প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ২

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ২
ইলমা বেহরোজ

একই রকম দুজন মেয়েকে দেখে তিতলি ভারি অবাক হলো।চোখ বুজে আবার খুলে।না ঠিকই দেখছে!এরা জমজ!মৌনতা-মোহনা এগিয়ে আসে তিতলির কাছে।তিতলি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছে জমজ দু’বোনকে।কি ভয়ংকর সুন্দর মেয়ে দু’টি।
তিতলির গাল টেনে মৌনতা বললো,

— “কি মিষ্টি মেয়েরে মোহ।”
আঞ্জুমান হেসে বললেন,
— “একদম মায়ের মতো হইছে দেখতে।”
মোহনা তিতলির দু’হাত নিজের দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
— “নাম কি তোমার?”
তিতলি মা-মেয়েদের কথায় লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে।অস্বস্তি লাগছে খুব।কেমন কাঁপাকাপি হচ্ছে শরীরে।নিজের নাম বেমালুম ভুলে গেছে।নতজানু হয়ে কাঁপা স্বরে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— “তি..তিতলি!মুমতাহিনা তিতলি।”
মৌনতার উৎকন্ঠা,
— “তিতলি তুমি কি ভয় পাচ্ছো?কাঁপছো কেনো?”
খোদা!কি লজ্জা!কাঁপাকাঁপি দেখে ফেললো।কি ভাবছে ওরা কে জানে?তিতলি আরো অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।লজ্জাজনক অস্বস্তি ভর করে।কখনো বাবাকে ছাড়া কোথাও থাকেনি।তেমন কারোর সাথে মিশেওনি।সবসময় একা থেকেছে।এখানে এসে ভাবনার বাইরে কত কি হচ্ছ।কত অচেনা মানুষ।তিতলি গোপনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে।কোমল কন্ঠে বললো,

— “না না আপু। ঠিক আছি।”
মৌনতা একটু জোর দিয়ে বললো,
— “আরে না না।একটু আগেই দেখলাম তোমার হাত কাঁপছে।”
নিঝুম বাড়ি ঢুকেই ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসেছিলো।মৌনতার কথা শুনে এগিয়ে আসে।
— “প্রথম প্রথম আসছে।নতুন পরিবেশ।নতুন মানুষ! একটু তো নার্ভাস হবেই।আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।’ রয়ে সয়ে বলল নিঝুম।
আঞ্জুমান ছেলের সাথে তাল মিলান,

— “হুম সেটা কি তোর বোনেরা বুঝবে।ওদের ইচ্ছে নতুন কেউ এসেই ওদের মতো লাফাতে শুরু করুক।”
মোহনা আর্তনাদের ভান করে বললো,
— “মা…..মৌনর জন্য এখন আমাকেও বকছো।’
— ” তোর নাম কি উল্লেখ করেছি?”
— ” ভাইয়াকে ‘তোর বোনেরা’ বলছো।মানে ভাইয়ার বোনেরা তো আমি আর মৌন।তো বুঝাই যায় আমাকে বকছো।”
আঞ্জুমানের মুখে চাপা হাসি।হাসি লুকিয়ে বলেন,
— “বেশ করেছি।”
মোহনা কান্নার ভান করে নিঝুমের কাছে আসে।
নিঝুম মোহনাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললো,

— “কাঁদে না।’
এরপর মা’কে উদ্দেশ্য করে বললো,
— “আম্মু তুমি মৌনের জন্য মোহকে আর বকবেনা!”
আবার মোহনাকে বলে আদুরে গলায়,
— “এবার হ্যাপি ?মা’কে বলে দিয়েছি।আর বকবেনা।”
মোহনা মাথা নাড়িয়ে হাসে।নিখুঁত চিকন ঠোঁটে মোহনা যখন হাসে খুব বেশি মিষ্টি দেখায়।আর নিঝুম সবসময় বোনদের এই হাসিটুকুই দেখতে চায়।মিষ্টি হাসির উত্তরে মোহনার কপালে চুমু এঁকে দেয় নিঝুম।মৌনতা ছলছল চোখে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে আছে।নিঝুমের নজরে পড়ে!হাত বাড়িয়ে নিঝুম ডাকে,

