মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ১৪

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ১৪
নূন মাহবুব

-” হ্যাঁ বাবা বলো।চাচার কি খবর?সব ঠিকঠাক আছে তো?”
-” না রে মা। কিচ্ছু ঠিক নেই।তোর চাচার অবস্থা বেশি ভালো না। কোমায় রয়েছে।হয়তো বাঁচবে না। তোদের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে । দুই টা মেয়েকে ফাঁকা একটা বাড়িতে রেখে এসেছি। আশেপাশে বখাটে ছেলেদের আনাগোনা চলে। ভেতর টা কেমন যেনো কু ডাকছে।যদিও আমরা বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম কিন্তু ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।যার জন্য ফিরতে পারি নি।”

-” তুমি চিন্তা করো না বাবা‌।আমরা ঠিক আছি।”
-” পাখি কোথায়?”
-” পাখির কথা আর বলো না বাবা। আমাদের বাড়িতে সাহিত্য ভাই আর আবৃত্তি এসেছে। তুমি তো জানো পাখি সাহিত্য ভাই কে কতো পছন্দ করে। বাড়িতে আসার পর থেকে শুরু হয়েছে ওর ননস্টপ বকবক। পাগল করে দিচ্ছে সাহিত্য ভাই কে। আমি কয়েক বার গরম চোখে পাখির দিকে তাকিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয় নি।ওর নিজের মতো করে বকবক করে যাচ্ছে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” সাহিত্যে কে আমি যতটুকু চিনি ও পাখির কথায় কিছু মনে করবে না।ও আমাদের কে নিজের পরিবার মনে করে। তাছাড়া সাহিত্য তোকে আর আবৃত্তি কে কখনো আলাদা করে দেখে না। কয়েক বছর আগে সাহিত্য তোকে র’ক্ত দিয়ে তোর প্রাণ বাঁচিয়েছিলো। তারপর থেকে সাহিত্য কে আমার বড় ছেলের আসনে বসিয়েছি‌।”
-” সত্যিই আবৃত্তি আর সাহিত্য ভাইয়ের অবদান কখনো ভুলতে পারবো না আমি।”
-” তোর মা তো বাড়িতে নেই ‌। কিন্তু দেখিস ওদের যেন আদর আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি না হয়।রাতে খেতে দিয়েছিস তো ওদের?” (লেখিকা নূন মাহবুব )

-” না বাবা। আমি আর আবৃত্তি মিলে রান্না করে সব কিছু গুছিয়ে রেখে এসেছি। এখন গিয়ে খেতে দিবো।”
-” ঠিক আছে। রাখছি তাহলে। সাবধানে থাকিস। আর হ্যাঁ পাখির খেয়াল রাখিস কিন্তু।”
-” ওকে বাবা। ”

-” প্রিয়া কথা বলা শেষ করে রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে আবৃত্তি জিজ্ঞেস করলো, কি রে কোথায় চলে গিয়েছিলি?”
-” বাবা কল করেছিলো। তোরা গল্প করছিস তাই আমি বাইরে গিয়ে কথা বলে আসলাম।বাবা অনেক খুশি হয়েছে তোরা এসেছিস বলে। অনেক রাত হয়েছে।চল তোরা খেয়ে নে। সাহিত্য ভাই চলেন বলে প্রিয়া দরজার বাইরে পা রাখার আগেই সাহিত্য বললো, দাঁড়া প্রিয়া। তোর নামে অভিযোগ এসেছে। তুই নাকি পাখি কে সবসময় বকা দিস? ওর দিকে গরম চোখে তাকিয়ে থাকিস?”

-“আপনি ওর কথায় কান দিবেন না সাহিত্য ভাই।ও একটা মিথ্যুক।ও নিজে আমাকে মা’রে। আমাকে বড় বলে সম্মান করে না।আমি পড়াতে গেলে বলে আমি ওকে যা শিখিয়ে দিই সব নাকি ভুল।আমি নাকি পড়াশোনা জানি না।ফেলটু করে করে এতো পর্যন্ত এসেছি।”
-” মিথ্যা তো তুই বলছিস প্রিয়া। কিছুক্ষণ আগে আমি আড়চোখে দেখেছি তুই পাখির দিকে গরম চোখে তাকিয়ে আছিস।ওর মতো কিউট, মিষ্টি একটা মেয়ে কে কিভাবে বকা দিস হ্যাঁ? এরপর যদি আর কখনো পাখি কে বকা দিস,তোকে সোজা জেলে ঢুকিয়ে দিবো।”

