুই রকম। নির্জনতা কাটিয়ে পাথর বলে উঠলো,

দাদু বলবে প্লিজ কেনো ডেকেছো? আমার কাজ আছে। দুটো মিটিং ফেলে তোমার কাছে দৌড়ে এসেছি।
ওয়াশিম খান খানিকটা বিরক্ত হলেন তবুও উত্তর দিলেন,
গতকাল রাতে কোথায় ছিলে? পূর্ণিমা চলছে তোমাকে কতবার বলেছি এই সময় তুমি কক্ষে থাকবে বাইরে যাবেনা। আঁধারের একটা কাজ ভুল হয়েছে ওকে আমি ক্ষমা করেছি। যাইহোক আমি চাইছি তোমার আবারও বিয়ের চেষ্টা করবো। মিস্টার আলেক্স লয়েডের মেয়ে আছে বেশ সুন্দরী তুমি আজ ডিনারে ওর সঙ্গে দেখা করবে। মেয়েটা তোমার উপযুক্ত।
দাদুর কথা শুনে পাথর ভ্রু কুচকে ফেলল। নূর ব্যতীত ও কোনো মেয়েকে স্পর্শ করতে পারেনা বিষয়টা দাদুর জানা আছে কি বুঝতে পারছেনা। তাই বিড়বিড় করে বলল,

নূর নিজের সম্পত্তির ভাগাভাগি করেনা দাদু। মেয়েটা বড্ড হিং/স্র আর হিংসুটে।
পাথরের ফিসফিস আওয়াজ ভদ্রলোকের কান অবধি পৌঁছালোনা। উনি ভ্রু কুটি করে ঝাঝালো কণ্ঠে বললেন,
মিনমিন করে কি বলছো আমি শুনতে পাচ্ছিনা? মেয়েদের মতো কথাবার্তা বলবেনা। পুরুষ তুমি ভুলে যাচ্ছো দিনদিন?
ভুলে যাচ্ছি না। আমি দেখা করবো। কোথায় যেতে হবে ঠিকানা দাও।
তুমি কক্ষে ফিরে প্রস্তুতি নাও। আমি কথা বলে তোমাকে ঠিকানা টেক্সট করবো। আশাকরি কোনো ভুল করবে না তুমি। আমি আলেক্স লয়েডকে কথা দিয়েছি। আমাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরী হলে দুই পরিবারের জন্য মঙ্গল হবে।
পাথর চলে যেতে গিয়ে পেছনে ফিরে বলে উঠলো,

কিন্তু আলেক্স লয়েড উনিতো খ্রিস্টধর্মের অনুসারী ছিলেন। আমার যতদূর মনে পড়ে উনার স্ত্রী বেশ ধার্মিক। আমার বাবা মুসলিম সেই হিসেবে আমিওতো মুসলিম। দুই ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন কেমন হবে?
পাথরের কথা শুনে ওয়াশিম খান গর্জন করে উঠলেন। উনি এই জন্যই ছোট ছেলেকে পছন্দ করেন না। কোথাকার কোন মেয়েকে বিয়ে করে ধর্মতত্বীয় হয়েছিলো এখন নিজের ছেলেকে কুপথে নিচ্ছে। কবেনা জানি স্মৃতির বলয় ধ্বংস হয়ে সবটা জানাননি হয়ে যায়। উনি নিজেকে শান্ত রেখে উত্তর দিলেন,

ধর্ম নিয়ে অযথা চিন্তা করোনা। তুমি ওর সঙ্গে দেখা করবে আর বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিবে। এখন আসতে পারো।
পাথর চুপচাপ বেরিয়ে আসলো। ইচ্ছা করেই ধর্মীয় বিষয়টা তুলেছিলো। লোকটার মতিগতি বুঝতে হিমশিম অবস্থা। কতকাল পরে বউয়ের দেখা মিলেছে ভাবলো চুটিয়ে আগে প্রেম করবে তানা বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। পাথর মহা বিরক্ত নিজের দাদুর উপরে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও নিজের কক্ষে ফিরে আসলো। সারাদিন অফিসের কাজকর্ম আর ফাইল তৈরীর কাজ সবটা কক্ষে বসে শেষ করলো। ভেবেছিলো কহিনুরের সঙ্গে দেখা করবে কিন্তু কিছু একটা ভেবে করলোনা। রাতের জন্য অপেক্ষায় আছে।

বন্ধুদের সঙ্গে জন্মদিনের পার্টিতে এসেছে দৃষ্টি। বাসা থেকে আলফার সঙ্গে আসলেও ছেলেটা হঠাৎ কি একটা কাজে রাস্তায় নেমে গেছে। ঘন্টা খানিকটা পরে ওর সঙ্গে জয়েন করবে। রঙিন তরলের গ্লাস হাতে ছেলেমেয়েরা উদ্দামভাবে নেচে চলেছে। শহরের নামকরা বারে কয়েকজন সুন্দরীর আগমন ঘটেছে যাদের নৃত্যের পারদর্শিতার গুণাবলী চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন রূপের বাহার তেমন তাদের গুণ। দৃষ্টি জুসের গ্লাস হাতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এলকোহল ওর পছন্দ না তাছাড়া মায়ের কড়া নির্দেশ কিছুতেই আজেবাজে কিছু পান করে মাতাল হওয়া চলবে না। খানদানী বংশগৌরব রক্ষা করে চলতে হবে। দৃষ্টি কথাটা মেনে চলে। হঠাৎ পাশ থেকে কারো ফিসফিস আওয়াজে ওর ধ্যান ভাঙলো। ও চমকে উঠে কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে দেখলো এক যুবক ওর দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছে। দৃষ্টি বিরক্ত হয়ে ঝাঝালো কণ্ঠে বলল,

কি ধরণের ব্যবহার এটা? আমি ভয় পেয়েছি।
ছেলেটা আবারও অমায়িক হাসলো। হাতে রেড ওয়াইনের গ্লাস থেকে চুমুক দিয়ে উত্তর দিলো,
এখানে একাকী আছো আমি তোমাকে সঙ্গ দিতে এসেছি যাবে ওইখানে? হাতে হাত রেখে দুজনে পাশাপাশি আর কাছাকাছি যেমন হৃদয়ের খুবটা কাছে দাঁড়িয়ে হেলেদুলে নৃত্য পরিবেশন করব। তোমার উষ্ণ কোমর..
ছেলেটা বেহায়ার ন্যায় এলোমেলো এই পযর্ন্ত বলতেই দৃষ্টি ধমক দিয়ে উঠলো,

থামুন আপনি। আমার সঙ্গে ফ্লাট করে লাভ হবেনা। অন্য কোথাও চেষ্টা করুন।দৃষ্টি ফারুকী আপনার মতো প্লে বয়ের সঙ্গে নৃত্য দূর পাশাপাশি দাঁড়াবে না পযর্ন্ত।
দৃষ্টির ধমকে ছেলেটার হেলদোল হলোনা। বরং আরও খুশি হলো। চটপট বুকে হাত রেখে বলে উঠলো,

তোমার ভয়েজটা কিন্তু মারাত্মক। ঠিক এখানে এসে লাগলো। আচ্ছা ছাড়ো নাচতে হবেনা। শুধুমাত্র আমার ওয়াইন থেকে জাষ্ট একবার এই অমৃত সুধা তোমার সুন্দর ওষ্ঠদ্বয় রেখে চুমুক দাও। তারপর আমি চলে যাবো। প্লিজ দৃষ্টি এইটুকু করো।
ছেলেটা নাছোড়বান্দা হয়ে উঠরো। দৃষ্টি বিরক্ত হয়ে চলে আসতে চাইলো কিন্তু পারলোনা। ছেলেটা বারবার সামনে চলে আসছে।

দৃষ্টি বাধ্য হয়ে ধাক্কা দিলো ফলাফল হিসেবে ছেলেটার হাতের গ্লাসটা ফ্লরে ঝনঝন শব্দ করে পড়ে গেলো। দৃষ্টি থমকে গেলো সামনে তাঁকিয়ে। মেঝেতে টকটকে লাল রঙের তরল পড়ে আছে ঠিক র/ক্তের মতো লাল। ও ভয়ে ভয়ে ছেলেটার দিকে চাইলো। যুবকের চোখে আগুন ঝরছে। প্রচণ্ড ভয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসলো বার থেকে। ছেলেটা ওর পিছু নিলো। কিছুটা দূরুত্ব রেখে দুজনে দৌড়ে চলছে।

এক সময় বারের বাইরে পা রাখলো দুজনে। দৃষ্টি দৌড়ে চলেছে প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছে।বুঝলো পেছনের ছেলেটার মধ্যে কিছু ঠিক নেই। লোকটা হয় উন্মাদ নয়তো নেশাখোর আর বাজে ছেলে। রাস্তার মাঝামাঝি আসতেই একটা গাড়ি ওর সামনে এসে থামলো। আলগোছে দৃষ্টির হাত ধরে গাড়িতে তুলে নিলো। মেয়েটা হাপাচ্ছে। মাথা তুলে দেখলো সামনে আলফা বসে আছে। পাশে কহিনুর ওকে ধরে রেখেছে। দৃষ্টি এবার ফুপিয়ে উঠলো,

ছেলেটা একটুও ভালো ছিল না। তুমি জানো ওর রেড ওয়াইনের গ্লাসে র*ক্ত ছিল?
কহিনুর চোখ বন্ধ করে নিজের নিয়ন্ত্রণ করলো। মেয়েটার মুখ মুছিয়ে দিয়ে বলল,
ওটা ওয়াইন ছিল তুমি ভুল দেখেছো। ছেলেটা মাতাল টাইপ। কেঁদোনা আমরা এসে গেছি না কিছু হবে না। শান্ত হয়ে বসো।

দৃষ্টি কহিনুরের কাধে মাথা রাখলো। আলফা অবাক হয়ে বোনদের দেখছে। একটা কাজে গিয়েছিলো সেটা হয়নি রাস্তায় কহিনুরের সঙ্গে দেখা হলো। কোনো প্রশ্ন করার আগেই হুকুম পেলো এখানে আসার জন্য। এখানে এসে এমনটা দেখবে আশাকরেনি। আলফা বলে উঠলো,

তুমি জানতে দৃষ্টি বিপদে আছে?
কহিনুর মাথা নাড়িয়ে বলল,
তেমন কিছুনা। দুজনেই এখন থেকে সন্ধ্যার পরে আর বাইরে আসবে না। সামনে একটা রেস্তোরাঁ আছে ওখানে থামবে। বাড়িতে এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না। সকলে চিন্তা করবে।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২১

আলফা মাথা নাড়িয়ে কহিনুরের বলা রেস্তোরাঁর সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো। কহিনুরের থমথমে মুখ নিয়ে ওদেরকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। সাঈদ ওদের পেছনে ছিল। কিছুক্ষণ পূর্বে একটা টেবিলে দুজন ব্যক্তিকে দেখে কিছুটা ভয়ে আছে। অজানা ভয়ে খাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। সামনে কি হতে চলেছে কে জানে।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৩

1 COMMENT

Comments are closed.