বৃষ্টি হয়ে নামো শেষ পর্ব 

বৃষ্টি হয়ে নামো শেষ পর্ব 
ইলমা বেহরোজ

বাইক চলছে বিভোরের দেওয়া গতিতে।বিভোরের পেট জড়িয়ে ধরে ধারা বসে আছে পিছনে।চারিদিক নিস্তব্ধতায় থম মেরে আছে।বাতাসে স্নিগ্ধ ঢেউ।তারার রূপালি আগুন ভরা রাত।ঝিরিঝিরি বাতাসে মোলায়েম ঝাংকারে ধারার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে।বিভোরের শার্টের প্রথম তিনটা বোতাম খোলা।শার্টের কলার বাতাসে উড়ছে।স্বপ্নের মতো একটা রাত।কেউ কোনো কথা বলছেনা শুধু উপভোগ করছে একে-অন্যের উষ্ণতা।নিঃশ্বাসের গতি।ধারার মনের হাজারটা প্রশ্নও ধামাচাপা পড়ে আছে।কারণ, সে জানে বিভোরের কাছে যুক্তিসঙ্গত উত্তর আছে।নিস্তব্ধতা কাটিয়ে বিভোর মৃদু কন্ঠে ডাকলো,

— “ধারা?”
ধারা বললো,
— “হুম?”
ধারার কন্ঠ শুনে বিভোরের মনে হলো ধারা কোনো মোহময় অনুভূতিতে তলিয়ে আছে।কি জানি বলতে চেয়েছিল ভুলে যায়।ধারা বিভোরের পিঠ থেকে মাথা তুলে বললো,
— “বললা না?”
— “ভুলে গেছি।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ধারা আর জানতে চাইলোনা।বিভোরের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে।ক্রমাগত ঝিঁঝি পোকার শব্দ কানে আসছে।শহরের রাস্তা ছেড়ে বিভোর অন্য পথ ধরেছে।হঠাৎ হঠাৎ প্যাঁচার ডাক আর শীতল বাতাসের ফিসফাস।কোথায় যাচ্ছে? কেনো যাচ্ছে? ধারা জানেনা এবং জানতেও চায়না।বিভোর পাশে আছে এইতো চলবে।ফজরের আযান কানে আসে।তখনো বাইক চলছে।একটু বাদে পূবের আকাশ লালচে হওয়া শুরু করলো।ধারা মাথা তুলে তাকায়।চাপাশে প্লাবিত হলো ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়া।নানা রঙের নানা প্রজাতির পাখি কিচির মিচির করে গাছে গাছে, ডালে ডালে উড়ে বেড়াতে লাগলো।এই আশ্চর্য সুন্দর মায়াবী ভোরের আগমনে মুহূর্তে শরীর, মন চাঙ্গা হয়ে গেলো।ধারা প্রশ্ন করলো,

—- “আমরা বোধহয় কোনো গ্রামের রাস্তায় আছি?”
স্নিগ্ধ, নীরব, শব্দহীন এই ভোরে ধারার কন্ঠ শুনে বিভোর চমকালো।এরপর জবাব দিলো,
— “হুম।”
একটা ছোট-খাটো বাজারে এসে থামে ওরা।বাইক থেকে নামে দুজন।ধারা চোখ ঘুরিয়ে চারপাশ দেখলো।সায়ন একটা টং দোকান থেকে বেরিয়ে আসে। ধারা ভারী আশ্চর্য হলো সায়নকে দেখে।সায়ন এসেই হেসে বললো,
— “তারপর?ধারাই ডাকবো নাকি ভাবি?”
ধারা হাসে।চোখ দুটিও হাসে।বললো,
— “নাম ধরেই ডেকো ভাইয়া।”
— “এটাই বেস্ট।আগে বোন আমার।তারপর ফ্রেন্ডের বউ।”
বিভোর ফোড়ন কাটে।

— “লাগেজ কই?”
ধারা চমকিয়ে তাকায়।কিসের লাগেজ?সায়ন টং দোকান থেকে ব্ল্যাক কালারের একটি লাগেজ নিয়ে আসে।বিভোর প্রশ্ন করে,
— “তারপর কোন দিক দিয়ে যাবো?”
সায়ন আঙ্গুলের ইশারায় দেখিয়ে দেয় রাস্তা আর বলে,
— “সোজা গিয়ে ডানের গলিতে ঢুকবি।কালো গেইটের ভেতরের বাড়িটাই। ”
— “আচ্ছা।চাবি দে….
সায়ন চাবি দিয়ে চলে যায়।ধারা প্রশ্ন করে,
— ” কার বাড়ি?”
— “সায়নের নানার বাপের বাড়ি।বাংলো বাড়ি বলতে পারো।উঠো।”

