বিপরীতে তুমি আমি পর্ব ৭

বিপরীতে তুমি আমি পর্ব ৭
সুমাইয়া ইসলাম

সময় রাত দশটা পার হয়েছে আরো ঘন্টা খানিক আগে। কিরণ কেবলি ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে। ভেজা তাওয়ালটা বারান্দায় দিয়ে ঘরে ঢুকতেই চমকে ওঠলো। মিহু নিঃশব্দে, নিজমনে ঘরময় পায়চারি করছে। কখনো সোফার সামনে রাখা টেবিলের উপরের ল্যপটপ, কখনো দেয়াল, কখনো আলমারি তো কখনো দেয়ালে রাখা অর্ণবের ছবি ছুঁয়ে দিচ্ছে। মিহুর এ ব্যপারটা কিরণের ভালো লাগলো না।

শুধু এটাই নয়। বেশ কিছু ব্যপারেই কিরণের নিরব অসন্তুষ্টি প্রকাশিত হয়েছে। মিহু বাড়ির অন্যান্য মেয়ের থেকে আলাদা। কিরণ খেয়াল করেছে মিহু কখনোই অর্ণবকে ভাই কিংবা কিরণকে ভাবি বলে ডাকে নি। সে সর্বদাই নাম ধরেই সম্মোধন করেছে। কিরণের মস্তিষ্ক জানান দিলো অন্য কোনো দিকে। কলেজে পড়ুয়া ছোট বাচ্চা কিরণ নয়। মাস্টার্স শেষ বর্ষ সফলভাবে উত্তীর্ণ করতে যাচ্ছে। যথেষ্ট পরিপক্ক সে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেয়ে হয়ে অন্য একটি মেয়ের মনের ভাব বোঝা খুব একটা কষ্টকর মনে হল না। কিরণ প্রায় নিরানব্বই শতাংশ নিশ্চিত মিহুর মনে অর্ণবের জন্য বিশেষ জায়গা রয়েছে। এর দরূণই ঋতু মিতুর মতো তার সাথে মিহু মিশে ওঠতে পারছে না। সবসময় একটা জড়তা, বিরক্তিকর ভাব মিহুর চোখে মুখে দেখতে পাওয়া যায়। অর্ণব সামনে এলে চোখের রং উজ্জ্বল হয়ে আসে। এ কারণে কিরনও খুব একটা মিহুর কাছাকাছি যেতে পছন্দ করে না। স্বামীকে পছন্দ করে এমন নারীর সাথে মধুর ব্যবহার করা আর যাই হোক বাঙালি নারীর কাজ নয়। খারাপ লাগা চেপে রেখেই হাসি মুখে রুমে ডুকলো কিরণ। মিষ্টতার সহিত বললো,

মিহু! কখন এলে তুমি?
অর্ণবের কল্পনায় মগ্ন ছিল মিহু। কিরণের আকষ্মিক সম্মোধনে খানিকটা চমকে ওঠলেও পরক্ষণে সামলে নিল নিজেকে। মুখে হাসি নিয়ে কিরণের কাছে এসে দাঁড়ালো। চট করে করণের দু হাত ধরে বললো,
অনেকক্ষণ হলো। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। শোনো না! আমার না ভিষণ ক্ষিদে পেয়েছে। রান্না ঘরে এক চুলোয় নুডুলস বসিয়ে এসেছি। তোমার হাতের কফিটা আমার বেশ লেগেছে। চলো না একটু দেখিয়ে দেবে আমায়।

কিরণ জবাবে কিছু বলার সুযোগ পেলো না। তার আগেই মিহু তার ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে এলো। কিরণও আপত্তি করলো না। ভাবি মানুক আর নাই মানুক তবুও কিরণ বয়সেও বছর খানেকের বড় এবং সম্পর্কেও। তাই আবদার হিসেবে মিহুর সাথে রান্না ঘরে চলল। সিঁড়ি থেকে নেমে হঠাৎ মিহুর ফোন থেকে শব্দ আসে। হাত ছেড়ে মিহু কিরণকে বললো,
ওহ্! আমার খুব দরকারি একটা ফোন এসেছে। তুমি এগোও আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।

কিরণ সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে এগিয়ে যায় রান্নাঘরে। কিরণের তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস। রাত এগারোটার আগেই সে ঘুমানোর তোড়জোড় শুরু করে দেয়। খুব দরকার ব্যতীত রাত জাগা তার রুটিনে নেই বললেই চলে। তাই এগারোটা বাজতেই চোখে ঘুম নেমে আসছে। বার বার হাই তুলতে তুলতে চুলোর সামনে গিয়ে দেখলো এক চুলোয় নুডুলস সিদ্ধ হচ্ছে। অপর একটি চুলোয় পাতিলের বসানো।

