ভালোবাসি বলে দাও শেষ পর্ব 

ভালোবাসি বলে দাও শেষ পর্ব 
Suraiya Aayat

‘ কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? কি লাগবে বলো। ‘
ওনার দিকে ঠোঁট উল্টে চেয়ে বসে আছি আমি। তা দেখে উনি পুনরায় প্রশ্ন করলেন,
‘কি হয়েছে বলো? ‘
আমি ওনার কথা শুনে দ্রুত ওনার দিকে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে বললাম,

‘আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন কেন? ‘
উনি খানিকটা বাকা চোখে তাকিয়ে বললেন,
‘বিয়ে করেছি কেন মানে! এটা আবার কেমন প্রশ্ন? ‘
আমি নাছোড়বান্দার মতো ওনার শার্টটা টেনে প্রশ্ন করলাম,
‘নাহ আপনি বলেন আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন কেন? ‘
‘কি মুশকিল। কেন বিয়ে করেছি! বিয়ে মানুষ কেন করে?’
‘মানুষ যখন কোন মানুষকে ভালোবাসে তখন সে চাই যে সেই মানুষটা তার সাথে সারাজীবনের জন্য থাক আর সেই জন্য তাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য তাকে বিয়ে করে। ‘
আমার উত্তর শুনে উনি বললেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘তাহলে যাদের এরেঞ্জ ম্যারেজ হয় তারা কি জন্য বিয়ে করে? তারা তো আগে থেকে একে অপরকে চিনতো না। তাহলে তারা কেন বিয়ে করে আরুপাখি? ‘
ওনার এহেন প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। বিধায় বলে উঠলাম,
‘আমি অতো শত কিছু জানি না, আমি শুধু জানতে চাই আপনি আমাকে কেন বিয়ে করেছেন। ‘
উনি আমতা আমতা করে বললেন,
‘করেছি। করেছি ইচ্ছা হয়েছে। ‘
ওনার প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে মোটেও পছন্দ হলো না, আমি ওনার কলার ধরে খানিকটা ঝাঁকিয়ে বললাম
‘এই আপনি কি তাহলে আমাকে ভালোবাসেন না? হুদায় বিয়ে করেছেন? ‘
উনি কপাল চাপড়ালেন।

‘ এই মেয়ে তোমার মাথায় এসব প্রশ্ন কে ঢুকিয়েছে শুনি? ‘
উনি উত্তর দিতে নারাজ। আমি ওনার থেকে দূরে সরে এলাম আর গায়ে চাদর টেনে ঘুমানোর ভান করে বললাম,
‘গুড নাইট। আপনাকে কিছু বলতে হয় না। ‘
উনি আমার কথায় কোন তৎপরতা দেখালেন না। উনি বই পড়ছেন মনোযোগ দিয়ে। আমি মাঝে মাঝে ওনার পতিক্রিয়া দেখার জন্য ওনার দিকে তাকাচ্ছি, যা বুঝছি যে উনি খুব মনোযোগ দিয়েই বইটা পড়ছেন। আমার বিরক্তির সীমানা ক্রমশ ছাড়াতে লাগলো, উনি কি আমার ধৈর্য দেখার জন্য এমনটা করছেন? কিন্তু উনি খুব ভালো করেই জানেন যে আমি কতোটা অধৈর্য প্রকৃতির মেয়ে, তারপরও এমনটা করার কোন কারন দেখলাম না আমি। আমি ওনার দিকে বিরক্তিতে তাকালাম না আর, এবার ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে কারন উনি পড়তে বসলে এই জগত সংসার ভুলে যান। আমি ঘুমানোর চেষ্টা করলেই ভীষন একটা শব্দ সহকারে বই বন্ধ করার শব্দ পেতেই আমি আরও সতর্ক হয়ে গেলাম। ওনার বিপরীত দিকে মুখ করে ঘুমিয়ে আছি তাই আমার মুখভঙ্গি দেখার উপায় ওনার নেই। উনি আমার কাছে খানিকটা সরে এসে বললেন,

‘তোমার মাথায় এসব প্রশ্ন কে ঢুকিয়েছে আরু পাখি জানা যাবে? ‘
আমি জবাব দিলাম না। তাতে উনি আমাকে বেশ জোরপূর্বক ভাবেই ওনার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
‘কে বলেছে বলো! ‘
আমি চোখ খুললাম না, এখনো ঘুমানোর ভান করে রইলাম। উনি আঙুল দিয়ে আমার চোখের পাতাটা নড়াচড়া করতে নিলেই ওনার হাতে বেশ জোরেই একটা ঝাড়ি দিয়ে বললাম,
‘সমস্যা কি? ঘুমাতে পারেন না। নিজে তো ঘুমাচ্ছেন না আর আমাকেও ঘুমাতে দিচ্ছেন না। চুপচাপ ঘুমান নাহলে আমি উঠে ফুপির রুমে চলে যাবো। ‘
উনি আমার কথার তোয়াক্কা করলেন বলে মনে হলো না আমার। উনি এবার চোখ ছেড়ে মাথার সামনের ছোট ছোট চুলগুলো নিয়ে খেলতে খেলতে বললেন,

