ভালোবাসি বলে দাও বোনাস পর্ব 

ভালোবাসি বলে দাও বোনাস পর্ব 
Suraiya Aayat

ওনার কথা শুনে আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেল যেন, ইচ্ছে করলো ওনাকে এখানেই শে/ষ করে দিই। কিসের ভিত্তিতে উনি বলেন আমি প্রেগন্যান্ট?
ওনার কথা শুনতেই আমি মামীর দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘মামী উনি এসব কি বলছেন? তুমি ওনাকে কিছু বলো। ‘
আমি ওনাকে এতো কিছু বলার পরও দেখি মামী চুপ করে আছেন কোন কথা বলছেন না। না পেরে আমি এবার চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,

‘ মামী তুমি ওনাকে কিছু বলছো না কেন? তোমরা তো জানো যে ডক্টর বলেছে আমার বেবি হওয়া না হওয়ার ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা। আর আমি কার সাথে কি করেছি যে উনি এই অপবাদ দিচ্ছেন। ‘
আমার কথা শুনে ডাক্তার বললেন,
‘পোয়াতি হয়ে এসব কথা কেমন বলো যে বাচ্চা হবে না! ‘
ওনার এমন লজিকলেস কথা শুনে আমি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম। ডাক্তারের এমন উস্কানিমূলক কথাবাত্রায় মামী যেন আরও আমার কথা বিশ্বাস করলেন না, উনি নির্বিকারে আমার পাশ থেকে উঠে গেলেন।
মামীর পাশাপাশি ডাক্তার ও বেরিয়ে গেলেন। আমি সেখানেই থ হয়ে বসে রইলাম। মাথাটা শক্ত করে ধরে রইলাম আমি। আমার আগে যতোটা না মাথা ঘুর ছিলো তাদের এমন কাজকর্মে আমার মাথা ব্যাথা আরও বেড়ে গেল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইতিমধ্যে বাইরে থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসছে। বাবা আর আম্মুর চিৎকার শুনতে পাচ্ছি, সমান তালে নানাভাই ও চেঁচিয়ে চলেছেন আর ডাক্তারের কন্ঠস্বর ও শুনতে পেলাম মাঝেমাঝে।
আমি খাট থেকে পা নামার জন্য প্রস্তুতি নিতে গেলেই নানাভাইয়ের কথায় দমে গেলাম, আমার পা আর নামতে চাইলো না।
‘ তোর মতো তোর মাইয়াও যে এমন কুলাঙ্গার হইবো সেটা আমি আন্দাজ করবার পারছিলাম। নিজের আম্মা যেখানে তার বাপের অমতে বিয়ে করসে সেখানে তোর মাইয়ার থেকে এসব আশা করবার পারছি। কি ভাবো শহরে থাকো বলে এসব কিছু জানাজানি হইবো না? আর তোর ননদের ছেলের সাথেও তো তার ঢলাঢলি কম না। না জানি তার সাথে কি করবার পারছে। ‘

নানাভাইয়ের এমন কথা শুনে আমি কুঁকড়ে গেলাম একনিমেশেই। একটা মানুষ কতোটা খারাপ ধারনা পোষন করতে পারে তা হয়তো আজ নিজে এই পরিস্থিতিতে না দাঁড়ালে জানতেই পারতাম না। নিজেকে বিনা দোষে এভাবে কলঙ্কিত হতে দেখে আমার চোখ ফেটে জল গড়াতে লাগলো। শুধু আমাকে নয়, আমার আর আরিশ ভাইয়ার নামটা জুড়ে তাদের এমন নোংরা কথা শুনতে হচ্ছে।
বাবা চেঁচিয়ে বললেন,
‘আমার মেয়ে আর ভাগ্নার নামে আর একটাও বাজে কথা বললে আমি ভুলে যাবো যে আপনি মুরব্বি একজন মানুষ। আপনি নিজেই তো আপনার মেয়েকে সম্মান করতে পারেন না সেখানে আমার মেয়েকে আপনি কিভাবে সম্মান দেবেন। আর যাকে নিয়ে বলছেন সে এতো ছোট মনের মানুষ না। ‘

নানাভাই কিছু বলতে যাবে তখনই আম্মু মামীকে ধরে বললেন,
‘তুমি আমার মেয়েকে নিয়ে এসো ভাবী। আমি ওকে নিয়ে এক্ষুনি চলে যাবো। শুধু তোমাদের জোরাজুরিতে আমি তাকে পাঠিয়েছি। এর পর তোমাদের সাথে আর কোন সম্পর্ক রাখবো না আমি।’
নানাভাই বলে উঠলেন,
‘ কেও কোথাও যাবে না যতখন না এই ছেড়ি স্বীকার করবে এই বাচ্চা কার। ‘
আম্মু বাবাকে রাগ দেখিয়ে বললেন,
‘ আরিশকে একটা ফোন করো না দেখো না ছেলেটা কতদূর আছে। আমার আর সহ্য হচ্ছে না এসব। ‘
বাবা আম্মুকে আশস্ত করে বললেন,