সামান্য পানি হয়তো নিচে। কিরণ পাতিলের নিচের দিকে তাকালো। চুলো বন্ধ। হয়তো এমনি বসানো। দুহাত দিয়ে পাতিলটা ধরে নামাতে গিয়েই আর্তনাদে কেঁপে ওঠলো পুরো বাড়ি। সিঁড়ি বেয়ে পরপর নেমে এলো মেহরাব, রোহান ও জান্নাত। শব্দের উৎস তাদের অজানা। জান্নাত রান্না ঘরের আলো জ্বালানো দেখে ছুটে গেলো সেদিকে। রান্না ঘরে ডুকেই দেখতে পেলো কিরণ হাঁটুতে মুখ গুজে রয়েছে। দু হাত দিয়ে বাম পায়ের তালু ধরে আছে। পাশে পড়ে রয়েছে পাতিল। দ্রুত কিরণের কাছে যায়। উদ্বিগ্ন গলায় বলে,

ভাবি! কি হয়েছে তোমার? এভাবে এই পাতিল পড়ে আছে কেন? তুমি চিৎকার করলে কেন? ব্যাথা পেয়েছো? বল না ভাবি!
কিরণ মুখ তুলে তাকালো। জান্নাতের কন্ঠে কি ব্যকুলতা! চোখে মুখে চিন্তার রেশ। দাঁত ভাঙ্গা কষ্টের মাঝেও জান্নাতের আকুলতা দেখে কিরণের মনে প্রশান্তিতে ভরে গেল। মাত্র একদিনেই কি আপন করে নিয়েছে মেয়েটা! পায়ের ব্যথাটা চিন চিন করে ওঠলো। কিরণের মাথার শিরা উপশিরাতে যেন সে ব্যথা আঘাত করছে। জান্নাতের দিকে তাকিয়ে মলিন সুরে বললো,

আমায় একটু ধরবে? আমি দাঁড়াতে পারছি না। এখান থেকে বের হয়ে বলছি।
জান্নাত তড়িঘড়ি করে জান্নাতকে ধরে বের করলো। গলা ছেড়ে ডেকে নেয় মেহরাব ও রোহানকে। সাবধানে কিরণকে বসিয়ে দিল সোফায়।

জান্নাত খেয়াল করে দেখলো কিরণের হাতের তালু বেশ লাল হয়ে আছে এবং বাম পায়ের উপরিভাগে খারাপভাবে ফোসকা পড়ে গিয়েছে। চোখ মুখ কুচকে এলো। কিরণের দিকে তাকাতেই দেখলো মেয়েটার চোখ মুখ টকটকে লাল হয়ে গিয়েছে কান্নায়। জান্নাতের বড় মায়া হলো। কিরণের জায়গায় সে থাকলে হয়তো এতক্ষণে কান্নাকাটি করে বাড়ি তুলতো। অথচ সেখানে কিরণ নিরবে শুধু চোখের জল ফেলছে। রেহনুমা বেগমও দ্রুত ছুটে এলেন। কিরণের কাছে গিয়ে চিন্তিত কন্ঠে বললেন,

এসব কি করে হলো বউমা? এতো রাতে তুমি রান্না ঘরে কেন গিয়েছিলে? বাড়িতে কাজ করার মানুষ আছে তো নাকি? দেখি কোথায় ব্যথা পেয়েছো!
রেহনুমা বেগম কিরণের হাত উল্টে দেখতেই বুঝতে পারলেন গরম কিছুর ছ্যাকায় লাল হয়ে গিয়েছে। মেহরাব ও রোহানও দেখলো। কিছু বলার আগে ওরা ছুটে গেল ওপরে। জান্নাত কিরণের পা উঁচু করে সামনের টেবিলে রেখে দিলো। শাড়িটা একটু উঁচু করে ধরে বললো,

মামি দেখ! পায়ে কি বাজে ভাবে ফোঁসকা পড়ে গেছে।
রেহনুমা বেগম দেখে আঁতকে ওঠলেন। একবার পায়ের দিকে তো আরেকবার কিরণের দিকে তাকালেন। কিরণের মলিন মুখটা দেখে ওনার মন হুহু করে ওঠলো। মেয়েটা কি পরিমাণের শক্ত ভেবেই শ্বাস ফেললেন। কিরণের পাশে বসে হাতটা নিজের কাছে নিলেন। ততক্ষণে মেহরাব রোহান চলে এসেছে। পিছু পিছু ছুটে আসছে জিহাদ, ঋতু ও মিতুও। ঘুমিযে পড়ার কারণে ওরা ঘটনা বুঝতে পারে নি। রোহান ও মেহরাবের ডাকে ছুটে এসেছে। মেহরাব হাতে থাকা বক্সটা রেহনুমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

চাচিমা! ঔষধের বক্স নিয়ে এসেছি। নিন!
কিরণ মেহরাবের দিকে তাকালো। কেউ তো ওদের ঔষধের কথা বলে নি। সকলে একে একে ঘিরে বসলো কিরণকে। জান্নাত খুবই সাবধানে কিরণের পায়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে আর মিতু ফু দিচ্ছে। ঋতু কিরণের হাতটা রেহনুমা বেগমের কাছে থেকে নিয়ে সেখানে মলম লাগাচ্ছে।

