ভালোবাসার ফোড়ন পর্ব ২৯

ভালোবাসার ফোড়ন পর্ব ২৯
লেখনিতে : মিমি মুসকান

সোফায় বসে আছি আর আমার পাশে বসে আছেন উনি। কি আমার শাড়ি’র আঁচল নিয়ে গুঁতাগুঁতি করছে। আমার সামনে বসে আছে নিতি, টিনা, সেই ছেলেটা তবে হাতে মুখে ব্যান্ডেজ করা, ইতি ‌,আকাশ,‌আনাফ আর নাহান ভাইয়া। সবাই এসেছে উনাকে নিতে আনিকা”র‌ বিয়েতে। কিন্তু উনি কিছু বলছেন চুপচাপ বসে আছে, ওদের যে বিরক্ত লাগছে সেটা আমি নিজেকে দেখেই বুঝতে পারছি। প্রায় অনেকক্ষণ এভাবে বসে থাকার পর সেই ছেলেটা, টিনা আর নিতি আমায় সরি বললো। মনে মনে অনেক খুশি লাগছিলো কিন্তু আমি কিছুই বলি নি। কারন উনি আগে থেকে বলে দিয়েছে কিছু বলতে না আমায়। এক পর্যায়ে নিতি বলে উঠে…

– আহি সরি বললাম তো! এখনো রেগে থাকবি। মেয়েটা বসে আছে, আজ ওর বিয়ে চল এখন।
নাহান ভাইয়া বলে ওঠে…
– কতোক্ষণ বসে থাকবি এভাবে শাড়ির আঁচল ধরে।
উনি এবার বলে উঠে…
– বউ আমার যতক্ষন ইচ্ছা ওর শাড়ির আঁচল ধরে বসে থাকবো।
আমি উনাকে ফিসফিসিয়ে বললাম…
– মা আসবে এখন শাড়িটা ছাড়ুন এখন!
– চুপ হয়ে বসে থাকো। কথা বলো না!
আকাল ভাইয়া বলে ওঠে…
– আহি চল এখন!
– আমি যাবো না!
– কেন যাবি না?
সবাই পাশে তাকিয়ে দেখে মা দাঁড়িয়ে আছেন। মা আবার বলতে শুরু করেন…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– বন্ধু দের মধ্যে ঝগড়া হবে এটা স্বাভাবিক, তাই বলে তুই এমন কেন করবি। সবাই তোকে নিতে এসেছে আর তুই যাবি না বলছিস।
– মা তুমি জানো না কি হয়েছে?
– জানতে চাইও না, তোদের বন্ধুদের ব্যাপার তোরা বোঝ কিন্তু তাই বলে মেহমানদের এভাবে অপমান করবি।
– মেহমান কারা আবার?
ইতি বলে উঠে…
– এই যে ভাইয়া আমরা…
আমি বলে উঠে…
– মা আমিও অনেক বলেছি আপনি এখন বলুন!
– নিহাও বলেছে তার পর ও কেন বসে আছিস! ওঠ বলছি যা!
– মা…
– আহি আমি কি বললাম!
– যাচ্ছি!

বলে আমার শাড়ি’র আঁচল ফেলে ‌রুমে গেলেন। রুমে গিয়ে আমাকে ডাকতে শুরু করলেন। সামনে তাকিয়ে দেখি নিতি’রা বাদে সবাই মুখ টিপে হাসছে। মা ওখান থেকে চলে গেছেন। আমি মাথা নিচু করে উনার কাছে গেলাম। সেদিনের মতো আজও পুরো রুমের অবস্থা খারাপ, এখানে ওখানে জামা কাপড় ছিটিয়ে পরে আছে। একটু আগে বললো যাবে না আর এখন ঘরের এই অবস্থা। আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আমাকে বললেন…
– পাঞ্জাবি কোথায়? খুঁজে পাচ্ছি না!
– তাই বলে ঘরের এমন অবস্থা করবেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেই তো হতো!
– এই যে জিজ্ঞেস করলাম বলো এখন!
– ওই যে টেবিলে আমি গুছিয়ে রেখেছি।
– আচ্ছা তুমি রেডি হয়ে নাও এসব সার্ভেন্ট এসে গোছাবে বুঝলে।
– হুম!

আমরা তৈরি হয়ে দুজনে একসাথে নিচে নামলাম। উনি লাল রঙের পাঞ্জাবি পড়া আর আমি লাল রঙের একটা শাড়ি। সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। ইতি বলে উঠে..
– একদম পারফেক্ট জুটি লাগছে দুজনকে!
ইতি কথাটা নিতি কে শুনিয়ে বলেছে এটা আর কেউ না বুঝুক আমি বুঝেছি। নিতি’রা আর দাঁড়িয়ে না থেকে বের হয়ে যায়। আকাশ ভাইয়া আমাদের দেখে খানিকটা প্রশংসা করলেন। অতঃপর সবাই গাড়িতে ওঠলাম। আমি আর উনি উনার গাড়িতে বাকিরা তাদের নিজ নিজ গাড়িতে। বিয়ের বাড়িতে যাবার পর সবাই গাড়ি থেকে নেমে গেছে আমি নামতে যাবো হুট করেই উনি আমার হাত ধরে বলে…

– আমার কথা আগে শুনো এরপর যাবে!
– কি কথা!
– একা একা কোথায় যাবে না, সবসময় আমার সাথে থাকবে, আমার হাত ছেড়ে হাঁটবে না বুঝলে।
– একটা কাজ করুন আমার শাড়ি’র‌ আঁচল টা নিজের হাতে বেঁধে নিন। তাহলে আপনার সাথে থাকবো সবসময়
– হ্যাঁ এটা ভালো বলেছে! দেখি তোমার শাড়ি…
– রাখুন তো! বিয়ে বাড়ি আমি হারিয়ে কোথায় যাবো আজব। এতো বলার কি আছে।
রেগে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। উনি ও বের হয়ে বললেন..
– যা বলেছি সব যেন মনে থাকে।

অতঃপর আমার হাত ধরে ভিতরে ঢুকেন।‌ সবাই আমাদের এমন ভাবে দেখছে যেন ভিন গ্রহের কোনো প্রানী আমরা। আনিকা উনাকে দেখে অনেক খুশি হলো। সে স্টেজ থেকে আহি’র‌ কাছে আসল। অতঃপর আমার কাছে এসে আমাকে জরিয়ে ধরল। সরি ও বলল! যাই হোক খুব ভালো মতো বিয়ে সম্পন্ন হলো। নিতি কে মাঝে মাঝে দেখলাম কিভাবে রেগে আমার দিকে তাকাতে। আমার জন্য এটা স্বাভাবিক কারন নিতি এটা সহজে মেনে নিবে না এটা আমি জানি।

কিন্তু উনি আমাকে কোথাও একা ছাড়লেন। পুরো বিয়ে বাড়িতে আমার হাত ধরে ছিলেন। ইতি আর আকাশ ভাইয়া এটা নিয়ে কম মজা করেনি তবুও উনি আমার হাত ছাড়েনি। আনিকা’র মা আমাকে অনেক আদর করলেন যখন জানলেন আমি আহিয়ান এর স্ত্রী। তিনি আহিয়ান কে অনেক আদর করেন বিধায় আমাকেও কম করলেন না। বেশির ভাগ মানুষই শুধু আমাকে দেখতে লাগল। অনেকে বলাবলি করতে লাগল, বিয়ে ব্যাপারে তারা কিছু জানলো না, এটা কেমন বিয়ে, কেন কেউ কি বুঝতে পারলো না। এরকম নানা ধরনের কথা। সত্যি’ই মানুষের কাজ শুধু অন্যের সমালোচনা করা। এখন সে যত’ই ব্যস্ত হোক না কেন সেই সমালোচনার মজা কেউ ছাড়তে চায় না। কি যে পায় এইসবে আমি বুঝি নাহ।

আনিকা কে বিদায় দিয়ে আমরা বাড়িতে আসলাম। আসতে আসতে অনেক রাত হলো, আর খুব ক্লান্ত হয়ে পরলাম। আমি কোন কাজ করিনি বটে তবুও সেখানকার মানুষের বক বক শুনে আমি অনেক ক্লান্ত। তারা কিভাবে যে এতো কথা বলতে পারে এটা ভাবতেও আমারা অবাক লাগে। যাই হোক উনার কোনো খবর জানি না। আমি এসেই চেঞ্জ না করে ঘুমিয়ে পরলাম।

সকালে কারো চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙল। ঘুম থেকে উঠে দেখি প্রায় অনেক বেলা হয়ে গেছে। এতোক্ষণ কিভাবে ঘুমালাম, পাশে তাকিয়ে দেখি উনি নেই। তার মানে উনি উঠে গেছেন কিন্তু আমাকে উঠায় নি। এটা কি হলো আমাকে ডাক দিলো না কেন?
কিন্তু এতো জোরে জোরে কথা বলছিলো কে? আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলাম। নিচে তাকিয়ে দেখি বসার ঘরে কেউ বসে আছে। একজন মহিলা, সে এতো জোরে জোরে কথা বলছে। কিন্তু কে উনি?

