ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৯

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৯
সাইয়্যারা খান

রাতে আদ্রিয়ানের জ্বর এলো গা কাঁপিয়ে। রোদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। রোদ অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে নিলো। আদ্রিয়ান ছাড়তেই চাইছে না। রোদ ওকে ধরে বললো,
— আমি আরেকটা কম্ফোডার নিয়ে আসি।

বলেই আলমারি খুলে আরেকটা কম্ফোডার নিয়ে ঢেকে দিলো আদ্রিয়ানকে। বেড এটা বেশ বড় তাই রোদ মিশিকে সাইডে দুই বালিশের মাঝে দিয়ে ঢেকে শুয়িয়ে রাখলো। এদিকে আদ্রিয়ান এখন কাঁপছে ঠকঠক করে। রোদ কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। কাউকে ডাকতে চাইলেও আদ্রিয়ান ডাকতে দিলো না। শুধু রোদকে নিজের কাছে আসতে বললো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রোদ এসি অফ করে দিলো। এই গরমে দুটো কম্ফোডারের নিচে গরম গরম আদ্রিয়ানের সাথে লেপ্টে শুয়া মোটেও সহজ কিছু না। তার উপরে এসি, ফ্যান বন্ধ। রোদের ছোট্ট শরীরটাকে আদ্রিয়ান শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁপে যাচ্ছে। রোদ শুধু আল্লাহ আল্লাহ করছে। কান্না আসছে ওর শুধু। কাউকে ডাকতেও দিচ্ছে না আদ্রিয়ান। কি করবে ভেবে পেল না রোদ।

আদ্রিয়ান কি সব বিরবির করছে তাও বুঝতে পারলো না রোদ। ঝাপটে ধরে রাখলো শুধু। কপালে হাত রাখতেই দেখলো অনেক গরম হয়ে আছে। রোদ আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে নিজেও আদ্রিয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো।
বেশ সময় নিয়ে কাঁপুনি থামলো আদ্রিয়ানের। জ্বর এখনও আছে। এই কাঁপুনি যেন আদ্রিয়ানের সব শক্তি শুষে নিয়েছে। বেজান হয়ে শুয়ে আছে। রোদ আস্তে করে উঠে নিতে নিতে ডাকলো,

— শুনছেন?
দূর্বল কন্ঠে আদ্রিয়ান আওয়াজ করলো,
— হু।
— একটু উঠার চেষ্টা করুন। গোসল করতে হবে।
বলে আদ্রিয়ানকে উঠাতে চাইলো কিন্তু এ ও কি সম্ভব? এত শক্ত পোক্ত আদ্রিয়ান শরীরের ভার ছেড়ে শুয়ে আছে একে টেনে তুলা অসম্ভব রোদের কাছে। তবুও চেষ্টা করতে করতে আদ্রিয়ানকে অনুনয় করে বললো,
— একটু চেষ্টা করুন। আমি ধরছি।

আদ্রিয়ান কোন মতে টেনে টুনে শরীর উঠাতে চাইলো। রোদের সাহায্যে উঠে ওয়াসরুমে গেলো। হঠাৎ করে বমি করে দিলো আদ্রিয়ান। রোদের শরীরেও কিছুটা লেগে গেল। রোদের অবস্থা বেগতিক। এই আদ্রিয়ান প্রায় অর্ধেক ভার এখন রোদের উপর দিয়ে আছে। রোদ যেন আদুরে বাচ্চা থেকে কিছুটা মেচিউর হয়ে উঠলো।

সর্বশক্তি দিয়ে আদ্রিয়ানকে সাপোর্ট দিচ্ছে। প্রথমে কিছুটা সংকোচ কাজ করলেও রোদ ভাবলো এখন এ-সবের সময় না। আদ্রিয়ানের টিশার্ট খুলে পাশে রেখে সাওয়ার অন করে দিলো। গরম শরীরে ঠান্ডা পানির কনা গুলো বিঁধে বিঁধে যাচ্ছে আদ্রিয়ানের সর্বাঙ্গে। রোদকে ঝাপটে ধরে হেলান দিয়ে দেয়ালে দাঁড়িয়ে ভিজছে দুজন। রোদ হাত উঠিয়ে আদ্রিয়ানের চুল গুলো নেড়ে ভালোমতো ভিজিয়ে দিচ্ছে। আদ্রিয়ানের উন্মুক্ত পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে রোদ বললো,

— একটু ছাড়ুন। বুকের দিকে পানি দেই।
আদ্রিয়ানের মনে হচ্ছে ছাড়লে হয়তো ও পড়ে যাবে। ভাঙা গলায় বললো,
— রো..দ মনে হচ্ছে পড়ে যাব তো..মায় ছাড়লে।
— আমি ধরেছি তো পরবেন না। দেয়ালে হেলান দিন।

বলে আদ্রিয়ানকে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে মগ ভর্তি পানি নিয়ে ঢাললো আদ্রিয়ানের বুকে। দাঁত চেপে এই ঠান্ডা পানি সহ্য করছে আদ্রিয়ান। রিতীমত কাঁপুনি শুরু হয়ে গেল ওর। রোদ পেছনে হাত বাড়িয়ে সাওয়ার অফ করে দিলো। পাশ থেকে টাওয়াল নিয়ে আদ্রিয়ানকে দিয়ে বললো,
— একটু পেচিয়ে আসুন। আমি ড্রেস বের করি।
আদ্রিয়ান কোনমতে ভেজা কাপড় ছাড়িয়ে টাওয়াল পেচিয়ে নিলো কিন্তু একা হেটে বের হওয়ার সাহস পেল না। ধীর কন্ঠে ডাকলো,

— রোদ, রোদ।
রোদ তারাতাড়ি ভেতরে ডুকে আদ্রিয়ানকে ধরলো। ও নিজেও ভিজে চপচপা হয়ে গিয়েছে। কোনমতে ভেজা কাপড়ের উপরেই শরীরে টাওয়াল জড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ানকে কাউচে বসিয়ে অন্য টাওয়াল দিয়ে মাথা, শরীর, পা ভালোভাবে মুছিয়ে টাওজার এনে দিলো। আদ্রিয়ান পরতেই রোদ টিশার্ট এনে নিজেই পড়িয়ে দিলো আদ্রিয়ানকে৷ মাথাটা প্রচন্ড ভার লাগায় আদ্রিয়ান কাউচেই হেলান দিলো। রোদ ঝটপট করে বমি পরিষ্কার করে চেঞ্জ করে এলো। রুমেও কিছুটা ভিজে গিয়েছে রোদ তা মুছে হাত ধুয়ে মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে আদ্রিয়ানকে ধরে বললো,

— বেডে আসুন।
আদ্রিয়ান রোদের সাহায্য বেডে গিয়ে বসতেই রোদ কপালে হাত দিলো। এখন একটু তাপমাত্রা কম মনে হলো রোদের। আলতো করে একটা চুমু খেয়ে বললো,
— বমি তো করে দিলেন। আমি কিছু নিয়ে আসি।
আদ্রিয়ান বাচ্চাদের মতো রোদকে ধরে আছে। রোদ আদ্রিয়ানের গালে হাত দিয়ে আসস্ত করে বললো,
— পাঁচ মিনিট লাগবে। আসছি আমি।

বলে হাত ছাড়িয়ে বেরিয়ে গেল রোদ। ফ্রিজ খুলে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এই সময় তো মুখে রুচি থাকে না। ঝাল কিছু হলে ভালো হবে তাই একসাথে দুইটা ম্যাগি ঝাল করে রান্না করে নিলো রোদ। আরেক চুলায় দুধ গরম নিলো। অত্যাধিক দূর্বল লাগছিলো আদ্রিয়ানকে তাই দুধ বেস্ট হবে। এসব করতে করতে রোদ ভাবলো, এগুলো যদি ওর বাসার কেউ দেখতো নিশ্চিত অক্কার মা চক্কা হয়ে যেত। রাদ তো মনে হয় দুই দিন খাওয়া-নাওয়া ভুলে যেত। ভাবতেই একা একাই হাসলো রোদ।

সব গুছিয়ে লইট অফ করে হাতে দুধ আর লুডুলস নিয়ে উপরে রুমে ডুকলো। আদ্রিয়ান কাত হয়ে শুয়ে আছে। রোদ ডাকলেও সাড়া দেয় নি। ধীর পায়ে হেটে গালে হাত দিয়ে ডাকতেই চোখ মেলে তাকালো আদ্রিয়ান। রোদ প্রথমে চমকে গেল এমন লাল চোখ দেখে পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

— খাবেন। উঠুন।
— এখন খেতে মন চাইছে না রোদ।
— খেলেই খেতে মন চাইবে। উঠুন।
বলে ঠেলেঠুলে উঠালো রোদ। হেলান দিয়ে বসিয়ে চামুচে করে মুখের সামনে ধরতেই ঝাল ঝাল ঘ্রাণ পেল আদ্রিয়ান। না চাইতেও এক চামচ খেতেই ভালো লাগলো। জ্বরের মুখে ঝাল তো ভালো লাগবেই। একটু একটু করে পুরোটা খায়িয়ে দিলো রোদ। পানি খায়িয়ে দুধ দিতেই আদ্রিয়ান খাবে না জানিয়ে দিলো। রোদ জোর করে মুখের সামনে দিয়ে কিছুটা রেগেই বললো,

— খেতেই হবে। আপনি কি বাচ্চা যে কোলে করে ফিডারে ভরে ওয়া ওয়া করে খাওয়াবো?
আদ্রিয়ান অসহায় মুখ করে তাকাতেই রোদ আবারও জোর করলো অগত্যা আদ্রিয়ান এক ঢোকে খেয়ে নিলো। রোদ হাত দিয়েই আদ্রিয়ানের মুখ মুছিয়ে দিলো। ঢেকুর তুললো আদ্রিয়ান। রোদ আদ্রিয়ানের পেটে হালকা গুতো দিয়ে বললো,
— কার পেটে গেলো এখন সব?

আদ্রিয়ান দূর্বল মুখে হাসলো একটু। রোদ দেখলো আদ্রিয়ান ঘামছে হয়তো জ্বর ছাড়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো ঘেমে উঠলো আদ্রিয়ান। রোদ আবার টাওয়াল ভিজিয়ে এনে পুরো শরীর মুছে দিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান শুয়ে বললো,
— সোনা এসিটা অন করে দাও।
রোদ তারাতাড়ি অন করে দিলো। এতক্ষণে ঘেমে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। চুল খুলে ভালো করে মুছে নিলো রোদ। এই চুল এখন শুকাবেও না। টাওয়াল মেলে দিয়ে আসতেই আদ্রিয়ান ডাকলো,

— রোদ?
— জ্বি।
— কাছে আসো এবার। ঘুমাবে।
— আজান দিবে ফজরের। নামাজ পড়েই আসি। আপনি পড়তে পারবেন?
— হু।

বলে উঠলো আদ্রিয়ান। রোদ সাহায্য করলো ওযু করতে। আজান দিতেই দুই জন দাঁড়িয়ে গেল। রোদ জোর করে চেয়ার এনে দেয় আদ্রিয়ানকে বসে নামাজ পড়তে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে জ্বরের প্রকোপে মাথা ঘুরাচ্ছে আদ্রিয়ানের। আল্লাহ মহান। অসুস্থ হলে নামাজ দাঁড়িয়ে না পারলে বসে পড়া, বসে না পারলে শুয়ে পড়া, শুয়েও না পাড়লে ইশারায় পড়তে বলা হ’য়েছে। আদ্রিয়ানের এমন অবস্থায় রোদের মনে হলো বসে পড়াই উত্তম।
নামাজে আজ রোদ দোয়া করলো নিজের স্বামীর সুস্থতার জন্য আর আদ্রিয়ান শুকরিয়া আদায় করলো এমন স্ত্রী আল্লাহ তাকে দান করায়।
নামাজ শেষেই দুইজন ঘুমাতে গেল। আদ্রিয়ান রোদকে ডেকে বললো,

— বুকে আসো তো রোদ।
— খারাপ লাগছে?
— হুম।
— আমি কি কাউকে ডাকবো?
— না। বুকে আসো তুমি।
রোদ বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে রইলো। চোখ, মুখে চিন্তার ছাপ। আদ্রিয়ান না দেখেও তা বুঝলো। রোদের চিন্তা আর বাড়াতে চায় না তবুও এই কথা পরে জানার থেকে এখনই জানা উচিত। দূর্বল কন্ঠে বললো আদ্রিয়ান,

— জানো রোদ এই যে যেই বুকটায় তুমি শুয়ে আছো এই বুকের বা পাশের যে কালচে খয়েরী রঙের যন্ত্রটা আছে যেটাতে তুমি, মিশান,মিশি আমার পুরো পরিবারের বাস সেটা খুবই দূর্বল। এতই দূর্বল যে মিশিকে যখন সদ্য জন্মালো তখন ওর মা ওকে রেখে চলে গেলো তখন আমার হৃদপিণ্ডটাতে সবচেয়ে বেশি আঘাত লাগলো। এতটুকু ছোট্ট জানটাকে কীভাবে রাখবো আমি মা ছাড়া? এসব ভাবতে ভাবতেই স্ট্রোক করে ফেললাম।
ফুঁপানোর সাথে বুকে ভেজা অনুভব হলো আদ্রিয়ানের। শক্ত করে বুকে চেপে ধরে বললো,

— এই কাঁদতে বলেছি আমি? বলব না কিন্তু।
কান্না জড়িত কন্ঠে রোদ বললো,
— কই কাঁদি?
আদ্রিয়ান আবার বলা শুরু করলো,

— তখন ওটা মাইল্ড ছিলো। মেডিসিন নিয়েছি টানা কয়েক বছর। পরে আর নেয়া হয় নি। ইদানীং আবার হুট হাট কিছুটা ব্যাথা হচ্ছে। আজকে বিকেলেও একটু হয়েছিলো। তখন ঐ মেডিসিন ই নিয়েছিলাম।
রোদের কান্নার বেগ বাড়লো। এতক্ষণের ফুঁপানোর শব্দে এখন আওয়াজ হলো ধীরে ধীরে। আপনজনের অনিশ্চিত জীবন তো কাঁদাবেই। আদ্রিয়ান আবারও দূর্বল কন্ঠে বললো,
— এই আমার কলিজার টুকরা বউ এভাবে কাঁদছো কেন?

— ভাবছো মা-বাবা এ কোন আধ বুড়ো, আধ মরা লোকের কাছে বিয়ে দিলো। তুমি তো ভা…
আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না রোদ আদ্রিয়ানকে। মুখ তুলে থুতনিতে কামড়ে ধরলো। আদ্রিয়ান হাসলো শব্দহীন। রোদ ছেড়ে দিতেই আদ্রিয়ান বললো,
— এখন যদি আমি দেই সামলাতে পারবা তো আধ বুড়োর কামড়?
রোদ কেঁদে কেঁদে আদ্রিয়ানের বুকে চাপড় মারতে মারতে বললো,

— খারাপ লোক।
— তোমারই তো।
— পঁচা লোক।
— জানি তো।
— বুড়ো না আপনি।
— কই?
— জানি না।
— আমি তো..
— আমি কিন্তু কাঁদব গলা ফাটিয়ে।

আদ্রিয়ান হাসলো। বুকে নিয়ে চার ওষ্ঠাধর এক করে দিলো। ছাড়তেই রোদ হিচকি তুলতে তুলতে বুকে মুখ ঘঁষলো। একসময় মেয়েটা ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো। আদ্রিয়ানের বাঁচতে মন চায় এমন একটা আদুরে, নিষ্পাপ আত্নার সাথে। কত বছর ধরে ঠিকঠাক ভাবে বাঁচা হয় না। এখন দিনকে দিন বাঁচার লোভ বেড়েই যাচ্ছে যেন।
ভোর শেষে জানালার কাঁচ ভেদ করে নরম আলো প্রবেশ করে জানান দিলো নতুন দিনের সূচনার। নতুন এক উদ্দামতার। নতুন কিছু পাওয়ার। কারো হয়তো কিছু হারানোর। আদ্রিয়ান চোখ বুজে নিলো। এখন একটু শান্তি দরকার যা এই বুকে রোদ নামক প্রাণটা থাকলে হয়।

আজকে মিশি উঠে মা-বাবাকে ঘুমন্ত পেলো। চোখ ডলতে ডলতে উঠে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কি মনে করে বাবার দিকে তাকিয়ে আবার মায়ের দিকে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে ডাকতে লাগলো,
— মাম্মা মাম্মা।
রোদ গভীর ঘুম মত্ত থাকায় মিশির ডাক শুনতে পেল না কিন্তু ঘুম পাতলা হওয়ার দরুন আদ্রিয়ান সজাগ পেয়ে গেল। টেনে চোখ খুলতেই দেখতে মিশি বসে আছে। আদ্রিয়ান হাত বাড়িয়ে দিতেই মিশি বাবার কাছে এলো। আদ্রিয়ান ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,

— আমার মায়ের ঘুম শেষ?
— হুম। বাবাই?
— বলো মা।
— মাম্মা উঠবে না?
আদ্রিয়ান এবার ভালোকরে তাকালো রোদের দিকে। বুকের মধ্যে একদম গুটিয়ে ঘুমিয়ে আছে যেন আদুরে বিড়াল ছানা। আদ্রিয়ান আস্তে করে বুক থেকে বালিশে শুয়িয়ে দিলো। উঠতে নিলেই একটু শরীরে ব্যাথা অনুভব হলো। তবুও উঠে মিশিকে ফ্রেশ করিয়ে দিয়ে নিচে সাবার কাছে দিয়ে বললো,

— ভাবী একটু খায়িয়ে দিও।
বলেই আবার মিশিকে বললো,
— মা আজকে খালামনির কাছে খাও।
— মাম্মা নেই বাবাই?
আদ্রিয়ানের খারাপ লাগলো। মা ছাড়া মেয়ে ওর হঠাৎ করে রোদ থেকে মায়ের আদর পেয়ে পেয়ে এখন মা ছাড়া চলে না তার। সাবা আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো,

— রোদ কোথায়? আর তোমার চেহারা এমন ফ্যাকাসে হয়ে আছে কেন?
— রোদ ঘুমাচ্ছে ভাবী। সকালে ঘুমিয়েছে। রাতে জ্বর উঠেছিলো হঠাৎ আমার। মেয়েটা ঘুমাতে পারে নি।
— এখন ঠিক আছো? তোমার ভাইকে ডাকবো?
— আরে না তুমি একটু মিশিকে খায়িয়ে দিও।
মিশির মায়া ভরা চোখ দুটো পানিতে ভরা। আদ্রিয়ান তাকাতেই বুকটা মোচড়ে উঠলো যেন। কি ভেবে কোলে তুলে নিয়ে হাতে খাবার বেড়ে বললো,

— রুমেই নিয়ে যাই।
সাবা বুঝলো তাই আর কথা বাড়ালো না।
মিশিকে কাউচে বসিয়ে আদ্রিয়ান নিজেই খায়িয়ে দিচ্ছে। মিশি মাকে দেখছে। বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
— বাবাই মাম্মা উঠবে না?
— উঠবে তো মা। একটু পরই উঠবে।

হঠাৎ এলার্মের আওয়াজে ধরফরিয়ে উঠলো রোদ। ও ভালো করেই জানতো উঠতে পারবে না তাই তো এলার্ম দিয়েছিলো। ও লাফ দিয়ে উঠায় মিশি আর আদ্রিয়ান ও কিছুটা চমকালো। রোদ চোখ কচলে বললো,
— মিশি খেয়েছে?
মিশি মায়ের কাছে ঘেষতে ঘেষতে কোলে উঠে বসলো,
— মিশি খেয়েছে বাবাই এর কাছে।
রোদ তাকাতেই দেখলো আদ্রিয়ান ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। রোদ উঠে কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর নেই কিন্তু শরীর গরম হয়ে আছে হালকা। আদ্রিয়ান রোদকে বললো,

— আরেকটু ঘুমাতা।
— না। ঠিক আছে।
— ফ্রেশ হয়ে আসো।
রোদ আর কোন বাক্য ব্যায় না করে ফ্রেশ হয়ে এলো। আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো,

— খেয়েছেন?
— বউয়ের সেবার অপেক্ষায় আছি।
রোদ একটা মিষ্টি করে হাসি দিলো। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
— রুমে নিয়ে আসব?
— আচ্ছা।
রোদ খাবার এনে নিজেই তুলে খাওয়ালো আদ্রিয়ানকে। মিশি বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
— বাবাই তুমিও বাচ্চা? মাম্মা তোমাকেও খায়িয়ে দেয়।
আদ্রিয়ান হাসলো। রোদ ওর গাল টেনে দিলো।

পুরো বাড়ীতে আজ রমরমা ভাব। এতদিন পর খুশির খবর বলে কথা। রোদ তো খুশিতে লাফিয়েছে কয়েকবার। জারবা সবাইকে ফোন করে করে বলছে। সাবা এদিকে কেঁদেই যাচ্ছে। দীর্ঘ পাঁচ বছর আবার মা হবে বলে কথা। ডাক্তার হলেও আরিয়ান যেন অবুঝ হয়ে গেল। সাবাকে বারবার বলছে,

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১৮

— চলো না ডক্টরের কাছে যাই। একবার দেখিয়ে আসি।
সাবা বিরক্ত হয়ে বললো,
— তুমি যাও না। আমি যাব না।
— আরে বাবা আমার কাজ তো শেষ। এখন সব চেকআপ তোমার করতে হবে।
সাবা রাগী চোখ করে তাকাতেই আরিয়ান চুপ হলো। সবাই যেন খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলো।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ২০