কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৩

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৩
লাবণ্য ইয়াসমিন

“আমার হাসিতে পদ্ম ফোঁটে,
কান্নায় ঝরে বৃষ্টি।
এক মুহূর্তে করতে পারি,
শত সুখের সৃষ্টি।
পাপের জন্য ধ্বংস আমি,
মাছুমের জন্য সৃষ্টি।
ছলাতে কলাতে ভুলাতে পারি,
মহামানবের কৃষ্টি”

রেস্তোরাঁয় খাবারের সামনে বসে উদাসীন কণ্ঠে মিনমিন কণ্ঠে বাক্যগুলো উচ্চারণ করলো কহিনুর।মাথার মধ্যে বারবার ঘুরছে পৃথিবীতে যতসব খারাপ কর্মকাণ্ডে শুধুমাত্র মেয়েদেরকেই কেনো ব্যবহার করা হয়? যেখানে ধর্মে মেয়েদের এতো সম্মান দেওয়া হয়েছে। কিছু বোকা নারীদের বোকামির জন্য অন্যদের ভুগতে হচ্ছে।নয়তো অরিত্রী শিক্ষিত মেয়ে হয়ে কিভাবে সারাজীবন অন্য একজনের দাসত্ব মেনে নিলো?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

প্রতিবাদ করতে হবে এমনটা না। নিজের মতো স্বাধীনভাবে চুপচাপ কোথাও চলে যেতে পারতো। কহিনুরের ধ্যান ভাঙলো দূরে একটা টেবিলের দিকে চেয়ে। সেখানে পাথর অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে ডিনার করছে। কহিনুর সেদিক চেয়ে হাসলো। মলিন মুখে বসে থাকা শান্তশিষ্ট সুদর্শন যুবকটা একান্তই ওর নিজের কথাটা ভেবে হৃদয় আন্দোলিত হচ্ছে। কহিনুরের সামনে দৃষ্টি আর আলফা মনোযোগের সহিত ডিনারে ব্যস্ত।

সাঈদ পারলে টেবিলের উপরে উঠে যায় কিন্তু বেচারার অস্তিত্ব পৃথিবীতে কয়েকজন প্রাণী ছাড়া কেউ জানেনা বিধায় চুপচাপ আছে। কহিনুর নিজের খাবার ওর সঙ্গে সেয়ার করছে। কিছু একটা ভেবে হুটকরে কহিনুর দাঁড়িয়ে পড়লো। গায়ে জড়িয়ে থাকা সাদা রঙের গাউনের সঙ্গে সাদা হিজাবটা অধরা ওকে দিয়েছিলো। মায়ের পছন্দ বরাবর সুন্দর। কহিনুর পোশাকটা সামান্য ঠিকঠাক করে টানপায়ে পাথরের টেবিলে গিয়ে বসলো।

হঠাৎ কোনো মেয়ের আগমনে পাথর হতভম্ভ হয়ে পাশে তাঁকিয়ে ভ্রু কুচকে ফেলল। আলেক্স লয়েডের কন্যা এঞ্জেল লয়েড দেখতে মোটামুটি সুন্দরী তবে নাকটা একটু মোটা টাইপ। মেয়েটা লাল টকটকে রঙের শর্ট ফতুয়া আর কালো রঙের প্যান্ট পরে এসেছে। লিপস্টিকের লাল রঙটা চোখে একটু বেশিই পড়ছে। কহিনুর একবার মেয়েটিকে দেখে খাবারের দিকে চাইলো। সাদা রঙের কফির মগে মেয়েটার লিপস্টিকের ছাপ লেগে আছে। পাথরের সামনে কফি রাখা আছে হয়তো এখনো চুমুক দিতে পারেনি। কহিনুর হাসলো। নির্জনতা কাটিয়ে মেয়েটা বিরক্তের সহিত জিঞ্জাসা করলো,

আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না। কে আপনি?
পাথর কহিনুরের দিকে চেয়ে আছে যদিও মুখটা নেকাব দিয়ে আবৃত। কহিনুর কিছু একটা ভেবে উত্তর দিলো,
বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত ম্যাম। আপনারা বুঝি ক্যাপল? চমৎকার মানিয়েছে দুজনকে। আপনাদের জন্য শুভকামনা।
কহিনুরের কথায় মেয়েটার মুখ থেকে মূহুর্ত্তের মধ্যে বিরক্তি ভাব গায়েব হয়ে লজ্জা ভর করলো। পাশে বসে থাকা সুদর্শন যুবকের সঙ্গে জড়িয়ে ওর প্রশংসা করাটা বেশ আনন্দ দিলো হৃদয়ে তবে অন্য জনের সেটা মোটেও পছন্দ হলোনা। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

একদম না। জাষ্ট ডিনারের জন্য ডেটে এসেছি। কোনো কিছু ঠিকঠাক হয়নি। আমরা ক্যাপল নয়। কিন্তু আপনি এখানে কেনো জানতে পারি?
কহিনুর পাথরে রাগের কারণ জানে তবুও নিজেকে শান্ত রেখে হাসি মুখে বলল,

আরে ক্যাপল হতে কি টাইম লাগে? এই সুইট আর কিউট মেয়েটাকে আপনি সঙ্গী হিসেবে পাবেন এটাতো অত্যন্ত সুখের বিষয়। মিস এঞ্জেল লয়েড আপনি কিন্তু ভীষণ কিউট। খুব সরি আপনাদেরকে বিরক্ত করার জন্য। আসলে আমি আপনার ড্যাডের কোম্পানিতে জব করতাম। সেখানেই আপনাকে দেখেছি। আজ হঠাৎ সামনে থেকে দেখতে পেয়ে আবেগপূর্ণ হয়ে গেছি। আবারও সরি প্লিজ আপনার কিছু মনে করবেন না।

কহিনুরের কণ্ঠে মধু বর্ষণ হচ্ছে সেই সঙ্গে পাথরের মেজাজ চরম খারাপ হচ্ছে। কহিনুরকে চিনতে ওর একটুও অসুবিধা হয়নি কিন্তু মেয়েটার মতিগতি ঠিক বুঝতে পারছেনা। জিঞ্জাসা করতে পারলে শান্তি মিলতো কিন্তু এখানে তা সম্ভব না। এঞ্জেল লয়েড ব্যস্ত হলো কহিনুরের কথা শুনে। দ্রুত কণ্ঠে বলল,
এই না না একদম বিরক্ত হয়নি। তুমিও ভীষণ কিউট। বলো কিভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি? আমার কার্ড রাখো যখনই প্রয়োজন হবে আমাকে ফোন করবে ঠিক আছে?
মেয়েটা ব্যাগ থেকে নিজের কার্ড বের করে কহিনুরের দিকে এগিয়ে দিলো। কার্ড পেয়ে কহিনুর বিলম্ব করলোনা। লুফে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে বলল,

নিশ্চয়ই বলবো। তবে এখন যায় আপনারা বরং ডিনার করুন প্লিজ। ওখানে আমার ভাইবোনেরা অপেক্ষা করছে। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।
কহিনুর চুপচাপ উঠে আসলো। পাথর হতাশ হয়ে পেছনে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। ভেবেছিল কহিনুর বুঝি এই মেয়েটার থেকে একে বাঁচাতে এসেছে কিন্তু তেমন কিছুই না। মেয়েটা নিজের স্বার্থের জন্য এসেছিলো। কাজ শেষ,নিজের বরকে অন্য একটা মহিলার কাছে ফেলে রেখে হাঁটা দিলো। পাথরের দোয়া করতে মন চাইলো এমন বউ যেনো কোনো শত্রুরও না হয়।