ধারা উঠে বসে।গলির দু’পাশে ঘন জঙ্গল।রেইন ট্রির গাছ অনেক।ছোট ছোট পাতা মাটির রাস্তায় ছড়িয়ে – ছিটিয়ে।পাখির ডাক তো রয়েছেই।মাঝে মাঝে নাম না জানা ফুল গাছ দেখা যাচ্ছে।পাঁচ মিনিটের মাথায় একটা তিন তলা পুরানো বাড়ির সামনে ওরা আসে।গেইটে তালা দেওয়া।বিভোর তালা খুলে।এরপর দুজনে ভেতরে ঢুকলো।বাড়িটা ভূতূড়ে রকমের।ধারা প্রশ্ন করলো,
— “আমরা কি পালিয়েছি?আর এখানেই থাকবো?”
ধারার কথা শুনে বিভোর ঘুরে তাকায়।বললো,
— ” না পালাইনি।পার্কে এসেছি।প্রেম করতে।”
ধারা ভ্রু কুঁচকায়।এরপর খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
— “সত্যি পালিয়েছি!”

বিভোর ইটের তৈরি বাড়িটিতে না ঢুকে পাশের ছোট্ট টিনের ঘরটিতে ঢুকে।কাঠের চকির উপর লাগেজ রাখে।এরপর বলে,
— “আমি কাপুরুষ না যে বাড়ি থেকে পালাবো।কিন্তু সত্যিই পালিয়েছি চারদিনের জন্য।”
ধারা মুখটা এমন করে যে মনে হচ্ছে তাকে কেউ খুব কঠিন অংক মুখে মুখে করতে বলেছে।খুব সহজ সরল ভাবে প্রশ্ন করে,
— “আমি না তোমার কথা বুঝতেছিনা।”
বিভোর ধারার সামনে দাঁড়ায়।ধারার দু’গালে হাত রেখে নরম কন্ঠে বললো,
— “তোমার না ইচ্ছে ছিল বর নিয়ে পালাবার?”
ধারার চোখ দু’টি গোল গোল হয়ে আসে।নিখুঁত ঠোঁট দু’টি নিজেদের আপন শক্তিতে আলাদা হয়ে যায়।বিভোর লাগেজ থেকে শার্ট বের করতে করতে বলে,

— “দুই পরিবার মিলে গেলে তো আর পালানোতে মজা থাকতো না তাইনা?তাই তার আগেই পালিয়েছি।কেমন এডভেঞ্চার এডভেঞ্চার ফিলিংস হচ্ছে।….এই আমি কিন্তু এই প্রথম পালিয়েছি।দারুণ অনুভূতি।”
কথা শেষ করেই বিভোর হাসলো।ধারা থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে।ও নিজেই ভুলে গিয়েছিল নিজের ইচ্ছের কথা।কথাটা দার্জিলিং বলেছিল সে।বিভোর মনে রেখেছে?এজন্যই কি এতোদিন আসেনি?ধারা প্রশ্ন করে,
— ” আচ্ছা গত ছয়দিন কই ছিলে?”
বিভোর স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়,

— “এলাকায়ই ছিলাম।এবং আমিও তোমার অপেক্ষায় ছিলাম,ঠিক তোমার মতোন।”
ধারার কপালের চামড়া ভাঁজ হয়,চোখ ছোট ছোট করে বলে,
— “মানে?আমিতো কিছুই বুঝতেছিনা।”
বিভোর ধারাকে চকিতে এনে বসায়।এরপর ধারার পায়ের কাছে বসে , কোলে মাথা রেখে বললো,
— “চুলে বিলি কেটে দাও বলছি।”
ধারা বিভোরের চুলের ভেতর দিয়ে হাত ঢুকাতেই বিভোরের প্রশান্তিতে চোখ বুজে আসে।এতো আপন কারো স্পর্শ কীভাবে হয়? বিভোর বলতে শুরু করে।

সেদিন,
বিভোর বাড়ি ফিরেই দেলোয়ারকে বলে ধারার কথা।দেলোয়ার রেগে যান।বার বার ধারার নামের আগে-পিছে খারাপ কিছু শব্দ ব্যবহার করতে থাকেন।ধারার দোষ সে বাড়ি থেকে পালিয়েছে।এ নিয়ে বিভোরের সাথে দেলোয়ারের ভীষণ তর্ক হয়।বাদল অবশ্য কিছুক্ষণ পরই বিভোরের সাপোর্টে চলে আসে।দেলোয়ার কিছুতেই আসতে চান না।উনি মানতে নারাজ।বার বার বলেন,
— “ওই মেয়েকে যদি চাও আমাদের ছাড়তে হবে।দুটোর একটা বেছে নিতে হবে।”

