আড়ালে ভালোবাসি তোমায় পর্ব ১২

আড়ালে ভালোবাসি তোমায় পর্ব ১২
নুসাইবা জান্নাত আরহা

পরপর ঠা*টিয়ে বেশ কয়েকটা চ*ড় মে*রে বসলাম আহনাফকে….
গত দু রাত না ঘুমানোর কারণে আমার মাথাটা প্রচণ্ড ব্যা’থা করছিল, তাই মামনিকে বলে হসপিটাল থেকে আমার বাসায় চলে গেলাম আমি, ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে আবার যাব হসপিটালে।

বাসায় যেয়ে ফ্রেশ হয়ে যখনই নিজের রুমে এলাম তখনই আহনাফকে এ অসময়ে আমার রুমে বসে থাকতে দেখে কিছুটা চ’ম’কা’লা’ম আমি। সেই সাথে আমার মনে পড়ে গেল ফারিহার বলা শে’ষ কথা গুলো। মনে পড়তেই যেন ধ’প করে মাথায় আ*গু*ন জ্ব*লে উঠল আমার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমাকে দেখে মুচকি হাসল আহনাফ। আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে আহনাফ বলে উঠল
-‘ কি রে কি খবর তোর? উফ্ সরি, এখন তো আর তুই করে বলা যাবে না, আমার উডবি ওয়াইফ বলে কথা। তুমি করে বলতে হবে তো আমার। কি অবস্থা তোমার, জান? চেহারার এমন হাল হয়েছে কেন তোমার? ইসস্, কি সুন্দর চেহারাটা, একদম নষ্ট করে ফেলছো। থাক সমস্যা নেই, নো চিন্তা ডু ফূর্তি। বিয়ের পর সব ঠিক করে দিব আমি।
কথাটা বলেই বাকা হাসল আহনাফ। আহনাফের কথা শুনে আমার গা ঘি’ন’ঘি’ন করে উঠল। রা*গে আমার মাথা ফে’টে যাচ্ছে একদম।

আমার আরও কাছে এগিয়ে আসতে গেলেই আমি আমার রা*গটা আর দ’মি’য়ে রাখতে না পেরে ঠা*স ঠা*স করে চ*ড় বসিয়ে দিলাম আহনাফের গালে। রা*গা*ন্বি*ত কণ্ঠে বললাম
-‘ ল*জ্জা করে না তোর অন্যের বউয়ের দিকে খা’রা’প নজর দিতে। আবার তারই রুমে এসে বসে থাকতে? আমি অন্যের বউ হওয়া সত্ত্বেও তুই কিভাবে পারলি আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিতে? আর তারপর আবার আমায় এতো নোংরা কথা বলতে? নি*র্ল*জ্জ, বে*হা*য়া কোথাকার।

বলে আবারও বেশ কয়েকটা থা*প্প*র মারলাম ওকে। এখন আমার সামনে গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আহনাফ। মুখে কোনো কথা নেই ওর।
এদিকে রা*গে আমার সারা শরীর যেন জ্ব*লে যাচ্ছে। একটা মানুষ এতোটা নি*চ হয় কিভাবে। মানুষের ক্ষ’তি করতেও যেন এদের বুক কাপে না এদের। আর তো পড়ে রইল বিশ্বাস নিয়ে ছি’নি’মি’নি খেলা।
মুহুর্তেই আহনাফের রা*গ তরতর করে বেড়ে গেল। ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না, যে অরনিশা ওকে মেরেছে। চোখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে গালে হাত ডলতে ডলতে বলল

-‘ বেশ করেছি আমি, তোর আর রাশফিনের তো ডির্ভোস হয়ে গেছে। তাহলে তুই অন্যের বউ হলি কিভাবে?
-‘ কে বলেছে ওর সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে? আমি এখনও রাশফিনের বউ আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। সবকিছুর মুলে ফারিহা ছিল, ও-ই তো মিথ্যে না’ট’ক সাজিয়েছিল। চ*ক্রা*ন্ত করেছিল আমাদের বি’রু’দ্ধে। আর ফারিহার সাথে তুইও ছিলি।
আমার বলা শেষোক্ত কথাটি শুনে চমকালো আহনাফ। আমতা আমতা করে বলল

-‘ আ আমি মা মানে? আমি তো কিছুই জানি না রে? কি হয়েছে বল তো?
ওকে এখনও ননস্টপ মিথ্যা অভিনয় করতে দেখে, আমার মনে হচ্ছিল ওকে ধা*ক্কা দিয়ে উপর থেকে ফেলে দিই নিচে। কাটকাট কণ্ঠে বললাম

