ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪৬

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪৬
সাইয়্যারা খান

রোদ জেদ ধরে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে। এতেও বেশ জ্বালা। পায়ে পানি জমাতে বেশিক্ষণ ঝুলিয়ে বসতে পারে না। মেজাজ আপাতত প্রচুর খারাপ হয়ে আছে ওর। পাঁচ মাসের উঁচু হওয়া পেট এখন অথচ দেখে মনে হয় আট মাসের ভরা পেট। এ নিয়ে ও আদ্রিয়ানের চিন্তার অন্ত ছিলো না।

ড.মিহা পরে বুঝিয়ে বলেছে যে টুইন হবে তাই স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি বড় তো হবেই। এতে চিন্তার কিছু নেই। আদ্রিয়ান রুমে ডুকতেই নজরে এলো রেগে লালা হওয়া রোদের দিকে। ঢোলাঢুলা একটা প্রেগন্যান্সির ফ্রক পড়া রোদ। বেশ মানিয়েছে এই গোলাপি রং টা রোদকে। আগের নাদুসনুদুস রোদ এখন কিছুটা গোলুমুলু হয়েছে। দেখলেই আদর আদর লাগে কিন্তু আদ্রিয়ান তো এখন আদর করতে পারে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই যে রোদের চোখ দুটি ক্লান্ত। শরীর ফুলেছে অথচ ভেঙে গিয়েছে। আগের মতো কিছুই করতে পারে না। অথচ রুপ তার বেড়েছে হাজার গুন। মাতৃকালীন এতটা যে কোন নারীকে সুন্দর আর আবেদনময়ী লাগে তা জানা ছিলো না আদ্রিয়ানের। হাতের ফলের প্লেট’টা পাশে রেখে হাত ধুয়ে এলো। রোদের রাগ যেন আকাশচুম্বি হলো। ইদানীং মেজাজ তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না ওর। আপাতত প্রচন্ড রাগ লাগছে। আদ্রিয়ান হাত ধুয়ে এসে ফলের প্লেট’টা হাতে নিয়ে রোদের মুখের সামনে ধরতেই নাক ফুলিয়ে মুখ সরালো রোদ। আদ্রিয়ান আবারও ধরলো। রোদ খাবে না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আদ্রিয়ান বললো,

— কাল নিয়ে যাব তো। বলেছিনা? হা করো।
— কাল ই খাব। সরান এখান থেকে।
কাঠ কাঠ গলায় রোদ বলে উঠলো। আদ্রিয়ান দীর্ঘ শ্বাস টানলো। হাতের প্লেট’টা সাইডে রেখে রোদের হাত দুটি ধরে নরম কন্ঠে শুধালো,

— সোনা প্লিজ খেয়ে নাও। এটা এখন খাওয়ার সময় তোমার। জেদ করে না।
রোদ নাক মুখ কুচকে রেখেছে। আদ্রিয়ান আবারও বললো,
— আচ্ছা তুমিই বলো ডক্টর না বেশি জার্নি করতে নিষেধ করেছেন? কাল তো তোমারও চেকাপ আছে। কাল ই না হয় বাবুকে দেখো৷ আজ ভিডিও কলে দেখো।
রোদ মানলো না। ওর ভাইয়ের সন্তান হবে আজ। সেখানে রোদ নাকি কাল দেখতে যাবে? এটা কি সম্ভব? মোটেও না। রোদ আজই যাবে। ফলের প্লেট’টা নিজের হাতে নিয়ে খেতে খেতে বললো,

— আজই যাব। আপনি না নিলে একাই যাব।
আদ্রিয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন করছে ওকে। রোদ অর্ধেক খেয়েই প্লেট’টা রেখে দিলো। মনটা খারাপ ওর। আদ্রিয়ান একটু ঘেঁষে বসলো। কি মনে করে রোদ নিজের মাথাটা আদ্রিয়ানের বুকে রেখে চোখ বুজে নিলো। আদ্রিয়ান দুই হাতে আটকে নিলো রোদকে। রোদ যে এখন কাঁদছে এটা ওর জানা। প্রায় সপ্তাহ খানিক ধরে এমন হচ্ছে ওর। হঠাৎ করেই ভীষণ রেগে যায় আবার একটু পরই কেঁদে দিবে। মুড এতো ফাঁস্ট সুইং হচ্ছে ওর যা বলার বাইরে। এই ব্যাপারে প্রথম প্রথম আদ্রিয়ান টেনশনে থাকলেও ড.মিহা বলেছে সমস্যার কোন কারণ নেই কিন্তু রোদের খেয়াল রাখতে হবে। শরীরের অবস্থা এমনিতেই ভালো না। আদ্রিয়ান নিজেও ইদানীং অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। এমন হলে কিভাবে হবে? যথাসম্ভব নিজেকে সামলে আদ্রিয়ান বললো,

— আচ্ছা নিয়ে যাব। এরপর যদি কোন রকম সমস্যা হয় একদম আমি সব ফেলে চলে যাব।
………….
— কান্না থামাও।
রোদের হিচকি উঠে গেলো। আদ্রিয়ানের নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয় মাঝে মধ্যে। রোদ আদ্রিয়ানের বুকের পাশের টিশার্ট টা খামচে ধরে কান্না করতে করতে বললো,
— আমি আপনাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি তাই না? আমি জানি তো। সত্যি আমি জানি না কেন এমন হচ্ছে। আমি ইচ্ছে করে করি না। আমার হঠাৎ হঠাৎ রাগ উঠে যায়। আমি কি করব?
আদ্রিয়ান হাতের বন্ধন দৃঢ় করলো। শরীর ফুলে উঠা শরীরটাকে নিজের বাহুতে পুরে নিয়ে ওর মাথায় চুমু খেয়ে বললো,

— আমি জানি তো সোনা। আচ্ছা নিয়ে যাব। বকবো ও না।
–উহু যাব না।
— আবার কি হলো?
— কিছু না। এমনিতেই। আপনি দেখে আসুন তো মিশি কোথায়? গোসল করাতে হবে ওকে।

আদ্রিয়ান রোদকে ছেড়ে বাইর হতেই রোদ বেডের সাইড ধরে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। বমি বমি পাচ্ছে। তারাতাড়ি ওয়াসরুমে ডুকে গলগল করে বমি করে দিলো। আদ্রিয়ান আর মিশির কন্ঠ শুনতেই দরজা লাগিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান এখন রোদের এমন অবস্থা দেখলেই হাইপার হয়ে যাবে। রোদ এখন ভয় নিজেকে নিয়ে কম আর আদ্রিয়ান’কে নিয়ে বেশি পায়। যেখানে রোদের অল্প অসুস্থ হলেই এই লোক এমন পাগলামি করে সেখানে যদি রোদের কিছু একটা হয়ে যায় তখন আদ্রিয়ানের কি হবে? রোদের বড় দুই বাচ্চার কি হবে? ইদানীং তো রোদ পেইন হলেও আদ্রিয়ান থেকে লুকানোর চেষ্টা করে। রোদ সব পরিষ্কার করছিলো তখনই দরজায় কড়াঘাতে ওর ধ্যান ভাঙলো। আদ্রিয়ান সমানতালে দরজায় নক করেই যাচ্ছে আর বলছে,

— রোদ? রোদ? দরজা খুলো। কি হয়েছে? এই মেয়ে? রোদ!
ভয়ে এক ঢোক গিললো রোদ। ভালোকরে বমি পরিষ্কার করে মুখে পানি দিয়ে দরজা খুলতেই হুরমুর করে ভেতরে ঢুকলো আদ্রিয়ান। রোদ ভ্রু কুচকে বললো,
— কি হয়েছে? বের হন।
আদ্রিয়ান সতর্ক দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকালো। বুঝার চেষ্টা করলো। পরপরই রোদকে ধরে বের হলো। রোদের ভেজা মুখটা মুছাতে মুছাতে বললো,

— কি করছিলে?
— মানুষ ওয়াসরুমে যা করে।
— আমি থাকতে কেন গেলে না?
— আজব প্রয়োজন পরে নি।
— দেখি তাকাও।
রোদ মাথা নিচু করেই রেখেছে। আদ্রিয়ান ওর মুখটা উঁচু করে বললো,

— বমি হয়েছে?
— একটু।
— মিথ্যা বলা শিখেছো ইদানীং।
রোদ ঢোক গিললো। আদ্রিয়ান’কে টেনশন দিতে চায় না ও আবার কিছু লুকাতেও পারে না। মিশি রোদকে অবশ্য উদ্ধার করলো ওর বাবাই থেকে। রোদের কাছে ঘেঁষে বসে বললো,

— মাম্মা?
— জ্বি মা।
— ভাই কখন আসবে?
— একটু পরই এসে যাবে মা।
আদ্রিয়ান আর কিছু বললো না। সোজা মিশিকে কোলে তুলে ওয়াসরুমে নিলো গোসল করাতে। রোদ বুকে হাত চেপে শ্বাস নিলো। এই লোক এত চালাক। তাও যদি হয় রোদ জনিত কোন কিছু তাহলে তো কথাই নেই। মিশিকে টাওয়ালে পেচিয়ে কোলে তুলে বের হলো আদ্রিয়ান। রোদ হাত বাড়াতেই মিশি বাবার কোল থেকে নেমে মায়ের কাছে এলো। রোদ সুন্দর করে ওকে মুছিয়ে একটা বিড়াল প্যান্ট আর কুর্তি পড়িয়ে দিয়ে বললো,

— মা এখন আর বাইরে যাবে না।
— আলিফ ভাইয়ার কাছে যাই?
রোদ মিশির ভেজা চুল গুলো সুন্দর করে নেড়ে দিয়ে বললো,
— আচ্ছা যাও। আরিয়ানা’কে জাগাবে না ঘুমালে। ঠিক আছে?
— আচ্ছা।
বলে মায়ে’র ঠোঁটে চুমু খেয়ে মিশি দৌড়ে বেরিয়ে গেল। আদ্রিয়ান ভেজা টাওয়ালটা বারান্দায় মেলে দিয়ে আসতে আসতেই দেখলো রোদ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আদ্রিয়ান ওকে ধরে বললো,

— আগে গোসল।
রোদ ঘুমু ঘুমু চোখ দিয়ে তাকিয়ে বললো,
— আগে ঘুম।
— কোন কথা না। ড.মিহা বলেছে টাইমলি গোসল করতে।
— অনেক ঘুম আসছে। দেখুন চোখ খুলতে পারছি না।
— আমি বুঝি না এতটুকু সময়ের মধ্যে তোমার এত ঘুম কিভাবে আসে?
— আমি কি ঘুমাই নাকি? আপনার পাঁজি দুটো ঘুমাতে চাচ্ছে।
— তাই?
— হুম তাই তো।

আদ্রিয়ান হাটু গেড়ে রোদের পেটের সামনে বসলো। দুই হাত দিয়ে মন ভরে আদর দিলো পেটে। পরপর কতগুলো চুমু খেয়ে বললো,
— বাবাইরা তোমরা নাকি ঘুমাতে চাচ্ছো?
প্রশ্নটা করেই পেটে কান পাতলো আদ্রিয়ান। এমন ভান করছে মনে হচ্ছে ওর বাচ্চারা ওকে উত্তর দিবে এখন। রোদ হাসছে ঠোঁট এলিয়ে। পাগল বর রোদের। আদ্রিয়ান মুখটা সিরিয়াস করে বললো,
— আমার বাচ্চারা এখন গোসল করতে চাচ্ছে। উঠো।
বলে রোদের হাত ধরে উঠাতে উদ্যত হলেই রোদ রেগে বললো,

— বললাম তো এখন না।
কে শুনে কার কথা। আদ্রিয়ান রোদকে পাজা কোলে তুলে নিলো। সোজা ওয়াসরুমে নামিয়ে দিয়ে সাওয়ার টা অন করে দিতেই রোদ ভয়াবহ ভাবে রেগে গেলো৷ আদ্রিয়ান পাত্তা দিলো না। ভালোমতো রোদের চুল ধুয়ে দিতে ব্যাস্ত ও। রোদ যেহেতু ইদানীং বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না তাই আদ্রিয়ান উঁচু একটা টুল এখানে রেখেছে। আপাতত রোদকে ওটাতে বসিয়েই গোসল করাচ্ছে ও। এদিকে রোদ চেচিয়ে বলে যাচ্ছে,

— সবসময় একদম ভালোলাগে না আমার। বলেছি না একবার এখন না।তবুও কেন জোর করেন? পরে করলে কি হতো? আমার ঘুম আপনার সহ্য হয় না। আমার কিছুই আপনার সহ্য হয় না।
রেগে বলতে বলতে আবার কেঁদে দিলো রোদ। হাঁপিয়ে উঠেছে এত কথা বলে। পেটে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। আদ্রিয়ান সাওয়ারটা অফ করে দিয়ে রোদের সামনে দাঁড়িয়ে আলতো হাতে ওর মাথাটা নিজের কাছে নিলো। আদ্রিয়ানের পেটে এসে ঠেকলো রোদের মাথা। ভেজা চুলে হাত বুলাতে বুলাতে আদ্রিয়ান বললো,

— সোনা আমার কাঁদে না। তোমার সব অভিযোগ শুনছি। বলো।
রোদ দুই হাতে আদ্রিয়ানের কোমড়টা জড়িয়ে ধরলো। মুখটা ঘঁষে দিলো পেটে। আদ্রিয়ান আবারও বলতেই রোদ বললো,
— আমি জানি না কেন এমন হচ্ছে। আমি এতটা কেন রিএক্ট করি। ভালোলাগে না কিছু।
— কোন ব্যাপার না। এটা স্বাভাবিক পাখি।

রোদকে ছাড়িয়ে ওর ভেজা চুল গুলো কাটা দিয়ে আটকে শরীরে বডি ওয়াস দিয়ে সুন্দর করে গোসল করাচ্ছে আদ্রিয়ান। রোদ চুপচাপ বসে নেই। দুষ্টামিতে মেতে আছে। কে বলবে মাত্র রেগে আবার কাঁদছিলো এই মেয়ে? এই তো দিব্যি দুষ্টামি করছে ও। ফেনাগুলো আদ্রিয়ানকে লাগিয়ে দিচ্ছে আবার পানি ছিটাচ্ছে। বলতে হবে ধৈর্যশীল পুরুষ আদ্রিয়ান। এত ধৈর্য কার ই বা আছে। বউকে সুন্দর করে গোসল করিয়ে একটা টাওয়াল মাথায় পেচিয়ে দিলো। পোশাক পাল্টাতে সাহায্য করলো। হাতের ভেজা ঢোলা পোশাকটা দেখেই আদ্রিয়ানের মনে পরলো কিছুদিন আগের কথা।

এই তো তখন রোদের পেট ফুলা শুরু হয়েছিলো। কোন ড্রেসই পরতে পারছিলো না। কতক্ষণ কেঁদেছিলো সেই শোকে। আদ্রিয়ান সেই দিনই ম্যাটারনিটির এতগুলো পেশাক এনেছিলো। সেগুলো দেখেই যেন রাগে লাল হয়েছিলো রোদ। ওর কথা ও কেন পরবে এগুলো? এগুলো নাকি বয়স্ক মহিলারা পরে। রোদকেও বুড়ি সাজাতে নাকি আদ্রিয়ান এগুলো এনেছে। কিন্তু যখন দেখলো পুড়নো সব কাপড়েই ওর সমস্যা হচ্ছে। আরাম পাচ্ছে না কিছুতেই তখন রাতে জোর করে আদ্রিয়ান একটা পরিয়ে দেয় কারণ রোদ ঘুমাতে পারছিলো না। অবশেষে ঢোলা পোশাকেই সস্তি পেল ও। সেই থেকেই এগুলো পরা ধরেছে নাহলে কার সাধ্য ছিলো রোদকে এগুলো পরাবে?

রোদের খোঁচা দেয়াতে আদ্রিয়ানের ধ্যান ভাঙলো। সুন্দর করে রোদকে মুছিয়ে পোশাক পড়িয়ে ওযু করতে সাহায্য করলো আদ্রিয়ান। নিয়ে কাউচে বসিয়ে বেড গুছিয়ে নিজেও ঢুকলো গোসল করতে। জোহরের নামাজটা দুইজন একসাথে আদায় করে নিলো। রোদ অবশ্য এখন চেয়ারে বসে নামাজ পড়ে। ঝুঁকে সিজদাহ্ করতে পারে না। এত বড় পেট নিয়ে সম্ভব হয় না এখন। রাতের পর রাত এখন তাহাজ্জুদে কাটিয়ে দেয় আদ্রিয়ান। রোদ ও পরে যতটুকু পারছে। হয়তো দোয়ার বরকতেই এখন পর্যন্ত সব ঠিক ঠাক চলছে।

দিশা হাতে ফোনটা তুলে পড়নের কাপড়েই শশুর বাড়ী থেকে বেরিয়ে গেল। চোখ দিয়ে মেয়েটার এক ফোটা ও পানি পরছে না। সকলের অগচড়ে বেরিয়েছে ও। কোথায় যাবে? গন্তব্য জানা নেই। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে চলেছে। এদিক ওদিক যাওয়া যাবে না। কার পাল্লায় আবার পরে?ভেবেই বাসার দিকে পা চালালো। বাসায় ওকে দেখতেই সকলে চমকে উঠলো। এভাবে বাসার পোশাকেই শুধু মাথায় একটা ঘোমটা দিয়ে চলে এসেছে দিশা। দিশা সোজা নিজের বাবা’র সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

— আব্বু আমি কি এখানে কিছুদিন থাকতে পারি?
দিশার বাবা অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন। কি বলে তার মেয়ে? হরবর করে বলে উঠলেন,
— কি বলিস আম্মা? তোমার বাড়ি এটা। যতদিন খুশি থাকবে।
— আমাকে কেউ কোন প্রশ্ন করতে পারবে না। আর না ই ওই বাসায় যেতে জোর করবে। ওনারা আসলেও না। তবে বলে রাখি কারো সাথে কোন সমস্যা হয় নি আমার। এমনিতেই এলাম আবার চলে যাব। এখন যাই।

কথাগুলো বলেই নিজের রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিলো দিশা। হাটু মুড়ে বসে কেঁদে ফেললো নিঃশব্দে। সুখ কেন নেই ওর কপালে? কেন নেই? সব দোষ কি রাদকে ভালোবেসে? কোই দিশা তো এখন রাদকে মনে করে না। কিঞ্চিতে মনে পরলেও ভুলে যায় দিশা তাহলে রাতুল কেন রোদকে ভুলে না? দিশা তো রাতুলকে নিজের মনে জায়গা করে দিতে ব্যাস্ত। তাহলে রাতুল কেন বুঝে না? কেন দিশাকে অবহেলা করে? কেন দিন শেষে ওদের সম্পর্ক দৈহিক ই রয়ে যাচ্ছে? কেন আত্নীক হচ্ছে না? ভাবতেই গুমড়ে কাঁদে দিশা। সংসার থেকে মন উঠে যাচ্ছে ওর। একা একটা সম্পর্ককে আর কত টানবে ও?

রাতুল দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে। না দিশাকে সময় দেয় না নিজের পরিবারকে। দিশা এটা সেটা সব করলেও রাতু্ল থেকে রেসপন্স জিরো। গত পরসু রাতে যখন দিশা রাতুলের উন্মুক্ত বক্ষে মাথা দিয়ে আবদার করেছিলো, যাতে দুই জন কোথায় ঘুরতে যায় তখন রাতুল জানায় সে ব্যাস্ত। দিশা’র জোরাজুরিতে রাজি হয়ে বলে কাল ঘুরতে যাবে দুপুরে। সেই দিশা দুপুর থেকে তৈরি হয়ে ছিলো৷ রাতুলের কোন খবর নেই।

কত কল করলো ফোন সুইচ অফ। দিশা রাত পর্যন্ত ওভাবেই বসে ছিলো। রাত ১১ টায় রাতুল যখন বাসায় ফিরলো তখন দিশা’র মনে কোথায় একটু ছিলো হয়তো রাতুল মাফ চাইবে। হয়তো এখন দিশাকে আদর আদর কথা বলবে। হয়তো একটা ফুল দিবে। কিন্তু না কিছুই হলো না। রাতুল ফ্রেশ হয়ে এসে দিশাকে ওভাবে বসে থাকতে দেখেই দরজা লাগিয়ে এসে লাইট অফ করে দিলো৷ পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

দিশা ভাবলো এই তো এই বুঝি রাতুল ওকে কোন সারপ্রাইজ দিলো। কিন্তু দিশার সকল ভাবনা মিথ্যা করে দিয়ে রাতুল ওকে কোলে তুলে নিলো বিছানায়। এই প্রথম হয়তো দিশার মনে হয়েছিলো রাতুল ওকে নোংরা করে দিলো। দিশা কি রাস্তার মেয়ে হয়ে গেল? হবে হয়তো। নাহলে রাতুল কেন শুধু নিজের পুরুষত্ব দেখাতেই দিশার সানিধ্যে আসে।

ভালোবাসার ভিন্ন রং বোনাস পর্ব

ভালোবাসতে কেন নয়? বিবেকের তাড়নায় দিশা দিকবিদিকশুন্য হয়ে পরে। সকালে রাতুল আবার নিজের মতো উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা চাইতেই যন্ত্রের ন্যায় দিশা উঠে ওকে নাস্তা সাজিয়ে দিলো। সেই থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক ভেবে চিন্তা করে দিশা ঐ বাড়ী থেকে চলে এসেছে। রাতুলের এতদিনের আচরণ ওকে যতটা কষ্ট দিয়েছে তার থেকেও পীড়াদায়ক ছিলো গতরাতের স্পর্শ। যা ছিলো সম্পূর্ণ ভালোবাসাহীন।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪৬ শেষ