মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২১

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২১
নূন মাহবুব

-” আমি লুলা না যে আমাকে কোলে করে নামাতে হবে। আমার সাথে পা আছে আমি নিজেই নেমে যাচ্ছি বলে শিক্ষা গাড়ি থেকে নেমে ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটা শুরু করলো।আর ঠিক তখনি কেউ একজন এসে শিক্ষা কে জড়িয়ে ধরলো। শিক্ষা নিজেকে লোকটার থেকে ছাড়িয়ে দেখে অতি সুন্দরী একটা মেয়ে।দেখে মনে হচ্ছে কোনো সম্ভ্রান্ত পরিবারের । কিন্তু শিক্ষা তাকে চিনে না। শিক্ষা কিছু বলার আগেই মেয়ে টা বললো,তুমি এসিপি রায়হান আঙ্কেল এর মেয়ে উষ্ণতা রাইট?”

-” না মানে হ্যাঁ ।আমি উষ্ণতা। কিন্তু আপনি কে ? আর এইভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন কেন?”
-“আমি নেহা। রায়হান আঙ্কেল আমার বাবার অনেক ভালো বন্ধু ছিলেন। আঙ্কেলের মুখে তোমার কথা অনেক শুনেছি । কিন্তু তোমাকে কখনো দেখার সৌভাগ্য হয় নি। আজ সকালে যখন তোমার খবর নিউজে জানতে পারলাম,তখন থেকে আর নিজেকে স্থির রাখতে পারি নি। সোজা চলে এলাম তোমার সাথে দেখা করতে। তোমার সাথে দেখা হয়ে অনেক ভালো লাগলো। অবশ্যই আমাদের বাসায় একদিন আসবে কিন্তু।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” ঠিক আছে আপু।”
-” আমি একজন জার্নালিস্ট। তোমার বাবা মায়ের সম্পর্কে কিছু তথ্য জানার ছিলো।তারা কিভাবে নিখোঁজ হলো?তারা কি আদৌ বেঁচে আছে? তোমার পরিচয় এতো দিন কেনো সামনে আসে নি? তুমি এতো দিন কেনো বলো নি তুমি রায়হান আঙ্কেল এর মেয়ে?”

-” শিক্ষা ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বললো,আজ নয় আপু। আমার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে, আমি আসি এখন বলে শিক্ষা সামনের দিকে পা বাড়ানোর আগেই সাহিত্য এসে শিক্ষা কে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে নিজে ও টাল সামলাতে না পেরে শিক্ষার উপর পড়ে যায়।যার ফলস্বরূপ শিক্ষা রাগান্বিত হয়ে বলে,এসব কি ধরণের অ’স’ভ্যতা সাহিত্য?এটা ভার্সিটি ক্যাম্পাস, আপনার বেডরুম না যে যখন তখন জড়িয়ে ধরবেন , গায়ের উপর ঢলে পড়বেন।”

-” বাহ্ যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর।আমি যদি দৌড়ে এসে তোকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে না দিতাম ,তাহলে এতোক্ষণে তুই পটল ক্ষেতের বাসিন্দা হয়ে পটল চাষ করতি। ভাগ্যিস আমি গাড়িতে উঠার আগেই ব্যাপার টা নোটিশ করেছিলাম।”
-” মানে কি?”
-” সাহিত্য উঠে এসে পাশের গাছ থেকে একটা গুলি বের করে শিক্ষার হাতে দিয়ে বললো,এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছিস কেন তোকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছি?

-” ও মাই গড! কেউ আমাকে গুলি করে মা’র’তে চেয়েছিলো?”
-” হ্যাঁ ।এটা ছিলো তোর উপর প্রথম অ্যাটাক।”
-” কিন্তু কখন গুলি চললো? আর গুলি যদি চলে ও থাকে গুলি চলার আওয়াজ হলো না কেন?”

-” সবাই তো তোর মতো গা’ধা না।ঐ কিলারের বন্দুকে সাইলেন্সার লাগানো ছিলো ,যার জন্য কোনো শব্দ হয় নি।কিলাররা এতোটা ও বোকা হয় না যে এই ভার্সিটি ক্যাম্পাসে সাইলেন্সার লাগানো বন্দুক ছাড়া অন্য কোনো বন্দুক ব্যবহার করবে।তবে একটা বিষয় আমার কাছে পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো।এই খু’নি সেই খু’নি নয় ,যাকে আমরা খুঁজে চলেছি।সে কখনো তোকে জনসম্মুখে মা’র’বে না। তার মানে উষ্ণতার আরো শত্রু রয়েছে। ভার্সিটি তে থাকা তোর জন্য নিরাপদ নয়। যেকোনো সময় আবারো অ্যাটাক হতে পারে। তুই বরং বাড়ি চলে যা।আমি ড্রাইভার কাকু কে ফোন করে দিচ্ছি ।তোকে এসে নিয়ে যাবে।”

-“শুধু শুধু ড্রাইভার কাকুর আসার কি দরকার? আপনি আমাকে ড্রপ করে দিন না?”
-” আমি এখন যাচ্ছি না। আমার একটু কাজ আছে। লোকটার মুখ আমি সম্পূর্ণ দেখতে পাই নি।তবে লোকটা যেইখানে দাঁড়িয়ে ছিলো , সেইখানে নিশ্চয় কোনো না কোনো কিছুতে হাত দিয়েছে।ঐ খান থেকে যদি লোকটার ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাই তাহলে ওর ক্রিমিনাল রেকর্ড চেক করে নিশ্চয় কিছু না কিছু জানতে পারবো। তাছাড়া আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বা আশেপাশের লোকজনের থেকে ও কিছু জানতে পারবো।”
-” ঠিক আছে।আসছি আমি।”

