প্রজাপতি আমরা দুজন গল্পের লিংক || ইলমা বেহরোজ

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ১
ইলমা বেহরোজ

চৈত্র মাস।আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার।তবে গরম পড়েছে খুব।তিতলি ঘেমে একাকার।উড়নার এক পাশ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে কলিং বেল চাপে।টুকি দরজা খুলে। তিতলিকে দেখে সালাম দেয়।তিতলি সালামের জবাব দিয়ে দরজা বন্ধ করে টুকির রুমে আসে।সোফায় বসে।সামনে বসে টুকি।টুকি ঝটপট করে প্রশ্ন করে,
— “ম্যাম,আপনাকে আমার আব্বুর মতো কেউ আদর করে?”
টুকির কথা বুঝতে না পেরে তিতলি সরু চোখে তাকায়।বললো,
— ”মানে?”
টুকি চোখে-মুখে দুস্টু হাসির দীর্ঘ রেখা এঁকে ফিসফিস করে বললো,

— “আব্বু বাইরে থেকে এসেই আম্মুর কপালে পাপ্পা দেয়।যখন আম্মু রান্না করে আব্বু আম্মুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।আম্মু বকা দিলেও ছাড়েনা।এটা নাকি আদর!”
তিতলির হেঁচকি উঠলো।গলায় হুট করে ঝাল ঝাল অনুভব হচ্ছে।সামনে রাখা পানির গ্লাসটি হাতে নিয়ে ঢক-ঢক করে রুদ্ধশ্বাসে পানি খেয়ে শান্ত হয়।বড় বড় চোখ দুটি পানিতে ভিজে টুইটুম্বুর!তিতলির অবস্থা দেখে টুকির হাসি-খুশি মুখটায় বিষণ্ণতা নামে।তিতলি টুকির মুখের দিকে তাকায়।টুকি ঠোঁট ভেঙ্গে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।আদর নিয়ে তিতলি আলতো করে হাত বুলায় টুকির মাথায়।এরপর আদুরে গলায় বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— “কি হইছে টুকি?”
কেঁদে আহ্লাদী কন্ঠে টুকি বললো,
— “আপনার চোখে পানি কেনো?আপনি কাঁদছেন কেনো?”
তিতলি মৃদু হেসে বললো,
— “ওসব কিছুনা।আচ্ছা আমাকে বলোতো এটা যে আদর তোমাকে কে বললো?”
টুকির মুখটা মুহূর্তে ঝিলিক দিয়ে উঠলো।এদিক ওদিক তাকিয়ে চারপাশটা দেখে নেয়।এরপর তিতলিকে ফিসফিস করে বললো,
— “দাদু।”
তিতলি হালকা করে হাসলো।দাদিগুলো এরকমই হয়।ছোট-বড় বুঝেনা।ঝাপসা জিজ্ঞাসা করলে খোলাখুলি সব বলে দিতে প্রস্তুত।তিতলির মনে পড়ে নিজের দাদুর কথা।সে দাদুকে আদর করে দাদুনি ডাকতো।শৈশবের কত-শত সুন্দর মুহূর্ত দাদুকে নিয়ে।যখন তিতলির ছয় বছর তখন দাদু মারা যান।তিতলির জীবন থেকে খুব দ্রুত কাছের মানুষেরা সরে যায়!খুব….দ্রুত!
চোখের কোণা বেয়ে পড়া জল মুছে তিতলি বললো,

— “ওসব বড়দের ব্যাপার। তোমাকে এতো ঘাটতে হবেনা।গতকাল যে অংকটা করিয়েছি।আজ আবার আমরা করব।”
পড়ার কথা শুনে টুকির মুখে গহীন বনের আঁধার নেমে আসে।পুরো নাম তানযিরা ইসলাম টুকি।স্কুলে পড়ে।ক্লাস ওয়ানে।তিতলি তিন মাস যাবৎ টুকিকে পড়াচ্ছে।মেয়েটা প্রতিদিন এতো অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন করে যে তিতলি বিরক্ত হওয়ার সাথে আনন্দও পায়।
টুকি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
— ”ম্যাম আজ পড়বনা।”
তিতলি বই থেকে চোখ সরিয়ে টুকির দিকে তাকায়। বললো,
— “পড়তে তো হবেই টুকি।পড়া শেষে আমরা অনেক গল্প করব ঠিকাছে?”
টুকি অনিচ্ছাকৃত মাথা কাত করে সম্মতি দেয়।

