বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৫২

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৫২
ইলমা বেহরোজ

— “কিরে বল?”
সাফায়েতের গলার স্বর শুনে কেঁপে উঠলো ধারা।লিয়া ধারাকে আশ্বস্ত করে বললো,
— “মনে যা আসে বলে দাও।ভয় পেয়োনা।”
লিয়ার কথায় ধারা সাহস পায়।চোখ বুজে ঢোক গিলে বলে,

— “বাবাই আমি এক কথায় উত্তর দিতে পারবোনা।আর কারোর জন্য কারো জীবন থেমে থাকেনা।আমি অবশ্যই বিভোরকে ছাড়াও বাঁচতে পারবো এবং তোমাদেরকে ছাড়াও।কিন্তু সব বাঁচাকে কি বাঁচা বলে? যদি তোমাদের সাথে থাকি দিনশেষে মনে পড়বে বিভোরের কথা।আমাকে নিরাপত্তা দিয়েছে ঝুঁকি নিয়ে।খেয়াল রেখেছে।আমাকে ভালবাসে আমিও ভালবাসি।তখন কি নিজেকে একা মনে হবেনা?ভালবাসার মানুষ তো সবার আছে।এইযে তুমি আম্মুকে ছাড়া থাকতে পারো বাবা?পারোনা তো।আম্মু যেদিন নানাবাড়ি থাকে সেদিন দেখি তো কেমন ছটফট করো।বাবাই তোমাদের সম্পর্ক টা হয়তো অনেকদিনের। আমারটা অল্প দিনের।কিন্তু ভালবাসার পরিমাণ কি বেশিদিন আর কমদিন দিয়ে মাপা যায়? যায়না তো।সামিত ভাইয়া, সাফায়েত ভাইয়া তোমরা যতই ভাবিদের সাথে খারাপ ব্যবহার করো আমি দেখেছি ভাবিদের ছাড়া কেমন অচল হয়ে পড়।তোমরা তো বুঝবে আমাকে?আর….আর বিভোরের সাথেও শুধু থাকতে পারবো কীভাবে?আমি তোমাদের কত ভালবাসি জানোনা তোমরা? তোমাদের একেবারে ছাড়ার কথা আমি ভাবতেও পারিনা।তোমাদের ছাড়া আমি বিভোরের সাথে সুখী হবোনা।মা – বাবা থাকতেও কোন সন্তান এতিম সেজে থাকতে পারে?প্লীজ বুঝো একটু আমি দুটোই চাই।প্লীজ বাবাই…..”
উপস্থিত সবাই থমকে যায়।ধারা ফোঁপাচ্ছে।বড়দের সামনে নির্ভয়ে, জটিলতা ছাড়াই কি সুন্দর করে বলে দিল ভালবাসার কথা।কি অসাধারণ যুক্তি তাঁর।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শেখ আজিজুর দমে যাওয়ার পাত্র নন।তিনি খ্যাঁক করে গলা পরিষ্কার করে বলেন,
— “ধারা তুমি কি জানো? বিভোরের ভাই তোমার ভাইকে আঘাত করেছিল?দু’দিন হস্পিটাল ভর্তি ছিল তোমার ভাই….”
লিয়া কথার মাঝে ফোড়ন কাটলো,
— “সেটা তো বিভোরের দোষ না।সে তো ভালো।”
সাফায়েত কটমট করে তাকায় লিয়ার দিকে।লিয়া সাফায়েতের আগুন দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে আবারো বললো,
— “আর দোষ আপনার ছেলেরও ছিল বাবা।সে খুঁচিয়ে ছিল।আর সে ও আঘাত করেছে বিভোরের ভাইকে।”
শেখ আজিজুর ছেলের বউয়ের জবাবে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে ফেললেন।এরপর বললেন,
— “তাছাড়া বিভোরের পরিবারের সবাই ধারাকে খুব নোংরা চোখে দেখে।ওইরকম পরিবারে কি করে দেব আমার মেয়েকে?”
ধারা আকুতি করে বললো,

— “বাবাই বিশ্বাস করো বিভোর থাকতে আমার কোনো অসম্মান হবেনা।ও ওর পরিবারকে মানিয়ে নিবে।বাবাই আমি বিভোরকে ভালবাসি।ভাইয়া, আম্মু আমি কতটা নির্লজ্জ হয়ে তোমাদের সামনে ভালবাসার কথা বলতেছি বুঝো একটু।একটা মেয়ে এভাবে মা-বাবার সামনে এসব কথা বলতে পারে?পারেনা তো।আমি…… আমি পারতেছি।কতটা অসহায় হয়ে বলতেছি বোঝার চেষ্টা করো।আমি পরিবার আর বিভোর দুটোই চাই।”

ধারার আকুতির সামনে আজিজুর,সামিত, সাফায়েত দূর্বল হয়ে পড়ে।কোনোভাবেই ধারাকে কঠিন ভাবে কিছু বলা যাচ্ছেনা।মন মানছেনা।যদি ধারা এভারেস্ট না যেতো তাহলে হয়তো পারতো।কিন্তু যখন সবাই শুনলো,ধারা এভারেস্ট থেকে আর ফিরবেনা।তখন সবাই বুঝেছিল ধারা ছাড়া ওরা কেউ ভালো থাকবেনা।ধারা সবার বুকের মধ্যিখানে বসে রয়েছে।হারানোর বেদনা কতটা কষ্টদায়ক বোঝা হয়ে গেছে।তিব্বিয়া খাতুন করুণ স্বরে শেখ আজিজুরকে বলেন,
— “মেয়েটা যা বলতেছে শুনো।কত কষ্ট করে বেঁচে ফিরেছে।কত যুদ্ধ করলো মৃত্যুর সাথে।এখনো কষ্ট পাবে কেনো?বিভোর ছেলেটা তো দেখতে শুনতে ভালো।আর তুমিকি আজীবন মেয়েরে বাসায় রাখবা?বিয়ে দিবানা?যেখানে পুরো বাংলাদেশ জানে বিভোরের বউ তোমার মেয়ে।সেখানে অন্য কোথাও বিয়ে দেওয়াটা মানুষ খারাপ নজরে দেখবে।”
ধারা আচমকা সোফা থেকে উঠে শেখ আজিজুরের পা ধরে বসে কেঁদে বলে,

— “বাবাই…প্লীজ আমাকে কোনো অপশন দিওনা বেঁচে থাকার।আমি দুটিই চাই।তোমাদের আর বিভোরকে।প্লীজ বাবাই…
শেখ আজিজুরের পা ছেড়ে দুই ভাইয়ের পায়ে ধরে শক্ত করে।এরপর বলে,
— “বড় ভাইয়া, মেজো ভাইয়া প্লীজ।”
সামিত, সাফায়েত দ্রুত লাফিয়ে উঠে পড়ে।এরপর ধারাকে তুলে সামিত বলে,
— “সিদ্রাতুল!পায়ে ধরতে কে বলছে?বাবাই কিছু বলতো।দেখ কেঁদেকেটে কি অবস্থা করছে চোখের।”
শেখ আজিজুর চিন্তায় মগ্ন।কি করবেন তিনি।বিভোরের পরিবারকে মানতে পারছেন না কিছুতে।মেয়েকে পাঠাতেও মন সায় দিচ্ছেনা।আবার মেয়েটা এতো কাঁদছে, রিকুয়েস্ট করছে।তারিমধ্যে লিয়া বললো,
— “শুনেন বাবা।আপনি হচ্ছেন মেয়ের বাপ।আপনি চাইলে জোর করে মেয়েকে তার স্বামী থেকে দূরে রাখতে পারবেন।কিন্তু আমি না বলে পারছিনা। বিচ্ছেদ সহ্য করতে না পেরে যদি আপনার মেয়ে সুইসাইড বেছে নেয়।তখন কি হবে?”
লিয়ার কথা ড্রয়িং রুমে বজ্রপাতের মতো কাজ করে।সবার চোখ গোল গোল হয়ে যায়।এটা তো মাথায় আসেনি কারো।ধারা এমনিতে খুব জেদি। সত্যি যদি এমন করে।শেখ আজিজুর লিয়াকে ধমকে উঠেন।তিব্বিয়া খাতুনের হৃদপিন্ড লাফিয়ে উঠে লিয়ার কথা শুনে।তিনি স্বামীকে কড়া স্বরে বলেন,

— “দেখো আমার মেয়ের যদি কিছু হয় তোমাদের সিদ্ধান্তের জন্য।আমি কি করবো নিজেও জানিনা।”
লিয়ার কথায় ভয় পেয়েছে বাপ – ভাইও।ধারা লিয়ার কথায় অবাক হয়।সে কখনো সুইসাইড করবেনা।ভাবেওনি।মৃত্যু এতো সোজা নাকি।তবুও মুখ শক্ত করে বললো,
— “আমি সুইসাইড করতে চাইনা।কিন্তু যখন খুব কষ্ট হবে ভুলে ভুলে করে ফেলতেও পারি।”
শেখ আজিজুর ধমকে উঠেন,
— “ধারা।আর নিবিনা এই নাম।কিসব আজেবাজে কথা।আমি তোর আবার বিয়ে দেব বিভোরের সাথে।বিভোরকে বল,ওর পরিবার নিয়ে আসতে।”
লিয়া ফোড়ন কাটে,

— “প্রথম তো ওরাই প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল।এবার আপনারা যান।যেহেতু আপনাদের মেয়ে পালিয়েছিল তো আপনাদেরই যাওয়া উচিৎ। কোনো পরিবারই পালিয়ে যাওয়া বউকে আবার ঘরে তুলে নিতে প্রস্তাব নিয়ে আসবেনা।”
— “আমার বোন কি কোনো ছেলের সাথে পালাইছিল?” বললো সাফায়েত।
লিয়া শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়,
— “বিয়ের পরদিনই যদি আমি পালাইতাম চিঠি দিয়ে যে, বয়ফ্রেন্ডের জন্য পালাচ্ছি।আপনারা কি পড়ে মানতেন আমাকে?ওদের জায়গায় নিজেদের রেখে চিন্তা করেন।আপনারাও কিন্তু ওদের মতোই করতেন।আমারতো মনে হয় বেশি করতেন।”

শেখ আজিজুর লিয়ার উচিৎ কথা গুলো হজম করতে পারেন না।মেয়েটা বেয়াদব।মুখের উপর কথা বলে।ইচ্ছে করে ঠাস ঠাস ঠাস করে গালে দিতে কয়টা।নেতার মেয়ে হওয়াতে কিছু বলাও যায়না।আজীবনের আফসোস নেতার মেয়েকে ছেলের বউ করা।কিন্তু লিয়া তো ঠিক কথাই বলেছে।শেখ আজিজুর ড্রয়িং রুমের কিছুটা জায়গা জুড়ে মিনিট কয়েক পায়চারি করেন।এরপর ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলেন,
— “বিকেলে প্রস্তাব নিয়ে যাবো।তৈরি থাকিস তোরা।”
ধারা বাবার মুখে এমন কথা শুনে খুশিতে ঢলে পড়ে ।সামিত,সাফায়েত দুজন ধরে।বোনের হাসি দেখে ওরা হেসে ফেলে।যদিও হার মানতে কষ্ট হচ্ছে তবুও ধারার হাসির চেয়ে দামী কিছু ছিলনা এবং নেই।

দুই ছেলেকে নিয়ে শেখ আজিজুর বিভোরদের বাড়ির সামনে পৌঁছাতেই ঝুম বৃষ্টি নামে।ইদানীং খুব বৃষ্টি হচ্ছে।গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে আসেন মেইন ডোরের সামনে।সাত-পাঁচ ভেবে কলিং চাপেন আজিজুর।
বাদল ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিল।আজ ছুটির দিন।সামিয়া অনেকবার বলেছে ঘুরতে বের হতে।বাদল যায়নি।তাই সামিয়া রাগ করে ঘরে বসে আছে।সামিয়ার রাগ ভাঙাতে অনলাইনে বিরিয়ানি অর্ডার দিচ্ছিলো তখনি কলিং বেলের আওয়াজ শুনে বেশ বিরক্ত হয়।ফোন রেখে আলস্য পায়ে হেঁটে এসে দরজা খুলে।সাফায়েত ও সামিতকে দেখে ১৮০ ভোল্টের শক খায়।এরপর ব্যাঙ্গ করে বললো,