-” বস এসিপির মেয়ের আমরা বাদে ও আরো অনেক শত্রু রয়েছে।”
-” মানে কি বলছিস ক্লিয়ার করে বল?”
-” বস, কিছুক্ষণ আগে মেয়েটার উপর অ্যাটাক হয়েছে।তবে ঠিক সময়ে সিআইডি অফিসার এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছে।যার জন্য মেয়েটা এখনো বেঁচে আছে।”
-” না! এটা কিছুতেই হতে পারে না। এসিপির মেয়ে আমার শিকার।আমি ওকে তিলে তিলে মা’র’বো।এসিপি আর তার প্রেয়ারের ব‌উয়ের করা অপমানের বদলা তাদের মেয়ের উপর নিবো আমি। তুই কি ঐ কিলার কে দেখেছিস? কে ছিলো লোকটা?”

-” জানি না বস।হয়তো কোনো কন্ট্রাক্ট কিলার ছিলো। সিআইডি ওকে খুঁজছে।”
-” সিআইডি ওকে খুঁজে পাওয়ার আগেই লোকটা কে আমার কাছে তুলে নিয়ে আয়।আমি ও দেখতে চাই কে সেই লোক যে আমার শিকার কে ছিনিয়ে নিতে চায়?”
-” ইয়েস বস।”

-” রাখছি আমি।তবে একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ যদি কোনো প্রকার গন্ডগোল করিস,তাহলে কিন্তু তোর ছেলেমেয়ের বাবা ডাকার জন্য মানুষ টা কে আর খুঁজে পাবে না বলে অজানা লোকটা ফোন কেটে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,একটা মানুষ কখনো খারাপ হয়ে জন্ম নেয় না।এই সমাজ, সমাজের মানুষ তাকে বাধ্য করে খারাপ হতে।কি দোষ করেছিলাম আমি? ভালোবেসে ছিলাম।আর ভালোবাসা টা নিশ্চয় ভুল কিছু না। কিন্তু এই সমাজের চোখে সেটা ভালো ছিলো না।এই সমাজ আমাকে খু’নি হতে বাধ্য করেছে।হা হা হা একটা খু’নে’র ও যে শাস্তি , হাজার টা খুনের ও সেই শাস্তি।তবে আমি কেন চুপ থাকবো? এই খুনের লীলা ততোক্ষণ চলবে যতোক্ষণ না আমি আমার কাঙ্খিত লক্ষ্যে না পৌঁছে যাচ্ছি।”

-” হ্যাঁ সাহিত্য কিছু জানতে পারলে লোকটার ব্যাপারে?”
-“হ্যাঁ স্যার ওর ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর সাথে আমাদের ডেটাবেজে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ করেছে। লোকটার ক্রিমিনাল রেকর্ড থেকে জানা গেছে সে একজন কন্ট্রাক্ট কিলার।এই কাজের জন্য বেশ কয়েক বার জেলে ও গিয়েছে।এই তো কিছু আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। কিন্তু কথায় আছে না স্যার ” ইজ্জত যায় না ধুলে,আর স্বভাব যায় না মলে।জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথে আবারো সেই কাজ শুরু করছে।”

-” ব্যাপার না । নির্জন তো গিয়েছে ঐ কিলার কে নিয়ে আসতে। একবার আসতে দাও। তারপর স্বভাব কিভাবে বদলে দিতে হয়,সেটা খুব ভালো করে জানা আছে সিআইডি অফিসারদের বলে এসিপি সাইফুজ্জামান একটা ফাইল হাতে নিয়েছে এমন সময় তার ফোন বেজে ওঠে। সাইফুজ্জামান কল রিসিভ করে বললো, হ্যাঁ নির্জন বলো।পেলে ঐ কিলার টা কে?”

-” হ্যাঁ স্যার পেয়েছি।তবে আহত অবস্থায়।আমি এইখানে আসার আগে কেউ একজন ওর উপর অ্যাটাক করেছিলো।আমি ওকে সিটি হসপিটালে নিয়ে এসেছি।তবে অবস্থা বেশি একটা ভালো না। আপনি তাড়াতাড়ি সিটি হসপিটালে চলে আসুন।”
-” ঠিক আছে ।আসছি আমি।”

-“প্রায় ঘন্টা খানেক পরে সাইফুজ্জামান আর সাহিত্য এসে দেখে লোকটা তার পকেটের দিকে কিছু ইশারা করছে।যা দেখে সাহিত্য জিজ্ঞেস করলো , তোমার এই অবস্থা হলো কি করে? তুমি তো নিজেই একজন কন্ট্রাক্ট কিলার।তোমাকে সুপারি দেওয়া হয়েছিলো উষ্ণতা কে মা’রা’র জন্য। কে সুপারি দিয়েছিলো তোমাকে? বলো কে সুপারি দিয়েছিলো?”

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২১

-” লোকটা তোতলাতে তোতলাতে বললো,আ আমি তা তাকে চিনি না। আমার পকেটে তার ছবি আছে বলে লোকটা মৃ’ত্যু’র কোলে ঢলে পড়ে ‌।”
-” সাহিত্য লোকটার কথা অনুযায়ী পকেট থেকে ছবি বের করে ছবির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো ,না ! এটা হতে পারে না।

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২২