ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৪

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৪
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

* অধরা দেখতে পেলো অয়নের বিপরীতে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। অধরা ভালো করে উঁকি দিতে একটু দরজার ক্লোজ হতেই তা দেখতে পেলো। তা দেখে অধরার পা এর নিচের মাটি সরে যায়। অধরা নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না এতো দিন যা যা তার মনে হয়েছে তা সত্যি। অয়ন এর সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ইরা। অধরা চোখ জোড়া বন্ধ করে কয়েক ফোঁটা নোনা জল ফেললো। অতঃপর নিজেকে সামনে ওখান থেকে বেরিয়ে যাবে ঠিক এমন সময় অধরার কানে ভেসে আসে অয়নের গলার কন্ঠ। অধরা অয়নের কন্ঠ শুনে থমকে দাঁড়ায়। অধরা শুনতে পেলো অয়ন ইরাকে উদ্দেশ্য করে বলছে
— এই সব আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। আর কত কিছু শুনবো আমি? এখন কি সময় প্রেগন্যান্ট হবার? ওহহহ গড।

অধরা বেশ ভালো বুঝতে পারছে যে এই কন্ঠ স্বরটা অয়নের। এই কন্ঠ স্বর অধরার বেশ চেনা। অধরা অধির আগ্রহে ২য় কন্ঠের শব্দ শোনার জন্য ব্যাকূল হয়ে আছে। মনের মধ্যে একটা ভরসা কোনো কারন ছাড়াই জন্মেছে অধরার। তা হলো ” হয়তো সব মিথ্যে। অয়ন আমার আর আমারি থাকবে”। কথাটা মনে পরতেই অধরার চোখে পাতা ভারী হয়ে যায়। অধরা চোখের জল মুছতেই দরজার ওপার থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসে। অধরা একটু থেমে ভালো করে শুনতে লাগলো।
— অয়ন কি করবো আমি? আমি প্রেগন্যান্ট হবো কি হবো না তা তো আমার হাতে নেই। আমি কি করবো? প্লিজ কিছু করো। তা না হলে আত্নহত্যা ছাড়া অন্য কোনো উপায় আমার হাতে নেই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইরা অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো কান্না ভেজা কন্ঠে বলতে লাগলো। অধরা দরজার এপার থেকে অয়ন আর ইরার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্যটা অবাক হয়ে দেখতে লাগলো। পুরো পৃথিবীটা মনে হচ্ছে থমকে গেছে অধরার। তার সব সন্দেহ সত্যি। নিজের চোখ কখনও মিথ্যা বলে না। অধরা দরজার এপারে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। হায়রে ভালোবাসা। এতোটা ভালোবাসা দেয়ার পরেও নিজের করে বেঁধে রাখতে পারলো না অয়নকে। “আচ্ছা পুরুষ কি কখনও একজন নারীর কষ্ট উপলব্ধি করবে না”? প্রশ্নটা অধরার বোবা মনের। অয়ন ইরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
— দেখো এই ঘটনা বাবা মা বা অধরার কাছে কতটা কষ্ট দায়ক হবে জানো? ওরা কখনও এটা মেনে নিতে পারবে না। দাঁড়াও আমি একটা ব্যবস্থা করছি। তুমি ভেঙ্গে পরো না। আমি আছি তো।

— হুম।
অয়নের কথা শেষ হতেই সিকিউরিটি চিৎকার করে বলে উঠলো অধরাকে উদ্দেশ্য করে
— এই যে ম্যাম। এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? সমস্যা কি আপনার? অনেকক্ষণ ধরে আপনাকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছি। কি চাই আপনার?
সিকিউরিটি গার্ডের চিৎকারের শব্দে অধরা কেঁপে উঠলো। অয়ন আর ইরার কান উবদি সিকিউরিটি গার্ডের চিৎকারের শব্দ পৌচ্ছানোর আগেই অধরা সিকিউরিটি গার্ডের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল
— ভাই চিৎকার করো না। আর কখনও আমি আসবো না এখানে। চলে যাবো এখনি আমি।
— মানে? আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছেন মনে হচ্ছে।
— না, না আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নেই। আমি শুধু এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম এই আরকি।
— এখনি এখান থেকে বেরিয়ে যান। অন্যথায় পুলিশকে ডাকতে বাধ্য হবো।
— তার আর প্রয়োজন পরবে না ভাই‌। আসছি আমি।

* কথাটা বলে অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে যায় রোজ ভ্যালি থেকে। রিসোর্টের বাহিরে এসে অধরা পাগলের মতো হাসতে লাগলো। ভিশন শব্দ করে হাসছে অধরা। এতোটা হাসি কোনো নরমাল মানুষ হাসতে পারে না‌‌। তবে কি অধরা পাগল হয়ে গেলো? আজ তো অধরা নিজের চোখে সবটা দেখলো। অধরা নিজের প্রিয়জনকে চারদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছে। স্বামীর ভাগ কখনও কোনো নারী অন্য কাউকে দিতে পারে না। অধরাও তার ব্যতিক্রম নয়। আজ তো অধরার কষ্ট পাবার কথা। অথচ সে কষ্ট না পেয়ে হেসে চলেছে অনবরত। আশে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোক জন অধরার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বুঝতে চেষ্টা করছে অধরার হাসির কারন। তবে কারো কাছেই বোধগম্য হচ্ছে না এই হাসির মধ্যে লুকিয়ে থাকা হৃদয় ভাঙা চিৎকারের শব্দ।

* বাড়িতে ফিরে অধরা নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে অয়ন আর তার একসাথে কাটানো কিছু ক্যামেরা বন্দি ছবি হাতে নিয়ে দেখছে। “বুকের ভিতরটা কেমন যেনো দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে। এমন কেনো হচ্ছে আমার? অয়নের জন্য? আরে অয়নের জন্য এমন কেনো হবে? কোই আমার জন্য তো অয়নের এমন হয়না। যদি হতো তা হলে ইরার সাথে কখনও সম্পর্কে জড়াতো না‌। ভালোবাসা, অয়ন তুমি আর কখনও আমার চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা খুঁজে পাবে না। হ্যাঁ, একটা জিনিস পাবে তা হলো আমার ঘৃণা”। ছবি গুলো বুকে জরিয়ে ধরে অধরা নিজের চোখের জল কে আটকাতে পারছে না। বাচ্চা মেয়ের মতো কাঁদতে লাগলো সে। বুকের ব্যাথা টা চোখের জল হয়ে বাহিরে স্পষ্ট হচ্ছে। একে আসক্ত মানুষ গুলোর সাথে বুঝি এটাই হয়? অধরা নিজের মনে মধ্যে অয়নের জন্য থাকা সমস্ত ভালোবাসা চোখের পানি দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছে। অধরা নিজেকে কোনো মতেই সামলাতে পারছে না‌। অয়নের সত্যিটা বড্ড বেশি যন্ত্রণা দায়ক।

— স্যার আসবো?
রিসোর্টের ভিতর অয়ন আর ইরার রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে সিকিউরিটি গার্ড নম্ন গলায় অনুমতি নিচ্ছে অয়নের থেকে। অয়ন শান্ত গলায় বলল
— হ্যাঁ, আসুন। কিছু বলবেন?
— জ্বি স্যার। আসলে এখানে আপনার রুমের বাহিরে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে ছিলো বেশ কিছুক্ষণ। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হয়তো আপনাদের কথা শুনছিলো। আমি দেখতে এসেছি আপনাদের সব কিছু ঠিক আছে তো? কোনো কিছু চুরি বা অন্য কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
সিকিউরিটি গার্ডের কথায় বেশ অবাক হলো অয়ন। অয়ন ভাবছে তার রুমের বাহিরে একজন মহিলা কেনো দাঁড়িয়ে থাকবে? নিশ্চই কোনো কারন তো আছেই। অয়নের মনের মধ্যে অজানা ভয় চেপে বসলো। অয়ন সিকিউরিটি গার্ড কে উদ্দেশ্য করে বলল

— মেয়েটি কে? এখনো আছে এখানে?
— সরি স্যার। আমরা তাকে তারিয়ে দিয়েছি।
— ওয়াট? তারিয়ে দিয়েছেন মানে কি? আমাকে নক করলে কি হতো?
— আসলে স্যার আপনি বিরক্ত হবেন দেখে আমরা আপনাকে কিছু…….
— যাস্ট শাট আপ। এখান থেকে যান এখন। কোনো কমন সেন্স নেই আপনাদের।
অয়নের ধমক খেয়ে সিকিউরিটি গার্ড চলে যায়। অয়ন নিজের মাথায় হাত রেখে সোফার উপর ধপাস করে বসে পরে। ইরা অয়নের পাশে এসে বসে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এই সামান্য বিষয় নিয়ে এতোটা চিহ্নিত হচ্ছো কেনো?
— ইরা তুমি এটাকে সাধারন মনে করছো? আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে অধরা এসেছে এখানে। হ্যাঁ, অধরাই হবে। তোমার জন্য মনে হচ্ছে আমি আমার সংসারটাকে টিকিয়ে রাখতে পারবো না।

— অয়ন শোনো অধরা আপু কেনো হবে? অন্য কেউতো হতে পারে!
— উহু। অন্য কেউ কখনও আমার সন্দেহ করে এখান উবদি আসবে না। এটা অধরার দ্বারা সম্ভব।
* কথাটা শেষ করতেই অয়ন দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। যদি সত্যি সত্যি অধরা এসে থাকে এখানে। আর ও যদি সবটা শুনে ফেলে থাকে তবে অনেক বড় ঝামেলা সৃষ্টি হবে। যা আমি চাই না।
অয়ন গাড়ি নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায় রিসোর্ট থেকে। মিনিট দশেক গাড়ি ড্রাইভ করে অয়ন বাড়িতে চলে আসে। বাড়িতে এসে অয়ন দ্রুত নিজের রুমের চলে যায়। রুমের আসতেই অয়ন দেখতে পেলো তার মা, বাবা, বোন তার রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। সবাইকে এক সাথে দেখে অয়ন একটু অবাক হয়ে যায়। অয়ন তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৩

— তোমরা এখানে কেনো বাবা? কি হয়েছে?
অয়নের কথা শেষ হতেই অয়নের বাবা মুখটা মলিন করে অয়নকে জানায়
— অধরা নিজের রুমে বন্ধ করে আছে। এতো ডাকাডাকি করছি তবুও দরজা খুলছে না‌‌।
বাবার কথা শুনতেই অয়নের হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। অধরা আবার কিছু! না, না এমনটা হতে পারে না। অয়ন সবাইকে সরিয়ে দিলো দরজা ধাক্কাচ্ছে আর অধরাকে ডাকছে। মিনিট দুয়েক ডাকার পরেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে অধরা………………….

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৫