মা আমাকে দেখে নিচে আসতে বললেন। আমি নিচে আসলাম। দেখি আপু আর উনি বসে আছেন সোফায় আর সেই মহিলাও। এখন তাকে আরো ভালো করে দেখছি। মধ্যবয়স্কী একজন মহিলা, ফর্সা গায়ের রঙ, বাঙালি সাদা শাড়ি পড়া, চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা পড়া, খুব সাজগোজ করতে ভালোবাসে দেখেই মনে হচ্ছে। গয়না – গাটি পড়া এমনকি কানের উপরে অবদি ফুটানো আর সব গুলোতেই দুল পড়া। দেখে মনে হয় না এতো বয়স তার খুব পরিপাটি থাকেন তিনি। খুব রাগিও বটে, আমাকে দেখে মুখটা কেমন বেজার করে ফেললেন।
মা তাকে বললেন..

– কাকী এই হলো আপনার আহি’র বউ! আর নিহা এনি হলেন তোমার দাদি শাশুড়ি!
আমি সাথে সাথে তাকে সালাম দিলাম। উনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন…
– আয়ানা’র মা তোর কি চোখ নষ্ট হয়ে গেছিলো গা! আমার আহি’র জন্য এই মেয়ে আনলি তুই!
আমি তার কথা শুনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। মা হেসে বললেন…
– কাকী আপনার আহি পছন্দ করে বিয়ে করেছে আমি আপন না করে পারি বলুন।
কাকী বলেন…

– এখনকার ছেলে মেয়েদের আবার পছন্দ। আমাদের সময় মা বাবাদের কথাই ছিল শেষ কথা আর এখানকার মেয়ে ছেলে রা। বাপরে বাপ।
আহিয়ান বলে উঠে…
– কিন্তু দাদী, দাদা নাকি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন! তাহলে…
আহি’র‌ কথায় উনি হেসে দিলেন। উনাকে খুব ভালোবাসে হয়তো। কাকী বলে ওঠে…
– ভালোবেসে বিয়ে করলে কি হবে দেখলি না আমাকে একা ফেলে চলে গেলো।
– চিন্তা করো কেন? তুমি এখনো অনেক সুন্দরী দেখতে। চলো আরেকটা দাদা নিয়ে আসি।
– তবে রে ( বলেই উনার কান টানলেন )

সবাই হাসিতে ফেটে ওঠলেন। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। উনি আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর ভাবে বলে উঠেন…
– কিন্তু আহি তোর মা তোর বউ কে কিছু শেখায় নি দেখ। বাড়ির বউ এখন উঠেছে ঘুম থেকে। তাহলে কি করে হবে শুনি। বউ দের উচিত সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য রান্না করা। আর দেখে মনে হচ্ছে এখনো গোসল করে নি। আচ্ছা ও কি জানে না নতুন বউ রা গোসল না করে ঘর থেকে বের হয় না।
আমি চুপচাপ উনার কথা শুনছি। আপু বলে উঠে…

– দাদি প্রতিদিন ওই তাড়াতাড়ি উঠে সবার জন্য রান্না করে। তবে কাল অনেক রাত করে আহি’র সাথে বাড়ি এসেছে। তাই আজ উঠতে দেরি হয়ে গেল।
– বাহ এখন’ই দেখছি ‌ভাইয়ের বউ এর সাধ দিচ্ছিস। তা ভালো মিল থাকা ভালো। কিন্তু আমার আহি ও তো ওর আগে ঘুম থেকে উঠলো। স্বামী উঠার পরও স্ত্রী ঘুমিয়ে থাকে কিভাবে লা!

