ভালোবাসার ফোড়ন পর্ব ৩৫

ভালোবাসার ফোড়ন পর্ব ৩৫
লেখনিতে : মিমি মুসকান

হঠাৎ উনি আমার বাহু ধরে আমাকে নিজের কাছে টানলেন আর বললেন…
– নাও ধরলাম তোমায়!
আমি রেগে গিয়ে বললাম..
– ছাড়ুন আমায়!
উনি সাথে সাথে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দু’পা পিছনে চলে গেলেন। আমি হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছি। বলে উঠি..
– ছেড়ে দিলেন…
– তুমিই তো বললে ছেড়ে দিতে।
আমি অসহায় মুখ করে বলি,

– আমি বললাম আর ছেড়ে দিলেন। হ্যাঁ ছেড়েই তো দিবেন, আমাকে কেন ধরবেন, ধরবেন তো নিতি কে নাহ, ক্রাশ’কে। আচ্ছা আবার নতুন ক্রাশ হয় নি তো আপনার।
– নিহা.. কি বলছো এসব!
– যা ইচ্ছে করুন, ক্রাশ কেন বউ কে ও নিয়ে আসুন। চুলোয় যান আপনি আর আপনার ক্রাশ।
বলেই দৌড়ে চলে আসলাম। উনি পিছনে থেকে ডাকলেন কিন্তু আমি শুনি নি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শুনবো কেন? কি সুন্দর কথা বললেন তুমি ছাড়তে বলেছো তাই ছেড়ে দিয়েছে, কি সুন্দর কথা। ঠিক’ই তো আমি বলেছি তাই ছেড়ে দিয়েছে অন্য কেউ বললে কখনো ছাড়তো না। ছাড়বে কেন? সেটা কি আমি নাকি!
থাকবো না আর উনার সাথে, থাকবো না এই বাড়িতে চলে যাবো। হ্যাঁ চলেই যাবো।
বলেই বাইরে তাকাতে দেখি আমি বাড়ির বাইরে চলেই এসেছি। বাহ ভাগ্য ও তো দেখি এখন আমার সাধ দিচ্ছে। চলে যাবো বলতে বলতে এসেও পড়েছি। ভালোই হয়েছে আর যাবো না এখন চলেই যাবো। যেখানে পারি সেখানেই যাবো। এখানে আর থাকবো না ব্যস।

মেইনরোড এসে পরলাম। বিড় বিড় করতে করতে একটা বাসে এসে বসলাম। এখন খুব খারাপ লাগছে। উনি একবার আমাকে খুঁজতে ও আসলেন না। আসবেন কেন আমি চলে গেলেই তো বেঁচে যায়। একবার তো আটকাতে পারতেন আমায়। খোঁজ’ই নিলেন না আবার আটকাবেন। এর মধ্যে বাস ছেড়ে দিলো। খুব কান্না পাচ্ছে এখন আমার। কেঁদেই দিলাম, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর কেউ আমার সামনে রুমাল ধরল। আমি রুমাল নিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি উনি। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।

উনাকে দেখে অনেকটা হতবাক হলাম। কি বলবো বুঝতে পারছি না। রাগও হচ্ছে খুব, এতোক্ষণ পর এসেছে আমার খবর নিতে তাও বাসে বসে আমি কাঁদছি বলে রুমাল দিতে। বলে উঠি,

– আপনি এখানে কি করছেন?
– বাসায় চলো!
– যাবো না, যান আপনি।
– জেদ করো না চলো।
– যাবো না মানে যাবো না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন..
– আচ্ছা সরি! চলো এখন।
আমি নিশ্চুপ! উনি আবার ও বলে উঠেন..
– বললাম তো সরি! কোনো দোষ না করেই সরি বলছি।
– হ্যাঁ দোষ তো আমার আপনি কি করেছেন?
– আচ্ছা এটা কি আমার দোষ বলো তো।
– কে বললো আপনার দোষ, সব দোষ আমার।
– বাসায় যাবে না তুমি।
– বললাম তো নাহ।