বিভোরের দুটোই দরকার।দু পক্ষকেই ভালবাসে।পরিবার – ভালবাসার মানুষ দুটিই তার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ।রাগ উঠে খুব।দেলোয়ারকে অনেক কথা শুনাতে গিয়েও পারেনি।জন্মদাতা তো।কিছু বলতে খারাপ লাগে।বিভোর কোনো উপায় না পেয়ে দেলোয়ারের পায়ের কাছে নত হয়ে হাঁটু গেড়ে বসে।আকস্মিক ঘটনায় উপস্থিত সবাই চমকে যায়।দেলোয়ারের পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠে।এমনটা সাধারণত হয়না কোথাও, যে ভালবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য কোনো ছেলে তার পিতা-মাতার পায়ের কাছে নত হয়।বিভোরের পারসোনালিটি বেশ মজবুত। নিজের ছেলেকে নিজের চেয়েও গুণী এবং সেরা মনে হয় দেলোয়ারের।বিভোর এভাবে মাথা নত হয়ে বসায় নিজেরই অস্বস্তি হতে থাকে।বিভোর ঠান্ডা ভেজা কন্ঠে আকুতি করে বলে,

— “আব্বা ধারার মতো মেয়ে হয়না।একটু পাগলি কিন্তু খুব ভালো।তোমাদের মতো করে চলবে।নিজেদের মতো করে বানাতে পারবে।একবার মেনে নেও।প্লীজ…..
বিভোর চোখ তুলে দেলোয়ারের মুখের দিকে তাকায়।বিভোরের চোখে জল।দেলোয়ারের বুক ধ্বক করে উঠলো।বিভোরকে এরকম অবস্থায় মানায় না।একদমই না।কখনো বিভোর কাঁদেনা।দেলোয়ার দ্রুত বিভোরকে তুলেন।এরপর কিছু বলতে গিয়ে বলেন না।উপরে উঠে যান।বিভোর সোফায় বসে থাকে বেশ কিছুক্ষণ।মিনিট দশেক পর দেলোয়ার নেমে আসেন।বলেন,
— ” তোরা যখন ছোট তখন থেকেই তোদের জন্য অনেক ত্যাগ করেছি।এইবার ও না হয় নিজের ইচ্ছে ত্যাগ করলাম।ওই মেয়েকে মন থেকে মানতে না পারলেও তুই যখন চাস নিয়ে আয়।তুই ভালো থাকলেই হবে আমার।”
বিভোর খুশি হতে পারলোনা।সে চায় মন থেকে মানুক।বিভোর সাবধানে প্রশ্ন করলো,

— “কি করলে মন থেকে মানতে পারবেন?”
দেলোয়ার কন্ঠ গম্ভীর রেখেই বলেন,
— “কিছু করলেই না।”
— “মানুষকে সুযোগ দিতে হয় আব্বা।”
দেলোয়ার কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকেন।এরপর বলেন,
— “তুমি পাঁচ দিন ওই মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখবেনা।সে যদি এই পাঁচদিনের মধ্যে তোমার খুঁজে আমার বাড়িতে আসার সাহস পায় তাহলে ঠিক আছে।মেনে নিবো।আর আমি জানি সে আসবেনা।কারণ, সে জানে এই বাড়ির মানুষেরা তাকে কতোটা ঘৃণা করে।”
বিভোরের বুক ভারী হয়ে আসে।এমন করে কেনো ধারাকে বলে? ঢোক গিলে বিভোর ম্লান হেসে বলে,
— “আপনি ধারাকে চিনেন না আব্বা।চারিদিকে মৃত্যু জেনেও যে মেয়ে আমাকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই মেয়ে সামান্য একটা বাড়িতে ঢোকার সাহস পাবেনা আমার খুঁজে? হাস্যকর না?”
— “এতো কথা বলার কি আছে।রাজি আছো নাকি বলো।”
বিভোর লায়লার দিকে একবার তাকায়।লায়লা চোখের ইশারায় বলেন, রাজি হতে।বিভোর রাজি হয়।

বিভোরের সব কথা শুনে ধারা বিস্ময়ে হতবিহ্বল হয়ে যায়।কোনোমতে শুধু বলে,
— “কেমনে সম্ভব?”
বিভোর ধারার চোখের দিকে তাকায়।বলে,
— “কতই অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো আমাদের এইটুকু সময়ের পরিচয়ে।এটা আর তেমন কি?”
— “আমিও সেইম সিচুয়েশনে ছিলাম কেমনে জানো? আর তোমার তো পাঁচদিন ছিল।আমার ছয়দিন।পাঁচ দিন পরই কেন আসোনি?তাহলে তো বাবাই – ভাইয়েরা এতো কথা বলতে পারতোনা।”

— “পাঁচ দিনে তুমি আসোনি।আমার বাপ হেব্বি রেগে আছে তোমার উপর।অনেক কথাও শুনিয়েছে।আর ঢাকা গিয়েছিলাম না দু’দিনের জন্য? আগে যে কোম্পানিতে ছিলাম। সেখানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল আমার দায়িত্বে ছিল।সেগুলো হারিয়ে গিয়েছে।এজন্য আমাকে পুলিশি সমস্যায় পড়তে হয়েছিলো।তখন ব্যাপারপটা পুরোপুরি সলভ করতে পারিনি।চলে আসতে হয়েছিল।শর্তের পাঁচ দিন শেষ হতেই তোমাকে কল করি।রিসিভড করোনি।এরপর দিশারিকে কল করি।দিশারি তোমার ভাবি লিয়ার মুখে শুনলো তোমার বাসার কাহিনি।দিশারি আমাকে বলে।তখন, কোম্পানির চেয়ারম্যান কল করে ঢাকা যেতে বললো একবার।ইম্পোরটেন্ট দরকার।তুমি ঠিক আছো যেনে বুক হালকা হয়।তাই ঢাকা চলে যাই।ঘন্টা দুয়েক সময় নিয়ে সমস্যা সমাধান করি।এরপর রাতের ট্রেনে আবার রাজশাহী আসি।আসার সময় সায়ন-দিশারি সাথে আসে।তখন সায়নের মুখে শুনি এই গ্রামের কথা।আর এই বাড়িটার কথা।তখনি প্ল্যান করি রাতে তোমাকে নিয়ে পালাবো।দিশারিকে বলি, তোমার জন্য ৩-৪ টা শাড়ি কিনতে।যা যা লাগে আর কি মেয়েদের।সায়নকে বলে দেই লাগেজ আর চাবি যোগাড় করে এখানে থাকতে।দুপুর থেকে তোমার বাড়ির পাশে ঘুরঘুর করি।তোমার দেখা পাওয়াই যায়না।বিকেলে দেখলাম সবাই সেজেগুজে কোথাও একটা যাচ্ছো।পিছু আসি তোমার সাথে কথা বলতে।সুযোগ পাইনি।তুমি যখন আমাকে দেখো তোমার বাটপার পুলিশ ভাইটাও আমাকে দেখে ফেলে তাই দ্রুত সরে যাই।তারপর রাতে বারান্দা দিয়ে তোমার রুমে ঢুকি।ঘুমে তখন তুমি।মনে পড়ে, তোমাকে নিয়ে নামবো কীভাবে!দড়ি ছাড়া তো সম্ভব না।তাই ঘাড়ে একটু…চুমু দিয়ে যাচ্ছিলাম দড়ি আনতে তখনি আপনি ডাক দিলেন।”

ধারা এক হাত মাথায় রাখে।বলে,
— “ও আল্লাহ!এতো কিছু ঘটে গেলো।এই…সকালে তোমার ফোন বন্ধ ছিল কেনো?”
বিভোর পকেট থেকে একটা সিম আর ফোন বের করে ধারার হাতে দেয়।ধারা দেখে ফোনটা নতুন।বিভোর বলে,
— “আগের ফোনটা রাতে ট্রেনে চুরি হলো না হারিয়ে গেলো বুঝতেছিনা।রাজশাহী এসে নতুন আরেকটা সিম নিলাম আর ফোন।”
ধারা বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে শুয়ে পড়ে।সে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।এই কয়েকটা মাসে কত কিছু ঘটে গেলো তার জীবনে।কত কিছু!
— “শুইছো কেন আবার? কাপড় চেঞ্জ করো।বের হবো।আর এইটা কি পরছো পুরা পেট নাভি হা করে রইছে।”
ধারা দ্রুত উঠে বসে লেহেঙ্গার আঁচল দিয়ে পেট ঢেকে বলে,
— “এটা লেহেঙ্গা। ”
বিভোর তেরছা ভাবে বলে,

— “আমি জানি।”
— “আর…আমি যখন পার্টিতে গিয়েছি উপরে তুলে পরেছি।এভাবে বলার কিছু নেই।”
বিভোর ধারার দিকে তাকায়।ধারা গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।বিভোর হাসলো।ধারাকে পাঁজাকোলা করে নেয়।ধারা চেঁচালোনা।সে মুখের অবস্থান অন্য দিকেই রাখলো।বিভোর গেইট পর্যন্ত এনে নামিয়ে দেয়।বলে,
— “আচ্ছা আর রাগ করে থাকতে হবেনা।আমি সরি।”
ধারা বেশ কয়েক সেকেন্ড বিভোরের দিকে তাকিয়ে থাকে তেড়চা ভাবে।এরপর মৃদু হেসে বলে,