আমি দাদী’র কথা শুনে উনার দিকে তাকাচ্ছি। উনি মুখ টিপে হাসছে। বেশ মজা লাগছে উনার। আমাকে দাদী’র হাতে বকা খাওয়ানো। ইচ্ছে করে উনি আমাকে ঘুম থেকে তুলেননি। দাদী আরো কতোক্ষণ আমাকে বক্তৃতা দিলো আর উপদেশ যার অনেকটাই আমার মাথা’র ওপর দিয়ে গেল। কারন বেশির ভাগ কথাই আমি বুঝতে পারি নি। শুধু স্বামীর সেবা আর সেবা! তবুও আমি শুধু মাথা নেড়ে গেলাম। উনি বলে উঠেন…
– এখন যাও গোসল করে রান্না ঘরে যাও। দুপুরের খাবার রাধো গিয়ে।
উনার কথায় আমি জ্বি বলে রুমে চলে এলাম। আমার পুরো মাথা ধরে গেছে।‌ কিছুক্ষণের জন্য একটু বসে পরলাম। তখন মা এলেন। আমার পাশে বসে বললেন…

– নিহা!
– জ্বি মা!
– মন খারাপ।
– না মা।
– আসলে উনি খুব শক্ত মানুষ, দেখলে তো। মনের জোড় খুব আর একটু রাগিও। তাই বলে কি যতদিন উনি এখানে থাকে ততোদিন তুমি ভার্সিটিতে যেও না।
– আচ্ছা মা।
– আর শোন সবসময় উনার কথা শুনবে, উনি যা বলুক তাতেই হ্যাঁ বলবে। আসলে উনি আগের যুগের মানুষ। বোঝোই তো‌ সবার গুরুজন তিনি। উনার কথাই সবার শুনতে হয়।
– হ্যাঁ মা আমি বুঝতে পেরেছি।
– আমি জানি তুমি বুঝবে। তোমার উপর ভরসা আছে আমার। অনেকটা রাগি তিনি তবে যতটা রাগি ততোটাই ভালো। আহি আর আয়ানা কে অনেক আদর করে বুঝলে। তোমাকেও করবে কিন্তু একটু সময় লাগবে বুঝলে।
– হুম মা।
– যাও গোসল করে উনার কাছে যাও নাহলে আবার রেগে যেতে পারেন।
– আচ্ছা মা!

অতঃপর আবার উনার কাছে গেলাম। উনি খুব ভালো ভাবে আমাকে পর্যবেক্ষণ করলেন। অতঃপর পর বললেন রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করতে। তার আগে বললেন চুল যেন বেঁধে রান্না করতে যাই। আমিও তাই করলাম। উনার কথামতো আমি রান্না করতে গেলাম। রান্না ঘরে কোনো সার্ভেন্ট নেই। আমি একাই সব রান্না করছি। কয়েক রকমের ভর্তা করতে বলেছেন আর খিচুড়ি। আমি ভর্তা বানিয়ে এখন খিচুড়ি রাঁধছি। হুট করেই কেউ আমার চুলের কাঠি খুলে দিলো। আমার খোঁপা করা চুল সব খুলে গেল। আমি তাকিয়ে দেখি উনি আমার কাঠি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

– কি করলেন এটা আপনি?
– বেশ করেছি! তোমাকে না বললাম চুল বেঁধো না তাহলে বাঁধলে কেন?
– দাদী বলেছেন বাঁধতে। এখন দিন দাদি দেখলে খুব বকবে।
– বকুক ভালো হবে। অবশেষে ভূতনি কারো কাছে জব্দ হবে।
– আপনার খুব মজা লাগে নাহ আমি বকা খেলে।
– আসলেই খুব…
হাসতে হাসতে কাঠি নিয়ে চলে গেলেন। উনার হাসি দেখে আমার রাগ হচ্ছিল। কোনোমতে হাত দিয়ে খোঁপা বেঁধে রান্না শেষ করলাম। অবশেষে দাদী খেয়ে গম্ভীর স্বরে বললেন..
– ভালো হয়েছে! নাহ রান্না করতে পারো তুমি তাহলে!

উনার ভালো লেগেছে শুনে শান্তি পেলাম। যাক আমার ‌কষ্ট সফল হলো। এরকম করে ১ সপ্তাহ কেটে গেলো। এই ১ সপ্তাহ ধরে আমাকে সব রান্না করতে হয়েছিল। সকাল, দুপুর আবার বিকালের নাস্তা। এছাড়াও দাদী’র‌ খেতমদ তো আছেই। মা’কে রান্না ঘরে আসতে মানা করে দিয়েছে দাদী তাই উনি আসেন না। আর উনি ছিলেন শুধু মজা নেওয়ার জন্য। যখন তখন এসে আমাকে জ্বালিয়ে মারতেন। সেদিন এসেছিল আমাকে রান্না’য় সাহায্য করতে।‌ এই বলে খাবারে নুন দিতে গিয়ে পুরো লবন’ই‌ দিয়ে দেন। অতঃপর অসহায় মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন “সরি”. ইচ্ছে করছিল উনার মাথা ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু দাদী এসে যদি শুনে স্বামীর সাথে ঝগড়া করছি তাহলে আমার ‌একদিন করে ছাড়বে। তাই দাঁতে দাঁত চেপে উনাকে বের হতে বললাম। এই শেষ এরপর থেকে আমি রান্না করতে আসলে উনি বক বক করে আমাকে সাহায্য করেন। তবে হ্যাঁ কিছু থালা বাসন ধুয়েও সাহায্য করে বটে। এতো দিন উনিও ভার্সিটিতে যায় নি।

তবে আজ গেছেন। কোনো কাজে স্যার ফোন করে যেতে বলেছেন ওকে। আমি সকাল সকাল উঠে সবার জন্য নাস্তা বানালাম। সবাইকে খাইয়ে দিলাম কিন্তু উনি না খেয়ে চলে গেছেন তাই আমিও আর খেলাম না। কিছুক্ষণ পর পর দাদী বলতেন তার জন্য পা আর চা বানিয়ে দিতে। পান খেতে খুব ভালোবাসেন তিনি আর সেটা আমাকেই বানিয়ে দিতে হয়। কারন আমার হাতের পান নাকি তার খুব ভালো লাগে। সেদিন মা বললো দাদী নাকি আমার প্রশংসা করেছেন তার কাছে।‌

ভালোবাসার ফোড়ন পর্ব ২৮

তবে আমার সামনে গম্ভীর ভাবেই থাকেন হয়তো ভাবেন তাহলে আমি উনাকে ভয় পাবো। দুপুরে রান্না করতে যাবো দাদী এসে বললেন আজ কিছু মেহমান আসবে, তাই যেন রান্না আরো ভালো করে করি। আর কি! রান্না নিয়ে রীতিমতো আমায় যুদ্ধ করতে হলো। আজ দাদী নিজেই সার্ভেন্ট পাঠিয়ে দিলেন আমাকে সাহায্য করার জন্য। মা’র কাছ থেকে শুনলাম দাদী’র কিছু বান্ধবী’রা আসবেন। তারাও দাদী’র মতো! তাই জেনো ‌বুঝে শুনে উওর দেই তাদের।
সারাদিন না খেয়েই তাদের সেবাযত্ন করে গেলাম। উনি এখনো বাসায় আসে নি।‌ আর খাওয়া হলো না আমার। দাদী হঠাৎ ডেকে বললেন সবার জন্য পান বানাতে। সত্যি বলতে কি দাদী’র‌ বান্ধবী’রা দাদী’র থেকেও আরো গম্ভীর স্বভাবের। তার সাথে রাগিও। কাজে কাজে শুধু খুদ ধরেন। আমি পান বানিয়ে দাদী কে দিতে গিয়ে হঠাৎ করেই ‌মাথা ঘুরে গেল। দাদি আমার হাত ধরে বললেন…

– ঠিক আছো নাত বউ!
– জ্বি দাদী একটু মাথা ঘুরলো শুধু!
আমার কথায় তারা সবাই মিটিমিটি হাসলো। আমি বুঝতে পারলাম না। পান দিয়ে চলে আসলাম। সারাদিন কিছু খায়নি এখন ভাবলাম একটু বিস্কিট খাবো। একটা বিস্কিট মুখে দিতেই কেমন জানি লাগল। আমি সেটা মুখ থেকে ফেলে দিয়ে হাত মুখ দিয়ে পিছনে ঘুরলাম। পিছনে ঘুরেই অবাক হয়ে গেলাম কারন দাদী আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। তার এই হাসির মাঝে যেন রহস্য আছে বলে মনে হচ্ছে। হঠাৎ দাদী চেঁচিয়ে মা কে ডাকলেন। মা তাড়াহুড়ো করে নিচে আসলে দাদী হেসে হেসে মা কে বললেন…
– বুঝলে আয়ানা’র মা। এতোদিন আমি দাদী ছিলাম আজ মনে হচ্ছে সেই সুসংবাদ তুইও পেলি লা!

ভালোবাসার ফোড়ন পর্ব ৩০