ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৮

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৮
Raiha Zubair Ripte

দুবাইয়ের একটা হোটেলে উঠেছে রুদ্র আর সুহাসিনী। সুহাসিনী বিছানায় বসে রুদ্রর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,
” কখন দেখাবেন তাকে?
রুদ্র ল্যাকেজ টা থেকে কাপড় বের করতে করতে বলে,,

” আসলামই তো কেবল সুহা রেস্ট নাও খাওয়া দাওয়া করো। একটু সময় লাগবে।
” কয় ঘন্টা?
” কয় ঘন্টা না বলো কতদিন। আর এখন চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে আসো যাও।
সুহাসিনী মাথা নাড়িয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে।
রুদ্র পকেট থেকে ফোন বের করে বেলকনিতে যায়। স্টাডি কে ফোন করে খাবার অর্ডার করে এখানকার এক পরিচিত লোকের কাছে ফোন দেয়। যার সাথে বাংলাদেশে থাকাকালীন যোগাযোগ করে রেখেছিল রুদ্র । তাকে মাহতাবের খোজা দেওয়ার জন্য হায়ার করা হয়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” সামিউল কোনো খোঁজ পেলে?
” হুমম স্যার মাহতাব এখান কার একটা হোটেলে উঠেছে যেটা আপনাদের হোটেলের ঠিক পশ্চিম দিকে।
রুদ্র মাথা উঁচু করে পশ্চিম দিকে তাকিয়ে দেখে পাঁচ তলার একটা হোটেল তাদের হোটেল থেকে কিছুটা দূরে।

” এখন কি করছে মাহতাব?
” কোথায় একটা গিয়েছে গাড়ি নিয়ে।
” ফিরলে জানাবে।
” ঠিক আছে স্যার।
” কে ফিরলে জানাবে?

বেলকনির দিকে আসতে আসতে কথাটা বলে সুহাসিনী। রুদ্র ফোন টা ভেতরে ঢুকিয়ে বলে,,
” এই হোটেলের ম্যানেজারের কথা বলছি। সে আসলে যেনো একটু ইনফর্ম করে। এই রুম টা চেঞ্জ করে পশ্চিমের বড় রুম টায় উঠবো।

” কেনো এই রুম টা তো সুন্দর খোলামেলা।
” ও পাশের রুম গুলো আরো খোলামেলা।
” ওহ্। ক্ষিদে পেয়েছে কিছু আনুন না।
” স্টাফ কে বলে দিয়েছি এসে যাবে। আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি। আমাকে রেখে একা খাবে না।
সুহাসিনী চোখ ছোট ছোট করে মাথা নাড়ায়। রুদ্র স্মিত হেসে ওয়াশরুমে চলে যায়।

” বাবা রুদ্র কে তুমি কোন ডিলের জন্য দুবাই পাঠিয়েছো? আমার জানা মতে তে দুবাইতে আমাদের কোনো ডিলের কথা ছিলো না।
লুৎফর রহমান সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিল ছেলের কথা শুনে খবরের কাগজ টা নিচে নামিয়ে বলে,,
” নতুন এক ডিল হয়েছে যেটা তোমায় জানানো হয় নি। ওটা রুদ্র কে দেওয়া হয়েছে।
” ওহ্। কার সাথে ডিল টা হচ্ছে?
” নতুন ক্লায়েন্ট শেহ জামাল খানের সাথে।

কথাটা বলে লুৎফর রহমান রোমিলা রহমানের কাছে এক কাপ চা চান। রুদ্র যাওয়ার আগে মেসেজে বলে গেছে তার দুবাই যাওয়ার আসল কারন টা যেনো অভ্র বা আর কেউ না জানে।
” বউমা কে নিয়ে আসবে কবে অভ্র?
” এই তো বাবা দু চার দিনের মধ্যে।
” রফিক সাহেব কেউ নিয়ে আসবে। লোকটা একা একা বাসায় কি করবে।
” হ্যাঁ বাবা আমি আজ গিয়ে কথা বলবো বাবার সাথে। আচ্ছা আসি।

কথাটা বলে অভ্র বেরিয়ে যায়। রোমিলা রহমান চা এনে স্বামীর সামনে রাখে। লুৎফর রহমান চা খেয়ে বেরিয়ে যায়।
রোমিলা বেগম একা বাড়িতে কি করবেন? তাই ঘর থেকে পার্স টা নিয়ে রান্না ঘর থেকে টিফিন বাটিতে বারা খাবার গুলো নিয়ে সুহাসিনী দের বাড়ি চলে যায়। মেয়ে টা একা একা না জানি কি করছে।