এক ঘন্টা পর।টুকি বললো,
— “ম্যাম পড়া তো শেষ।এবার বলেন আমার আব্বুর মতো কেউ আপনাকে আদর করে?”
তিতলি অনেকটা বিরক্ত হয়।এতোটুকু বাচ্চা কিসব বলছে।কপালে কুঞ্চিত রেখা এঁকে তিতলি বললো,
— “না আম্মু।আমাকে কেউ আদর করেনা।আর এসব বড়দের ব্যাপার।এতো ঘাটাঘাটি করোনা।কেমন?”
টুকি যেনো একটু অসন্তুষ্ট হলো।তিতলি বই গুছিয়ে রাখে।ভ্যানিটিব্যাগ হাতে নিয়ে বললো,
— “আচ্ছা টুকি আমি আজ যাই।তোমার ছুটি।”
— “আসসালামু আলাইকুম ম্যাম।”
তিতলি টুকির মাথায় হাত রেখে হেসে বললো,
— “অলাইকুম আসসালাম। ”
তিতলি মেইন ডোর পেরিয়ে বের হওয়ার পথে টুকির আম্মু আঁখি ডাকলো।তিতলি ঘুরে দাঁড়ায়।মৃদু হেসে বললো,
— “জ্বি আপু।”
আঁখি বললো,
— “সিলেট থেকে আমার ননদ আসছে তার জামাইকে নিয়ে।সিলেটের চাপাতি নিয়ে আসছে।অসাধারণ স্বাদ।খেয়ে যাও এক কাপ চা।”
সিলেট শব্দটা বজ্রপাতের মতো আঘাত হানে তিতলির মস্তিষ্কে!মেরুদণ্ড বরাবর ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়।নিজেকে কোনোভাবে সামলে বললো,
— “শরীরটা ভালো না আপু।আজ আসি।আরেকদিন চা আড্ডা হবে।”
আঁখি মন খারাপ করে বললো,
— “আচ্ছা আসো তাহলে।”
— “আসছি।”

অতীত।
শান্তি নীড় বাড়ির চৌধুরী পরিবার ডাইনিংরুমে টেবিলে বসে দুপুরের লাঞ্চ করছে।খাওয়ার ফাঁকে এক-দু’টো কথাবার্তা হচ্ছে।নেক্সট সপ্তাহে ফ্যামিলি ট্যুরে যাওয়া হবে।তা নিয়েই ইদানীং যত কথা।যত প্রস্তুতি।বাড়ির কর্তী আঞ্জুমান চৌধুরী খাওয়া শেষে দুই ছেলের উদ্দেশ্যে বলেন,
— “তোদের দুজনের মধ্যে কে ফ্রি আছিস বিকেলে?”
নির্জনের বিকেলে ডেটিং আছে গার্লফ্রেন্ডের সাথে।তাই সে আগে আগে ঝট করে বললো,
— “আজ ফ্রি নেই আমি।”
কপালের চামড়া ভাঁজ করে আঞ্জুমান বলেন,
— “তুই কবে ফ্রি থাকিস?”
নির্জন জবাবে নিশ্চুপ।উত্তর না দেওয়াই মঙ্গল মনে হচ্ছে।এমনিতেই ফ্রি নেই বলেছে।জবাব দিলে একটা থাপ্পড়ও মাটিতে পড়বেনা।সব পড়বে তাঁর নিজের গালে।কে নিজের ইচ্ছায় মার খেতে চায়?
নিঝুমকে চুপ থাকতে দেখে আঞ্জুমান হতাশভঙ্গিতে বললেন,

— “তুই ও ফ্রি নাই?”
নিঝুম বাম হাতে চশমা ঠিক করে বললো,
— “কি কাজ সেটা বলো।”
আঞ্জুমান খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠেন।বলেন,
— “তোর আব্বুর বন্ধুকে তো চিনিস?ওইযে গ্রামের শাহেদ চাচ্চু তোর।চিনিস তো?মনে আছে?”
— “হুম।গ্রামে প্রাইমারি স্কুলে যখন পড়তাম তখন শাহেদ চাচ্চু বাংলা শিক্ষক ছিলেন।”
খুশিতে গদগদ হয়ে আঞ্জুমান বলেন,
— “আব্বার তাহলে মনে আছে।”
নিঝুম মৃদু হেসে শান্ত কন্ঠে বললো,
— “মনে থাকবেনা কেনো আম্মু।কত ভালবাসতেন উনি আমাকে।করতে হবে কি সেটা বলো।”
আঞ্জুমান ধীরেসুস্থে বলেন,
—- “শাহেদ ভাইজানের একটা মেয়ে আছে।ওরে নিয়াই ক…
আঞ্জুমানের কথা কেড়ে নিয়ে মৌনতা উল্লাসে বললো,

