ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৮

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৮
সাইয়্যারা খান

ঘুম থেকে উঠে আজ বুকটাকে খালি পেল আদ্রিয়ান। এ যেন হঠাৎ করে হাহাকার করে উঠলো আদ্রিয়ানের বুক। পাশে তাকাতেই দেখলো রোদ নেই। মিশিও নেই। উঠে বসলো। হঠাৎ করেই পিঠে ব্যাথা অনুভব করলো। কাল টানা কয়েক ঘন্টা বসে থাকার ফল এটা। দাঁড়াতেও একটু বেগ পেতে হলো।

এদিক ওদিক শরীর নাড়িয়ে কিছুটা ব্যায়াম করায় হালকা সস্তি পেলও পুরোপুরি না। ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়াতেই দেখলো রোদ মিশিকে নিয়ে রুমে ডুকলো। আদ্রিয়ান ভাবলো ফ্রেশ হয়ে একবারে বের হবে। বের হতেই দেখলো রুমে শুধু মিশি বসে আছে। আদ্রিয়ান মেয়েকে কোলে তুলে আদর করে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আমার মা কি খাবে না?
— মা খেয়েছে।
— এত তারাতাড়ি?
— মাম্মা খায়িয়ে দিলো তো।
আদ্রিয়ান হেসে মেয়েকে চুমু খেয়ে বললো,
— মাম্মা কোথায় তোমার?
— মাম্মা তো স্কুলে।
মিশি ভাবে ওর মা ওর ভাইয়ের মতো স্কুলে পড়ে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বললো,

— মাম্মা কখন গেলো স্কুলে?
— মাত্রই গেল আমাকে পাপ্পি দিয়ে।
আদ্রিয়ান মিশিকে নিয়ে তারাতাড়ি নিচে গেল। না নেই। কিচেনেও নেই। আদ্রিয়ানের মা ওকে খেতে বসতে বললেই আদ্রিয়ান জিজ্ঞেস করলো,

— আম্মু রোদ কোথায়?
— রোদ কোথায় মানে? মেডিক্যাল গেলো একটু আগে। তোকে বলে যায় নি?
আদ্রিয়ানের যেন বুকে ব্যাথা হলো। রোদ একা একা কিভাবে গেল? আদ্রিয়ান ই তো এতদিন দিয়ে নিয়ে আসতো। আজ কিভাবে গেল? মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

— তুমি ওকে একা ছেড়ে দিলা? আমি দিয়ে আসি জানোই তো।
— আমি তো না করলাম। ও বললো তুই ঘুমচ্ছিস তাই ডাকতে না।
— তাই বলে একা যাবে এতদূর? তোমার বুঝা উচিত ছিলো মা।
— একা কেন যাবে? আরিয়ানের সাথে গিয়েছে। আজ ওর ডিউটি সকালে ছিলো।
আদ্রিয়ানের ভেতর চিরে দীর্ঘ শ্বাস এলো। বক্ষে চিন চিন ব্যাথাটা ক্রমশ বৃদ্ধি পেলো। রোদ আজ প্রথম বিয়ের পর আদ্রিয়ানকে ছাড়া একা বাড়ির বাইরে ভাবতেই ভেতর ভেতর অস্থির হলো আদ্রিয়ান। পেছন ফিরে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ানের মা ডেকে উঠলো,

— আদ্রিয়ান নাস্তা করে যা।
— এখন খাব না আম্মু।
পেছন ফিরে না তাকিয়ে কথাটা বলেই বড় বড় পা ফেলে উপরে চলে গেল আদ্রিয়ান। রেডি হয়ে সোজা বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। নিজের ভেতরের অস্থিরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে লাগলো। এরমানে রোদ ওকে এখনও মাফ করতে পারে নি। কেন করবে? আদ্রিয়ান তো জঘন্য অপরাধ করতে নিয়েছিলো তার সামনে এই শাস্তি নিতান্তই নগন্য। তুচ্ছ। ভাবতেই গাড়ী জোরে ব্রেক করে স্টেরিং এ জোরে নিজের ডান হাতটা বাড়ি মারলো। এই হাতটাই তো উঠেছিলো রোদের উপর। না থাকুক এমন হাত যা ভালোবাসাকে আঘাত করে। চেয়েও অফিসে না গিয়ে সোজা মেডিক্যালে চলে গেল আদ্রিয়ান। রোদকে একবার হলেও চোখের দেখা দেখতে হবে নাহলে যে এই বুক ধরফরানি থামবে না। চোখদুটো যেন আন্দোলন করে যাচ্ছে এক পলক দেখার জন্য রোদকে। অথচ সকালেও দেখেছে এক পলক।

আদ্রিয়ান ভেতরে ডুকলো। ক্লাস টাইমে ওখানে ডুকা নিষিদ্ধ তবুও আরিয়ানাকে বলে অনুমতি নিয়েই আদ্রিয়ান জানালা থেকে দেখলো ভালোবাসাটাকে। মন মরা হয়ে বসে আছে এক সাইডে। কিছু নোট করছে হয়তো। ক্লাসে লেকচার চলছে অথচ রোদের মনোযোগ হাতের কলমের দিকে। কি ভাবছে কিছুটা আন্দাজ করছে আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকেই ভাবছে হয়তো। নিশ্চিত ভাগ্যকে গালিগালাজ করছে কেন এমন আদ্রিয়ান এসে জুটলো ওর কপালে। আদ্রিয়ান তো কোন দিক দিয়েই ডিজার্ভ করে না রোদকে। নিশ্চিত রোদ এসব ভেবেই এতটা মন মরা হয়ে আছে।

আদ্রিয়ান নিজে নিজে এসব ভেবেই একবু্ক কষ্ট নিয়ে সরে গেল। সোজা অফিসে চলে গেল। তার রোদ তো আদ্রিয়ান থেকে হাজার গুন ভালো কাউকে পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। কি নেই রোদের? আজ কাল এই একটু আকটু সমস্যা অনেক মেয়ের ই হয়ে থাকে। তাই বলে তো সবাইকে পূর্ব বিবাহিত লোকের কাছে বিয়ে দেয় না। এমন হাজারও কথা ভেবে ভেবে নিজেকে ছোট করতে লাগলো আদ্রিয়ান। বারবার মনে হচ্ছে রোদকে কোন ভাবেই ও ডিজার্ভ করে না।

দিশা ঘুম থেকে উঠে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল। কাল কি থেকে কি হয়ে গেল। ঝাপ দেয়ার পূর্ব মুহূর্তে ও বেঁচে গেল। হুট করে টেনে ওকে সরিয়ে দিয়েছিলো রাতুল। রাদের সাথে দেখা করতে এসে দিশাকে দেখেই টেনে সরিয়ে দেয়। ভালোবাসা কে প্রমাণ করতে পারে নি দিশা। রাতুল ওকে কয়েকটা ধমক দিয়ে চলে যায়। পরে আর সাহস করে ঝাপ দেয় নি। কি ভেবে নিচে রুমে চলে আসে। এরপর থেকে আর বের হয় নি দিশা। রাদটা তার প্রকৃত ভালোবাসাকে ঠুকরে দিলো। “কি হতো শ্যালা তোর একটু ভালোবাসলে? জীবনে বউ জুটবে না তোর কপালে। বউয়ের শোকে পাগল হবি তুই। অভিশাপ দিলাম বাসি মুখে”।

কথাগুলো মিনমিন করে বলে ওয়াসরুমে ডুকলো দিশা।
রাদ নিজের মা-বাবাকে সকলে খাওয়ার সময়ই জাইফার বিষয়ে জানায়। ছেলে পছন্দ করেছে এতেই তারা মহাখুশি। রাদ কাউকে জানাতে নিষেধ করলো। বললো,
— আগে রোদকে জানাই বাকিটা পরে।
দিশা এসেছিলো পিঠা নিয়ে। মা পাঠিয়েছিলো। অর্ধেক কথা শুনেই চোখটা জ্বলে উঠলো। মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে ডুকে রুদ্রর সামনে পিঠে দিয়ে বললো,
— চাচি আম্মু পাঠিয়েছে।
রাদের মা ওকে বসতে বললেও বসলো না দিশা। দৌড়ে চলে গেল। রাদ ঐ দিকে তাকিয়ে শুধু দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। আর কিছু করারও নেই ওর।

ব্রেক টাইমে রোদ ইয়াজের সাথে খেতে বসেছিলো। হঠাৎ কল আসায় ইয়াজ সরে সাইডে যায় কথা বলতে। রোদ একটু হাসলো। নিশ্চিত জারবার সাথে কথা বলছে তাই তো এমন মুচকি মুচকি হাসি মুখে। এমন সময় রাতুল এসে অপর পাশে বসতেই রোদ চমকে তাকালো। উঠে দাঁড়িয়ে গেলেই রাতুলও দাঁড়িয়ে বললো,
— কি হয়েছে রুদ্রিতা?

— প্লিজ ভাইয়া চলে যান। আমার বর পছন্দ করে না আপনার সাথে আমার কথা বলা। তাই আশা করি আপনার আর আমার পরিচয় এখানে টিচার আর স্টুডেন্টেরই থাকবে আর আমার বাসায় গেলে ভাইয়ের বন্ধু।
রাতুল শুনলো সবটা কিন্তু ওর নজর রোদের গালে লাল হয়ে ফুলে যাওয়া অংশে। কপালের ব্যান্ডেজে। রোদের কথা শুনে কিছুটা আঁচ করতে পারলো রাতুল। কোন শব্দ ব্যায় না করে পা ঘুরিয়ে চলে গেল। রোদের সামনে দাঁড়ালে নিশ্চিত রাতুলের অশ্রু সিক্ত নয়ন জোড়া দেখে নিতো রোদ।

রাতুলে নিজের কেবিনে ডুকেই লক করে বসে পরলো। রোদের গালের দাগ যে আঙুলের সেটা বুঝতে কষ্ট হয় নি ওর। তবে কি আদ্রিয়ান মারলো তার রুদ্রিতাকে? ও ভুল। তার না রুদ্রিতা। রুদ্রিতা আদ্রিয়ানের। এত সুন্দর রুদ্রিতার গায়ে হাত তুলতে কষ্ট হয় নি বুঝি আদ্রিয়ানের? কেমন ফুলে ছিলো। রাতুলের মনে হচ্ছে ওর বুকের কলিজাটায় কেউ মোচড়ে ধরেছে। সব কি তাহলে রাতুলের সাথে কথা বলার জন্যই। তাইতো রোদ ওমন ভীতু চাহনি দিয়ে কথা গুলো বললো।

রাতুল তো তৃষ্ণাত পথিক যার তৃষ্ণা এ জীবনেও মিটবে না কারণ তার তৃষ্ণা নিবারনকারী তো তার নেই। সে এখন অন্যর বাগানে ফুটা ফুল। ঘ্রাণ ছড়ায় অন্য কারো ঘর জুড়ে। ঝড়ে গেলেও তার সতেজ থাকলে তার। রাতুলের হবে না কখনো। না ইহকালে না পরকালে।
রোদের ফোনে হঠাৎ কল আসতেই দেখলো জারবা কল করেছে। রিসিভ করতেই জারবা নাক টেনে টেনে একগাদা নালিশ করলো ইয়াজের নামে। রোদের হাসি আসলো ভীষণ রকমের। জারবাটা কিছুটা বোকাসোকা টাইপের। মুখটা গম্ভীর করে রোদও বললো,

— জারবা আমি ওই ইয়াজ পিয়াজকে শিক্ষা দিয়েই আসব। তুমি কেঁদো না। ঠিক আছে?
— হুম।
ইয়াজের দিকে তাকাতেই ইয়াজ দুই হাত উঠিয়ে বললো,
— আমাকে বলে লাভ নেই। আমার কোন দোষ নেই। চল আমার সাথে।
বলেই রোদকে টেনে নিতে লাগলো। রোদ বিরক্ত হয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলো। ইয়াজ ভ্রু কুচকে তাকাতেই রোদ বললো,

— কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
— তোর কপালে ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করতে।
— লাগবে না। আমি পরে করে নিব।
–ফাইজলামি বাদ দে রুদ্রি। তুই কি মনে করিস তুই না বললে আমি কিছু বুঝবো না। আজকেই রাদ ভাইকে বলবো।
রোদ একটু ঘাবড়ে গেল। ইয়াজ তা দেখে হেসে বললো,
— চল আমার সাথে তাহলে আর বলবো না।
অগত্যা রোদ গেল ইয়াজের সাথে।

আদ্রিয়ান সেই আধ ঘন্টা যাবৎ গাড়ীর বাইরে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গরমে দরদর করে কপাল বেয়ে বেয়ে ঘাম ঝরছে। আজ আগেই এসেছে আদ্রিয়ান রোদকে নিতে। ফর্সা চেহারাটা লাল হয়ে আছে গরমে। তবুও ভেতরে না বসে বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আজ রোদকে নিয়ে টি এস সি যাবে ঘুরাতে। ভাবতে ভাবতে রুমালটা বের করে চেহাটা মুছে নিলো। রোদের তো ক্লাস শেষ অনেক আগেই কিন্তু রোদ আসছে না। এদিকে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আদ্রিয়ানের গরমে এখন অস্থির লাগছে।

রোদ উপর থেকেই দেখেছে আদ্রিয়ানের গাড়ী বার্ন ইউনিটের সামনে তাই রোদ শহীদ মিনারের সামনের গেট দিয়ে বের হয়ে চলে গিয়েছে। আদ্রিয়ানের সামনে যেতে চাইছে না রোদ। তাই একাই চলে গিয়েছে।
এদিকে আদ্রিয়ানের বুক ধরফর করছে। ইদানীং হচ্ছে এটা। অতিরিক্ত টেনশনে এমন হয়ে থাকে। না পেরে ভেতরে ডুকলো আদ্রিয়ান। সব ক্লাসে খুজেও পেল না। অবশেষে ইয়াজকে কল করতেই জানলো রোদ প্রায় ঘন্টা খানিক আগেই চলে গিয়েছে।

আদ্রিয়ান শুনার পর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। আস্তে আস্তে ধীর পায়ে হেটে বের হলো। গাড়ীতে বসতেই নিজের অজান্তে বা চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। বুকের ভেতর পাথর চাপা দিয়ে গাড়ী ঘুরিয়ে অফিসে চলে গেল। সকালে ভেবেছিলো রোদের সাথে খাবে কিন্তু হয়তো আর খাওয়াটা হবে না। বুকে কিছুটা চাপ অনুভব হলেও আজ রোদের অবহেলাটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে আদ্রিয়ানকে।

রোদ বাসায় এসে শুনলো আদ্রিয়ান সকালে খায় নি। দুপুরেও খেতে আসে নি। এখন প্রায় রাত। রোদ মিশিকে খায়িয়ে মিশানের সাথে ভিডিও কলে কিছুক্ষণ কথা বলে মিশিকে ঘুম পাড়াতে চাইলো। মিশি কতক্ষণ মায়ের কাছে এপাশ ওপাশ করলো। রোদ আবার নিয়ে শুয়িয়ে দিতেই মায়ের সামনের চুলগুলো নিয়ে খেলতে লাগলো। রোদের মনে পরলো আদ্রিয়ানের কথা। এই চুল তার অনেক প্রিয়। প্রথম থেকেই বলতো,”রোদ তোমার এই চুল গুলো আমার অনেক ভালোলাগার”।
মন খারাপ হয়ে গেল রোদের। মিশি মা’কে মনমরা দেখে মা’য়ের গাল ছুয়ে ডাকলো,

— মাম্মা?
— জ্বি মা।
— তুমি স্যাড স্যাড।
রোদ একটু হেসে বললো,
— মিশি থাকতে কি মাম্মা স্যাড স্যাড হতে পারে? মাম্মা তো হ্যাপি হ্যাপি।
বলেই মিশিকে জড়িয়ে ধরে ঘুম পাড়ালো রোদ। বেশ সময় নিয়ে আজ ঘুমালো মিশি। দুষ্ট হচ্ছে ইদানীং। আগে কেমন চুপচাপ থাকতো অথচ এখন প্রফুল্ল থাকে। হয়তো মা’য়ের আদরে আদরে এমন হচ্ছে।

রোদ নিজের পড়া শেষ করতে করতে রাত ১২ টার বেশি বেজে গেল। এরমধ্যে সাবা আর ওর শাশুড়ীও ডেকে গিয়েছে বারকয়েক। রোদ খাবে না জানাতেই শাশুড়ী শেষ মেষ ভাত এনে মুখে তুলে খায়িয়ে দিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে রোদ আর উঠে নি। এখন উঠে আড়মোড়া ভেঙে দাঁড়ালো। আদ্রিয়ান আসে নি এখনও। রোদ চেয়েও কল করলো না। লাইট অফ করে মিশিকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেল।

আদ্রিয়ান বাসায় ফিরলো রাত ২ টার দিকে। ঢুলুঢুলু পায়ে রুমে ডুকলো। কাল রাত থেকে না খাওয়া। শরীর ও তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না ওর। অতিরিক্ত টেনশনে কেমন বুকে যন্ত্রণা হচ্ছে ওর। হাত-পা চলতে চাইছে না। রুমে ডুকতেই অল্প আলোতে রোদকে দেখলো। কতটা মায়াবী চেহারা মেয়েটার। আজ সারাদিন ছুয়ে দেখে নি আদ্রিয়ান। কোন মতে ফ্রেশ হয়ে আসলো। ধরতে চেয়েও ধরলো না। পাশেও ঘুমালো না। শুয়ে পরলো রোদের পায়ের কাছে। রোদের পায়ের পাতায় ঠোঁট ছুঁয়ে চুমু খেল। আঙুলে আঙুলে চুমু খেল। অবশেষে রোদের পায়ের পাতা দুটো বুকে লাগিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো।

এই দৃশ্য আগেও দেখা যেত শুধু রোদের জায়গায় মিশি ছিলো। ঠান্ডা মেজাজের শান্ত মানুষেরা যখন রেগে যায় তখন তারা সর্বোচ্চ রাগটাই প্রকাশ করে। আদ্রিয়ান সেই কাতারেরই লোক। চোখ দিয়ে পানি পরছে আদ্রিয়ানের সাথে ঠোঁট চেপে ফুপাচ্ছে বারবার। একসময় দূর্বল, ক্লান্ত শরীরটা ঘুমের মধ্যে তলিয়ে গেলো।

রাত ৩ টার দিকে রোদ নড়তে চেয়েও নড়তে পারছে না। মনে হচ্ছে কেউ ওর পা বেঁধে রেখেছে। কিছুটা ভয় পেয়ে গেল রোদ। পাশ থেকে লাইট অন করতেই চোখে ধরা পরলো অপ্রত্যাশিত দৃশ্য। ওর পা আদ্রিয়ানের বুকে। রোদের মনে হচ্ছে সবচেয়ে ঘৃণ্য পাপটা হয়তো রোদের দ্বারা হয়ে গেল। তারাতাড়ি মিশিকে সাইডে রেখে উঠে পা ছাড়াতে চাইছে কিন্তু পারলো না। শক্ত করে আটকানো বুকের সাথে। রোদের এখন কান্না পেয়ে গেল। ওর পা কিনা কারো বুকে তাও আবার নিজের বরের বুকে। যেখানে রোদ শুনেছে আল্লাহ বলেছেন,আল্লাহর পর যদি অন্য কাউকে সিজদাহ্ করার অনুমতি থাকতো তাহলে সেটা হতো প্রত্যেক স্ত্রীকে তার স্বামীর সিজদাহ্ করা। আর সেখানে কি না আদ্রিয়ানের বুকে ওর পা! ছাড়াতে না পেরে এবার কেঁদে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ানের গালে হাত দিয়ে ডাকতে লাগলো,

— শুনছেন? পা ছাড়ুন দয়াকরে। প্লিজ।
হাত দিতেই রোদ বুঝলো অসম্ভব গরম হয়ে আছে আদ্রিয়ানের শরীর। রোদ এবার জোরে ধাক্কা দিয়ে ডাকতেই চোখ মেলে তাকালো আদ্রিয়ান। রোদ পা ছাড়াতে নিলেই আদ্রিয়ান আরো চেপে ধরে চুমু খেয়ে নিলো। রোদ অনুনয় করে বললো,
— প্লিজ ছাড়ুন আমার পা দয়াকরে।
— উহু।
— শুনুন। ছাড়ুন দয়াকরে।
— মাফ করেছো?
— কিসের মাফ। কাল তো এটা নিয়ে হয়েছে। আজ কেন আবার মাফ চাইছেন?
— তাহলে সারাদিন দূরে দূরে ছিলে কেন?
— দেখুন আল্লাহয় ওয়াস্তে পা ছাড়ুন আমার।

বলে জোর করে ছাড়ালো রোদ। পা সরিয়ে পাগলের মতো কাঁদতে কাঁদতে আদ্রিয়ানের বুকে ঝাপিয়ে পরলো। টিশার্ট খুলে দিলো আদ্রিয়ানের। বুকে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে তুললো। আদ্রিয়ান চোখ বুজে নিলো। রোদ ওভাবেই বললো,
— এই বুকে আমার মাথা থাকে আপনি কেন আমার পা নিলেন এখানে বলুন?
— মাফ করে দাও।
— করেছি তো করেছি।
— তাহলে দূরে সরে ছিলে কেন?
বলেই রোদকে বুকে উঠিয়ে নিলো। রোদ আদ্রিয়ান ঘাড়ে মুখ গুজে কেঁদে কেঁদে বললো,

— গত কাল আমি আপনাকে গালি দিয়েছিলাম। উচ্চ স্বরে কথা বলেছিলাম। নিজেকে মাফ করতে পারছি না।
আদ্রিয়ান ভেবে পেল না কি বলে গালি দিয়েছিলো রোদ। পরক্ষণেই মনে পরলো। রোদকে আরেকটু জড়িয়ে ধরে বললো,
— আমি জা*নো*য়ারের মতো আচরণ করতে পারলে তুমি বলতে কেন পারবে না?
— আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ। আমি বলতে চাইনি ওভাবে। আবার নাম ধরে ও বলেছি। আমি…
— হুসস। এই ছোট্ট কারণে সারাটা দিন কষ্টে রাখলা বউ? আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আমি যা করেছি অন্য কেউ হলে জঘন্য আরো গালি খেতাম।

— আপনার অধিকার ছিলো।
— উহু ভুল। কোন পুরুষের অধিকার নেই নারীর অনিচ্ছায় তাকে স্পর্শ করার হোক সে তার বিয়ে করা বউ।
— মাফ করেছেন।
— ভালোবাসি।
রোদ চুমু খেল আদ্রিয়ানের কপালে। উঠে যেতে যেতে বললো,
— খেয়েছেন? জ্বর আসছে আপনার।
— উহু।
— উঠুন খাবেন। মেডিসিন নিতে হবে।

বাধ্য বাচ্চার মতো উঠে বসলো আদ্রিয়ান। রোদ নিচে থেকে খাবার গরম করে এনে নিজে খায়িয়ে দিলো আদ্রিয়ানকে। খেতে গিয়ে কয়েকবার গলায় আটকে গিয়েছিলো আদ্রিয়ানের। রোদ পানি খায়িয়ে দিলো।
মুখ মুছিয়ে মেডিসিন খায়িয়ে দিলো। সব কিছু রেখে আসতেই আদ্রিয়ান বললো,
— রোদ ঐ ড্রয়ার থেকে মেডিসিনের বক্সটা দাও তো।
রোদ দিতে দিতে বললো,

— এগুলো কিসের?
— কিছুনা।
বলে কয়েকটা মেডিসিন নিয়ে রোদকে ডাকলো। রোদ এগিয়ে এসে আবারও ঝাপিয়ে পরলো আদ্রিয়ানের উষ্ণ লোমশ বুকে। নাক ডুবিয়ে শ্বাস টেনে নিলো। এই বুকটা অনেক প্রিয় জায়গা রোদের। আদ্রিয়ানও আদরে আদরে ভরিয়ে তুললো রোদকে।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৭ শেষ অংশ

সব সম্পর্কেই টানাপোড়া থাকবেই। ভালো-মন্দ মিলিয়েই থাকবে। তাই বলে তো সারাজীবন তা ধরে রাখতে নেই। একজন আগুন হলে আরেকজনকে পানি হতেই হবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে। ইগো দিয়ে সংসার হয় না। নিজেদের ভুল বুঝে একে অপরের পাশে থাকতে হবে। বুঝতে হবে। সব রং ই ধরা দিবে ভালোবাসায়। লাল গ্রহণ করতে পারলে কালো কেও গ্রহণ করতে হবে।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৯