ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৭ শেষ অংশ

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৭ শেষ অংশ
সাইয়্যারা খান

বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদের খবর না রাখলেও সন্ধ্যার পর থেকে বাড়ির সবাই একটু চিন্তিত হলো। মিশি এদিকে কেঁদে যাচ্ছে। আদ্রিয়ানের রুম ও বাইরে থেকে লক করা তাই কেউ আর ঐ দিক মূখী হলো না। ফোন করেও লাভ হলো না আদ্রিয়ান রিসিভ করছে না।

রোদের এখন অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগছে। আস্তে আস্তে উঠার চেষ্টা করলো। এসির রিমোট পাশেই রাখা ছিলো। হাত বাড়িয়ে নিয়ে অফ করে দিলো। মাথাটা প্রচন্ড ভার হয়ে আছে সাথে ব্যাথা। অনেক কষ্টে বেড ধরে উঠে বসলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার রুম জুড়ে। হাতরে হাতরে নিজের ফোন নিয়ে ফ্লাস জ্বালায় রোদ। দেয়াল ধরে ধরে লাইট অন করে বেড থেকে টিশার্ট পড়ে নিলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ওয়াসরুমে ডুকে আয়নায় তাকাতেই দেখলো কপালের কাটা জায়গায় ঠান্ডায় র*ক্ত জমে গিয়েছে। সাথে চেহারায় ও কানের দিকেও র*ক্ত জমে আছে। পানি ছেড়ে ডলে ডলে নিজের চেহারা পরিষ্কার করলো রোদ। চোখ গুলো কেমন ফুলে আছে। মুখ মুছে রুমে এসে ড্রয়ার থেকে এনটিসেপটিক লাগিয়ে ছোট একটা ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো মাগরিবের সময় শেষ। মিশির কথা মনে পরতেই দরজা খুলে বের হতে চাইলো কিন্তু বাইরে থেকে লক করা। ফোন নিয়ে জারবাকে বলতেই জারবা দৌড়ে এসে বাইরে থেকে লক খুলে ডুকে বললো,

— আল্লাহ ছোট ভাবী তুমি বাসায়? তাহলে বাইরে থেকে লক কেন? আমরা আরো টেনশনে ছিলাম। মিশি তো কেঁদে কেটে অস্থির।
রোদ একদম স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো,
— মাথায় ব্যাথা পেয়েছিলাম তাই ঘুমাচ্ছিলাম। তাই হয়তো বাইরে থেকে লক করে গিয়েছে।
জারবা রোদের কাপলে ছোট ব্যান্ডেজ দেখে আরো প্রশ্নের ঝুলি খুলে বসলো। চোখ কেন এত লাল হয়ে ফুলে আছে সহ কত কি? রোদ ঠান্ডা স্বরে বললো,

— জারবা বোন আমার মাথা ব্যাথা করছে। মিশিকে একটু এনে দাও আর ওর খাবারটাও একটু দিয়ে যাও।
জারবা বুঝলো কিছু একটা। তাই আর বেশি কথা না বলে চলে গেল। রোদ বড় করে ঘোমটা দিয়ে ছিলো বলে গালের আঙুলের ছাপ জারবার নজরে পরে নি। একটু পরই মিশি দৌড়ে আসলো। মাকে দেখেই কান্না বাড়লো মেয়েটার। রোদের হাটু ঝাপটে ধরে কেঁদে কেঁদে অভিযোগ করছে,

— মাম্মা তুমি ছিলে না কেন? মিশি মিসড মাম্মা।
রোদ ওকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে বসে একটু হেসে বললো,
— মাম্মা মিসড মিশি। আমার বাচ্চা কি খেয়েছে?
— বিকেলে খালামনি খায়িয়েছে নুডুলস।
— এখন ডিনার খাবে আমার বাচ্চা।

