ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৫

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৫
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

* মিনিট দুয়েক ডাকার পরেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে অধরা দরজা খুলে দিলো। অধরা দরজা খুলে দিতেই অয়ন কাঁদো কাঁদো কন্ঠে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অধরা তুমি ঠিক আছো তো? এতোক্ষণ কি করছিলে? জানো আমরা কতটা চিন্তায় পড়ে গেছিলাম।
কথাটা শেষ করতে করতে অয়ন অধরার কাছে চলে আসে। অধরা অয়নের দিকে তাকাতেই অধরার চোখ পরে অয়নের শার্টের দিকে। ইরার কান্না ভেজা চোখের কাজল অয়নের শার্টে লেপ্টে আছে। এতোটাই স্পষ্ট কাজলের দাগ যে দূর থেকে দেখে যে কেউ আঁচ করতে পারবে এই দাগটা কাজলের। অধরা অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলো। অধরার হাসির রহস্য অয়নের অজানা। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে মৃদু গলায় বলল

— হুম আমি জানি তোমরা সবাই আমার জন্য চিন্তা করেছো। কিন্তু অয়ন তুমি মনে হয় একটু বেশিই চিন্তা করে ফেলেছো। তাই তো তোমার শার্টে পরে থাকা কাজলের দাগটা তোমার চোখে পড়েনি।
অধরার কথা শুনে উপস্থিত সবাই বেশ অবাক হয়ে অয়নের শার্টের দিকে দৃষ্টিপাত করে। অয়ন নিজেও অবাক হয়ে যায় শার্টে কাজলের দাগ দেখে। অধরা একটু থমকে আবারও বলতে শুরু করে।
— অয়ন চিন্তা করো না এতো। আমার কিছু হবে না। তুমি তোমার কাজ শেষ করে আসতে পারতে।
অধরার কথা শেষ হতেই অয়নের বাবা কর্কশ গলায় বলে উঠলো
— কাজ শেষ করে মানে? আর অয়ন তোর শার্টে এটা কিসের দাগ?
অয়ন বিভ্রান্ত কর পরিস্থিতিতে পড়ে যায় তার বাবার কথায়। কি উত্তর দিবে ভেবে না পেয়ে অয়ন আমতো আমতো করতে শুরু করে। অধরা খিটখিটেয়ে হেসে দিয়ে বলে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— ওহহহ বাবা তুমিও না। জানো তো অয়ন বাবু কত কাজ করে। এতোটাই কাজ করেন উনি যে নিজের কথাই মনে রাখতে পারেন না। গতকাল এই শার্টটা পরিস্কার করেছি আর আজকেই একদম নোংরা করে ফেলেছে। তোমাকেও বলি অয়ন একটু সাবধানে কাজ করবে না‌। দেখতেই তো পাচ্ছো একটা দাগের জন্য কত কথা শুনতে হয়। পরের বার সাবধানে কাজ করবে কেমন।
অয়ন অধরার কথা গুলো অবাক হয়ে শুনতে লাগলো। অধরার এই রহস্য জনক কথার মানে আর কারো কাছে না হোক অয়নের কাছে বেশ স্পষ্ট। অয়ন অধরার কথার বিপরীতে কোনো কথা বললো না। সবাই অয়নের রুমের সামনে থেকে চলে যেতেই অধরা ফ্রেশ হতে চলে যায়।
* অয়ন ফ্রেশ হয়ে সোফার উপর বসে অধরার কথা ভাবছে। “অধরা কি সবটা জেনে ফেলেছে? অধরাকে কি কিছু প্রশ্ন করে দেখবো? দিন দিন ওর ব্যবহার আমাকে ভাবাচ্ছে কেনো এতো? তবে কি কিছু খারাপ হতে চলেছে”? সোফার উপর হেলে বসে অয়ন আপন মনে ভাবছে কথা গুলো। অধরা ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসতেই অয়ন অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অধরা একদম স্বাভাবিক হয়ে টাওয়াল দিয়ে হাত, মুখ মুছতে মুছতে অয়নকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো

— বসে বসে কি ভাবছো অয়ন?
— উহু কিছু না।
— তাই?
— হুম।
অধরা টাওয়ালটা ফেলে দিয়ে ব্যল্কনির দিকে চলে যায়। অধরার পিছন পিছন অয়ন ও চলে আসে ব্যল্কনিতে। অধরা দূর ঐ আকাশের দিকে তাকিয়ে অয়নের উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে শান্ত গলায় বলতে লাগলো
— দেখেছো অয়ন পুরো আকাশটা জুড়ে এতো এতো তারা থাকার পরেও চাঁদটাকে কতটা শুন্য লাগছে? মনে হচ্ছে না ওর একাকীত্ব দিন গুলো বেশ কষ্টের? তোমার কি মনে হচ্ছে না ওর একটা সঙ্গী প্রয়োজন? এতো সুন্দর রূপ থাকার পরেও চাঁদটাকে কতটা একা থাকতে হয়। কেনো বলো তো অয়ন?

অয়ন অধরার কথা শুনে ঠিক আগের মতো অধরার কাঁধে নিজের হাত রাখে। পরম আবেশে অধরা অয়নের বুকের উপর নিজের মাথাটা হেলে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন অধরার কপালে চুমু খেয়ে অধরাকে জড়িয়ে বলছে
— পুরো আকাশটা জুড়ে যদি হাজারটা চাঁদ থাকতো তবে এই একটা চাঁদের কথা কি আর কারো মনে পরতো? যদি এই চাঁদের মতো আরো চাঁদ থাকতো তবে কি কেউ রোজ নিয়ম করে চাঁদ দেখতে আসতো? চাঁদ একা আছে কারন তাকে একাকী মানায়। একাকীত্বে চাঁদ কষ্ট পায় না। একাকীত্ব সঙ্গি করে চাঁদ মানুষকে একা বাঁচতে শিখায়।
— হুম হয়তো।
— হঠাৎ এ কথা কেনো বললে?

— এমনি বললাম। আমরা প্রত্যেকেই দিন শেষে ভিশন একা। এতোটা একা যে ঐ চাঁদের মতো সর্ব গুন থাকার পরেও আমরাদের আলো শুধু মাত্র রাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দিনের আলো ফুটতেই আমাদের ছুটি নিতে হয়।
* একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাটা বললো অধরা। অয়ন অধরার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। অধরার চোখ জোড়া বেয়ে টপটপ করে নোনা জল মাটিতে গড়িয়ে পরছে। বুকের ভেতরের দহন অয়নের বোঝার বাহিরে। মিনিট কয়েক পর অধরা চোখ মুছে অয়নের বুকের থেকে মাথাটা তুলে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— রাত অনেক হয়েছে চলো ঘুমাতে যাই।
— হুম চলো।

* অধরা অয়নকে পিছনে রেখে ব্যল্কনি থেকে বেরিয়ে চলে আসে রুমে। মনের মধ্যে এক‌ পাহাড় শূন্যতা অনুভব হচ্ছে তার। আজ শেষ বারের মতো মনে হয় অয়নের বুকে মাথা রেখে নিজের শান্তিটা খুঁজে নিলো সে। কিন্তু আফসোস‌ শান্তি তো দূর একটু ভালোবাসাও খুঁজে পেলো না সে। অধরা অয়নের বিপরীত দিকে মুখ করে শুয়ে আছে। বার বার আজকের ঘটনা মনে পড়ছে তার। “অয়ন তার সাথে এমনটা করতে পারলো? ভাবতেই বুকটা দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে। নিজের বোন, অন্য কেউ হলে এতোটা কষ্ট পেতাম না। যতটা কষ্ট পাচ্ছি ইরার কথা মনে করে। বোন হয়ে বোনের এতো বড় ক্ষতিটা করে দিলি ইরা! একটিবারের জন্যও আমার কথা মনে পরেনি তোর? জানিস তো অয়নকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসি। তবুও কেনো আমার থেকে ওকে কেড়ে নিলি? সত্যি রে অসাধারণ অভিনয় তোদের। আর কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তোদের ইচ্ছে পূরন হয়ে যাবে। আর কয়েক মুহূর্ত”।

বিছানায় শুয়ে বেশ অস্বস্তির মধ্যে আছে অয়ন। বুকের বাম পাশে ঝড় উঠেছে তার। সব কিছু কেনো জানি এলোমেলো হয়ে আসছে। “অধরা সব কিছু জানে আমি নিশ্চিত। কিন্তু ও নিশ্চুপ কেনো? সবার সামনে সবটা বলে দিতে গিয়েও কিছুই বললো না। সবার সামনে না বলুক একান্তে আমাকেও কিছু বলছে না কেনো? অধরা এতোটা শান্ত মেয়ে না। নিশ্চই কিছু একটা করবে অধরা। আল্লাহ সব কিছু জেনো ভালোয় ভালোয় হয়ে যায়”। কথাটা ভাবতে ভাবতে অয়ন ঘুমের রাজ্যে পারি জমায়।
* সকাল হতেই অধরা নিজের জিনিস পত্র, জামা-কাপড় গুছিয়ে নিলো। অয়ন চোখ খুলে দেখে সকাল‌ হয়ে গেছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অধরা নেই। অয়ন বিছানা ছেড়ে উঠে অধরা বলে ডাকলো কিছু সময়। অধরার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে অয়ন ফ্রেশ হয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে এসে অয়ন দেখতে পেলো অধরা বসে আছে রুমে। অধরাকে দেখে একটু অন্যরকম লাগছে তার। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— কোথাও কি বের হবে তুমি? এমন কেনো দেখাচ্ছে তোমায়? সব ঠিক আছে তো অধরা? শরীর সুস্থ তো?
যতোই নিজেকে আড়াল করার প্রয়াস করা হোক না কেনো। চোখ সব সময় সত্যিটা প্রকাশ করে দেয়। অধরা ঠোঁটে কোনে মিথ্যে হাসি এঁকে বলল
— হুম। বাহিরে বলতে আমার সাথে তুমিও যাবে।
— ওহহ, তা না হয় যাবো। কিন্তু কোথায়?
— সেটাতো গেলেই বুঝতে পাবে।
* ঘন্টা খানেক পর অয়ন অধরাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে। অয়ন নিজে ড্রাইভ করছে আর অধরা অয়নের পাশের সিটে বসে আছে। কিছুক্ষণ বাদে বাদে অয়ন অধরার থেকে জেনে নেয় কোথায় যেতে হবে বা কি। অধরা জানলার দিকে মুখ করে অয়নকে বলছে কোথায় যেতে হবে। আসলে অধরা অয়নের দিকে তাকাতে পারছে না। এতোটা কষ্ট হচ্ছে তার, যে চোখের জল থামছেনা। অয়ন কিছু বুঝতে পারছে না। কি হচ্ছে বা কি হতে চলেছে! অয়ন আরো কিছু দূর চলে আসতেই অধরা কান্না ভেজা কন্ঠে চিৎকার করে বলল

— সামনে দাঁড় করাও গাড়িটা।
অধরার কথা শুনে অয়নের বুক কেঁপে ওঠে। অয়ন সজোরে ব্রেক করলো। অয়ন অধরার দিকে ভিশন অবাক হয়ে দৃষ্টিপাত করতেই অধরা কর্কশ গলায় বলে উঠলো
— গাড়ি থেকে নেমে যাও। আমি যাচ্ছি।
কথাটা বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে অধরা। অয়ন অবাক হয়ে বসে আছে গাড়িতে। কি করতে চায় অধরা? কি হচ্ছে? কিছুই অয়নের বোধগম্য নয়। অয়ন অধরার পিছন পিছন একটা অফিসে চলে আসে। অফিসে আসতেই অধরা হঠাৎ করে অয়নের হাত ধরে ফেলে শক্ত করে। শক্ত করে অয়নের হাত ধরে অধরা ম্যজিস্টেড এর রুমে চলে আসে। অয়ন থ হয়ে আছে। অধরা একটা সিটে বসে পরলো ধপাস করে। অয়ন দাঁড়িয়ে আছে অধরার পিছনে। অধরা চোখের জল মুছে ম্যজিস্টেডকে উদ্দেশ্য করে বলল

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৪

— স্যার পেপারটা দিন।
— জ্বি।
অধরা পেপারটা অয়নের দিকে এগিয়ে দিতেই অয়ন……………………..

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৬

1 COMMENT

Comments are closed.