মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২০

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২০
নূন মাহবুব

-” ব্রেকিং নিউজ। আজকে সকালের টাটকা খবর।আজ থেকে দশ বছর আগে এসিপি রায়হান মীর সিআইডি ডিপার্টমেন্টের একজন নামকরা মুখ ছিলো।যে তার জ্ঞান বুদ্ধি বিচক্ষণতা দিয়ে শত্রুদের সাথে লড়েছে।যার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস ক্রি’মি’নালদের ছিলো না। কিন্তু হঠাৎ করে সে এবং তার পরিবার নিখোঁজ হয়ে যায়।

অনেক খোঁজাখুঁজি করে ও তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নি। তারা নিখোঁজ হওয়ায় দশ বছর পরে এসে এসিপি রায়হান মীরের মেয়ে উষ্ণতা মীরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।সে এখন সিনিয়র সিআইডি অফিসার সাহিত্য শিকদারের বাড়িতে অবস্থান করছে।তাকে হয়তো অনেকেই চিনতে পারবেন।সে এতো দিন সাহিত্য শিকদারের কাজিনের পরিচয়ে ছিলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা শুধু মাত্র এসিপি স্যারের মেয়ের খোঁজ পেয়েছি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এসিপি আর তার ওয়াইফের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।জানি না আদৌ তারা বেঁচে আছে কিনা? অন্ধকার রুমের মধ্যে এটুকু নিউজ দেখে কেউ একজন রিমোট দিয়ে টিভি অফ করে দিয়ে বললো, ওদের খোঁজ পাবি কিভাবে বোকা জনগণ? এসিপি আর তার প্রেয়ারের ব‌উ যে আমার হাতে বন্দী।হা হা হা। আমি এতো দিন চাইলে ঐ‌ দুই টা মে’রে দিতে পারতাম। কিন্তু আমি মা’রি নি। আমি তাদের কে তিলে তিলে মা’র’বো।

আমার সাথে করা প্রত্যেক টা অন্যায়ের শাস্তি দিবো ওদের কে।এই পাবলিক আমার কাজ টা আরো সহজ করে দিলো। আমার যা জানার আমি জেনে গিয়েছি।এই দিনটার জন্য আমি আজ দশ টা বছর অপেক্ষা করে ছিলাম। শুধু মাত্র এসিপির মেয়ের নাগাল পাওয়ার জন্য কতোগুলো নিষ্পাপ মেয়েদের প্রাণ নিয়েছি।এর জন্য আমি তোকে কঠিন থেকে কঠিনতর মৃ’ত্যু দিবো উষ্ণতা।এবারে তোকে একটু ভিন্ন স্টাইলে মা’র’বো।

এর আগে প্রত্যেক টা মেয়ে কে মা’রা’র সময় তাদের কে আমি অজ্ঞান করে নিয়েছি।তোর ভয় নেই উষ্ণতা।আমি তোকে অজ্ঞান করবো না।তোকে সজ্ঞানে মা’র’বো আমি।তোর মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করা লাইভে দেখবে তোর বাবা মা। আজকে তোর কলিজা খেয়ে আমার কলিজা শান্ত করবো।তোর গোশত দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করে খাবো। আর তোর র’ক্ত দিয়ে আমি গোসল করবো।আজকের রাত হবে তোর শেষ রাত। মৃ’ত্যু’র জন্য প্রস্তুত হ উষ্ণতা।তোর শুভাকাঙ্ক্ষী আসছে বলে পৌশাচিক হাসিতে মেতে উঠলো কোনো এক অজানা ব্যক্তি।”

-” গতকাল থেকে শিক্ষা সাহিত্য দুজন দুজনকে ইগনোর করে চলেছে। যেন কেউ কাউকে চিনে না। ব্যাপার টা অন্তরা শিকদার গতরাত থেকে নোটিশ করেছেন। শিক্ষা কখনো রাতে সবার সাথে বসে ডিনার করে না। সাহিত্য অফিস থেকে ফিরলে সাহিত্যের খাওয়া শেষ হলে নিজে খায়। কিন্তু গতরাতে শিক্ষা কে ডাইনিং টেবিলে দেখে অন্তরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, হ্যাঁ রে শিক্ষা তোর কি আজ খুব ক্ষুধা পেয়েছে? তুই তো সাহিত্য না ফেরা পর্যন্ত খাস না। হঠাৎ আজ আবার কি হলো?”

-” তেমন কিছু না বড় আম্মু।ঐ আমার একটু শরীর খারাপ লাগছে।তাই ভাবলাম সাহিত্যের ফিরতে তো অনেক দেরি হবে । আমি বরং খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ি। শিক্ষার কথার পিঠে আর কোনো কথা বাড়ায় না অন্তরা।অন্তরা ভেবেছিলো হয়তো সত্যি সত্যি শিক্ষার শরীর খারাপ। কিন্তু সকালে ও যখন ব্রেকফাস্ট করার সময় দুজন দুজনের দিকে ভুলেও একবারের জন্যে ও তাকিয়ে দেখে নি, তখন অন্তরার মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

মায়ের মন সবসময় চায় তার সন্তানেরা সুখে থাকুক। সন্তানের সুখের মধ্যে যেন নিজেদের সুখ খুঁজে পায়। অন্তরা ব্যাপার টা সাদ্দাম শিকদারের সাথে শেয়ার করে। তারা দুজন নিজেদের মধ্যে কথা বলছে,এমন সময় দেখে শিক্ষা ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বেরিয়েছে।আর শিক্ষার পেছন পেছন সাহিত্য ও বেরিয়েছে অফিস যাওয়ার জন্য। সাহিত্য শিক্ষা দুজনে নিচে আসলে সাদ্দাম শিকদার সাহিত্যের উদ্দেশ্য বললো, তুমি তো অফিসে যাচ্ছো মনি কেও নিয়ে যাও। ভার্সিটির সামনে ওকে ড্রপ করে দিও।”

-” আ’ম সরি বাবা। আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যেতে পারবো না। তাছাড়া ও তো লুলা না যে একা যেতে পারবে না।যে মেয়ে ভার্সিটি গিয়ে ছেলেদের হাত ধরে ঘুরে বেড়াতে পারে,তার কাছে একা একা ভার্সিটি পর্যন্ত যাওয়া কোনো ব্যাপার না।”
-” তুমি কি সকালের নিউজ দেখো নি? সবজায়গাতে শিক্ষা ওরফে উষ্ণতার বেঁচে থাকার নিউজ ছড়িয়ে গিয়েছে। যেকোনো সময় মনির উপর অ্যাটাক হতে পারে।তোমরা নিজেদের কাজে ওকে ব্যবহার করছো অথচ তার সেফটি নিয়ে তোমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।”

-” হ্যাঁ শিক্ষার উপর অ্যাটাক হবে।তবে সেটা দিনে নয়,রাতে।খু’নি এই সময় টা তে প্ল্যান করবে কখন কি করতে হবে? তাছাড়া শিক্ষা নিজে নিজেকে খুব ভালো প্রটেক্ট করতে পারে।আমাকে ওর প্রয়োজন নেই।”
-” তুমি বড্ড বেশি কথা বলা শিখে গেছো সাহিত্য।আমি মনি কে নিয়ে যেতে বলেছি তুমি নিয়ে যাবে। ব্যাস আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না।”

-“সাহিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বললো, দুই মিনিটের মধ্যে গাড়িতে গিয়ে বস। অন্যথায় আমি তোর মাইনে করা চাকর না যে তোর জন্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবো।”
-” এ কেমন ব্যবহার সাহিত্য ? রাগান্বিত হয়ে বললো , সাদ্দাম শিকদার।”
-” আমি আবার কি করলাম?”
-” মনি তোমার বিবাহিত স্ত্রী।স্ত্রীর সাথে এ কেমন ব্যবহার? তোমার মায়ের সাথে কখনো তুই তুকারি করতে ,তার নাম ধরে ডাকতে দেখেছো আমাকে?”

-” সাদ্দামের শিকদারের কথায় সাহিত্য শিক্ষার কাছে এসে তার হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে বললো, আমার মিষ্টি অঙ্গনা। তুমি কি নিজে হেঁটে যাবে,নাকি আমি কোলে করে নিয়ে যাবো?”

-“শিক্ষা কটমটে চোখে সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে গাড়িতে গিয়ে পেছনের সিটে বসে পড়লো।যা দেখে সাহিত্য এসে বললো, আমার মিষ্টি অঙ্গনা! আমাকে কি তোমার মাইনে দেওয়া ড্রাইভার মনে হয়? আমার হাতে বেশি সময় নেই। তাড়াতাড়ি সামনে এসে বস নাহলে আমি কিন্তু তোকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবো।”
-” শিক্ষা সামনের সিটে এসে বললো, ওমা!আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবেন ,আর আমি মনে হয় আপনাকে ধুয়ে পানি খাবো তাই না?আপনাকে ও আমি গাড়ির তলায় পিষে দিবো।”

-” তুই আসলে একটা ফাউল অ’স’ভ্য মহিলা। স্বামীর সাথে কিভাবে কথা বলতে সেটা ও জানিস না? স্বামী কে নিজে হাতে মা’র’তে চায়ছিস? তোর বাপে মনে হয় গরীব ছিলো।মধু কেনার মতো সামর্থ্য ছিলো না তার।তার জন্য জন্মের সময় তোর মুখে মধু দিতে পারে নি।যার ফলস্বরূপ তোর মুখ থেকে তেতো তেতো কথা বের হয়।”
-” আপনার বাপ তো অনেক বড়লোক।আপনার জন্মের সময় আপনাকে নিশ্চয় মধুর মধ্যে চুবিয়ে রেখেছিলো। তাহলে আপনার মুখ থেকে মধু কেন বের হয় না অফিসার?”

-” তোর মতো অ’স’ভ্য মহিলার সাথে কথা বলাটাই বেকার।”
-” তাহলে কথা বলেন না।চুপ করে থাকুন। ব্যাস প্রবলেম সলভ।”
-” আমাকে মাপ কর ব‌ইন। আমার ঐ খু’নি টা জন্য চিন্তা হচ্ছে।না জানি সে তোর মতো ডাকাত কে খু’ন করতে এসে নিজে না তোর সাথে খু’ন হয়ে যায়।”

-” আপনার যখন এতোটা দরদ লাগছে ছেড়ে দিন খু’নি কে।”
-” তাহলে উপরমহল আমাকে সিআইডি ছাড়া করবে।আর হ্যাঁ শোন! যেহেতু উষ্ণতার জীবিত থাকার খবর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।তাই তোর ইন্টারভিউ নিতে মিডিয়ার লোক আসতে পারে। তাদের সামনে একটু সাবধানে কথা বলবি।”
-” শিক্ষা ফোন টিপতে টিপতে বললো ঠিক আছে। শিক্ষা ফোনে এতোটা মগ্ন হয়ে ছিলো যে সাহিত্য ভার্সিটির সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে শিক্ষা কে কয়েকবার গাড়ি থেকে নামার কথা বলেছে। কিন্তু শিক্ষা শুনতে পায় নি।এক পর্যায়ে সাহিত্য রেগে গিয়ে শিক্ষার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ভার্সিটি তে এসে গিয়েছি। তুই কি গাড়ি থেকে নেমে যাবি নাকি কোলে করে নামাতে হবে?”

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ১৯

-” আমি লুলা না যে আমাকে কোলে করে নামাতে হবে। আমার সাথে পা আছে আমি নিজেই নেমে যাচ্ছি বলে শিক্ষা গাড়ি থেকে নেমে ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটা শুরু করলো।আর ঠিক তখনি কেউ একজন এসে শিক্ষা কে জড়িয়ে ধরলো।”

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২১