রোহান ও জিহাদ চুপচাপ বসে দেখে যাচ্ছে। সবার আন্তরিকতা দেখে কিরণের চোখ আবেগে ছলছল করে ওঠলো। একটা দিনের ব্যবধানে এরা ওকে এতো আপন করে নেবে তা যেনো কল্পনাও করে নি কিরণ। মানুষের সম্পর্ক বুঝি এভাবে গড়ে। এভাবেই বুঝি তৈরী হয় মায়া, টান! কিছু মানুষ সারাজীবনেও আপন হয় না আর কিছু মানুষ কখন এতো আপন হয় তা সারাজীবন ভেবেও বোঝা যায় না।

মাথায় স্নেহের স্পর্শ পেয়ে পাশে ফিরে তাকালো। রেহনুমা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে কোমল কন্ঠে বললো,
খুব জ্বালা করছে তাই না মা? একটু ধৈর্য ধর। মলম লাগানো শেষ হলেই দেখবে একটু আরাম লাগছে।
কিরণের কপল বেয়ে এবার পানি ঝরে পড়লো। সকলের এতো উদ্বেগে ভেতরের আবেগ আঁটকে রাখতে পারছে না। কিরণের চোখের পানি দেখে জান্নাত অপরাধি কন্ঠে বলল,

দুঃখিত ভাবি! আমি মনে হয়ে আবার ব্যথা দিয়ে দিলাম তোমায়। আস্তে আস্তেই তো দিচ্ছি!
হুট করে মেহরাব এসে জান্নাতের মাথায় থাপ্পড় দিলো। আকষ্মিক আঘাতে জান্নাত বেশ চমকে ওঠলো। মেহরাব সোফায় বসতে বসতে বললো,

এতো বড় হয়েছিস অথচ সামান্য একটা কাজই করতে পারিস না। আমড়া কাঠের ঢেকি!
জান্নাত তখনও ফ্লোরে বসে আছে। মেহরাবের দিকে ঘুরেই তেজি কন্ঠে বললো,
হ্যা! আমি তো বড় হতে হতে বুড়ি হয়ে গিয়েছি।
যাক এইটা তোর মাথায় ঢুকলো!

মেহরাব ভাইয়াআআাাা! আমাকে বুড়ি বলবে না। সতেরো বছরের মেয়ে কখনো বুড়ি হয়? আমার তো আঠারো হলোই না। এখনো নাবালিকা আমি। তুমি হলে বুড়ো। ছাব্বিশ বছরের বুড়ো।
দুজনের বাগবিতন্ডার পরিস্থিতি থামাতে রোহান মেহরাবের পিঠে স্বজোড়ে থাপ্পড় মারলো। থাপ্পড়টা একটু বেশি জোরে ছিল। মেহরাবের চোখ মুখ কুচকে এলো।

মেহরাবের চোখ মুুখ দেখে হেসে উঠলো সবাই। কিরণ ব্যাথায় জর্জরিত হয়েও এদের খুনশুটিতে মুচকি হাসে। মেহরাব মারের জবাবে মার দিতে যেতেই রেহনুমা বেগম এবার শাসন করে বললেন,
তোরা কি বড় হবি না কোনোদিন? এতো বড় বড় ছেলে মেয়ে অথচ জগড়া করছে, মারামারি করছে ছোটদের মতো। এখানে একজন অসুস্থ হয়ে নাজেহাল আর ওখানে তারা হাসি মজা করছে।
কিরণ মুচকি হেঁসেই বললো,

থাক না মা! আমি জানি ওরা আমার মনোযোগ অন্যদিকে নিতেই মজা করছে। আপনি বরং শুয়ে পড়ুন। আপনার শরীর খারাপ করবে আবার। একদিন খুব ধকল গিয়েছে। চিন্তা করবেন না। ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে। আর আপনার ছেলেকে কিছু জানাবেন না। কালকে এসেই দেখে নেবে। এখন খামোখা চিন্তা করবে।

রেহনুমা চোখে মুখে ফুটে ওঠলো প্রসন্নতা। কিরণ বুদ্ধিমান মেয়ে তা সে আগে থেকেই জানে। অর্ণবের ভাষায় কিরণকে প্রায় অর্ধ মুখস্ত হয়ে গিয়েছে। কিরণের মাথায় হাত বুলিয়ে ওঠে যেতে যেতে জিহাদের উদ্দেশ্যে বললেন,
এই যে ডাক্তার! নিজের ভাবির চিকিৎসাটা করে দিস ভালো করে। ব্যথার ঔষধ আর পারলে এটা ঘুমের ঔষধ খাওয়ায়ে দিস।

জিহাদ হেসে সম্মতি জানালে রেহনুমা বেগম চলে গেলেন। মেহরাব ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিলো রেহনুমা বেগমকে। অদৃশ্য হতেই কিরণের দিকে তাকিয়ে বললো,
ভাবি! এবার বলেন তো কিভাবে ব্যথা পেলেন?
কিরণ দম ছেড়ে বললো,