-‘ চুপ, মিথ্যাবাদী, একদম চুপ। একটা কোনো মিথ্যা বলবি না তুই। আমি সবই জানি। কম তো নাটক করলি না, এবার একটু থাম। ক্লান্ত লাগে না তোর এমন নাটক করতে আর মানুষের বিশ্বাস নিয়ে ছি’নি’মি’নি’ খেলতে?
আমার এমন কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শব্দ করে হেসে উঠল আহনাফ। আমার কাছে এসে শ’ক্ত করে চে’পে ধরল আমার হাত। দাত কিড়মিড় করে বলল

-‘ বহুত কথা বলেছিস, তুই এতোক্ষণ। এবার আমি বলবো তুই শুনবি শুধু। তুই যখন সব কিছু জেনেই গিয়েছিস, তাহলে তো আর দেরি করে কোনো লাভ নেই, চল বিয়েটা করে ফেলি আমরা। আর যদি রাশফিনকে ডিভোর্স না দিয়ে আমায় বিয়ে না করিস, তাহলে আমি রাশফিনকে মে*রে ফেলব। চোখের সামনে কি দেখতে পারবি তোর ভালোবাসার মানুষ রাশফিনের মৃ*ত্যু? তাই যদি ভালো চাস, তাহলে বিনা বাক্যে আমায় ভালোয় ভালোয় বিয়েটা করে নে, নইলে কিন্তু…

আমি চমকালাম তবে ভ’য় পাইনি একটুও। আমি থাকতে আমার রাশফিনের কিচ্ছু হতে দিব না। দরকার পড়লে নিজে ম*রে যাব আমি, তবুও রাশফিন থাকতে, আহনাফের মতো ন*র*পি*শা*চ*কে কিছুতেই বিয়ে করবো না আমি।
আমি আমার শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে ধা*ক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিই আহনাফকে। হঠাৎ এমন হওয়াতে আহনাফ তাল সামলাতে না পেরে ছিটকে দূরে সরে গেল।

আমি আশে পাশে তাকিয়ে কিছু একটা খুজতে লাগলাম। হঠাৎ টেবিলের উপর ধারালো ছু*ড়িটার উপর ন’জ’র পড়তেই তা তুলে নিলাম আমি। ছু*ড়িটা হাতে নিয়ে আহনাফের উদ্দেশ্যে বললাম
-‘ খবরদার, আমার কাছে আসার চেষ্টাও করবি না তুই। তাহলে খুব খা’রা’প হয়ে যাবে কিন্তু বলে দিলাম। আর যদি এক পা-ও এগোস আমার দিকে তাহলে হয় নিজে ম*রব , তা না হলে তোকে খু*ন করব।

আমার কথা শুনে সেখানেই স্থির দাঁড়িয়ে রইল আহনাফ। ওর কি হলো জানিনা, তবে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল
-‘ তোকে তো আমি ভালোবাসতাম, সেই ছোটবেলা থেকে। তুই-ই বল ভালোবেসে ছিলাম তোকে আমি, খুব বড় অ’ন্যা’য় করে ফেলেছি আমি এতে? ভালোবাসাটা কি সত্যিই খুব অ’ন্যা’য়?
আমি কিছু বললাম না, শুধু চুপ করে রইলাম।
আহনাফ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল

-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ আমিই ছিলাম সব কিছুর মুলে। আমিই করেছি সব। আমিই ফারিহাকে বুদ্ধি দিয়ে ছিলাম, রাশফিনের শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ পুষ করা যাতে করে তোর সাথে মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয় আর রাশফিনও ধীরে ধীরে মৃ*ত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। আর ও মা*রা গেলেই যেন তোকে বিয়েটা করতে পারি আমি।
আর হ্যাঁ, সেদিন প্ল্যান করে আমি তোকে ঘুরতে নিয়ে যাই, আর রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাই, সেইসাথে ফারিহাকে জানিয়ে দিই রাশফিনকে নিয়ে আসতে। তারপর যা হবার তা-ই হলো। তোদের মাঝে সম্পর্কের ফা’ট’ল ধরালাম আমি আর ফারিহা। প্ল্যানটাও সাকসেসফুল হয় আমাদের।

আহনাফের কথা শুনে আমি কান্না করে দিই। কাদতে কাদতে বলি
-‘ কেন করলি তুই এটা? তোর কি একবারও বুক কাপলো না, নিজের বেস্টফ্রেণ্ডের সাথে এভাবে বি*শ্বা*স*ঘা*ত*ক*তা করতে?
আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল আহনাফ। চুপ থেকে বলল

-‘ প্রথমে আমি কিছুই জানতাম না। তুই তো জানিস, আমার পৃথিবীতে একমাত্র আমার আপন বলতে আমার বাবা-ই আছে। কিন্তু সে একদিন হঠাৎ অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে, ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলে ডক্টর বলে অপারেশন না করলে বাচানো যাবে না, বাবাকে। কিন্তু অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগত। অত টাকা ছিল না আমার কাছে। তখন আমি টাকার জন্য ম*রি*য়া হয়ে উঠি। আর তখনই আমার দেখা হয় ফারিহার সাথে। ফারিহা বলেছিল আমায় সব কথা। তখন আমি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব করি।

-‘ এতোটা অধঃপতন হয়েছে তোর আহনাফ। টাকার বিনিময়ে একটা মানুষের সংসার ভাঙবি। ইভেন মানুষও খু*ন করবি তুই? আরে তোর টাকা লাগে আমায় বলতিস, তোর যত টাকা লাগে আমি দিতাম। কিন্তু তুই কি করলি এটা?
-‘ ভালোবাসার কারণে মানুষ অন্ধ হয়ে যায় রে, অরনিশা। তখন কি থেকে কি করে বসে কেউ জানে না তা। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। যখন এমন একটা সুযোগ পাই, তখন আমি আর হাত ছারা করতে চাইনি। একবার তোকে হারিয়েছিলাম, কিন্তু দ্বিতীয় বার নয়।

-‘ ছিহ্ তোর সাথে কথা বলতেই আমার ল*জ্জা করছে। তোকে আর কত বার বলবো আমি যে, ভালোবাসি না তোকে আমি। আমি তোকে বেস্টফ্রেণ্ড, আমাট ভাইয়ের ন’জ’রে দেখি।
-‘ কিন্তু আমি তো তোকে প্রথম থেকেই আমার বউয়ের ন’জ’রে দেখি।
-‘ ল*জ্জা করে না তোর? দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে দিয়ে। আর কোনো দিন আমার সামনেও আসবি না তুই।
-‘ ঠিক আছে আজ চলে যাচ্ছি। তবে আমি আবার ফিরে আসবো।
কথাটা বলেই আহনাফ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল অরনিশার দিকে। মনে মনে বলল

-‘ আমি ভালোই ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করতে পারি। আর আমি ওতটাও ভালো নই, যতটা ভালো আমায় দেখলে মনে হয়। আমি তো এর শোধ নিবোই। আমায় চ*ড় মা*রার শা*স্তি কতোটা ভয়াবহ তা তুই হাড়ে হাড়ে টের পাবি অরনিশা। বিয়ে করে তোকে নিজের করে নিতে চেয়েছিলাম তবে এবার আর তা করবো না। সারাজীবন আমার র*ক্ষিতা বানিয়ে রাখবো তোকে আমি। তুই আমায় চিনিস না। যেখানে আমার এতো উপকার করা সত্ত্বেও সামান্য আমার স্বার্থে আ*ঘাত লাগায় ফারিহাকে মা*রতেও দু বার ভাবিনি। সেখানেই তুই তো কোন ছার। তোকে তো আমি দেখে নিব। রেডি থাকিস, শা*স্তি ভো*গ করার জন্য।

আহনাফ মনে মনে ভাবতেই মুখে ফুটে উঠল রহস্যময় হাসি। আহনাফ এসব ভেবে আর এক মুহূর্তও দাড়ালো না চলে গেল নিজ গন্তব্যে।
আহনাফ চলে যেতেই আমি আমার মাথার চুল খামচে ধরে হাটু গেরে ফ্লোরে বসে কাদতে থাকলাম। জীবনে কি পা*প করেছিলাম যে এতোটা শাস্তি পেতে হচ্ছে আমায়। চোখের পানি মুছে নিয়ে মনে মনে বললাম

-‘ এখন শুধু রাশফিনের সুস্থ হবার পালা। ও শুধু সুস্থ হোক তারপর আমরা সবাইকে দেখে নিব। আমরা এক থাকলে কোনো অশুভ শক্তির পক্ষে সম্ভব না আমাদের ক্ষতি করা বা আমাদের আলাদা করা।

আড়ালে ভালোবাসি তোমায় পর্ব ১১

যারা চেয়েছিলেন আহনাফ নায়ক হোক তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা।
পরিশেষে ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং~

আড়ালে ভালোবাসি তোমায় পর্ব ১৩