মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৯

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৯
নূন মাহবুব

-” তুমি এইখান থেকে চলে যাও উষ্ণতা।দেখছো তো আমাদের কাছে বোমা লাগানো রয়েছে। যেকোনো সময় ব্লাস্ট হয়ে যেতে পারে।আমরা সবাই মা’রা যাবো। তুমি চলে যাও মা।চলো যাও।

শিক্ষার যেন বিশ্বাস ই হচ্ছে তার পাপা মম বেঁচে আছে। এতো গুলো বছর পরে নিজের মম পাপা কে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না শিক্ষা। ছুটে আসে তাদের কাছে। নিজের পাপা মমের মুখে অজস্র চুমু তে ভরিয়ে দেয়। পরক্ষণেই চোখের পানি মুছে বলে,এ কি হাল হয়েছে তোমাদের? জীবিত রেখেও মে’রে ফেলেছে তোমাদের। কে করেছে এইসব বলো আমাকে?বলো না পাপা কে করেছে এইসব?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” তুমি চলে যাও এইখান থেকে উষ্ণতা।এটা তোমার পাপার অর্ডার। আমাদের নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। তুমি তো এতো দিন জানতে তোমার পাপা মম বেঁচে নেই।ধরে নাও আমরা মৃত। আমি আবারো বলছি চলে যাও।”

-” তুমি আমাকে হেরে যাওয়ার শিক্ষা দিয়ে বড় করো নি। যুদ্ধের ময়দান থেকে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার শিক্ষা পাই নি আমি। এতো গুলো বছর আমি তোমাদের আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। কিন্তু আর নয়।আমি এইখান থেকে তোমাদের না নিয়ে কোথাও যাবো না।”

-” জেদ করো না উষ্ণতা।এটা জেদ করার সময় নয়।”
-” তুমি কি তোমার দায়িত্ব কর্তব্য ভুলে গিয়েছো পাপা? তুমি চাও না এসব কিছুর পেছনের আসল মাস্টারমাইন্ড সবার সামনে আসুক। তাদের কর্মফল ভোগ করুক। তোমাদের সাথে যে অন্যায় হয়েছে তার শাস্তি পাক ।এটা চাও না তুমি?”

-” বিশ টা বছর সততার সাথে আমি আমার দায়িত্ব কর্তব্য পালন করেছি। সেগুলো এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যাই কিভাবে ? কিন্তু আমি চাই না আমাদের জন্য তোকে সাদ্দাম হারিয়ে ফেলুক।আমি তোকে কতোটুকুই বা আদর ভালোবাসা দিতে পেরেছিলাম।সবটা তো করেছে সাদ্দাম।তোর কিছু হয়ে গেলে সাদ্দামের কি হবে?”

-” কি আর হবে?যদি আসল অপরাধী কে ধরে বড় আব্বু কে নির্দোষ প্রমাণ করতে না পারি ,তাহলে হয়তোবা বড় আব্বুর ফাঁ’সি হবে।শুধু মাত্র তোমাদের কে বাঁচানোর জন্য বড় আব্বু কোনো অপরাধ না করেও মিথ্যা অপবাদ নিজের ঘাড়ে নিয়েছে। নিজের এতো বছরের ক্যারিয়ার এক নিমিষেই শেষ হয়ে গিয়েছে মানুষ টার। মিডিয়ার লোকেরা ছিঃ ছিঃ করছে। তুমি চাও না পাপা আসল অপরাধী শাস্তি পেয়ে বড় আব্বুর মুক্তি হোক ?”

-” সাদ্দাম আমার জন্য যা করছে , পৃথিবীতে এরকম হয়তো কোনো বন্ধু তার বন্ধুর জন্য করে না। আমার গাঁয়ের চামড়া দিয়েও যদি আমি সাদ্দাম কে জুতা বানিয়ে দেই, তবু ও সাদ্দামের ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না। আমার কলিজার টুকরো টা ও মানুষের মতো মানুষ করছে।

একটা বাবার কাছে এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে।আমি অবশ্যই চাই সাদ্দামের মুক্তি হোক। আসল অপরাধী শাস্তি পাক। কিন্তু এর জন্য তোদের বেঁচে থাকতে হবে।তোরা চলে যা এইখান থেকে। আসল অপরাধী খুঁজে বের কর। যেকোনো সময় বোম ব্লাস্ট হয়ে আমরা সবাই মা’রা যেতে পারি।”

-” এতোক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখছিলো সাহিত্য। রায়হান মীরের কথা শুনে সাহিত্য এসে বললো, ডোন্ট প্যানিক রায়হান শ্বশুর স্যার।আপনি খুব ভালো করে জানেন বোম ডিফিউজ করে দেওয়া যায়। তৎক্ষণাৎ পেছন থেকে একটা মেয়ের কণ্ঠে ভেসে আসে, হ্যাঁ বোম ডিফিউজ করে দেওয়া যায়।

তবে তার জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু তুমি সেই সময়টা পাবে না অফিসার।মেয়েলী একটা কণ্ঠে সবাই পিছনে তাকিয়ে দেখলো, মুখে মাস্ক পরা একটা মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছে।যার হাতে রিমোট জাতীয় কিছু একটা রয়েছে।যা দেখে শিক্ষা বললো, ওহ্! তুই তাহলে আসল মাস্টারমাইন্ড।ফাইনালি তোর দর্শন পেলাম।

কিন্তু তুই মুখ লুকিয়ে রেখেছিস কেন? মাস্ক খোল,দেখা সবাইকে তোর চাঁদ মুখ খানা বলে শিক্ষা মহিলা টার দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগেই সে বললো,এক পাও আগানোর চেষ্টা করবি না উষ্ণতা। মূলত তোর সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই। তুই রায়সা আর রায়হানের মেয়ে এটাই তোর অপরাধ।তোর পাপা মমের করা অপরাধের শাস্তি তুই ও ভোগ করবি।”

-” আমার পাপা মম তোমার সাথে কি করছে না করেছে এটা আমি জানি না।তবে এখন আমি তোমার যে হাল করবো, তুমি হয়তো সেটা ভাবতেও পারবে না।”

-“বাহ্ বাহ্। বলতেই হয় বাপ কা বেটি। বাঘের বাচ্চা বাঘ ই হয়েছিস।তবে আমার সামনে একদম ওভারস্মার্ট হতে আসবি না।তোর মম পাপার কাছে যে বোম রয়েছে সেই বোমের ট্রিগার আমার কাছে।তাই কেউ কোনো প্রকার চালাকি করার চেষ্টা করবি না।অবশ্য আমি চাইলেই এতো দিনে এসিপি আর তার প্রেয়ারের ব‌উ কে মে’রে দিতে পারতাম।

কিন্তু মা’রি নি। ভেবেছিলাম এসিপির মেয়ে উষ্ণতা কে ওদের সামনে কে’টে টুকরো টুকরো করে ওর কলিজা টা খাবো। কিন্তু পরে আমার ডিসিশন চেঞ্জ করলাম। ভাবলাম এসিপির পুরো পরিবার একসাথে মা’র বো। আমার সাথে করা প্রত্যেক টা অন্যায়ের শাস্তি দিবো।

কিন্তু তুমি বেচারা অফিসার এদের মাঝখানে এসে ফেঁসে গেলে।কি আর করার? হয়তো তোমার মৃ’ত্যু ও আমার হাতে ছিলো। মৃ’ত্যু’র জন্য প্রস্তুত হ‌ও সবাই। আমি কথা দিচ্ছি এদের কে মে’রে আমার প্রতিশোধ সম্পূর্ণ করার পর আমি নিজে সিআইডির কাছে আত্মসমর্পণ করবো। আমার সব অপরাধ স্বীকার করে নিবো। ”

-” কষ্ট করে তোমার সিআইডির কাছে যেতে হবে না।আমরা নিজেরাই চলে এসেছি‌ , মেয়েটার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বললো এসিপি সাইফুজ্জামান। অনেক নাকানিচোবানি খাইয়েছো আমাদের। কতো গুলো মেয়েকে তার বাবা মায়ের থেকে কেড়ে নিয়েছো।

তাদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছো। এবার তোমার খেলা শেষ।আমরা তোমার খোঁজে অনেক আগেই পেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম তোমাকে হাতেনাতে ধরবো। অপরাধী যতো চালাকি হোক না কেন কোনো না কোনো ভুল ঠিক করে। তুমি ও এর ব্যতিক্রম ন‌ও।

যেদিন তুমি সাদ্দাম শিকদার কে রায়হান স্যারের ছবি আর ভিডিও পাঠাও সেদিন ভুলবশত তোমার নিজের নাম্বার থেকে ও একটা ছবি আসে। কিন্তু তখন তোমার নাম্বার বন্ধ পাই। তুমি ভেবেছিলে হয়তো সাদ্দাম শিকদার কে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছি, এখন সিআইডি এই কেসের সমাপ্তি টেনে দিবে। বোকা ছিলে তুমি।আমরা ইচ্ছা করে সাদ্দাম কে ধরেছিলাম।যাতে করে তোমার উদ্দেশ্যে সফল হয়।

আর তুমি খোলস ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে আসো।আর হলো ও তাই। তুমি তোমার ফোন নাম্বার এক্টিভ করলে।ব্যাস এরপর আমরা তোমার লোকেশন ট্র্যাক করি। তোমার সমস্ত ডিলেইলস বের করি। তুমি কখন কোথায় যাও ,কি করো , সবকিছুর উপর নজর ছিলো আমাদের।

আর এতোক্ষণ তুমি এইখানে যা যা করছো আমরা সবটা দেখেছি সাহিত্যের কাছে থাকা ক্যামেরার মাধ্যমে। বাইরে আমাদের পুরো সিআইডি টিম রয়েছে।তোমার পালানোর সব রাস্তা বন্ধ। তাই তোমার জন্যে এটাই ভালো হবে যে নিজে মুখে সবটা স্বীকার করো। নিজের আসল চেহারা দেখাও রায়হান স্যার আর রায়সা ভাবী কে।তারাও দেখুক তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী কে।”

-” মহিলা কে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শিক্ষা বললো, ও এইভাবে কথা শুনবে না স্যার। আমি ওর মাস্ক খুলে দিচ্ছি বলে শিক্ষা এসে মহিলাটার মুখ থেকে মাস্ক খুলে নিলো। শিক্ষার সামনে থাকা মহিলা টি কে দেখে যেন শিক্ষার পরিচিত মনে হলো। শিক্ষার মনে হচ্ছে যেন তার নিজের কেউ।

অথচ সে তাকে চিনে না। শিক্ষা একবার তার মায়ের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার তার সামনে থাকা মহিলা টার দিকে। শিক্ষা তার হিসাব মেলাতে না পেরে নিজে মহিলা টির সামনে থেকে সরে গিয়ে তার মম কে উদ্দেশ্য করে বললো, এই মহিলা টা কে মম?”

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৮

-” রায়হান মীর , রায়সা মীর দুজনে মহিলা টার দিকে তাকিয়ে যেন চমকে উঠলো। রায়সা চিৎকার করে বলে উঠলো, তুমি??

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ৩০