‘ এক্ষুনি চলে আসবে। পুলিশের কাছে গেছে একটু সময় তো লাগবেই। ‘
পুলিশের নাম শুনে ডক্টর হঠাৎ করে বলে উঠলেন,
‘ দেখেন মহিব সাহেব, বিয়ের আগেই একটা মেয়ের পোয়াতী হওয়া মোটেই ভাল কথা না। আপনার নাতনি যখন স্বীকার করতেসে না যে সেটা কার বাচ্চা তখন আপনাদের মান সম্মান রাখতে আমি এ বাচ্চার দায়িত্ব নিতে রাজী। ‘
ডক্তারের এমন কথা শুনে আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। যত নষ্টের মূল সে।
ডাক্তারের এমন কথা শুনে নানাভাই বললেন,
‘এই ডাক্তারের সাথেই তোর মেয়ের বিয়ে হবে। ‘

ডক্টর শুনে খুশিতে লাফাতে লাগলেন যেন। আমি দরজার পাশে থাকা একটা মোটা লাঠি হাতে নিলাম, আজকেই আমার হাতে তার শেষ দিন। চোয়াল শক্ত করে আমি তাদের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি সবে উঠানে গিয়ে দাঁড়ালাম, আমাকে দেখে ডাক্তার বলে উঠলেন,
‘তোমার ওই বাচ্চা আজ থেকে আমার। ‘
বাবা ওনার কলার ধরে বললেন,
‘মুখ সামনে কথা বল, তোরে তো আমি জেলে দিব মিথ্যা দায়ের অপরাধে, আর আমার মেয়ের সিদ্ধান্ত আমি নিবো আপনি না( নানাভাই কে উদ্দেশ্যে করে) । আর আরু নিজেই বাচ্চা আর ও কি করেইবা কি! আপনার কি এসব বলতে মুখে আটকাই না,মুরব্বী তো আপনি। ‘
ডাক্তার বললেন,

‘ আমার কলার ছাড়েন আর আপনার মেয়েকে প্রশ্ন করেন যে আপনার মেয়ে বাচ্চা আনলো ক্যামনে। ‘
ডক্টর এর এমন কথা বলতে বলতে আমি দেখলাম আরিশ ভাইয়া একজন লোককে নিয়ে বাসায় ঢুকছেন। ওনাকে দেখে আমি যেন মরুভূমিতে জল সন্ধান পেলাম। ওনাকে দেখা মাত্রই হাত থেকে লাঠিটা ফেলে ছুটে গিয়ে ওনাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলাম আমি। ওনাকে এমন ভাবে ধরেছি যেন ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবেন। উনি একহাতে আমাকে আগলে নিলেন।
আমাকে ওনার সাথে দেখে ডক্টর বললেন,
‘ এই ছেলের লগে কি তার লটরপটর চলে নাকি?
আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদছি। সবকিছু কেমন কল্পনার মতো লাগছে। আম্মু আমার কাছে ছুটে এলেন। আরিশ ভাইয়া একহাতে আমার চোখ মুছিয়ে বললেন,
‘ হ্যাঁ ওটা আমার বাচ্চা আর আমিই ওর জামাই, ওর সাথেই আমার লটরপটর, ওর সাথেই আমার সব। আপনাদের কোন সমস্যা? ‘

ওনার কথা শুনে আমার হৃদগতি থেমে আসতে নিলো, তড়িৎ গতিতে ওনাকে ছেড়ে সরে এলাম, ওনায় জড়িয়ে ধরায় কি উনি এমনটা বললেন? আমি ওনার দিকে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আধো আধো স্বরে বললাম,
‘ আপনি এসব কি বলছেন আরিশ ভাই? আপনি ওদেরকে বলেন যে এসব মিথ্যা।’
উনি আমার হাতটা ধরে বললেন,
‘ নো মোর ওয়ার্ডস। আজ মিথ্যে করে বলছে তো একদিন না একদিন সত্যিই আমাদের বাচ্চা হবে। আসো। ‘
কথাটা বলে উনি আমার হাত ধরে কাজিকে আসার ইশারা করতেই আমি আউলিয়ে গেলাম। ওনার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলাম। আমি ভাবলাম উনি হয়তো ওই ডাক্তারের সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। আমি সপাটে বললাম,

‘ আমি ওই বুড়ো কে বিয়ে করবোনা। ‘
কথা শুনে ডাক্তার টা বললেন,
‘ বেহায়া মেয়ে তুমি বুড়ো বলো কাকে হ্যাঁ? ‘
আরিশ ভাইয়া আমার হাতটা ধরে একটা টান দিয়ে ডক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ওনার দাঁত বরাবর একটা ঘুষি দিতেই উনি সামলাতে না পেরে পড়ে গেলেন।
‘ আরুপাখির নামে আর একটাও নোংরা কথা বললে আপনার জ্বিভ আমি টেনে ছিড়ে দেবো। ‘
কথাটা বলে উনি সাথে থাকা পুলিশকে বললেন,
‘অফিসার আপনি ওনাকে নিয়ে যান আর এটাও জেনে নিবেন যে উনি কোথা থেকে ডাক্তারি পাশ করেছেন যে পেশেন্ট দেখলেই বুঝতে পারেন যে সে প্রেগন্যান্ট।’
উনি কাজী কে ডাকলেন। নানাভাই এখন নিরব দর্শক এর ভূমিকা পালন করছেন, আর পুলিশ দেখে উনি দমে গেছেন।

মামী আমাদেরকে সোফায় বসতে বললেন, মামীর দিকে তাকাতেও আমার লজ্জা লাগছে, উনি আমার অসময়ে আমার পাশে ছিলেন না এবং সবার মতো উনিও আমাকে অবিশ্বাস করেছেন। আরিশ ভাইয়া আমাকে নিয়ে বসলেন। আমি আব্বু আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মুকে দেখে ভীষনরকম খুশি মনে হচ্ছে তবে বাবা হয়তো একটু কিন্তু কিন্তু করছেন কারন তিনি তার বন্ধুকে একপ্রকার কথা দিয়েছিলেন যে তার ছেলের সাথে আমার বিয়ে হবে।
আমি দৃষ্টি নত করলাম। কেমন ভয় ভয় আর অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। আরিশ ভাইয়া কতো দায়িত্ব সহকারে আমার হাতটা শক্ত করে মুঠিবদ্ধ করে বসে আছেন। উনি বললেন,
‘ কাজী সাহেব আপনি বিয়ে পড়ান। আর সাক্ষী হিসাবে মেয়ের বাবা, মা, তার মামী, আর একজন উপস্থিত মানুষ সে আমাদের জন্য মৃত। ‘
কথাটা শুনতেই নানাভাই বলে উঠলেন,
‘ বেয়াদপ সবাই। ‘

আরিশ ভাইয়া তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলেন। আমি এখনো কাঁপছি। সবকিছু আমর মাথার ওপর দিয়ে গেলেও বুঝতে পারছি যে ওনার আর আমার বিয়ে হতে চলেছে এই মুহূর্তে। তাহলে ওনার মায়াবতী? আমি ওনার দিকে তাকিয়ে আছি, কিন্তু উনি আমর দিকে তাকাচ্ছেন না বিন্দুমাত্র। উনি যে রেগে আছেন আমি বুঝতে পারছি। ওনার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই দেখলাম উনি তিনবার কবুল বলে ফেললেন, আমি ওনার দিকে তাকিয়ে কবুল বলতেই আর সই করতেই আমি ওনার হয়ে গেলাম এক নিমেষেই। উনি আমার দিকে একবার তাকালেন। আমি ওনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। আমি হাত ছাড়াতে নিলেও উনি ছাড়লেন না বরং আরও শক্ত করে ধরলেন। আমার ওনার বলা কথাটা মনে পড়ে গেল।

‘একবার পেলে আর সারাজীবনের মতো ছাড়ছি না।’ কথাটা আমার হৃদয়ে গিয়ে আটকে গেল।
পুনরায় ওনার দিকে আমি তাকাতেই দেখলাম উনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছেন রাগী দৃষ্টিতে। এরপর যে উনি আমাকে কোন কথা শোনাতেই ছাড়বেন না তা বুঝলাম আমি।
চোখ নামিয়ে নিলাম ওনার থেকে।
বিয়ে শেষ হতেই আর কোন কথা বাড়ালেন না উনি। সেদিনই শেষ হয়ে গেল সে বাড়ির সবার সাথে আমাদের সম্পর্ক।
উনি আমাকে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে এলেন। আমি মাথা নত করে আছি। এখন যে আমি বিবাহিত সেটা ভাবলেই কেমন লাগছে।

উনি গাড়িতে উঠলেন, আর আমি কল্পনার জগতে হারিয়ে গেছি, গাড়িতে ওঠার কথা মনে নেই দেখে উনি একটা ধমক দিতেই আমি চমকে উঠলাম। গাড়িতে উঠে সিটবেল্ট পরলাম। এখন আমার মাথায় কেবল একটাই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। কথাটা গলা অবধি এসে আটকে আছে। আমি এবার আর সাত পাঁচ না ভেবে বললাম,
‘ আপনি আমাকে বিয়ে করলেন কেন? এখন আপনার মায়াবতীর কি হবে? ‘
প্রশ্নটা করা মাত্রই কানের পাশে শো শো আওয়াজ শুনতে পেলাম আমি, বুঝলাম যে উনি সপাটে একটা চড় মারলেন আমাকে। আমি গালে হাত দিয়ে ওনার দিকে চেয়ে রইলাম। আমার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন।

ভালোবাসি বলে দাও পর্ব ১৭

আচ্ছা বিয়ের প্রথম দিনই এই হিটলারী থাপ্পড়টা আমার প্রাপ্য ছিল? আমি অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে কাঁদতে লাগলাম আর মনকে বোঝাতে লাগলাম যে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষটার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে যে বাস্তবে একটা হিটলার কিন্তু আমার আলাদিন ও বটে।

ভালোবাসি বলে দাও পর্ব ১৮