যদি তুমি বলো পর্ব ২৩

যদি তুমি বলো পর্ব ২৩
আফনান লারা

তিথি আঙ্গুল তুলে তাকিয়ে রইলো ইশানের দিকে।ইশান দরজা লাগিয়ে তাতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওকেই দেখছে।তার হাসি বলছে সে একটা কিছু করে তারপর ক্ষ্যান্ত হবে।তিথি ঢোক গিলে বললো,’আপনার শাস্তি কি আসলে….’
‘তুই যেটা ভাবছিস সেটা হতেও পারে’

‘কিন্তু আপনি বলছিলেন আমাকে টাচ করা নিয়ে আপনার ইচ্ছা নাই,আমার নাকি সেই যোগ্যতা নাই।আরও কত কি বলছিলেন।তাহলে এখন আবার এসব কেন?আর আপনি….’
ওমনি কারেন্ট চলে যায়।হুরহুর করে জানালা ভেদ করে বাতাস আসতে শুরু করে।বৃষ্টির আগাম বার্তা।হয়ত আকাশে মেঘের গর্জন আগেই পেয়ে বিদ্যুৎ অফিস কারেন্ট নিয়ে চলে গেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তিথি অন্ধকারে আতঙ্কে রোবট হয়েছিল।হঠাৎ কানের কাছে কারোর গরম নিশ্বাস পড়তেই সে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু ঐ মানুষটা হয়ত তার চারিদিকটা দখল করেই দাঁড়িয়েছে।তিথি সরতে গিয়ে যেন তার গায়ের সাথে আরও আষ্টেপৃষ্ঠে গেলো।মানুষটা তার কানে ফিসফিস করে বললো,’কথা শেষ কর’

তিথি কাঁপা কণ্ঠস্বরে জবাব দেয়,’অত্যাচারের মধ্যে ভালবাসাও পড়ে?’
ওমনি তার হাত টান দেয় ইশান।অন্ধকারে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা তিথি।কেবল ইশানের গায়ের শীতলতা তাকে জানান দেয় সে ওর খুব কাছে।ইশান ডান হাত দিয়ে তিথির হাতটা ধরে রেখে বাম হাতটা ওর কোমড়ে নিয়ে চাপ দিয়ে ওকে আরও গায়ের সাথে লাগিয়ে ধরে এরপর বলে,’সবাই চায় আমি তোকে খুব কষ্ট দিই।অনেক অনেক কষ্ট,তাহলে নাকি সবাই খুশি হবে’

‘আর আপনি?’
‘আমি সবার চাইতে বেশি খুশি হবো’
‘তবে দিন।ভালবাসতে চান কেন?এটা তো অত্যাচার না’
‘উমমমম ভাবলাম অন্যভাবে অত্যাচার করা যাক’
‘কোন ভাবে?’

ইশান মুখটা তিথির কানের কাছে এনে তাতে ঠোঁট ছোঁয়ালো।কোমড়ের উপরের হাতটা নিয়ে তিথির চুলগুলোকে শক্ত করে ধরে ঠোঁটটা আরও একবার ছোঁয়ালো সে।তিথি আবেগে হাতটা বাড়িয়ে ইশানকে খাঁমছে ধরতেই ইশান এক ধাক্কা দিয়ে তিথিকে দূরে ঠেলে দেয়।তিথি ধাক্কা খেয়ে বিছানার উপর গিয়ে পড়ে।ইশান তখন বলে,’এটাই তোর শাস্তি।আমার গায়ের গন্ধ পাবি,আমার ছোঁয়া পাবি!কিন্তু সেই ছোঁয়ায় প্রেম খুঁজে পাবিনা’

তিথি বিছানায় পড়ে থেকে বলে ওঠে,’কিন্তু যে একটা ভুল হয়ে গেলো মিঃইশতিয়াক!সে ভুলটা হলো আপনার শাস্তি ভরা ছোঁয়ায় আমি প্রেম খুঁজে পেয়েছি।এই ছোঁয়া আপনি মন থেকে ছুঁয়েছেন।তিথি ছোঁয়ার মানে বোঝে,ওতোটাও অবুঝ না’
ইশানের খুব রাগ হয়।অতীতের সেই দৃশ্যগুলো তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে।তিথির এ কথা শুনে তার মনে হয় সে তার লক্ষ্য থেকে সরে যাচ্ছে।এটা হতে দেয়া যায়না।

এইসব ভেবে সে পকেট থেকে ফোন বের করে লাইট জ্বালিয়ে তিথির মুখের দিকে ধরে রাখে। তিথি শুয়ে শুয়ে হাসছে।
ওর হাসিতে ইশানের রাগ হাজারগুণ বৃদ্ধি পেলো।সে এগিয়ে এসে তিথির হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে বললো,’আমি তোকে ভালবাসিনা!বাসতাম!আমার ছোঁয়ায় প্রেম পাবার মিথ্যা নাটক করার কোনো মানে হয়না তিথি!’
‘যদি কথাটা মিথ্যাই হয় তবে আপনার এত প্রমাণ দেবার কি দরকার?লোকে তো কত কথাই বলে’
ইশান তিথির চুলগুলো টেনে ধরে এক চিৎকার করে বললো,’এইবার পেলি প্রেম?’

তিথি হাসছে।শুধুই হাসছে।ইশান ওর চুলটা টেনে ধরলেও সে কেন যেন ব্যাথাই পেলোনা।বরং মন চাইলো একবার এই শরীরটাতে মাথা গুজাতে।তার মনে হয় এই শরীর পাথরের গড়া নয় মোটেও।
তিথির চাহনি ইশানের কাছে সুবিধার লাগলোনা।সে আলোটা তিথির চোখের উপর ধরে বললো,’আমি তোকে কষ্ট দিতে চাই। এটাই সত্যি!’
এই বলে ইশান তিথিকে ছেড়ে বিছানার অন্যদিকে গিয়ে বসে পড়ে।তিথি ও চুপচাপ বসে থাকলো। ইশান আসলে চাইছে টা কি!

ইশান পা দোলাতে দোলাতে মনে করলো সেই আগেকার দিনে তিথিকে একবার হাত জোড় করে ইশান বলেছিল,’আমি বিদেশ চলে যাব তিথি,একটিবার আমার হাতে হাত রেখে নদীর কিনারায় যাবে?পা ডোবাবো ঠাণ্ডা পানিতে’
তার এই ইচ্ছার উত্তরে তিথি বলেছিল,’জাহান্নামে যাও’

এই কথা মনে পড়তেই ইশানের আবারও মাথায় রাগ উঠে গেলো।সে উঠে ঘুরে এসে তিথির দিকে তাকিয়ে থাকলো।তিথি আচমকা ওকে দেখে চেয়েছিল। মনে মনে ভাবছিল ও আসলে করবে টা কি।ইশান হাত বাড়িয়ে তিথির হাত টেনে ধরে দরজা খুলে বের হয়ে যায়।তিথিকে সে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।

তিথি ওর সাথে পাল্লা দিয়ে যেতে যেতে বললো,’আশ্চর্য! এভাবে টেনে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’
ইশান কিছু বলছেনা।বাসা থেকে বেরিয়ে ফোনের আলো সামনে ধরে সে চলছেই।
অনেকদূর আসার পর সে থামে।বাতাসে বোঝা যাচ্ছিলো তারা নদীর পাড়ে।
তিথি জানতে চায় এই বৃষ্টির মধ্যে কেন সে ওকে এখানে নিয়ে এসেছে।তখন বৃষ্টির মাত্রা অনেক বেশি ছিল।দুজনই ভিজে গেছে।

রাত তখন সাড়ে বারোটা বাজে,এত বৃষ্টি।ভয়ে তিথির সারা শরীর কাঁপছিল।ইশানের নিরবতা তাকে আরও ভয় পাইয়ে দিচ্ছিলো।
অনেকক্ষণ কেটে যাবার পর তিথি বললো,’এভাবে নদীর কাছে বৃষ্টির মধ্যে এনে কি বোঝাতে চাইছেন আপনি?’
‘এটাই যে,,, শেষবার দেখা করার দিন তোমায় আমি এই অনুরোধটা করেছিলাম,এবং তুমি সেটার তাচ্ছিল্য করেছিলে ‘
‘তো?কি করতে চান এখন?পানিতে ডুবিয়ে মেরে প্রতিশোধ নিতে চান?’

তিথি কথা শেষ করার আগেই ইশান ওকে ধাক্কা দিয়ে নদীর পানিতে ফেলে দিলো।
তার খুব ভাল করে মনে আছে তিথি সাঁতার জানে।
সে ফোনের আলোটা তিথির দিকে ধরে রাখলো।তিথি নাকানিচুবানি খেয়ে পানির মধ্যেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখন।
‘কি?কেমন লাগছে?যোগ্য প্রার্থী হারালে,কাঁদতে হবে আড়ালে।এখন আমি তোকে আমার সামনেই কাঁদাচ্ছি।কেমন লাগছে তোর?’

‘আমি কাল সকালেই বাসায় চলে যাবো,চিরজীবনের জন্য।আপনার সাথে আর একটাদিন থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। ‘
ইশান ফোনটা পাশে থাকা একটা পাথরের সাথে দাঁড় করিয়ে নিজেও পানিতে ঝাঁপ দিলো।
তিথি সরে যেতে চাইলো কিন্তু তখনই ইশান ওর কাছে এসে বললো,’একবার আমায় না করে কি ভুল করছিস তার মাশুল মাত্রই দিলি।আরও একবার ভুল করার স্বাদ জেগেছে?’

‘আপনার মতন মানুষের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা যদি ভুল হয়ে থাকে,তবে সেই ভুল আমি হাজারবার করবো’
ইশান তিথিকে টান দিয়ে নিজের সাথে লাগিয়ে ধরে বলে,’কোন হাসবেন্ড এত সুন্দর একটা রোমান্টিক মোমেন্ট উপহার দেয়?’

‘আমার কাছে রোমান্টিক লাগছেনা।বরং বিরক্ত লাগছে।হাত ছাড়ুন,আমি উঠবো এখান থেকে’
‘আজও আমার সাথে থেকে নদী দেখতে ইচ্ছে করেনা তোর?’
তিথি মুখ বাঁকিয়ে হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইশান শুধুই হাসছে।তিথি কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারছেনা।আগেকার ইশান ছিল হালকা রোগাপাতলা,তাকে যখন তখন ধাক্কা দিয়ে তিথি সরিয়ে ফেলতো।কিন্তু এখন আর পারেনা কারণ এখনকার ইশানের সাথে পূর্বের ইশানের আকাশ পাতাল তফাৎ।

তিথি শেষে বাধ্য হয়ে বলে,’আপনি কি চান টা কি?’
ইশান হাসে।বৃষ্টির পানিতে তার সারা মুখ ভিজে আছে।চুলগুলো সব মিহিন হয়ে তার থেকে পানি গড়িয়ে গড়িয়ে নাক দিয়ে ঠোঁট মাড়িয়ে চলে যাচ্ছে।
তিথি ওর হাসি দেখে আবারও ভয় পেয়ে যায়।লোকটাকে বিশ্বাস করতেও তার ভয় হয়।কখন কি করে বসবে!
আসলে এখন কি করবে সেটাই তো অজানা।

ইশান হাত দিয়ে তিথির চুলগুলোকে ঠিক করে দিয়ে ওর গাল ধরে বলে,’বিশ্বাস কর!তোর চেহারার মত যদি তোর মনটাও সুন্দর হতো আজ আমি এই নদী রাঙিয়ে দিতাম প্রেমে!তোকে ডুবাতাম সেই প্রেমে।তুই বাধ্য হয়ে বলতি আজকে আর না!’
কিন্তু দেখ!তুই তোর সব চাইতে খারাপ রুপ আমাকে দেখিয়ে দিলি সেই সময়ে যখন তোর সব চাইতে বেশি দরকার ছিল আমার।জানিস এখন আমার ইচ্ছে করে তোকে আঘাত করতে!অন্তত আমার রাগ কমতো তাতে!’
‘দিন আঘাত,আর বাকি রাখছেন কেন?ডুবান পানিতে।মেরে ফেলুন!অপমানের প্রতিশোধ যদি মৃত্যু হয় তবে মানছি আমি সেটা’

যদি তুমি বলো পর্ব ২২

‘তুই আমায় শুধু অপমানই করিসনি।আমার কলিজায় হাত দিছস।আমার মাকে কাঁদিয়েছিস!আমার টা নাহয় ভুলেই গেলাম।আমার মায়ের উপর যে জুলুম করেছিস সেটার প্রতিদান কে দেবে?’
‘আজ যদি একটা কম বয়সী ছেলে এসে বলে আপনার ছোট বোনকে বিয়ে করবে,যদি তার চাকরি না থাকে,ঘরবাড়ি না থাকে। সে যদি বখাটে হয়?দিবেন বিয়ে?’

যদি তুমি বলো পর্ব ২৪