সুভাষিণী সোফায় বসে আছে। পাশেই নীলীমা বেগম নীলা রান্না ঘরে গিয়ে প্লেট নিয়ে আসে। টি-টেবিলে প্লেট টা রেখে হাতে থাকা প্যাকেট থেকে পেয়াজু আর জিলাপি বের করে দেয়। তৎক্ষনাৎ কলিং বেল বাজতেই কেঁপে উঠে সুভাষিণী।
নীলা গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে রোমিলা রহমান দরজার পাশ থেকে সরে দাঁড়ায় নীলা। রোমিলা রহমান ভেতরে ঢুকে খাবার গুলো টেবিলে রেখে সুভার পাশে বসে।

” শরীর এখন কেমন সুভা?
” আগের থেকে একটু বেটার মা।
” সকালে কিছু খেয়েছো?
সুভা নিশ্চুপ। রোমিলা রহমান বুঝে যায় মেয়ে কিছু খায় নি। নীলা এগিয়ে এসে বলে,,

” আন্টি আপু কে বলেছিলাম খেতে কিন্তু আপু বললো তার পেয়াজু আর জিলাপি খেতে ইচ্ছে করছে তাই নিয়ে এসেছি।
” ওহ্ তাহলে সুভা খেয়ে নাও পরে না হয় আমার আনা খাবার খাবে।
” মা সুহা রুদ্র কি ফোন করেছিল?
” না এখনো করে নি।

” আপনার ফ্রেশ হতে এতোক্ষণ লাগে? কখন থেকে খাবার সামনে নিয়ে বসে আছি।
রুদ্র ভেজা চুল মুছতে মুছতে সুহাসিনীর দিকে এগিয়ে এসে বলে,,
” এতো ক্ষিদে পেয়েছে তাহলে খাওনি কেনো?
” আপনিই তো বারন করলেন। তাই তো ওয়েট করছি।
” আচ্ছা খাবার মাখো তুমি নিজেও খাও আর আমায় ও খাইয়ে দাও। আমি ল্যাপটপে একটু কাজ করবো। পারবে?
” হুমম পারবো।

সুহাসিনী ভাত মাখিয়ে নিজে খাচ্ছে আর রুদ্র কে খাইয়ে দিচ্ছে। রুদ্র ল্যাপটপে কাজ করছে। হঠাৎ ফোনে মেসেজের শব্দে ফোন হাতে নিয়ে দেখে সামিউলের মেসেজ। মাহতাব হোটেলে ফিরেছে সাথে এক রমণী কে নিয়ে।
রুদ্র খাওয়া পাশ থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে পানি খেয়ে উঠতেই সুহাসিনী হাত ধরে বলে,,

” উঠলেন কেনো?
” আমার কাজ আছে তুমি বাকি খাবার টুকু খেয়ে শুয়ে রেস্ট নাও আমি আসছি।
” আমি ও যাবো।
” উহু তুমি আমার সাথে গিয়ে কি করবে? তার চেয়ে রেস্ট নাও।
” না আমি ও যাবো। আপনি আমায় কি বলে নিয়ে এসেছেন ভুলে গেছেন?
” না ভুলি নি সুহা।
” তাহলে নিচ্ছেন না কেনো সাথে?

” আমি তো নিচে যাচ্ছি ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে তুমি গিয়ে কি করবা। আচ্ছা চলো।
” শিওর আপনি ম্যানেজারের কাছেই যাচ্ছেন?
” হুমম বিশ্বাস না হলে চলো।
” একটু ওয়েট করেন খাবার টা শেষ করে নেই।
রুদ্র দাঁড়িয়ে সুহার জন্য অপেক্ষা করে। সুহা খাবার টা শেষ করে বলে,, চলুন।

রুদ্র সুহার হাত ধরে বেরিয়ে যায়। ম্যানেজারের কাছে গিয়ে রুম চেঞ্জ করার বিষয় টা জানিয়ে তারা অন্য রুমে সিফট হয়।
সন্ধ্যার দিকে সুহা একটু ঘুমালে সেই সুযোগে রুদ্র মুখে মাক্স পড়ে রুম থেকে বেরিয়ে মাহতাব দের হোটেলের সামনে যায়। সামিউল কে ফোন করে মাহতাবের রুম নম্বর জেনে হোটেলে ঢুকে। এবং রিসিপশন থেকে মাহতাবের রুমের পাশে একটা রুম বুক করে।

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৭

রুমের চাবি টা নিয়ে রুদ্র ১০২ নম্বর রুমের দিকে যায়। ১০০ নম্বর রুম মাহতাবের। মাহতাবের রুমের দিকে আসতেই ভেতর থেকে মাহতাব আর একটা মেয়ের হাসির শব্দ আসে। রুদ্র হাসির শব্দ শুনে বলে,,
” শেষ হাসি হেসে নে মাহতাব মৃ’ত্যু যে খুব নিকটে তোর। এমন ভাবে ম’রণ দিবো তোকে যা কল্পনাতেও ভাবতে পারবি না।

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৯