পরক্ষণে আবার ভাবলো এমন বউ যেনো শুধুমাত্র পাথরের হয়।শত্রু দূর বন্ধুর জন্যও প্রয়োজন নেই। নিজের ভাবনায় নিজেই হাসলো কিন্তু সামনে বসে থাকা রমনী তার উল্টো মানে খুঁজে নিলো।ভাবলো ওকে দেখেই বুঝি ইমরোজ খান পাথর লাজুক হেসে কুটিকুটি হচ্ছে তাই নিজেও খানিকটা লজ্জা পেয়ে হাতটা একটু একটু করে পিলপিল করে টেবিলের উপর দিয়ে গড়িয়ে পাথরের হাতের উপরে রাখতে চাইলো। পাথর আনমনা হয়ে আছে সেদিকে ওর খেয়াল নেই। মেয়েটা নিজের আঙুলটা দিয়ে ওর আঙুলের উপরে ছোঁয়া দিতেই ঝটকা খেলো। ফলে টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাসটা ঝনঝন করে ফ্লোরে পড়ে গিয়ে চারদিকে ছিটিয়ে গেলো। পাথর চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। ওয়েটার এগিয়ে এসে ব্যস্ত ভঙ্গিতে জিঞ্জাসা করলো,

স্যার কোনো সমস্যা?
পাথর নিজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। প্রথম সাক্ষাতে কিভাবে মেয়েটা অচেনা একটা পুরুষের হাতে হাত রাখার সাহস রাখতে পারে মাথায় আসছে না। এমন একটা মেয়ের সঙ্গে দাদু ওর দেখা করাত পাঠিয়েছে ভেবেই শরীর জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হচ্ছে। এখানে স্বাভাবিক থাকতে হবে তাই বলল,

কিছু হয়নি। এদিকটা পরিস্কার করো। আমি অন্য টেবিলে বসছি। মিস এঞ্জেল লয়েড আপনি কি আরও কিছুক্ষণ বসবেন? ডিনার হয়নি।
মেয়েটা ভয়ে আছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। থরথর করে কাঁপছে। সেটা দেখে পাথর ভ্রু কুচকে ফেলল।প্রশ্ন জাগ্রত হলো মেয়েটা এতো দুর্বল নাকি ? অর্ধমানবের সঙ্গে সাধারণ কারো বিয়ের চিন্তা দাদু কেনো করলেন? পাথরের ধ্যান ভাঙলো মেয়েটা রিনরিনে কণ্ঠের আওয়াজ শুনে,

সরি মিস্টার খান আমার শরীর ঠিক নেই। অন্য একদিন ডিনারের জন্য আপনাকে নিমন্ত্রণ কিন্তু আজ আর হবে না। প্লিজ কিছু মনে করবেন না। আমি আসছি।
ঠিক আছে কিন্তু আপনি কি একা যেতে পারবেন? আপনি চাইলে আমি যেতে পারি আপনাকে পৌঁছে দিতে।

না না আমার সঙ্গে ড্রাইভার আছে। আপনি ডিনার শেষ করুন। দেখা হবে,বাই।
মেয়েটা কথা শেষ করেই হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলো। পাথর হাফ ছেড়ে বাঁচলো। আশেপাশে তাঁকিয়ে দূরে কহিনুরের দিকে চেয়ে প্রশান্তিতে চোখ জুড়িয়ে গেলো। সব রাগ একদম শান্ত হয়ে গেলো। ওয়েটারকে ওদের টেবিলে খাবারের অর্ডার দিয়ে নিজেও গিয়ে হুড়মুড় করে বসে গেলো। দৃষ্টি আর আলফা সরু চোখে খানিকটা তাঁকিয়ে দুজনেই এক সঙ্গে বলে উঠলো,

আরে মিস্টার খান আপনি এখানে?
পাথর উত্তর দিলো না বরং কহিনুরের খাবারের প্লেটটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে এক খণ্ড কাবাব মুখে পুরে নিয়ে খেতে খেতে বলল,
এই রেস্তোরাঁয় আমার প্রিয় খাবারের মধ্যে সবথেকে চমৎকার আইটেম হচ্ছে কাবাব। তোমাদের কেমন লাগলো রিভিউ দিবে প্লিজ?