কফি বানাতে গিয়েছিলাম। একপাশে পাতিল ছিল। তলাতে কিছু পানি ছিল। চুলা বন্ধ থাকায় ভেবেছিলাম হয়তো এমনি বসানো। তাই খালি হাতেই সরাতে গিয়ে দেখলাম মারাত্মক গরম। হাত থেকে পাতিলটা পড়ে গিয়ে পাতিলের ভেতরের পানিটুকু পায়ে পড়ে গেল। তারপর বুঝতে পারলাম ওটা পানি না। তেল ছিল। গরম তেল!
কিরণের কথায় সবাই অবাক হয়ে গেল। জান্নাত হতবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

চুলা বন্ধ থাকলে গরম হলো কি করে? আর ওইটা তো পানি গরমের পাতিল ছিল। ওরকম পাতিলে তেল যাবে কি করে?
ঋতুও সাথে সাথে জিজ্ঞাসা করলো,
হ্যা ভাবি! আমারো একই প্রশ্ন। আর তুমি পানি আর তেলের পার্থক্য বুঝলে না?
কিরণও নিজের নির্বুদ্ধিতা নিয়ে চিন্তিত হল। সত্যি তো! সে বুঝলো না পানি আর তেলের পার্থক্য?
তখনই মেহরাবের গম্ভীর কন্ঠ কানে আসলো। মেহরাবের দিকে তাকালো। কিন্তু মেহরাব তো নেই! বিপরীত পাশে তাকাতে দেখলো মেহরাব রান্নাঘর থেকে আসছে। হাতের রুমাল দিয়ে হাত মুছে পুনরায় নিজের জায়গায় বসলো!
ওটা পেট্রোল ছিল!

সকলেই অবাকের সপ্তম চূড়ায়। অসম্ভব কিছু যেন শুনলো। সমস্বরে চিৎকারে করে বলে ওঠলো,
কি! পেট্রোল! কিভাবে সম্ভব?
মেহরাব ভাবলেশহীনভাবে সকলে দিকে তাকিয়ে বললো,
আসল পেট্রোল পানির মতো স্বচ্ছ দেখতে হয়। তাই ভাবি বুঝে ওঠতে পারে নি।

কিরণ এবার বুঝতে পারলো ধোঁকা খেয়ে যাওয়ার কারণ। ঘ্রাণটাও বুঝতে পারি নি পাশে নুডুলস সিদ্ধ হওয়ার ঘ্রাণের কারণে। পাশে থেকে এতক্ষণ যাবৎ সবার কথা শুনে যাওয়া শান্ত শিষ্ট মিতু এবার কৌতুহল আঁটকে রাখতে না পেরে জিজ্ঞাসা করে ফেললো,
কিন্তু এসব কে করলো?
কিরণবাদে উপস্থিত বাকি সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট শ্বাস ফেলে স্বাভাবিক ভাবে বলে,
মিহু!

কিরণ চমকে ওঠলো সকলের কন্ঠে একই নাম শুনে। সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো তার দিকে তাকিয়ে আছে ওরা। কিরণ দম ছাড়লো। বুঝতে পারলো মিহুর ভিন্ন স্বভাব কেবল কিরণই নয়, সকলেরই অবগত।
বেশ কিছুক্ষণ পর জান্নাত, মিতু ও ঋতু মিলে কিরণকে সাবধানে সিঁড়ির কাছে নিয়ে গেলো। জিহাদের দেওয়া ঘুমের ঔষধ কাজ করা শুরু করছে। ঘুম ভেঙ্গে আসছে কিরণের চোখে। একটা লম্বা ঘুম দরকার। দুটো সিঁড়ি পার হতেই পেছন থেকে আওয়াজ এলো,
কিরণ!

শুনশান বিশাল বারান্দা। রাতের শেষ প্রহর। দু একটা কুকুরের ডাকে ভয়ংকর হয়ে ওঠছে পরিবেশ। এক পা দু পা করে একটা দরজার দিকে এগিয়ে গোলো ছয় জোড়া পা। পকেট থেকে চাবি বের করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দরজা খুলে ডুকে গেলো ভেতরে। পুরোনো নতুন বই খাতার গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম প্রায়। নামে রুমাল নিয়ে এগিয়ে গেল কাঙ্ক্ষিত টেবিলের দিকে। তাদের মধ্যে একজন ড্রয়ারে হাত রেখে বুঝলো ড্রয়ার তালা দেওয়া। এর চাবিও তাদের কাছে রয়েছে। চাবির গুছাটা উল্টে পাল্টে অবশেষে খুঁজে পেলো ড্রয়ারের চাবি। ড্রয়ারটা খুলতেই দেখতে পেলো বড় অক্ষরে লেখা,