— “আয়?”
মৌনতা এগিয়ে আসে।অভিমানী স্বরে বললো,
— “সবসময় প্রথম ওরে ভালবাসো।”
নিঝুম মৌনতার কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— “কে বললো সবসময় ওরে আগে ভালবাসা দেই? গতকাল রাতে চকলেট কিন্তু তোকে দিয়েছি আগে।’
মৌনতা হেসে বলল,
— ”কচু!”
নিঝুম হেসে দু’জমজ বোনকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে।

মিসেস আঞ্জুমানের প্রাণ জুড়ায় ভাই-বোনদের এই ভালবাসা দেখে।নিঝুম – নির্জনের কলিজার টুকরা তাদের ছোট বোনগুলো।তিতলির বুকে একরাশ মুগ্ধতা কামড়ে ধরে!তাঁর একটা পোড়া,অল্প বয়সী মন আছে।যে মন বাবার ভালবাসা ছাড়া আর কারো ভালবাসা পায়নি।আঞ্জুমান হুট করে খেয়াল করেন তিতলিকে।ছেলে-মেয়ের কথার মাঝে ওর কথা ভুলে গিয়েছেন।সোফায় রাখা তিতলির ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো,
— “দেখছো কারবারটা!আমরা নিজেদের মতো কথা বলছি।এইখানে একটা মেয়ে কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে।সারাদিন জার্নি করছে কিছু খায়নি।এই মেয়ে চলো আমার সাথে।”
তিতলি মাথা নাড়িয়ে মিসেস আঞ্জুমানের পিছু হাঁটে।একবার নিষিদ্ধ কোনো টানে পিছন ফিরে তাকায়।নিঝুমের দিকে!নিঝুম বোনদের সাথে কথা বলছে সেই সাথে ঠোঁটে সেই চমৎকার হাসি।
তিতলির হৃদপিন্ড ধুকধুক করে উঠে।দ্রুত চোখ সরিয়ে নিজেকে নিজে বুঝায়,
— “এমন করিস না তিতলি।পর পুরুষকে এভাবে দেখতে নেই।কালি লেগে যাবে চরিত্রে।”

শুক্রবার হওয়ায় বাড়ির সবাই আজ বাসায়।আলতাফ চৌধুরী ড্রয়িংরুমে বসে পত্রিকা পড়ছেন।মৌনতা,মোহনা,তিতলি, আঞ্জুমান,কাজের মেয়ে টুনি একসাথে আড্ডা দিচ্ছে।আড্ডার টপিক তিতলি এতো গভীর ঘুম কই পেলো?প্রথম প্রথম একটু সঙ্কুচিত বোধ হলেও,মৌনতা, মোহনা,মিসেস আঞ্জুমানের আন্তরিক ব্যবহারে তিতলি অনেকটা সহজ হতে পেরেছে।
— “বাবারে বাবা!তোমাকে এতো ডেকেছি রাতে ডিনারের জন্য!তুমি উঠোই নি।” হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে মুখে সিরিয়াস ভাব নিয়ে বললো মোহনা।
— ”এতো ঘুমাতে পারো তুমি!সন্ধ্যা থেকে এক ঘুমে ভোর।” হেসে বললো মৌনতা।
তিতলির লজ্জায় ইচ্ছে হচ্ছে মাটি খুঁড়ে ঢুকে যেতে।আমতা আমতা করে তিতলি উত্তর দেয়,

— “আ..আসলে খুব ক্লান্ত ছিলাম যে তাই।”
আড্ডার মাঝে এসে ঢুকে নির্জন।
— “হাই?এভ্রিওয়ান!গুড মর্ণিং।”
মৌনতা, মোহনা,হেসে একসাথে বললো,
— “গুড মর্ণিং ভাইয়া।”
মিসেস আঞ্জুমান টুনিকে ইশারায় নির্জনের নাস্তা আনতে বলেন।মুখে ছেলেকে বললো,
— “শুভ সকাল আব্বা।”
তিতলি নির্জনকে দেখে অবাক হয়।টি-শার্ট পরা, প্যান্ট ছেঁড়া।চুলের কাটিং কেমন জানি।কিন্তু গতকাল দেখে মনে হলো উনি অন্যরকম।আর চুলের কাটিংটাও অন্যরকম ছিলো!

— “হাই।নাম কি?” প্রশ্ন নির্জনের।
নির্জনের ডাকে তিতলির ভাবনার সুঁতো কাটে।নির্জনের প্রশ্ন শুনে তিতলি বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে!এক রাতে নামও ভুলে গেলো?ঢোক গিলে তিতলি বলে,
— “জ্বি!মুমতাহিনা তিতলি।”
মায়ের দিকে নির্জন তাকিয়ে বললো,
— “এই তিতলি? শাহেদ চাচ্চুর মেয়ে?’
— “হুম।ছোট মেয়ে।”
— “ওহ আচ্ছা!আচ্ছা!তো রেজাল্ট কি?”
তিতলি বললো,
— “জিপিএ ৫।”
আঞ্জুমান ছেলের দিকে সরু চোখে তাকান।ঠান্ডা স্বরে বলেন,

— ”নির্জন?রাত কয়টায় ফিরেছিস?গার্লফ্রেন্ডের সাথে এতো রাত অব্দি বাইরে থাকাটা কেমন না?বিয়েটা করে নিলেই পারিস।বয়স তো কম হয় নি।”
গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে তিতলির বড় বড় চোখ দুটি আরো বড় হয়ে যায়। ঈর্ষান্বিত অনুভূতি হয়।মনের বাঁক ফাঁকা ফাঁকা লাগে।কেনো এমন হয় সে জানেনা।শুধু নিশ্চুপ থাকে।
মিসেস আঞ্জুমানের পাশে ঘেঁষে বসে নির্জন।আহ্লাদ করে বলে,
— “আমি কি তোমাদের ছাড়া বিয়ে করতে পারি? রোহি আমি তো রেডি!তোমরা অভিভাবকরা বাকিটা দেখো।”
মৌনতা গাঁ জ্বালা হেসে বললো,

— “নিজের বিয়ের কথা বলতে লজ্জা করে না?”
নির্জন হাত বাড়িয়ে মৌনতার মাথায় গাট্টা দেয়।আর বললো,
— “না করেনি।দেখতেই তো পারছিস।”
মোহনা নির্জনকে ডাকলো,
— “ভাইয়া?”
— “কি?”
খোঁচা দিয়ে মোহনা বললো,
— “আগে বলতা পৃথিবীতে বা সমুদ্রে যত হিংস্র প্রাণী আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম প্রাণী হলো মেয়েরা। এখন সেই হিংস্র প্রাণীকেই বিয়ে করতে চাচ্ছো।ইচ্ছে করে ঘাড়ে টেনে আনছো কিন্তু!”

এবার সবাই হেসে কুটিকুটি হয়ে যায়।নির্জন তেড়ে আসে মোহনার দিকে।মোহনা দৌড়ে আলতাফ চৌধুরীর পিছনে লুকোয়।
টুনি নাস্তা নিয়ে আসে।আঞ্জুমান নির্জনকে বলেন খেয়ে নিতে।নির্জন টেবিলে গিয়ে বসে।তিতলি দু’বোনকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করলো,
— “তোমরা কোন ক্লাসে পড়ো।”
মৌনতা বললো,
— “দুজনি অনার্স থার্ড ইয়ারে আছি।সাইন্স থেকে ইংলিশ নিয়ে পড়ছি।”
— “আমিও ইংলিশ নিয়ে পড়তে চাই।তবে আমি আর্টস।কোন ভার্সিটিতে পড়ো?”
— “শাহজালাল ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি।” বললো মোহনা।
— “ওহ।আর ভাইয়া?”
— “ভাইয়াদের পড়া শেষ।দুজনই ডাক্তার।” হেসে বললো মৌনতা।
তিতলি অবাক স্বরে জিজ্ঞাস করলো,
— “ভাইয়াদের মানে?তোমাদের কয় ভাই আপু?”
মৌনতা দু’আঙ্গুল দেখিয়ে বললো,
— “দুইটা।”

জবাবে তিতলি হাসলো।ভাবে হয়তো আরেকটা ভাই আছে।দেখা হয়নি।কিন্তু বুঝতে পারেনি এই বাড়িতে আরো একজোড়া জমজ আছে।আর দুজনের সাথেই দেখা হয়েছে!
কথার মাঝে তিতলি আড়চোখে নির্জনের দিকে তাকায়।টুনির সাথে কথা বলতে বলতে খাচ্ছে। একসময় কথার ফাঁকে কোনো কারণে হাসে নির্জন। তিতলির নজরে পড়ে নির্জনের গাল।টোল পড়েনি! আপন মনে বিড়বিড় করে তিতলি,
— “আজব তো।গতকাল ভুল দেখলাম।নাকি আজ ভুল দেখছি।”
তিতলির হিঁচকি উঠে।মিসেস আঞ্জুমান দৌড়ে তিতলির কাছে এসে মাথায় হাত বুলান আর চেঁচিয়ে বলেন,
— “টুনি পানি নিয়ে আয় জলদি।”
পানি খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে শান্ত হয় তিতলি।মিসেস আঞ্জুমান তিতলির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞাসা করলো,
— ”কি এতো ভাবছিলা?হিঁচকি উঠে গেলো যে।”
তিতলি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।কেমনে বলবে আপনার ছেলেকে দেখে হিঁচকি উঠেছে!মিথ্যা বলতেও সময় লাগে তিতলির।
— “ফুফি আম্মা আমি রুমে যাই?” ঠান্ডা স্বরে বললো তিতলি।
— “খারাপ লাগছে মা? আচ্ছা যাও রেস্ট নাও।” আঞ্জুমানের আদুরে গলা।

দু’ঘন্টা পর তিতলি রুম থেকে বের হয়ে আসে।একা একা বিরক্ত হচ্ছিলো রুমে।বাসায় এতো কিউট জমজ দু’টো আপু থাকতে রুমে বসে থাকতে কার ভালো লাগে!এই বাসার ড্রয়িং আর ডাইনিং রুমটাই আপাতত চিনে তিতলি।দু’তলা থেকে নেমে সরাসরি ড্রয়িং রুমে আসে। মৌনতা তিতলিকে দেখে পাশে এনে বসায়।
মোহনা অপরাধী মুখ করে বললো,
— “আমাদের আজ ফ্রেন্ডের গায়ে হলুদে যেতেই হবে নয়তো তোমাকে একা ফেলে যেতামনা।আজ দিনটা একাই থাকো কেমন?তারপর ফিরে এসে জমিয়ে আড্ডা দেব।”
তিতলি হালকা হেসে বলে,
— ”যাও তোমরা।আন্টি আছেন না।একা কোথায়।”
মৌনতা গুণে গুণে বললো,
— “আন্টি না আরো তিন জন আছে। বাবা বাগানে,নির্জন ভাইয়া গার্লফ্রেন্ডের কাছে গেছে মনে হয়।আর বাসায় আম্মু,টুনি,হামিদ চাচা আর নিঝুম ভাইয়া আছে।”
— “হামিদ চাচা কে?”
— “আমাদের বাসায় কাজ করেন।কিন্তু আমরা আপন চাচার মতোই মনে করি।”
তিতলি জবাবে হাসে।মোহনা বললো,

— “আচ্ছা আমরা যাই।তুমি বাড়িটা ঘুরে দেখো।দু’তলার ডান দিকের কর্ণারের রুমটা নির্জন ভাইয়ার।আর বাম দিকে তিনটা রুমের একটা আমাদের দুজনের আর একটা খালি।অন্যটায় তো তুমিই।আর নিচ’তলায় আম্মু-আব্বুর রুম।টুনি,হামিদ চাচার রুম।আর গেস্ট রুম।আর নিঝুম ভাইয়ার রুম ছাদে।”
তিতলি হেসে বললো,
— “এতো রুম!আচ্ছা আপু দেখবো ঘুরে।”
মোহনা মৌনতাকে বললো,
— “সবকিছু ব্যাগে গুছিয়ে রেখেছি।আলমারির ডান পাশের ড্রয়ারে পাবি।নিয়ে আয়।আমি গাড়ি বের করছি।”
তারপর তিতলিকে বললো,
—- “আসি।”
তিতলি হাত নাড়িয়ে বাই দেয়।মোহনাও দেয়।দু’বোন বের হয়ে যায়।তিতলি দু’তলায় উঠে আসে।নিজের রুমে ঢুকতে গিয়ে একটা টান অনুভব করে ছাদের দিকে।তিতলি ভাবে,

— “ছাদের রুমে তো আরেকটা ভাইয়া আছে!একটু দেখে আসবো?গেলে উনি কি ভাববেন?না থাক যাওয়ার দরকার নেই।”
কিন্তু মনটা বড় অস্থির, অবাধ্য হয়ে আছে গতকাল থেকে। কথা শুনে না।যা ইচ্ছে হয় তাই করার টান অঅনুভব করে ভীষণ, ভীষণভাবে!মনের সাথে তাল মিলিয়ে শরীরটাও অবাধ্যতা শুরু করেছে। ঢোক গিলে অবাধ্য মনের অবাধ্য আবদার পূরণ করতে ছাদের দিকে পা বাড়ায় তিতলি।সিঁড়ি ভেঙে ছাদে এসে মুগ্ধ হয়।এতো এতো ফুল গাছের টব।পাশে সুইমিংপুল আর অদ্ভুত সুন্দর একটা ঘর।ছোট বাড়ি বলা যায়।ছোট থেকেই ফুলের প্রতি খুব দূর্বলতা তিতলির।এতো ফুল গাছ থেকে যেনো নতুন প্রাণ পায়।একটা একটা করে ফুল গাছ দেখতে থাকে।সব ফুলের নাম সে জানে।গন্ধরাজ,রজনীগন্ধা, সূর্যমুখী, জিনিয়া,হাজারপুটিয়া, জবা,কামিনী, দোপাটি, জয়তী,অলকানন্দা, সিলোসিয়া, নয়নতারা সব সব আছে।তিতলির মনে হচ্ছে সে নিজের বাগানে আছে।ভাবতেও পারেনি এখানে এসে এতো ফুলের দেখা পাবে।

ধীর পায়ে ঘরটার দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়।কাচের দরজা।দরজার দু’পাশে কংকাল। কংকালকে ঘিরে তিনটা ফুলের টব।আশ্চর্য তো!দরজায় হাত রেখে আপন মনে তিতলি ভাবে, টোকা দিবো?নাকি ধাক্কা দেবো?নাকি চলে যাবো?বিরক্ত হয় যদি।
চিন্তায় কপালে ভাঁজ তৈরি হয়।সাত-পাঁচ ভেবে সাহস নিয়ে হালকা আওয়াজ করে টোকা দেয় দরজায়।কোনো সাড়া-শব্দ নেই।আরেকটু জোরে টোকা দিতেই ভেতর থেকে কন্ঠস্বর ভেসে আসে,

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ১

— “ভেতরে আসো।ধাক্কা দিলেই খুলবে।”
প্রাপ্তবয়স্ক ভরাট কন্ঠ শুনে তিতলির বুক ধ্বক করে উঠে।এই কন্ঠটাই তো গতকাল বিকেলে শুনেছিল। আঠারো বয়সী উঠতি যুবতীর মনের বাঁকগুলো বেশ জটিল এবং ছন্নছাড়া। না পারে সইতে না পারে পালাতে।দৌড়ে পালাতে গিয়েও থেমে যায় তিতলি।কি যে হচ্ছে!এতো নার্ভাস তো জীবনেও হয়নি ।দরজায় হাত বাড়িয়ে দেয় ধাক্কা দেওয়ার জন্য।কপাল,নাক,গলা ঘামছে খুব!খুব বেশি!ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে।বার বার মনে হচ্ছে, ভেতরে যে ভাঙচুর শুরু হয়েছে তা এই ঘরে ঢুকলে আরো দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।বা তার চেয়েও বেশি।তিতলি চোখ খিঁচে দরজা ধাক্কা দেয়। বুকের ভেতরে দুটি শব্দ বজ্রপাতের মতো জোরেশোরে যেন বলছে, সর্বনাশা অনুভূতি।

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৩