বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ২২

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ২২
ইলমা বেহরোজ

বিভোর নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে আসে ধারাকে।দরজা খুলে বিভোর নত হয়ে কুর্ণিশ করে বিনয়ের সাথে ধারাকে বললো,
——“স্বাগতম রানী সাহেবা।”
ধারা লাজুক হেসে ভেতরে ঢুকে।বিভোর দরজা লাগিয়ে সোফার উপর ব্যাগ রাখে।ধারা চারপাশ দেখতে থাকে।ড্রয়িং,ডাইনিং রুম একসাথে।দুইটা বেডরুম।কিচেন অনেক বড় তবে অগোছালো।বিভোর ধারার পিছনে এসে দাঁড়ায়।ধারা ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে চমকে উঠে।বিভোর হেসে বললো,

——“বিবাহিত ব্যাচেলরের বাসা কেমন লাগলো?”
ধারা মৃদু হেসে বললো,
——“কিচেন ছাড়া সবকিছু বেশ গুছানো।আর ফ্ল্যাট দারুণ।”
বিভোর বললো,
——“ধন্যবাদ।বাসায় তো কিছু নাই।খাবার নিয়ে আসি।আর,বাজার করে আসি দুপুর আর রাতের জন্য।তুমি ফ্রেশ হও।”
ধারা অপরাধীর মতো করে বললো,
——“আমি রাঁধতে জানিনা।তবে ডিম ভাজতে পারবো।”
বিভোর বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

——“সমস্যা নাই।আমি রাঁধতে জানি।দরজা অফ করে দাও।অফ না করলেও সমস্যা নাই।কেউ আসবেনা।কড়া সিকিউরিটি আছে।”
ধারা দরজা অফ করে।আবার,ঘুরে ঘুরে ফ্ল্যাটের আনাচে-কানাচে দেখতে থাকে।কেমন অদ্ভুত শিহরণ হচ্ছে।প্রত্যেকটা আসবাবপত্র আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছে সে।বিভোরের বেডরুমে এসে ঘোর নিয়ে বিড়বিড় করে,
——“আমার সংসার!”

ধারার ঠোঁটে ফুটে আছে এক টুকরো সার্থকতার হাসি।তারপর সোফায় এসে বসলো।ভাবছে,সত্যি সে চলে এসেছে বিভোরের কাছে।এইতো গতকাল এমন সময়ও কতটা দূরত্ব ছিল দুজনের।আর আজ দুজন
কত কাছাকাছি।ভালবাসাও প্রকাশ হয়ে গেলো।ধারা ঝুঁটি খুলে চুল ছেড়ে দেয়।জ্যাকেট খুলে পাশে রাখে।গোসল সারতে ওয়াশরুমে যাবে তখন কলিং বেল বেজে উঠে।ধারা দ্রুত হেঁটে এসে দরজা খুলে।
বিভোর হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ধারা হেসে জিজ্ঞাসা করলো,

——-“এতো দ্রুত শেষ?”
ধারার পরনে ক্রিম কালার লিনেন শার্ট।প্রথম চারটা বোতাম খোলা।কলারটা পিছন দিকে ঝুলে আছে।ঘাড়ের রগ স্পষ্ট।ধারা যখন হেসে প্রশ্ন করলো তখন গেঁজ দাঁত ঝিলিক দেয়।সাথে চোখ দুটি হেসে উঠে।বিভোর মনে মনে কিছু অংশ আয়তুল কুরসি পড়ে।এরপর জোরপূর্বক হেসে দরজা লাগাতে লাগাতে বলে,
——-“দ্রুত কই।ত্রিশ মিনিট হলো।সামনেই মুরগির দোকান আছে।আর রাস্তায় তরকারির ঠেলাগাড়ি পেলাম।আলু,মুরগি,ডিম,মশলা,লেবু,টমেটো,শসা নিয়ে এসেছি।আর চালের বস্তা বাসায় আছে।পাশের রেস্টুরেন্ট থেকে বিরিয়ানির এনেছি।বিরিয়ানি খাও তো?”

——“হুম খাই।”
——“ডিম,আলু আর দেশি মোরগ খাও?”
——“হুম।”
——“তোমার চুল তো ভেজানা।গোসল করোনি?এতোটা পথ জার্নি করেছো যাও গোসল করে নাও।”
——-“তুমি করবা না?”
——-“বাথরুমে করে নিচ্ছি।তুমি বাথটবে চলে যাও।”
——“বাথটব আছে নাকি?”
——“হুম।শখ আর কি।আমার রুমে আছে।যাও।আমি এইটাই যাচ্ছি।”
——“ব্যাচেলর মানুষের রুমে এতো কিছু কেনো?”
——“আমার সব বিলাসিতা বাসস্থান নিয়েই।”
——“ফ্ল্যাট এবং ফ্ল্যাটের পেইন্টিং,জিনিষপত্র দেখেই বুঝা যায়।”

বিভোর হেসে বাথরুমে ঢুকে।ধারা কপাল কুঁচকে ফেলে।আজব,নতুন প্রেম হলো ভালবাসার কথা হবে।গোসলের আগে একবার জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে।তা না ফর্মালিটি মারাচ্ছে উনি।নিজে থেকে আগে আগে লাফাতেও ধারার ইগোতে লাগে।ফোঁসফোঁস করতে করতে ধারা গোসল শেষ করে।পরনে ট্রাউজার আর শর্ট টপস।ইচ্ছে হচ্ছে শাড়ি পরতে।কিন্তু লাগেজে শাড়ি নেই।জীবনে শাড়ি কখনো পরছে নাকি সেটাও মনে নেই তাঁর।না মনে পড়ছে,এক বছর আগে গায়ে হলুদ আর বিয়েতে শাড়ি পরেছিল।ধারা ড্রয়িংরুমে এসে দেখে,বিভোর নেই।কিচেন থেকে টুংটাং ধ্বনি আসছে।ধারা কিচেনের দরজায় এসে দাঁড়ায়।বিভোর মনোযোগ দিয়ে পেয়াজ কাটছে চাকু দিয়ে।ধূসর রংয়ের থ্রী-কোয়াটার প্যান্ট পরা।গলায় তোয়ালে ঝুলানো।বুক-পিঠ নগ্ন।ধারা সাড়া পেতে দরজায় হালকা আওয়াজ করে।বিভোর তাকায়।চোখে জল।ধারা দ্রুত এগিয়ে আসে।উৎকণ্ঠ হয়ে বলে,

——-“কাঁদছো কেনো?”
বিভোর হেসে পেয়াজ দেখায়।ধারা হাসে।বলে,
——-“প্রতিদিন তাহলে কেঁদে কেঁদেই পেয়াজ কাটেন?”
——-“আর কি করার।”
——-“বুয়া নাই?”
——“না।একবেলা রাঁধি।প্রতি শুক্রবার কাপড় ধুই।ফ্লোর মুছি।দু’তিন মাস পর আপু নয়তো আম্মা আসে।আসবাবপত্র মুছামুছি করে।বেশ চলছে……
——“বাব্বাহ!হিরো এতো কাজ করে।”
বিভোর হাসে।সেদ্ধ আলুর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
——“হিরো বলে লজ্জা দিওনা।”
——“প্রত্যেক স্ত্রীর হিরো তার হাসবেন্ড।তো তুমিও আমার হিরো।”
বিভোর ধারার চোখে দিকে তাকায়।সরাসরি কথা-বার্তা ছাড়া বিভোরের চাহনি দেখে ধারা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।এখনো এতো অস্বস্থি!ধারা ইততস্ত হয়ে বললো,

——“আলু দিয়ে কি করা হবে?”
বিভোর দৃষ্টি সরিয়ে বললো,
——“আলু ভর্তা।প্রত্যেকদিন মাছ নয়তো আলু ভর্তা আমার লাগেই।”
——“এখন কি করবে?”
——“মরিচ ভাজতে হবে।”
——“আমি করি?”
——“লাগবেনা।কাঁচা-মরিচ গরম তেলে ছাড়লে তেল ছিটকে এসে পড়ে।আবার মরিচও ফাটে।গায়ে পড়বে।তুমি বরং টিভি দেখ গিয়ে।”
ধারা চটে যায়।এই তাঁকে সংসারে নিয়ে এসেছে?হাসবেন্ডের মতো ব্যবহার না।আবার কথাবার্তায় এতো ফর্মালিটি।কখন থেকে ইচ্ছে হচ্ছে,বিভোরকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছেনা।বিভোরকে সে রোমান্টিক ভেবেছিল।ধারা কটকটে গলায় নাছোড়বান্দা হয়ে বললো,

——“না আমি ভাজবো।সরো তুমি।আমি এতোটা অকর্মা না।”
বিভোর অবাকস্বরে বললো,
——“আরে,রেগে গেছো কেনো?”
ধারা আড়চোখে তাকায়।বিভোরের ভেজা চুল কয়টা কপালে ছড়িয়ে।দেখতে বেশ লাগছে।ধারা চোখ সরিয়ে দায়সারাভাবে বললো,
——“জানিনা।”
বিভোর হেসে সরে যায়।বলে,
——“আচ্ছা ভাজো।কিন্তু সাবধানে।”
ধারা খুশিতে ডগমগ হয়ে কড়াই বসায়।বিভোর অনেকগুলো মরিচ এগিয়ে দেয়।ধারা এতো মরিচ দেখে বলে,
——“এতো মরিচ!বেশি ঝাল পছন্দ করো?”
——“হুম।”
বিভোরের সাহায্যে সাবধানে মরিচ ভাজা শেষ হয়।এরপর আবার ধারা বায়না ধরে,লেবু,শসা,টমেটো সে কাটবে।বিভোর না করে।নাছোড়বান্দা ধারা মানে না।বাধ্য হয়ে অনুমতি দেয়।ধারা মনোযোগ সহকারে কাটায় মনোযোগ দেয়।বিভোর একটু দূরত্ব নিয়ে দাঁড়ায়।ধারাকে পরখ করে।ভেজা চুল খোঁপা করে রেখেছে।বিভোর এগিয়ে এসে খোঁপা খুলে দেয়।ধারা সামান্য নড়ে উঠে।এরপর আলতো করে পেছন থেকে ধারাকে জড়িয়ে ধরে ধারার কাঁধে চিবুক রাখে।ধারার হৃদপিন্ডে দমবন্ধকর অনুভূতি ছেয়ে যায়।বিভোর বিভ্রম নিয়ে প্রশ্ন করে,

——-“এইবার হাসবেন্ড-ওয়াইফ মনে হচ্ছে?”
ধারা সচকিত হয়।তবে হেসে মাথা নাড়ায়।বিভোর ধারাকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফেরায়।ধারা চোখ নামিয়ে রেখেছে।বিভোর বললো,
——-“ভেজা চুল খোঁপা করে রাখতে নেই।”
ধারা বিভোরের চোখের দিকে তাকায়।বলে,
——-“চুল খোলা রাখতে অস্বস্থি হয়।”
——-“তাই বলে,ভেজা চুল খোঁপা করবে?এরপর থেকে যতক্ষণ না শুকাবে খোলা রাখবে।”
ধারা আল্হাদ নিয়ে বলে
——-“তুমি খেয়াল করে খোঁপা খুলে দিও।”
তারপরই চোখ নামিয়ে নেয়।বিভোর হেসে ধারার কপালে চুমু দেয়।তারপর বললো,
——-“তোমার চঞ্চলতা প্রেমে পড়ার মতো।”
ধারা উত্তরে কি বলবে খুঁজে পেলোনা।বিভোর বললো,
——-“কখন ভালবেসে ফেলেছি এই উড়নচণ্ডীকে বুঝতেই পারলামনা।”
ধারা নিশ্চুপ।বলার মতো কথা খুঁজে পাচ্ছেনা।বিভোর এভাবে খালি গায়ে তাঁকে জড়িয়ে রেখেছে।সময়টা হজম করতেই কষ্ট হচ্ছে।বিভোরের চুল থেকে শ্যাম্পুর ঘ্রাণ আসছে।দারুণ মিস্টি ঘ্রাণ। পরক্ষণেই ধারা আফসোস করে বিড়বিড় করে,

——-“দূর আমি শ্যাম্পু করলামনা ক্যান!তাইলে সুগন্ধ বাইর হইতো।”
বিভোর চোখ ছোট করে বলে,
——-“এ্যাঁ?”
ধারা পুরো কেঁপে উঠে।জিভ কামড়ে ধরে।মনে মনে কথা বলতে গিয়ে সবসময় সে মুখ ফুটে কথা বলে ফেলে।তখন বিভিন্ন জায়গায় লজ্জায় পড়তে হয়।ধারা আমতাআমতা করে বললো,
——-“স…সরুন।কাটা শেষ হয়নি।”
জোর করে সরে পড়ে বিভোরের আলিঙ্গন থেকে।বিভোর রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং রুমে আসে।এরপর জোরে হেসে উঠে।রুমে এসে টি-শার্ট পরে।বের হবার সময় ফোনের রিংটোনের আওয়াজ শুনে।বিছানার উপর ফোন দেখতে পায়।এই ফোন তো তাঁর নয়।ধারার হয়তো।বিভোর ফোন নিয়ে কিচেনে আসে।ধারাকে দেয়।স্ক্রিনে ছোট ভাইয়া নাম দেখতে পায় ধারা।হাত ধুয়ে রিসিভ করতে করতে রিংটোন থেমে যায়।এক সেকেন্ড পর আবার কল আসে।ধারা দ্রুত রিসিভ করে।

——“হ্যালো?”
ওপাশ থেকে ধারার ছোট ভাই সাকিব প্রতিউত্তরে বললো,
——“টুইংকেল পৌঁছে গেছিস ঢাকায়?”
——“হুম ভাইয়া ভোরেই।এইতো দু’দেড় ঘন্টা আগে।”
——“এখন কই আছিস?ফুফির বাড়ি না হোটেলে?ফিরবি কবে?আর বিয়ে ভেঙে গেছেরে টুইংকেল।”
ধারা বিভোবের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসে।কেমনে বলবে সে বিভোরের বাড়ি।আর সে তো আর ফিরতে চায়না।
——“টুইংকেল? ”
——“আছি ঢাকায়।ভাইয়া পরে কথা বলছি….
ধারা কল কেটে দেয়।বিভোর ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করে,
——“কি হইছে?”
ধারা প্রাণহীন গলায় বললো,
——“বিয়ে ভেঙে গেছে।ফিরতে বলছে ভাইয়া।”
——“আমার সাথে আসো।”
——“কই?”
——“আসো বলছি।”
বিভোর হাতে ধরে ধারাকে বেড রুমে নিয়ে আসে।
বিছানায় বসিয়ে পাশে বসে।তারপর ধারার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

——“তখন তোমার অবস্থা ভালো ছিলনা।তখন বুঝালে বুঝতেনা।তাই নিয়ে এসেছি ফ্ল্যাটে।তুমি বাসায় ফিরে যাও ধারা।”
ধারা চমকে উঠে।মুহূর্তে চোখে জল চলে আসে।বিভোর চোখের জল মুছে দেয়।ধারাকে বুকের সাথে মিশিয়ে বলে,
——-“তোমার বয়স বাড়লেও বাচ্চামিটা রয়ে গেছে।শুনো,এইযে চারপাশে এত এত প্রেম হচ্ছে।তার মাঝে কিছু সংখ্যক সত্যিকারের প্রেম।আর তাঁদের মধ্যে এমন কেউ নাই যারা কোনোরকম বাধা-বিপত্তি ছাড়া এক হয়েছে।আমাদের জন্য বাধা হবে আমাদের ফ্যামিলি।আমাদের সেটা জয় করে নিতে হবে।দু”পরিবার নিয়ে একসাথে থাকাটাই স্বার্থকতা।উনাদের অমান্য করে এভাবে দূরে থাকাটা অন্যায়।আমরা উনাদের বুঝাবো।লড়বো।আমর……..

——-“আমরা তো হাসবেন্ড ওয়াইফ।তো এতো কিসের বাধা।এক তো হয়েই আছি।”
——-“সেটাও ঠিক।তবে,এখন ভুলে যাও আমাদের বিয়ে হয়েছিল।আমরা দু’ফ্যামিলিকে এক করবো।তারপর অনুষ্ঠান করে বিবাহিত লাইফ শুরু করবো।তখন, কয়দিন পর পর তোমার ভাইয়েরা তোমাকে দেখতে আসবে।তোমার আম্মু-আব্বু আসবে।বিভিন্ন উৎসবে দু’ফ্যামিলি একসাথে হৈ-হুল্লোড়ে মেতে থাকবো।কত দারুণ তাইনা?ফ্যামিলির সাথে মিলেমিশে থাকায় শান্তি অন্যরকম।সুখ অন্যরকম।এখন হয়তো আবেগে সবাইকে ছেড়ে দিতে চাইছো।কিন্তু যখন কয়েকটি মাস চলে যাবে তোমার ফ্যামিলির কথা মনে হবে।বিভিন্ন উৎসবে ওদের শূন্যতা অনুভব করবা।শান্তি পাবানা কিছুতে।আবার,তোমার আব্বু নাকি পালিয়ে বিয়ে পছন্দ করেন না?তোমার ফুফিকেও মানেনি?”

——-“হুম।”
——-“তোমার আব্বু তোমার ফুফির জন্য কাঁদেন না?”
——“খুব কাঁদে।কিন্তু এতো বছরেও একবারো কথা বললোনা।”
বিভোর ধারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
——“তাহলে বুঝো।এদিকে তুমিও শান্তিতে থাকবানা।আবার তোমার বাপ-ভাইয়েরাও।ওরা কাঁদবে, তুমিও কাঁদবা।একটা দেয়াল মাঝে থাকবে।যার জন্য এক হতে পারবেনা।শান্তি আমরাও পাবোনা,আমাদের দুই ফ্যামিলিও।”
——-“আমাদের তো আগেই দু’ফ্যামিলি মিলে বিয়ে দিছে।”

——-“ধারা শুনো,আমাদের বিয়ের বয়স এক বছর সাত মাস।এই দিনগুলো আমরা আলাদা ছিলাম।দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব হয়েছে।ওরা হয়তো এই বিয়েটাকেই মানেনা।ভুলেই গেছে কখনো ওদের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হয়েছিল।আমরা যেমন নতুন করে ভালবেসেছি।তেমন নতুন করেই আবার পেতে হবে।আমরা চেষ্টা করি একবার?দু’বার? তিনবারের সময় না বুঝলে ওরা কিছু একটা করবো।কিন্তু চেষ্টা তো করতে হবে তাইনা?পরিবারকেও তো সুযোগ দেওয়া উচিৎ আমাদের মেনে নেওয়ার।”

——-“জোর করে অন্য কোথাও বিয়ে দিতে চাইলে?”
——-“সেটা সম্ভব না ধারা।আমি অত ভালো নই।বুঝিয়ে-সুঝিয়ে না পেলে।কেড়ে নিতে জানি।তুমি আগামীকাল বাড়ি যাও।আজ আমার সাথেই থাকো।এখনি কাউকে বলোনা আমার কথা।এতে ওরা রেগে যাবে।তোমাকে আটকিয়ে রাখবে।এখন বরং আমরা দু’ফ্যামিলিকে বুঝার চেষ্টা করি।তোমাদের বাড়িতে আমাদের পরিবার নিয়ে নিন্দা উঠলে তুমি থামিয়ে দিবা।সবাইকে এড়িয়ে যেতে বলবা।এমন ভাবে বলবা, যেনো না বুঝে তুমি আমাদের ফ্যামিলির সাপোর্ট করছো।আর আমার জানামতে,প্রত্যেকদিনই দু’ফ্যামিলিতে অন্যফ্যামিলিকে নিয়ে কটু কথা চলে।দুই-তিন মাস এসব কটু কথা বলা বন্ধ হলে ওদের ভেতরের রেষারেষিটা কমে আসবে।তখন আমরা আমাদের কথা বলবো।যদি না মানে কাঁদবো।রিকুয়েষ্ট করবো।তবুও যদি না মানে আমিতো আছি।আমি তোমাকে আমার করবোই।কোনো হাতের সাহস নেই তোমাকে নেওয়ার।আমাকে ভরসা করো।”

——–“কতদিন এসব চলবে?”
——-“তিন-চার মাস পর এভারেস্টের স্বপ্ন পূরণে রওনা হবো।ফিরে এসেই এক মাসের মধ্যে তোমাকে আমার সংসারের বউয়ের জায়গাটা বুঝিয়ে দিবো প্রমিজ।আর ইনশাআল্লাহ তুমি আর পরিবার দুটোই আমি টিকিয়ে রাখবো একসাথে।”
ধারা শক্ত করে বিভোরকে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বললো,
——–“এভারেস্ট যদি কেড়ে নেয় তোমাকে?”
——–“এসব ভেবোনা।যা হবার হবে।’
——–“আমিও কিন্তু যাচ্ছি।”
——-“এটা পসিবল না।সিকিমের ঠান্ডাতে তোমার যা অবস্থা হয়েছিল।এভারেস্টে কিছুটা পথ পাড়ি দিয়েই মরে যাবা।”
——-“প্লীজ রিকুয়েষ্ট।”
——“এসব বাদ।আমার ফোনে ব্যালেন্স নাই।দিশারিকে ফোন লাগাও।”
——-“কেনো?”
——-“রাতে এসে থাকতে বলো তোমার সাথে?”
——‘কেনো?”
বিভোর বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়।তারপর বলে,

——“দুজন দুজনকে ভালবাসি।দুজন এডাল্ট।তার উপর তুমি আমার জন্য হালাল।রাতে একা ফ্ল্যাটে থাকা সম্ভব না।দাম্পত্য জীবন পরিবারের মানার পর শুরু হউক।সবার দোয়া নিয়ে।দিশারিকে বলে দাও চলে আসতে।”
ধারার মেজাজ খিঁচড়ে যায়।
——-“আমি কারো সাথে বেড শেয়ার করতে পারিনা।”
——-“আচ্ছা তাহলে সায়নের সাথে আমার বেড শেয়ার করি বরং।খাওয়া হয়নি এখনো।বসো আমি বিরিয়ানি নিয়ে আসি প্লেটে করে।”
——-‘বিরিয়ানি রেখে দাও।রান্না শেষ হলেই খাই?”
——“রান্না তো সবই বাকি।এতক্ষণ খালি পেটে থাকা দরকার নেই।আসছি আমি।”

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ২১

বিভোর বেরিয়ে কিচেনে যায়।ধারা মিনিট দুয়েক রাগী মেজাজ নিয়ে বসে থাকে।একসময় রাগ কমে আসে।বিভোরের কথাগুলো ভাবে।সত্যিই তো!
ধারা মনে মনে পুলকিত হয়।ধারার মা সবসময় চাইতেন উনার মেয়ের জন্য একটা বুঝদার ছেলে।যার ব্যাক্তিত্ব হবে অসাধারণ।যে ধারাকে বুঝাতে পারবে এবং সামলাতে পারবে।বিভোর যেন তেমনি।

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ২৩