— “আরে নেউলের বাচ্চারা মেঘের দিন সাপের গুহায় কি মনে করে?”
বাদলের কথা বলার ধরণ দেখে সামিতের রক্ত গরম হয়ে আসে।তবে কন্ট্রোল করে নেয়।সাফায়েত রাগ সামলাতে পারেনা। চোখ গরম করে বলে ফেলে,
— “মুখ সামলিয়ে কথা বল।”
বাদল গলার জোর আরো দ্বিগুণ করে বলে,
— “ওইই!গলার সুর নামাইয়া কথা বল।এটা আমার বাড়ি।আমার এলাকা।”
শেখ আজিজুর সাফায়েতের পিঠে হাত রেখে ইশারায় থামতে বলে।এরপর বাদলকে বলে,
— “বাদল আমার ছেলেরা ঝগড়া করতে আসেনি।আমরা দরকারি কথা বলতে এসেছি তোমার বাবার সাথে।”
বাদল হা করে শেখ আজিজুরের দিকে তাকায়।সে বিশ্বাস করতে পারছেনা আজিজুর তুমি করে তাকে বলছে।কি জন্য মুখে এতো মধু আজ?মনে হয়না বলবে তাকে।তাই বাদল ওদেরকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে সৈয়স দেলোয়ারকে ডাকতে যায়।মিনিট পাঁচেকের মধ্যে দেলোয়ার, লায়লা,বাদল,সামিয়া কাজের মেয়ে এসে ভীর জমায়।দেলোয়ার
আজিজুরের সরাসরি বসে বলেন,

— “কি সমস্যা?আমার বাড়িতে কেনো?”
বাদলের শরীর রাগে ফুঁসে উঠে।এমন ভাবে কথা বলছে যেনো ওরা ভিক্ষুক।শেখ আজিজুর ঠান্ডা স্বরে বলেন,
— “শত্রুতা শেষ করে আত্মীয় হতে এসেছি।”
কথা শুনে বাদল কেশে উঠলো। সামিয়া তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় বাদলের দিকে।বাদলের এইরকম ইয়ার্কি একদম পছন্দ করেনা সে।দেলোয়ার রসিকতা করে বলেন,
— “তাই নাকি?তা কিরকম আত্মীয়? ”
শেখ আজিজুরের হাসফাস লাগছে।কিন্তু মেয়ের জন্য জেদ, অহংকার এক পাশে রাখতেই হলো।বলেন,
— “বিভোর আর ধারা বেশ কয়েক মাস যাবৎ একসাথে ছিল। ঢাকার ফ্ল্যাটেই ছিল।আমরা জানতাম না, কিছুদিন আগে জানলাম।আর এভারেস্ট থেকে যে আমার মেয়েও জয়ী হয়ে ফিরেছে সেটা আপনারাও জানেন হয়তো।ওরা দুজন একসাথেই ছিল।দুজন দুজনকে ভালবাসে।একসাথে সংসার করতে চায় দুজন।আমার মেয়েটা খুব কান্নাকাটি করছিল আজ।তাই বাধ্য হয়ে আসতে হলো।আমরা চাইছি অনুষ্ঠান করে আবার বিয়ে দিয়ে আপনাদের ঘরে তুলে দিতে।”

ধারা আর বিভোর একসাথে ঢাকার ফ্ল্যাটে ছিল শুনেই বাদল এবং দেলোয়ারের মনে পড়ে, বিভোরের ফ্ল্যাটে মেয়ে মানুষের জামা পাওয়ার কথা।মানে ধারার ছিল জামাটা!কথাটা মনে আসলেও দেলোয়ার হুংকার দিয়ে বলেন,
— “কখনোই না।আমার ছেলে একা থাকতো।আর যদিও একসাথে থেকে থাকে, তাহলে এটা আপনার মেয়ের চাল।সে আমার ছেলেকে ফাঁসিয়ে একসাথে থেকেছে।যাতে আমার বাড়িতে এসে ঢুকতে পারে।ভালো মেয়েরা কখনো কোনো ছেলের সাথে এক ফ্ল্যাটে থাকবেনা।”
সাফায়েত ক্ষুদ্ধ চেহেরায় বললো,
— “আমার বোনকে নিয়ে বাজে কথা বলবেন না।ওরা স্বামী – স্ত্রী ছিল।থাকতেই পারে।আর আপনার ছেলে ফাঁসায়নি আমার বোনকে তার কি গ্যারান্টি আছে? আপনার ছেলে মেয়েখোর না তার কি গ্যারান্টি আছে?সে আপনাদের না জানিয়ে বউ নিয়ে ফ্ল্যাটে উঠলো কেন?”
বাদল আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে বলে,

— “বুঝে শুনে কথা বল।এটা আমার বাড়ি।গেড়ে দেব মাটির নিচে।আমার ভাইকে নিয়ে বাজে কথা বলবিনা।বিভোর কেমন আমরা জানি।”
সাফায়েত উঠে দাঁড়ায়।বাদলের মুখোমুখি হয়ে বলে,
— “ধারা কেমন সেটাও আমরা জানি।”
বাদল তাল মিলিয়ে বলে,
— “আমরাও জানি তোর বোন কেমন।বিয়ের রাতে বয়ফ্রেন্ডের জন্য পালাইছে।এখন কি বয়ফ্রেন্ড মানে নাই?আমার ভাইয়ের ঘাড়ে পড়ছে কেন?”
সামিত উঠে দাঁড়ায়।যথাসম্ভব গলার স্বর শান্ত রেখে বলার চেষ্টা করে,
— “ধারা বয়ফ্রেন্ড ছিলনা।ও মিথ্যে চিঠি দিয়েছিল।ট্রাভেলিং এর জন্য পালিয়েছে।বিশ্বাস না হলে আমার এলাকায় খোঁজ নিতে পারো।এলাকার প্রায় সবাই জানে ওর বিয়ে ঠিক করলেই ও পালাতো।”
দেলোয়ার উঠে দাঁড়ান।বলেন,
— “তাহলে তোমাদের কথায় মেয়ে মিথ্যেবাদীও?এমন মেয়েকে বাড়িতে আবার আনবো ভাবলে কি করে?আর এইযে আজিজুর সাহেব।আপনি আসতে পারেন।আমরা এমন ক্যারেক্টারের মেয়েকে বাড়িতে আনবোনা।ভদ্রভাবে বলছি… প্লীজ আসুন।অভদ্রতা দেখাতে চাইছিনা।”

অপমানে শেখ আজিজুরের মুখ চুপসে যায়।এমন ভাবে অপমানিত কখনো হন নি।সামিত নিজেকে আর কন্ট্রোল রাখতে পারেনি।লাথি দিয়ে সোফা টেবিল সরিয়ে দেয়।এরপর পায়ে গটগট আওয়াজ তুলে বেরিয়ে যায়।সাফায়েত শেখ আজিজুরকে ধরে নিয়ে বাইরে আসে।এ বাড়ির মুখো আর জীবনে হবে না প্রতিজ্ঞা করে।
সৈয়দ লায়লা দেলোয়ারকে কঠোর স্বরে বলেন,
— “এমন না করলেও পারতে।বিভোর যদি শুনে কি হবে?”
দেলোয়ার মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়িয়ে বলেন,
— “তোমার ছেলে কি করবে? কিছুইনা।আবেগে মেয়েটার সাথে থাকছে একসাথে।ভালবাসলে বলতোনা বিয়ের কথা?”
লায়লা ছিঃ ছিঃ করে উঠেন,

— “তোমার ছেলে সত্যি এমন করে থাকে তাহলে তুমি সাপোর্ট দিতে?ছিঃ।আর আমি এতো নোংরা মানসিকতার ছেলে জন্ম দেয়নি যে একটা মেয়েকে ভাল না বেসে একসাথে থাকবে এরপর ঘরে তুলবেনা।”
সামিয়া বলে,
— “একটা মেয়ে কি বলছেন আম্মা।ধারা তো ছোট ভাইয়ের বউ।ব্যাপারটা পজিটিভ নেওয়াই যায়।আর ছোট ভাই আমাকে বলছে আগামীকাল ঢাকা থেকে ফিরে বিয়ের কথা তুলবে।ছোট ভাই ধারাকে ঘরে তুলতে চায়।”
সৈয়দ দেলোয়ার বিস্ফোরিত চোখে সামিয়ার দিকে তাকান।প্রশ্ন করেন,
— “তুমি জানতে?”

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৫১

সামিতা শ্বশুরের চোখের দিকে তাকিয়েই উত্তর দেয়,
— “জ্বি আব্বা।আর….ছোট ভাই পাগলের মতো ভালবাসে ধারাকে।ধারা ছোট ভাইকে বাঁচিয়েছিল লাইফ রিক্স নিয়ে।এসব কাল ফিরেই আপনাদের বলতো ছোট ভাই।”
বাদল থতমত খেয়ে যায়।কন্ঠ নামিয়ে দেলোয়ার কে বলে,
— “আব্বা বিভোর যদি এসে হাঙ্গামা করে? ”

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৫৩