— “চলো।”
— “কই যাচ্ছি জিজ্ঞাসা করলে না?”
— “আই নো, আমরা এখন বাজারে যাচ্ছি।খাওয়ার জন্য।”
— “কি ট্যালেন্ট!কেমনে বুঝলে?”
— “ম্যাজিক।”
বিভোর হেসে ধারাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে।দুজনে একটা ছোট হোটেলের সামনে আসে।এখানে মানসম্মত কোনো রেস্টুরেন্ট নেই।বিভোর বললো,
— “লাগেজে চাল, ডাল, আরো কি কি জানি আছে।নেক্সট থেকে রেঁধে খাবো।আপাতত, হোটেলের খিচুড়ি খেয়ে নাও।পারবা?”
ধারা মুচকি হেসে বললো,
— “আমি সব জায়গার খাবার খেতে পারি।”
বিভোর ধারার কথা শুনে সন্তুষ্ট হলো।বাজারের অনেক উৎসুক দৃষ্টি তাঁদের উপর।বিশেষ করে ধারার উপর।গায়ে এতো ভারী পাথরের লেহেঙ্গা।আবার সবার মনে হচ্ছে, এ দুজনকে তারা টিভিতে দেখেছে।খিচুড়ি খাওয়া শেষে কোথা থেকে একটা চৌদ্ধ-পনেরো বয়সী ছেলে দৌড়ে এসে বলে,

— “আপনাদের নাম মুহতাসিম আর সিদ্রাতুল না?এভারেস্ট জয় করে যে ফিরছে?”
ধারা ভারী অবাক হয়ে মাথা নাড়ায়।ছেলেটি চেঁচিয়ে ডেকে উঠে কাদের যেনো,
— ” ওই সুজন, আলিফ,আলম দেইখা যা তোরা।কারা আইছে আমরার এখানে।”
মুহূর্তে ভীড় জমে ধারা-বিভোরকে ঘিরে।উৎসুক দৃষ্টি গুলোও এতক্ষণে চিনে ফেলেছে এরা কারা।ধারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।বিভোর ঢাকায় এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল।ধারাতো বের হয়নি বাসা থেকে।তাই তার অভিজ্ঞতা হয়নি।মিনিট ত্রিশেকের মধ্যে আশে-পাশের কলেজ, স্কুল, ভার্সিটির স্টুডেন্টরাও চলে আসে।সবাই অটোগ্রাফ চাচ্ছে।ছবি তুলছে।কিছুতেই বিভোর, ধারাকে ছাড়ছেনা।অনেকে জিজ্ঞাসা করে, ওরা কোথায় এসেছে।বিভোর বলেনি।বললে এদের জ্বালায় একাকী সময় কাটানো মুশকিল হয়ে পড়বে।কথা কাটিয়ে বলে,

— “এসেছিলাম কাছাকাছিই।এখন চলে যাবো।”
ঘন্টা দুয়েক বাজারে থাকতে হয়েছে।অনেক কষ্টে সবার হাত থেকে ছুটতে পারে ওরা।বাইক নিয়ে বড় রাস্তায় উঠে আসে।এরপর অনেক ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে জঙ্গল দিয়ে বাংলো বাড়িতে ফিরে।ধারা বাকরুদ্ধ।কিছুক্ষণের মধ্যে কি হলো এটা?বিভোর ফোন চকিতে ফেলে বললো,
— “আরেকটু হলে আমার হানিমুনের বারোটা বাজতো।”
ধারা হাসতে হাসতে বললো,
— “সেলিব্রিটিরা যে কীভাবে সামাল দেয় এদের?”
বিভোর শার্টের কলার ঝাঁকি দিয়ে বলে,
— “এখন আমরাও সেলিব্রিটি। ”
ধারা হেসে বলে,
— “মনেই হয়না।”
— “আজ বিকেলে বৃষ্টি হবে।”
— “কীভাবে জানলে?আবার ম্যাজিক বইলোনা।”
বিভোর হাসে।বলে,

— “যেখানে খিচুড়ি খেলাম টিভি অন ছিল তো।শুনোনি?নিউজে বলছিলো।আর আকাশ টাও দেখো।”
ধারা উঁকি দিয়ে একবার বাইরের আকাশের দিকে তাকায়।বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে মনে হচ্ছে।বিভোর শুয়ে পড়ে।সারারাত ঘুম হয়নি।মাথা ধরেছে।ধারা লেহেঙ্গা খুলে বিভোরের টি-শার্ট আর থ্রী-কোয়ার্টার প্যান্ট পরে।এরপর বিভোরের পাশে শুয়ে পড়ে।বিভোর হাত – পায়ে ধারাকে পেঁচিয়ে চোখ বুজে।

