ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৯

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৯
Raiha Zubair Ripte

” কি ব্যাপার কোথায় গিয়েছিলেন? আপনাকে খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না।
রুদ্র রুমে ঢুকতেই সুহাসিনী প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় রুদ্রর দিকে। রুদ্র শরীরে থাকা শার্টের বোতাম একটা খুলতে খুলতে বলে,,
” বাহিরে গিয়েছিলাম একটু কাজ ছিলো। উঠেছো কখন তুমি আর ফোন দাও নি কেনো আমায়?
সুহাসিনী বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,

” ফোন কোথায় আপনার? ফোন চেক করেছেন দেখেছেন কত গুলো ফোন দিয়েছি আমি?
রুদ্র পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে সুহাসিনীর ২১ টা মিস কল। ফোন সাইলেন্ট থাকায় বুঝতে পারে নি।
” সরি আসলে,,,
” হয়েছে থামুন আসলে নকলে বলতে হবে না। আপনি আমায় দেখাচ্ছেন না কে নো ঐ খু’নি কে।
” কাল দেখাবো এখন একটা ঘুম প্রয়োজন।
” খাবেন না?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” উহু খাবার আসলে তুমি খেয়ে নিয়ো। খেয়ে নিয়ে চুপচাপ আমার পাশে এসে ঘুমাবা। আর বাসায় কথা বলছো?
” হুমম আপু বাবা সবার সাথে কথা হয়েছে। আপনার কথা জিজ্ঞেস করেছিল।
” কি বললে?
” বলেছি উনি আমায় রেখে বাহিরে ঘুরতে গেছে।
” ওহ্।

কথাটা বলে রুদ্র খাটে গিয়ে শুয়ে পড়ে। স্টাফ এসে খাবার দিয়ে গেলে সুহাসিনী খেয়ে রুদ্রর পাশে শুতেই রুদ্র এক হাত দিয়ে সুহাসিনী কে জড়িয়ে ধরে। সুহাসিনীর দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। বারবার মোচড়ামুচড়ি করে রুদ্র বালিশ থেকে মাথা উঁচু করে বলে,,

” উফ এতো মোচড়ামুচড়ি করছো কেনো? চুপচাপ ঘুমাও সকালে অনেক কাজ আছে।
” আপনি এভাবে ধরে রাখলে ঘুমাবো কিভাবে? দম আটকে আসতেছে।
” আচ্ছা যাও হালকা করে ধরলাম। এবার আশা করি সমস্যা হবে না। আস্তে আস্তে অভ্যাস করতে হবে তো নাকি। বউ কে জড়িয়ে ধরে না ঘুমালে ঘুম আসে নাকি বিবাহিত পুরুষদের।
কথাটা বলে রুদ্র সুহাসিনীর গলায় মুখ গুঁজে দিলো। সুহাসিনী মাথা সরিয়ে নেয়। রুদ্র বিরক্তি নিয়ে বলে,,

” এখন আবার মাথা সরালে কেনো?
” আমার অস্বস্তি হচ্ছে আপনার গরম নিঃশ্বাসে।
” এসব ই যদি সহ্য করতে না পারো তাহলে আর।
” তাহলে আর কি?
” কিছুনা ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও।

এর মধ্যে রুদ্রর ফোনের মেসেজ টোন বেজে ওঠে। রুদ্র ফোন হাতড়ে নিয়ে দেখে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে মেসেজ এসেছে সামিউলের। সুইমিংপুলের পাশে শুয়ে আছে মাহতাব আর পাশেই এক অর্ধনগ্ন হয়ে থাকা মেয়ে। সুহাসিনী মাথা উঁচু করে তাকাতেই রুদ্র ফোন বন্ধ করে দেয়। সাথে সাথে আবার মেসেজ টোন বেজে উঠে। রুদ্র ফোন টা সাইলেন্ট করে সুহা কে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ঘুমায়।

সুহাসিনী আর কথা বাড়ালো না। লোকটার মুখ খুব চেনা চেনা লাগলো সুহার কাছে। রুদ্রর ঘুমানো পর্যন্ত জেগে চুপচাপ শুয়ে রইলো সুহা। সুহাসিনীর ও যে অনেক কাজ বাকি। রুদ্রর ঘুমানো টা এখন ভীষণ জরুরি। রুদ্র না ঘুমালে তার কাজ হবে কি করে?

