ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪১

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪১
সাইয়্যারা খান

ক্যান্টিনে বসে এখনও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে রোদ। ইয়াজ কত সান্ত্বনা বাণী শুনাচ্ছে কাজে দিচ্ছে না। প্রিয় বান্ধবীর এমন কান্না সহজে সহ্য করতে পারে না ইয়াজ। কি ই বা করবে? পরিস্থিতি অনুকূলে ছিলো না। শেষ বারের মতো চেষ্টা করলো ইয়াজ,

— রোদ প্লিজ কান্না থামা। তোর কান্না সহ্য হয় না আমার। বোন আমার কাঁদিস না।
রোদ ফুপিয়েই যাচ্ছে। তখনই আরিয়ান এসে পাশে বসলো। মাত্রই সার্জারি থেকে বের হয়ে কেবিনে যাচ্ছিলো তখনই রোদের খবর কানে আসে। আরিয়ান বসতেই খেয়াল করলো রোদের হাত-পা কাঁপছে অনবরত। আরিয়ানকে দেখেই রোদ কান্না থামানোর চেষ্টা করলো এতে করে দম আটকে আটকে আসছে ওর। আরিয়ান তারাতাড়ি ধরে পানি খাওয়ালো। রোদকে স্বাভাবিক করতে বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— সব বাদ দে। চল বাসায়। আমি এখন যাব।
— উনি শুনলে বকবে আমাকে।
কান্নারত গলায় বলে উঠলো রোদ। আরিয়ান আর হেসে উঠলো। আরিয়ান মশকরা করার স্বরে বললো,
— তোর উনি কিছু বলবে না। উঠ। লেট হচ্ছে বাসায় যাবি।
একপ্রকার জোর করেই রোদকে নিয়ে আরিয়ান বাসায় আসলো।
আজ মেডিক্যালে~

এনাটমির ক্লাসের ডেমো দেখেই পাঁচ দিন আগে মাথা ঘুরিয়ে পরে গিয়েছিলো রোদ। তখন অবশ্য অসুস্থতা অনেকটাই সেরে গিয়েছিলো কিন্তু সবাই ভেবে নিয়েছিলো দূর্বল থাকায় হয়তো এমন হয়েছিলো। ক্লাসের টিচারটাও বেশ ভালো ছিলেন। তাই কিছু বলেন নি। আদ্রিয়ান শুনতেই রোদকে ধমকেছে। এভাবে দুর্বল শরীর তার উপর গত রাতে রোদের জোরাজোরিতেই ফিজিক্যাল হয়েছিলো। নিশ্চিত তাই এমন হয়েছে। এটা ছিলো আদ্রিয়ানের ধারণা অথচ রোদ জানে আসল ঘটনা।

আদ্রিয়ানের রাগ দেখে বলার সাহস পায় নি ও। অতি রাগে সেই পাঁচ দিন ধরে আদ্রিয়ানের কাছে ধরা দেয় নি রোদ। কেন যাবে রোদ আদ্রিয়ানের কাছে? বিনা কারণে ধমকেছে সে রোদকে। গত দুই রাতে আদ্রিয়ান বেশ চেয়েছিলো রোদকে কিন্তু রোদও ঠ্যাটার মতো মিশানের রুমে চলে গিয়েছিলো।

অসহায় আদ্রিয়ান সেখানে আনতে গিয়েও পাত্তা পায় নি বউ থেকে।
আজ আবারও পাঁচদিন পরে এনাটমি ক্লাসে প্রথমে বমি করে দেয় রোদ। পরপরই মাথা ঘুরিয়ে পরে যায়। উপস্থিত টিচার তখন বেশ চটে যান রোদের উপর। প্রায় আধ ঘন্টা পর জ্ঞান ফেরার পরই স্যার রোদকে ডেকে পাঠায়। সবার সামনে বেশ জোরালো গলায় অপমান করেন রোদকে। এই স্যারটা অবশ্য এমনই। কিন্তু রোদের উপর যেন আজ অতিরিক্ত রেগে ছিলেন। সবার সামনে আপমান করাতে রোদ বেশ লজ্জা পায়।

স্যারতো এটাও বললো রোদ সরকারের টাকা অপচয় করছে। ওর জায়গাটা অন্য কেউ ডিজার্ভ করে। ও জানতো এমন একদিন আসবে। সখ আর প্যাশন কখনোই এক জিনিস না।
রোদের ব্লাড ফোবিয়া ছোট বেলবেলা থেকেই তাও তীব্র ভাবে। এছাড়াও দূর্বল স্নায়ুর মেয়ে রোদ। অতিরিক্ত কিছুই সহ্য করতে পারে না। ছোট বেলা থেকেই সখ ছিলো সাদা এপ্রন গায়ে জড়ানোর। সেই থেকেই পথ চলা। পরিবার থেকেও উৎসাহ ছিলো বিধায় এগুতে পেরেছিলো। ইন্টারে অবশ্য ওর ল্যাব মার্ক ভালো ছিলো না। তবুও থেমে থাকে নি রোদ। অথচ আজ মনে হচ্ছে ভুল প্রোফেশন চুস করেছে রোদ। নিজের কিছু দুর্বলতাই আজ ওকে এমন পরিস্থিতিতে এনে ফেলেছে।

বাসায় এসেই বাচ্চাদের সাথে ব্যাস্ত হয়ে গেল রোদ। আদ্রিয়ান বাসায় নেই। এখনও অফিস থেকে ফিরে নি। ফোন করেছিলো অবশ্য। রোদ সন্ধ্যার নাস্তা করেই মিশানের পড়া দেখতে বসে। মিশিও মায়ের আশে পাশেই কিছুক্ষণ ঘুরঘুর করলো পরপর মায়ের কোলে উঠে খেলার আবদার করলো। রোদ মিশিকে কোলে নিয়েই আজ ল্যাপটপে আলফাবেট শিখানোর অ্যাপ ডাউনলোড করে মিশিকে দিলো। এর মাধ্যমে খেলার ছলে এলফাবেট চিনা যায়। এখন থেকেই টুকটাক শিক্ষা রোদ মিশিকে দিচ্ছে।

আদ্রিয়ান ফিরলো আজ বেশ রাত করে। রোদ বাচ্চাদের ঘুম পারিয়ে আদ্রিয়ানের অপেক্ষায় ই ছিলো। আদ্রিয়ান এসে তেমন কোন কথা না বলে ওয়াসরুমে ডুকলো। রোদ নিচ থেকে খাবার এনে আদ্রিয়ানের অপেক্ষায় বসে আছে। আদ্রিয়ান বের হতেই রোদ খাবার বাড়লো। দুই জন কোন বাক্য ব্যায় না করেই খাওয়াতে মনোযোগ দিলো। রোদ সব গুছিয়ে আসতেই আদ্রিয়ান খাটে হেলান দিয়ে বসেই বললো,

— মেডিক্যালে আজ…
বাকিটুকু বলার সুযোগ না দিয়েই রোদ ফিকরে কেঁদে উঠলো। আদ্রিয়ান হকচকালো। কাঁদছে কেন রোদ? উঠে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে আগলে নিলো রোদকে। নিয়ে বেডে নিজের বুকে শুয়িয়ে আদর করতে লাগলো। লাভ হলো না। রোদ কেঁদেই যাচ্ছে। আদ্রিয়ান বুঝলো না রোদের কাঁদার কারণ। কি এমন হলো? বেশ সময় নিয়ে রোদকে থামাতেই রোদ হিচকি তুলতে তুলতে সব ঘটনা খুলে বললো। আদ্রিয়ানের চোয়ালটা নিমিষেই শক্ত হয়ে গেল। দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করলো,

— আরিয়ান, ইয়াজ কেউ ছিলো না?
— আপনি আমাকে কেন রাগ দেখাচ্ছেন?
আদ্রিয়ান এবার রোদের হাত ধরে বললো,
— তুমি মাঝেমধ্যে আমাকে ভয়ংকর ভাবে রাগীয়ে দাও রোদ।
অভিমান হলো রোদের। হুট করে আদ্রিয়ানের কোল থেকে নেমে গেলো। ফর্সা মুখটা কেঁদে কেঁদে লাল করে তুলেছে সে। আদ্রিয়ান সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। হাত বাড়িয়ে ধরতে নিতেই রোদ সরে রুম ত্যাগ করতে উদ্যত হলো কিন্তু আজ আর রেহাই পেলো না। তীব্র থেকে তীব্র ভালোবাসার বর্ষণ ঘটালো আদ্রিয়ান।

রাত তখন ১ টা কি দুটো। বাইরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে অথচ এতে বিন্দু মাত্র গরম কমলো না বরং মাটির গরমটা যেন ছ্যাঁত করে উঠেছে। এসির রুমে একই কাঁথার নিচে রোদকে বুকে নিয়ে মাথায় আদর করে দিচ্ছে আদ্রিয়ান। রোদ ঠান্ডা নিবারক হিসেবে আদ্রিয়ানের লোমশ বুকটার সঠিক ব্যবহার করলো। নাক মুখ ডুবিয়ে রেখেছে প্রিয়জনের বুকে। আদ্রিয়ান বেশ চতুর লোক। ও জানে রোদকে এখন প্রশ্ন করলেই উত্তর পাওয়া যাবে। তাই আদুরে কন্ঠে বললো,

— সোনা,এবার বলো মাথা কিভাবে ঘুরালো? ফোবিয়ার জন্য নাকি অন্য কিছু? শরীর খারাপ ছিলো?
— উমম।
— বলবে না?
ক্লান্ত রোদ জবাবে বলা শুরু করলো,
— ফোবিয়া তো আগেরই। এখন মনে হচ্ছে ভুল করে ফেলেছি। এনাটমি কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। কি করব বলুন? দেখলেই মাথা ঘুরায়।বমি পায়। স্যার বুঝলো না। অপমান করে ধমকেছেন ও।

বলতেই ফুপাতে লাগলো রোদ। আদ্রিয়ান কি বলবে ভেবে পেলো না। রাদকে কল করে জানাতেও ওরা বিশেষ পাত্তা দিলো না যেন এটাই হওয়ার কথা ছিলো। রোদের ফোবিয়া ভয়ংকর। রাদ বুঝিয়েও ছিলো কিন্তু ঐ যে ভেরার পালের মতো রোদ ডক্টর হবে এটা ছোট বেলার সখ ওর।এখন কোনমতে ব্লাড দেখে সহ্য করলেও বাকিটা করা সম্ভব না ওর দ্বারা। রোদ লক্ষ্য ভস্ট্র হতে চলছে কিন্তু আদ্রিয়ান থাকতে কি তা সম্ভব?
মোটেও না। বরাবরই সাহস জোগাচ্ছে ও রোদের। রোদ চুপ করে আদ্রিয়ানের কথা শুনলো কিন্তু উত্তরে আর কিছু বলতে পারলো না।

রাতুল আর দিশার বিয়ের পুরো দুই মাস আজ। বেশ ভালোই সামলাচ্ছে দুইজন দুইজনকে। কথায় আছে,”সোনাই সোনা চিনে” তেমনিভাবে হৃদয় ভাঙা মানুষই ভাঙা হৃদয়ের ব্যাথা বুঝে। আর রইলো মেয়েদের কথা তারা তো পানি। যে পাত্রে ঢালবে তারই আকার ধারণ করবে সে। দিশা ও কিছুটা ঐ ধাঁচের ই। আগে ছিলো না এখন হয়েছে। হয়তো পরিস্থিতির জাতাঁকলে পিষ্ট হয়ে আজ এমন দিশার উৎপত্তি। আগের মতো চঞ্চল, তেঁজী ভাবটা নেই ওর মধ্যে। হাজার বলেও মাস্টার্স করানোর জন্য রাজি করানো গেলো না। গত মাসেই অনার্সের রেজাল্ট পাবলিশ হয়েছে। দিশা কিছুতেই আর পড়াশোনা করবে না। সারাদিন ঘরে থাকে। বিয়ের পর একপ্রকার জোর করে রাতুল ওকে দুই দিন দিশাদের বাসায় নিয়ে গিয়েছিলো। যেতে বললেই দিশা বলে,

— ছাদে উঠলেই তো দেখা যায়। কি দরকার যাওয়ার?
শশুর শাশুড়ী এ ব্যাপারে কিছুই বলে নি কিন্তু রাতুল জানে আসল কারণ। রাতুল নিজেও তো একই পরিস্থিতির স্বীকার। এই যে এখন বউ নিয়ে থাকে। সর্বোচ্চটা জুড়ে যেখানে দিশার থাকার কথা সেখানে অতি সুক্ষ্ম ভাবে কোথায় যেন রোদ রয়ে যায়। রোদ নামের অনুভূতি নিজের ভেতর জাগার আগেই রাতুল দিশা’কে নিয়ে ভাবা শুরু করে দেয়।

কতটুকু লাভ হয় এতে জানা নেই তবুও মনের মধ্যে কিছুটা ঝর কমানো যায়। দিশা এখন রাদকে মনে করে না। এটা তো অন্যায়। ঘোর অন্যায়। বিবাহিত হয়ে তো আর অন্য পুরুষকে মনে লালন করা যায় না। যদি করা যেত তবে নিশ্চিত দিশা সেটাই করত। জীবন থেকে পালানোর সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম হিসেবে দিশা এখন রাতুল সহ শশুর বাড়ীকে আঁকড়ে ধরেছে। সারাদিন ঘর কোণা হয়েই পরে থাকে। সকালে শাশুড়ীর সাথে কাজ, বিকেলে শশুর শাশুড়ীর সাথে চা’য়ে আড্ডা আর রাতে রাতুলের সাথে থাকা। ভালোই বন্ধুত্ব হয়েছে দুই জনের। কিছুটা মনের মিল ও খুঁজেছে দুইজন।

হঠাৎ রাতুল রুমে ডুকায় দিশা ঘার ঘুরিয়ে তাকালো। এতক্ষণ জানালায় দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়েই আনমনেই ভাবছিলো দিশা। রাতুলের চেহারায় কিছুটা চিন্তায় ছাপ। দিশা ভ্রু কুচকে এগিয়ে এসে সোফায় রাখা রাতুলের এপ্রনটা হাতে তুলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে?
— এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দাও তো দিশা।
দিশা জিভ কেটে তারাতাড়ি পানি দিতেই রাতুল ঢকঢক করে গিলে নিলো। কিছু একটা হয়েছে দিশা বুঝতে পারলো। আবারও জিজ্ঞেস করতেই রাতুল চিন্তায় জর্জরিত কন্ঠে বলে উঠলো,

— আজও রোদ সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো দিশা।
দিশা চট করে তাকালো। ছটফট করা কন্ঠে বললো,
— মানে? আবারও কেন? ফোবিয়ার জন্য?
— হু।
ছোট্ট একটা উত্তর দিয়ে রাতুল ওয়াসরুমে ডুকে পড়লো। দিশা ফোনটা বের করে রোদকে কল লাগালো।

রাত তিনটা বাজে এখন। আদ্রিয়ানদের বাসার সবাই হসপিটালে উপস্থিত জারবা সহ বাচ্চারা বাদে। আরিয়ান অস্থির হয়ে পাইচারি করছে। কে বলে ও একজন সিনিয়র ডক্টর? পাগলের মতো আচরণ যেন। একবার এদিক তো একবার ঐ দিন ঘুরঘুর করছে। সবাই সাবা’কে রেখে আরিয়ানকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। ওদিকে কেবিনে ডুকাচ্ছে সাবাকে। রাতে হঠাৎ ই লেবার পেইন উঠেছে। সাবা নিজের মরণ ব্যাথা ভুলে আরিয়ানের হাত ধরে বলছে,

— আমি ঠিক আছি। তুমি শান্ত হও। আরিয়ান শুনে..
আর বলার ধৈর্য কি বউ পাগল আরিয়ান রাখে? ভরা করিডরে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো। নার্সারা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কে বলবে এ ডক্টর আরিয়ান? আদ্রিয়ান কোনমতে ধরে সাবা থেকে ছাড়ালো ওকে। সবাই মিলে আরিয়ান’কে ধরে রাখলো। আরিয়ান হাউ মাউ করে কেঁদে ডেকেই যাচ্ছে,

— সাবা। আমার সাবা। আমার বউ। আমার বউ।
ওর এই পাগলামির কোন ঔষধ নেই। কোনমতে ওকে ধরে রাখা হলো। প্রায় ঘন্টা খানিক পরই সবার উৎকন্ঠা কমিয়ে বাবার মতোই সবার কান ঝালাফালা করে নবজাতকের কান্নার স্বর পাওয়া গেলো। কিন্তু হায় আল্লাহ! আরিয়ানের কান্না থামলো না বৈ ভিন্ন সুরে কেঁদে কেঁদে বলে যাচ্ছে,

— আমার বাচ্চা। আমার বাচ্চা।
আদ্রিয়ান এবার ভাইয়ের উপর প্রচন্ড বিরক্ত হলো। রোদের তো ভিষণ হাসি পাচ্ছে। নার্স শিশুটাকে এনেই আরিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে বললে,

— স্যার আপনার রাজকন্যা এসেছে।
আরিয়ান চোখ মুছে নাক টেনে তাকালো। তার সামনেই কাপড়ে প্যাচানো ছোট্ট একটা জান। আরিয়ানের জান্নাত। আরিয়ান কাঁপা হাতে মেয়েকে বুকে তুলে নিয়ে বলে উঠলো,
— আলহামদুলিল্লাহ। আমার মা।

সবাই দেখার পর পরই বাচ্চাটাকে নিয়ে যাওয়া হলো। সাবা ঠিক আছে জানতেই আরিয়ান এবার যেন চাঙ্গা হয়ে উঠলো। সবাই এ নিয়ে পরে হাসাহাসি হলো। দ্বিতীয় বার বাবা হওয়ার সময় এমন যে কেউ করতে পারে তা ইতিহাসে বিরল বলেই গণ্য হবে।
মা, বাচ্চা দু জনই সুস্থ থাকায় আগামী কাল ই রিলিজ দেয়া হবে। আদ্রিয়ানের মা থেকে গেলো। বাকিরা বাসায় রওনা হলো। যদিও রোদ থাকবে বলে জোর করেছিলো কিন্তু আদ্রিয়ানের চোখ গোড়ানি দেখে আর কিছু বলার সাহস বা সুযোগ কোনটাই হয় নি।

পরদিনই বেবি সহ সাবা’কে বাসায় আনা হলো। মেয়ের নাম রাখা হলো “আরিয়ানা”। বাসায় রমারমা একটা ভাব। রোদ সহ তিন বাচ্চা সরছেই না। সারাক্ষণই ওরা আরিয়ানাকে নিয়েই বসে থাকে। মেয়েটা হয়েছেও একদম মা-বাবা’র মতো। লাল ফর্সা যাকে বলে। বিকেল দিকে যখন ওরা বাচ্চা নিয়ে সাবা’র রুমে ছিলো তখন মিশান হঠাৎ করে বলে উঠলো,

— মা আমাদের ও ছোট্ট বেবি আসলে আমি ওর নাম রাখব।
মুহূর্তেই হাসি হাসি মুখটা রোদের হতাশায় ছেঁয়ে গেলো। এ তো হবার নয়। রোদের সমস্যার কথা তো আর বাচ্চারা জানে না। মিশান রোদকে চুপ করে থাকতে দেখে আবার বলে উঠলো,
— মা আমার ছোট্ট ভাই লাগবে।
রোদ এবার উঠে গেল। অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,

— আমি নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসি। বসো তোমরা।
কথাটা বলেই রোদ উঠে গেলো। কারো দিকে না তাকিয়ে হাটা দিলো রুমের বাইরে। হয়তো নিজের অক্ষমতার জন্য আসা কান্নাটা আটকাতে চাইছে। সাবা কিছু বলার সুযোগ ও পেলো না।
বাকিটা সময় আজ মনমরা হয়েই ছিলো রোদ। আদ্রিয়ান বারবার জিজ্ঞেস করলেও উত্তর পেলো না।

রোদ আজ সকাল থেকেই আবার ও অসুস্থ হয়ে পরেছে। এদিকে আদ্রিয়ান এবার ভীষণ ভয়ে ভয়ে আছে। বমি করতে করতে রোদের জান শেষ। বিছানায় পরে গেলো মেয়েটা একদিনের ব্যাবধানে। মা’কে এমন অসুস্থ দেখে মিশি কেঁদে কেটে অস্থির। মিশান আবার কান্নাকাটি তে নেই। রোদের অসুস্থতা দেখার পর থেকেই চুপ করে গিয়েছে। আজকে আদ্রিয়ান একপ্রকার জোর করেই রোদকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলো। রোদ আদ্রিয়ানের বাহুতে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। মাত্রই এতোগুলো টেস্ট করানো হয়েছে ওর। এখন লাস্ট ব্লাড টেস্ট করা হবে। নার্স ডাক দিতেই আদ্রিয়ান রোদকে ধরে উঠিয়ে ওদিকে গেলো। ব্লা*ড নিতেই রোদ আদ্রিয়ানের বাহু খামচে ধরে রাখলো। বাসায় ফিরার পথেই রোদ বায়না ধরে বললো,

— চলুন না ওখানে নামি। মোমস আর ফুচকা খাব।
আদ্রিয়ান ভেবে পায় না এই মেয়ে কোন আক্কেলে এই কথা বলে? বমি করে করে ভাসিয়ে ফেলেছে অথচ এখন বাইরের খাবার খেতে চায়। এককথায় না করতেই রোদ কিছুটা রাগী কন্ঠে বললো,

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪০ শেষ অংশ

— বউয়ের আবদার পূরণে কি টাকায় টান পরেছে? এখন না খাওয়ালে একটা মেডিসিন ও খাব না।
হাজার বুঝালেও কাজ হলো না। এই রাস্তাই রোদ গাড়িতে বসে বসে দুই প্লেট মোমস এক প্লেট ফুচকা সাবার করে দিলো। সামনে হালিম দেখে সেটাও নাকি খাবে। এবার দিলো আদ্রিয়ান এক রাম ধমক। ব্যাস রোদ ঠান্ডা হয়ে গেল। আদ্রিয়ান টিস্যু দিয়ে রোদের মুখটা মুছে দিয়ে কিছু বলতেই ঝামটা মে’রে মুখ সরিয়ে নিলো রোদ। ফিরে আর তাকালো না তো তাকালোই না।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪২