প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৫১

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৫১
ইলমা বেহরোজ
প্রত্যেকদিন রাত নয়টা কি দশটার দিকে নিঝুম টং দোকানে বসে সিগারেট টানে।বস্তির বাচ্চাদের এটা ওটা দেয়।তেমনি আজও সিগারেট টানছিল।সেই সাথে বিস্কুট।একবার সিগারেট টানে আরেকবার বিস্কুট খায়।সেই মুহূর্তে অরুণের আগমন।অরুণ নিঝুমের পিঠ চাপড়ে বললো,
— “কিরে ব্যাটা?এখানে তুই আর আমি তোর ফ্ল্যাটে গিয়ে খুঁজে আসছি।”
নিঝুম অবহেকার স্বরে বললো,
— “রাত নয়টায় আমারে কি দরকার তোর?”
— “বউয়ের লগে মাইর লাগছিরে শালা।তাই নেশা ধার নিতে এসেছি।”
নিঝুম মৃদু হাসলো।
” ইন্ডিয়া থেকে আসা ট্রেনে যাত্রী ছিলো নয়’শ।ঢাকা রেল ষ্টেশনে প্রবেশের ঘন্টাখানিক আগে ট্রেনটি ব্রেক ফেইল করে।সেই সাথে অন্ধকার থেকে কেউ একজন আগুন ছুঁড়ে দেয় ট্রেনের উপর সম্ভবত এটি…”
টং দোকানের টেলিভিশন থেকে আসা সাংবাদিকের কথাগুলো শুনে নিঝুম,অরুণ সহ আশে পাশের মানুষ এগিয়ে আসে।টিভির দিকে নজর দেয়।
” ট্রেনটি পুড়ে গিয়েছে অর্ধেকরো বেশি।অনেক যাত্রী ট্রেনে থাকাকালীন আগুনে পুড়ে নিহত হয়।কিছু যাত্রী চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে পিলারে ধাক্কা খেয়ে নিহত হয়।এবং কিছু যাত্রী চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে বেঁচে গেলেও আহত হয়েছে।বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভায়।দমকলকর্মীরা আহত,নিহতের বিভিন্ন ঢাকা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।দেখুন সরাসরি…”
সর্বপ্রথম ঢাকা হাসপাতাল দেখানো হয়।একটার পর একটা স্ট্রেচারে করে নিথর দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভেতরে।নিঝুমের টনক নড়ে।ভালো করে তাকায়।আচমকা, টিভির পর্দায় ভেসে উঠে  চির চেনা মুখ।সেই কোঁকড়া চুল।সেই মুখ।কিন্তু রক্তে মাখামাখি। নিঝুমের সারা শরীর কেঁপে উঠে শিরশির করে।নিমিষেই স্ট্রেচারটা ভেতরে ঢুকে যায় তিতলিকে নিয়ে।নিঝুম দু’কদম পিছু হটে।শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে।এ কার মুখ? কি হয়েছে তাঁর? কেনো ওমন করে শুয়ে আছে?যার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা তাকে সে আজ দেখেছে রক্তাক্ত অবস্থায়।অরুণ তিতলিকে চিনতে পারেনি।নিঝুমের দিকে তাকিয়ে দেখে নিঝুম কেমন অস্বাভাবিক ভাবে নিঃশ্বাস ফেলছে।অরুণ নিঝুমের কাঁধে হাত রেখে বলে,
— “কি রে ব্যাটা?”
নিঝুম অরুণের দিকে তাকায়।বলতে চায় “আমার তিতলি।” কিন্তু আশ্চর্য গলা থেকে কথা আসছে না!কথা বলতে গেলেই আ আ আ আওয়াজ বের হচ্ছে।নিঝুমের নিজেকে উন্মাদ মনে হচ্ছে।অরুণের শার্টের কলার চেপে ধরে কিছু বলে। কিন্তু আওয়াজ আসে আ আ আ।গলার কন্ঠ থেমে গেছে তাঁর।কথা বলার থলিটা বন্ধ হয়ে গেছে যেন হুট করে।
নিঝুম এদিক ওদিক তাকায়।তারপরই দৌড়াতে থাকে।অরুণ হতভম্ব হয়ে যায়।নিঝুমের পিছনে দৌড়াতে থাকে।গলা ফাটিয়ে নিঝুমকে ডাকে।কিন্তু শুনছে না নিঝুম।অরুণ দৌড়াতে দৌড়াতে নির্জনকে কল দেয়।নির্জন কল রিসিভড করতেই অরুণ বললো,
— “নির্জন?শোন….”
— ” এখন কথা বলতে পারবনা।নিঝুমের কাছে যাচ্ছি।আম্মু কিছুক্ষণ আগে তিতলিকে দেখছে টিভিতে।ট্রেন এক্সিডেন্ট হইছে।নিঝুম যেন এই খবর না পায়।তুইও দ্রুত আয়।”
অরুণ ট্রেন এক্সিডেন্ট শুনেই বুঝে যায় নিঝুম কেন এমন করছে।অরুণ হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
— “নিঝুম দেখে ফেলছে।ও রাস্তার মাঝে উন্মাদের মতো দৌড়াচ্ছে।”
— “কি বলছিস।কোন রাস্তায়?”
— “ইবনে সিনা হসপিটালের দিকে।মনে হয় এয়ারপোর্টে দিকে যাচ্ছে।”
— “তুই ওরে ধর।পাব্লিক ওরে মেরে ফেলবে।আমি আসছি।”
অরুণ ফোন রাখে নিঝুমকে ডাকে।নিঝুম দৌড়াচ্ছে প্রাণপণে।সে নিজের ভেতর নেই।কি দেখলো সে?
রাস্তাঘাটের মানুষ আতংকিত নিঝুমের দৌড় দেখে।ট্রাফিক দুজন পুলিশ নিঝুমকে ধাওয়া করেছে।সামনে থাকা অনেক মানুষ নিঝুমকে ধরতে চাচ্ছে।কিন্তু পারছে না।নির্জন মোটরসাইকেল করে প্রথম নিঝুমের ফ্ল্যাটে যায়।এরপর ডুপ্লিকেট চাবি ব্যবহার করে নিঝুমের পাসপোর্ট নেয়।তারপর দ্রুত নিঝুমকে খুঁজে বের করে।নিঝুম পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে।পিছনে অরুণ।নির্জন মোটরসাইকেল নিয়ে নিঝুমের সামনে এসে থামে।বলে,
— “বাইকে উঠ।আমি নিয়ে যাচ্ছি।”
নিঝুম দ্রুত উঠে বসে।সে কাঁদছে।খুব কাঁদছে।মস্তিষ্ক কাজ করছে না।নির্জনের বুকও কাঁপছে।ঢাকা মেডিকেল সব নিহতদের নেওয়া হচ্ছে।ভাইকে নিয়ে কি দেখাবে? তিতলির নিথর দেহ? তিতলির লাশ? নির্জন মনে মনে একটা প্রার্থনাই করতে থাকে।তিতলি যেন বেঁচে থাকে।নয়তো নিঝুম শেষ।
রাত চারটায় ঢাকা মেডিকেলের সামনে পৌঁছে ওরা।এতো রাত তবুও প্রচুর মানুষ।যাত্রীদের পরিবার প্রায় সবাই।নিঝুম নির্জনকে রেখেই গেইটের ভেতরে দৌড়ে ঢুকল।সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।ওয়ার্ডে তিতলিকে খুঁজতে থাকে পাগলের মতো।নির্জন দৌড়ে এসে নিঝুমকে ধরে ধমক দেয়,
— “এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন? কাউকে তো জিজ্ঞাসা করতে হবে?”
নির্জন দ্বিতীয় তলার গেইটের দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করে,
— “ট্রেনে এক্সিডেন্ট হওয়া যাত্রীরা কোথায় আছে?”
দারোয়ান বলে,মর্গে যেতে।মর্গের কথা শুনে নিঝুমের হৃদপিন্ড চলাচল আচমকা বজ্রপাতের মতো চলতে থাকে দ্রুতগতিতে।নিঝুম নির্জনকে টেনে নিয়ে হাঁটতে থাকে।নার্সদের জিজ্ঞাসা করে মর্গে আসে।এসে দেখে আরো কয়জন আছে।নিঝুমের শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে।সে ভেতরে যেতে চায়নি।নির্জন একাই আসে।এক এক করে সবগুলো লাশ দেখে।কিন্তু আশ্চর্য!তিতলি নেই।নির্জন দ্রুত বেরিয়ে আসে।নিঝুম প্রাণহীন চোখে তাকায়।নির্জন উত্তরে কিছু বলেনি।একজন নার্সকে পেয়ে জিজ্ঞাসা করে,
— “আমরা যাকে খুঁজছি সে মর্গে নেই।কোথায় পাবো?”
