ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৬

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৬
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

* অধরা পেপারটা অয়নের দিকে এগিয়ে দিতেই অয়ন পেপারটা হাতে নিয়ে নেয়। অয়ন পেপারটা ভালো করে পড়তেই মনে হলো আকাশ ভেঙ্গে তার মাথার উপর পরলো। অয়ন একদম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পেপারের দিকে। “এসব কি? এটার জন্য তো আমি প্রস্তুত ছিলাম না কখনও”। আপন মনে বলছে অয়ন। অয়নকে নিশ্চুপ দেখে অধরা বলে উঠলো
— অবাক হচ্ছো? নাকি অবাক হবার নাটক করছো? এতো অবাক হবার কারন নেই অয়ন। তোমাদের জীবন থেকে মুক্তি নিয়ে নিচ্ছি। সাইন করে দাও।

অধরা মুখে বেশ শক্ত কথা বললেও চোখ বেয়ে নোনা জল ঠিক বের হচ্ছে। একজন প্রতারক মানুষকে ভালোবাসার সাজা পেতে হচ্ছে অধরাকে। অয়ন অধরার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল
— অধরা এই সব কি? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।‌ এরকম পাগলামির মানে কি? অধরা প্লিজ স্টপ ইট!
— শার্ট আপ মিস্টার অয়ন। এই সব কি তা বুঝতে পারছেন না? ওপস সরি আমি আপনার মতো নাটক করতে জানি না। তাই আমার কাছে এই সব কিছু একদম পানির মত স্পষ্ট। এটা ডিভোর্স পেপার। সাইন‌ করে আমায় মুক্তি দিন।
কথা বলতেই অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করছে যাচ্ছে অধরা। কোনো ভাবেই অয়নকে বুঝতে দেয়া চলবে না যে অধরার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। অধরা পারছে না নিজের অধিকার ছেড়ে যেতে। অধরা অয়নের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। “অয়নের চোখের দিকে তাকালে নিজেকে কোনো ভাবেই আর নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। হুম ঐ মায়ায় আর জড়াতে চাই না আমি। আজ থেকে আমার পথ আমার লক্ষ্য সব ভিন্ন। আমার মাঝে আর কোনো তুমিময় আসক্তি কাজ করবে না”।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— অধরা আমায় ছেড়ে যাবে! ঠিক আছে যাও। তবে একটা কথা, আমায় বলে যাও কি কারনে আমায় ছেড়ে যাচ্ছো?
অধরা অয়নের কথা শুনতেই কিছুটা কষ্ট করে মুখের কোনে হাসির ঝলক এনে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— তোমার অপরাধ, তোমার ভুল, তোমায় ছেড়ে যাওয়ার কারন, আচ্ছা অয়ন আমি না হয় তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো। কিন্তু তুমি কি আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে প্লিজ? একটা প্রশ্ন করবো শুধু আর কিছু না।
— হুম।

— তোমার কি এমন প্রয়োজন পরলো আমায় ছেড়ে অন্য কারো কাছে যাওয়ার? আমি কি তোমায় ভালোবাসা কম দিয়েছি? নিজের সবটা দিয়ে তোমায় ভালোবাসি। তাও কেনো আমায় ছেড়ে অন্যত্র গেলে? অয়ন মনে পরে আমি তোমার জন্য রাত জেগে থাকতাম? মনে পরে সেই দিন গুলোর কথা যখন অফিসের জরুরী মিটিং এর কাজ ফেলে তুমি আমায় জড়িয়ে ধরে রাখতে? আচ্ছা অয়ন মনে পরে অফিস থেকে রোজ রাতে যখন তুমি বেশ ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরতে। আমি দরজা খুলে দিতেই তুমি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরতে আমায়! মনে পরে সেই দিন গুলো? অয়ন তুমি আমার স্বামী আর আমি তোমার স্ত্রী। তোমার মনের মধ্যে কি চলে? কতটা বদলে গেছো তুমি তা আমি ধরতে না পারলে কে পারবে শুনি? অয়ন বিশ্বাস করো আমি অন্য কাউকে কখনও চাইনি। কারো প্রতি এতোটুকুও দূর্বলতা কখনও কাজ করেনি আমার। তুমি হ্যাঁ, তুমিই একমাত্র মানুষ তার প্রতি আমি ভিশন দূর্বল। তুমি আমায় সাথে প্রতারনা করে গেছো দিনের পর দিন তবুও আমি নিশ্চুপ ছিলাম। কেনো জানো? ভেবেছো হয়তো বোকা! আমি কিছু বুঝি না। আরে না অয়ন আমি বোকা না আমার কাছে তোমার ভালোবাসার মূল্য নিজের জীবনের থেকেও বেশি। তোমাকে হারানোর ভয়ে মুখ বুজে সবটা সহ্য করেছি আমি‌।

* অধরা আর কিছু বলতে পারলো না। নারীর মন নরম হয়‌। অল্প আঘাতে নারী ভিশন কষ্ট পায়। তাই তো তারা চোখের জল লুকাতে পারে না। অধরার ফর্সা উজ্জ্বল বর্ণের চেহারাটা রক্ত বর্ণ হয়ে আছে। চোখ জোড়া প্রকাশ করছে তার মন ভাঙ্গা হৃদয়ের কষ্ট। অধরা কান্না করছে দেখে অয়ন মাথাটা নিচু করে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অধরা আমি তোমায় ঠকাইনি। আর না আমার অন্য কোথাও কোনো সম্পর্ক আছে। আমি তোমাকে ভালোবাসি। বিশ্বাস করো। আমায় ভূল বুঝো না প্লিজ!
অয়নের কথা শুনে অধরা চোখের জল মুছে একটু থেমে বলতে লাগলো
— ভূল বুঝেছি? হায়রে মানুষ! আমি সব কিছু নিজের কানে শুনতে পেয়েছি। আমি কারো কথায় না নিজের চোখের দেখায় বিশ্বাস করি। আমার প্রশ্নের কোনো জবাব নেই তোমার কাছে। কিন্তু তোমার প্রশ্নের সব উত্তর আমার কাছে আছে। সময় চলে যাচ্ছে অয়ন তোমার জন্য কেউ অপেক্ষা করছে। সাইনটা করে দাও।
— হুম।

অয়ন পেন টা কাগজের উপর ধরে আছে। অয়নের চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে। চোখের নিচে পানি টলমল করছে। এই বুঝি ভিজে যাবে ডিভোর্স পেপারের কাগজটা। অধরা অয়নের হাতের দিকে বারংবার তাকাচ্ছে। প্রিয়জনের সাথে বিচ্ছেদের যন্ত্রণাটা কতটা কষ্ট দেয় তা সবাই বোঝে না। অয়ন পেনটা কাগজে সাথে রেখে দিতে যাবে ঠিক এই মুহূর্তে অধরা ম্যাজিস্টেড সহ সবাইকে অবাক করে দিলো অধরা অয়নের হাত থেকে পেনটা ছুমেরে কেরে নেয় অয়ন নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে পাথরের মতো। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বেশ বড় শক্ত গলায় বলতে লাগলো

— সাইন করতে এতো সময় কেনো লাগছে? বলেছি তো আমার সময় চলে যাচ্ছে। তারাতাড়ি সাইন করুন। আজকের পর থেকে আমাদের মাঝে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। আর কখনও এই অধরা আপনার থেকে ভালোবাসা ভিক্ষে করতে আসবে না।
* কথাটা শেষ করেই অধরা ডিভোর্স পেপারের বেশ দ্রুততার সাথে সাইন করে দিলো। সাইন করে দিতেই অধরা নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন অধরার দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এতোটা সহজে সাইন করে দিলো অধরা? আচ্ছা ভালোবাসায় একটু তো বিশ্বাস প্রয়োজন। যাতে করে কখনও কেউ কাউকে না ছেড়ে যেতে হয়। অধরার বিশ্বাস কি তবে শেষ হয়ে গেছে? তাই তো আজ ভালোবাসাটাও শেষ। ম্যাজিস্টেডকে উদ্দেশ্য করে অধরা বললো
— স্যার, সব শেষ! আর কিছু লাগবে? আমি এখন যেতে পারি?
— জ্বি। আপনি আসুন।

অধরা ম্যাজিস্টেডের চেম্বার থেকে হনহন‌ করে বেরিয়ে যেতে লাগলো। অয়ন বোকার মতো বসে আছে। হঠাৎ কেউ একজন অধরার হাত ধরে তাকে থামিয়ে দেয়। অধরা সামনের দিকে মুখ করে আছে। পিছনে ফিরে তাকাতে পারছে না সে। কি করেছি বা পারবে? নিজের সব থেকে প্রিয় কাছের মানুষকে আজ সে মুক্তি দিয়ে আসলো‌। ভালো থাকতে দিয়ে প্রিয়জনের খারাপ থাকাটা নিজের সঙ্গী করে নিয়ে নিলো সারা জীবনের জন্য। অয়ন অধরার হাত ধরে আটকে দিলো। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো

— সত্যি ছেড়ে চলে যাচ্ছো আমায়? একটি বার কি আমার কথা মনে পরবে না তোমার? কষ্ট হবে না আমায় ছেড়ে থাকতে? একটা বার আমার কথা বিশ্বাস করো। তুমি যা যা দেখেছো তা সব………….
অধরা অয়নকে কথা শেষ করতে দিলো না। অয়নের কথা শেষ হবার আগেই অধরা সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো অয়নের গালে। অয়ন নিজের গালে হাত দিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অধরার চোখ বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়তেই অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অতঃপর অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— আমি জানি না এই কথা গুলো কেনো আমাকে বলছেন আপনি। আপনাকে আমি আর সহ্য করতে পারছি না। বিশ্বাস করুন। আমার সামনে থেকে দূরে চলে যান। আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা আর জীবনেও যেনো আমায় আপনার মুখ না দেখায়। আমার পিছনে আসবেন না প্লিজ। সব কিছু শেষ। ইরাকে নিয়ে ভালো থাকতে আশা করি আর কোনো সমস্যা হবে না। আসছি।
* কথাটা শেষ করে অধরা অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন নিরবে দাঁড়িয়ে আছে। শরীর অসার হয়ে আসছে তার। “সত্যিই তো আমি অধরার ভালোবাসার যোগ্য না। আমার অপরাধ গুলো অধরাকে আমার থেকে দূরে নিয়ে গেলো। একটিবার বিশ্বাস রাখতে পারলে না অয়নের উপর? সত্যি টা সত্যি আর মিথ্যে টা মিথ্যে। কোনোটাই যাচাই করলে না তুমি”।

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৫

অধরা চেম্বার থেকে বেরিয়ে যায়। রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছে অধরা। “এতো বড় পৃথিবীতে তার জন্য কি একটু জায়গা হবে না? আর অয়নের বাড়িতে যাওয়া হবে না আমার। খুব কষ্ট হবে অয়ন। খুব কষ্ট হবে। যখন কাল আমার প্রতিটা সকালের সূর্য হয়ে আমায় আর আলোকিত করবে না তুমি। খুব ভালোবাসি তোমায়। এখনও বাসি কারন ভালোবাসার মৃত্যু হয় না। সম্পর্কের শেষ থাকলেও ভালোবাসার শেষ নেই। আমার ভালোবাসা না হয় মনের মধ্যেই থাক। তোমার সুখে হাসতে না পারলেও দূর থেকে তোমার ভালোটাই চাইবো আমি”। আনমনে কথা গুলো ভাবছে অধরা। কথা গুলো মনে
আসতেই চোখের পাতা ভিজে যায়। অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই সে দেখতে পেলো হঠাৎ করে বেশ দ্রুত তার সামনে একটা………………………

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৭