দৃষ্টির চোখ চকমক করছে পাথরকে দেখে। লোকটাকে ইন্টারনেটে দেখেছিলো প্রথমে তারপর নিউজে দেখেছে। শহরের নামকরা রেস্টুরেন্টে কিছুদিন আগে ভয়ং/কর অগ্নিসংযোগ ঘটেছিলো। একটা কক্ষে দুজন বাচ্চা আটকে ছিল। সকলে ভেবেছিল ওরা জীবিত নেই। পাথর সেই আগুনের মধ্যে ঝা/পিয়ে পড়ে বাচ্চাদের জীবন বাঁচিয়ে সকলের নজরে আসে তখন থেকেই চেনাশোনা। প্রায় কিছু না কিছু করে লোকটা আলোচনায় এসেছে। দৃষ্টির ধ্যান ভাঙলো আলফার কথা শুনে,
এটা আপনার রেস্তোরাঁ তাইনা মিস্টার খান?
পাথর খেতে খেতে মাথা নাড়িয়ে বলল,

আমার বলতে পৃথিবীতে একান্ত নিজের দুজন মানুষ ছাড়া আপাতত আমার নিজের বলতে কোনো সম্পত্তি নেই। এসব আমার দাদুর সম্পত্তির অংশ। আমি শুধুমাত্র তার অনুগত কর্মচারী বৈকি কিছুই না। যাইহোক এখানে আরেকজনের উপস্থিতি আশা করেছিলাম কিন্তু তিনি কোথায়?শুনি সে এখন কোন মহান অপকর্মে লিপ্ত আছেন?
পাথর শেষের কথাটা কহিনুরের উদ্দেশ্য করেই ছুড়ে দিলো। আলফা আর দৃষ্টি বুঝতে পারলোনা। কহিনুরের গলাই খাবার আটকে গেলো ওর কথা শুনে। সাঈদ কিচেনে গেছে পাথরের খাবারে ওষুধ মেশাতে। ধরা পড়লে বিপদ তাই ব্যস্ত হয়ে বলল,

মিস এঞ্জেল লয়েড কিন্তু চমৎকার মেয়ে। আমার মোটামুটি ভালো লেগেছে অতটাও খারাপ না। আপনার কেমন লাগলো?
পাথর এবার থমকে গেলো। মুখ থেকে খাবার নামিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলল,
তুমি সত্যি আমার বউতো?
কহিনুর ভ্রু নাচিয়ে উত্তর দিলো,
সন্দেহ আছে?
পাথর মাথা হেলিয়ে উত্তর দিলো,
অনেক।

দুজনের কথোপকথনে পাশের দুজনের চোখ বড়বড় হয়ে গেছে সেটা ওদের খেয়াল নেই। হঠাৎ দৃষ্টি উত্তেজিত হয়ে বলল,
আল্লাহ আপনি সত্যি বলছেন? কবে বিয়ে হলো আমিতো কিছুই জানতে পারিনি। আমি ভীষণ খুশি। এখুনি বাড়িতে ফোন করছি। এই উপলক্ষে
আমরা কিন্তু চমৎকার একটা ইভেন্টের আয়োজন করতে পারি।
আলফা ওকে ধমক দিয়ে বলল,

থামবি? বিস্তারিত না জেনে লাফালাফি করা ঠিক না। আমরা বাসাই ফিরে নিরিবিলিতে শুনবো ঠিক আছে?
কহিনুর খুব একটা গুরুত্ব দিলোনা ওদের আলোচনার বিষয়ে। ও আড়চোখে পাথরকে দেখছে। লোকটার চোখ হঠাৎ লাল বর্ণ হতে শুরু করেছে। হাতে শুধু একটা প্রহর বাকি আছে। এখানে আসার উদ্দেশ্য সফল বলা চলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরতে হবে নয়তো ঝামেলা আছে। কহিনুর কথাটা ভেবেই পাথরের দিকে খানিকটা ঝুকে গিয়ে বলল,

আপনি আমার কক্ষে অপেক্ষা করুণ আমি আসছি।
পাথর উত্তর দিলোনা। ওর চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। সম্পূর্ণ অচেতন হওয়ার আগেই বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো। ঠিক তখনই সাঈদ ফিরে এসে কহিনুরের পাশে বসলো।
ঝামেলা শেষ। নূর কিচেনে প্রচুর চিকেন আছে।
অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ অপচয়ের শামিল। তোমার জন্য পর্যাপ্ত খাবার অর্ডার করা হয়েছে এতেই সন্তুষ্ট থাকো।
সাঈদ মাথা নাড়িয়ে খেতে মনোযোগ দিলো। কহিনুর শান্ত মনে সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।একজনের সামনে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছে ওকে তাড়া করে চলেছে। সেটা যত তাড়াতাড়ি হবে ততই ভালো।

বইয়ের পাতায় গভীর মনোযোগ দিয়ে ডুবে আছে অধরা। পড়ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা অসাধারন উপন্যাস” চোখের বালি”। এই বাড়ির লাইব্রেরী কক্ষে দেশ বিদেশের নামকরা বেশ কিছু বই আছে। অধরা আপাতত নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাইছে। জুবায়ের ল্যাপটপ সামনে নিয়ে সোফায় বসে আছে। কিছুতেই কাজে মনোযোগ আসছে না। বারবার বিছানার দিকে দৃষ্টি গিয়ে থমকে যাচ্ছে।

বউয়েদের মন পাওয়ার নানারকম টিপস ইতিমধ্যে গুগলে কয়েকবার সার্স করে দেখে নিয়েছে কিন্তু কোনোটি মনমতো হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে নিজের কপাল নিজের ফা/টিয়ে আসতে তবুও যদি বউয়ের নজরে আসা যায়। ঘরে শান্তি না থাকলে কাজে মনোযোগ আসেনা বিষয়টা পৃথিবীর সব বউদের জানানোর প্রচণ্ড ইচ্ছে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছে। সামনে বড়সড় একটা ইভেন্টে হতে চলেছে। সেখানে বক্তৃতা দেবার সময় কথাটা ও উল্লেখ করবে বল ঠিক করলো। নানারকম চিন্তাভাবনার মধ্যেই জুবায়ের আনমনে বলে উঠলো,

চোখের বালি না পড়ে শেকসপিয়রের রোমিও জুলিয়েট পড়তে পারো বেশ ভালো। দুটোই ট্রাজেডিতে ভরপুর মানছি তবে রবীন্দ্রনাথ সাহেব আমাদের মতো নিরীহ পুরুষের কথা না ভেবে আলগা চরিত্রের একটা পুরুষের কথা ভেবে পরকিয়াতে মাখামাখি বইটা লিখে ফেলেছেন। ওটা এখন পড়লে বরকে তোমার হুদাই সন্দেহ হবে। আমার মনে হয় বরের সঙ্গে ঝামেলা চলার সময় মেয়েদের ভালো কোনো হাদীস পড়া উচিত। যেমন স্বামী স্ত্রীর মহব্বত টাইপ কিছু লেখা আছে এমন বই।

জুবায়েরের এলোমেলো কথা শুনে অধরা ভ্রু কুচকে ফেলল। লোকটার মাথা সত্যি গেছে। কথাটা ভেবে ওর মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে। কে বলেছে চিৎকার চেচামেচি করলেই রাগ দেখানো যায়? একদম না চুপচাপ থেকেও আনন্দ পাওয়া যায়। দুদিন ওকে পাত্তা দিচ্ছে না। জুহির কথা ভাবলেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। অধরা পূনরায় বইয়ে মনোযোগ দিতে চাইলো কিন্তু হলোনা। ভীষন বিরক্ত লাগছে বিনোদিনীকে। বইটা প্রিয় ছিল জুবায়েরের জন্য সবটা গেলো।অধরা বই বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

আজেবাজে কথাবার্তা বলে আমার মনোযোগ নষ্ট না করলে আপনার চলছিলোনা? ঘরে বউ রেখে বাইরে উঁকিঝুঁকি কাটতে ভাল্লাগে আর লেখকরা সেটা লিখলেই সমস্যা তাইনা?
জুবায়ের চমকিত হয়ে উত্তর দিলো,

আল্লাহ !অবশেষে তোমার মুখটা খুলেছে এতেই শুকরিয়া। ঝগড়া করো বউ যত ইচ্ছে বকাবকি করো কোনো সমস্যা নেই। শুধু বোবা হয়ে যেওনা প্লিজ।
জুবায়েরের বলার ভঙ্গিতে অধরার ওষ্ঠে আপনা আপনি হাসি চলে আসলো। শব্দ করে হেসে ফেলল। জুবায়েরের কয়েক সেকেন্ড লাগলো বিষয়টা বুঝতে। দ্রুত ল্যাপটপ রেখে উঠে গিয়ে অধরাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

তুমি রেগে ছিলেনা তাইনা? আমাকে মজা দেখাতে অভিনয় করেছো?
অধরা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো,
এটা মাঝেমাঝে করতে হয়। গুলল থেকে বউয়ের মন পাওয়ার টিপস জেনেছেন এটাও জানা উচিত ছিল। বরদের সব সময় ছাড় দিতে হয়না।

ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। একদম বাজে ছিলো। কখনও আর এমন করোনা প্লিজ ।
অধরা জুবায়েরের চুলে টান দিয়ে বলল,
আবারও করবো। যতবার জুহি আসবে ততবার করবো।
জুবায়ের উত্তর দিলোনা। অধরার মুখের দিকে চেয়ে মুগ্ধ হলো। আলগোছে ওর মুখটা নিজের হাতের তালুতে নিয়ে চুমু দিয়ে ফিসফিস করে বলল,

কেউ আসবেনা তবে সুলতান জুবায়েরের ফারুকীকে তার করা সামান্য অপরাধের তুলনায় বেআইনীভাবে অতিরিক্ত শাস্তি প্রদানের জন্য অধরা বারিকে কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হলো। সেটার কি হবে?
জোবায়ের কথা শুনে অধরা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চাইলো কিন্তু হলোনা। বিরক্ত হলো নিজের উপরে। যেমন ছিল তেমনি ভালো ছিল। এখন আফসোস হচ্ছে। লোকটা উল্টোপাল্টা বুদ্ধি করে প্রতিদিন ওকে বিরক্ত করবে।

বিশাল আকৃতির রাজ প্রাসাদের ন্যায় বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কহিনুর। শরীরে শোভা পাচ্ছে মখমলের ঝলমলে পোশাক। সাঈদ হন্তদন্ত হয়ে ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে বলল,
প্রহেলিকা আলেক্স লয়েড হচ্ছেন গালিব আঙ্কেলের নিজের মা। দ্বিতীয় বিবাহের পরে উনি নিজের নাম পরিবর্তন করেছেন। উনার একটা মেয়ে আছে নাম লিয়া আলেক্স লয়েড। মেয়েটা শহরের বাইরে পড়াশোনার জন্য আছে। তুমি ওর নাম করেই ভেতরে যাবে। আপাতত দুদিন এখানে থাকার অনুমতি নিতে পারলেই কাহিনি খতম। পারবে না?

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২২

কহিনুর মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। জানা নেই এখানে ওর সব প্রশ্নের উত্তর আছে কিনা তবুও শেষবারের মতো একটা চেষ্টা করতেই হবে।কহিনুর প্রথমবার প্রহেলিকার মুখোমুখি হতে চলেছে যার ইশারায় গালিব অন্য পন্থা অবলম্বন করে পিতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কেনো এমনটা করলেন উনি? শুধুমাত্র কহিনুর নাকি অন্য কারণ?

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৪