— “তিথিয়ার কথা বলছো?গ্রামে গেলেই ওর সাথে খেলতাম।এবার তো মনে হয় অনার্স ২য় বর্ষে পড়ছে তাইনা আম্মু?”
আঞ্জুমান রেগে যান।ভ্রু দু’টি তীক্ষ্ণ হয়ে বেঁকে যায়। সবসময় কথার মাঝে তার দুই মেয়ের একটা না একটা ঢুকবেই।গলায় তেজ নিয়ে মেয়েকে ধমকে বলেন,
— “তোদের দু’বোনকে আর কতদিন বলবো? বড়দের কথার মাঝে ঢুকবিনা।”
মোহনা টেবিল ছেড়ে উঠে যাচ্ছিলো।মায়ের কথা শুনে দাঁড়ায়।তির্যক ভাবে তাকায় আর বললো,
— ”মা এটা ঠিক না।মৌন তোমার কথার মাঝে ঢুকছে।আর বকার সময় সাথে আমার নামটাও ঢুকাও।”
— “তোর নাম আমি একবারো উল্লেখ করছি?আর যদি বকে থাকি তো বেশ করেছি।”
আঞ্জুমানের দৃঢ় কন্ঠ।
মোহনা আলতাফ চৌধুরীর দিকে তাকায়।আহ্লাদিত হয়ে ভেজা কন্ঠে অভিযোগ করে,
— “আব্বু দেখছো আম্মুকে?”
আলতাফ চৌধুরী আঞ্জুমানের দিকে তাকান বকা দিতে।দেখেন আঞ্জুমান সরু চোখে তাকিয়ে আছে।আলতাফ চৌধুরী খ্যাঁক করে গলা পরিষ্কার করে উল্টে মেয়েকে বলেন,

— “থাক মামনি বাদ দাও।আম্মুরা বকেই।”
দু’বোনের মুখ হা হয়ে যায়।সুক্ষ্ম চোখে সবাইকে একবার পরখ করে নেয়।এরপর পায়ে গটগট আওয়াজ তুলে নিজেদের রুমের দিকে যায়।
নির্জন বেরিয়ে যায়।আলতাফ চৌধুরী রুমের দিকে পা বাড়ান।নিঝুম আঞ্জুমানকে জিজ্ঞাসা করে,
— “কি যেনো বলছিলে আম্মু? কি কাজ?”
আঞ্জুমান আর্তনাদ করে বললেন,
— “ও আল্লাহ।দেখছিস!ভুলেই গেছিলাম কথায় কথায়।তোর শাহেদ চাচার ছোট মেয়ে এবার এইচএসসি দিলো।ভার্সিটি ভর্তি এক্সামের জন্য সিলেট আসতে চায়।”
— “কেনো?কুমিল্লায় ভার্সিটি নাই?”
— “আছে।আসলে মেয়েটা খুব সুন্দর।কিছু বাজে ছেলের খবলে পড়ছে।ওইখানে থাকা মেয়েটার জন্য সমস্যা।ওর আব্বার তো কুমিল্লার দূরে কোথাও বিশ্বাসী কেউ নাই চেনা-জানা।একমাত্র সিলেট আমারাই আছি।তাই সিলেট আমাদের কাছে পাঠাতে চাইছে।এক -দুমাস থাকবে।পরে সব রেডি করে হোস্টেলে উঠে যাবে।”

— “আচ্ছা তো আমাকে কি করতে হবে?”
— “মেয়েটা একা রওনা দিছে সকালেই।বিকেল ৫ টায় সিলেট রেল ষ্টেশনে পৌঁছে যাবে।আমাদের বাসাতো চিনেনা।বয়স কম।হারিয়ে যাবে।একটু নিয়ে আসতি যদি।” আঞ্জুমানের কন্ঠে অনুরোধ।
— “আচ্ছা দেখবো।নাম কি? ”
— “কার?”
— “যাকে আনতে যেতে হবে।”
— ”তিতলি।পুরো নাম মুমতাহিনা তিতলি।”
— “আচ্ছা যাবো।”