ধারার ঘুম ভাঙে টিনের চালে বৃষ্টির টাপুরটুপুর আওয়াজে।বিভোর তখনো ঘুমে মগ্ন।ধারা ফোন অন করে সময় দেখে।বিকেল চারটা ত্রিশ।বিভোরের দিকে তাকায়।কাঁথা গায়ে কি নিষ্পাপ ভাবে ঘুমাচ্ছে।ধারা এক আঙ্গুলে বিভোরের চোখ, নাক, ঠোঁট বুক ছুঁয়ে দেয়।অনুভূতিরা বুকে ধামামা করে নাচছে।সে বিছানা থেকে নেমে লাগেজ খুলে।আকাশি রঙের সিল্কি শাড়ি আর প্রিন্টের ব্লাউজ হাতে তুলে নেয়।বিশ মিনিট সময় নিয়ে শাড়ি পরে।চুল ছেড়ে দেয়।জানালা দিয়ে হুহু করে আসা বাতাস শরীরের পশম কাঁটা কাঁটা করে দিচ্ছে। লিপিস্টিকের খুঁজে লাগেজ আবারো খুলে।লিপিস্টিক পেলোনা তবে এক জোড়া নূপুর পায়।কোমল হাতে ধীরে ধীরে পরে নেয় দু’পায়ে।এরপর ধীর পায়ে হেঁটে বেরিয়ে আসে।
নূপুর জোড়া তখন ছন্দ তুলে আওয়াজ তুলে।

সে আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় বিভোরের।বিভোরের চোখের সামনে বেরিয়ে যায় ধারা।বৃষ্টিতে নামে।আকাশ জুড়ে ঘন কালো মেঘ।থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ধারা হেঁটে কিছুটা এসে দেখতে পায় টলটলে জলের বিশাল বড় পুকুর।আদুরে উল্লাসে শরীর কেঁপে উঠে তাঁর।বিভোর দরজা থেকে উঁকি দেয়।ধারা বৃষ্টিতে ভিজছে।বিভোর শার্ট না পড়েই ধারার চোখের আড়ালে দ্রুত পাশের ইটের বাড়িটির ছাদে গিয়ে উঠে।ছাদ থেকে দূরে দেখতে পায় সায়নকে।বিভোর সায়নকে উড়ন্ত চুমু পাঠায় ধন্যবাদ হিসেবে।সায়ন চলে যায়।বিভোর রঙিন একটা পোস্টার টাঙায় ছাদের এ মাথা থেকে ওপর মাথা।এরপর ধারাকে ডাকে,

— “ধারা……
বাতাসে বৃষ্টির সুবাস ছড়িয়ে ছিল।তার ঘ্রাণ ধারা প্রাণ ভরে নিচ্ছিলো।বিভোরের কন্ঠ শুনে থমকে যায়।ঘুরে তাকায়।চোখের সামনে ভেসে উঠে ছাদের একটি পোস্টার।যেটিতে লিখা,
” তুমি চাইলে বেঁচে থাকার প্রতিটি মুহূর্তে ছুঁয়ে দেব বৃষ্টি হয়ে।একবার করো আহবান।একবার বলো, বৃষ্টি হয়ে নামো।”
ধারা বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে থাকে।বুকের ভেতর নিকষিত, বিশুদ্ধ ভালো লাগার জন্ম হয়।কানে বাজছে প্রিয় গানের সুর।শরীর জুড়ে, মন জুড়ে ক্রমাগত বেজে চলেছে অপ্রতিরোধ্য অনুভূতির তুফান।ঠোঁট দু’টি কাঁপছে।বিভোরের দৃষ্টি বড্ড অচেনা।বিভোর চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করছে ধারার আহবান শোনার জন্য।ধারার বুক কাঁপছে।সে বলতে গিয়েও পারছেনা।বিভোর বলে,

— “বলো?”
ধারা দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেলে।এরপর বলে,
— “দূর আমার লজ্জা করে।”
ধারার পাগলামি দেখে বিভোর হেসে ফেললো।ধারা আমতা আমতা করে কোনোমতে বলে,
— “আমি তোমাকে চাই।একদম…একদম তোমার মতোই….বৃষ্টির মতো করেই।”
কথা শেষ করে বিভোরের দিকে তাকায়।বিভোর তাকিয়ে ছিল।ধারা উল্টো দিকে ঘুরে তাকায়।দৌড়ে এসে পুকুরে নামে।বিভোর এমন এমন কাজ করে যে, লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে তাঁর।ধারা কতক্ষণ ঝিম মেরে পুকুরের পানিতে দাঁড়িয়ে থাকে।বৃষ্টি বেড়েছে সেই সাথে গাছ গুলো বাতাসের দাপটে দুলছে।অন্ধকার হয়ে এসেছে চারপাশ।পানিতে ডুব দেয় ধারা।এরপর উঠতেই দেখতে পায় বিভোরকে।বিভোর পুকুরের শেষ সিঁড়িতে তখন।ধারার আঁচল পানিতে।স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় মৃদু আলোয় ধারার বৃষ্টি ভেজা চুল,শরীর বিভোর -এর ভেতরের সত্ত্বাকে কাঁপিয়ে তুলে।বিভোরের সামনের চুলগুলো বৃষ্টিতে ভিজে পুরো কপাল লেপ্টে আছে।মোহনীয় মোলায়েম কোমল কন্ঠে বিভোর বলে,

— “আঁচলই সামলাতে জানোনা।আমাকে সামলাবে কি?”
ধারা লজ্জায় আবার ডুব দেয় পুকুরে।বিভোর আন্দাজে ডুব দিয়ে ধারাকে পাঁজাকোলা করে তুলে।ধারা বিভোরের গলা জড়িয়ে ধরে,বুকে মুখ লুকোয়।
বিভোর তখন আচমকা বলে,
— “এই তোমার না ইচ্ছে ছিল পানিতে চুমু খাওয়ার।”
ধারা বিভোরের বুকে কিল দিয়ে বলে,
— “হ আজই তোমার সব ইচ্ছের কথা মনে পড়তেছে।”

বিভোর শুনলোনা।গলা অব্দি জলে নেমে আসে।নিজের ওষ্ঠদ্বয় নামিয়ে আনে ধারার ওষ্ঠদ্বয়ে।চারিদিকের বাতাস, বৃষ্টি, পানিতে পড়া বৃষ্টির ছপছপ আওয়াজ সব থমকে যায়।বেশ কিছুক্ষণ পর দুজনের ওষ্ঠদ্বয় আলাদা হয়।ধারার নিঃশ্বাসের তাপ এই বৃষ্টি ভেজা ঠান্ডা পরিবেশেও বিভোরের শরীরে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিচ্ছে।ধারা চোখ তুলে তাকায়।আবেগপ্রবণ হয়ে বলে,
— “ছয়টা দিনের অপেক্ষার ফল যদি এমন হয়।এমন বিচ্ছেদ বার বার হউক।”
বিভোর ধারার নাকে নাক ঘষে বলে,
— “পাগলি।”

ধারা আরো বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে বিভোরের দিকে।লজ্জা-শরম যেনো বৃষ্টির পানি দিয়ে ধুয়ে যাচ্ছে।ধারা আচমকা আক্রমণ করে বসে বিভোরের ঠোঁটে।বিভোর ভ্যাবাচ্যাকা খায়।এরপর চুমুরত অবস্থায় উঠে আসে উপরে।ধীর পায় এগোয় টিনের ঘরে।স্বপ্নের রাত কাটাতে।
রাত তখন অনেকটা,বিভোর ধারাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে।ধারার চুল তখনো ভেজা খুব।ভেজা একটা ঘ্রাণ আসছে।টিনের চালে তখন বৃষ্টি পড়ছে জোরে জোরে।যার তীব্র আওয়াজে একাকার হয়ে যাচ্ছে দুনিয়াবি।আর দুটি মনের একটাই আকুতি বারং বারং হচ্ছে, বৃষ্টিরা ভালবাসা নিয়ে এভাবেই আসুক আজীবন!

তিন দিন পর। রাতে খাওয়া শেষে হুট করে কেউ একজন বিভোরের নাক চেপে ধরে রুমাল দিয়ে।বিভোর জ্ঞান হারায়।যখন জ্ঞান ফিরে দেখে, দিন।
আর সে একটা রাজকীয় চেয়ারে বাঁধা-অবস্থায়।বিভোর আৎকে উঠলো।সামনে তাকিয়ে দেখে, সমুদ্র।কি হচ্ছে? কোথায় সে? কীভাবে এলো? ধারা কই? ধারার কথা মনে হতেই বিভোরের বুক কেঁপে উঠে।এদিক-ওদিক তাকিয়ে চেঁচাতে থাকে।এটা তো সেন্ট মার্টিন মনে হচ্ছে।বিভোর আবারো চিৎকার করে ডেকে উঠলো,

— “ধারা,ধারা….ধারা….
কিছুটা দূরে ছোট একটি জাহাজ থামে।সেখান থেকে নেমে আসে বাদল,সামিত,সাফায়েত,সায়ন,শাফি,লায়লা,তিব্বিয়া,আজিজুর,দেলোতার,লিয়া,মাইশা সহ আরো অনেক চেনা – অচেনা মুখ।বিভোর সচকিত।সবার শেষে নামে কাঙ্খিত মুখটি।ধারা!ঠোঁটে তাঁর মিষ্টি হাসি।চোখ দু’টি জলে জ্বলজ্বল করছে।এতো খুশি কেনো ধারা? কি হয়েছে? বিয়ের সাজে কেনো?
বিভোর নিজের দিকে তাকায়।সে বরের সাজে!তখন খেয়াল হয় তার চারপাশ অদ্ভুত সুন্দর ভাবে সাজানো।বাদল বিভোরের সামনে এসে গুনগুন করে গান গাইতে থাকে।মিউজিক বেজে উঠে। বিভোরের সবটা স্বপ্নের মতো লাগছে।সায়ন বিভোরকে বাঁধন থেকে মুক্ত করে দিয়ে বলে,

— ” সারপ্রাইজ!কংগ্রাচুলেশন ব্র।”
বিভোর খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে।কিন্তু প্রকাশ করলোনা।মুহূর্তে জমজমাট হয়ে পড়ে চারপাশ।বিভোর সবচেয়ে বেশি অবাক হয় জেম্বা এবং ডেমরারকে দেখে।ডেমরার বিভোরকে জড়িয়ে ধরে কংগ্রাচুলেশন জানায়।জেম্বা যখন বিভোরকে জড়িয়ে ধরে বিভোরের বুক প্রশান্তিতে ভয়ে যায়।এই মানুষটার ঋণ শোধ করার ক্ষমতা তার নেই।সমুদ্রের এক পাশ হৈ-হুল্লোড়ে জমে উঠে।বিভোর এখনো জানেনা এতো কিছু কীভাবে, কখন হলো!বিভোর এবং ধারাকে পাশাপাশি বসানো হয়। তখন বিভোর ধারাকে প্রশ্ন করে,
— “ব্যাপারটা কি? তোমার বাপ আর আমার বাপের এমন গলায় গলায় ভাব কেমনে হলো?আর এসবই কেমনে কি?”
ধারা বললো,

— “সায়ন ভাইয়ার কাছে শুনছি,আমার বাবাই ভাবছে তুমি আমাকে ভাগিয়ে তোমার বাসায় নিয়ে গেছো।তাই ঝগড়া করতে তোমার বাড়িতে গিয়েছিল।দেখো সবার হাতে – পায়ে, মাথায় একটু আধটু ব্যান্ডেজ।তখন পুলিশ এসে ধরে।আমার বাপ – ভাই আর তোমার বাপ – ভাইকে।পুলিশ কমিশনার আসে।ওদের সমস্যা কি জানতে।সবসময় কেনো এরকম করে সম্মানিত লোক হয়েও।তখন আমার বাবাই সব বলে, তোমার বাবাও।দুই পক্ষই জানতে পারে দোষ কারোর নাই।অদ্ভুত ভাবে শর্ত মিলে গেছে।আর আমরাও কেউ নিজেদের বাড়িতে নাই।তখন তোমার আম্মু কান্নাকাটি করেন।তুমি নাকি চলে গেছো, আর আসবানা।তোমার আব্বুকে দোষারোপ করে।বাধ্য হয়ে তোমার আব্বু বাবাইকে সরি বলে।মেয়র আসে, লিয়া ভাবির আব্বু আসে, আর পুলিশ কমিশনার সবাই মিলে ব্যাপারটা মিটমাট করে।এরপর সায়ন ভাইয়াকে ধরে আমাদের খুঁজ বের করে।গতকাল বিকেলে সায়ন ভাইয়া কল করে বলে, তোমাকে রাতে কিডন্যাপ করবে।তারপর বিয়ে।ওরা সব এরেঞ্জ করেছে।আর সেন্ট মার্টিন সমুদ্রের পাড়ে বিয়ের প্ল্যান টা ডেমরারের।ডেমরার দু’দিন আগে আমাদের সাথে দেখা করতে আসছে।এসে এসব শুনে।বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অজ্ঞান করে কিডন্যাপ করতে রাজি হই নাই।দ্যান,সারপ্রাইজড হবা ভেবে রাজি হইছি।”

বিভোর বেশ কিছুক্ষণ হা হয়ে থাকে।দূরে তাকিয়ে দেখে, বাদল আর সাফায়েত কাপল ডান্স করছে।শেখ এবং সৈয়দ মশাই একজন আরেকজনকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে।এই দুনিয়ায় ছেলে-মেয়ে ছাড়া আর কিছু দেখার নেই তাঁর।বিভোর ধারাকে প্রশ্ন করে,
— “আচ্ছা এইযে আমার জামা-কাপড় কে চেঞ্জ করছে? অন্য কেউ না তো?”
— “আমিই করছি।”
— “থ্যাংকিউ।এজন্য বাসর রাতে ডাবল ডোজ ভালবাসা দেবো।দশ মাস পর…..
ধারা হেসে অন্যদিকে তাকিয়েই বলে,
— ” দূরও….যাও।

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৫৪

আওয়াজ তুলে একটা হেলিকপ্টার এসে থামে।সেখান থেকে নেমে আসে সাংবাদিকেরা।দৌড়ে আসে বিভোর – ধারার দিকে।বিভোর মাথা নিচু করে ধারাকে বলে,
— “এইযে এলো।এরা মনে হয় আমার বাসর রাত ও লাইভে সারা বাংলাদেশকে দেখাবে….শিট!

( লেখাঃইলমা বেহরোজ ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ১,৩ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন