যদি তুমি বলো পর্ব ২৪

যদি তুমি বলো পর্ব ২৪
আফনান লারা

তিথির এরকম একটা প্রশ্নে ইশান আরও বেশি রেগে যায়।সে চিৎকার করে বলে,’ছেলেটা যদি আমার বোনকে পাগলের মতন ভালবেসে থাকে তবে অবশ্যই তার সাথে আমি বিয়ে দিবো,কিন্তু সে চাকরি পাওয়া পর্যন্ত আমার বোন তার জন্য অপেক্ষা করবে তার মানে এই নয় যে আমার বোন তাকে দূরছার করে দূরে ঠেলে দিবে,কিংবা কথা দিয়ে এরপর কথার খেলাপ করবে।আমার বোনকে আমি সেই শিক্ষা দিই নাই।’

তিথি কি আর বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।যাই বলে ইশান তারই একটা না একটা উত্তর গুছিয়ে বলে দেয়।
তিথিকে চুপ করে থাকতে দেখে ইশান ওকে ছেড়ে দিয়ে কিণারায় উঠে বসে পড়ে।তখন তিথিও আর দাঁড়িয়ে থাকেনা।সেও উঠে বসে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

দুজনেই চুপচাপ ছিল যতক্ষণ না বৃষ্টি থামে।ইশানের ফোনের আলোটাও নিভু নিভু করছে।
শেষে আলো থাকতে বাসায় পৌঁছানোর কথা ভেবে সে উঠে হাঁটতে থাকে।তিথিকে একবার আসতেও বলেনা।
তিথি রাগ করলে তারই লস হবে তাই সেও ওর পিছু পিছু আসতে থাকে।দুপাশে সুপারি গাছ আর মাঝ দিয়ে ইটের রাস্তা।তিথি চলতে চলতে বললো,’আপনি কি করে জানলেন এখানে নদী আছে?’
‘আমার থেকে পালানোর জন্য এক মাস ধরে নানুর বাড়িতে ছিলি, আর আমি নানু বাড়ি চিনবোনা?’
‘তার মানে আপনি জানতেন সব?’

‘শুধু তাই নয়।আমি এই এক মাসে অনেকবার এসে তোকে দেখেও গেছি। তুই টেরও পাসনি।জানিস?যে খুব করে ঘৃনা করে সে এক সময় ঐ মানুষটাকে প্রচণ্ড ভালবেসেছিল।
ভাল না বাসলে এত ঘৃনা জন্মায় না।’
তিথি অনেকটা পথ আসার পর হঠাৎ থেমে গিয়ে বললো,’আচ্ছা এই প্রতিশোধ কতদিন ধরে চলবে??’
তিথির এই কথায় ইশানও থামে। পেছনে ফিরে বলে,’আজীবন’
‘আমি মুক্তি চাই,আপনার সাথে সংসার করতে চাইনা।’

ইশান মুচকি হেসে আবারও হাঁটতে লাগলো।তিথি বিরক্তি নিয়ে ওর সামনে এসে উঁচু গলায় বলে,’বললাম না আমি এই সংসার করবোনা?’
‘করিসনা,যা চলে যা’

ইশান কথাটাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছেই না।এর কিছুক্ষণ পর নানুর বাড়িতে এসে দুজনে দেখে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।নির্ঘাত মামা দরজা খোলা দেখে আটকে দিয়েছেন।রাতের দুইটা বাজে।এখন কি হবে!
ইশান অনেকক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কিয়েছে,কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি,নানু,মামার নাম্বার তিথির মুখস্থ নেই।তিথি বললো ওনারা সবাই গভীর ঘুমে।উঠবেনা হয়ত।তিথির এমন কথাশুনে ইশান বললো তবে সারারাত তারা কি এই বৃষ্টির মধ্যেই ভিজবে!

এরপর হঠাৎ ওর খেয়াল হয় তার তো ওপাশে কার থামানো আছে।সেটাতে গিয়ে বসলেই পারে।কিন্তু সমস্যা হলো কারের চাবি সে টেবিলের উপর রেখে এসেছে।
ওমনি তিথি বুদ্ধি দেয় তারা জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে চাবিটা নিতে পারে।
আর তাই দুজনেই সেই জায়গায় এসে উপস্থিত হয়।তিথি হাত বাড়িয়ে চাবিটা নেয়ার অনেক চেষ্টা করে কিন্তু তার হাতটা ওতোদূরে পৌঁছাচ্ছিলই না।

শেষে ইশান ওকে সরিয়ে নিজে হাত ঢুকাতে গিয়ে দেখলো তার হাতটা ঢুকছেই না।
তিথি খিলখিল করে হেসে ওঠে এই দৃশ্য দেখে। তখন ইশান রেগে গিয়ে বললো,’এতই যখন পারো তবে নিজের ঐ লিলিপুট হাত দিয়ে আবার চেষ্টা করে দেখো না”
তিথি কোমড়ে এক হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে আবারও চেষ্টা করতে থাকে।অনেক কষ্টে সে চাবিটা নেয়।দুজনেই এবার তাড়াহুড়া করে গাড়ীর ভেতরে ঢুকে বসলো,পেছনের সিটে।

তিথি ভিজে একাকার হয়ে আছে।
ইশান ও ভিজে আছে কিন্তু তিথি একটু বেশি কারণ তার বড় চুলের কারণে।তার চুল দিয়ে অনবরত পানি পড়ে যাচ্ছিলো।
ইশানের ফোনটাও অফ হয়ে গেছে। বৃষ্টি আরও বারতি।এত অন্ধকার!সব মিলিয়ে বাজে এক অবস্থা।
তিথি এই মূহুর্তে ইশানকেই ভয় পাচ্ছে।আবার কি করে বসবে কে জানে।সব ভয়ে থাকলেও ইশানের ভয় একাই যথেষ্ট তাকে ভীতু করে তোলার জন্য।

তিথি একটু একটু করে গ্লাসের সাথে লেগে বসেছে।যাতে ওর সাথে ইশানের শরীর না লাগে।
অস্বস্তিকর পরিবেশে ঘুম না আসাটাই স্বাভাবিক। দুজনেই জেগে বসে বসে সময় গুনছে। কখন ভোর হবে আর কখন নানু দরজা খুলবেন।
তিথি হাত দিয়ে নিজের চুল থেকে পানি বের করতে করতে বললো,’কি দরকার ছিল এত রাতে এইসব নাটক করার?আমার জ্বর হলে কি করবেন!’

‘নাচবো!বেশি বকবক করলে গাড়ী থেকে বের করে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখবো তোকে।’
তিথি আর কিছু বলেনা।বারবার নিজের হাত ঘঁষতে থাকে।হাত ঘঁষলে গরম সৃষ্টি হয়।
ইশান নিজের গাড়ীর ডেস্কে খুঁজে একটা তোয়ালে বের করে।এটা তার পার্সোনাল।দূরে ট্র্যাভেল করলে এটা দিয়ে মুখ মুছে।আপাতত এটা পরিষ্কার বলে সে তিথির দিকে বাড়িয়ে ধরলো আঁধারের মধ্যে।

তিথি কিছুই বুঝলোনা তাই জানতে চাইলো সে হাত বাড়িয়ে কি দিয়েছে এবং কোনদিকে দিয়েছে।সে দেখছেনা।
ইশান বিরক্ত হয়ে কাছে ঘেঁষে তেয়ালেটা ঘুরিয়ে ওকে পরিয়ে দিয়ে বললো,’আপন মানুষের অবয়ব অন্ধকারেও চেনা যায়।অবশ্য আমি তো তোর আপন মানুষ নই’

তিথি চুপ থেকে যায়।মাঝে মাঝে মনে হয় সে যে অন্যায় করেছিল তা হলো আকাশচুম্বী। যার কারণে ইশান আজও সেটা ভুলতে পারছেনা।আবার কখনও মনে হয় ইশান বাড়াবাড়ি করছে।
বাড়াবাড়ি ভেবে মনে পড়লো একটা কথা।ওমনি সে বলে ওঠে,’আমি যদি মাফ চাই,মাফ করবেন?’
‘সরি বললেই সব সমাধান হয়না।তুই যে অপরাধ করেছিস তার হাজার সরিতেও ভোলার মতন না’
তিথির হাতের চুড়িগুলা ওর হাত নাড়ার কারণে এত এত আওয়াজ করছিল যে ইশানের মাথা ব্যাথা আরও দিগুণ বাড়িয়ে তোলে।সে বিরক্ত হয়ে আন্দাজ করে তিথির হাত ধরে চুড়ি গুলো খুলছিল।তখনই তিথি বললো,’আপনি কি করবেন এখন? সব খুলছেন কেন?’

ইশানের হাত থেমে যায় তিথির কথা শুনে।সে বলে,’সব খুলছি মানে?আর কি খুলছি?তোকে না বলছি আমি ঐসব কিছু তোর সাথে করবোনা।তাহলে বারবার ঐসবের দিকে টেনে নেস কেন?অশ্লীল কোথাকার!’
তিথি দাঁতে দাঁত চেপে বলে,’তবে চুড়িতে কি সমস্যা আপনার?’
‘মাথা ধরছে আমার।যেভাবে চুড়ি দিয়ে বাজনা বাজাচ্ছিস তাতে এইবার মাথা ফেটে যাবার উপক্রম’
‘আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?আপনার কি জাপানে কারোর সাথে প্রেম হয়েছিল?’

‘হয়েছিল,অনেকগুলো।তাদের সাথে ফিজিক্যালি এটাচড ও হয়েছিলাম।সবগুলোর পেটে বাচ্চাও হয়েছিল।কিন্তু আফসোস,জাপানি মেয়েদের সব চেহারা এক রকম।বাচ্চা গুলো সব আমার মতন দেখতে হয়েছে শুধু চোখ গুলো ভেতরে ঢুকানো জাপানিদের মতন।সবগুলোর চেহারা এক লাগতো’
‘আপনি সিরিয়াস?’
‘তোর কি মনে হয়?’

তিথি আর কিছু বলেনা।ইশান তাকে ক্ষেঁপানোর জন্য এমন করছে নিশ্চয়।
তিথির চুড়িগুলো হাতে নিয়ে বসে আছে ইশান।সেইকালে তিথির হাতের চুড়ি ওর বান্ধবীকে দিয়ে চুরি করিয়েছিল সে।তিথির কিছু জিনিস স্মৃতি হেসেবে সে রেখে দিয়েছিল।তা হয়ত কোনোদিনও তিথি জানবেনা।
তিথির হুশ ফেরায় সে তার চুড়িগুলো ইশানের থেকে চাইলো।কিন্তু ইশান তাকে ওগুলা ফেরত না দিয়ে বললো,’তুই যদি আমার হাত থেকে চুড়িগুলো উদ্ধার করতে পারিস তবে তিনদিনের জন্য তোর শাস্তি মাফ’

তিথি তো মহাখুশি হয়ে যায়।সে তোয়ালেটা গা থেকে ফেলো অন্ধকারে তীর ছোঁড়ার মতন কাজে লেগে পড়ে।সে ইশানের সাথে হাতাহাতি করছে চুড়িগুলো নেবার জন্য।কিন্তু কিছুতেই পারছিলনা।তখনই তার মনে পড়ে কারে তো লাইট থাকে।
সে এবার চুড়ির পেছনে না ছুটে গাড়ীর আলোটা জ্বালানোর চেষ্টা করে এবং সে পারে ও।
ইশান বুঝে যায় তিথির জন্য কাজটা এবার সহজ হবে।তার এই ভাবনার কালেই তিথি তার চুড়ি জোড়া নেবার জন্য ইশানের দিকে এগিয়ে যায়।ঠিক তখনই ইশান তার হাতটাকে পিঠের পিছনে লুকিয়ে ফেলে।

যদি তুমি বলো পর্ব ২৩

তিথি ও হার মানার মেয়ে নয়।সে কাছে এসে ওর পিঠের পেছনে হাত নিয়ে চুড়িটা নিতে চাইলো কিন্তু ইশানের বুকে তার মাথাটা লাগতেই তার হাতাহাতি বন্ধ হয়ে যায়।ইশান ও থেমে যায়।
যে জড়িয়ে ধরার জন্য সে এক সময় ভিক্ষা করতো,আজ সেই জড়িয়ে ধরা নিজেই ধরা দিলো।
তিথি ইশানের বুক থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে।হাতাহাতি করতে গেলে আরও কাছে যেতে হবে,যেটা সে আর ইশান, কেউই চায়না

যদি তুমি বলো পর্ব ২৫