— “আপনারা শিওর তাকে এই হাসপাতালেই আনা হয়েছে।” নার্স বললো।
— “জ্বি নিউজে দেখেছি।স্ট্রেচারে করে তাকে এই হাসপাতালেই নিয়ে আসা হয়েছে।”
— “তাহলে আপনারা ওদিকটায় যান।তিন জনকে নিহত ভাবা হয়েছিল।কিন্তু তাঁরা বেঁচে আছে।আইসিইউ তে নেওয়া হয়েছিল।এখন কেবিনে রাখা হয়েছে।আপনারা দেখুন…”
পুরোটা না শুনেই নিঝুম নার্সের দেখানো পথে দৌড়ায়।নির্জন নার্সকে সরি বলে নিঝুমের পিছনে দৌড়ায়।নিঝুমের দৌড়ের দমকে ধাক্কা খাচ্ছে অনেকে।একজন ডাক্তারকে তড়িঘড়ি করে যেতে দেখে নিঝুম আটকায়।কিন্তু আশ্চর্য আ আ আ  আওয়াজটাও আসছে না।নির্জন দ্রুত আসে।ডাক্তারকে বলে,
— “তিতলি নাম,কোঁকড়া চুল লম্বা।মেয়েটা কোন কেবিনে আছে?ট্রেন এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
— “তিনটা কেবিনের পরেরটা।”
নিঝুম তাকায়।দৌড়ে ডাক্তারের দেখানো কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ায়।দরজা লাগানো।টোকা দেয়।একজন নার্স এসে হালকা খুলে দেয় দরজা।দরজার একটু ফাঁক দিয়ে নিঝুম দেখতে পায় তিতলি অচেতন হয়ে শুয়ে আছে।একজন নার্স মাথার পাশে দাঁড়ানো।মাতায় ব্যান্ডেজ। বুকের পর থেকে দেখা যাচ্ছে না।নিঝুম চোখ সরিয়ে নেয়।নির্জন এসে উঁকি দেয়।ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে নিঝুমের দিকে তাকায়।জড়িয়ে ধরে বলে,
— “বেঁচে আছে।আমি যাচ্ছি।তিতলির জন্য বেস্ট চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।কিছু হবেনা আমাদের তিতলির।”
নিঝুমের শরীর নিস্তেজ হয়ে আসে।দপ করে মেঝেতে বসে সেজদা দেয়।আল্লাহকে লাখ লাখ শুকরিয়া জানায়।প্লেনে যতক্ষন ছিল সে অনুভূতিহীন হয়ে গিয়েছিল।ভেবেছিলো,আজ তিতলির মৃত দেহ যদি দেখতে হয়,মেডিকেলের ছাদ থেকেই লাফ দিয়ে মরবে সে।একসাথে যাবে কবরে।আশে-পাশের মানুষ অবাক হয়ে যায়।নিঝুমকে সেজদারত অবস্থায় দেখে।নিঝুমের চোখ থেকে অঝড়ে জল পড়ছে।
কিছুক্ষণ পর নির্জন এসে নিঝুমকে বললো,
— “মাথায় আর পায়ে আঘাত পেয়েছে।শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিঁড়ে গেছে।এখন তিতলি আরামে আছে।জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে।কিন্তু ভয়ের কিছু নেই।”
নিঝুম ভাবছে,কতটা কষ্ট হয়েছে তিতলির।এইটুকুন মেয়ে।ও নিঝুমের কথার উত্তরে কিছু বললো না।স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে
একদিন পার হয়ে গেল তিতলির কল আসছে না।শাহেদ চিন্তায় খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।তিতলির ফোনে কল দিয়েছেন অনেকবার।কিন্তু বন্ধ।চিন্তা আরো দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।কি করবেন? কীভাবে খোঁজ নিবেন বুঝছে উঠতে পারছেন না।আলতাফের নাম্বারও তো নাই।হারিয়ে ফেলেছেন।রোমেনা শত চেষ্টা করেও খাওয়াতে পারছে না।খাবার নিয়ে এসে বিছানায় বসেন রোমেনা।ধমকের স্বরে বললো,
— “খাবা না বাড়ি থেকে বাইর হইয়া যামু?”
শাহেদ রোমেনার দিকে একবার তাকান।তারপর চোখের জল মুছে বললো,
— “চলো বাংলাদেশ।”
— “যদি খাও।তাহলে যাবো।”
শাহেদ শোয়া থেকে উঠে বসেন।রোমেনা নিজ হাতে খাইয়ে দেন।এরপরদিন ভোরে ট্রেনে উঠেন তাঁরা।সাথে তিতলির মামা আছেন।অনেকদিন তিনি নিজ গ্রাম দেখেন না।
আটচল্লিশ ঘন্টা পর তিতলির জ্ঞান আসে পুরোপুরি।মৌনতা,মোহনা কে সবার আগে দেখে।ওরা দুজন তিতলিকে আদর করে চলে যায়।তিতলি শুধু ম্লান হাসে।কথা বলার সামর্থ্য পাচ্ছে না।এরপর আলতাফ আসেন।তিনি কিছু বলেননি।তিতলির পাশে বসে নীরবে চোখের জল ফেলে বেরিয়ে যান।এক এক করে নিঝুমের পরিবারের সবাই আসে।কিন্তু তিতলি যাকে খুঁজছে সে কই? তিনিটা বছর ধরে যারে দেখার জন্য চোখ দু’টো উদগ্রীব হয়ে ছিল।কোথায় সে? অভিমান করেছে ছেড়ে যাওয়ার জন্য?