” জার্নালিজম ও মিডিয়া ডিপার্টমেন্ট প্রশ্নপত্র,
ফাইনাল এক্সাম,
মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ার। ”
তিনজনের মুখেই ফুটে উঠলো পৈশাচিক হাসি। সময় রাত দশটা পার হয়েছে আরো ঘন্টা খানিক আগে। কিরণ কেবলি ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে। ভেজা তাওয়ালটা বারান্দায় দিয়ে ঘরে ঢুকতেই চমকে ওঠলো। মিহু নিঃশব্দে, নিজমনে ঘরময় পায়চারি করছে।

কখনো সোফার সামনে রাখা টেবিলের উপরের ল্যপটপ, কখনো দেয়াল, কখনো আলমারি তো কখনো দেয়ালে রাখা অর্ণবের ছবি ছুঁয়ে দিচ্ছে। মিহুর এ ব্যপারটা কিরণের ভালো লাগলো না। শুধু এটাই নয়। বেশ কিছু ব্যপারেই কিরণের নিরব অসন্তুষ্টি প্রকাশিত হয়েছে। মিহু বাড়ির অন্যান্য মেয়ের থেকে আলাদা। কিরণ খেয়াল করেছে মিহু কখনোই অর্ণবকে ভাই কিংবা কিরণকে ভাবি বলে ডাকে নি।

সে সর্বদাই নাম ধরেই সম্মোধন করেছে। কিরণের মস্তিষ্ক জানান দিলো অন্য কোনো দিকে। কলেজে পড়ুয়া ছোট বাচ্চা কিরণ নয়। মাস্টার্স শেষ বর্ষ সফলভাবে উত্তীর্ণ করতে যাচ্ছে। যথেষ্ট পরিপক্ক সে। মেয়ে হয়ে অন্য একটি মেয়ের মনের ভাব বোঝা খুব একটা কষ্টকর মনে হল না।

কিরণ প্রায় নিরানব্বই শতাংশ নিশ্চিত মিহুর মনে অর্ণবের জন্য বিশেষ জায়গা রয়েছে। এর দরূণই ঋতু মিতুর মতো তার সাথে মিহু মিশে ওঠতে পারছে না। সবসময় একটা জড়তা, বিরক্তিকর ভাব মিহুর চোখে মুখে দেখতে পাওয়া যায়। অর্ণব সামনে এলে চোখের রং উজ্জ্বল হয়ে আসে। এ কারণে কিরনও খুব একটা মিহুর কাছাকাছি যেতে পছন্দ করে না। স্বামীকে পছন্দ করে এমন নারীর সাথে মধুর ব্যবহার করা আর যাই হোক বাঙালি নারীর কাজ নয়। খারাপ লাগা চেপে রেখেই হাসি মুখে রুমে ডুকলো কিরণ। মিষ্টতার সহিত বললো,

মিহু! কখন এলে তুমি?
অর্ণবের কল্পনায় মগ্ন ছিল মিহু। কিরণের আকষ্মিক সম্মোধনে খানিকটা চমকে ওঠলেও পরক্ষণে সামলে নিল নিজেকে। মুখে হাসি নিয়ে কিরণের কাছে এসে দাঁড়ালো। চট করে করণের দু হাত ধরে বললো,

অনেকক্ষণ হলো। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। শোনো না! আমার না ভিষণ ক্ষিদে পেয়েছে। রান্না ঘরে এক চুলোয় নুডুলস বসিয়ে এসেছি। তোমার হাতের কফিটা আমার বেশ লেগেছে। চলো না একটু দেখিয়ে দেবে আমায়।
কিরণ জবাবে কিছু বলার সুযোগ পেলো না। তার আগেই মিহু তার ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে এলো। কিরণও আপত্তি করলো না। ভাবি মানুক আর নাই মানুক তবুও কিরণ বয়সেও বছর খানেকের বড় এবং সম্পর্কেও। তাই আবদার হিসেবে মিহুর সাথে রান্না ঘরে চলল। সিঁড়ি থেকে নেমে হঠাৎ মিহুর ফোন থেকে শব্দ আসে। হাত ছেড়ে মিহু কিরণকে বললো,

ওহ্! আমার খুব দরকারি একটা ফোন এসেছে। তুমি এগোও আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।
কিরণ সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে এগিয়ে যায় রান্নাঘরে। কিরণের তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস। রাত এগারোটার আগেই সে ঘুমানোর তোড়জোড় শুরু করে দেয়। খুব দরকার ব্যতীত রাত জাগা তার রুটিনে নেই বললেই চলে। তাই এগারোটা বাজতেই চোখে ঘুম নেমে আসছে।

বার বার হাই তুলতে তুলতে চুলোর সামনে গিয়ে দেখলো এক চুলোয় নুডুলস সিদ্ধ হচ্ছে। অপর একটি চুলোয় পাতিলের বসানো। সামান্য পানি হয়তো নিচে। কিরণ পাতিলের নিচের দিকে তাকালো। চুলো বন্ধ। হয়তো এমনি বসানো। দুহাত দিয়ে পাতিলটা ধরে নামাতে গিয়েই আর্তনাদে কেঁপে ওঠলো পুরো বাড়ি। সিঁড়ি বেয়ে পরপর নেমে এলো মেহরাব, রোহান ও জান্নাত।