উনি খানিকক্ষণ চুপ থেকে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যান অতঃপর ড্রাইভার কে বলে উঠে..
– বাস থামান!
ড্রাইভার বাস থামিয়ে দেন। উনি হুট করেই আমার হাত শক্ত করে ধরে টেনে বাস থেকে নামান। আমি যাবো না বলছি তবুও উনি জোর করছেন।
– আমি কিন্তু চেচাবো এখন!
– যা ইচ্ছে করো। কেউ মানা করে নি।
– যাবো না আমি।

উনি আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাত ছেড়ে দেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি খানিকক্ষণ নিচে তাকিয়ে হুট করেই রাস্তার মধ্যে আমাকে কোলে তুলে নেন। রাস্তায় কিছু মানুষ তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। উনি আমাকে কোলে তুলে হাঁটতে থাকে। আমি কিছু বলতে চেয়ে উনাকে দেখে আর বলি নি কারন মারাত্মক রেগে আছেন উনি। উনার চোখ থেকেই আমি বুঝতে পারছি। ভয়ে আমি উনার গলা জরিয়ে ধরি। হয়তো আজ বেশি করে ফেলেছি! কেন যে করতে গেলাম।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর উনি গাড়ির কাছে আসলেন। উনার একজন গার্ড এসে গাড়ির দরজা খুললেন। উনি শান্ত ভাবেই আমাকে গাড়িতে বসালেন। অতঃপর নিজে এসে বসলেন। আমি চুপচাপ বসে আছে। হঠাৎ উনি আমার কাছে আসতে লাগলেন। ভয়ে মুখ খিচে চোখ বন্ধ করে বসে আছি। খানিকবাদে তাকিয়ে দেখি উনি নিজের সিটে। খেয়াল করলাম আমার সিটবেল বেঁধেছে উনি। আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে, উনি আমাকে নিয়ে সোজা বাসায় এসে আমাকে আবার কোলে তুলে ঘরে নিয়ে আসলেন। ঘরে এসেই ধপাস করে আমাকে বিছানায় ফেলে দিলেন। অতঃপর গিয়ে ঘরের দরজা আটকালেন। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আছে। উনি তাকিয়ে আছে আমার দিকে,‌আমি বিছানা থেকে নেমে ‌এক কোনে বসে আছি। উনি আমার হাত ধরে দাঁড় করলেন। আমি ভেবেফেলেছি

একটা চড় এখন পড়বে আমার গালে। উনি কাছে আসাতেই আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেই।
হঠাৎ উনি একহাতে আমার কোমর চেপে ধরেন। সাথে সাথে চোখ মেলে তাকাই উনার দিকে। উনি আমার গালে হাত রেখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, আমি দৃষ্টহীন ভাবে তাকিয়ে আছি। উনি ধীরে আমার কাছে এসে আমার ঘাড়ে গভীর করে একটা চুমু দেন। উনার এমন কান্ডে আমার সবঙ্গ অস্থির হয়ে পড়ে। আমি নিজেই ছিটকে উনার থেকে দূরে সরে যায়। অসম্ভব ছিল তখন উনার সাথে দাঁড়ানো। এক পাশে দাঁড়িয়ে ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকি আমি। উনি দূরে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। হুট করেই বলে উঠেন…

– যেখানে আমার ছোঁয়া তোমার সহ্য হয় না সেখানে তুমি আমার ভালোবাসা কিভাবে সহ্য করবে!
উনার কথায় আমি হতবাক হয়ে গেলাম, কি বলবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। উনি আমার দিকে কিঞ্চিত হেসে দরজা খুলে বাইরে চলে যান।‌আমি কিছুক্ষণ সেখানেই ধমকে দাঁড়িয়ে থাকি। অতঃপর হঠাৎ করেই মেঝেতে বসে পড়ি। উনার কথায় দু”ফোঁটা নোনা জল চোখের কোণে থেকে গড়িয়ে পড়ে। সত্যি’ই তো আমি চাইতাম উনি আমার কাছে আসুক অথচ উনি আসলেই আমি তার থেকে দূরে সরে যাই। এটা এমন কেন? উনার ছোঁয়ায় আমার অস্থিরতা বেড়ে যায়, আমার শরীর কাঁপতে থাকে। পুরো শরীর দিয়ে শিহরণ বয়ে যায়। সম্ভব হয় না উনার কাছে থাকা।

চোখ বন্ধ করে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছি আর দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছি। বাইরে মেঘ ঢাকছে, হয়তো বৃষ্টি হবে। মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল অথচ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। মুষলধারে বৃষ্টি! অনেকক্ষণ ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে, এত গতি বাড়ছে। খানিকবাদেই মনে হলো উনি তো বাইরে। এই বৃষ্টির মধ্যে বাইরে চলে গেলেন। ফোনটা নিয়ে উনাকে কল করলাম কিন্তু ফোন টা বেজেই যাচ্ছে ধরছে না। আমার টেনশন বাড়তে লাগল, ঘর থেকে বেড়িয়ে নিচে চলে আসলাম। দেখি মা বসে আছেন। তাকে জিজ্ঞেস করলাম….

– মা উনি কি বাইরে গেছেন? আপনি দেখেছেন যেতে!
– কে আহি! কই না তো অনেকক্ষণ ধরেই তো বসে আছি।‌ দেখালাম না তো।
– ওহ আচ্ছা।
– কিছু হয়েছে?
– না মা কিছু না এমন’ই‌!
অতঃপর আমি নিজে পুরো বাড়ি ঘুরতে লাগলাম। কিন্তু উনি কোথাও নেই, বাগানেও খুঁজলাম পেলাম না। অস্থির হয়ে পড়লাম। হঠাৎ চোখে একটা সার্ভেন্ট পড়তেই উনাকে জিজ্ঞেস করলাম…..
– উনাকে দেখেছো!
– আহি স্যার কে! হ্যাঁ দেখেছি তো।
– কোথায় উনি?
– ছাদে যেতে দেখেছি,এখনও মনে হয় ছাদেই আছেন।
– আচ্ছা ঠিক আছে!

ছাদে গিয়ে দেখি উনি ছাদের গ্রিল এর সাথে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ছাতা নিয়ে উনার পিছন থেকে ডাক দিলাম। উনি আমার দিকে ঘুরলেন। এই বৃষ্টির মধ্যে দুজন দুজনকে দেখছি। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার উনি। বলি উঠি…
– ঠান্ডা লেগে যাবে আর ভিজবেন না চলে আসুন।

আমার কথা উনার কানে গেছে কিনা জানিনা তবে উনি এখনো আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। আমি আবার ডাকায় উনি আমার কাছে আসলেন। উনার কাছে আসাতেই আমার শরীর আবার কাঁপতে লাগল। বাতাসে ছাতাও আমার হাত থেকে ছিটকে গেলো। এখন আমিও বৃষ্টিতে ভিজছি, বৃষ্টির স্রোতের কারনে উনাকে ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছি না। তবে উনি আমার কাছেই আছেন। উনি আবারও আমার দু’গালে হাত রাখেন। উনার ছোঁয়ায় আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিই। উনি এবার আমার কপালে গভীর ভাবে চুমু গেলেন। এই বৃষ্টির প্রতি ফোঁটা কণার মাঝেও উনার ছোঁয়া আমি অনুভব করতে পারছি। খানিকবাদেই চোখ খুলে দেখি উনি নেই। কোথায় গেলেন উনি? আমি কি স্বপ্ন দেখছিলাম নাকি! হয়তো, এখানে নেই তো উনি। আমি চলে যেতে নিই হুট করেই শাড়ির আঁচল টান খেলো। সাথে সাথে পিছনে ঘুরে দেখি আমার শাড়ির আঁচল ধরে দেওয়ালে’র সাথে ঠেসে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।

আমি উনার কাছে গেলে উনি বলে উঠে..
– আর ভিজা লাগবে না এইবার নিচে চলো।
বলেই আমার হাত ধরে নিচে নিয়ে যান।

বিছানায় বসে কোলে বালিশ নিয়ে দু’গালে হাত দিয়ে বসে আছি, চুল থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে। উনি চেঞ্জ করে ওয়াসরুম থেকে বের হলেন। একটা খয়রি রঙের টি শার্ট আর জিন্স পড়া উনি। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছছে। অতঃপর আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ল। আমি বলে উঠি..
– খাবেন না!
– না ইচ্ছে করছে না।
– কিছু খাবেন না।
– না ঘুমাবো। তুমি খেয়ে এসে লাইট নিভিয়ে দাও আলোতে আমার ঘুম আসে না।
বলেই ওদিক করে ঘুমিয়ে পড়লেন। আমি লাইট নিভিয়ে এপাশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছিলো না। আমি এদিক করে উনার দিকে ফিরলাম। বাইরের আলোতে উনার মুখ দেখা যাচ্ছে। আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন তিনি। বলে উঠলেন..

– ঘুমাও নি।
– নাহ ঘুম আসছে না। আপনি ঘুমালেন না।
– নাহ।
– কেন?
– জানি না!
– এটা কেমন কথা।
– একটু এদিকে আসবে!
– কে…
বলার আগেই উনি আমাকে টেনে উনার কাছে নিলেন। নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন। দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে আছি। ঘড়ির কাঁটা আর বাতাসের শো শো শব্দ ভেসে আসছে। আমি কিছু বলার আগেই উনি বলে উঠেন…
– তোমাকে ছোঁয়ার মাঝে একটা নেশা আছে যা বার বার বার আমাকে তোমার কাছে টানে। আজ তোমাকে একটু জরিয়ে ধরে ঘুমাই হুম।

বলেই আমাকে শক্ত করে ধরে উনি ঘুমিয়ে পরেন। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না তবে ততোক্ষণে উনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। শুনেছি ভালোবাস’র মানুষের বুকে জরিয়ে ধরলে নাকি ঘুম আসে তবে আমার ক্ষেত্রে এটার বিপরীত। উনি তো ঘুমিয়ে পড়লেন কিন্তু আমি সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারি না। আমার ঘুম’ই আসলো না, আসবে কি ভাবে। উনার গরম নিঃশ্বাস আমাকে ঘাড়ে পরছিল যার কারনে আমার ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে। আমি তো সারারাত উনার হার্টবিট’র শব্দ শুনেছি‌। তবে এটা মন্দ না, প্রিয় মানুষটার এতো কাছে তার হার্টবিট এর শব্দ গুনতে পারার ভাগ্য সবার হয় না।
ভোরের আলো বেলকনি দিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো তখন আমার দু’চোখে ঘুমের রেশ আসতে শুরু করলো। কখন যে উনার বুকের মাঝে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না।

ভালোবাসার ফোড়ন পর্ব ৩৪

কিছুক্ষণ বাদেই ঘুম থেকে উঠে পরি, চোখ মেলে দেখি একজোড়া চোখ তাকিয়ে আছে আমার দিকে! তার চোখে অনেক রহস্য, অনেক অজানা তথ্য। অনেক জানতে ইচ্ছে করে এইসব তবে জানি সে না বললে কিছু’ই জানতে পারবো না। আর আমি বললেও সে জানাবে না। তবে আমাকে দেখে তার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে। তার হাসি দেখে আমি খানিকটা অবাক হই।

– আপনি! এখনো এখানে..
উপুড় হয়ে শুয়ে..
– হুম কেন?
– না এমনেই, শুয়ে ছিলেন উঠেন নি অনেক বেলা হয়ে গেছে।
– অনেক আগেই উঠেছি তবে বিছানা ছেড়ে উঠেনি।
– কেন?
– তার আগে বলো তুমি কেন উঠোনি!
আমি বসে বলি…
– আমি তো ঘুমোলাম ভোর বেলা।
– কেন? সারারাত কি পেঁচা’র সাথে গল্প করছিলে নাকি?
– না পেঁচার সাথে তবে করছিলাম একজন এর সাথে।
– কার সাথে?

– আপনাকে কেন বলবো?
– তাইতো আমাকে কেন বলবে?
– কিন্তু কাল আপনার মোটোও উচিত হয় নি আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমানো!
– কেন বাকি গুলো কি উচিত হয়েছিল!
– বাকি গুলো মানে!
– তোমায় কি শুধু আমি জরিয়েই ধরেছিলাম আর কিছু করেনি!

ভালোবাসার ফোড়ন পর্ব ৩৬