নিঝুম বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।সে কেনো জানি ভেতরে যেতে ভয় পাচ্ছে।নির্জন ঠেলে পাঠায়।নিঝুম মাথা নিচু করে ঢুকে।তিতলির কারো পায়ের শব্দ শুনে ঘুরে তাকায়।দেখে,নিঝুম আসছে।তাঁর সারা শরীর উত্তেজনায় কেঁপে উঠে।কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে মনে হয়।গাল-হাত গরম হয়ে আসে।সেই মানুষটা।যে আপনের চেয়েও আপন।বিচ্ছেদের অবসান যখন ঘটে সেই মুহূর্তও সহ্য করার মতো নয়।তিতলির চোখ দুটি যেন ঝলসে যাবে এক্ষুনি।চোখ বুজে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয়।আবার চোখ খুলে।নিঝুম তাঁর বেডে, তাঁর পাশে এসে বসে।কিন্তু তাকাচ্ছে না!কেন?নিঝুম বুঝতে পারছে, তিতলি তাকিয়ে আছে।কিন্তু সে তাকাতে পারছে না।মনে হচ্ছে, তাকালেই দেখবে নাই।সত্যি ই কি এতো কাছে তাঁরা? সত্যি কি তিতলি তিন বছর পর তার এতো কাছে?
তিতলি ঠোঁট কামড়ে কাঁদতে থাকে।ভাঙ্গা গলায় ক্ষীণ স্বরে ডাকলো,
— “এই ডাক্তার।”
কারো গলার স্বর ভেতরের অস্তিত্ব নাড়িয়ে দিতে পারে? তিতলির এই ডাক্তার ডাকটা নিঝুমের সর্বাঙ্গ কাঁপিয়ে তুলে।চট করে তিতলির দিকে তাকায়।দুজনের চোখ এক সুতোয় গেঁথে যায়।সেই চোখ,সেই দৃষ্টি,সেই মানুষ।আবারো,আরো একবার আল্লাহ এক করে দিয়েছেন।তিতলি উঠতে চায় জড়িয়ে ধরতে।নিঝুম আরেকটু কাছে এসে ঝুঁকে তিতলিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।তিতলির কাঁধের চামড়া ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে নিঝুম ফুঁপিয়ে কেদে উঠে।তিতলি চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।চির চেনা সেই স্পর্শ।সে পাবে কখনো ভাবেনি।দুজন কাঁপতে থাকে।কাঁদতে থাকে।দুজন দুজনের বুকের ধুকধুকানি শুনতে পাচ্ছে।দুজন একজন আরেকজনকে আরো জোরে চেপে ধরে।তিতলি অনবরত জোরে জোরে আওয়াজ করে কেঁদে চলেছে।অতি সুখেও মানুষ কাঁদে।তাঁর ইচ্ছে হচ্ছে দুনিয়াকে শুনিয়ে কাঁদতে।কাঁদার জোরে শরীর ব্যাথায় বিষে যাচ্ছে।তবুও খুব কাঁদছে।রোহি, আঞ্জুমান আৎকে উঠে।ভেতরে আসতে চাইলে নির্জন আটকায়।
তিতলি কেঁদে থেমে থেমে বলে,
— “আমি আপনায় খুব ভালবাসি ডাক্তার।আমাকে ক্ষমা করুন।আপনাকে ছাড়া থাকতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল।”
নিঝুম তিতলির পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,
— “আমিও ভালবাসি পাগলিটাকে।খুব ভালবাসি।”
তিতলির শরীর আর কুলোয় না।ছেড়ে দেয় নিঝুমকে।নিঝুম বুঝতে পেরে,তিতলিকে শুইয়ে দেয়।তারপর চোখের জল মুছে ঝুঁকে বলে,
— “আর হারাতে দেব না।কখনো না।”
তিতলি অশ্রু চোখে হাসে।নিঝুম হেসে বললো,
— “আগের মতোই মিষ্টি হাসি।”
একজন নার্স এসে বলে,
— “পেসেন্টের কাছে আর থাকা যাবেনা, ক্ষতি হবে।আপনি আসুন।”
নার্সের কথা শুনে তিতলি নিঝুমের টি-শার্ট খামচে ধরে।নিঝুম হেসে নার্সের দিকে তাকায়।বলে,
— “আমি এখন চলে গেলে আপনাদের রোগির সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে সিস্টার।”
নার্স টাস্কি খেয়ে যায়।যাকে উন্মাদ ভেবেছে গত দু’দিন।সেই মানুষটা কি সুন্দর করে কথা বলছে!
গত দু’দিন দরজার সামনে ফ্লোরে বসেছিল লোকটা।মনেই হয়নি এই মানুষটা স্বাভাবিক।বা এতো সুন্দর করে কথা বলতে পারে।