ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১১

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১১
Raiha Zubair Ripte

সকাল সকাল কলেজ ড্রেস পড়ে বসে আছে সুহাসিনী। এক হাতে বই দেখছে আর অন্য হাতে পরোটা খাচ্ছে। রফিক সাহেব রেডি হয়ে এসে বলে,,
” চলে সুহা যাওয়া যাক!

সুহাসিনী পরোটা টা খেয়ে বইয়ে আরেক বার চোখ বুলিয়ে বাবার সাথে বেরিয়ে আসে। বাড়ির মেন গেটে আসতেই দেখে রুদ্র বাইক নিয়ে আসছে। বাইকটা নিয়ে সুহাসিনী দের সামনে দাঁড় করায় রুদ্র। রফিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে,,
” আঙ্কেল আপনাকে যেতে হবে না আমি নিয়ে যাচ্ছি সুহাসিনী কে।
রফিক সাহেব সায় জানিয়ে চলে আসে। তার অফিসে অনেক কাজের চাপ। রুদ্র যেহেতু আছে তাহলে আর ভয় কিসের। তিনি সোজা অফিসের দিকে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সুহাসিনী ফাইল হাতে নিয়ে রুদ্র কে পর্যবেক্ষণ করছে। লোকটা কে চেনা যাচ্ছে না। বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল সুহাসিনীর। আগের থেকে চোখমুখ শুঁকিয়ে গেছে। দাড়ি গুলো বড় বড় হয়ে গেছে।ংং সুহাসিনী রুদ্রর সোজাসুজি দাঁড়িয়ে বলেখ্ক্খ
লললল

” আপনার এমন অবস্থা কেনো?
রুদ্র সুহাসিনীর কথাকে পাত্তা না দিয়ে বলে,,
” বাইকে উঠো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
অভিমান হয় সুহাসিনীর। বলেছিল কথা বলবে না কিন্তু বলেছে এখন আবার কথার উত্তর ও দিচ্ছে না। কিছুটা অভিমান নিয়েই বলল,,

” আপনার যখন দেরি হচ্ছে তাহলে এসেছেন কেনো? না আসলেই পারতেন বাবা তো নিয়েই যাচ্ছিল।
” দেরি আমার হচ্ছে না সুহা। দেরি তোমার হচ্ছে। এক্সামের আধ ঘন্টা আগে সেন্টারে উপস্থিত থাকতে হবে মাথায় আছে কি সে কথা?
সুহাসিনী হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি দেরি হচ্ছে। সেন্টার টা এখান থেকে কিছুটা দূরে। সুহাসিনী কথা না বাড়িয়ে বাইকে উঠে পড়ে।

ঘন্টা খানেকের মধ্যে সেন্টারের সামনে এসে বাইক দাঁড় করার রুদ্র। সুহাসিনী বাইক থেকে নেমে চলে যেতে নিলে রুদ্র হাত টেনে দাঁড় করায়। সুহাসিনী চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে, কি?
রুদ্র সুহাসিনীর হাত ছেড়ে দু গালে হাত রেখে বলে,,

” ধীরে সুস্থে মাথা ঠান্ডা রেখে এক্সাম দিবা। আর কথায় কথায় এতো অভিমান করো কেনো? আগে তো করতে না।
সুহাসিনী গাল থেকে রুদ্রর হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,,
” দেরি হচ্ছে আমার আসি।

কথাটা বলে সুহাসিনী চলে যায়। রুদ্র তপ্ত শ্বাস ফেলে। সেই ভোরে রওনা হয়েছে না খেয়েই রুদ্র । শুধু সুহা রাণী কে একটু চোখের দেখা দেখবে বলে। সামনে ইলেকশন। ইলেকশনের সব ভার দিয়েছে রুদ্রর চাচা রুদ্রর উপর। প্রিয় চাচা তার উপর চাচার অগাত ভরসা রুদ্রর উপর। চাচার কোনো ছেলে নেই, নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসে রুদ্র কে। এই কয়েক টা দিন সব দিক সামলাতে সামলাতে তার সুহা রাণী কেই সময় দিতে পারছে না।

চাচার শত্রুর অভাব নেই। বিপক্ষের দল উঠে পড়ে লেগেছে চাচা লিটন কে ইলেকশন থেকে সরানোর জন্য।
এর মধ্যে হঠাৎ ফোনের শব্দে ধ্যান ভাঙে রুদ্রর পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে চাচার সহযোগি পাবেল ফোন করেছে। হঠাৎ পাবেলের ফোন দেখে ভ্রুকুটি করে রুদ্র। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে পাবেল বলে উঠে,,

” রুদ্র শামসুল আলমের দলের লোক আমাদের ছেলেদের কয়েকজন কে মে’রে রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে।
সহসা রুদ্রর চোয়াল রাগে শক্ত হয়ে আসে। কাল শামসুলের এক চেলাকে রুদ্র পি’টিয়েছে। এলাকায় এসে ঝামেলা করেছিল বলে আর আজ তাদের লোক কে পি’টিয়েছে! রুদ্র ফোন টা রেখে বাইক নিয়ে চলে যায় চাচার বাড়ি।
প্রায় তিনঘণ্টা এক্সাম শেষে পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে আশেপাশ টায় তাকিয়ে দেখে রুদ্রর কোনো অস্তিত্ব নেই। রাগ হয় সুহাসিনীর বদলোক একা রেখে আবার চলে গেছে। আসার কি দরকার ছিল।

সুহাসিনী খানিক টা এগিয়ে আসতেই দেখে এক ছেলেকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলে টা সুহাসিনীর দিকে এগিয়ে আসে। সুহাসিনী পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে ছেলেটি পথ আটকিয়ে বলে,,
” আপু গাড়িতে গিয়ে উঠুন রুদ্র ভাই আপনাকে বাসার সামনে পৌঁছে দিতে বলেছে।
” উনি নেই?

” না ভাইয়া কাজে আটকে আছে তাই আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছে আপনাকে সহিসালামত বাসায় পৌঁছে দিতে।
ওহ্ বলে সুহাসিনী গাড়িতে উঠে বসে। মাহতাব সুহাসিনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেঁসে নিজেও গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে।

এদিকে পাবেল এসে সুহাসিনী কে খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। রুদ্র পাঠিয়েছিল সুহাসিনী কে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য কিন্তু কোথাও নেই সুহাসিনী। পাবেল রুদ্র কে ফোন দেয়। রুদ্র ফোন রিসিভ করে কানে নিতেই পাবেল বলে,,
” রুদ্র সুহাসিনী তো নেই কোথাও।
সহসা রুদ্রর মন অজানা ভয়ে ধক করে উঠে। অস্থির হয়ে বলে,,

” ভালো করে খুঁজে দেখছিস পাবেল?
” হ্যাঁ কোথাও নেই সুহাসিনী।
রুদ্র ফোন কেটে সুহাসিনীর বাড়ি ফোন দেয়। সুভাষিণী সোফায় বসে আচার খাচ্ছিল। রুদ্রর ফোন পেয়ে আচারের বাটি রেখে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রুদ্র গড়গড়িয়ে বলে,,
” ভাবি সুহাসিনী কি বাসায় এসে পৌঁছিয়েছে?

” হ্যাঁ কেবলই তো আসলো তুমি নাকি কাউকে পাঠিয়েছিলে সে এসে সুহাসিনী কে পৌঁছে দিয়ে গেছে। এই তো আমার সামনে বসে আছে সে।
রুদ্র ওহ্ বলে ফোন কাটতে যেতেই পরক্ষনে মনে পড়ে পাবেল তো সেন্টারের সামনে তাহলে কে সুহাসিনী কে পৌঁছে দিয়ে গেল?

” ভাবি ফোন টা দিন তো তাকে।
সুভাষিণী ফোন টা মাহতাবের কাছে দেয়। মাহতাব ফোন টা নিয়ে সোফা থেকে উঠে সুভাষিণীর থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে ফোন কানে নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,
” আই অ্যা’ম ব্যাক রুদ্র। তোর হবু শশুর বাড়ি এসে জল মিষ্টি খেয়ে গেলাম। যাই বলিস তোর জান পাখি টা কিন্তু হেব্বি। নজর পড়ে গেছে সামলাবি কি করে এতো কিছু?
রুদ্র চিৎকার করে উঠে। বুঝতে বাকি নেই কে এই লোক।

” তোর কলিজা টে’নে বের করতে আমার এক সেকেন্ড ও সময় লাগবে না মাহতাব। ভালোয় ভালোয় বলছি তোর সাথে শত্রুতা বাহিরে সো বাহিরে সেটাকে থাকতে দে।
” কিয়া বাত হে! গলার স্বর শুনেই চিনে ফেললি কে আমি? এনি ওয়ে তুই আমার কিচ্ছু করতে পারবি না।
কথাটা বলেই মাহতাব ফোন টা কেটে দেয়। সুভাষিণীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে হেসে বলে,,

” আজ আসি আপু রুদ্র ভাই যেতে বলেছে।
রুদ্র সামনে থাকা টেবিল টায় সজোরে লাথি মা’রে।
এতো এতো চিন্তার মাঝে আবার নতুন চিন্তার সূচনা। সুহাসিনী অব্দি ও পৌঁছে গেছে?
রুদ্র ফোনটা বের করে আবার পাবেল কে ফোন দেয়।

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১০

” পাবেল চলে আয় সুহাসিনী বাসায় পৌঁছে গেছে। তোর সাথে জরুরি কথা আছে আমার খুব আর্জেন্ট।
পাবেল ফোন রেখে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১২