ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১০

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১০
Raiha Zubair Ripte

ঘুম নেই সুহাসিনীর চোখে। অজানে ভয়ে সিঁটিয়ে আছে তার শান্ত মন। মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটবে সামনে।
বিছানায় বোনের পাশে শুয়ে আছে সুহাসিনী। দৃষ্টি তার বোনের উঁচু পেট টার দিকে। আগের চেয়ে খানিক টা বড় হয়েছে পেট। বাবু ধিরে ধিরে বড় হচ্ছে। আর সময় ঘুনিয়ে আসছে। ছয় মাস হয়ে গেল বাবু পেটে দেখতে দেখতে। বোনের দিকে তাকাতেই দেখে বোন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। প্রায় রাতের অর্ধেক জেগে থাকে ঘুমাতে পারে না। অস্বস্তি হয়। হয় বেলকনিতে বসে থাকে আর তা না হলে রুমের মধ্যে পায়চারি করে।

এই তো সেদিন রাতে পেট ব্যাথা উঠেছিল খানিক ব্লাড ও ভেঙেছিল। সে কি অবস্থা সেই রাত একটা বাজে অভ্র ভাই ডাক্তার নিয়ে চলে এসেছিল। আঙ্কেল আন্টি ও সেই রাতে চলে আসে। অভ্র ভাই বিধ্বস্ত ছিল মনে হচ্ছিল কেঁদে দিবে। রুদ্র ও এসেছিল তবে রাতে না তার পরের দিন সকালে। কোথায় যেনো গিয়েছিল কাজে বলে নি। খবর পেয়েই চলে আসে। ডক্টর ঔষধ দেয় আর বলে সকালে যেনো চেক-আপ করিয়ে নেয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তার পরের দিন সকালে রুদ্র আসলে আপু কে নিয়ে ডক্টরের কাছে যাওয়া হয়। ডক্টর জানায় বাচ্চার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। কথাটা শুনে আপু কেঁদে দিয়েছিল। ডক্টর কিছু মেডিসিন লিখে দেয় আর বলে নিয়ম মত খেতে বিকেল হলে একটু হাঁটা হাঁটি করতে। আর ভারি কাজ না করতে।

সেই থেকে টোটালি কোনো কাজ করা বারন সুভাষিণীর। মাঝখানে ১৫ দিন ও বাড়ি থেকে এসেছে এখন এ বাসাতেই আছে। অভ্র দু একদিন বাদে বাদে আসে। এখন আর লোকের গুঞ্জন পরোয়া করে না। লোকে বললে বলুক।
হঠাৎ মৃদু চিৎকারে সুহাসিনীর ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটে। সুহাসিনী বোনের দিকে ফের তাকিয়ে দেখে পেটে হাত দিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে রাখে। সুহাসিনী তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠে বসে। বোনের হাত ধরে বিচলিত হয়ে বলে,,

” আপু কি হইছে? আবার পেট ব্যাথা করছে নাকি? আম্মু কে ডাকবো?
সুভাষিণী হাতের ইশারায় না করে। সুহাসিনীর হাত টেনে নিজের পেটের উপর নিয়ে বলে,,
” কিছু টের পাচ্ছিস?
সুহাসিনী উৎকন্ঠা নিয়ে বলে,,

” বেবি কিক মা’রছে?
” হুমম।
” ব্যাথা পাচ্ছো?
” খানিক টা বেশি না।
সুহাসিনী হাত পেট থেকে সরিয়ে কান পেতে দেয়।

” এই যে মাম্মাম বা বাবাই যেই থাকো না কেনো? মা কে কষ্ট দিবে না। তোমার মিম্মি কিন্তু তার বোনের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। চুপচাপ শান্ত থাকবে কিন্তু।
সুভাষিণী হেসে উঠে। সুহাসিনীর মাথায় হাত রেখে বলে,,

” পাগ’লি একটা। ঘুমোস নি কেনো এখনো?
” ঘুম ধরছে না আপু। কেনো যেনো অনেক ভয় হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে সামনে ঘোর বিপদ আসবে।
” মনের ভ্রম এটা কিচ্ছু হবে না। ঘুমিয়ে পড় পরশু কিন্তু এইচএসসি এক্সাম।
সুহাসিনী মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে।

সকাল থেকে পুরোদমে পড়া শুরু করেছে নীলা। সামনে নীলয় বসে আছে কমন কমন দেখিয়ে দিচ্ছে যাতে টেনেটুনে পাশ মার্ক টা অন্তত আনতে পারে তার বোন। সারা বছর এদিক সেদিক ঘুরে এখন বই নিয়ে পড়তে বসে হাহুতাশ করছে। আর বলছে,,

” ভাই এতো পড়া আগে কেনো দেখলাম না। তখন তো সিলেবাস দেখে কত ছোট মনে হলো এখন এতো কঠিন কেনো?
নীলয় বোনের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলে,,
” কখনো বই খুলে কি পড়েছিস। একটু সুযোগ পেলেই ঘুরাঘুরি লাফালাফি করিস। এই যে শর্ট সিলেবাস তার উপর আরো শর্ট করে দিলাম এগুলল সব পড়বি।

নীলা মাথা নাড়ায়। নীলয় পকেট থেকে ফোন বের
করে টাইম দেখে। অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
সুহাসিনী ভোর সকালে উঠেছে। হালকা খাবার খেয়ে পুরো বইতে চোখ বুলাচ্ছে। শুধু রিভিশন দিবে। রুদ্র বেশি প্যারা নিতে মানা করেছে। বলে দিয়েছে ধীরে সুস্থে পড়বে। অতিরিক্ত পড়ার দরকার নেই তাহলে ভুলে যাবে।

এই তো লোকটার সাথে সপ্তাহ খানেক আগে দেখা হয়েছিল। আজকাল তাকে পাওয়াই যায় না। কোথায় যে বেপাত্তা হয়ে যায়। জানানোর প্রয়োজন বোধ টুকু করে না। তার খোজ হয় বোনের থেকে আর তা না হয় অভ্রর থেকে নিতে হয়। নিয়ম করে ফোন দিত কিন্তু এখন সেটাতেও গাফিলতি হচ্ছে। এ নিয়ে অনেক অভিমান জমা হয়ে আছে সুহাসিনীর মনে।
লোকটা আসুক কথাই বলবে না। এসব ভাবতেই হঠাৎ ফোনের টুংটাং নোটিফিকেশনের শব্দে ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটে বই সামনে থাকলেও মন পড়ে আছে রুদ্র তে। ফোন টা হাতে তুলে নিয়ে দেখে রুদ্রর মেসেজ। বিষন্নতার মধ্যে ও এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।

” ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবা। টাইম মতো ঘুমাবা আর সময় মতো পড়ে পরীক্ষা দিতে যাবা। আমি পারলে কাল তোমায় এক্সাম সেন্টারে দিয়ে আসবো কিন্তু কথা দিতে পারছি না।
এই ছিল কয়েক গুটি বাক্য। সুহাসিনী তপ্ত শ্বাস ফেলল। বই বন্ধ করে ছাঁদে চলে আসলো। রুদ্র কে তার মেসেজের প্রতিত্তোরে কিছু লিখলো না। জানে মেসেজ টা রুদ্র অব্দি পৌঁছাবে না। ফোন বন্ধ, মেসেজ দেওয়ার পরই লোকটার ফোন বন্ধ হয়ে যায়।

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ৯

খোলা ছাঁদের নিচে দাঁড়িয়ে নিজের জীবনের হিসেব মিলাতে ব্যাস্ত সুহাসিনী। আগে কি ছিল আর এখন কি হয়ে গেছে। আজকাল রুদ্র কে খুব মিস করে। লোকটাকে চোখে দেখে না আজ সাত টা দিন ধরে। আচ্ছা উনি যে এতো বার বলে আমাকে ভালোবাসে এই কি সেই ভালোবাসার নমুনা? তাকে দেখার জন্য যে আমি চাতক পাখির ন্যায় বসে আছি সে কথা কি সে জানে? জানলে হয়তো সব কাজ ছেড়ে ছুটে চলে আসতো। আসতো? তার সুহাসিনীর মনের ব্যাকুলতা কি তার অব্দি পৌঁছাচ্ছে না?

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১১