-” সাহিত্যের কথা শুনে মিটমিট করে হেঁসে উঠলো পাখি।যেন সে অনেক খুশি হয়েছে।”
-” সাহিত্য পাখি কে হাসতে দেখে জিজ্ঞেস করলো, প্রিয়া কে ইচ্ছে মতো বকা দিয়েছি। এবার খুশি তো মিষ্টি পাখি?”
-” হ্যাঁ অনেক।”
-” তাহলে চলো এবার আমরা ডিনার করে আসি।”
-” হ্যাঁ ,চলো। কিন্তু শিক্ষা আপু তো ঘুমিয়ে পড়েছে।আপু কি রাতে খাবে না?”

-” সাহিত্য শিক্ষার দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যি শিক্ষা ঘুমিয়ে পড়েছে। কপালে, হাতে বেশ খানিকটা কেটে গিয়ে র’ক্ত জমাট বেঁধে কালো হয়ে রয়েছে। শিক্ষা কে এই অবস্থায় দেখে শিক্ষার প্রতি সাহিত্যের কেমন যেনো মায়া মায়া অনুভব হয়।তার নিজের বোনের জন্য আজ শিক্ষার এই অবস্থা। সাহিত্য এসে শিক্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,থাক না ও কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে! যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন না হয় খাবে।”

-” ঠিক আছে সাহিত্য স্যার। এবার তো চলো। আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে।”
-” হুম , যাওয়া যাক।”
-” সাহিত্য ডিনার শেষ করে প্লেটে শিক্ষার জন্য খাবার সাজিয়ে নিয়ে এসে দেখে শিক্ষা বিছানায় নাই। সাহিত্য শিক্ষা শিক্ষা বলে দুই তিন ডাকার পর শিক্ষা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে বললো, এমন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন কেন?”

-” তোর জন্য খাবার এনেছি‌। তাড়াতাড়ি খেয়ে ঔষধ খেতে হবে। ক্ষতস্থানে মলম লাগাতে হবে।”
-” আমার বিষয়ে আপনার না ভাবলে ও চলবে।”
-” সাহিত্য রেগে গিয়ে শিক্ষার দুই বাহু চেপে ধরে বললো, কিছু না বলে বলে তোর অনেক বাড় বেড়েছে শিক্ষা। ডোন্ট গ্ৰো সো ফার।”

-” শিক্ষা সাহিত্যের হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বললো, আমাকে শাসন করার আপনি কে মিস্টার সাহিত্য শিকদার?”
-” প্রশ্ন টা তোর নিজেকে কর শিক্ষা।আই নো ভেরি ওয়েল দ্যাট ইউ উইল গেট দ্যা অ্যান্সার।”
-” প্রয়োজন বোধ মনে করছি না।”
-” ওকে ফাইন ।খেয়ে নে এখন।”
-” জুতো মে’রে গরু দান করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমার সময় মতো আমি খেয়ে নিবো।”

-” সাহিত্য শিক্ষার খাপছাড়া কথা শুনে শিক্ষা কে জোর করে বিছানায় বসিয়ে নিজে হাতে খাবার মেখে শিক্ষার গালে ঢুকিয়ে দেয়। শিক্ষা খাবে না খাবে না করে প্লেটে রাখা সবটুকু খাবার খেয়ে শেষ করে।যা দেখে সাহিত্য ফোড়ন কেটে বলে, খুব তো খাবো না খাবো না করছিলি। এখন খাবারগুলো কার পেটে গেলো শুনি?মনে হচ্ছে আমার পেটে গিয়েছে।”
-” শিক্ষা কিছু না বলে চুপচাপ শুতে যাওয়ার আগেই সাহিত্য শিক্ষা কে কেটে তুলে বললো, ঔষধ খেয়ে মলম লাগিয়ে তারপর যতো খুশি ঘুমা।”

-” পিঠের দিকে ও আঘাত লেগেছে।আমি মলম লাগাতে পারবো না। আবৃত্তি আপু আসুক, আপু লাগিয়ে দিবে।”
-” আবৃত্তি গল্প পেয়েছে এতো সহজে সে আসবে না। তুই উঠে বস । আমি মলম লাগিয়ে দিচ্ছি।”
-” তার কোনো প্রয়োজন…
-” বেশি কথা বললে আমি বাবা কে সব বলে দিবো।আর তারপর না পারবি পড়াশোনা করতে আর না পারবি বাড়ির বাইরে বের হতে।”

-” ঠিক আছে ‌,দিন।”
-” সাহিত্য মলম এনে শিক্ষার হাতে , কপালে ,পিঠে লাগিয়ে দিতে লাগলো।সাহিত্যের স্পর্শে কেঁপে উঠলো শিক্ষা।আমতা আমতা করে বললো,আজ আপনি আমার উপকার করছেন বিনিময়ে আমি একদিন আপনার কাপড় চোপড় পরিষ্কার করে দিবো। আমি কারোর কাছে ঋণী হয়ে থাকি না।”
-” সাহিত্য শিক্ষার পিঠে মলম লাগানোর সময় মনে মনে বললো , আমি তোকে কখনো বুঝে উঠতে পারি না শিক্ষা। তুই একটা রহস্যময়ী।তোকে ঘিরে রয়েছে হাজারো রহস্য। জানি না এই রহস্যের উন্মোচন কবে হবে???”

-” সেদিনের দূর্ঘটনা পর কেটে গেছে তিন দিন। শিক্ষা এখন পুরোপুরি সুস্থ্য।আজ ভার্সিটি তে এসেছে সে।তুবাসহ আরো কয়েকজনের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে শিক্ষার।পর পর তিন টা ক্লাস শেষ করে শিক্ষা ক্লাস রুম থেকে বেরিয়েছে এমন সময় বর্ণ পেছন থেকে শিক্ষা কে ডেকে বললো, তুমি শিক্ষা রাইট?”

-” হ্যাঁ ! কিন্তু আপনি কে?আমাকে কিভাবে চিনেন?”
-” আমি বর্ণ। আবৃত্তির ফ্রেন্ড। তোমার আর আবৃত্তির আমার জন্মদিনের পার্টিতে আসার কথা ছিলো ‌কিন্তু আসো নি কেন? সেদিনের পর থেকে আবৃত্তি না ভার্সিটি তে আসছে আর না আমার ফোন রিসিভ করছে। মেয়েটা কে নিয়ে আর পারি না আমি ‌।কি যে করে এই মেয়েটা? আমাকে বোধদয় যন্ত্রণা দিয়ে মে’রে ফেলতে চায়।”

-” একচুয়ালি ভাইয়া আমরা রেডি হয়েছিলাম কিন্তু একটু সমস্যা কারণে যেতে পারি নি।সরি ভাইয়া।”
-” বর্ণ শিক্ষার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে খপ করে শিক্ষার হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে বললো, প্লীজ বোন আমার একটা উপকার করে দাও।প্লীজ তোমার কাছে হাত জোড় করছি।”
-” ঠিক আছে ভাইয়া। বলুন না কি করতে হবে?”

-” একটা ঘটনা মানুষের জীবন কে পাল্টে দেয়। সেরকম টা হয়েছে সাহিত্যের। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার আবৃত্তি কে বাঁচানোর ঘটনা সাহিত্যের মনে দাগ কেটে যায়। সেদিনের পর থেকে শিক্ষার জন্য সাহিত্যের মনে একটা সফট কর্ণার তৈরি হয়েছে। সাহিত্যের ভার্সিটির পাশে একটা কাজ ছিলো।

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ১৩

সে কাজ শেষ করে ভেবেছিলো আজ শিক্ষা কে নিয়ে শপিং এ যাবে,কেনাকাটা করবে,খাবে ঘুরবে। কিন্তু ভার্সিটি তে এসে থমকে যায় সাহিত্য। সাহিত্য দেখে একটা ছেলে শিক্ষার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু শিক্ষা হেসে হেসে কথা বলছে।যা দেখে সাহিত্যের মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে। মূহুর্তের মধ্যে শিক্ষার প্রতি পুরোনো ঘৃণা জেগে ওঠে।

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ১৫