রাত বাজে পনে একটা। রুদ্র গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সুহাসিনী পাশ থেকে আলগোছে উঠে রুদ্রর ফোন নেয়। হোয়াটসঅ্যাপে থাকা পিক গুলো দেখে নেয়। লোকটার ফেস ভালো মতো দেখতেই মনে পড়ে যায়। লোকটা তো রুদ্রর লোক। সেদিন সেন্টার থেকে বাসায় পৌঁছে দিলো। তার উপরে যেতেই একটা মেসেজ। ” স্যার মাহতাব এখান কার এক বিজনেস ম্যান শাহরিয়া মোবারকের মেয়ে কে বিয়ে করেছে। পরিবারের কাউকে জানায় নি। মোটামুটি ভালোই পাওয়ার আছে এই এলাকায় শাহরিয়া মোবারকের। তাকে মা’রা কষ্ট হয়ে যাবে।

হঠাৎ মা’রার শব্দ টা দেখতেই সুহার মনে সন্দেহরা আরো জেঁকে বসলো। এই কি তাহলে সেই খু’নি? যে আমার মা কে মে’রেছে। রুদ্র তাহলে আমায় কিছু বললো না কেনো? এ তো রুদ্রর ই লোক। তাহলে কি রুদ্ররই আমার মা কে মা’রিয়েছে? সুহাসিনী চুপিচুপি ফোন টা নিয়ে বেলকনিতে চলে আসে। ফোনের টাইপিঙে গিয়ে মেসেজ পাঠায়,,

” কাল আমার সাথে দেখা করবে আমার হোটেলের পেছনের দিকটায় ঠিক বিকাল তিন টায়।
মেসজ টা সেন্ট করে মেসেজ ডিলেট করে মোবাইল নাম্বার টা নিজের ফোনে আর মাহতাবের পিক গুলো নিজের ফোনে সেভ করে। চুপিচুপি বালিশের তলে ফোনটা রেখে রুদ্রর পাশে শুয়ে পড়ে।
রুদ্র সুহাকে টেনে নিয়ে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়। সুহা ভরকে যায়। আলগোছে কিছুটা দূরে সরে এসে ঘুমায়।

সকাল থেকে রুদ্রর সাথে কোনো কথা বলছে না সুহাসিনী। রুদ্র কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধু হ্যাঁ না করে জানাচ্ছে। হঠাৎ সুহার এমন পরিবর্তন রুদ্রর খটকা লাগে। রাতেও তো ঠিক ছিল তাহলে কি হলো। রুদ্র সুহার হাত টেনে সামনে দাঁড় করিয়ে বলে,,

” কি হয়েছে সুহা হঠাৎ এমন বিহেভিয়ার করছো কেনো?
সুহাসিনী অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,,
” কেমন বিহেভিয়ার করছি আমি?
” এই যে ইগনোর করছো। কথা বলছো না।
” আপনি হয়তো ভুলে গেছেন আমি বরাবরই কম কথা বলি।
” আচ্ছা যাই হোক আমি আসি।

সুহাসিনী হা হু কিছুই বললো না। রুদ্র সুহাসিনীর দিকে তাকিয়ে চলে যায়।
সুহাসিনী নিজের ফোন টা বের করে পিক গুলো দেখতে থাকে বেলকনিতে গিয়ে। হঠাৎ পিক গুলো খেয়াল করতে করতে সুইমিংপুলের সাইডে হোটেলের নাম দেখে কিছু বলতে একটা মনে আসায় বেলকনি দিয়ে মাথা উঁচু করে সামনে তাকাতেই দেখে সেম নামের হোটেল।

আবার ফোনের দিকে তাকায় শিওর হওয়ার জন্য। তারমানে মাহতাব ঐ হোটেলে থাকে। সুহাসিনী রুমে এসে একটা জিন্স প্যান্ট আর টপ্স পড়ে ওড়না দিয়ে ফেস এক সাইড ঢেকে বড় সানগ্লাস টা চোখে নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যায়।
মাহতাবের হোটেলের সামনে আসে। হোটেলের ভেতরে ঢুকতেই হঠাৎ এক মেয়ের সাথে ধাক্কা খায় সুহাসিনী। সুহাসিনী পড়ে যেতে নিলে মেয়েটি ধরে ফেলে সুহাসিনীর হাত। সুহাসিনী হাত ধরা ব্যাক্তিটার মুখের দিকে তাকাতেই মেঘ না চাইতে যেনো বৃষ্টির আবির্ভাব।

” সরি আসলে আমি খেয়াল করি নি।
সুহাসিনী মেয়েটির থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,,
” ইট’স ওকে।ভুল আমার ও ছিলো। আসলে আমি এই শহরে নতুন তো তাই কিছু চিনতে পারছি না।
” তোমার সাথে কেউ নেই?
” না।
” তাহলে এখানে কি নতুন তুমি?

” হ্যাঁ আসলে জবের জন্য এসেছি দুবাই। থাকি বাংলাদেশে খুব অভাবের সংসার আমাদের। বাবার বয়স হয়েছে কাজ কর্ম খুব একটা করতে পারে না। সেজন্য এই প্রবাসে এসেছি। কিন্তু কোনো জব পাচ্ছি না।
কথাটা বলে কান্নার অভিনয় করে সুহা। মাহতাবের স্ত্রী শান্তা সুহার হাত ধরে বলে,,
” চিন্তা করো না কিছু একটা হয়ে যাবে। কোথাও যদি কাজ না পাও তাহলে আমার বাবার অফিসে কোনো একটা কাজ ম্যানেজ করে দিবো। থাকো কোথায় এখন?

” এই তো পাশের হোটেল টায় উঠেছি কয়েকদিন হলো। আপনি কি এই হোটেলে থাকেন?
” হ্যাঁ আমি আর আমার হাজবেন্ড এই হোটেলের ১০০ নম্বর রুমে থাকি।
” ওহ্ ১০০ নম্বর রুমে। আফা আমারে একটা কাজ দিন না। খুব দরকার কাজের।
” আচ্ছা এই নাও আমার কার্ড রাতে ফোন দিয়ো। আমি জানাবো নি।
সুহাসিনী মাথা নাড়িয়ে কার্ড টা নেয়। এরমধ্যে মাহতাব এসে হাজির হয় তাদের সামনে।

” কি হয়েছে বেবি এখানে দাঁড়িয়ে যে?
” আসলে জান এই মেয়েটা নতুন এসেছে শহরে কাজ খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। তাই আমার কার্ড টা দিয়েছি ড্যাডের সাথে কথা বলে যদি কোনো কাজ দিতে পারি।
” জানা নেই শুনা নেই যাকো তাকে নিজের কার্ড দিয়ে দাও কেনো? এই মেয়ে তোমার বাসা কই?
” আজ্ঞে আগে বাংলাদেশে থাকতাম এখন এখানে থাকি, কাজ করার জন্য এসেছি দুবাই।
” তোমায় দেখে তো মনে হয় না তুমি অভাবে।

” বাহির টা দেখে কি আর সব বোঝা যায় বলেন? যদি বাহির টা দেখেই সব বোঝা যেতো তাহলে কি আর মানুষ এতে বড় বড় অপরাধ করে নিশ্চিন্তে ঘুরতে পারতো শহরের বুকে। মুখ দেখেই তো ধরে ফেলতো প্রমাণ খুজতো না অপরাধের।
মাহতাব ভরকে যায়।

” এই তুমি কি বোঝাতে চাইছো?
” কিছু না আসলে আমি সত্যি অভাবে পড়ে দুবাই এসেছি দয়া করে একটা কাজ দিন আমারে।
” আচ্ছা যাও যাও কার্ড তো পেয়েছো যোগাযোগ করে নিয়ো।

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ১৮

কথাটা বলে মাহতাব শান্তাকে নিয়ে চলে যায়। সুহাসিনী তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ থেকে ওড়না টা সরিয়ে বলে,,
” পিপীলিকা পাখা গজায় ম’রিবার জন্য। তোর ও ম’রণ পাখা গজিয়েছে মাহতাব।

ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব ২০