‘কে বলেছে এসব কথা বলো।’
‘কেও বলে নি। ‘
‘বেশ তাহলে আমিও বলবোনা আমি তোমাকে কেন বিয়ে করেছি। ‘
আমার রাগ বেড়ে গেল। ওনাকে হাত দিয়ে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করতে লাগলাম তাতে সফল হলাম না। উনি আমার হাত ধরে ওনার কাছে টেনে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘যে বলেছে ঠিকই বলেছে। ‘
আমি ওনার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম।
‘এই টুকু একটা কথা বলার জন্য এতো কথা পেঁচানো লাগতো? ‘
উনি হাসলেন।
‘তুমি এইটুকু একটা প্রশ্ন করলেও এত্তো বড়ো উত্তরের একটা প্রশ্ন করেছো। তাহলে তোমাকে বলতে তো সময় লাগবে তাইনা? ‘

আমি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম, এখন উনি কি বলেন তা শোনার অপেক্ষায়।
‘ একটা মানুষ যখন একটা মানুষকে ভালোবাসে তখন তাকেই তার নিজের করে পেতে চাই, তাকে সারাজীবনের জন্য তার মায়াবতী করে রাখতে চাই কারন সে জানে যে কোনভাবেই সে যদি তার মায়াবতীকে হারিয়ে ফেলে তাহলে তাকে ফিরে পাওয়ার পথটা খুবই কষ্টসাধ্য হবে তার জন্য। আর একটা মানুষ এতো সহজে তার প্রিয় মানুষকে হারাতে দিতে চাই না তাই যদি অবস্থা ভীষনরকম বেগতিক দেখে তখন তারা মানুষটাকে আপন করে নেওয়ার জন্য দ্বিতীয়বার ভাবে না। এভাবেই বিয়ের মাধ্যমে সব ভালোবাসা গুলো পূর্নতা পায়। অনেকের ভালোবাসা পূর্নতা পায় না হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও। সেগুলো তাদের ব্যার্থতা নয় কারন উপর ওয়ালা হয়তো তারজন্য অন্য কাওকে দুনিয়ার পাঠিয়েছেন। বুঝলে? ‘।
ওনার এমন কথা শুনে আমি নির্বাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওনার বলা প্রত্যেকটা কথা ভীষনরকম ভাবে সত্য, তা উপেক্ষা করার জায়গা নেই, আমি ওনার বুক এর মাঝে গুটিশুটি মেরে এঁটে রইলাম। বেশ কিছুখন চুপ থেকে বললাম,

‘তাহলে ভালবাসি বলে দাও! ‘
উনি না বোঝার ভান করে বললেন,
‘উমমম, কিছু বললে। ‘
‘ভালোবাসি বলে দাও। আপনিও নিশ্চয়ই আমায় ভালোবাসেন তাই আমাকে বিয়ে করেছেন তাহলে আপনিও বলে দিন যে ভালোবাসেন।’
আরিশ ভাইয়া এবার আমার উপর ঝুকে গেলেন আর আমার কপালে ভালোবাসার পরশ একে বললেন,
‘প্রায়োজন নেই সবসময় যে ভালোবাসার প্রকাশ করলেই তা ভালোবাসা। গোপনে ভালোবাসা হলো ভয়ংকর যে ভালোবাসা তুমি কেবল অনুভব করতে পারবে, বুঝতে পারবে যে মানুষটা কতো ভালোবাসে তোমাকে। সেদিন বুঝবে যে তুমি কতোটা সৌভাগ্যবতী। ভাগ্যবতী তো তারাই হয় যাদেরকে ভালোবাসার জন্য একটা মানুষ থাকে। ‘
আমি ওনার কথা শুনে হাসলাম। অনেক সাহস সঞ্চয় করে ওনার গালে ভালোবাসার পরশ একে বললাম,

‘তাহলে আপনিও ভীষন লাকি একজন মানুষ। ‘
উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন,
‘কেন আমি আবার লাকি হলাম কি করে। ‘
আমি ধমকের সুরে বললাম,
‘কেন বোঝেন না? কারন আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি তাই। ‘
উনি হাসলেন আর আমাকে বুকে জড়িয়ে বললেন,
‘ ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি! ‘
আমি মুচকি হাসলাম আর ওনার দিকে অপলক ভাবে চেয়ে রইলাম। ওনার বলা কথাটা সত্য। এই পৃথিবীতে যার একটি করে ভালোবাসার মানুষ থাকে, সে ভীষন সৌভাগ্যবতী। ভীষনরকম। তাই তো ভালোবাসি বলে দাও যাতে সে ভালোবাসা টুকু অনুভব করতে পারে।

সমাপ্ত,,,

ইদানিং গল্পের শেষে এসে কিভাবে শেষ করবো বুঝে উঠতে পারছি না সেই জন্য সমস্যা হয়ে যাচ্ছে ভীষনরকম। আমার ক্লাস শুরু হয়েছে নতুন তার ওপর পান্ডুলিপি লেখা আছে, সেটার থিম ভেবে রেখেছি আমি, সেই ভাবেই এগোচ্ছি। পান্ডুলিপি, গল্প, নিজের কলেজ আর পড়াশোনা সব কিছু মিশিয়ে সামাল দিতে পারছিলাম না তাই দ্রুত ইতি টানলাম। পান্ডুলিপি শেষ করে পরের গল্পের জন্য আমার কিছুটা ব্রেক চাই। লেখার তালটা হারিয়ে ফেলেছি আর আপনাদেরকেও বারবার হতাশ করার জন্য আমি দুঃখিত।

ভালোবাসি বলে দাও পর্ব ২৪