শব্দের উৎস তাদের অজানা। জান্নাত রান্না ঘরের আলো জ্বালানো দেখে ছুটে গেলো সেদিকে। রান্না ঘরে ডুকেই দেখতে পেলো কিরণ হাঁটুতে মুখ গুজে রয়েছে। দু হাত দিয়ে বাম পায়ের তালু ধরে আছে। পাশে পড়ে রয়েছে পাতিল। দ্রুত কিরণের কাছে যায়। উদ্বিগ্ন গলায় বলে,
ভাবি! কি হয়েছে তোমার? এভাবে এই পাতিল পড়ে আছে কেন? তুমি চিৎকার করলে কেন? ব্যাথা পেয়েছো? বল না ভাবি!

কিরণ মুখ তুলে তাকালো। জান্নাতের কন্ঠে কি ব্যকুলতা! চোখে মুখে চিন্তার রেশ। দাঁত ভাঙ্গা কষ্টের মাঝেও জান্নাতের আকুলতা দেখে কিরণের মনে প্রশান্তিতে ভরে গেল। মাত্র একদিনেই কি আপন করে নিয়েছে মেয়েটা! পায়ের ব্যথাটা চিন চিন করে ওঠলো। কিরণের মাথার শিরা উপশিরাতে যেন সে ব্যথা আঘাত করছে। জান্নাতের দিকে তাকিয়ে মলিন সুরে বললো,

আমায় একটু ধরবে? আমি দাঁড়াতে পারছি না। এখান থেকে বের হয়ে বলছি।
জান্নাত তড়িঘড়ি করে জান্নাতকে ধরে বের করলো। গলা ছেড়ে ডেকে নেয় মেহরাব ও রোহানকে। সাবধানে কিরণকে বসিয়ে দিল সোফায়।

জান্নাত খেয়াল করে দেখলো কিরণের হাতের তালু বেশ লাল হয়ে আছে এবং বাম পায়ের উপরিভাগে খারাপভাবে ফোসকা পড়ে গিয়েছে। চোখ মুখ কুচকে এলো। কিরণের দিকে তাকাতেই দেখলো মেয়েটার চোখ মুখ টকটকে লাল হয়ে গিয়েছে কান্নায়। জান্নাতের বড় মায়া হলো। কিরণের জায়গায় সে থাকলে হয়তো এতক্ষণে কান্নাকাটি করে বাড়ি তুলতো। অথচ সেখানে কিরণ নিরবে শুধু চোখের জল ফেলছে। রেহনুমা বেগমও দ্রুত ছুটে এলেন। কিরণের কাছে গিয়ে চিন্তিত কন্ঠে বললেন,

এসব কি করে হলো বউমা? এতো রাতে তুমি রান্না ঘরে কেন গিয়েছিলে? বাড়িতে কাজ করার মানুষ আছে তো নাকি? দেখি কোথায় ব্যথা পেয়েছো!
রেহনুমা বেগম কিরণের হাত উল্টে দেখতেই বুঝতে পারলেন গরম কিছুর ছ্যাকায় লাল হয়ে গিয়েছে। মেহরাব ও রোহানও দেখলো। কিছু বলার আগে ওরা ছুটে গেল ওপরে। জান্নাত কিরণের পা উঁচু করে সামনের টেবিলে রেখে দিলো। শাড়িটা একটু উঁচু করে ধরে বললো,

মামি দেখ! পায়ে কি বাজে ভাবে ফোঁসকা পড়ে গেছে।
রেহনুমা বেগম দেখে আঁতকে ওঠলেন। একবার পায়ের দিকে তো আরেকবার কিরণের দিকে তাকালেন। কিরণের মলিন মুখটা দেখে ওনার মন হুহু করে ওঠলো। মেয়েটা কি পরিমাণের শক্ত ভেবেই শ্বাস ফেললেন। কিরণের পাশে বসে হাতটা নিজের কাছে নিলেন। ততক্ষণে মেহরাব রোহান চলে এসেছে। পিছু পিছু ছুটে আসছে জিহাদ, ঋতু ও মিতুও। ঘুমিযে পড়ার কারণে ওরা ঘটনা বুঝতে পারে নি। রোহান ও মেহরাবের ডাকে ছুটে এসেছে। মেহরাব হাতে থাকা বক্সটা রেহনুমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

চাচিমা! ঔষধের বক্স নিয়ে এসেছি। নিন!
কিরণ মেহরাবের দিকে তাকালো। কেউ তো ওদের ঔষধের কথা বলে নি। সকলে একে একে ঘিরে বসলো কিরণকে। জান্নাত খুবই সাবধানে কিরণের পায়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে আর মিতু ফু দিচ্ছে। ঋতু কিরণের হাতটা রেহনুমা বেগমের কাছে থেকে নিয়ে সেখানে মলম লাগাচ্ছে।

রোহান ও জিহাদ চুপচাপ বসে দেখে যাচ্ছে। সবার আন্তরিকতা দেখে কিরণের চোখ আবেগে ছলছল করে ওঠলো। একটা দিনের ব্যবধানে এরা ওকে এতো আপন করে নেবে তা যেনো কল্পনাও করে নি কিরণ। মানুষের সম্পর্ক বুঝি এভাবে গড়ে। এভাবেই বুঝি তৈরী হয় মায়া, টান! কিছু মানুষ সারাজীবনেও আপন হয় না আর কিছু মানুষ কখন এতো আপন হয় তা সারাজীবন ভেবেও বোঝা যায় না।

মাথায় স্নেহের স্পর্শ পেয়ে পাশে ফিরে তাকালো। রেহনুমা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে কোমল কন্ঠে বললো,
খুব জ্বালা করছে তাই না মা? একটু ধৈর্য ধর। মলম লাগানো শেষ হলেই দেখবে একটু আরাম লাগছে।
কিরণের কপল বেয়ে এবার পানি ঝরে পড়লো। সকলের এতো উদ্বেগে ভেতরের আবেগ আঁটকে রাখতে পারছে না। কিরণের চোখের পানি দেখে জান্নাত অপরাধি কন্ঠে বলল,

দুঃখিত ভাবি! আমি মনে হয়ে আবার ব্যথা দিয়ে দিলাম তোমায়। আস্তে আস্তেই তো দিচ্ছি!
হুট করে মেহরাব এসে জান্নাতের মাথায় থাপ্পড় দিলো। আকষ্মিক আঘাতে জান্নাত বেশ চমকে ওঠলো। মেহরাব সোফায় বসতে বসতে বললো,

এতো বড় হয়েছিস অথচ সামান্য একটা কাজই করতে পারিস না। আমড়া কাঠের ঢেকি!
জান্নাত তখনও ফ্লোরে বসে আছে। মেহরাবের দিকে ঘুরেই তেজি কন্ঠে বললো,
হ্যা! আমি তো বড় হতে হতে বুড়ি হয়ে গিয়েছি।
যাক এইটা তোর মাথায় ঢুকলো!

মেহরাব ভাইয়াআআাাা! আমাকে বুড়ি বলবে না। সতেরো বছরের মেয়ে কখনো বুড়ি হয়? আমার তো আঠারো হলোই না। এখনো নাবালিকা আমি। তুমি হলে বুড়ো। ছাব্বিশ বছরের বুড়ো।
দুজনের বাগবিতন্ডার পরিস্থিতি থামাতে রোহান মেহরাবের পিঠে স্বজোড়ে থাপ্পড় মারলো। থাপ্পড়টা একটু বেশি জোরে ছিল। মেহরাবের চোখ মুখ কুচকে এলো। মেহরাবের চোখ মুুখ দেখে হেসে উঠলো সবাই। কিরণ ব্যাথায় জর্জরিত হয়েও এদের খুনশুটিতে মুচকি হাসে। মেহরাব মারের জবাবে মার দিতে যেতেই রেহনুমা বেগম এবার শাসন করে বললেন,

তোরা কি বড় হবি না কোনোদিন? এতো বড় বড় ছেলে মেয়ে অথচ জগড়া করছে, মারামারি করছে ছোটদের মতো। এখানে একজন অসুস্থ হয়ে নাজেহাল আর ওখানে তারা হাসি মজা করছে।
কিরণ মুচকি হেঁসেই বললো,

থাক না মা! আমি জানি ওরা আমার মনোযোগ অন্যদিকে নিতেই মজা করছে। আপনি বরং শুয়ে পড়ুন। আপনার শরীর খারাপ করবে আবার। একদিন খুব ধকল গিয়েছে। চিন্তা করবেন না। ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে। আর আপনার ছেলেকে কিছু জানাবেন না। কালকে এসেই দেখে নেবে। এখন খামোখা চিন্তা করবে।

রেহনুমা চোখে মুখে ফুটে ওঠলো প্রসন্নতা। কিরণ বুদ্ধিমান মেয়ে তা সে আগে থেকেই জানে। অর্ণবের ভাষায় কিরণকে প্রায় অর্ধ মুখস্ত হয়ে গিয়েছে। কিরণের মাথায় হাত বুলিয়ে ওঠে যেতে যেতে জিহাদের উদ্দেশ্যে বললেন,
এই যে ডাক্তার! নিজের ভাবির চিকিৎসাটা করে দিস ভালো করে। ব্যথার ঔষধ আর পারলে এটা ঘুমের ঔষধ খাওয়ায়ে দিস।

জিহাদ হেসে সম্মতি জানালে রেহনুমা বেগম চলে গেলেন। মেহরাব ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিলো রেহনুমা বেগমকে। অদৃশ্য হতেই কিরণের দিকে তাকিয়ে বললো,
ভাবি! এবার বলেন তো কিভাবে ব্যথা পেলেন?
কিরণ দম ছেড়ে বললো,

