ভালোবাসি বলে দাও পর্ব ২৪

ভালোবাসি বলে দাও পর্ব ২৪
Suraiya Aayat

বাইরে বেশ গতি নিয়ে ঝড়ো হাওয়া বইছে। আকাশ জুড়ে মেঘ ছেয়েছে ভীষনরকম। সকাল সাতটা বাজতে না বাজতেই মনে হলো যেন সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আমি মনমরা হয়ে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে রইলাম, ব্যালকনি তে গেলে যদি হাওয়াই উড়ে যায় সেই ভয় দেখিয়ে উনি আমাকে দমিয়ে রেখেছেন। আমাকে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উনি শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললেন,
‘হ্যাঁ ওখান থেকেই দেখো, এর বাইরে যেন না যাওয়া হয়। মনে থাকবে? ‘
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে তাকাতেই উনি আর কিছু বললেন না।
ফুপির কাল রাত থেকে জ্বর। ফুপা সারারাত জেগে ছিলেন, আমরাও অর্ধেক রাত অবধি ফুপির ঘরেই ছিলাম। উনি বললেন,

‘ সকলের নাস্তা অর্ডার দিয়েছো? ‘
আমি জানালা দিতে দিতে বললাম,
‘ হ্যাঁ অর্ডার করেছি। আমি তো বানাতে পারি না, কিন্তু বাড়ির বউ হিসাবে আমার এটা পারা উচিত ছিল। ‘
উনি ধমক দিলেন।
‘ কফি বানাতে পারো এটাই এনাফ। আর কিছু লাগবে না। আমি আম্মুকে বলে বাসায় বুয়া রাখার ব্যাবস্থা করছি। ‘
আমি ওনার কাছে এসে বসতেই উনি প্রশ্ন করলেন,
‘জানালা দিলে কেন? ‘
‘না দিলে আমার জানালার বাইরে হাত বাড়াতে মন চাইছিলো। ‘
‘আমি বাইরে গেলেই তো ভিজবে। ‘
আমি মাথা নাড়িয়ে না জানালাম। উনি হাসলেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘আচ্ছা দুপুরের খাবারটাও কি অর্ডার দিবো? কারন আমার মতো সানাও কিছু বানাতে পারে না। ‘
‘নাহ তার দরকার নেই, আমি আসার পথে খাবার নিয়ে আসবো। তুমি আর সানা আম্মুর সাথে সাথে থাকো। ‘
কথাটা বলে উনি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। উনি উঠে দাঁড়াতেই আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘আমি আপনাকে গেট অবধি এগিয়ে দিয়ে আসি? ‘
‘নাহ তুমি ভিজে যাবে দরকার নেই। আমি একাই চলে যাবো। ‘
‘কিন্তু বাসায় তো একটাই ছাতা, আমার ছাতা। ‘
‘কেন বাকি ছাতা? ‘
আমি বেশ গুছিয়ে বললাম,

‘বাকি ছাতা বাসায় নাই, আর অতো কথা নাই, আমি আমার ছাতা করে আপনাকে দিয়ে আসবো গেট অবধি। ফাইনাল। ‘
কথাটা বলে ওনার আগে আমি রুম থেকে বার হয়ে আসলাম। উনি বেরিয়ে আসতেই আমি ওনার দিক তাকিয়ে হাসলাম, উনি ওনার চাহনিতে বোঝালেন যে
আমি ভিজে আমার খবর আছে।
আমি ওনার চাহনি উপেক্ষা করে বেরিয়ে এলাম। বাসায় গেটের সামনে এসে উনি বললেন,
‘ ছাতাটা আমার কাছে দাও, তুমি বাসায় যাও নাহলে আমি হসপিটাল তো দূর থাক, এটুকু যেতে যেতেই ভিজে যাবো। ‘
‘নাহ আপনি ভিজবেন না। কথাটা বলে ওনার পাশে গিয়ে ছাতাটা ধরলাম।
‘ছাতার নীচে আসুন। ‘

আমি ছাতা ধরলাম তা ওনার কান অবধি গিয়ে ঠেকলো যার অর্থ উনি কোন রকম ভাবেই এতো নীচে এই ছাতা তে আটবেন না। আমি মুখ কাচুমাচু করে ছাতা ওনার হাতে ধরিয়ে বললাম,
‘আপনি একা যান আমি যাবো না। লম্বা ব্যাটার সাথে এই জন্য বিয়ে করতে নেই। ‘
কথাটা বলে আমি মুখ গোমরা করে বাসায় ঢুকে গেলাম, আমার উদ্দেশ্যে ছিল একটু হলেও ভেজা কিন্তু তা হলো না, আমার এমন কাজে উনি খুশি হয়েছেন কারন আমার আর ভেজা হয়নি।

ফুপি আর আম্মু দুজন পাশাপাশি বসে গল্প করছে। দুজন একসাথে আজ অনেকদিন পর, ফুপির জ্বর যেন উড়ে গেছে কোথায়। উনি খাবারগুলো এনেছেন আর তা নিজেই একে একে প্লেটে ঢালছেন আমাকে কিছু করতেই দিচ্ছেন না। আমি বিধায় ওনার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি খুব মনোযোগ দিয়ে যেন এক দেখাতেই সব শিখে যাবো। উনি মাঝে মাঝেই আমার দিকে তাকাচ্ছেন। নিস্তব্ধতা কাটিয়ে আমি মিনমিন করে বললাম,
‘ আম্মু বললো কালকে নাকি মামা আসছিলেন বাসায়, মামা ক্ষমা চেয়েছে এমন ভুলের জন্য। ‘
উনি মামার কথা শুনতেই রেগে গেলেন, হয়তো নানাভাইয়ের বাসার কারোর কথা শুনতে উনি নারাজ। উনি কপোট রাগ দেখিয়ে বললেন,

‘এখন কি তাহলে বাচ্চা নিতে বলেছে? ‘
আমি ওনার এমন কথা শুনে নিজেও লজ্জা পেয়ে গেলাম। ওনাকে পিঞ্চ করে বললাম,
‘মামা কি তা বলসে একবার ও? ‘
উনি কিছুখন থেমে গেলেন আর কিছু বললেন না। খাবার গুলো একে একে টেবিলে রাখতে লাগলে আমিও হাতে হাতে সেগুলো বয়ে নিয়ে গেলাম। খাবার রাখার একটা পর্যায়ে উনি বললেন,
‘ এক সপ্তাহ পর তোমার মেডিকেল এর এক্সাম সেটা নিয়ে ভাবো। ‘

আমি সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়াতেই কারোর গলার আওয়াজ শুনে সামনে তাকাতেই দেখলাম ফারিন আপুর মা। ওনাকে দেখে আমি আরিশ ভাইয়ার পাশে গিয়ে ওনার হাতটা ধরে দাঁড়ালাম। আসল কথা হলো ওনাকে দেখলে আমার মাঝে ভয় এবং বিরক্তি দুই ই কাজ করে কারন উনি অযাচিত ভাবে অনেক কটু কথা বলেন যার কোন সত্যতা নেই, নিজের মেয়ের ভালো ছাড়া উনি আর কারোর ভালো হয়তো সহ্য করতে পারেন না সম্ভবত।
উনি আমাকে আর ওনাকে একসাথে দেখে বললেন,

‘ ভুল করলে আরিশ। আমার মেয়ে আর এই মেয়ে। আমার মেয়ে তার থেকে ঢের ভালো। হীরে হারিয়ে কয়লা ধরেছো। যাই হোক আমার মেয়ে ফারিন আর তোমাদের ধার ধারে না। আমি তার বিয়ে ঠিক করেছি। ছেলে অস্ট্রেলিয়া থাকে, বিয়ের পর ফারিন শিফট করছে অস্ট্রেলিয়া। আর এই মেয়ে মেডিকেল তো দূরে তাক, ভার্সিটিতেও চান্স পাবে না, তার শুধু পাকনামি আর পাকা পাকা কথা। ‘
ওনার এমন কথা শুনে আমি শিউরে উঠলাম, না জানি আরিশ ভাইয়া এই মুহূর্তে কি ভাবছেন। আমি তার মুখের দিকে তাকানোর সাহস পেলাম না। আমি আরিশ ভাইয়ার হাতটা ছেড়ে দিলাম। আরিশ ভাইয়া কিছু বলছেন না, কেবল গম্ভীর হয়ে মুখ একে রয়েছেন আর উনি সুযোগ পেয়ে যা নয় তাই বলছেন। আমি পাশ থেকে চলে যেতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে আটকে ওনাকে বললেন,

‘আমার হীরা লাগতো না, আমার কয়লা ই ঠিক আছে আন্টি। আর তাছাড়া আমি নিজেই তো কয়লা। কয়লা আর হিরে কখনো মিল যায় বলুন তো? আপনার মেয়ের সাথে আমাকে মানা তো না। আপনার মেয়ে এবার সঠিক জায়গায় যাচ্ছে। সমস্যা নাই, আমার বউ মেডিকেল এ চান্স না পেলে সংসার করবে কিন্তু আপনার মতো ফ্রির কুটকাচালি তো করবে না এটুকু সিওরিটি দিতে পারি।

ভালোবাসি বলে দাও পর্ব ২৩

কথাটা শোনামাত্রই উনি আর ঘর অবধি ও এগোলেন না, টেবিলের ওপর বিয়ের কার্ড রেখে নির্বাক্যে চলে গেলেন। আমার এবার হাসি পাচ্ছে ভীষনরকম কিন্তু হাসবো না। আরিশ ভাইয়া ওনাকে যা শুনিয়েছেন তার পর উনি আর এ বাসায় আসার সাহস দেখাবেন না। নেহাত ফুপির দূর সম্পর্কের বোন না হলে হয়তো আরিশ ভাইয়া ওনার নামে মান হানির মামলা করতেন। আমি আরিশ ভাইয়ার দিক তাকাতেই দেখলাম উনি দরজার দিকে ওনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছেন। ওনারও বোধহয় আমার মতো তাকে সহ্য হয় না।

ভালোবাসি বলে দাও শেষ পর্ব