প্রায় মিনিট বিশেক হলো তিতলি সিলেট রেল ষ্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে।কেউ একজন নিতে আসবে শুনেছিল।কিন্তু কেউতো আসছেনা।প্রচুর গরম তার উপর বোরখা পরা।শরীর ঘেমে একাকার।মাথাটা ব্যাথা করছে।এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখছে কেউ আসছে নাকি।আসলেও চিনবে কীভাবে?দূর ভালো লাগে না।
— “এক্সকিউজমি?”
পুরুষ কন্ঠটি অনুসরণ করে তিতলি পিছন ফিরে তাকায়।কালো শার্ট ইন করে পরা একজন সুদর্শন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে।ঠোঁটে মৃদু হাসি আঁকা।দ্বিধা নিয়ে তিতলি বললো,
— “জ্বি কিছু বলবেন?”
— “তুমি মুমতাহিনা তিতলি?”
অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে তিতলি।কেউ এসে তার নাম বলে ফেললো।ব্যাপারটা কেমন ঠেকছে!শুকনো গলায় তিতলি বললো,
— “জ্বি।”
ঠোঁটে হাসি রেখেই বললো নিঝুম,
— “চলো।”
তিতলি থতমত খেয়ে যায়।আমতা আমতা করে বললো,

— “ক..ক..কই?”
তিতলির চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ।তা দেখে
নিঝুম নিঃশব্দভাবে এক দফা হাসলো।তিতলি খেয়াল করে,হাসলে ভদ্রলোকের গালে গর্ত হয়।টোল!নিঝুম স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
— “তোমার ফুফি।আই মিন মিসেস আঞ্জুমান চৌধুরীর ছেলে আমি।উনি পাঠিয়েছেন তোমাকে নিয়ে যেতে।”
ভয়টা কেটে তিতলির ঠোঁটে হাসি ফুটলো।অপরাধী মুখ করে বললো,
— “ওহ।ভাইয়া।আসলে আমি আগে কখনো দেখিনি তো আপনাকে তাই চিনতে পারিনি।”
— “আমিও তোমাকে আগে কখনো দেখিনি।দেখলেও মনে নেই।কিন্তু আজ ঠিকই চিনতে পেরেছি।”
— “কি করে?”
কৌতূহল বশে জিজ্ঞাসা করলো তিতলি।
নিঝুম হেসে বললো,

— “ম্যাজিক।”
কথা শেষ করে নিঝুম আবার হাসলো।তিতলি নিঝুমের হাসি দেখে চমকিত হয়।ভদ্রলোকের কি চমৎকার করে হাসার ব্যামো আছে?
নতজানু হয়ে তিতলি ছোট করে উত্তর দেয়,
— “ওহ।”
নিঝুম হাতঘড়ি দেখে বললো,
— “কিছুক্ষণ পরেই সন্ধ্যা।চলো।”
— “জ্বি ভাইয়া।”
— “ব্যাগটা আমার হাতে দাও?”
— “না না ভাইয়া।আমি পারবো।”
— “আরে দাও তো।বাচ্চা মেয়ে পারবানা।”
বাধ্য হয়ে তিতলি ব্যাগের দায়িত্ব নিঝুমকে দেয়।

নিঝুম অন্য সময় ফ্যামিলি কার ব্যবহার করে।আজ নির্জন কখন গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে নিঝুম জানেনা।তাই গাড়ি ছাড়াই তিতলিকে নিতে আসতে হলো।
নিঝুম সিএনজি রিজার্ভ করে।কিন্তু বিপদে পড়ে একটা বাজারে এসে।প্রচুর জ্যাম!তার উপর অনেক গরম।সিএনজি তে দম বন্ধ হয়ে আসছে তিতলির।জ্যামে আটকে আছে প্রায় ত্রিশ-চল্লিশ মিনিটের মতোন।নিঝুম তিতলিকে খেয়াল করে।মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে কষ্ট হচ্ছে ।নিঝুম পানি এগিয়ে দেয়।তিতলি পানি খেয়ে বললো,
— “ভাইয়া সিএনজি তে বসে না থেকে আমরা বরং হাঁটি?”
— “হাঁটলেও তো জ্যাম পাবে তিতলি।দেখো ফুটপাত গুলো কত মানুষ!”
— ”ভাইয়া প্লীজ।অনেক্ষণ হয়েছে।আর বসে থাকতে পারছিনা।’