ওদের কথার মাঝেই জারবা হাতে খাবার নিয়ে এলো। রোদ মিশিকে গল্প শুনাতে শুনাতে খায়িয়ে দিলো। সব রেখে এসে মিশিকে ঘুম পাড়াতে চাইলো কিন্তু দুষ্ট মিশি দুষ্টামি করতে ব্যাস্ত। রোদ উঠে ব্যাগ থেকে একটা ব্যাথার ঔষধ খেয়ে নিলো। প্রচুর পরিমাণ ব্যাথা হচ্ছে কপালে। লাইট অফ করে মিশিকে বুকে নিয়ে কিছুক্ষণ গল্প শুনাতেই ঘুমিয়ে গেল মিশি।
রোদ ওমনিই শুয়ে রইলো। ঘড়ির কাটা ও থেমে নেই। দশটা বাজতেই জারবা ডিনারের জন্য ডাকতে এলে রোদ আস্তে করে বললো,

— এখন খাব না জারবা। আজকে লাঞ্চ দেড়ীতে করেছি। পরে ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নিব।
জারবা চলে গেল। রোদের চোখ দিয়ে অনেকক্ষণ পরে টুপ করে কয়েক ফোটা পানি পরলো। যেই মেয়েকে আজ পর্যন্ত কেউ ধমকায় অবদি নি জোরে সেখানে গায়ে হাত তুলা তো অসাধ্য প্রায়। আজ সেই অসাধ্য সাধন করেছে আদ্রিয়ান। রোদ ভেবে পেল না আসলে এমন কি দোষ করেছে ও।

রাতুলের নাম্বার ঐ ভাবে সেফ করেছিলো যাতে কল আসলে এভয়েড করতে পারে আর আদ্রিয়ান দেখলেও ঝামেলা না হয়। ব্লক করলে রাতুল বুঝে যেত। তাই রোদ ব্লক করে নি। কথা কি কাল রোদ ইচ্ছে করে বলেছিলো। মোটেও না তাহলে কেন? আর এখন রাতুলের সাথে কথা বললেও কি? রোদ তো আর চলে যাচ্ছে না রাতুলের কাছে। এত সুখ ছেড়ে কোন পাগল যাবে?

এই যে ছোট্ট মিশি সারাক্ষণ মাম্মা মাম্মা ডাকে,আদও এই ডাক রোদের কপালে ছিলো কি না জানা নেই। মিশানটা যখন “রোদ মা” ডাকে নিজেকে বড় বড় আর দায়িত্বশীল মনে হয় রোদের। মা মা লাগে নিজেকে। অথচ এই একটা মা ডাক কে কেন্দ্র করে রোদের জীবনটা কেমন হয়ে গিয়েছিলো। আর সেই অন্ধকার জীবনে আদ্রিয়ান এসেছিলো ভোরের আলো হয়ে। যেই আলো ধীরে ধীরে রোদের পুরো পৃথিবীটাকে আলোকিত করে দিয়েছিলো এমনকি এখনও দিচ্ছে।

ভাবতেই মিশিকে আরেকটু বুকে চেপে নিলো। ওদের কে কখনও ছাড়তে পারবে না রোদ। তাই বলে আদ্রিয়ানকেও মাফ করবে না রোদ। থাপ্পড় নাহয় মারলো সে। রাগ উঠেছে মেরেছে তাই বলে তখন ওমন জঘন্য ব্যাবহার করার অধিকার নেই আদ্রিয়ানের। এতদিনের আদ্রিয়ানের প্রতি জন্মানো সকল ভালোলাগা,ভালোবাসা, সম্মান, অনুভূতিগুলো কেমন যেন মুহূর্তেই ফিকে পড়ে গেল।

একবার মন চাইলো বাসায় ফোন করতে কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো রাদ আর বাবা জানলে এ বাড়ী এসে সবাইকে ঝামেলা করবে। নিজের ভাইকে চিনে রোদ। ঘূর্ণাক্ষরেও যদি টের পায় যে আদ্রিয়ান হাত তুলেছে তাহলে এ বাড়ীতে আর পা রাখতে দিবে না রোদকে। তাই কল করার চিন্তা বাদ দিলো। মিশিকে বুকে নিয়ে শুয়ে রইলো। মাথা ব্যাথার কারণে আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে গেল রোদ।

জাইফা আজও কল করেছে রাদকে। রাদ কথা বলতে বলতে একসময় ছাদে এলো। ওর কথা বলা মানেই হলো হু হা বলে রেখে দেয়া৷ জনাবের মন হয় তো আজকে ভালো তাই তো দীর্ঘ পাঁচ মিনিট ধরে কথা বলছে। কথা আসলে জাইফা বলছে রাদ শুধু শুনছে। দুই এক সময় হয়তো হু হা করছে। জাইফা অবশেষে একটু অনুরোধের সুরে বললো,

— রাদ শুনছেন?
— হু।
— আম্মু আমার বিয়ের কথা বলছে আবারও। জাইফকে করাতে চেয়েছিলো কিন্তু ভাই না করে দিয়েছে।
— হুম।
— রাদ হুম মানে কি বুঝব আমি?
— কি বুঝতে চাইছো?
— আম্মু বিয়ের কথা বলছে?
— ওহ।
— রাদ আ’ম সিরিয়াস।

এবারের কন্ঠটা কান্নারত ছিলো জাইফার। চেয়েও আর ছন্নছাড়া উত্তর দিতে পারলো না রাদ। নরম স্বরে বললো,
— প্রস্তাব পাঠাতে বলছো?
জাইফা চমকালো। প্রস্তাব? মানে বিয়ের প্রস্তাব? জাইফা তো চাইছিলো রাদ শুধু জানাক ওর পরিবারকে সেখানে রাদ প্রস্তাব পাঠালে তো সোনায় সোহাগা। রাদকে নিয়ে জাইফার এতদিন ডাউট ছিলো। আদও ভালোবাসা আছে কি না জানা ছিলো না জাইফার। আজ যেন খুশিতে কেঁদে দিবে দিবে ভাব। মেয়েটা কান্না করেই দিলো। রাদ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— এখানে কান্নার কি হলো?
— আমি ভাবি নি রাদ।
— ভাবার কি আছে?
— ভালোবাসেন?
— প্রেম পিরিতি করার মতো রুচি আমার নেই। এতদিন কথা যতটুকু বলেছি তাতেই খুশি থাক। বিয়ের পর সব চুকিয়ে দিব৷ আর নো কথা এখন। আল্লাহ হাফেজ।

বলেই কল কেটে দিলো রাদ। বিয়ের আগে এসব প্রেম ট্রেম সাপোর্ট করে না ও। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরলো ওকে। কপালের শিরা গুলো নিমিষেই ফুলে উঠলো রাদের। ঝটকা মেরে সরিয়ে দিলো রাদ। দিশা যেয়ে পরলো ছাদের মেঝেতে। রাদ ওর বাহু ধরে টেনে নিচে নিচ্ছে। দিশা কান্না করতে করতে বললো,
— রাদ ভাই প্লিজ। কোথায় নিচ্ছেন? আমি সত্যি ভালোবাসি আপনাকে। শুনুন না আমি ভালোবাসি রাদ ভাই।
রাদ ছাদ থেকে ডিরেক্ট চাচার বাড়িতে ডুকলো। সবাই খাচ্ছিলো তখন। রাদ দিশাকে চাচার হাতে দিয়ে ঝাঁঝাঁলো কন্ঠে বললো,

— মে সামলে রাখুন। এখানে সেখানে মুখ মারতে যায়। বাকিটা বুঝে নিয়েন ইশান ভাই থেকে। আর আমার সামনে যদি আসে আর আপনার হাতে তুলে দিব না সোজা থাপ্পড়ে মাথা ঠিক করে দিব।
দিশা একাধারে কেঁদেই যাচ্ছে। চাচি তারাতাড়ি রাদকে ধরে বললো,
— কি ওইছে বাবা? দিশা কি করছে? তুমি বছো। মাথা ঠান্ডা করো। ওই তিশা খাওন বার বাবার লিগা।
রাদ চাচির দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো,

— খেয়েছি চাচি। এখন যাই। ইশান ভাই থেকে শুনে নিয়েন কি হয়েছে।
বলেই চলে গেল রাদ। চাচা তো রেগে আগুন সব শুনার পর থেকে। দিশাকে রাগের মাথায় চড় মেরে দিলেন। ভয়ে সবাই সিটিয়ে গেল। দিশা দৌড়ে ছাদে চলে গেল। রাদকে ও ভীষণ ভাবে ভালোবাসে। সেই ছোট থেকে পছন্দ করত। এই রাগ চটা রাদটাকে নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসে দিশা। দিন শেষে এক তরফা ভালোবাসা হয়ে রয়ে গেল। মানে হয় তো একটু বেশি কথা বলে দিশা,কিছুটা ছেঁচরামি করে কিন্তু সবটুকু তো রাদকে পেতেই। রাদের এত অপমান এত থাপ্পড় খেয়ে ও ভুলে যায় নি দিশা বরং বেহায়ার মতো ঘুরেছে পিছুপিছু।

কোন ছেলে যখন কোন মেয়ের জন্য পাগলামি করে তখন সেটাতে প্রেমিক বলে পাগলকরা প্রমিক আর যদি কোন মেয়ে সেই পাগলামি করে তাহলে তাকে ছেঁচরামি অথবা নোংরামি বলে।
রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালো দিশা। এই তিন তলার ছাদ থেকে পড়ে সর্বোচ্চ হাত, পা ভাঙবে মরবে না দিশা। এতে যদি রাদের একটু মন গলে। উঁকি ঝুঁকি দিয়ে ভালোমতো আশে পাশে দেখে নিলো দিশা। এখনই ঝাঁপ দিবে।

রাত তখন প্রায় ১টা। অফিসে নিজের কেবিনে বসে হাতের থাকা র*ক্তের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ান। এটা তার রোদের র*ক্ত। যাকে এতটা ভালোবেসে আগলে আগলে রাখে ঐ ভালোবাসার র*ক্ত। কতটাই না নিকৃষ্ট আদ্রিয়ান ভাবলো নিজে নিজে। কিভাবে রোদের সামনে যাবে? রোদ কি আদও মাফ করবে? যদি চলে যায়? আদ্রিয়ান কি করবে তাহলে?

এতসব ভাবনার মাঝেই একজন গার্ড এসে নক করলো। আদ্রিয়ান, “কাম ইন” বলতেই লোকটা নিচু স্বরে বললো,
— স্যার সব স্টাফ অনেক আগেই চলে গিয়েছে। আমার ডিউটির টাইম….
আর বলতে হলো না আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়িয়ে গেল। ফোনটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল।

বাসায় এসে রুমের দরজা বাহির থেকে খোলা দেখেই যেন আদ্রিয়ানের আত্মা শুকিয়ে গেল। রোদ কি তাহলে চলে গেল? তারাতাড়ি রুমে ডুকে লাইট অন করতেই কলিজায় পানি এলো। না যায় নি রোদ মিশিকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। দরজা লাগিয়ে ডুকলো আদ্রিয়ান। পাশে যেয়ে তাকিয়ে রইলো অপলক। গালে আঙুলের ছাপ স্পষ্ট। কপালের ব্যান্ডেজের উপর দিয়েই লাল হয়ে আছে। হয়তো ক্ষতটা গভীর। আস্তে আস্তে বিড়াল পায়ে রোদের সামনে এসে বসলো আদ্রিয়ান। রোদের মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো। কি থেকে কি হয়ে গেল? ভালোই তো ছিলো সব তাহলে কেন আদ্রিয়ান নিজেকে সামলাতে পারলো না? ওর অতীত জঘন্য হতে পারে তাই বলে তো তার রোদ খারাপ না। অনুশোচনায় জর্জরিত আদ্রিয়ান আস্তে করে মিশিকে রোদকে থেকে সরিয়ে নিলো। উঠে জারবার রুমে দিয়ে আসলো।

রোদ তখনও বেভুর ঘুমে। আস্তে একটা অয়েন্টমেন্ট নিয়ে বেডে বসলো। গলায় লাল হয়ে আছে। আস্তে করে আঙুলের সাহায্য অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিলো। পরপর ঘাড়ের দিকে। টিশার্ট উঠাতেই কিছুটা আঁতকে উঠল আদ্রিয়ান। সাদা নরম পেটটায় লাল হয়ে আছে। লাল দাগে অয়েনমেন্ট লাগালো আদ্রিয়ান। যতক্ষণ ধরে এসব করছে ততক্ষণ শুধু ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে। অপরাধবোধ যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আদ্রিয়ানকে। ঠোঁট লাগিয়ে চুমু খেল পেটে। ঘুমের মধ্যেই কেঁপে উঠল রোদ। আদ্রিয়ান কপালের ব্যান্ডেজটাও চেঞ্জ করে দিলো। রোদের মাথায় হাত দিয়ে আস্তে করে ভাঙা আওয়াজে ডাকলো,

— রোদ? র..রোদ?
এত মৃদু আওয়াজে রোদের কানেও হয় তো গেল না। আদ্রিয়ানের গলা দিয়েও যেন আওয়াজ বের হতে চাইছে না। কেমন কান্না আসছে ভেতর ফেটে। কান্নারত কন্ঠে অপরাধনবোধ মিশিয়ে আদ্রিয়ান আবারও কানের কাছে মুখ নিয়ে ডাকলো,
— এই সোনাপাখি। রোদ? উঠো না একটু।

আদ্রিয়ান এমন ডাকে প্রথমে নড়েচড়ে উঠলো রোদ। আস্তে আস্তে ঘুম ছুটে গেল। আদ্রিয়ানকে দেখেই আস্তে করে উঠে বসলো দূরত্ব বজায় রেখে। এতেই যেন বুকে চিনচিন ব্যাথা করলো আদ্রিয়ানের বুকে। আস্তে করে এগিয়ে আসলো রোদের কাছে। রোদ নিজের মতো বসে আছে। তাকাচ্ছেও না। আদ্রিয়ান রোদের গোল মুখটা নিজের কম্পমান দুই হাত দিয়ে আঁজলায় নিয়ে নিলো। মুখটা উঁচু করতেই রোদের নজর গেল আদ্রিয়ানের দিকে।

কোন আওয়াজ ছাড়া কান্না করছে আদ্রিয়ান। চোখ দিয়ে শুধু পানি পরছে। আদ্রিয়ান নিজের মুখ এগিয়ে আনলো রোদের দিকে। লাল হওয়া ফুলে যাওয়া গালে ঠোঁট লাগাতে যেয়েও যেন দ্বিধা কাজ করলো। যদি ব্যাথা পায়? তবুও সাহস করে আস্তে করে ঠোঁট ছোঁয়ালো রোদের গালে। রোদ তখনও ঠাই বসে। আদ্রিয়ানের কিছু বলার ভাষা নেই। দুই হাতে রোদের নরম হাত দুটো পুরে নিলো। অসংখ্য চুমু খেলো তাতে। আদ্রিয়ান রোদকে নিজের কাছে জড়িয়ে ধরতে নিলেই ঝাকটা মে’রে সরিয়ে দিলো রোদ। চমকে আহত নজরে তাকালো আদ্রিয়ান। রোদ উঠে দাঁড়িয়ে চোখ ভর্তি পানি নিয়ে শক্ত গলায় বললো,

— আমার থেকে দূরে থাকবেন। আমি তো চরিত্রহীন। আমাকে ছুঁবেন না আপনি। কাছেও ঘেঁষবেন না। শুধু মাত্র আমার বাচ্চাদের জন্য নাহলে আজ আপনি যা করেছেন তার ফলস্বরূপ আমি চলে যেতাম। থাপ্পড় না হয় মারলেন তাই বলে জা*নো*য়া*রের মতন নিজের পুরুষত্ব ফলাতে চাইছিলেন? রোদকে দূর্বল ভাবার চেষ্টা করবেন না আদ্রিয়ান। আপনার আদর পেয়ে আপনার কাছে থাকতে পারলে আমাকে অসম্মান করলে দূরে যেতে দ্বিতীয় বার ভাববো না।

রোদের থেকে এমন সব কড়া কথা শুনে অভস্ত্য নয় আদ্রিয়ান। হবে কিভাবে জীবনে প্রথম হয়তো রোদ এমন উঁচু গলায় এমন শক্ত কথা বলেছে। নিজের সম্মানের উপর আসলে ছেড়ে দেয়ার পাত্রী রোদ না। এতক্ষণের শক্ত হওয়া রোদকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ আদ্রিয়ান ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। ভিষণ ভাবে চমকালো রোদ। আদ্রিয়ান ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে। রোদ বুঝলো কিছুটা। হারানোর ভয় হয়তো এটাকেই বলে। তবুও রোদ হাত বাড়িয়ে ধরলো না আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান রোদের মাথাটা বুকে চেপে কেঁদে দিয়ে বললো,

— আম..আমি জানি না কি হয়েছিলো তখন। তোমাকে কারো সাথে সহ্য হয় না আমার রোদ। আমি আ..আজ জঘন্য অপরাধ করতে যাচ্ছিলাম।আমি ঐসব কিছুতেই ভুলতে পারছি না রোদ। কি করব বলো? প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। আ..আমি আর কখনো এমন করব না।আমাকে ছেড়ে যেও না। এই রোদ মাফ করবে না?
রোদের কেমন যানো লাগলো। তীব্র ভালোবাসা থেকেই এই ভয়। নিজের কাছে রাখার জন্যই এতসব আকুতি কিভাবে ফিরিয়ে দিবে রোদ? আদ্রিয়ানের পিঠে আলত করে হাত রাখতেই আদ্রিয়ান কিছুটা শান্ত হলো। রোদকে উঁচু করে বিছানায় চলে গেল। কপালে, গালে অসংখ্য আদর দিতে দিতে বললো,

— এই রোদ শুনছো? তুমি কোন ছেলের সাথে কথা বলবে না ঠিক আছে? শুধু আমার কাছে থাকবে। আমি আদর দিব অনেক। সব দিব। কোন ছেলের আশে পাশে ঘেঁষবে না। শুধু আমার হয়ে যাও না রোদ। এই রোদ আমার হবে শুধু? যা চাইবে সব দিব। অনেক ভালোবাসা দিব।অনেক আদর দিব। একদম এই বুকে ভরে রাখবো। কখন কষ্ট দিব না।আমার অতীত আমার পিছু ছাড়ছে না রোদ। তুমি আমার বর্তমান। তোমাকে নিয়ে সুখে থাকতে দাও আমায়।

পাগলের মতো প্রলাপ করতে লাগলো আদ্রিয়ান। রোদ শুধু অবাক হয়ে শুনেই গেল। থাক না। দিক না একটা সুযোগ। অতীতের বিষাক্ততা দূর হোক আদ্রিয়ানের জীবন থেকে। আর তা যদি রোদ ওর কাছে থাকাতে হয় তাহলে রোদ কাছেই থাকবে। বলবে না অন্য পুরুষের সাথে কথা। কিছু সময় দোষ ছেলে বা মেয়ের থাকে না। দোষ থাকে সময়ের। রোদ আর আদ্রিয়ানেরও ঠিক তাই।
ওভাবেই আদ্রিয়ানের বুকে কাত হয়ে শুয়ে রইলো রোদ। নড়লো না আর না ই কোন কথা বললো।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৬

[ সব মানুষেরই ভালো, খারাপ দুটা দিক থাকে। আদ্রিয়ানের ও আছে। রোদের দিক থেকে ধরলে রোদ ঠিক আবার আদ্রিয়ানের দিক থেকে ধরলে আদ্রিয়ান ঠিক। কাউকেই দোষ দেয়া যায় না। এবার সবাই সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করুন]

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৮