মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৮

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৮
নূন মাহবুব

-” আই লাভ ইউ আবৃত্তি।উইল ইউ ম্যারি মি বলে বর্ণ একগুচ্ছ গোলাপ এগিয়ে দিলো আবৃত্তির দিকে। আবৃত্তি বর্ণের হাত থেকে ফুল নিয়ে নিজের পায়ের তলায় পিষে দিয়ে বর্ণের গালে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় মে’রে দিলো। থাপ্পড় খেয়ে অশ্রুভেজা চোখে বর্ণ বললো,আমাকে থাপ্পড় দিলে তুমি?”

-” হ্যাঁ । তুই এটারি যোগ্য।আমি তোর থেকে এটা আশা করি নি বর্ণ। তুই একটা বিশ্বাসঘাতক। আমার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েছিস তুই।তোকে আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর জায়গা দিয়েছিলাম ।আর তুই কি না? আমার পাপা এখন জেলে‌ রয়েছে। মম অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে।কতো বড় ঝড় বয়ে গিয়েছে আমাদের উপর দিয়ে।আর তুই এখন আমাকে এইভাবে ডেকে এনে ভালোবাসার কথা বলছিস?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” ভালোবাসা কোনো অপরাধ নয় আবৃত্তি। আমি জানি তোমার পরিবারের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছে। তোমার মনের অবস্থা ভালো না। আমি ও না খুব বোকা। তোমার মন ভালো করার জন্য এই ক্যাফে টা বুক করেছিলাম। ভেবেছিলাম মনোরম পরিবেশে এসে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে। সাদ্দাম আঙ্কেলের এই ঘটনার পর তোমাকে নিয়ে মানুষের মুখে অনেক আজেবাজে কথা শুনেছি।

অনেকেই বলাবলি করছে একজন খু’নী, ফাঁসির আসামির মেয়েকে কে বিয়ে করবে? মেয়েটার জীবন টা নষ্ট হয়ে গেল। ভালোবাসার মানুষের নামে কটু কথা সহ্য করার ক্ষমতা কোনো প্রেমিক পুরুষের নেই। আমি ও তার ব্যতিক্রম ন‌ই। আমি চেয়েছিলাম তোমাকে এই কলঙ্কের হাত থেকে বাঁচতে।তোমাকে বিয়ে করে নিজের করে নিতে। যাতে কেউ আর তোমার দিক আঙ্গুল তুলতে না পারে।কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসার প্রতিদান দিলে থাপ্পড়।”

-“আমি তোকে কোনোদিন ও ভালোবাসতে পারবো না বর্ণ। আমার মনের উঠোন জুড়ে যে অন্য কারো বসবাস। তুই ভুলে যা আমাকে। তুই একজন মন্ত্রীর ছেলে।তোর বাবার টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই।তোর ও মেয়ের অভাব হবে না। কিছুদিনের মধ্যে তুই ও হয়তো ভালো কোনো চাকরি পেয়ে যাবি।তোর রুচি এতো নিচে হবে আমি কখনো ভাবিনি। তুই মন্ত্রীর ছেলে ,তোর পাশে কোনো মন্ত্রীর মেয়েকে ই মানাবে। আমার মতো খু’নী ফাঁসির আসামির মেয়েকে নয়।”

-” ভালোবাসা কখনো ধনী ,গরিব ,জাত বংশ দেখে হয় না আবৃত্তি। ভালোবাসা হৃদয়ের একটা অনুভুতি।যে অনুভূতি টা কেউ দেখতে পায় না, অনুভব করে বুঝে নিতে হয়। ভালোবাসা মানে দূরে থেকেও কাছে থাকার অনুভব করা।তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন থেকেই তোমাকে আমার ভালো লাগে। কিন্তু সেই ভালোলাগা কখন যে ভালোবাসায় পরিনত হয়েছে আমি বুঝতে পারি নি। এতো গুলো বছর আমার অনুভূতি তোমার থেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম।

যেদিন যখন তোমার অসুস্থতার কথা শুনতে পেলাম।বড্ড পাগল পাগল লাগছিলো আমাকে। তোমাকে হারানোর ভয় জেঁকে বসেছিলো। তোমাকে অসুস্থ্য অবস্থায় দেখে মনে হচ্ছিলো যেন আমার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে। এমন মনে হয়েছিল যেন আমার প্রিয় কিছু আমার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।তখনি আমি ভেবেছিলাম তোমার প্রতি আমার ফিলিংস আর লুকিয়ে রাখবো না।

তোমাকে ব‌উ করে ঘরে নিয়ে আসবো। কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম সবার চাওয়া সবসময় পূরণ হয় না। তুমি আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে ছিলে।আর সারাজীবন থাকবে। তবে আমার জীবনে দ্বিতীয় কোনো নারী আসবে না আবৃত্তি।তবে তোমার জন্য আমার মনের দরজা সারাজীবন খোলা থাকবে বলে চোখের পানি মুছে বর্ণ ক্যাফে থেকে বেরিয়ে গেল।বর্ণের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আবৃত্তি নিচে ধপ করে বসে পড়লো।

হঠাৎ আবৃত্তি আবিষ্কার করলো,তার নিজের একটা প্রতিবিম্ব তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে তাকে বলছে,এটা তুই ঠিক করলি না আবৃত্তি। মানুষ টা সত্যিই তোকে অনেক ভালোবেসে ।যেইখানে তোর পাপা জেলে যাওয়ার পর তোকে নিয়ে সবাই ছিঃ ছিঃ করছে, সেইখানে এই মানুষ টা সব ভুলে তোকে নিজের করে নিতে চেয়েছিলো।আর তুই তাকে ফিরিয়ে দিলি? সেটাও আবার ঐ নির্জনের জন্য।যে কিনা অন্য কাউকে ভালোবাসে?

যার তোর প্রতি বিন্দুমাত্র ফিলিংস নেই। তুই অসুস্থ্য হ‌ওয়ার পরেও যে একটা বারের জন্যও তোর খবর নিয়ে দেখেনি। অথচ বর্ণ তোর অসুস্থতার কথা শুনে ছুটে গিয়েছিলো তোর কাছে।তোর মন ভালো করার এই ক্যাফে টা বুক করেছে।ছেলেটা কতো কি করেছে তোর জন্য । অথচ তুই ভুল মানুষের প্রেমে পড়লি।এখনো সময় আছে আবৃত্তি।লিসেন টু ইউর হার্ট আবৃত্তি বলে প্রতিবিম্ব টা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ আবৃত্তি চোখের পানি মুছে বললো, হ্যাঁ আমি আমার মনের কথাই শুনবো।”

-” শিক্ষা দাঁড়া বলছি না হলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। এই জায়গা টা আমাদের জন্য নিরাপদ না। যেকোনো সময় আমাদের উপর অ্যাটাক হতে পারে। তুই আমার সাথে চল।”
-” আমি কি এইখানে আপনাকে আসতে বলেছি? আপনি আসলেন কেন?”

-” দেখ শিক্ষা! তুই আমার বিবাহিত স্ত্রী। আমার দায়িত্ব। তাছাড়া বাবার এই কেসের সাথে রায়হান শ্বশুর স্যার ও যুক্ত রয়েছে। রায়হান শ্বশুর স্যার যদি সত্যি সত্যি বেঁচে থাকে, তাহলে হয়তো আমার বাবাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবো।জানতে পারবো সবকিছুর পেছনের মাস্টারমাইন্ড কে? এই জায়গা টা অনেক বিপদজনক।আর আমি কিভাবে তোকে একা এমন একটা জায়গায় ছেড়ে দেই বল তো?”

-” আমি আপনাকে বারবার বলছি আপনার কোনো সাহায্যের প্রয়োজন নেই আমার। আমি আমার নিজের ভালো বুঝতে জানি।”
-” তোর কাছে কোনো বন্দুক নেই। যদি তোকে শুট করে দেয়।”
-” দিলে দিবে।তাতে কার কি আসে যায়? আমি ম’র’লেই তো সবার ভালো। নতুন বিয়ে করে বউ নিয়ে আসতে পারবে। নতুন করে সংসার সাজাতে পারবে।”

-” শিক্ষার অভিমানী কথা শুনে তৎক্ষণাৎ সাহিত্য শিক্ষা কে দাঁড় করিয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,তোকে আমি একবার না , হাজার বার বলেছি আমি তোকে ভালোবাসি, ভালোবাসি , ভালোবাসি। কিন্তু তুই তো বর্তমানে নিজেকে দেশের প্রেসিডেন্ট মনে করছিস। আমাকে পাত্তাই দিস না। আমার ফিলিংস এর কোনো দাম দিস না বলে সাহিত্য শিক্ষাকে জড়িয়ে ধরতে যাবে তার আগেই কেউ একজন এসে সাহিত্যের পিঠে আঘাত করতে যায়।

কিন্তু আঘাত লাগার আগেই শিক্ষা লাঠি ধরে ফেলে ।আর সাথে সাথে দশ বারো টা গুন্ডা হাজির হয়।দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। হঠাৎ করে একটা গুন্ডা সাহিত্যের হাতে ছু’রি দিয়ে আঘাত করে।যা দেখে শিক্ষার মাথা গরম হয়ে যায়। শিক্ষা বেদারম পে’টা’তে থাকে গুণ্ডাদের। এক পর্যায়ে সব কয়টা গুন্ডাদের আহত করে‌ শিক্ষা সাহিত্যের কাছে এসে নিজের ওড়না ছিঁড়ে কা’টা জায়গা বেঁধে দেয়।যা দেখে সাহিত্য বলে,

-” আরে আমার তেমন কিছু হয় নি। তুই শুধু শুধু তোর প্রিয় ওড়না টা ছিঁড়ে নষ্ট করলি। তৎক্ষণাৎ শিক্ষা সাহিত্যের ঠোঁটের উপর আঙ্গুল দিয়ে বললো, হুস নো মোর ওয়ার্ডস। আমার কাছে সম্পর্কের মূল্য অনেক বেশি। আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমার আপনজন ।”
-” আপনজন বলতে কি আমাকে মিন করলি শিক্ষা?”
-” আপনি কোন ক্ষেতের মুলা হে?”
-” তোর ক্ষেতের মুলা।হা হা হা।জাস্ট কিডিং ইয়ার। তুই কি এইখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করবি নাকি বাড়ির মধ্যে যাবি?”

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৭

-” হ্যাঁ চলেন বলে দুজনেই সেই পরিত্যক্ত বাড়িতে প্রবেশ করে।বাড়ি টা অনেক বড় । সাহিত্যে শিক্ষা দুজনে সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোথাও কারো চিহ্ন পায় না।এক পর্যায়ে শিক্ষা হাল ছেড়ে দিয়ে নিচে বসে পড়ে।আর তখনি শিক্ষা একটা গুপ্ত দরজা দেখতে পায়। শিক্ষা , সাহিত্য দুজনে আর এক মূহুর্ত দেরি না করে গুপ্ত দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করে যা দেখে এতে যেন শিক্ষার শরীর নেতিয়ে আসে। কণ্ঠনালী কাঁপতে থাকে শিক্ষার।নিজেকে না সামলাতে না পেরে ধপ করে নিচে বসে পড়ে শিক্ষা।”

মনের উঠোন জুড়ে পর্ব ২৯