সত্যি তিতলির অবস্থা নাজেহাল।ঘন সুতার কাজের থ্রি-পিস পরা।উপরে বোরখা।মাথা উড়নায় প্যাঁচানো। জ্যাম,গরম সব মিলিয়ে অসহায় লাগছে। নিঝুম বাধ্য হয়ে সিএনজির ভাড়া মিটিয়ে ফুটপাতের রাস্তা ধরে।পিছু পিছু হাঁটছে তিতলি।অনেক ভীড়।ভীড়ের আড়ালে নিঝুমের চোখে পড়ে একটা মেয়ের বুকে একজন বয়স্ক লোক তার কনুই দিয়ে ছুঁয়ে দিতে চাইছে।এবং লোকটি সফল হয়।কি সাংঘাতিক!নিঝুম লোকটাকে ধরতে পা বাড়ায়।তাঁর আগেই ভীরের মাঝে অমানুষটা হারিয়ে যায়।
— “ভা..ভাইয়া?” কাঁপা গলায় ডাকলো তিতলি।
নিঝুম তিতলির দিকে তাকায়।তিতলির চোখে মুখে বিভ্রান্তি।কেমন হাত গুটিয়ে হাঁটছে।তিতলি থমথমে গলায় বললো,
— “ভাইয়া।লোকগুলো ধাক্কাচ্ছে খুব।”
নিঝুম চারিদিকটায় চোখ বুলায়।প্রায় সবই পুরুষ।এর মাঝে কালো হাতের অভাব নেই।আরেকটু সামনে গেলে রিক্সা পাওয়া যাবে।এই জায়গাটুকু তিতলিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।একজন পুরুষ হয়ে এটা তাঁর কর্তব্য।দ্বিধা ছাড়া খোলামনে নিঝুম জিজ্ঞাসা করলো,

— “তিতলি আমি তোমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে হাঁটি?তাহলে কেউ ছুঁতে পারবেনা।সেইফ থাকবে!”
তিতলি কয়েক মিনিটে অনেক ঘাবড়ে গেছে।ভীরের মাঝে পিঠে দু’তিনটি চিমটি দিয়েছে কেউ।জ্বলছে খুব।বার বার নিজেকে নিজে শাসাচ্ছে তিতলি।এরচেয়ে সিএনজিতে গরমে বসে থাকা উত্তম ছিল।নিঝুমের এমন একটা প্রস্তাব তিতলির জন্য দরকার ছিলো এই মুহূর্তে।তাই কোনো সংকোচ ছাড়া নিঝুমকে সম্মতি দেয়।নিঝুম এক হাতের বাহুডরে তিতলিকে টেনে আনে।তিতলির পিঠের উপর দিয়ে নিঝুম হাত পেঁচাতেই তিতলির পা থেকে মাথার চুল অব্দি কম্পিত হয়ে নড়ে উঠে।

বিপদে পড়ে কোনো পুরুষের সংস্পর্শে আসতে হলেও কেমন একটা ভয়ংকর অনুভূতি হচ্ছে তাঁর।এর আগে পাড়ার বখাটে রায়হান অনেকবার জোর করে হাতে ধরেছে তখন তো এমন ভালো লাগার অনুভূতি তিতলির হয়নি।তাহলে এখন কেনো হচ্ছে?হৃদপিণ্ড চলছে দ্রুত গতিতে।তিতলি নিঝুমের বুক অব্দি লম্বায়।তিতলির মনের কুঠরীতে বসবাস করা বন্দি মনটা কোকিলা সুরে গান গেয়ে উঠলো।কতগুলো লোক ধাক্কাধাক্কি করছিলো।লোকগুলোর পাশ কেটে যাবার পথে নিঝুম আরো গভীর ভাবে তিতলিকে টেনে নেয় বুকের মাঝে।যা সইতে পারেনি তিতলির আঠারোবয়সী মন।এক অদৃশ্য ভালো লাগার অনুভূতিতে সে তলিয়ে যায়।নিজের অজান্তে তিতলির মন নিজের নিয়ন্ত্রনের বাইরে যেন চলে যাচ্ছে।মনের প্রেমকুঠুরীর দরজায় কড়া নাড়ছে রং বেরংয়ের ভালবাসার প্রজাপতি!তিতলি একবার হাত বাড়িয়ে দরজাটা খুলে দেওয়ার অপেক্ষায়….

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ২