ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১১

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১১
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

অয়ন ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়াতেই ইরা স্টান্টা ফেলে দিয়ে দৌড়ে চলে যায় কেবিনের বাহিরে। ইরাকে দেখে বেশ বিচলিত দেখাচ্ছে। অয়নের ভয় হচ্ছে ইরা আবার না উল্টো পাল্টা কিছু করে না ফেলে। অয়ন হসপিটালের কেবিন থেকে দৌড়ে বেরিয়ে চলে যায় ইরার পিছন পিছন। ইরা দ্রুত গতিতে চলে যায় হসপিটালের ছাদের উপর। ছাদে আসতেই ইরা রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে পরে। ইরা ছাদের উপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে কয়েক ফোঁটা চোখের জল ফেলে দেয়।

খুব কষ্ট দিচ্ছে তাকে ইরাফানের কথা গুলো। এতোটা কষ্ট‌ হচ্ছে যে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে অবিরত।‌ ইরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে এই শহরে তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। সে আর বাঁচতে চায় না।‌ সে চায় না তার এই জীবনের কঠিন সত্যটা তার পারিবার জানুক। সে চায় না তার জন্য পরিবারের মাথা হেট হয়ে যাক।‌ একটা ভূল করেছে সে তার মাশুল তাকেই দিতে হবে। ইরা এদিকে ওদিকে তাকিয়ে রেলিংয়ের ওপর ভর করতেই অয়ন দৌড়ে এসে ইরাকে আটকায়। ইরা অয়নকে চিৎকার করে বলতে থাকে
— প্লিজ অয়ন ছেড়ে দাও আমায়। আমার মতো একটা নষ্ট মেয়ের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। প্লিজ ছাড়ো আমায়। আমি আজ সব শেষ করবো। প্রথমে নিজে মরবো তারপর নিজের‌ হাতে নিজের গর্ভে থাকা সন্তানের হত্যা করবো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— ইরা প্লিজ স্টপ ইট। এসব কিছু করে তুমি কি প্রমান করতে চাও? এই সব করলে সবাই তোমাকে নিয়ে বাজে কথা বলবে। প্রমান হয়ে যাবে সত্যি তুমি কোনো ভূল কাজ করেছো। প্রমান হবে তুমি বাজে। এর থেকে বরং তুমি নিজেকে সময় দাও। একা পথ‌ চলতে শিখো। আর কারো জন্য না হলেও নিজের সন্তানের জন্য হলেও তোমাকে বাঁচতে হবে। নিজেকে সফল করে তুলতে‌ হবে। মৃত্যু সব সমস্যার সমাধান হতে পারে না। লাইফ একটাই অন্য কারোর জন্য সেই লাইফ সেক্রিফাইস করা উচিত হবে না।

অয়নের কথা গুলো ইরার মনে গিয়ে বিধলো। “সত্যিই তো আমি এসব কি করছি? অয়ন তো ঠিক বলেছে। আমি কেনো ইরফানের কথা‌ ভেবে নিজেকে হত্যা করব? আমি না হয় পাপ করেছি। কিন্তু আমার অনাগত সন্তান তো কোনো পাপ করেনি। আমার উচিত নিজেকে একটু সময় দেয়া। সবটা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কি করে‌ সবটা ঠিক হবে? এই সমাজ আমাকে শান্তিতে বাঁচার কোনো‌সষ সুযোগ দিবে না। বারবার‌ আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। আমার সন্তানের পরিচয় জানতে চাইবে। আমি কি বলবো? কি‌ জবাব‌ দিবো? আল্লাহ আমাকে রাস্তা দেখাও”। ইরাকে চিহ্নিত দেখে অয়ন ইরার দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল

— এতো চিন্তা করছো কেনো? সব ঠিক হয়ে যাবে ভয়‌ নেই।
ইরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলতে লাগলো
— কি ঠিক হবে অয়ন? কিছুই ঠিক হবার না। আমি প্রেগন্যান্ট। এই কথাটা আমার বাবার কানে যাওয়া মাত্রই সে হার্ট অ্যাটাক করবে্ আমার মা তো নিজেকে শেষ করা ছাড়া ২য় কোনো পথ পাবে না। আমার‌ পরিবরের কথা চিন্তা করে আমি কাউকে কিছু বলি নাই।
— হুম তা তো আমি জানি। তবে কি করবে এখন? সবাইকে আর‌ কতদিন আড়ার করতে পারবে? আমি আর তোমাকে হেল্প করতে পারবো না। এখন থেকে‌ সব কিছু তোমার নিজেকে সামলে নিতে হবে।

— হুম। আর কত করবে আমার জন্য? অধরা আপুর থেকে সবটা লুকিয়ে আমার জন্য নিজের সব থেকে কাছের প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলেছো তুমি। আর কিছু করবে‌ না তুমি। আমার মতো খারাপ, বাজে, রাস্তার মেয়ের জন্য তোমাকে ভাবতে হবে না।
ইরার শেষের কথা গুলো অয়নের বেশ খারাপ লাগলো। রাগ হতে লাগলো অয়নের। অয়ন ইরাকে উদ্দেশ্য করে কর্কশ‌ গলায় বলল
— সমস্যা কি তোমার? কি‌‌ চাও তুমি? কেনো বার বার নিজেকে অপরাধী মনে করছো? তুমি ভূল‌ করেছো ঠিক। একটা জাষোয়ারকে ভালোবেসে ভূল করেছো। তার জন্য এই ভূলটা সুধরে তোমাকে নিতে হবে। আর কখনও এমন কথা বলবে না।
অয়নের কথা শেষ হতেই ইরা দৌড়ে এসে অয়নকে জরিয়ে ধরে শক্ত করে। ইরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে কান্না ভেজা কন্ঠে বলছে

— কি করবো আমি? বলো না অয়ন। আমার তো যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। আমি কোথায় যাবো? কে আমার সন্তানের পরিচয় দিবে? কে আমাকে মেনে নিবে? বলো অয়ন প্লিজ।
ইরার কান্না অয়নের বুকটা দুমরে দিচ্ছে। অয়ন ইরার মাথার উপর আলতো ভাবে স্পর্শ করে। ইরা এখনও কাঁদছে। অয়ন ইরাকে শান্ত করে ভরসা মাখা হাত তার মাথার উপর রেখে অয়ন বলছে
— ইরা আমি আছি। একটা বন্ধুর মতো সব সময় তোমার পাশে থাকবো‌ আমি। নিজের সাধ্য মতো তোমার পাশে সর্বদা অয়ন থাকবে। কথা দিলাম।

* অধরা রিহানের চেম্বার থেকে বেরিয়ে হাঁটতে থাকে অজানা গন্তব্যে।‌ অধরার এই গন্তব্যহীন যাত্রা কখন শেষ হবে বা কোথায় গিয়ে শেষ হবে‌ তা অধরার জানা নেই। অধরা এক ধ্যানে এগিয়ে চলেছে। অনেকটা সময় ধরে অধরা হাঁটার পরে অধরা বেশ ক্লান্ত হয়ে যায়্। অধরা রাস্তার পাশে‌ একটা জায়গায় বসে পরে। গলাটা তার বার বার শুকিয়ে যাচ্ছে। এদিকে বিকেল গড়িয়ে পড়েছে প্রায়।‌ রাতে কোথায় থাকবে সে? এখনও তো তা ঠিক করা হয়নি্ অধরা নিজের সাইড ব্যাগটা খুললো। দেখতে লাগলো কোনো‌ টাকা আছে কি না? অধরা সাইড ব্যাগ ভালো করে চোখ বুলিয়ে দেখে কোথাও কোনো টাকা নেই। অধরা থ মেরে বসে পরে আর‌ আপন মনে বলতে থাকে “আরে‌ যা এটা কি হলো? একটাও টাকা নেই! খুব তেষ্টা পেয়েছে আমার পানি খেতে হলেও‌ তো টাকার‌ প্রয়োজন। কিন্তু এখন আমি টাকা পাবো কোথায়? রাতেই বা‌ কি খাবো? রাত পার‌ করার জন্য ও তো একটা রুম প্রয়োজন। আর আমার‌ কাছে তো কিছুই নেই। উফফফফ আল্লাহ মাথা কাজ করছে না কি করবো”?

“অধরা আপন মনে কথা গুলো বলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অধরা ভাবছে এখানে‌ বসে থাকলে কোনো সমাধান আসবে না। তার‌ থেকে বরং আমি একটু দেখি কোথাও কোনো‌‌ কাজ পাওয়া যায় কি না। আর এমনিতে আমি পড়াশোনা জানা একটা মেয়ে সো চাকরিতো‌ একটা পেতেই পারি আমি”। অধরা উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো সামনের দিকে। কিছু দূর এগোতেই অধরা দেখতে পেলো একটা অফিসে চাকরির নিয়োগ দেয়া হবে। অধরা নিয়োগ‌ সংক্রান্ত তথ্য দেখে সরাসরি যোগাযোগ করে চাকরির জন্য। অধরা অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ভিতর থেকে অনুমতি দেয়া হলেই সে প্রবেশ করতে পারবে। অন্যথায় ইন্টারভিউ দিতে পারবে না সে। অধরা কিছু সময় অপেক্ষা করতেই দারোয়ান লোকটা এসে অধরাকে বলল
— ম্যাম আপনি ভিতরে আসতে পারেন।

অধরা কথাটা শুনে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে অফিসের ভিতরে পা বাড়িয়ে দেয়।‌ অধরা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিচ্ছে অফিসটাকে। পরিবেশটা মনোমুগ্ধকর। অধরা এগিয়ে আসতে আসতে চলে আসে বসের কেবিনের সামনে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অধরা বসকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আসতে পারি স্যার?
অধরার কন্ঠ শুনে অফিসের বস দরজার দিকে তাকায়। দরজার দিকে তাকাতেই উনি বেশ হতবাক হয়ে যায়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে অধরার দিকে। অধরা বসের‌‌ দিক থেকে মুখ নামিয়ে নিয়ে‌ ভাবতে‌ লাগলো সে “একেমন অদ্ভুত লোক? এমন করে একটা অপরিচিত মেয়ের দিকে কেউ তাকায় নাকি”? বসের দৃষ্টিপাতে যে অধরার অসস্থি বোধ হচ্ছে তা বেশ‌ বোঝা যাচ্ছে। অধরা আবারও বসকে উদ্দেশ্য করে বলল
— স্যার! শুনছেন?

এইবার বসের ঘোর কাটলো। অধরাকে‌ উদ্দেশ্য করে বেশ অনুনয়ের কন্ঠে বলল
— ম্যাম প্লিজ কাম ইন।‌ প্লিজ! আপনি আসবেন আমাকে আগে কল করে জানাতে পারতেন তো ম্যাম।‌ প্লিজ! টেক ইউর সিট।
বস নিজে চেয়ার ছেড়ে দিয়ে অধরাকে বসতে দিলো। অধরা তার ব্যবহারে রিতিমত চমকে গেলো। একি‌ অদ্ভুত ঘটনা। অধরা আমতো আমতো করে বলছে তাকে
— স্যার। এসব কি বলছেন? আমি আপনার চেয়ারে কেনো বসবো? আমি এখানে একটা‌ চাকরির জন্য এসেছি।‌
অধরার কথা‌ শুনে বস একটু অবাক হয়ে যায়। উনি কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টিতে অধরাকে প্রশ্ন করে
— অয়ন স্যার আপনার স্বামী না?
— না।

— না মানে? আমি কি তবে ভূল করছি? আপনিই তো অধরা। তাই তো?
— হ্যাঁ, আমি অধরা আর অয়ন আমার স্বামী নয়। আমি এখানে ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলতে‌ আসি‌ নাই। আমার একটা চাকরির প্রয়োজন।
— সরি ম্যাম। আপনি এখানে বসুন শুধু এটাই আপনার চাকরি। বলুন ম্যাম কি লাগবে আপনার? প্লিজ অন্য কোথাও যাবেন‌ না।
— ওহহ তাই। আমার চাকরি হয়ে গেছে‌ বুঝি?
— জ্বি ম্যাম। আপনার চাকরি‌ কনফার্ম।
অধরা ওনার কথা শেষ হতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অধরা তার বসের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলল
— যোগ্যদের সুযোগ দিন মিস্টার। আমি এখানে নিজের যোগ্যতা প্রমান করতে এসেছি। কারো কথায় বা নামে নয়।

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১০

* কথাটা শেষ করতেই অধরা হনহন করে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা অফিস থেকে বেরিয়ে আসতেই হঠাৎ করে কেউ একজন অধরাকে ভিশন অবাক করে দিলো। পিছন থেকে‌ কেউ একজন অধরার হাত ধরে ফেললো। অধরা মুখ ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই যা দেখতে পেলো তার জন্য মোটেও সে প্রস্তুত ছিলো না। অধরা দেখতে পেলো তার হাত শক্ত করে ধরে পিছনে দিকে দাড়িয়ে আছে………………………..

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১২