ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪
সাইয়্যারা খান

(কত বছরই বা ছিলো তখন রোদের? এই তো ১৭ বছর। কলেজের প্রথম বর্ষের শেষ দিক তখন। পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়ে হলো রোদ। পুরো নাম রুদ্রিতা খান রোদ। বড় ভাই রাদ আর ছোট ভাই রুদ্র, বাবা- মা এই তো ছোট সুখী পরিবার। বাবারা দুই ভাই। রোদের বাবা হলো ছোট। বড় ভাইকে অনেক সম্মান করেন ভদ্রলোক সাথে বিশ্বাস ও। যদিও রোদদের বাসা আর চাচাদের বাসা আলাদা তবুও বড় চাচার কথা ওর বাবা পইপই করে পালন করতেন।

আসলে একই ছাদ কিন্তু দুটো ডুপ্লেক্স বাড়ী আলাদা। রোদের দাদাই এমন বাড়ী বানিয়েছিলেন। পুরাণ ঢাকায় এক নামে খান বাড়ী বলে পরিচিত ছিলো। এলাকায় নাম ডাক ও কম ছিলো না। ভদ্র, সভ্য, দানশীল, গোছানো এক পরিবার। বড় চাচারও দুই মেয়ে দিশা, তিশা আর বড় ছেলে ইশান যে বিবাহিত। রুদ্র পরিবারের সবচেয়ে ছোট হলেও আদর যেন রোদের প্রতি সবারই বেশি। হবেই বা না কেন? সবসময় দুষ্টামি, আদর আদর কথা বলা, হাসি খুশি চঞ্চল নাদুসনুদুস রোদ। রাদ আর রুদ্র যেন বোন বলতেই পাগল। বয়সের ব্যবধান যদি বেশি। রাদ ৬ বছরের বড় আর রুদ্র রোদ থেকে ৬ বছরের ছোট। এবার ক্লাস ৯ এ উঠলো মাত্র।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রোদের এত সুন্দর গোছালে জীবনটা অগোছালো করতেই হয় তো খুশি মনে বড় চাচা একদিন রোদের বাবাকে বললেন,
— আমাদের রোদ তো বড় হয়ে যাচ্ছে আ.রহমান।
— জ্বি ভাই। দেখতে দেখতেই কেমন করে বড় হয়ে গেল।
— হুম। আমার বন্ধু সিকদার চাচার ছেলে চিনিস ই তো?
— চিনবোনা কেন রিফাত ভাই?
— হু তার ছেলে রাতুলের জন্য রোদকে চাইছে। ছেলে ভালো ডাক্তার। এছাড়াও চরিত্র, আদব – কায়দাও প্রশংসনীয়। চোখের সামনেই তো দেখেছিস।

হঠাৎ এহেন কথায় চিন্তিত হলেন মি.রহমান। এত ছোট মেয়ে তার। এইচ এস সি ও দেয় নি আর সেই ছোট মেয়েটাকে কি না বিয়ে দেয়ার কথা বলছে। উনি তো এসব বিষয়ে এই পর্যন্ত কিছু ভাবেন নি। বড় ভাই বুঝলেন ছোট ভাইয়ের মনের কথা তাই একটু হেসে বললেন,
— এখন তো বিয়ে দিব না মাকে। শুধু কথা বলে আংটি পরিয়ে যাক। দিশা, তিশা যেহেতু বড় তাই ওদের বিয়ের পরই রোদের বিয়ের কথা হবে। এর আগে না।
মি.রহমান না ও করতে পারাচ্ছেন না আবার হ্যাঁ ও না। বড় ভাইকে অনেক সম্মান করেন বলে কথা। তবুও জানালেন স্ত্রী আর ছেলের সাথে কথা বলে নিক আগে। তার চেয়ে বড় কথা রোদ নিজে কতটা প্রস্তুত এসবের জন্য। ওনার এতসব কথার প্রেক্ষিতে বড় ভাই শুধু গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— রোদ তোর একার না আমারও মেয়ে। ওর ভালো চাই খারাপ না। তুই ও জানিস নিজের সন্তানদের থেকে ওকে বেশি ভালোবাসি আমি।
মি.রহমান জানেন তার ভাই কখনো রোদের খারাপ চাইবেন না৷ তবুও যে মন মানতে নারাজ। বাসায় স্ত্রী আর রাদকে জানাতেই রেগে মেগে ফায়ার রাদ। সবাই বড় চাচাকে ভয় পেলেও রাদ বরাবরই অবাধ্য। কাউকে পরয়া সে কোন কালেই করে না। আর তা যদি নিজের বোন তাহলে তো কথাই নেই। রোদের মা ও তেমন একটা রাজি না। মেয়ের শখ ডাক্তার হবে এখন এসবে ঠেলে দিলে পড়ায় মন নষ্ট হবে।

মি.রহমান সব ভাইকে জানাতেই তিনি জানান, ছেলে নিজেই ডাক্তার আর রোদের পড়ার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিবে ছেলে। আসলে এতো ভালো পাত্র ওর চাচা হাত ছাড়া করতে চাইছিলেন না। নিজের জায়গায় তিনি ঠিক ছিলেন। রাদ পরে জানতে পারলো ছেলে আর কেউ না রাতুল। রাদেরই বন্ধু। নিঃসন্দেহে ভালো ছেলে। আজ কাল এমন ছেলে পাওয়া টাফ।তবুও ও তেমন একটা রাজি না ও। একসময় কিছুটা অমত কিছুটা মত নিয়েই আংটি পড়ানোর অনুষ্ঠানের কথা উঠে। রোদ এসবে কি বলবে নিজেও বুঝতে পারছিলো না। রাতুল ভাইকে ও চিনে। মাঝে মধ্যে বাসায় আসতো। রাদের ভালো বন্ধু। তবুও কেমন যেন লাগলো ওর। কি ই বা বলবে। বড় চাচা যে ওর খারাপ চাইবে না এটা রোদ জানে।

আংটি পড়ানোর অনুষ্ঠান হলেও তার আয়োজন করা হয়েছিলো বড় কমিউনিটি সেন্টারে। এলাকায় কাউকে বাদ রাখেন নি ওর বড় চাচা দাওয়াত দিতে। বিশাল বড় আয়োজন করা হয়েছিলো। এরমধ্যে শুধু একবার রাতুল ওর মা-বাবা নিয়ে এসে দেখে গিয়েছিলো রোদকে৷ হঠাৎ এনগেজমেন্টের দিন সকালের দিকে রোদের ভয়ানক পেট ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। রাদ রুমে এসে রোদকে পেট চেপে শুয়ে থাকতে দেখেই তারাতাড়ি ওকে ধরে চিৎকার করে মা- বাবাকে ডাকে।

ব্যাথাতেই ঙ্গান হারিয়েছিলো রোদ। রাদ সহ ওর মা, ইশান আর বড় চাচি হসপিটালে ছুটেছিলো। সেই সময় রাতুলও হসপিটালেই ছিলো। রোদকে এমন ভাবে দেখেই চমকে যায় ও। পরবর্তীতে রোদের ঙ্গান ফিরে। কিছু টেস্ট করানো হয়। যার রিপোর্ট দিবে সন্ধ্যায়। রোদকে বাসায় আনা হলো। বিকেল দিকে পার্লারে সাজানো হলো। কত বড় আয়োজন, কত সব কিছু কিন্তু শেষে কি হলো?
রাতে রাতুলের পরিবার থেকে কেউ আসলো না। না আসলো রাতুল। শুধু একটা কল এলো। যাতে রাতুলের বাবা নিচু স্বরে জানালেন,

— দুঃখীত এই এনগেজমেন্ট হবে না। রোদের এই সমস্যা জানলে আমরা কথা এগুতাম না। এই সময়ে এসে জানতে পেরে আমরা আর এ নিয়ে এগুতে চাইছি না।
— কি সমস্যা? কি হয়েছে? ( বড় চাচা)
— রোদ কোন দিন মা হতে পারবে না। আমার একটাই ছেলে নাতি – নাতনির মুখ আমিও দেখতে চাই। পারলে মাফ করে দিস।
এরপর সব শেষ। রিপোর্ট হাতে রাদ ফিরে এলো। কি আছে রিপোর্টে আর কেন ই বা রাতুলরা এলো না? এসব জিজ্ঞেস করতেই রাদ রেগে চোখ লাল করে তাকালো বড় চাচার দিকে। বড় চাচা কিছুটা ভরকে গেলেন। রাদ চিৎকার করে বললো,

— বলেছিলাম আমার বোন ছোট। শুধু মাত্র আপনার জন্য সব হলো।
আত্মীয়, এলাকাবাসী অনেকেই উপস্থিত ছিলো সেখানে। সবাই ফিসফিস করা শুরু করে দিলো। রোদ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়েই রইলো। কত জন কত কি সব বলছিলো। কিছু কিছু রোদের কানেও এলো। ও শুধু হা হয়ে গেল। রাদ তারাতাড়ি বোনের হাত ধরে টেনে ওখান থেকে বাসায় নিয়ে এলো। এরপরের জীবনটা কেমন ছিলো?)

হঠাৎ ফোনের আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো রোদের। বছর আগের স্মৃতি মনে করছিলো এতক্ষণ। তখন আদ্রিয়ান ওকে আদর করে রেখে কোথায় যেন গিয়েছে হয়তো কোন জরুরি কাজ ছিলো। ফোন রিসিভ করলো রোদ। রাদ কল করেছে। রিসিভ করতেই রাদ সহ রুদ্র আর মা, বাবার কন্ঠ শুনতে পেল। একটু হাসলো রোদ এতো এতো ভালোবাসা কোথায় রাখবে রোদ। রাদের চিন্তিত কন্ঠ কানে এলো রোদের,

— হ্যালো হ্যালো রোদ। শুনছিস?
— শুনছি ভাইয়া। শান্ত হও।
— সকাল থেকে কল রিসিভ কেন করছিলি না?
— ফোন ওনার কাছে ছিলো। একটু আগে আমাকে দিলো।
রাদ একটু নিজেকে ঠান্ডা করে বললো,
— ঠিক আছে আমার বোন? কেউ কি কিছু বলেছে? কোন ঝামেলা বা কিছু?
— আলহামদুলিল্লাহ সব ঠিক আছে সাথে আমিও। এখানে সবাই অনেক ভালো।
এমন সময় রুদ্রর চেচামেচি শুনা গেল। রাদ ওকে ধমক দিলেও থামলো না। রোদ একটু হেসে বললো,

— আমার আলুর দম কি বলছে? তুমি ওকে ধমকাও কেন?
ওপর পাশ থেকে রুদ্র “আপি” “আপি” ডেকেই যাচ্ছে। রাদ ওকে ধমক দিয়ে আবারও বললো,
— তোর আলুর দম রুদ্র আমার মাথা কাল রাত থেকে খেয়ে দিচ্ছে। আজ তো ঐ বাড়ী নাস্তা দেওয়ার কথা ছিলো কিন্তু বাবা বলেছে দুপুরের খাবার দিবে। এই নিয়ে রুদ্র ঝামেলা করছে। ও সকাল থেকে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে।
রোদ সব শুনে ছোট করে বললো,
— ওহ।
এরমধ্যেই রুদ্র ফোন কেড়ে নিয়ে নিজেই কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

— হ্যালো আপি। শুনছো। আসো তুমি এখন। ভাইয়া তো আমাকে তোমার কাছে যেতে দিচ্ছে না।
রোদের চোখ টলমল করে উঠলো। দুই ভাই ই ওর জান। রুদ্রটা ছোট বলে হয়তো একটু বেশি। বোন ছাড়া এই ছেলের চলে না। অথচ ১২ বছরের বড় ভাই রাদের সাথে সারাদিন যুদ্ধ লাগিয়ে রাখবে। আদুরে গলায় রোদ বললো,
— আমার আলুর চিপসের প্যাকেট কি কেঁদে দিবে নাকি? দুপুরেই তো আসবি। আপি ঠিক আছি তো।

রুদ্রর এখন আরো বেশি কান্না আসছে। কিন্তু সবার সামনে তো কান্না করা যাবে না। তাই ফোন ভাইয়ের হাতে দিয়ে চলে গেল। রোদ ওর মা আর বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কেটে দিলো। ফোন কাটতেই চোখ বেয়ে পানি পরতে লাগলো। আদরে আদরে বড় হওয়া রোদ কখনো মা- বাবা ছাড়া থাকে নি। এখন কি না একা একা এই বাসায়। চোখ মুছলেও আবারও পানি গড়িয়ে পরলো। হঠাৎ দরজায় তাকাতেই দেখলো আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে। সব কিছুই শুনেছে ও। আস্তে করে এসে রোদের পাশে বসলো। রোদ তখনও মাথা নিচু করে আছে। আদ্রিয়ান ওর চোখ মুছে দিয়ে কাটা চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে দিলো। রোদ তখনও মাথা নিচু করে আছে। আদ্রিয়ান ধীর কন্ঠে বললো,

— তাকাও।
রোদ তাকালো না। তাই আদ্রিয়ান ওর থুতনি ধরে মুখ উঁচু করলো। চোখ বেয়ে পানি পরছেই মেয়েটার। আদ্রিয়ানের মন চাইলো মেয়েটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে,”এই মেয়ে এত কাঁদো কেন? তুমি কি জানো তোমার এই কান্নায় কারো বুক জ্বলে? কারো শ্বাস প্রশ্বাস অস্বাভাবিক হয়? কারো দুনিয়া উজার করে তোমার কান্না থামাতে মন চায়?” কিন্তু বলতে পারলো না আদ্রিয়ান আর না পারলো জড়িয়ে ধরতে। যদিও আগে পরে জড়িয়ে ধরেছিলো তখন রোদ ছিলো হয়তো ঘুমে নয়তো অসুস্থ। এখন ধরলে হয় তো বা রোদের অকওয়ার্ড ফিল হতে পারে তাই আদ্রিয়ান ধরলো না। শুধু রোদের দুই হাত মুঠোয় নিয়ে বললো,
— কেঁদো না রোদ। দুপুরেই আসবে ওরা। হয়তো একটু পরই।
মাথা দুলালো রোদ মানে সে কাঁদবে না অথচ চোখ বেয়ে তার পানি পরছেই। আদ্রিয়ান তা নিজ দায়িত্বে মুছে মুছে দিচ্ছে।

হঠাৎ করে মিশি দৌড়ে এলো রুমে। আদ্রিয়ান তখন ফাইল চেক করছিলো আর রোদ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো। মিশি এসেই বাবার কালো লাফিয়ে চড়ে ডাকলো,
— বাবাই?
— জ্বি মা।
— মাম্মা কোথায়?
— বারান্দায় আছে তোমার মাম্মা।

বলেই মেয়ের গালে চুমু খেল। মিশি আবার নেমে গিয়েও ফেরত এসে বাবাকে চুমু খেয়ে বারান্দায় গেল। আদ্রিয়ান দিন কে দিন শুধু আশ্চর্যই হয়। হয় তো শুধু মায়েরাই পারে সন্তানদের এতটা প্রাণচাঞ্চল্য বানাতে। রোদকে যখন থেকে পেয়েছে ঠিক তখন থেকেই মিশি এতটা একটিভ থাকে। আগে ছিলো একদম নিশ্চুপ। শুধু মাত্র আদ্রিয়ান আর মিশানের সাথেই কথা বলতো ঠিক করে। এখন সবার সাথেই ওর যত সব কথা। বিশেষ করে রোদের সাথে।
ব্যালকনিতে গিয়ে মিশি পেছন থেকে রোদের পা জড়িয়ে ধরলো। রোদ প্রথমে চমকালেও পরে বুঝলো এটা মিশি। দুষ্টামি করতে রোদ বললো,

— কে পা ধরলো আমার?
মিশি ডেকে উঠলো,
— মাম্মা।
— কোথায় মিশি?
— নিচে তো মিশি।
রোদ এবার হেসে পেছনে ঘুরে কোলে তুলে নিলো মিশিকে। নাক টেনে দিয়ে বললো,
— এই তো পেয়েছি আমার মাকে। আমার বাচ্চা কোথায় ছিলো এতক্ষণ?
— ভাইয়ার কাছে।
— এখন গোসল করবে চল।

বলে মিশিকে নিয়ে রুমে এসে ওয়াসরুমে ডুকলো। ওয়াসরুম থেকে মিশি আর রোদের খিলখিল হাসির ঝংকার যেন ঘরেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। আদ্রিয়ান হাতের ফাইল রেখে আড়মোড়া ভেঙে ওয়াসরুমে উঁকি দিলো তখনই নজরে এলো নজর কারা এক দৃশ্য যা এই অবদি দেখার ভাগ্য হয়নি আদ্রিয়ানের। রোদ মিশিকে বোলে বসিয়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে। নিজেকে সেফ করতে মিশিও সমান তালে মাকে পানি ছিটা দিচ্ছে আর খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে।

হঠাৎ নিজের মুখে পানির ঝামটা পরতেই আদ্রিয়ান ভরকে গেল। সামনে তাকাতেই দেখলো মুখ চেপে ধরে হাসছে মিশি যার হাতে মগ। অপর দিকে রোদও হেসে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান যেন আর নজর ফেরাতে পারলো না। হাসলেই গালে গভীর টোল পরে এই মেয়ের সাথে চোখ গুলো ছোট ছোট হয়ে যায়। মারাত্মক লাগলো আদ্রিয়ানের এই হাসি। নিজেকে সামলে ওয়াসরুমে ডুকে পানি দিয়ে মিশিকে ভিজিয়ে দিলো। হঠাৎ রোদকে ভেজাতেই রোদ রেগে গিয়ে বললো,

— এই আমি কি আপনাকে ভিজিয়েছি যে আপনি আমাকে ভেজালেন।
বলেই বালতি ভর্তি পানি আদ্রিয়ানের মাথায় ঢেলে দিলো। মিশি সহ রোদও জোরে হেসে উঠলো। আদ্রিয়ান অসহায় মুখ করে তাকিয়ে রইলো। মিশিকে এতো ভেজানো যাবে না যদি ঠান্ডা লেগে যায় তাই রোদ ওর গোসল শেষ করিয়ে টাওয়াল পেচিয়ে কোলে তুলে নিলো। রুমে ডুকে বেবি লোশন লাগিয়ে আলমারি থেকে একটা ছোট ফ্রক পড়িয়ে মাথা মুছে দিলো। ততক্ষণে আদ্রিয়ানের গোসল শেষ। কিন্তু কাপড় না নিয়ে ডুকায় টাওয়াল পেচিয়ে বের হলো।

মিশি তখন বাইরে চলে গিয়েছে। রোদ নিজের ড্রেস বের করে যেই না পেছনে ঘুরলো ওমনি কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে কাপড় পরে গেল। রোদের দুই হাত গিয়ে ঠেকলো আদ্রিয়ানের ভেজা লোমশ বুকে। চোখ খুলে তাকাতেই নজরে এলো টাওয়াল পরিহিত আদ্রিয়ানকে। লজ্জা পেয়ে এখন ভাগ মিলকা বলে দৌড় দিবে নাকি জানালা দিয়ে লাফ দিবে ভেবে পেল না। আপাতত এসব কিছুই করা যাবে না জানে রোদ। আদ্রিয়ানের বুক থেকে হাত সরিয়ে নিলো। আদ্রিয়ান নিজেও অপ্রস্তুত হলো। একটু সরে দাঁড়িয়ে কিছু বলার আগেই রোদ দিলো এক দৌড়। এক দৌড়ে সোজা ওয়াসরুম।

আদ্রিয়ান ও যেতেই ফিক করে হেসে উঠলো। মাথা চুলকে ড্রেস পরে নিলো। গোসল শেষে রোদের মনে পরলো ও তো ড্রেস সব ফেলে এসেছে কি আর করার ডাক দিলো উঁকি দিয়ে,
— শুনছেন?

হঠাৎ করে দেখলো আদ্রিয়ান সামনেই দাঁড়ানো হাতে রোদের সব কাপড়। রোদ এক ঝটকায় সব নিয়ে ধারাম করে দরজা লাগিয়ে দিলো। এই আদ্রিয়ান ওর সব কাপড় দিয়েছে প্রয়োজনীয়। লজ্জায় রোদের চেহারা কালো বাদে সব কালারের রং ধারণ করলো যেন। সব বাদ দিয়ে একেবারে ওজু করে বের হলো। মাথায় পেচানো টাওয়াল খুলে বারান্দায় মেলে দিলো। হিজাব পড়তেই দেখলো আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। রোদকে নামাজ পড়ে রুমেই থাকতে বলে নিজের টুপি নিয়ে নামাজে গেল আদ্রিয়ান।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৩

[ রোদের কিছু অতীত জানালাম বাকিটাও আস্তে আস্তে জানবেন। আর আদ্রিয়ানের অতীতও সামনে জানতে পারবেন। একটু ধৈর্য ধরুন। ধন্যবাদ]

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৫