কফি বানাতে গিয়েছিলাম। একপাশে পাতিল ছিল। তলাতে কিছু পানি ছিল। চুলা বন্ধ থাকায় ভেবেছিলাম হয়তো এমনি বসানো। তাই খালি হাতেই সরাতে গিয়ে দেখলাম মারাত্মক গরম। হাত থেকে পাতিলটা পড়ে গিয়ে পাতিলের ভেতরের পানিটুকু পায়ে পড়ে গেল। তারপর বুঝতে পারলাম ওটা পানি না। তেল ছিল। গরম তেল!
কিরণের কথায় সবাই অবাক হয়ে গেল। জান্নাত হতবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

চুলা বন্ধ থাকলে গরম হলো কি করে? আর ওইটা তো পানি গরমের পাতিল ছিল। ওরকম পাতিলে তেল যাবে কি করে?
ঋতুও সাথে সাথে জিজ্ঞাসা করলো,
হ্যা ভাবি! আমারো একই প্রশ্ন। আর তুমি পানি আর তেলের পার্থক্য বুঝলে না?
কিরণও নিজের নির্বুদ্ধিতা নিয়ে চিন্তিত হল। সত্যি তো! সে বুঝলো না পানি আর তেলের পার্থক্য?
তখনই মেহরাবের গম্ভীর কন্ঠ কানে আসলো। মেহরাবের দিকে তাকালো। কিন্তু মেহরাব তো নেই! বিপরীত পাশে তাকাতে দেখলো মেহরাব রান্নাঘর থেকে আসছে। হাতের রুমাল দিয়ে হাত মুছে পুনরায় নিজের জায়গায় বসলো!

ওটা পেট্রোল ছিল!
সকলেই অবাকের সপ্তম চূড়ায়। অসম্ভব কিছু যেন শুনলো। সমস্বরে চিৎকারে করে বলে ওঠলো,
কি! পেট্রোল! কিভাবে সম্ভব?
মেহরাব ভাবলেশহীনভাবে সকলে দিকে তাকিয়ে বললো,

আসল পেট্রোল পানির মতো স্বচ্ছ দেখতে হয়। তাই ভাবি বুঝে ওঠতে পারে নি।
কিরণ এবার বুঝতে পারলো ধোঁকা খেয়ে যাওয়ার কারণ। ঘ্রাণটাও বুঝতে পারি নি পাশে নুডুলস সিদ্ধ হওয়ার ঘ্রাণের কারণে। পাশে থেকে এতক্ষণ যাবৎ সবার কথা শুনে যাওয়া শান্ত শিষ্ট মিতু এবার কৌতুহল আঁটকে রাখতে না পেরে জিজ্ঞাসা করে ফেললো,

কিন্তু এসব কে করলো?
কিরণবাদে উপস্থিত বাকি সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট শ্বাস ফেলে স্বাভাবিক ভাবে বলে,
মিহু!

কিরণ চমকে ওঠলো সকলের কন্ঠে একই নাম শুনে। সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো তার দিকে তাকিয়ে আছে ওরা। কিরণ দম ছাড়লো। বুঝতে পারলো মিহুর ভিন্ন স্বভাব কেবল কিরণই নয়, সকলেরই অবগত।
বেশ কিছুক্ষণ পর জান্নাত, মিতু ও ঋতু মিলে কিরণকে সাবধানে সিঁড়ির কাছে নিয়ে গেলো। জিহাদের দেওয়া ঘুমের ঔষধ কাজ করা শুরু করছে। ঘুম ভেঙ্গে আসছে কিরণের চোখে। একটা লম্বা ঘুম দরকার। দুটো সিঁড়ি পার হতেই পেছন থেকে আওয়াজ এলো,
কিরণ!

শুনশান বিশাল বারান্দা। রাতের শেষ প্রহর। দু একটা কুকুরের ডাকে ভয়ংকর হয়ে ওঠছে পরিবেশ। এক পা দু পা করে একটা দরজার দিকে এগিয়ে গোলো ছয় জোড়া পা। পকেট থেকে চাবি বের করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দরজা খুলে ডুকে গেলো ভেতরে। পুরোনো নতুন বই খাতার গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম প্রায়। নামে রুমাল নিয়ে এগিয়ে গেল কাঙ্ক্ষিত টেবিলের দিকে। তাদের মধ্যে একজন ড্রয়ারে হাত রেখে বুঝলো ড্রয়ার তালা দেওয়া। এর চাবিও তাদের কাছে রয়েছে। চাবির গুছাটা উল্টে পাল্টে অবশেষে খুঁজে পেলো ড্রয়ারের চাবি। ড্রয়ারটা খুলতেই দেখতে পেলো বড় অক্ষরে লেখা,

বিপরীতে তুমি আমি পর্ব ৬ শেষ অংশ

” জার্নালিজম ও মিডিয়া ডিপার্টমেন্ট প্রশ্নপত্র,
ফাইনাল এক্সাম,
মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ার। ”
তিনজনের মুখেই ফুটে উঠলো পৈশাচিক হাসি।

বিপরীতে তুমি আমি পর্ব ৮